২১.
অ্যাডমস গম্ভীর ভাবে বলল, অন্যের ব্যাপারে নাক গলিয়ে সারাজীবন তুমি পয়সা কামিয়েছে। তোমার অনেক কিছুই জানা আছে কে কার্সনের খুন সম্বন্ধে। আমায় কিছু বলতে সংকোচ করনা, যা জানো বল।
উত্তর দিল সুইটি, মরিস ইয়ার্দের সঙ্গে আমি কথা বলতাম, লেফটেন্যান্ট যদি আপনার জায়গায় আমি থাকতাম, উনি অনেক খবর জানেন।
আমি জানিনা তিনি কে?
সে হল কে কার্সনের নৃত্যসঙ্গী, মরিস কে-কে ছেড়ে চলে যায়। কারণ ওদের মনোমালিন্য হয়েছিল। সুইটি সংবাদ দিল। অ্যাডমস জানতে চাইলেন ওদের ঝড়ার কারণটা কি? একই অ্যাপার্টমেন্টে থাকত কে আর গিল্ডা। গিল্ডার প্রেমে পড়ে যায় মরিস। ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় এ নিয়ে গিল্ডার সঙ্গে কের, লস এঞ্জলসে চলে যায় মরিস কিছুদিন পর। অবশ্য তার সঙ্গী হয় গিল্ডা। ইয়ার্দে কিছুদিন আগে কের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। আমিও পরের কথাবার্তা সব শুনি আমার ঘরের দেয়ালে কান পেতে। একদিন শুনতে পেলাম কের সঙ্গে মরিসইয়ার্দের খুব বাকযুদ্ধ হচ্ছে। কথা প্রসঙ্গে কে-কে খুন করবে বলে মরিস শাসিয়েছিল।
টুপি খুলে মাথা চুলকোতে লাগল লেঃ অ্যাডমস। ক্রমশঃ জট পাকিয়ে যাচ্ছে সমস্ত ব্যাপারটা। জনিকেই এ পর্যন্ত খুনী সাব্যস্ত করেছিল অ্যাডমস। ঘটনার গতি যে অন্যদিকে বাঁক নিচ্ছে র্যাফায়েল সুইটিয়ের বিবৃতিতে বোঝা যাচ্ছে। এ বিষয়ে অ্যাডমস নিশ্চিন্ত যে, জনি বা মরিস যেই খুনী হোক, গিল্ডা ডোরম্যান এ বিষয়ে কিছুটা জড়িত।
কোথায় থাকে মরিস ইয়ার্দে? অ্যাডমস প্রশ্ন করল। র্যাফায়েল সুইটি বলল, লেঃ ওয়াশিংটন হোটেলে থাকে।র্যাফায়েল সুইটি-রঅ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল অ্যাডমস চিন্তান্বিত অবস্থায়।
.
২২.
কেন্ আর জনি দুজনেই তীরে উঠে এল নৌকো থেকে নেমে। কিভাবে লেঃ অ্যাডমসের হাতে জনিকে তুলে দেওয়া যায় ওকে বুঝতে না দিয়ে একথাই কে ভাবছে। আবার ভয়ও আছে। তার অন্যদিক দিয়ে। টাঙ্গের পিস্তলটা জনির পকেটে আছে অর্থাৎ জনি সশস্ত্র। একবার জ্বলছে আর নিভছে ওয়াশিংটন হোটেলের নিয়ন আলো, হোটেলটা সামনেই। হঠাৎ একটা পুলিস কনস্টেবল, যেন আকাশ থেকে তাদের সামনে আবির্ভূত হল। ভাল করে তাকাল সে দুজনের মুখের দিকে, বলল এমন একজনকে খুঁজে বেড়াচ্ছি আমরা যার নাম কেন্ হল্যান্ড। এরকম আপনার সঙ্গে তার চেহারার অবিকল মিল আছে। কেন হল্যান্ড নাকি আপনি? কেন উত্তেজিত হয়ে জবাব দিল, কখনই আমি নই। ধীরে ধীরে পুলিশ কনস্টেবলটির পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল জনি, কে কথা বলতে ব্যস্ত থাকায় দেখতে পায়নি, জনির পিস্তল গর্জে উঠল হঠাৎ আর পুলিসটি। পড়ে গেল মাটিতে মুখ থুবড়ে কাটা কলাগাছের মতই।
কেনের হাত ধরে টানল জনি, এখুনি পুলিস আমাদের পিছু নেবে, চলে এসো তাড়াতাড়ি দৌড়ও।
যখন দুজনে ছুটছিল হঠাৎ ওয়াশিংটন হোটেলের বারান্দা থেকে গুলির শব্দ হল, জনি অন্ধকারে যন্ত্রণায় ঝাঁকিয়ে উঠল বলল, আমার হাতে গুলি লেগেছে, পালিয়ে এস গুলি চালাচ্ছে ওরা। উন্মাদের মত তারা দুজন দৌড়তে লাগল, ঢুকে পড়ল সামনের একটা গলিতে, সবাইকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছে বাঁশী বাজিয়ে বড় রাস্তায় কর্তব্যরত পুলিস, ওরা শুনতে পেল। একটা ভাঙ্গা বাড়ি দেখতে পেয়ে কে দাঁড়াল, যখন ওরা গলির ভেতর দিয়ে ছুটছিল। রাস্তায় এসে একটি মেয়ে পরক্ষণেই দাঁড়াল, তাড়াতাড়ি ভিতরে চলে আসুন একপলক তাদের দুজনকে দেখে নিয়ে মেয়েটি বলল, কেন জনিকে ধরে ধরে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। অনেকগুলো লোক ছোটাছুটি করে গলির ভেতর দিয়ে চলে যাচ্ছে তারা শুনতে পেল, মেয়েটি যেইনা দরজা বন্ধ করল। তাদের দুজনকে তাড়া করেই লোকগুলো গলিতে ঢুকেছে কে বুঝতে পারল, কিন্তু তারা অন্ধকারে ঠিক হদিস করতে পারছে না।
ভেতরে শোবার ঘরে কেন্ জনিকে নিয়ে গেল, মেয়েটি নির্দেশ দিল তাকে যেন আস্তে আস্তে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হয়। মেয়েটি জল আর তোয়ালে নিয়ে আসতে কেন্ বিস্মিত হয়ে গেল। মেয়েটির শুশ্রূষার ফলে জনির হাত থেকে কিছুক্ষণ পর রক্তপড়া বন্ধ হল।
কেন্ প্রশ্ন করল টেলিফোন আছে এখানে? এখানে নেই, তবে একটা বুথ আছে গলির মোড়ে মেয়েটি উত্তর দিল। টেলিফোন করা যাবে ওখান থেকে। তবে আপনার এখন না বেরোনই ভাল কারণ চারিদিকে তল্লাশী চলছে। কেন বলল, তোমাকে ঠিক বোঝানো যাবেনা, কিছুক্ষণ আগে আমার বন্ধু একটি পুলিসকে খুন করেছে। এখান থেকে ওকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলাই যুক্তিযুক্ত।
মেয়েটি সহাস্যে বলল, তাতে আবার কি হয়েছে, সে পুলিস খুন করেছে। দুজন পুলিসকে খুন করেছে আমার ভাইও। কেন্ তবুও তার দিকে নিরাশার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, না ওকে সরাতেই হবে এখান থেকে। জনির উপরে ঝুঁকে পড়ে মেয়েটি বলল, অনেক রক্ত বেরিয়ে গেছে ওর শরীর থেকে। এখন হাঁটা চলা করা ওর পক্ষে অসম্ভব। আমি আপনাদের জন্য কফি তৈরী করে আনছি, আপনি একটু সুস্থ ভাবে বিশ্রাম নিন। কেন্ কণ্ঠে অস্বস্তি নিয়ে বলল এখানেও তো আসবে পুলিস।
মেয়েটি তাচ্ছিল্য ভরে বলল, আসেনি তো এখনও। এখন ও কথা ভুলে যান।
.
২৩.
র্যাফায়েল সুইটি উপরে উঠে এল ৪৫, ম্যাডক্স কোর্টের লিফটে চেপে। লিফট থেকে বেরোনোর পর সামনে একটি দরজা তার চোখে পড়ল। সে দরজার কলিংবেল টিপল। দরজা খুলে গেল কিছু পরেই। তার সামনে এসে দাঁড়াল গিল্ডা ডোরম্যান, পরনে তার নীল রংয়ের রাত্রিবাস। সুইটি বলল, অবাক হবেন না মিস ডোরম্যান, আমি কিছু খবর যোগাড় করে এনেছি মরিস ইয়ার্দে এবং আপনার ভাই জনির। গিল্ডা ভ্রূ সঙ্কোচন করে প্রশ্ন করল, আপনাকে তো চিনতে পারলাম না? র্যাফায়েল সুইটি আমার নাম, জনি আমার বন্ধু। ভেতরে কি আমায় যেতে দেবেন না। এভাবেই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকব আমি?
