২১তম অধ্যায়
কর্ণের জন্য গান্ধারীর শোক
“হে কৃষ্ণ! ঐ দেখ, জ্বলিনলসন্নিভ [৭] অমর্ষপরায়ণ [ক্রোধনস্বভাব] মহাধনুর্দ্ধর কর্ণ অসংখ্য অতিথিকে নিপাতিত করিয়া অর্জুনের প্রভাব প্রশান্তভাবে অবলম্বনপূর্ব্বক শোণিতলিপ্তগাত্রে ধরাতলে শয়ন করিয়াছে। আমার মহারথ পুত্রগণ পাণ্ডবভয়ে ভীত হইয়া, যাহাকে যূথপতির ন্যায় অগ্রসর করিয়া অরাতির সহিত সংগ্রামে প্রবৃত্ত হইত, এক্ষণে সেই বীর মত্তমাতঙ্গনিপাতিত মাতঙ্গের ন্যায়, সিংহার্দ্দিত শার্দুলের ন্যায় অর্জুনশরে নিহত হইয়াছে। রমণীগণ একত্র সমবেত হইয়া আলুলায়িতকেশে উহার সমীপে উপবেশনপূর্ব্বক রোদন করিতেছে। ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির যাহার ভয়ে নিতান্ত উদ্বিগ্ন হইয়া ত্রয়োদশ বৎসর নিদ্রাগত হয়েন নাই, এক্ষণে সেই ইন্দ্রের ন্যায় অপরাজেয়, যুগান্তকালীন হুতাশনের ন্যায় তেজস্বী, হিমালয়ের ন্যায় স্থির, দুর্য্যোধনের প্রধান অবলম্বন মহাবীর কর্ণ অর্জুনহস্তে প্রাণপরিত্যাগপূর্ব্বক বায়ুভগ্ন দ্রুমের ন্যায় ভূতলশায়ী হইয়াছে। ঐ দেখ, বৃষসেনজননী কর্ণবনিতা বসুধাতলে বিলুণ্ঠিত হইয়া বিলাপ করিয়া কহিতেছে, ‘হা নাথ! এতদিনে আচার্য্যের অভিশাপ সত্য হইল। পৃথিবী তোমার রথচক্র গ্রাস করিলে নির্দ্দয় ধনঞ্জয় সেই অবস্থায় তোমার মস্তকচ্ছেদন করিল। ক্রব্যাদগণ তোমার দেহ ভক্ষণ করিয়া আল্পাবশেষ করাতে উহা কৃষ্ণপক্ষীয় চতুর্দ্দশীর চন্দ্রমার ন্যায় নিতান্ত অপ্রিয়দর্শন হইয়াছে। কর্ণবনিতা এই বলিয়া একবার ধরাশায়ী হইতেছেন এবং পুনরায় সমুত্থিত ও পতিপুত্রশোকে অধীর হইয়া কর্ণের বদন আঘ্রাণ করিতেছেন।”