ভীষ্ম বলিলেন শুন অপূর্ব্ব কথন।
অপার মহিমা রাজা গোবিন্দ সেবন।।
লিঙ্গরূপী জনার্দ্দন শিলা অবতার।
শ্রদ্ধা করি পূজা যেই করয়ে তাঁহার।।
শুভলগ্ন শুভতিথি শুভক্ষণ দিনে।
মধুপর্কে স্নান যে করায় নারায়ণে।।
সর্ব্ব পাপে মুক্ত হয় সেই মহাশয়।
শতবংশ সহ যায় বিষ্ণুর আলয়।।
নারিকেল জলেতে স্নাপয়ে পশুপতি।
শ্রদ্ধা ভক্তি করিয়া বিবিধ করে স্তুতি।।
শতবংশ সহ সেই নিষ্পাপ হইয়া।
শিবের সদনে যায় বিমানে চড়িয়া।।
দেবতা উদ্দেশে যেই পুষ্পোদ্যান করি।
ভক্তি করি পূজা করে হর কিম্বা হরি।।
অন্তঃকালে স্বর্গপুরে হয় তার গতি।
ইহলোক পরলোকে না হয় দুর্গতি।।
তুলসী আরাম যেই করিয়া রোপণ।
ত্রিসন্ধ্যা স্তবন করে ত্রিসন্ধ্যা বন্দন।।
তারে তুষ্ট হন প্রভু দেব জগৎপতি।
সর্ব্বপাপে মুক্ত হয় সেই মহামতি।।
বৈভব বিস্তর আসি করয়ে সংসারে।
যার যে বৈভব হয় তেমন প্রকারে।।
অল্প বা বিস্তর পুণ্য গণি যে সমান।
তার কথা কহি রাজা শুন সাবধান।।
তড়াগ পুষ্কর্ণি দেয় ধনাঢ্য পুরুষে।
ব্রাহ্মণে করয়ে দান অশেষ বিশেষে।।
চতুষ্পাদ পুণ্য পূর্ণ কোথায় গণন।
দ্বিপাদেতে পুণ্য কোথা শুন হে রাজন।।
দ্বিপাদেতে পূর্ণ পুণ্য মধ্যমেতে গণে।
নিকৃষ্টে পাদৈক পূর্ণ বেদেতে বাখানে।।
ইতিমধ্যে করে পুণ্য যত শক্তি যার।
সমান গণি যে পুণ্য শ্রদ্ধা অনুসার।।
ধেনু রত্ন তণ্ডুলাদি বস্ত্র আভরণ।
অশ্রদ্ধায় করে যেই দ্রব্য নিবেদন।।
অঙ্গহীন হয় পুণ্য, না হয় উহাতে।
নিশ্চয় ধর্ম্মের পুত্র কহিনু তোমাতে।।
দরিদ্র কিঞ্চিৎ যদি দেয় শ্রদ্ধান্বিতে।
চতুষ্পাদ পুণ্য তার হয় যে নিশ্চিতে।।
যেমন বৈভব তেন বিপ্রে দেয় দান।
শ্রদ্ধা ভক্তি করিয়া পূজয়ে ভগবান।।
নাহিক সংশয় ইথে বেদের বাখান।
তড়াগ কূপেতে পুণ্য গণি যে সমান।।
এক বীজ রোপণ করয়ে দুঃখীজন।
সমান ইহার পুণ্য করি যে গণন।।
কোটি কোটি ব্রাহ্মণে ভুঞ্জান ধনীগণ।
দরিদ্র করায় এক বিপ্রকে ভোজন।।
লক্ষ ধেনু বিপ্রে দান করে ধনীজন।
দরিদ্রের এক গাভী হয় তার সম।।
কোটি কোটি মনুষ্যে পালয়ে ধনীজন।
ব্রাহ্মণ ক্ষন্ত্রিয় আদি আর শূদ্রগণ।।
দরিদ্র পুরুষ এক মনুষ্য পালয়।
সমান লভয়ে ফল বেদেতে বলয়।।
ধনীতে পূজয়ে কৃষ্ণে দিয়া উপহার।
ঘৃত দুগ্ধ রত্ন বস্ত্র তণ্ডুল অপার।।
দরিদ্র পূজয়ে জল দিয়া নারায়ণ।
শ্রদ্ধা ভক্তি স্তুতিবশে হয় তার সম।।
ধনাঢ্য পুরুষ দেয় দিব্য দেবালয়।
ইষ্টক পাষাণ হেমমণি রৌপ্যময়।।
মুকুতার ঝারা স্তম্ভ প্রবাল পাথর।
নানাবিধ দিব্য রত্ন অতি মনোহর।।
শুভতিথি শুভক্ষণ করি নিরূপণ।
শ্রদ্ধান্বিত গোবিন্দেরে করে সমর্পণ।।
অন্নদান ভূমিদান ধেনুদান আদি।
ব্রাহ্মণে ভুঞ্জায় কত না হয় অবধি।।
মৃত্তিকার গৃহ এক করিয়া রচন।
তাহাতে স্থাপয়ে হরি ধনহীন জন।।
দুই এক ব্রাহ্মণে করয়ে অন্নদান।
সমান লভয়ে পুণ্য বেদেতে বাখান।।
সংক্ষেপে কহিনু দান ধর্ম্মের কথন।
শোক দূর কর রাজা স্থির কর মন।।
বিধির লিখন ফল ভুঞ্জয়ে সংসারে।
যেন ধর্ম্ম তেন ফল বেদেতে বিচারে।।
অধর্ম্মেতে কেহ ধর্ম্ম লভে কর্ম্মফলে।
ধর্ম্ম হৈতে পাপ কেহ লভয়ে ভূতলে।।
এত শুনি যুধিষ্ঠির সবিস্ময় মন।
জিজ্ঞাসেন কহ দেব ইহার কারণ।।
অধর্ম্মেতে কেবা ধর্ম্ম পাইল সংসারে।
শুনিবারে ইচ্ছা বড় কহিবে আমারে।।
মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।
আমার কি শক্তি ইহা বর্ণিবারে পারি।।
মস্তকে বন্দিয়া মাত্র বিপ্র পদরজ।
কহে কাশীদাস গদাধর দাসাগ্রজ।।