মুনি বলে, অবধান কর নরপতি।
হেনমতে যুদ্ধ করে ভীম মহামতি।।
ধৃতরাষ্ট্র-পুত্রগণে বধিয়া সমরে।
সহস্রেক হস্তী মারে গদার প্রহারে।।
শোকেতে আকুল হইলেন দুর্য্যোধন।
ভ্রাতৃগণ-মৃত্যু দেখি করয়ে রোদন।।
অবশিষ্ট ছিল আর দশ সহোদর।
সবে লয়ে দুর্য্যোধন চলিল সত্বর।।
দুর্য্যোধন দেখি ধায় পবন-নন্দন।
গদা ঘুরাইয়া যেন সাক্ষাৎ শমন।।
তর্জ্জন করিয়া ভীম বলে দুর্য্যোধন।
ধৃতরাষ্ট্র-বংশ নাশ হবে আজি রণে।।
এত বলি বৃকোদর গদা লয়ে ধায়।
মৃগ মারিবারে যেন মৃগপতি যায়।।
ভীমে দেখি দুর্য্যোধন গদা লয়ে হাতে।
রথ এড়ি মারিবারে ধাইল ত্বরিতে।।
গদাযুদ্ধ করে দোঁহে অবনী উপর।
হুহুঙ্কার শব্দে দোঁহে গর্জ্জে নিরন্তর।।
মহাক্রোধে বৃকোদর গদা প্রহারিল।
কবচ কাটিয়া তার মর্ম্মেতে ভেদিল।।
অশক্ত হইল বীর সংগাম ভিতর।
দেখিয়া ধাইল তার নয় সহোদর।।
দুঃশাসন সহ আসে ভাই অষ্ট জন।
ভীমের উপরে করে বাণ বরিষণ।।
দেখিয়া কুপিত হৈল পবন-নন্দন।
হাতে গদা করি ধায় মহা কোপমন।।
রথসহ অষ্টজনে করিল নিধন।
দেখি ভয়ে পলাইয়া গেল দুঃশাসন।।
কেবল রহিল দুর্য্যোধন দুঃশাসন।
সমরে পড়িল আর সব ভ্রাতৃগণ।।
কান্দিতে কান্দিতে তবে রাজা দুর্য্যোধন।
রথে চড়ি পলাইল লইয়া জীবন।।
পুনরপি কর্ণবীর লয়ে ধনুর্ব্বাণ।
ভীমের সম্মুখে গেল পূরিয়া সন্ধান।।
ক্রমে ক্রমে কর্ণ, ছয়বার পলাইল।
পুনরপি ধনু ধরি যুঝিতে লাগিল।।
গদা হাতে করি ধায় বীর বৃকোদর।
লক্ষ লক্ষ সেনা মারে অসংখ্য কুঞ্জর।।
তবে কর্ণ মহাবীর পূরিয়া সন্ধান।
দশ বাণে গদা কাটি করে খান খান।।
নিরস্ত্র হইল বীর সংগ্রাম ভিতর।
কাটা হস্তী তুলি ফেলে কর্ণের উপর।।
যত হস্তী ফেলে তাহা কাটে কর্ণবীর।
বাণে খণ্ড খণ্ড কৈল ভীমের শরীর।।
কাটা অশ্ব গজ ছিল সব ক্ষয় হৈল।
দুই হাতে কাটা স্কন্ধ ফেলিতে লাগিল।।
কর্ণ বীর বাণ এড়ে সংগ্রামে প্রচণ্ড।
যত সব কাটা স্কন্ধ করে খণ্ড খণ্ড।।
বাণে জর্জ্জরিত হৈল ভীমের শরীর।
সর্ব্বাঙ্গ বহিয়া তার পড়িছে রুধির।।
অশক্ত হইল বীর সংগ্রাম ভিতরে।
শীঘ্রগতি কর্ণ বীর ধরিল ভীমেরে।।
গুণ সহ ধনু ধরি দিল তার গলে।
হাতেতে ধরিয়া তবে কর্ণ বীর বলে।।
এই বল ধরি তুই করিস সমর।
কি উপায় এবে বল আচে বৃকোদর।।
গুরুজন সহ তুমি না করিহ রণ।
সমানের সহ সদা কর ক্ষত্রপণ।।
এতেক কহিতে কর্ণ রবির নন্দন।
কুন্তীর বচন মনে হইল স্মরণ।।
পাছে এই কথা সব দুর্য্যোধন শুনে।
শীঘ্রগতি ছাড়ি দিল পবন-নন্দনে।।
মহাভারতের কথা কলুষ-নাশন।
প্রয়ার প্রবন্ধে কাশী করিল রচন।।