কহেন জনমেজয়, শুন তপোধন।
অতঃপর কিবা করিলেন নারায়ণ।।
দুর্য্যোধন সভা হৈতে উঠি হৃষিকেশ।
কিবা কর্ম্ম করিলেন, কহ সবিশেষ।।
মুনি বলে, শুন পরীক্ষিতের নন্দন।
কহিব পুরাণ কথা, করহ শ্রবণ।।
সাত্যকি সহিত কৃষ্ণ চলিয়া সত্বরে।
দেখেন বিদুর নাহি আপনার ঘরে।।
বিদুর বিদুর বলি ডাকেন শ্রীহরি।
বাহির হলেন কুন্তী শব্দ অনুসারি।।
গোবিন্দে দেখিয়া কুন্তী আনন্দে পূরিল।
পূর্ণিমার চন্দ্র যেন হাতেতে পাইল।।
আলিঙ্গিয়া শিরে চুম্বি কান্দে অবিশ্রাম।
দুই পায়ে ধরি কৃষ্ণ করেন প্রণাম।।
পাদ্য অর্ঘ্য আনি কুন্তী দিল সেইক্ষণে।
বসাইল গোবিন্দেরে কুশের আসনে।।
গোবিন্দের আগে কুন্তী কান্দে উচ্চৈঃস্বরে।
মোর সম ভাগ্যহীন নাহিক সংসারে।।
আজন্ম দুঃখেতে মম দহিল শরীর।
এত কষ্টে পাপ আত্মা না হয় বাহির।।
শিশু পুত্রে রাখি স্বামী স্বর্গবাসে গেল।
পুত্রগণ এত কষ্ট চক্ষে না দেখিল।।
সঙ্গে গেল ভাগ্যবতী মদ্রের নন্দিনী।
আমি সঙ্গে না গেলাম, অধম পাপিনী।।
দারুণ পাপিষ্ঠ খল রাজা দুর্য্যোধন।
বারে বারে যত দুঃখ দিলেক দুর্জ্জন।।
বিষ খাওয়াইল ভীমে নাশিবার তরে।
ধর্ম্ম হতে রক্ষা পাইলেক বৃকোদরে।।
অনন্তর কপটতা করি পাপমতি।
অগ্নিগৃহ করি দিল করিবারে স্থিতি।।
তাহাতে পাইল রক্ষা বিদুর কৃপাতে।
দ্বাদশ বৎসর দুঃখে ভ্রমিনু বনেতে।।
যাঞাতে যে করিলাম বিপ্র আচরণ।
বহু কষ্ট পেয়ে তবে গেনু পাঞ্চালেরে।
পাঁচটি কুমার গেল ভিক্ষা অনুসারে।।
আমার পুণ্যের ফল উদয় হইল।
সভামধ্যে লক্ষ্য বিন্ধি দ্রৌপদী পাইল।।
পুত্রগণ পক্ষ রাজা দ্রুপদ হইল।
দিনকত তথা মাত্র সুখেতে বঞ্চিল।।
অনন্তর দেশে এলে খল কুরুপতি।
রহিবারে ইন্দ্রপ্রস্থে দিলেক বসতি।।
আপন ইচ্ছায় ভাগ দিল যেবা কিছু।
তাহাতে সন্তুষ্ট হৈল মোর পঞ্চ শিশু।।
ধর্ম্মবলে বাহুবলে সঞ্চিল রতন।
পিতৃ-আজ্ঞা ধরি যজ্ঞ করিল সাধন।।
দেখিয়া বিভব মোর দুষ্ট দুর্য্যোধন।
শকুনির সহ যুক্তি করিয়া দারুণ।।
কপট পাশায় জিনি সর্ব্বস্ব লইল।
নিয়ম করিয়া বনবাসে পাঠাইল।।
যে নিয়ম করে পুত্র সবার অগ্রেতে।
তাহাতে হইল মুক্ত ধর্ম্মবল হৈতে।।
তপস্বীর বেশ ধরি মম পুত্রগণ।
দ্বাদশ বৎসর বনে করিল ভ্রমণ।।
এক সম্বৎসর অজ্ঞাতেতে কাটাইল।
এত কষ্ট দিয়া তবু দয়া না জন্মিল।।
সম্প্রীতে ছাড়িয়া রাজ্য পাপিষ্ঠ না দিল।
যুদ্ধ করি মরিবেক এই সে হইল।।
যুদ্ধ করিবারে চাহে মোর পুত্র সনে।
না জানি কপালে কিবা আছয়ে লিখনে।।
এতেক বলিতে শোক বাড়িল অপার।
উচ্চৈঃস্বরে কান্দে কুন্তী করি হাহাকার।।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
ব্যাস বিরচিত দিব্য ভারত পুরাণ।।