২১. যমসংহিতা

যমসংহিতা

যমসংহিতা ব’লে পরিচিত সূক্তগুচ্ছে রয়েছে অন্ত্যেষ্টিবিষয়ক মন্ত্রসমূহ। এগুলি যদিও দশম মণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত। তবু শুধু এই তথ্য দিয়ে এদের অর্বাচীনত্ব প্রমাণিত হবে না। কেননা মৃত্যু ও প্রখ্যাত পূর্বপুরুষ সম্পর্কিত আচার-অনুষ্ঠান ও প্রত্নকথা ছাড়া কোনো প্রাচীন জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বই সম্পূর্ণ অকল্পনীয়। আলোচ্য অন্ত্যেষ্টিসূক্তগুলিতে যম, ভৃগু, অঙ্গিরা, অগ্নি এবং পিতৃগণ বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছেন। বিচিত্র ধরনের আবেগ ও দৃষ্টিভঙ্গি এদের মধ্যে অভিব্যক্ত হলেও অপরিচারের স্বাভাবিক অবিশ্বাসজনিত মৃত্যুভীতিই এতে সবচেয়ে মৌলিক। ইহজীবনের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যেহেতু এই ভয় দূরীকরণের পক্ষে একেবারেই যথেষ্ট নয়, প্রাচীন মানুষ তাই বিচিত্র আবেগের দ্বারা আলোড়িত হ’ত ; মৃতমানুষেরা এক সময় জীবিতের প্রিয় পরিজন ছিল, অতএব অচিরেই তাদের জীবিত মানুষের পক্ষে অনিষ্টকারী হয়ে ওঠার আশঙ্কা নেই। তবুও অতৃপ্ত সুখতৃষ্ণা ও আকাঙক্ষা তাদের প্রসন্ন আত্মাকেও হয়ত বা ভীতিপ্ৰদ করে তুলতে পারে, এমন বিশ্বাস ছিল। তাই উপযুক্ত অর্ঘ্য নিবেদন করে সে আতঙ্কিত সম্ভাবনাকে ঠেকাবার চেষ্টা করা হত। জীবিতদের মধ্যে প্রথম যিনি মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছিলেন, সেই যম নিশ্চয়ই বিদেহী প্রিয়জনকে মরণোত্তর কোনো জগতে রক্ষণাবেক্ষণ করবেন এবং অঙ্গিরা, মাতলি ও ভৃগুর সাহচর্যে আমোদপ্রমোদে কালব্যাপনে সাহায্য করবেন। মৃত আমীয়ের মরণোত্তর ভবিষ্যৎ জীবিতদের কাছে অজ্ঞাত, অজ্ঞেয় ; তাই যাতে প্রিয় পরিজন পরলোকে সুখেস্বাচ্ছন্দে ও আনন্দে থাকে। এই ঐকান্তিক কামনা ও তাদের মঙ্গলের জন্যে উৎকণ্ঠা ও আকুতি এই সূক্তগুলিকে একটি করুণতায় মণ্ডিত করেছে। এইখানেই এদের কাব্যমূল্য।অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিষয়ে এইসব সূক্তের সঙ্গে তুলনীয় রচনা অন্যান্য প্রাচীন জনগোষ্ঠীর সাহিত্যের মধ্যেও পাওয়া যায়।