গিল্ডা বলল, কখনই আপনি ভেতরে ঢুকবেন না, চলে যান এক্ষুণি আপনি। কথা দিচ্ছি আমি আপনাকে কোন রকম বিরক্ত করব না। আপনি শুনলে অবশ্যই কৌতূহলী হবেন। কারণ আমার কাছে সেরকম কিছু সংবাদ আছে। সামান্য চিন্তা করার পর গিল্ডা সরে দাঁড়াল। ভেতরে ঢুকল সুইটি। গিল্ডা চেয়ারে বসতেই বলল, কি বলার আছে বলুন। এমনকি খবর আছে আপনার কাছে যা আমাকে বলতে হবেই।
ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই, বলছি। কৃতার্থ হওয়ার মত হেসে সুইটি বলল, একটু হুইস্কি আর সোডা দিন আগে আমাকে, গলাটা শুকনো হয়ে গেছে। গিল্ডা চাপা অথচ রুষ্ট গলায় বলল, দেখুন এখানে এসব কিছু দেওয়া যাবেনা, আপনার যা বলার আছে বলে ফেলুন। ম্যাডাম, আমি খবরের বিনিময়ে কিছু অর্থ সংগ্রহ করে থাকি। আপনি নিশ্চয়ই উৎকণ্ঠিত হবেন আমি আপনার ভাইয়ের সম্বন্ধে যে সংবাদ সংগ্রহ করেছি তা কেনার জন্য, হিসেবী গলায় সুইটি বলল।
গিল্ডা প্রশ্ন করল, আপনি কি আমায় ব্লাকমেইল করতে এসেছেন? অবশ্যই না সুইটি বলল, তবে দামী খবর পেতে গেলে দাম তত দিতেই হবে। আমি পাঁচশো ডলার নেব, যে খবর দেব তার জন্য। গিল্ডা বলল, আমার যদি অত টাকা না থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই আপনার গয়নাগাঁটি কিছু আছে হয়তো টাকা নেই। সুইটি বলল, তাতেই আমি সন্তুষ্ট। তাহলে একটু বসুন, আপনাকে দেবার মত আমার কি কি আছে ভেতরে গিয়ে দেখে আসছি। গিল্ডা বেড়ালের মত হালকা পায়ে ভেতরে চলে গেল। গিল্ডা নিঃশব্দে ঘরে ঢুকল, এক সময় সুইটি পেছন ফিরে দেখল কিছুক্ষণ বসে থাকার পর, গিল্ডার হাতে উঁচু করে পিস্তল ধরা।
পিস্তলটা সুইটির দিকে তাক করে ধরে গিল্ডা বলল, কি খবর জোগাড় করেছেন এবার বলতে পারেন। তা না হলে আমি গুলি করব আপনার পায়ে। আপনি চুরি করতে ঢুকেছিলেন আমার ঘরে একথা বলব সবাইকে, পালাতে গিয়ে ঘায়েল হয়েছেন আমার গুলিতে। একটু আগে লেঃ অ্যাডমস আমার সঙ্গে দেখা করে গেলেন সুইটি বলল, জনিই যে কের খুনী এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত। ওকে অবশ্য আমি বলেছি খুন করেছে মরিস ইয়ার্দে জনি অ সুতরাং ওর ধারণা ভুল। কঠোর দৃষ্টিতে গিল্ডা তাকে দেখল এবং প্রশ্ন করল, আপনি কেন ওঁকে একথা বলতে গেলেন। কারণ মরিস ইয়ার্দে খুন হবার আগের দিন কের ঘরে এসেছিল। সুইটি বলল, আমি ঠিক কের ঘরের নীচের তলায় থাকি, ওদের মধ্যে ভীষণ ঝগড়া হচ্ছিল শুনতে পেলাম হঠাৎ শুনতে পেলাম ইয়ার্দে কে-কে খুন করবে বলে শাসাচ্ছে। গিল্ডা জানতে চাইল, সমস্ত কথাই আপনি অ্যাডমসকে বলেছেন? সুইটি বলল হ্যাঁ, কারণ আমার পুরনো বন্ধু জনি, আমি চাইনা ওর কোন বিপদ হোক। আমার কর্তব্য বন্ধুর জন্য কিছু করা। আপনি পাঁচশো ডলার দেবেন এর বিনিময়ে। গিল্ডা অবাক হল। সুইটি ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিয়ে বলল, সে বিবেচনা আপনার নিজের উপর। আমি তার জীবন বাঁচিয়েছি, তার ওপর জনি আপনার ভাই।
এখনো কি জনির খোঁজ করছে পুলিস, গিল্ডা জানতে চাইল। বোধহয় না, সুইটি বলল। মরিস ইয়ার্দেকে খুঁজে বেড়াচ্ছে এখন অ্যাডমস। ওয়াশিংটন হোটেলে আছে মরিস, মনে হয় ওখান থেকেই তুলবে ওকে অ্যাডমস।
গিল্ডা ড্রয়ার থেকে পাঁচ ডলারের চারটে নোট বের করে সুইটি কে দিয়ে বলল, নিন। এরচেয়ে কিছু বেশি হতে পারেনা আপনার খবরের দাম। এবার মান নিয়ে সরে পড়ুন। সুইটি নিরাশ হয়ে বলল কুড়ি ডলার মাত্র, আমার হাত একেবারে খালি। দিননা ম্যাডাম আর কয়েকটা টাকা। শীঘ্রই বেরোও, পিস্তল উঁচু করে গিল্ডা গর্জন করে উঠল, যাও বেরিয়ে যাও।
যখনই বিরস বদনে সুইটি উঠতে গেল দরজার কলিং বেল বেজে উঠল। পাশের দরজা দ্রুত গতিতে খুলে, পিস্তল নামিয়ে গিল্ডা নীচু স্বরে বলল, জলদি এদিক দিয়ে নেমে যান, বড় রাস্তা পেয়ে যাবেন। সুইটি যখন বেরিয়ে যাচ্ছে, গিল্ডা আবার চাপা গলায় বলল, খবর বিক্রী করার জন্য আর কোনদিন আমার কাছে এভাবে আসবেন না কিন্তু বলে দিলাম। এই কথা বলেই সে তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দিল।
গিল্ডা এগিয়ে গিয়ে সদর দরজা খুলল, সুইটি যেই পেছন দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল ও’ব্রায়েন হেসে গিল্ডার দিকে তাকিয়ে বলল, কি ব্যাপার মনে হচ্ছে ভয় পেয়েছে। গিল্ডা বলল, মিথ্যা কথা বলবনা, ভয় পেয়েছি একটু তা সত্যি। কিছুই খোঁজ পাচ্ছিনা জনির, ওকি উধাও হয়ে গেল কিছু না জানিয়েই। তুমি কি ওর খবর কিছু জান? তোমার কাছে তো সেজন্যই এলাম ও’ব্রায়েন হেসে বলল, আমার সঙ্গে জনি আজ দেখা করতে এসেছিল। গিল্ডা অবাক হয়ে গেল, বলল দেখা করতে এসেছিল তোমার সঙ্গে কেন?
ব্রায়েন বলল, কে কার্সনের খুনের ব্যাপারে ওকে পুলিস সন্দেহ করতে পারে তাই জনি বলল ও কিছুদিন ফ্রান্সে গিয়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকবে। আমার কাছে ও তিনশো ডলার নিয়ে গেল। তোমার কাছে টাকা নিয়েছে, জনি ফ্রান্সে গেছে গিল্ডা বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করল, একবার আমার সঙ্গে যাবার আগে দেখাও করলনা। ও’ব্রায়েন হাসতে হাসতে পকেট থেকে জনির লেখা পত্ৰখানা বের করে দেখাল, বলল দেখা হয়ত করেনি তবে ও যাবার আগে তোমায় একখানা চিঠি দিয়ে গেছে।
টেবিলের উপর রাখল চিঠিটা তারপর মন দিয়ে গিল্ডা সেটা পড়ল, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বলল, একবার দেখা করে গেলে ভাল করত যাবার আগে।
ও’ব্রায়েন বলল আর মন খারাপ করে কি হবে দেখা যখন হয়নি। তবে ফ্রান্সে ও বেশিদিন থাকবেনা, দেখে নিও।
আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা এবারে তাহলে পাকা করে ফেলা যা তুমি কি বলছ গিল্ডা? তাহলে এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ বিয়ের তারিখটা ঠিক করে ফেলি, কি বল?
খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল গিল্ডার মুখ, লাজুক হাসি হেসে বলল, তুমি যেদিন মনে করবে সেদিনই হবে সীন। ও’ব্রায়েন উঠে পড়ল বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তাহলে বিবাহের সমস্ত আয়োজন করতে শুরু করছি। রাত হয়েছে, তুমি আর কোনরকম অযথা চিন্তা না করে শুয়ে পড়। তোমায় তারিখটা কাল সকালে ফোন করে জানিয়ে দেব। সুইটি তাদের প্রত্যেকটা কথা দরজায় কান পেতে শুনে নিল। সে আশ্চর্য্য হল জনি চলে গেছে শুনে, আরো আশ্চর্য হল যে গিল্ডা সীন নামে একটি লোককে বিয়ে করছে। সীন ও’ব্রায়েন কি সেই বিখ্যাত অপরাধী? সেই লোকটাই সীন এ কথা ভেবে আরও আশ্চর্য হল। সুইটি মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করল, গিল্ডা দরজা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে শুতে গেল, ও’ব্রায়েন দরজা খুলে বেরিয়ে যাবার পূর। রাত অনেক হয়েছে এবার তাকেও বাড়ি যেতে হবে। সুইটি-র হঠাৎ খুব ক্ষিধে পেল। অতি সন্তর্পণে সে গিল্ডার কিচেনে গিয়ে ঢুকল। সুইটিংর জিভে জল এল, সামনেই বিশাল রেফ্রিজারেটার, তার পেটে সারাদিন একটুও দানাপানি নেই, নিশ্চয়ই ঐ ফ্রিজের ভেতর ভালমন্দ অনেক খাবার আছে।
ফ্রিজের দরজা আলতো ভাবে টান মারতেই খুলে গেল, পরক্ষণেই চমকে উঠল ভূত দেখার মত জালিয়াত ব্ল্যাকমেইলার র্যাফায়েল সুইটি ভয়ে কাঁপতে লাগল থরথর করে, ক্ষীণ কণ্ঠে আর্তনাদ করে উঠল। মরিস ইয়ার্দের মৃতদেহ পড়ে আছে ফ্রিজের ভেতর, সারা মুখ রক্তাক্ত, হাঁটু মোড়া অবস্থায় পড়ে আছে দেহটা।
.
২৪.
মন-মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়ে আছে টাক্সের। সে ও’ব্রায়েনের নির্দেশ পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সে ঠিক অনুমান করতে পারছে যে, কি সাংঘাতিক হবে এর ফল। চারিদিকে ও’ব্রায়েন রটিয়ে দেবে টাক্সের ব্যর্থতার খবর, এবং বের করে দেবে তাকে দল থেকে। তাকে ফিরে যেতে হবে চুরি জোচ্চুরি খুন রাহাজানির দিনগুলিতে। যেখানে গেলে ও’ব্রায়েনের কাছ থেকে আর কোন সাহায্য পাওয়া যাবেনা, সে যে পুলিশের নজর থেকে বাঁচবে। পেটের দায়ে তাকে যে কোন অপরাধমূলক কাজ করতে হবেই একথা টাক্স ভালভাবেই জানে। এবং পুলিসের সঙ্গে সংঘর্ষে তার মৃত্যু অবধারিত। কোনটিই এর ঘটবেনা যদি সে জনিকে ধরে মেরে পুঁতে ফেলতে পারে ও’ব্রায়েনের নির্দেশমত, তাহলে সে রাজকীয় ভাবে দিন কাটাতে পারবে। কাজটা তাকে আগেই সেরে ফেলতে হবে। একথা যাতে ও’ব্রায়েনের কানে না পৌঁছয় যে জনি একটা অন্য লোকের সঙ্গে জাহাজ থেকে পালিয়েছে, গরু খোঁজা করে খুঁজতে হবে জনিকে, তা যেখান থেকেই হোক।
টাক্স ডাঙ্গায় উঠে এল জেটিতে নৌকা ভিড়িয়ে। তারপর ওয়াশিংটন হোটেলে ঢুকল শ্লথ গতিতে। হোটেলের ম্যানেজার সেথ কাটলারের সঙ্গে তার দেখা হল রিসেপশন কউন্টারে। টাক্স প্রশ্ন করল, খবর কি সেথ কাটলার? এদিককার খবর ভাল? কাটলার বলল, হাওয়া খারাপ, কেটে পড় এখান থেকে যদি নিজের ভাল চাও।
টাক্স প্রশ্ন করল, কারণটা কি?
কিছুক্ষণ আগে এক পুলিস কনস্টেবলকে জনি ডোরম্যান গুলি করেছে। টাক্সের হাত পা মনে হচ্ছে পেটের ভেতর ঢুকে গেল এই কথা শুনে, সে বলল, তাই নাকি? কাটলার বলল, হ্যাঁ খবরটা সত্যি। আরেক জন ছিল ওর সঙ্গে। অকশ্য তাকে ঠিক চিনতে পারিনি। মরিস ইয়ার্দের খোঁজে এসেছিল লেঃ অ্যাডমস, বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল ওকে না পেয়ে। আমি ছিলাম তার পাশে, দেখতে পেলাম জনি একটা লোকের সঙ্গে এদিক দিয়ে যাচ্ছে। কিসব প্রশ্ন করছিল একটা পুলিস কনস্টেবল, যে লোকটি ওর সঙ্গে ছিল তাকে। পেছন থেকে হঠাৎ তাকে জনি গুলী করল। পুলিসটা মুখ থুবড়ে পড়ে যেতেই। লেঃ অ্যাডমস জনিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লেন। জনির বুকেই গুলিটা লাগত, আমি যদি সময়মত অ্যাডমসের হাতটা ধরে না ফেলতাম। মারা গেছে কি কনস্টেবলটা? টাক্স জানতে চাইল। ইস, সত্যি তুমি একটা ফালতু লোক, তাচ্ছিল্যের হাসিহেসে কাটলার বলল, কখনও কোন কাজ সাফল্যের সঙ্গে করতে পেরেছে জনি সারা জীবনে।
পুলিস বেঁচে আছে, তবে জখম হয়েছে। আর যদি এই ভয়ে মরে যে জনির মত ওস্তাদ ওকে মেরে ফেলেছে, তাহলে অন্য কথা। টাক্স বলল, আচ্ছা জনি কোথায় আছে, আমার খুব প্রয়োজন ওকে। ওকে কি দরকার হলেই পাওয়া যাবে। পুলিস হন্যে হয়ে ওকে খোঁজাখুঁজি করছে। টাক্স ধৈৰ্য্য হারিয়ে বলল, তাড়াতাড়ি বল কোনদিকে গেছে ওরা? মনে আছে সেই রোজ মেয়েছেলেটাকে? কাটলার বলল, পাশের দোকানে যে মেয়েটা দিনের বেলায় কাজ করে আর খালাসীদের কাছে রাতের বেলায় সঙ্গ দিয়ে পয়সা রোজগার করে আরে মনে নেই সেই মেয়েটার কথাই বলছি, গতবছর দুটো তরতাজা পুলিস খুন করলো যার ভাই পুচকে স্টেড? সেই রোজ মেয়েছেলেটার বাড়িতে গা ঢাকা দিয়ে আছে জনি আর তার সঙ্গীটা।
টাক্স প্রশ্ন করল, তুমি জানলে কি করে?
কাটলার বলল,আমি স্বচক্ষে দেখেছি, তাই বলছি। লেঃ অ্যাডমস দেখতে পেত যদি তার অন্তদৃষ্টি থাকত। টাক্স বলল, নিয়ে চল আমায় রোজ মেয়েছেলেটার কাছে। ওরে সর্বনাশ, ভীত গলায় কাটলার বলল, চারিদিকে পুলিসে ছেয়ে গেছে। তোমায় কি করে আমি তার ভিতর দিয়ে নিয়ে যাব? আচ্ছা ঠিক আছে, কমপক্ষে ছাদ থেকে আমায় বাড়িটা দেখিয়ে দাও টাক্স বলল, আমি নিজেই যাওয়ার চেষ্টা করব। ওয়াশিংটন হোটেলের ছাদে উঠল লিফটে চড়ে কাটলার আর টাক্স। আলো নিভিয়ে দিল কাটলার আঙ্গুল দিয়ে সামনের দিকে নির্দেশ করে বলল, ঐ যে পুরনো বড় বাড়িটা দেখছ দূরে সরু গলির ভেতর, রোজের ঠেক ওখানে। ওখানেই জনি ঢুকেছেতার বন্ধুকে নিয়ে।টাক্স নীচুস্বরে বলল, আচ্ছা বুঝেছি, আমায় ওখানে যেমন ভাবেই হোক যেতে হবেই। হোটেলের সামনে, গলির মুখে আর ভেতরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল নজর রেখে কয়েকজন কনস্টেবল। টাক্স লক্ষ্য করল,এবাড়ির সামনে দিয়ে তাঁরা কয়েকবার যাতায়াত করল। টাক্স মনে মনে বলল, ঢুকতে হবে গলির উল্টো পথে, তারপর ঐ বাড়িতে ঢুকব পাশের বাড়ির ছাদ দিয়ে নেমে। এটাই নিরাপদ ব্যবস্থা যদিও সময় বেশি লাগবে।
.
জনি কাতরাতে কাতরাতে চোখ খুলল, কি ব্যাথা হাতে! বলল, কতক্ষণ আগে এসেছি আমরা এখানে? কেন্ জবাব দিল,হয়তো মিনিট কুড়ি হবে। কোথায় গেল সেই মেয়েটা? কেন তাকে দেখতে পাচ্ছিনা?
