২৩০. সৰ্ব্বলোকপ্রিয়তা—উগ্রসেন কৃষ্ণ-নারদসংবাদ

২৩০তম অধ্যায়

সৰ্ব্বলোকপ্রিয়তা—উগ্রসেন কৃষ্ণ-নারদসংবাদ

যুধিষ্ঠির কহিলেন, “পিতামহ! এই ভূমণ্ডলে কোন ব্যক্তি সকলের প্রিয়, সৰ্ব্বগুণান্বিত ও সৰ্ব্বতত্ত্ববেত্তা, তাহা কীৰ্ত্তন করুন।”

ভীষ্ম কহিলেন, “মহারাজ! মহাত্মা কেশব উগ্রসেনের নিকট নারদের বিষয় যাহা কীৰ্ত্তন করিয়াছিলেন, আমি এই স্থানে তাহা কহিতেছি, শ্রবণ কর। একদা উগ্রসেন বাসুদেবকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, ‘কেশব! সকল লোকই দেবর্ষি নারদের গুণকীর্ত্তনে যত্নবান্ হয়, অতএব তিনি যে সর্ব্বগুণান্বিত, তাহাতে আর সন্দেহ নাই। অতএব তুমি তাহার গুণগাথা কীৰ্ত্তন, কর। তখন বাসুদেব কহিলেন, “হে মহাত্মন! আমি দেবর্ষি নারদের যে-যে সদগুণ অবগত আছি, তাহা সংক্ষেপে কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। তিনি যেরূপ সচ্চরিত্র, তদনুরূপ শ্রুত সম্পন্ন, তথাপি তিনি স্বীয় সচ্চরিত্রের নিমিত্ত অণুমাত্র অহঙ্কার প্রকাশ করেন না। ক্রোধ, চপলতা, ভয় ও দীর্ঘসুত্রিতা তাঁহার শরীর হইতে একেবারে দূরীভূত হইয়াছে। তিনি সকলেরই উপাস্য, কাম বা লোভবশতঃ তিনি কদাপি বাক্যের অন্যথা করেন না। তিনি অধ্যাত্মবেত্তা, শক্তিমান, ক্ষমাশীল, জিতেন্দ্রিয়, সরল, সত্যবাদী, তেজস্বী, যশস্বী, বুদ্ধিমান, বিনয়ী, জ্ঞানবৃদ্ধ, বয়োবৃদ্ধ, তপোবৃদ্ধ, সুশীল, লজ্জাশীল, বাগ্মী, মৃদুভাষী, সঙ্গীতবিদ্যায় সুনিপুণ, সুন্দরবেশধারী, পবিত্ৰান্নভোজননিরত, পবিত্র, সদালাপী ও ঈর্ষাবিহীন। তিনি সর্ব্বদা সকলের মঙ্গলসাধন করিয়া থাকেন। তাঁহার শরীরে পাপের লেশমাত্র নাই। তিনি অন্যের অনর্থে প্রীত হয়েন না। তিনিও বেদশ্রবণ ও বেদেচ্চারণদ্বারা বিষয়কামনা জয় করিতে বাসনা করেন। তাঁহার প্রিয় বা অপ্রিয় কেহই নাই। তিনি সকলকেই সমান জ্ঞান ও সকলের অভিপ্রায়ানুরূপ বাক্যবিন্যাস করেন। তিনি বহুশাস্ত্রদর্শী, পণ্ডিত, বিচিত্রভাষী এবং কামনা, শঠতা, দীনতা, ক্রোধ ও লোভবিহীন। তিনি জন্মাবধি অর্থ বা কামের নিমিত্ত কাহারও সহিত কখন বিবাদ করেন নাই। তাহার দোষসমুদয় উৎসন্ন হইয়া গিয়াছে। তিনি দৃঢ়ভক্তিপরায়ণ ও ভ্রমপ্রমাদপরিশুন্য; অর্থ বা কামে তাঁহার কিছুমাত্র যত্ন নাই। তিনি সংসর্গবিহীন হইয়াও সংসর্গীর ন্যায় দৃষ্ট হইয়া থাকেন। তিনি মানবগণের ভিন্ন ভিন্ন চিত্তবৃত্তি সন্দর্শন করেন, কিন্তু কখন কাহার নিন্দা বা আত্মশ্লাঘায় প্রবৃত্ত হয়েন না। কদাচ কোন শাস্ত্রে অসূয়া 

প্রকাশ ও বৃথা কালক্ষেপ করেন না এবং স্বীয় নীতি অবলম্বন করিয়াই কালযাপন করিয়া থাকেন। ঐ মহাত্মা বহুপরিশ্রমে যথার্থ জ্ঞান লাভ করিয়াছেন। তথাপি সমাধি হইতে নিবৃত্ত হয়েন নাই। উনি সর্ব্বদাই কার্য্যে ব্যাপৃত থাকেন; কিন্তু কখনই উহার অনবধানতা লক্ষিত হয় না। লোকে তাঁহাকে মঙ্গলকার্য্যে নিযুক্ত করিয়া থাকে। তিনি কখন কাহারও গোপনীয় বিষয় প্রকাশ করেন না এবং অর্থলাভ হইলে হৃষ্ট বা লাভ না হইলে দুঃখিত হয়েন না; এই নিমিত্তই সৰ্ব্বস্থানে সৰ্ব্বলোকে তাঁহার সম্মান করিয়া থাকে। এইরূপ সৰ্ব্বগুণান্বিত ব্যক্তি কাহার প্রিয়পাত্র না হয়?’ ”