নদ নদী পর্ব্বতের শুনিয়াছ নাম।
সুগ্রীবের জিজ্ঞাসা যে করিলেন রাম।।
সাগর পর্ব্বত দ্বীপ পৃথিবীর অন্ত।
কেমনে জানিলে মিত্র কহ সে বৃত্তান্ত।।
কহেন সুগ্রীব শুন রাম গুণাধার।
বালি-ভয়ে ভ্রমিলাম এ তিন সংসার।।
সপ্তদ্বীপা মহা বালি নিমিষেতে যায়।
কোন্ দেশে যাব আমি না দেখি উপায়।
যে দেশে যাইব আমি তথা বালি যাবে।
মুহূর্ত্তেক দেখা পেলে তখনি মারিবে।।
বালি সম বীর নাহি এ তিন ভুবনে।
স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতালেতে ফিরি সে কারণে।।
এক দিন এক স্থানে না থাকি কোথায়।
বড় ভয়, বালি রাজা যদি দেখা পায়।।
দেখা পেলে প্রাণে মারে, বড়ই নিষ্ঠুর।
সে কারণে পলাইয়া ভ্রমি বহু দূর।।
সাগর পর্ব্বত নদী দেশ দেশান্তর।
সর্ব্বত্র ভ্রমণ করি আমি নিরন্তর।।
স্থাবরজঙ্গম আদি এ তিন সংসার।
প্রতিস্থানে ভ্রমণ করিহে শত বার।।
যেখানে যেখানে আছে পৃথিবীর অন্ত।
সে কারণে জানি মিত্র সকল বৃত্তান্ত।।
পূর্ব্বকথা কহিলাম তোমার গোচরে।
সর্ব্বতত্ত্ব জানিলাম সে বালির ডরে।।
ঋষ্যমূকের কথা যেই কহিল হনুমান।
সে কারণে করিলাম হেথা অবস্থান।।
চারি পাত্র ভ্রমিতাম হয়ে সঙ্কুচিত।
তোমার প্রসাদে এবে রাজ্যেতে পূজিত।।
এইরূপে দুই মিত্রে প্রত্যহ সম্ভাষ।
হইতে হইতে প্রায় পূর্ণ এক মাস।।
একদিন পূর্ব্বদিক হইতে সুমতি।
উপস্থিত হইল বিনোদ সেনাপতি।।
না শুনি সীতার বার্ত্তা আর্ত্ত রঘুবীর।
আইল পশ্চিম দেখি সুষেণ সুধীর।।
পশ্চিম উত্তর পূর্ব্ব তিন দিক দেখে।
আসিয়া সকলে কহে সবার সম্মুখে।।
নানা গিরি চাহিনু, খুঁজিনু বহু দেশ।
কোন দেশে না পাইনু সীতার উদ্দেশ।।
রঘুনাথ হইলেন শুনিয়া মূর্চ্ছিত।
তাঁহারে প্রবোধ দেয় সুগ্রীব সুহৃৎ।।
দক্ষিণ দিকেতে প্রভু রাবণের ঘর।
সে দিকে গিয়াছে যত প্রধান বানর।।
অঙ্গদ গিয়াছে আর মন্ত্রী জাম্বুবান।
কার্য্য সম্পাদক সঙ্গে বীর হনুমান।।
বুদ্ধির সাগর বড় বীর হনুমান।
অবশ্য সাধিবে কার্য্য, কিছু নহে আন।।
তব কার্য্যে হনুমান বড়ই তৎপর।
অবশ্য হইবে সীতা তাহার গোচর।।
বুদ্ধিতে পণ্ডিত হনুমান মহাশয়।
হনুমান পাবে সীতা, না করিহ ভয়।।
স্থির হইলেন রনাম রাজার আশ্বাসে।
রচিল কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড কবি কৃত্তিবাসে।।