কেন্ বলল, ও নীচে গেছে একটু গরম দুধ আনতে তোমার জন্য। বাইরের অবস্থা কি? কেন্ বলল, ঠিক বলতে পারছি না,তবে জায়গাটাকে মনে হয় পুলিস ঘিরে ফেলেছে, কারণ আশেপাশের শব্দ শুনে বোঝা যাচ্ছে। জনি জানতে চাইল, এখানে কি আমাদের নিরাপত্তা আছে? কেবলল তা মনে হয়না, কারণ ওরা বোধহয় প্রত্যেকটা বাড়ি তল্লাসি করবে। ওরা জেনে গেছে আমরা গলির ভেতর কোন। বাড়িতে আত্মগোপন করে আছি। তাই নাকি? জনি বলল, পালাতে পারবে একা তুমি এখান থেকে? কেবলল, একেবারেইনা। জনিমিনতি ভরা গলায় বলল,একবার জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখোনা, আলোটা নিভিয়ে দাও। কেন্ ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিল লণ্ঠনের পলতেটা যেটা ছিল ঘরের একমাত্র আলো। বাইরের দিকে তাকাল জানালার পর্দা তুলে। সে কিছুই দেখতে পেলনা প্রথমে, দুজন সন্দেহজনক ব্যক্তি জানালার নীচে দাঁড়িয়ে আছে হঠাৎ তাঁর নজরে পড়ল। কেচাপা স্বরে জানালো, দুটো পুলিস এখনো বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। শব্দ হল দরজা খোলার, রোজ মেয়েটির গলা পাওয়া গেল পরক্ষণেই, কি হল আলো নেভানো কেন? কেবলল এক্ষুণি জ্বালিয়ে দিচ্ছি, সে লণ্ঠন জ্বালিয়ে দিল দেশলাই ধরিয়ে।বলল একটু দেখছিলামরাস্তারহালচাল, পুলিস এখনোরাস্তায় আছে।
মেয়েটি জানতে চাইল জনির কাছে গিয়ে, কেমন আছ এখন? ইচ্ছার বিরুদ্ধে হেসে জনি বলল, ভালনয়।তোমাকে ধন্যবাদ জানাই, যে তুমি আমার হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছ।কিবল, অনেক রক্ত বেরিয়েছেনা? মেয়েটি উত্তর দিলনা জনিরকথার, কেকেবলল, আপনি এখন কিকরতে চান?যদি চলে যেতে চান, তবে এখনই ছাদ দিয়ে উঠে পালাতে পারেন,এর দেখাশোনা আমি করছি। পালাতেই তো চায় কে যদি সরে পড়তে পারে এখান থেকে তাহলে সে খবর দিতে পারবে লেঃ অ্যাডমসকে যে জনি এখানেই আছে। একটা বিরাট অপরাধের বোঝা তার স্কন্ধচ্যুত হবে।
জনির দিকে তাকিয়ে কেন্ বলল, তুমি কি বল? জনি বলল, ঠিক কথাই আর দেরী করে তুমি তড়িঘড়ি সরে পড়। কে বলল, না হয় পালালাম আমি, কিন্তু তোমার কি হবে জনি?
জনি বলল, তুমি আমার একটা উপকার করতে পার এখান থেকে পালিয়ে গিয়ে, এখানে এসে শোন। কেন্ তার কাছে যেতেই, জনি চাপা গলায় বলল, পুলিসের কড়া নজর আছে চারদিকে, জানি না তুমি কোন রাস্তায় বেরোবে। যদি পার আমার বোন গিল্ডার কাছে চলে যাও। ৪৫ নম্বর ম্যাডক্স কোর্ট ওর ঠিকানা।ও তোমায় নিশ্চয়ই আশ্রয় দেবে চারপাশের উত্তেজনা যতক্ষন না থেমে যায়। ওকে বিস্তৃতভাবে বোলো আমার দুর্দশার কথা। আর ও’ব্রায়েন আমায় খুন করে পুঁতে ফেলতে চেয়েছিল একথাও বলবে। যাতে গিল্ডা ভাবে আমি ফ্রান্সে যাচ্ছি, এজন্যও আমায় দিয়ে জোর করে চিঠি লিখিয়ে নিয়েছে গিল্ডাকে দেবার জন্য পাছে গিল্ডার মনে কোনরকম সন্দেহজাগে সেজন্য। ও’ব্রায়েনকে গিল্ডা যাতে চিনতে পারে, এবং বোঝে ভয়ঙ্কর একটা শয়তান সে, তাকে গিল্ডা বিয়ে করতে চলেছে। দয়া করে তুমি এটুকু আমার জন্য কোরো।
কেন্ দোটানায় পড়ে গেল। জনি বলল, তোমারও এতে ভাল হবে। টাকা দেবে তোমায় গিল্ডা, ও তোমার ব্যবস্থা করে দেবে যাতে তুমি এই শহর ছাড়তে পার।
আচ্ছা ঠিক আছে কেন্ বলল, একটা কাগজে তুমি সব কথা লিখে দাও গিল্ডাকে।
জনি একটা পুরনো খামের গায়ে কেনের কলম দিয়ে খসখস করে কিছু কথা লিখল, কেন্ সেটা না পড়েই পকেটে পুরে ফেলল। জনি বল, চিঠিটা ওকে দিলেই ও বুঝবে আমি তোমাকে পাঠিয়েছি। বন্ধু বিদায়।
বিদায়! কেন্ বলল, সেতখন ছটফট করছে বেরিয়ে পড়ার জন্য। পুলিসযদিজনিকে এখানেখুঁজে পায় অ্যাডমস-এর কাছে উপস্থিত হওয়ার আগেই, এবং যদি এমন ব্যাপার ঘটে যে গোলাগুলি চলে তবে নিশ্চয়ই জনি মারা পড়বে। তার মানে তখন তার ঘাড়ে পুরোপুরি পড়বে কে কাসনকে হত্যা করার অভিযোগ।অসম্ভব, অ্যাডমসের সঙ্গে দেখা করতে হবে যে কোন উপায়ে। রোজ অধৈৰ্য্য হয়ে বলল, দেরী না করে আমার সঙ্গে তাড়াতাড়ি আসুন। আর দেরী হলে ওরা পাহারা বসাবে ছাদের দিকেও।
কেন্ ছাদের কাছে এল মেয়েটিকে অনুসরণ করে। একটা বড় জানালা ঘরের বাইরে। ওপাশেই ছাদ। ছাদে নেমে যান, ঐ জানালা গলে। মেয়েটি বলল। ছাদ টপকাতে কোন অসুবিধা হবেনা, কারণ পাশের বাড়িগুলো সব পাশাপাশি। প্যারামাউন্ট সিনেমা সামনেই পড়বে ওখানে পৌঁছতে পারলে ভাবনা নেই। সিনেমা হলের পাশে আরেকটা গলি পাবেন, সেটা শেষ হয়েছে লেনক্স স্ট্রীটে গিয়ে। বাকিটা আপনার বুদ্ধিমত করবেন, আগে ঐখানে চলে যান। ধন্যবাদ, কেন্ বলল ঋণী রয়ে গেলাম তোমার কাছে যদি কোনদিন এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাই তবে তোমায় আমি মনে রাখবো। এখন পালান ওসব ভদ্রতা পরে হবে–মেয়েটি বলল, আমি আপনার বন্ধুকে সুস্থ করে তুলব। কে বলল, আমি তোমায় ভুলতে পারবনা। মেয়েটি বলল, আচ্ছা ঠিক আছে, আপনাকে কেউ ভুলতে বলছে, সময় এখনো আছে পালান। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ তোমার সহযোগিতার জন্য বলে কে মেয়েটির দিকে হাত বাড়াল করমর্দন করার জন্য। মেয়েটি অশালীন হেসে বলল ইস্, আপনি একটি তুখোড় লোক। কেরে গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরে ছোট্ট একটা চুমু খেল সে তারপর বলল, আর দেরী করা ঠিক নয়। খুব মুশকিলে পড়বেন শিগগীর পালান।
কেন্ ছাদের ওপর এসে নামল জানালা গলে। কে তাকিয়ে দেখল চারিদিকে অন্ধকার বড় বড় বাড়িগুলোর মাথায় নিয়ন আলো জ্বলছে। আশেপাশের বাড়িগুলো সব গায়ে গায়ে, মেয়েটি ঠিকই বলেছে। কয়েকটা ছাদ টপকে কে কিছুদূর এগোল। সে চমকে ডানদিকে তাকাল, তার কানে গেল উত্তেজিত গলায় কেউ চীৎকার করছে। যেখানে সে দাঁড়িয়ে আছে, তার অনতিদূরে দুজন লোক একটি বাড়ির ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। একটি মহিলা ও অপরটি পুরুষ। কেকে লক্ষ্য করে একজন জোর গলায় বলে উঠল, ছাদের ওপর একটা লোক ঐ দেখ। কেন্ উপায়ান্তর না দেখে একলাফ মারল নীচে, অবশ্য ছাদটা একতলা বাড়ির ছিল তাই।
একটা বিরাট উঁচু পাঁচিল সামনেই,বন্ধ দরজা,কারা যেন সেই দরজায় সজোরে ঘা দিচ্ছে ওপাশ থেকে। একটা বড় লোহার সিঁড়ি পাঁচিলের গায়ে ঠেস দিয়ে রাখা আছে, কিছুটা দৌড়ে যেতেই কেন্ দেখতে পেল। সিঁড়ি বেয়ে যেই কে উপরে উঠতে গেল, চেঁচিয়ে উঠল একজন পুলিস কনস্টেবল, পালাতেহনো বাছাধন সিঁড়ি বেয়ে, গুলি খাবেযদিনা নেমে আস। কে সোজা উঠে গেলতার কথায় পাত্তানা দিয়ে। পরক্ষণেই কিছু এলোপাথাড়ি গুলিচলল, সেগুলো তার আশেপাশের দেয়ালের গায়ে গিয়ে লাগল। কিছু সিমেন্টের ভাঙ্গা টুকরো তার চোখে-মুখে লাগল। তারপর সে সিঁড়ির মাথায় আরেকটা বাড়ির ছাদে নেমে এল। কারা যেন বলাবলি করছে।
