২৩৪. পুত্রদিগের প্রতি মন্দপালের সান্ত্বনা, দেবরাজ ইন্দ্রের অর্জুনকে অস্ত্রদান-প্রতিশ্রুতি
চতুস্ত্রিংশদধিকদ্বিশততম অধ্যায়।
বৈশম্পায়ন কহিলেন,–মহর্ষি মন্দপাল পুত্রগণের সান্ত্বনার নিমিত্ত প্ৰবোধবাক্যে কহিতে লাগিলেন, হে পুত্রগণ! পূর্বে আমি তোমাদের রক্ষার নিমিত্ত ভগবান্ হুতাশনের সমীপে প্রার্থনা করিয়াছিলাম, তিনিও আমার প্রার্থনাবাক্য স্বীকার করিয়াছিলেন। আমি অগ্নির বাক্য, তোমাদের জননীর ধর্মজ্ঞতা এবং তোমাদের বীর্যের উপর বিশ্বাস করিয়া তৎকালে, তোমাদের নিকট আগমন করি নাই, অতএব হে বৎসগণ! তোমরা আমার নৃশংসাচরণ মনে করিয়া সন্তপ্ত হইও না। ভগবান্ হুতাশন তোমাদিগকে বেদবিৎ ঋষি বলিয়া জানেন। মহর্ষি স্বীয় পুত্রগণকে এইরূপে সান্ত্বনা করত তাহাদিগকে এবং ভাষা জরিতাকে লইয়া সে প্রদেশ হইতে প্রদেশান্তরে প্রস্থান করিলেন।
এদিকে ভগবান্ হুতাশন, প্রচণ্ডবেগে প্রজ্বলিত হইয়া কৃষ্ণান সাহায্যে খাণ্ডবারণ্য দগ্ধ করত তত্ৰন্থ জীবজন্তুগণের অপরিমিত বসা ও মেদঃ পান করিয়া পরম পরিতৃপ্ত হইলেন।
তদনন্তর ভগবান পুরন্দর দেবগণ সমভিব্যাহারে অন্তরীক্ষ হইতে অবতীর্ণ হইয়া কৃষ্ণ ও অর্জুনকে কহিলেন, তোমরা যে মহৎ কাৰ্য্যের অনুষ্ঠান করলে, ইহা দেবতাদিগেরও দুষ্কর; আমি তোমাদের পরাক্রম দর্শনে পরম পরিতুষ্ট হইয়াছি; এক্ষণে তোমরা অভিলষিতশয় প্রার্থনা কর। তখন অর্জুন, ‘আমাকে সমস্ত অস্ত্র প্রদান করুন’ বলিয়া দেবরাজের নিকটবর প্রার্থনা করিলেন। ইন্দ্র সময় নির্দেশপূর্বক কহিলেন, হে ধনঞ্জয়! যে সময়ে তুমি তপস্যাদ্বারা ভগবান দেবাদিদেব মহাদেবকে প্রসন্ন করিবে, আমি তৎকালে তোমাকে সমস্ত অস্ত্র প্রদান করিব। হে পাণ্ডব! তুমি সেই সময়ে আগ্নেয়, বায়ব্য ও মদীয় অস্ত্রসমুদায় লাভ করিবে। কৃষ্ণ কহিলেন, সুররাজ! আমি এই মাত্র বর প্রার্থনা করি, যেন অর্জুনের সহিত আমার কদাচ প্রণয় বিচ্ছেদ না হয়। ইন্দ্র ‘তথাস্তু’ বলিয়া তাহাকে বর প্রদান করিলেন।
সুররাজ এইরূপে কৃষ্ণ ও অর্জুনকে বর প্রদান করিয়া অগ্নির অনুজ্ঞা গ্রহণপুরঃসর দেবগণ সমভিব্যাহারে পুনর্বার সুরপুরে গমন করিলেন। ভগ বান্ হুতাশন পঞ্চদশ দিবস প্রবল বেগে প্রজ্বলিত হইয়া মৃগপসিমাকুল খাণ্ডবারণ্য দগ্ধ করত তাহাদিগের মাংস ভোজন এবং মেদঃ ও রুধির পানদ্বারা পরম পরিতুষ্ট হইয়া বিরত হইলেন। পরিশেষে কৃষ্ণ ও অর্জুনকে কহিলেন, হে মহাবীরদ্বয়! তোমরা আমাকে পরম পরিতুষ্ট করিয়াছ; এক্ষুণে অনুমতি করিতেছি, তোমরা যথা ইচ্ছা গমন কর। ভগবান্ হুতাশনের অনুজ্ঞা লাভানস্তর কৃষ্ণজ্জিন ও ময়দানব তিন জনে তাঁহাকে প্রদক্ষিণ করিয়া তথা হইতে সেই পরম রমণীয় যমুনা নদীর উপকূলে আসিয়া উপবেশন করিলেন।
খাণ্ডবদহন পর্বাধ্যায় সমাপ্ত।
আদিপর্ব সমাপ্ত।
[মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন পর্বসংগ্রহাধ্যায় প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন যে, আদিপর্বে সপ্তবিংশত্যধিকদ্বিশত অধ্যায় রচনা করিবেন, কিন্তু ইহাতে চতুস্ত্রিংশদধিকদ্বিশত অধ্যায় দৃষ্ট হইতেছে, বোধ হয়, পূর্বতন লিপিকরদিগের প্রমাদবশতঃ অধ্যায়গত সংখ্যার বৈলক্ষণ্য হইয়াছে। অধ্যায়সংখ্যার বৈষম্য হওয়াতে সুতরাং শ্লোকসংখ্যারও ব্যতিক্রম ঘটিয়াছে।
এশিয়াটিক সোসাইটির অধ্যক্ষগণ অনেকানেক পুস্তকের সহিত ঐক্য করিয়া যে মূল মহাভারত মুদ্রিত করিয়াছিলেন, তদ্দৃষ্টে এই পুস্তক সঙ্কলিত হইয়াছে।]