২২তম অধ্যায়
বন্ধুবান্ধবসহ জামাতা জয়দ্রথের জন্য শোক
“হে বাসুদেব! ঐ দেখ, গৃধ্র ও জম্বুকগণ ভীমসেনের হস্তে নিহত মহাবীর অবন্তিনাথকে অনাথের ন্যায় ভক্ষণ করিতেছে। ঐ বীর অসংখ্য শত্রুকে নিপাতিত করিয়া শোণিতাক্ত কলেবরে বীরশয্যায় শয়ন করিয়াছেন। শৃগাল, কঙ্ক ও ক্রব্যাদগণ উঁহাকে ইতস্ততঃ আকর্ষণ করিতে আরম্ভ করিয়াছে। রমণীগণ মিলিত হইয়া ঐ সমরশয়ান মহাবীরের সমীপে উপবেশনপূর্ব্বক রোদন করিতেছে। ঐ দেখ, প্রতীপপুত্র মহাধনুর্দ্ধর বাহ্লীক ভল্লদ্বারা নিহত হইয়া প্রসুপ্ত শার্দুলের ন্যায় নিপতিত রহিয়াছেন। এখনও তাঁহার মুখমণ্ডল পূর্ণচন্দ্রের ন্যায় শোভা পাইতেছে। ঐ দেখ, সিন্ধুসৌবীরভৰ্ত্তা মহাবীর জয়দ্রথ ধরাতলে শয়ান রহিয়াছেন। পুত্রশোকসন্তপ্ত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ অর্জুন স্বীয় প্রতিজ্ঞাপ্রতিপালনার্থ একাদশ অক্ষৌহিণী সেনা ভেদ করিয়া উহাকে নিপাতিত করিয়াছে। অশুভসূচক শিবা ও গৃধ্রগণ চীৎকার করিতে করিতে উহাকে আকর্ষণ ও ভক্ষণ করিতেছে। সিন্ধুরাজের পত্নীগণ উহার সমীপে উপবিষ্ট হইয়াও উহাদিগকে নিবারণ করিতে সমর্থ হইতেছে না। কাম্বোজ ও যবনকামিনীগণ জয়দ্রথের নিকট উপবেশনপূর্ব্বক রোদন করিতেছে। হে জনার্দ্দন! জয়দ্রথ. যৎকালে কেকয়দিগের সহিত মিলিত হইয়া দ্রৌপদীকে গ্রহণপূর্ব্বক ধাবমান হইয়াছিলেন, পাণ্ডবগণ সেই সময়েই উহাকে বিনষ্ট করিত। তৎকালে উহারা কেবল দুঃশলার বৈধব্যনিবারণার্থ সিন্ধুরাজকে পরিত্যাগ করে, এক্ষণে সেই দুঃশলার অনুরোধেই উঁহাকে কি নিমিত্ত জীবিত রাখিল না? ঐ দেখ, দুঃশলা দুঃখশোকে নিতান্ত ব্যাকুলা হইয়া পাণ্ডবগণের প্রতি আক্রোশ প্রকাশ ও আপনাকে বিপদগ্রস্ত জ্ঞান করিতেছে। হায়! আজ আমার বালিকা কন্যা ও পুত্রবধূগণ বিধবা হইল! ইহার পর অধিক দুঃখ আর কি আছে? হা! কি কষ্ট! ঐ দেখ, দুঃশলা পতির মস্তক না দেখিয়া শোকভয় পরিত্যাগপূর্ব্বক ইতস্ততঃ ধাবমান হইতেছে।-মহাবীর সিন্ধুরাজ পুত্রবৎসল পাণ্ডবগণকে নিবারণ ও তাহাদের অসংখ্য সৈন্যকে সংহারপূর্ব্বক স্বয়ং কালকবলে নিপতিত হইয়াছেন। পূর্ণচন্দ্রবদনা কামিনীগণ ঐ মত্তমাতঙ্গসদৃশ বীরকে পরিবেষ্টন পূর্ব্বক রোদন করিতেছে।”