কেন্ শুনতে পেল, একটা মাত্র লোক ঐ ছাদে গিয়ে নেমেছে সিঁড়ি বেয়ে। ওরা তাহলে তাকে অন্ধকারে দেখতে পায়নি, যা বাঁচা গেছে কে মনে মনে বলল।হঠাৎ পরপর তিনবার গুলির শব্দ তার কানে এল অন্ধকারের বুক চিরে কে যেন আর্তনাদ করছে শুনতে পেল আবার পরমুহূর্তে গুলির শব্দ। ব্যাপার ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। পুলিসগুলো হয়তো নিজেদের মধ্যেই মারপিট শুরু করেছে। পকেট থেকে দেশলাই বের করে সে আগুন জ্বালল, দেখল একটা দরজা তার সামনেই। সন্তর্পণে সে দরজা খুলে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল। দেখল সোজা চলে গেছে একটা অল্পবিস্তর চোরা গলি। কেন রাস্তায় নেমে এল লঘু পায়ে।
রোজের বাড়ির ছাদের কাছে এগিয়ে গেল টাক্স অন্ধকারে একটার পর একটা বাড়ির ছাদ টপকিয়ে। টাক্সের রিভলভার গর্জে উঠল হঠাৎ সামনের বাড়ির ব্যালকনি থেকে একটা কনস্টেবল তাকে দেখতে পেয়েই যখন চেঁচিয়ে উঠল। পুলিসটা গুলি খেয়ে পড়ে গেল ব্যালকনিতে মুখ থুবড়ে, আরেকটা কনস্টেবলরাভারনীচেদাঁড়িয়েছিল,টাক্সের বাঁ হাতে এসে বিধলতার রিভলভারের গুলি। মুখ তার বিকৃত হয়ে গেল প্রচণ্ড যন্ত্রণায়। নীচের পুলিসটাকে সে গুলি ছুঁড়ল দাঁতে দাঁত টিপে ধরে। কয়েক পা দৌড়নোর পর পুলিসটি পড়ে গেল রাস্তার ওপর। তৎক্ষণাৎটা রোজের জানালার কাছে পৌঁছল, মাটিফুড়ে যেন একটাপুলিসউঠেদাঁড়াল। ছাদের এক কোন থেকে,টান্সের দিকে রিভলভার তা করে বলল, হাত ওঠাও।
সঙ্গে সঙ্গে টাক্সতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ল একটু ঘুরে দাঁড়িয়ে। পুলিসটাক্সের দিকে গুলি ছুঁড়ল যদিও সে গুলি খেয়ে পড়পড় অবস্থা। ছাদের জানালা দিয়ে টাক্স বাড়ির ভেতর নেমে পড়ল পেটের যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে।
তখন ঘরের ভেতর জনি আর রোজ উত্তর্ণ হয়ে সেই গোলাগুলির শব্দ শুনছে। রোজ বসেছিল দেয়ালে পিঠ দিয়ে, তাঁর মুখ বিবর্ণ হয়ে গেছে ভয়ে অন্ধকারে হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে সে বড়বড় চোখ মেলে। টাঙ্গের মুঠো থেকে ছিনিয়ে নেওয়া পিস্তলখানা হাতে চেপে ধরে বসে আছে জনি খাটের একপাশে। রোজ বলল, ঐভাবে একা যেতে দেওয়া উচিত হয়নি তোমার বন্ধুকে। ওকে গুলি করে একেবারে ঝাঁঝরা করে দেবে পুলিসের লোকেরা। জনি বলল চুপ কর। মনে হচ্ছে ও লড়াই করছে পুলিসদের সঙ্গে। তখনই জনির মনে পড়ল, ওর হাতে যে পিস্তল বা রিভলভার ছিল না।
জনির মনে হল কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই তার খোঁজে টাক্স এখানে আসেনি তো? ঠিক সেই সময় শব্দ হল জানলার কাঁচ ভাঙ্গার। ছাদের ওপর ধূপ করে প্যাসেজের এদিকে কে যেন লাফিয়ে পড়ল।
রোজ ভয়ে বলে উঠল, কিসের যেন শব্দ হল? ভেতরে ঢুকেছে কেউ ছাদের জানালা ভেঙ্গে। জনি বলল, বাতিটা শিগগীর নিভিয়ে দাও।
ফু দিয়ে বাতিটা নিভিয়ে রোজ দেওয়ার পর জনি বলল বন্ধ করে দাও দরজাটা।দরজাটাহা করে খোলা ছিল যখন রোজ অন্ধকারে দরজাটা বন্ধ করতে গেল, বাইরে বেরিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে পিঠ দিয়ে পাল্লা দুটো চেপে দাঁড়িয়ে থাকল রোজ। একজোড়া ঠাণ্ডা হাত তাকে চেপে ধরল হঠাৎ অন্ধকারের ভেতর। আতঙ্কে রোজ চীৎকার করে উঠল। ঘরের ভেতরে বসে পরিস্কার শুনতে পেল জুনিতার সেই চীৎকারের শব্দ। উত্তেজনায় আর উৎকণ্ঠায় জনির শরীর তখন মুহুর্মুহু কাঁপছে। জামা ভিজে উঠেছে ঘামে। একটা লোক তাকে বলপূর্বক ঠেলে ঢুকতে চাইছে ঘরের ভেতর রোজ অনুভব করল। ভালো করে তাকে দেখা যাচ্ছেনা অন্ধকারে।তবে সে অন্য কেউ হতে পারে পুলিসের লোক নয় অবশ্যই, এটা রোজের মনে হল। সে লোকটাকে উদ্দেশ্য করে অন্ধকারে কিল, চড় ঘুষি মেরে যাচ্ছে।
হঠাৎ লোকটা তার কণ্ঠ চেপে ধরল, মুখে একটা শপথ উচ্চারণ করেই। ছটফট করে উঠল রোজ তার দুহাতের কঠোর আক্রমণে। সে লোকটার চোখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিল ছাড়া পাবার শেষ অস্ত্র হিসেবে। দারুণ শক্তিশালী লোকটা কারণ সেতার কাছে কিছুই নয়। রোজের নরম শরীরটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিল সে দুচারবার ঝাঁকিয়ে আহত অবস্থাতেই। এই লোকটিই যে টাক্স একথা বলা বাহুল্য। দরদর করে রক্ত বের হচ্ছে তার পেট থেকে, পুলিসের গুলিতে ফুটো হয়ে গেছে তার পেট। মুখ চোখও রক্তাক্ত। জনি কোন দিকে আছে টা বোঝার চেষ্টা করল, সে রিভলভার বের করে ধরল যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে। টাঙ্গের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছিল জনি।পিস্তল হাতে কান পেতে সে অন্ধকার ঘরে বসেছিল। টাঙ্গ যে তার থেকে কয়েক ফুট মাত্র দূরে একথা জনি বুঝতে পারছিল।তবুও জনি গুলি চালানোর মত সাহস সঞ্চয় করতে পারছেনা। যদি গুলির ছোঁড়ার শব্দ বুঝে টার তার অবস্থান অনুমান করে ফেলে।
কেউ যেন গরম লোহার শিক তার পেটের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছে, টাক্সের এরকম যন্ত্রণা বোধ হচ্ছিল। সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে এইভাবে সে আর বেশিক্ষণ সোজা হয়ে থাকতে পারবেনা।
সে বলে উঠল, রিভলভার উঁচু করে ধরে,জনি,বল তুই কোথায় আছিস? কোন ঘরের ভেতরে? পুলিসবাড়ির ভেতর ঢুকে পড়েছে জনির মনে হল কারণ বাইরে অনেকগুলো ভারী বুটের শব্দ পাওয়া গেল। নিঃশ্বাস বন্ধ করে জনি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, এমনকি নিজের হৃৎপিণ্ডের ধকধক শব্দ তার কানে যাচ্ছে। দরজা ভেঙ্গে ফেলবে বুটের লাথি মেরে পুলিস, জনি একথা জানে। তারপর ভেতরে ঢুকবে।
সবাইকে খতম করে দেবে যথেচ্ছভাবে গুলি চালিয়ে। মাথা আর ঠিক রাখতে না পেরে চীৎকার করে উঠল জনি, গুলি চালাবে না বলছি, সরে যাও। ঠিক এই অপেক্ষা টুকুতেই ছিল টাক্স, গলার আওয়াজ লক্ষ্য করে নির্ভুল লক্ষ্যে সে গুলি ছুঁড়ল। জনির কপালে এসে লাগল গুলি। ছিটকে বেরিয়ে এল মগজের ঘিলু। অন্ধকারের মধ্যেই কাত হয়ে পড়ল জনি, মুখে একটুও শব্দ বেরোল না। অনেকগুলো বুটের আঘাতে পরক্ষণেইদরজা উন্মুক্ত হল। একঝাক মেশিনগানের গুলি এসে টাক্সের সারা শরীর ঝাঁঝরা করে দিল, যেই টাক্স রিভলভার উঁচু করে ধরতে গেল সেই মুহূর্তেই। টাক্স উলটে পড়ে গেল হাতে ধরা রিভলভার নিয়ে। তার মৃতদেহটা বুটের ঠোক্কর মেরে চিৎ করে দিল একজন পুলিস অফিসার।
.
