২২৪. অগ্নির নিকট অর্জুনের অস্ত্রপ্রার্থনা
চতুর্বিংশত্যধিকদ্বিশততম অধ্যায়।
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! এইরূপে সর্বদা গ্লানিযুক্ত ভগবান হুতাশন বারংবার হতাশ হইয়া তৎক্ষণাৎ কোপাকুলিতচিত্তে ব্ৰহ্মার নিকট গমন করিলেন। তথায় উপস্থিত হইয়া তাঁহাকে আনুপূর্বিক সমস্ত বৃতান্ত নিবেদন করিলেন। এ মনোমধ্যে কিয়ৎক্ষণ চিন্তা করিয়া বন্ধিকে কহিলেন, হে অনল! অদ্য দেবরাজ ইন্দ্রের সঙ্গে যে প্রকারে তুমি খাণ্ডববন দগ্ধ করিতে পারিবে, আমি এইরূপ এক উপায় অবধারণ করিয়াছি, শ্রবণ কর। দেবকাৰ্য অনুষ্ঠান করিবার নিমিত্ত পূর্বদেব নর ও নারায়ণ মলোকেবতীর্ণ হইয়াছেন। লোকে তাহাদিগকে কৃষ্ণার্জুন বলিয়া আহ্বান করিয়া থাকে। তুমি কৃষ্ণার্জুন সমভিব্যাহারে খাণ্ডববনে গমন করিয়া দাবদাহ করিবার নিমিত্ত তাহাদিগের সহায্য গ্রহণ কর। তৎপরে দেবগণ রক্ষা করিলেও তুমি অবলীলাক্রমে সেই অরণ্য দগ্ধ করিতে পারিবে। কৃষ্ণার্জুন সমবেত হইয়া সমস্ত বন্যজন্তুদিগকে এবং অধিক কি বলিব, দেবরাজ ইন্দ্রকেও যত্নপূর্বক নিবারণ করিতে পারিবেন, ইহাতে অনুমাত্র সন্দেহ নাই। এই কথা শুনিয়া হুতাশন কৃষ্ণার্জুন সন্নিধানে উপনীত হইয়া সাহায্যদানার্থে প্রার্থনা করিলেন। বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! অর্জুন ও কৃষ্ণের নিকট উপস্থিত হইয়া অগ্নি যেরূপে প্রার্থনা করিয়াছিলেন, তাহা পূর্বেই আপনাকে অবগত করিয়াছি। তৎপরে অর্জুন অগ্নিবাক্য শ্রবণ করিয়া তৎকালোচিত প্রত্যুত্তর প্রদান করিয়া কহিলেন, হে অগ্নে! আমার বহুতর দিব্যাস্ত্র আছে, তদ্বারা আমি শত শত বজ্রধরের সহিত যুদ্ধ করিতে পারি। কিন্তু যৎকালে আমি সমরক্ষেত্রে বিক্ৰম প্ৰকাশ করিব, তখন আমার ভুজবেগ সন্থ করিতে পারে,এমন ধনুঃ নাই। আমি অতি সত্বরে শর ক্ষেপ করিতে পারি, আমার শরের আবশ্যকতা নাই। আমার রথ মদীয় শস্ত্ৰপুঞ্জ বহন করিতে অসমর্থ, অতএব বায়ুবৎ বেগশালী পাণ্ডুরবর্ণ দিব্য অশ্ব ও এক উৎকৃষ্ট রথ প্রদান করিতে হইবে। আর কৃষ্ণেরও বাহুবলতুল্য অস্ত্র নাই, যদ্বারা তিনি নাগ ও পিশাচগণকে সংহার করিতে পারিবেন। হে ভগবন্! যদ্বারা আমরা বজ্রধর ইন্দ্রকে নিবারণ করিতে পারি, তাহার উপায় অবধারণ করিয়া দিন। আমরা কেবল পৌরুষ প্রকাশ করিয়া কাৰ্য্য সংসাধনে প্রবৃত্ত হইব, কিন্তু আপনাকে তদুপযোগী উপকরণ সকল আহরণ করিতে হইবে।