রাবণের প্রতি নন্দীর অভিশাপ প্রদান ও রাবণ কর্ত্তৃক কৈলাস পর্ব্বত উত্তোলন
কুবের জিনিয়া লয় শঙ্করের পুরী।
মহাদেব সহ সম্ভাষিতে ত্বরা করি।।
কার্ত্তিকের জন্মস্থান স্বর্ণ-শরবন।
ঠেকিয়া তাহাতে রথ রহিল রাবণ।।
বনেতে ঠেকিল রথ নহে আগুসার।
রাবণ পাত্রের সহ যুক্তি করে সার।।
মারীচ রাক্ষস কহে রাবণের কাণে।
কুবেরের এই রথ রাক্ষসে না মানে।।
সারথি চালায় রথ, রথ নাহি নড়ে।
দেখিতে দেখিতে শিব-দূত আসি পড়ে।।
না চালাও এই রথ কৈলাস-শিখর।
গৌরী সহ কেলি করিছেন মহেশ্বর।।
হেথা দেব দানব গন্ধর্ব্ব নাহি আসে।
এ পর্ব্বতে আসিতেছ কাহার সাহসে।।
কুপিল রাবণ রাজা দূতের বচনে।
রত হৈতে নামিয়া আইলা শিবস্থানে।।
নন্দী নামে দ্বারী ছিল রাবণ তা দেখে।
হাতে জাঠা করি নন্দী সেই দ্বার রাখে।।
বানরের মত মুখ দেখিয়া নন্দীর।
উপহাস করিল রাবণ মহাবীর।।
নন্দী বলে আমি শঙ্করের দ্বারপাল।
আমার সম্মুখে কেন কর ঠাকুরাল।।
দেখিয়া আমার মুখ কর উপহাস।
এ বানর তোমার করিবে সর্ব্বনাশ।।
দুরাচার তোরে মারি কোন্ প্রয়োজন।
নিজ দোষে সবংশে মরিবি দশানন।।
রাবণ নন্দীর শাপ নাহি শুনে কাণে।
কুড়ি হাতে সাপটিয়া সে কৈলাসে টানে।।
কৈলাস ধরিয়া দশানন দিল নাড়া।
সত্তর যোজন নড়ে কৈলাসের গোড়া।।
টলমল করে গিরি দেব কাঁপে ডরে।
পর্ব্বত-নিবাসী গেল ধূর্জ্জটির আড়ে।।
সবে বলে মহাদেব কর পরিত্রাণ।
কোন্ বীর আসিয়া পর্ব্বতে দিল টান।।
রাবণের ক্রীড়া দেখি হাসে কৃত্তিবাস।
বাম-চরণের নখে চাপেন কৈলাস।।
ব্যথাতে রাবণ ছাড়ে মহা চীৎকার।
শিবের নিকটে কি তাহার অহঙ্কার।।
হইল পুষ্পক মুক্ত ধূর্জ্জটির বরে।
সেই রথে চড়ি রাবণ পলায়ন করে।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের জন্ম শুভক্ষণে।
গাহিল উত্তরকাণ্ড গীত রামায়ণে।।