২৫.
কেন্ সাবধানে পা ফেলে ফেলে চোরাগলির ভেতর দিয়ে বড় রাস্তায় এসে পড়ল। পুলিসকর্ডন ছিলনা সেখানে তোকজনও তেমন কিছু নেই রাস্তায়। কে সামনেই একটা ওষুধের দোকান দেখে ঢুকে পড়ল। টেলিফোন বুথ একধারে। সোজা সে পুলিশ হেডকোয়াটার্সে ফোন করল। দোকানের একমাত্র কর্মচারীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে।
কেন্ বলল, হ্যালো। লেঃ অ্যাডমসকে দিন তো। ওপাশ থেকে ডেস্ক সার্জেন্ট বলল,লেঃ একটু বাইরে গেছেন। আপনি কে কথা বলছেন?
কেন্ বলল, নাঃ স্যার, ব্যক্তিগত একটা খবর আছে, ওর বাড়ির ফোন নম্বরটা কি একটু দেবেন? আমরাবলতে পারবনা, টেলিফোন গাইডে দেখে নিল–ডেস্ক সার্জেন্ট। কেন্ লেঃ অ্যাডমসের নম্বরটা বের করল, ফোন গাইড দেখে। কিন্তু বাড়িতে কেউ ছিলনা ফোন করার পরই বুঝতে পারল। ফোনে রিং হয়েই চলেছে, রিসিভ করছেনা কেউ। আবার কে হেডকোয়াটার্সে ফোন করল অধৈৰ্য্য হয়ে। এবারে অধৈর্য হয়ে ডেস্ক সার্জেন্ট বলল, মিঃ অ্যাডমস ফিরবেন কখন বলতে পারবনা। কোন খবর থাকলে বলুন ওকে দিয়ে দেব।
নিঃশ্বাস নেবার পর কেন্ বলল, আচ্ছা বলে দেকেন ওঁকে ওর অ্যাপার্টমেন্টে যে লোকটি ছিলএখন সে ৪৫ নম্বর ম্যাডক্স কোর্টে আছে। উনি তাহলে ধ্ব বুঝতে পারবেন। আচ্ছা, ঠিক আছে। ডেস্ক সার্জেন্ট লাইন ছেড়ে দিল। কেন্ পড়িমরি করে মাড কোর্টের সেই বাড়ির উদ্দেশ্যে চলল ওষুধের দোকান থেকে বেরিয়ে। দশ মিনিটের বেশি লাগবেনা এখান থেকে ঐ বাড়িতে পৌঁছতে। নিঃশব্দে সে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগল ৪৫ নম্বর ম্যাডক্স কোর্টের বাড়িতে পৌঁছেই। গিল্ডার কামরার বাইরে দাঁড়িয়ে সেজনির নির্দেশমত কলিং বেল টিপল, ভেতর থেকে একটি মেয়ে বলে উঠল কে আপনি? সে হাতঘড়ি দেখল তখন রাত একটা বাজতে কুড়ি মিনিট বাকি আছে। কেবলল, আমি একটা চিঠি এনেছি আপনার ভাইয়ের কাছ থেকে। তারপর দরজার ফাঁক দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে দিল চিঠিটা, জনি যেটা লিখে দিয়েছিল। দরজা খুলে গেল অল্পক্ষণের মধ্যে। তার সামনে দাঁড়িয়ে সেই অপরূপা সুন্দরী, লম্বা মেয়েটি, যাকে সে দেখেছিল ব্লু রোজ নাইট ক্লাবে। মেয়েটি পরেছিল সিল্কের একটা শার্ট, ম্যাজেন্টা আর কালো রঙের স্ন্যাকস। সে তাকিয়ে ছিল বিবর্ণমুখে কেনের দিকে। গিল্ডা জিজ্ঞেস করল, ব্যাপারটা কি, আমার ভাই জনি কিছু হয়েছে নাকি? কেন্ বলল,জনি ভীষণ বিপদে পড়েছে, আপনার সঙ্গে আমাকে দেখা করতে বলেছে। গিল্ডা দরজা থেকে সরে দাঁড়াল বলল আপনি ভেতরে আসুন। যখন কে ভিতরে ঢুকে চেয়ারে বসল তখন গিল্ডা বলল,বলুন এবার সবকথা পরিস্কার করে। কেন্ বলল একজন পুলিসকনস্টেবলকে গুলি করেছে আপনার ভাই জনি। এবং সে নিজেও গুলিতে আহত হয়েছে। গুলি করেছে আমার ভাই পুলিস কনস্টেবলকে? গিল্ডা বলল, আবার সে নিজেও আহত হয়েছে গুলিতে? এটা কতক্ষণ আগে ঘটেছে? কেন বলল কয়েক ঘণ্টা আগে। আচ্ছা বুঝলাম। জনির লেখা চিঠিটা দেখিয়ে গিল্ডা বলল, কোথা থেকে সংগ্রহ করলে এটা? নিজে হাতে লিখে আপনার ভাই এটা আমায় দিয়েছে, কেন্ বলল। আপনি যাতে বুঝতে পারেন যে আমি ওর কাছ থেকেই এসেছি। এখানে লেখা আছে যাতে আমি আপনাকে সহযোগিতা করি। কিন্তু একথা লেখা নেই যে ও আহত হয়েছে। ও আহত হয়েছে একথা সত্যি, ও ভাল করে লিখতে পারেনি হাতে আঘাত লেগেছে বলে। দুচোখে অগ্নিবর্ষন করে রাগে গিল্ডা বলল, মিথ্যা কথা বলার আর জায়গা পাওনা? আজ বিকেলের প্লেনে ফ্রান্সে গেছে আমার ভাই, তুমি জানো? প্যারীসে সে এতক্ষণে পৌঁছে গেছে নিশ্চয়ই। কে শান্ত ভাবে বলল, একটু ভুল হচ্ছে আপনার, ও’ব্রায়েনের কারসাজি এসব। ও’ব্রায়েন ফন্দী করেছিল জনিকে খুন করার। সেজন্য আপনার নামে জোর করে চিঠি লিখিয়ে নিয়েছিল জনিকে দিয়ে তাতে লেখা আছে ও প্যারিস যাচ্ছে।
আপনি তাহলে বলতে চান, জনিকে মেরে ফেলার মতলব এঁটেছিল ও’ব্রায়েন? এই কথা বলতে বলতে গিল্ডা ড্রেসিং টেবিলের কাছে এগিয়ে গেল। অবশ্যই ব্যাপারটা বিশ্বাস করা আপনার পক্ষে অসম্ভব কে বলল। তবুও আপনাকে সত্যি কথাটা বলতেই হল। গিল্ডা চট করে একটা পিস্তল বের করল ড্রয়ারের ভিতর থেকে।বলল, আর কোন দরকার নেই তা বলার। একচুলও নড়বেন না শিয়ার বলে সে পিস্তলটা তার দিকে উঁচু করে ধরল। আপনি মিথ্যা কথা বলছেন। আমি আপনাকে সনাক্ত করতে পেরেছি। কে কার্সনকে খুন করার জন্য পুলিস যাকে মরণপণ হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে আপনিই সেই ব্যক্তি। ৪৫নংম্যাড কোর্টের বাইরে এসে দাঁড়াল বিশাল একটা কাডিলাক গাড়ি। ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে ও’ব্রায়েন সিঁড়ি দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ওপরে উঠতে লাগল। মদ খাচ্ছিল সে ক্লাবে বসে, এমন সময় পুলিসের কাপ্টেন মটলি টেলিফোনে তাকে ব্যক্তিগত ভাবে জানায় টাক্স এবং জনির মৃত্যু সংবাদ। এতরাতে সে ছুটতে ছুটতে গিল্ডার কাছে এসেছে যাতে কাগজে বেরোনোর আগেই সে গিল্ডাকে জনির মৃত্যু সংবাদ জানাতে পারে। জনি যে প্লেনে চেপেছিল, তার এঞ্জিন খারাপ হয়ে যায় কিছুক্ষণ ওড়ার পর ফলে পাইলট তাকে এয়ারপোর্টে ফিরিয়ে আনে,তারপর কিভাবে জনি গুলি খেয়ে মারা গেল তা সে বলতে পারবেনা, এসব কথা সে গিল্ডাকে বোঝাবে। ও’ব্রায়েন স্বগতোক্তি করল। ঝামেলা চুকেছে, টাক্স মারা গেছে, শান্তি হয়েছে। গিভার স্বর শোনা গেলয়খনইও’ব্রায়েনকলিং বেল টিপল, ভেতর থেকে আওয়াজ এল কে?
