২২১তম অধ্যায়
আহারনিদ্রার সংযম-সাধনোপায়
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “পিতামহ! ব্রতপরায়ণ দ্বিজাতিগণ স্বর্গ ও পুত্ৰাদিকামনায় যজ্ঞশেষে মাংসাদি ভোজন করেন, উহা যুক্তিসিদ্ধ কি না?”
ভীষ্ম কহিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ! যাঁহারা বোদোক্ত ব্রতনিষ্ঠ না হইয়া সুখের নিমিত্ত অভোজ্য মাংসাদি ভোজন করেন, তাঁহারা স্বেচ্ছাচারী। উঁহারা ইহলোকে পতিত বলিয়া গণ্য হয়েন। আর যাঁহারা বেদোক্ত বিধি অনুসারে উহা ভোজন করিয়া থাকেন, তাঁহারা ব্রতানুরাগী। তাঁহাদিগকে স্বৰ্গভোগের পর পুনরায় পতিত হইতে হয়।”
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “পিতামহ! অনেকেই উপবাসকে তপস্যা। বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়া থাকেন; অতএব বস্তুতঃ উহা তপস্যা কি না, তাহা কীৰ্ত্তন করুন।”
ভীষ্ম কহিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ! অজ্ঞ ব্যক্তিরা এক মাস বা এক পক্ষ উপবাসকে যে তপস্যা বলিয়া প্রতিপন্ন করে, সাধুদিগের মতে তাহা তপস্যা নহে। উহাতে আত্মদানের বিলক্ষণ ব্যাঘাত জন্মিয়া থাকে। ত্যাগ ও নম্রতাই উৎকৃষ্ট তপস্যা। ধর্ম্মার্থ ব্রাহ্মণ পুত্ৰকলাদিপরিবৃত হইয়াও সতত উপবাসী, ব্রহ্মচারী, মুনি, দেবতানিষ্ঠ, নিদ্রাত্যাগী ও বিঘসাশী হইবেন এবং অমাংসাশী হইয়া সতত পবিত্রভাব ধারণ, দেবতার ন্যায় দ্বিজগণের পূজা, অতিথিদিগের যথোচিত সত্ত্বার ও অমৃত ভোজন করিবেন।”
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “পিতামহ! ব্রাহ্মণ কিরূপ অনুষ্ঠান করিলে উপবাসী, ব্রহ্মচারী, বিঘসাশী ও অতিথিসৎকারপরায়ণ হইতে পারেন?”
ভীষ্ম কহিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ! যে ব্রাহ্মণ দিবসে একবার ও রাত্রিকালে একবার এই দুইবার মাত্র আহার করেন, তদ্ব্যতীত দিবারাত্রিমধ্যে আর আহার করেন না, তাঁহাকে সতত উপবাসী বলিয়া নির্দ্দেশ করা যাইতে পারে। যিনি সত্যবাদী ও জ্ঞাননিষ্ঠ হয়েন এবং কেবল, ঋতুকালে ভাৰ্য্যাসম্ভোগ করেন, তিনি ব্রহ্মচারী। যিনি বৃথামাংস ভোজন না করেন, তাঁহাকেই অমাংসাশী বলা যায়। যিনি সতত দানশীল ও পবিত্রভাবসম্পন্ন হয়েন এবং কদাচ দিবসে নিদ্রিত না হয়েন, তাঁহাকে নিদ্রাত্যাগী বলিয়া নির্দ্দেশ করিতে পারা যায়। যিনি ভৃত্য ও অতিথিবর্গের ভোজনাবসানে আহার করেন, তিনি অমৃতাশী। যে ব্রাহ্মণ অতিথিগণ ভোজন না করিলে প্রাণান্তেও আহার করেন না, তিনি স্বর্গ অধিকার করিতে সমর্থ হয়েন। যিনি দেবতা, পিতৃলোক, অতিথি ও ভৃত্যগণের ভোজনাবসানে ভোজন করেন, তিনি বিঘসাশী। এই সমুদয় ব্রাহ্মণের অক্ষয় ব্রহ্মলোক লাভ হইয়া থাকে। দেবগণ অপ্সরাদিগের সহিত তাঁহার আবাসে গমনপূৰ্ব্বক তাঁহার সৎকার করেন। যিনি দেবতা ও পিতৃগণের সহিত ভোজন করিয়া পুত্রপৌত্রের সহিত সুখে কালযাপন করেন, তাঁহার অত্যুৎকৃষ্ট গতিলাভ হয় সন্দেহ নাই।”