মাতা প্রভৃতির বিরহে যুধিষ্ঠিরাদির বিষাদ
বৈশম্পায়ন বলিলেন, এ দিকে পাণ্ডবগণ কামিনীগণসমভিব্যাহারে হস্তিনায় আগমনপূৰ্ব্বক জ্যেষ্ঠতাত ধৃতরাষ্ট্র ও জননী কুন্তীর বনবাসনিবন্ধন শোকে নিতান্ত কাতর হইয়া উঠিলেন। পৌরজনেরা অন্ধরাজের নিমিত্ত সতত অনুতাপ করিতে লাগিলেন। ঐ সময় হস্তিনায় আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই শোকাকুল হইয়া পরস্পরকে সম্বোধনপূৰ্ব্বক কহিতে লাগিল, “হায়! পুত্রশোকার্ত্ত বৃদ্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্র এবং মনস্বিনী গান্ধারী ও কুন্তী কিরূপে দুর্গম অরণ্যে বাস করিতেছেন? পূৰ্ব্বে মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রকে কখন অসুখের লেশমাত্র সহ্য করিতে হয় নাই। পাণ্ডবজননী কুন্তী রাজশ্রী ও পুত্রস্নেহ পরিত্যাগ করিয়া অরণ্যে অবস্থানপূৰ্ব্বক অতিকষ্টে কালহরণ করিতেছেন এবং অন্ধরাজের শুশ্রূষায় অনুরক্ত মহাত্মা বিদুর ও সঞ্জয়কে বিষম যন্ত্রণা ভোগ করিতে হইতেছে।”
পুরবাসী লোকসমুদয় এইরূপে নানাপ্রকার বিলাপ করিতে আরম্ভ করিলে, পাণ্ডবগণ পুত্রবিহীন বৃদ্ধ অন্ধরাজ, জননী কুন্তী ও গান্ধারী এবং মহাত্মা বিদুরের শোকে পূৰ্ব্বাপেক্ষা অধিকতর কাতর হইয়া কিছুতেই অধিক দিন পুরমধ্যে বাস করিতে সমর্থ হইলেন না। ঐ সময় কি রাজ্যসম্ভোগ, কি স্ত্রীসংসর্গ, কি বেদাধ্যয়ন, কিছুতেই তাঁহাদের প্রীতিলাভ হইল না। তাঁহারা বারংবার অন্ধরাজেবু বনবাস, জ্ঞাতিবধ এবং বালক অভিমন্যু, মহাত্মা কর্ণ, দ্রৌপদীতনয় ও অন্যান্য সুহৃগণের নিধনবৃত্তান্ত স্মরণ করিয়া নিতান্ত বিষণ্ন হইতে লাগিলেন। সৰ্ব্বদা পৃথিবীকে বীরশূন্য ও ধনশূন্য বলিয়া বিবেচনা হওয়াতে কোনরূপেই তাঁহাদিগের শান্তিলাভ হইল না। পুত্রশোকসন্তপ্তা দ্রৌপদী ও সুভদ্রাও নিতান্ত দুঃখিত হইয়া বিষণ্নবদনে কালহরণ করিতে লাগিলেন। ফলতঃ তৎকালে উহারা সকলেই কেবল উত্তরার গর্ভসম্ভূত মহাত্মা পরীক্ষিৎকে দর্শন করিয়া প্রাণধারণ করিয়াছিলেন।