দরজা খোল, আমি সীন। দরজা খুলে যেতেই ও’ব্রায়েন দেখল চেয়ারে বসে আছে পাতলা দোহারা চেহারার একটি লোক।আর গিল্ডার্তার সামনে পিস্তল উচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ও’ব্রায়েন প্রশ্ন করল আশ্চর্য হয়ে, এই লোকটা কে, ব্যাপারটাই বা কি? গিল্ডা হিহি করে বলে উঠল,
ঠিক একেই খুঁজে বেড়াচ্ছে পুলিস, এই লোকটিই কেকার্সনের হত্যাকারী। তাই নাকি? ক্রুরহাসি হেসে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে কেকে প্রশ্ন করল ও’ব্রায়েন, তাহলে তুমিই কেন্ হল্যান্ড?
যদিও তাই, তবুও বিশ্বাস করতে পারেন কের হত্যাকারী আমি নই, বলল কেন্। ও’ব্রায়েন আবার নিষ্ঠুরভাবে হাসতে হাসতে বলল, ওসব কথা আদালতে বলবে। গিল্ডাকে প্রশ্ন করল, ও এখানে কিভাবে উপস্থিত হল? শুধু খুনীই নয় লোকটা ছিটগ্রস্তুও বটে গিল্ডা বলল। আমায় এসেই ও বলল জনি একজন কনস্টেবল কে খুন করেছে এবং নিজেও আহত, একথাও বলেছে, তুমি মতলব এঁটেছিলে ওকে খুন করার, ওনাকি বাঁচিয়েছে তার হাত দুটো নিজের হাতে তুলে নিয়ে অন্তরঙ্গ ভাবে তাকালো তার চোখের দিকে। তুমি কি সত্যিই মরিস ইয়ার্দেকে বিয়ে করেছিলে? বলল ও’ব্রায়েন। গিল্ডা নতমুখে বলল, হ্যাঁ সত্যি, তোমায় ব্যাপারটা আগে না জানিয়ে আমি খুবই অনুতপ্ত সীন। আমি সেই ভুলের মাসুল দিচ্ছি এখন, কেন যে ওকে বিয়ে করেছিলাম! আমি একমাসও ওরসঙ্গে ছিলাম না, যখন ওর আসল রূপ জানতে পারলাম। তোমায় কিছু বলতে আমি লজ্জা পেয়েছি।
বাঁকা হাসি হেসে ও’ব্রায়েন বলল, এখন ওসব কথা ভুলে যাও, প্রত্যেক মানুষের জীবনে কিছুনা কিছু ভুল আছে।
.
২৬.
ঠিক তখনই অ্যাডামস এসে বলল খুনী কে নয়। বহুদূর মাথা ঘামিয়েছেন আপনি এ ব্যাপারে, অ্যাডমসের দিকে ফিরে ও’ব্রায়েন বলল, এখন এ লোকটাকে এখান থেকে নিয়ে যান, আর এমন ব্যবস্থা করবেন যাতে এই লোকটিকে অভিযুক্ত করা যায় কে কার্সনের খুনী হিসাবে। আর যদি একটি অসংলগ্ন কথা শুনি এখানে দাঁড়িয়ে বলছেন, তবে আপনার চাকরি কি করে বজায় রাখেন তা আমি দেখিয়ে দেব। অ্যাডমস বলল, কিছু মনে করবেননা আপনার কথায় ওকে গ্রেপ্তার করা যাবেনা। কারণ কে কার্সনকে হল্যান্ড খুন করেনি। অধৈৰ্য্য হয়ে ও’ব্রায়েন জানতে চাইল, তাহলে খুনী কে? অ্যাডমস গিল্ডার দিকে অঙ্গুলী-প্রদর্শন করে বলল। আপনার আগামী দিনের পত্নী গিল্ডা ডোরম্যান, উনিই কে কার্সনকে হত্যা করেছেন ও’ব্রায়েনকে দেখে মনে হল, সে যেন ক্রোধে উত্তেজনায় অগ্নৎপাত ঘটাবে, বলে উঠল, আপনি কি বলছেন খেয়াল আছে? মুখের লাগাম টেনে কথা বলুন লেফটেন্যান্ট, নাহলে আমি। ও’ব্রায়েন কথা শেষ না করেই গিল্ডার দিকে তাকাল, ভয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে গিল্ডা। সে তাকিয়ে আছে বড় বড় আতঙ্কিত চোখে শোবার ঘরের দিকে। একটা বাদামী রঙের পিকনিজ কুকুর শোবার ঘরের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে আছে, আর ঠিক গিল্ডার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল কুকুরটা গিল্ডার মুখের দিকে, তারপর এসে দাঁড়াল রান্নাঘরের বন্ধ দরজার সামনে। দরজা আঁচড়াতে লাগল নখ দিয়ে। তাড়িয়ে দাও ওটাকে এখান থেকে গিল্ডা চীৎকার করে উঠল, বলছি ওটাকে বের করে দাও।
একলাফে অ্যাডমস এসে দাঁড়াল রান্নাঘরের সামনে তার দরজাটা খুলে ফেলল। কুকুরটা কুঁইকুই করে কাঁদতে লাগল ঘরে ঢুকে। র্যাফায়েল সুইটির মৃতদেহ পড়ে ছিল মেঝের ওপর উপুড় হয়ে। একটাবরফ কাটা ছোট গাঁইতি বিধেছিল তার ঘাড়ের ওপর। মেঝের ওপর রক্তের ধারা গড়িয়ে জমে আছে। গিল্ডা ও’ব্রায়েন তাকে অনুসরণ করে রান্নাঘরে এসেছিল। তারা দরজায় এসে দাঁড়াল। অ্যাডমস গিল্ডার দিকে তাকিয়ে দেখল তার মুখটা মড়া মানুষের মত রক্তহীন হয়ে গেছে। ও’ব্রায়েন বিস্মিতভাবে অ্যাডমসকে প্রশ্ন করল, কে এই লোকটা?
র্যাফায়েল সুইটি-এর নাম, অ্যাডমস উত্তর দিল। লোকটি একজন ব্ল্যাকমেইলার।
কুকুরটা ততক্ষণে, মুখে অল্প শব্দ করতে করতে রেফ্রিজেটারের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। নাকে কিছু গন্ধ নেবার চেষ্টা করছে সে, তারপর রেফ্রিজেটারের কাছে গিয়ে দরজাটা নখ দিয়ে খামচাতে শুরু করল। অ্যাডমস রেফ্রিজেটরের হাতলটা ধরে একটান দিতেই ওটা খুলে গেল। ও’ব্রায়েন আর অ্যাডমস দুজনেই অবাক হয়ে গেল দেখল ভেতরে পড়ে আছে কুঁকড়ে মরিস ইয়ার্দের রক্ত মাখা মৃতদেহটা। ও’ব্রায়েন ক্ষীণ স্বরে বলল, হায় ভগবান এটা কে আবার? অ্যাডমস গিল্ডার দিকে অঙ্গুলী নির্দেশ করে বলল, ওনার প্রাক্তন স্বামী ইনিই।
অ্যাডমস এবং ও’ব্রায়েন দুজনেই বসার ঘরে ফিরে এল। গিল্ডা বলল, তুমি বিশ্বাস কর সীন, আমি কখনই একাজ করিনি। আমার কথা তোমায় বিশ্বাস করতেই হবে। আমি ওদেরকে ঠিক এই অবস্থায় দেখতে পাই রান্নাঘরে ঢোকার পর। আমি শপথ করে বলতে পারি। গিল্ডার কাঁধে হাত দিয়েও’ব্রায়েন বলল, ভয় পেয়োনা গিল্ডা। আমি তোমার পক্ষ সমর্থন করব। এখন ঘটনাটা পরিস্কার ভাবে বোঝ দুরকার ও’ব্রায়েন অ্যাডমসের দিকে তাকিয়ে বলল। ঘটনাটার ইতিহাস বোঝা খুবই সহজ, অ্যাডমস একপা সামনে এগিয়ে এসে বলল, আমি মিস্ গিল্ডা ডোরম্যানকে অভিযুক্ত করছি, কে কার্সন, মরিস ইয়ার্দে এবং র্যাফায়েল সুইটিকে খুন করার জন্য। এরপর বাকি অংশটা হেড কোয়াটার্সেবসেই প্রাঞ্জল ভাষায় বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
ও’ব্রায়েন বলল,কখনই না এখানেই বলতে হবে সব কথা মিস ডোরম্যান অস্বীকার করছে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ। আপনার হাতে কি উপযুক্ত প্রমাণ আছে এইসব অভিযোগের?
অ্যাডমস উত্তর দিল যথেষ্ট সত্যানুগ প্রমাণ আছে আমার হাতে যাতে এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যায়। বলুন সবকিছু ও’ব্রায়েন বলল, আমি স্বকর্ণে তার সবকিছু শুনতে চাই। সমস্ত ব্যাপারটা একটা নির্দিষ্ট হেতুর উপর পরিচালিত হয়েছে আমি আগেই সেটা ব্যক্ত করেছি। অ্যাডমসবলতে শুরু করল। শুরুতেই একটা জিনিস আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম কে কার্সনের খুনের তদন্তে। জনিই হয়তো খুনী একথা ভেবেছিলাম।কারণ ও অসুস্থমস্তিষ্ক ছিল, তাছাড়া সে একবার কে-কে শাসিয়েছিল খুনকরবে বলে অতীতে। কিন্তু একাজ যে জনির পক্ষে সম্ভব নয়, পরে ভেবে দেখলাম। কে আর কেন যখন নাইট ক্লাব থেকে বেরিয়ে আসে তখন জনিকে একবার দেখা গিয়েছিল। কিন্তু আদৌ জনি জানত না কে’র আস্তানা কোথায়। সেটা খুঁজে বার করাও জনির পক্ষে অসম্ভব ছিল। তাই ওকে আমি বাদ দিয়েছিলাম আমার সন্দেহ ভাজনদের তালিকা থেকে। তারপর মরিস ইয়াদের কথা আমি জানতে পারলাম। মরিসের সঙ্গে কার্সনের একসময় তুমুল বিবাদ হয়েছিল এ কথা আমার কানে এল। কে কে মরিস খুন করবে বলে হুমকি দিয়েছিল।
আমি মরিসের সন্ধানে তার হোটেলে গেলাম। কিন্তু তখন পাখি খাঁচা ছাড়া হয়ে গেছে। তার ঘরে ঢুকে দেখলাম বিছানা, বালিশ, চাদর, আসবাব পত্র সব নয়-ছয় হয়ে পড়ে আছে, দেখে মনে হল পাগলের মত কেউ সবকিছু ঘেঁটেছে কোন কিছু খোঁজার জন্য। জিনিসটা কোন কাগজ বা সার্টিফিকেট হবে মনে হল, কারণ তার খোঁজার ধরন ছিল সেই রকমই। আমার অনুমান যে অভ্রান্ত এবং সেই কারণেই পুলিস অফিসার হিসাবে আমার সুনাম আছে। আর আমার এটাও মনে হল সারা ঘরে যে তছনছ করে বেরিয়েছে সে সম্ভবতঃ স্ত্রীলোক, এটা কেন বলতে পারছি না আমার মনে হল এবং সে একটা বিয়ের সার্টিফিকেটের সন্ধানেই এসেছিল।
তারপর অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পারিল এঞ্জলসে তেরোমাস আগে মরিস মিস ডোরম্যানকে বিবাহ করে। এখন শুনছি মিঃ ও’ব্রায়েন আপনি মিস ডোরম্যানকে বিবাহ করতে যাচ্ছেন। সত্যিই উনি পাত্রী হিসাবে খুব ভাল, কে কার্সন যদি বেঁচে থাকত আর জানতে পারত যে মরিসকে গিল্ডা বিয়ে করেছিলেন তবে দুজনে দ্বন্দ্বযুদ্ধ লেগে যেত এতে কোন সন্দেহ নেই। কে গিল্ডার উপর খুব অসন্তুষ্ট ছিল। এবং ঐ বিয়ের ব্যাপারটা জানতে পারলে কমপক্ষে গিল্ডাকে সে ব্লাকমেইল করতই। দেখছেন উদ্দেশ্য কিভাবে বেরিয়ে আসে ধারণাকে অনুসরণ করে? আমার সন্দেহ পড়ল মিস ডোরম্যানের উপর তখন থেকেই। সেইরাতে উনি ব্লু রোজ নাইট ক্লাবে গিয়েছিলেন। এবং এদিকে ওখান থেকে আধঘণ্টা আগেই বেরিয়ে যান। তারপর কার্সন হল্যান্ড সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।
তিনি কে কার্সনের বাড়িতে ঐ সময়টুকুর মধ্যেই পৌঁছে যান ডোরম্যান। সিঁড়িতে ম্যাটের নীচে যে বাড়তি চাবি রাখা থাকে গিভা তা জানত, কারণ সে কিছুদিন কের সইে অ্যাপার্টমেন্টে বাস করেছিল। সদর দরজা খুলে ভেতরে ঢোকার চাবি তার কাছে নিশ্চয়ই ছিল, কের শোবার ঘরে যেই কেননা আত্মগোপন করে থাকুক। মিস ডোরম্যান বাড়ি ফেরেন সেই রাত্রে দুটোর সময়,নীচেনাইট ক্লার্ক আমায় বলেছে। ঘড়িতে ঠিক তখন একটা বেজে চল্লিশ মিনিট যখন মিস গিল্ডা কে কার্সনকে খুন করে ওর অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসেন। ঠিককুড়ি মিনিট সময় লাগে গাড়ি চালিয়ে কের ওখান থেকে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে আসতে। মরিস ইয়ার্দে গতকাল ওখানে রাত নটা নাগাদ এসেছিল নাইট ক্লার্কের কাছেও আমি জানতে পারি। তারপর আর তাকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়নি। সম্ভবত মরিস ইয়ার্দে গিল্ডারকাছে এসেছিল ভয় দেখিয়ে টাকা নিতে, এমন কি হয়তো শাসিয়েছিল যে টাকা না দিলে তাদের বিয়ের ব্যাপারটা প্রকাশ করে দেবে। সেইকারণেতাকে হত্যা করেন গিল্ডা এবং দেহটা ফ্রিজে লুকিয়ে রাখেন। ভেবেছিলেন ঠিক সময়ে মৃতদেহ সরিয়ে ফেলবেন। তারপর উনি ওয়াশিংটন হোটেলে যান, মরিসের ঘরে গিয়ে বিয়ের সার্টিফিকেটটা খোঁজার চেষ্টা করেন, তার যাবতীয় জিনিসপত্র হাতড়াতে থাকেন, খুঁজে বের করেন সেই সার্টিফিকেটটা।
তারপর সেটা পুড়িয়ে ফেলেন। তারপর যান রোজ নাইট ক্লাবে হল্যান্ড এবং কের সঙ্গে সেখানে তার দেখা হয়। তিনি যথারীতি কের অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে প্রবেশ করেন, ওরা ওই স্থান ত্যাগ করার পূর্বেই। তিনি জানতেন হল্যান্ড এবং কেতার ঘরে ফিরে আসবে, এজন্য তার শোবার ঘরে গিল্ডা অপেক্ষা করতে থাকেন। হল্যান্ডকে বাইরের ঘরে বসিয়ে যখন কে শোবার ঘরে ঢোকে তখন অতর্কিতে বরফকাটা গাঁইতি দিয়ে তাকে হত্যা করেন গিল্ডা ডোরম্যান। এবং পালিয়ে যান মেন সুইচ বন্ধ করে দিয়ে। তিনি স্থির নিশ্চিন্ত ছিলেন যে কের খুনী হিসাবে চিহ্নিত হবে কেন হল্যান্ড।
ও’ব্রায়েন সমস্ত শোনার পর সিগারেট ধরিয়ে মন্তব্য করলেন, আপনার সুপরিকল্পিত যুক্তির নিঃসন্দেহে অভিনবত্ব আছে। কিন্তু ভুলে যাবেন না যে কোন উপযুক্ত উকিল এ যুক্তিও খণ্ডন করতে পারবে। লেফটেন্যান্ট একথা আপনার জানা দরকার যে, জনি স্বীকারোক্তি করেছে আমার কাছে যে সেই কে কার্সনকে খুন করেছে। যেহেতু গিল্ডার সঙ্গে আপনার বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়েছিল সেজন্য জনি বোনকে বাঁচাতে আপনাকে ঐরূপ বিবৃতি দিয়েছিল। অ্যাডমস সংযত কণ্ঠে বললেন। হয়তো আপনি ম্যাডামকে খুনী জানলে বিয়ে নাও করতে পারেন। আর জনিও জানত এই বিয়ে হলে সে আর্থিক দিক দিয়ে বেশ লাভবান হবে।
কথাটা ঠিক বলছি তো? অ্যাডমসের কথা শেষ হবার পূর্বেই, পকেট থেকে নিমেষে রিভলভার বেরকরল ও’ব্রায়েন।আমি গুলি চালাব কিন্তু যদি এক পাও সরে যান, অ্যাডমসকে মাথা লক্ষ্য করে রিভলভার তুলে বলল ও’ব্রায়েন। যান ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ান,বলল পরক্ষণেই কেকে লক্ষ্য করে। কেঅ্যাডমসের পাশে গিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়াল কোন প্রতিবাদ না করে। অ্যাডমসতারনরম ভাবমূর্তি বজায় রেখে বলল, মি. ও’ব্রায়েন আপনি কিন্তু এভাবে এড়িয়ে যেতে পারবেননা, আর মিস্ গিল্ডাও বাঁচতে পারবেননা অবশ্যই।যদিওগিল্ডা কেকার্সনের খুনেরঅভিযোগ থেকে মুক্তি পান, কিন্তু আরও দুটো নরহত্যার দায় বর্তাবে ওর ওপর। একথা অবশ্যই মনে রাখবেন।
ও’ব্রায়েন বলল, আপনি হতে পারেন একজন দক্ষ পুলিস অফিসার, কিন্তু পরিচালনার প্রতিভায় আমার সমকক্ষ নন। আমার কাছ থেকে শেখারমত অনেক কিছু আপনার বাকি আছে। ইশারায় ডাকল ও’ব্রায়েন গিল্ডাকে বলল, হুইটিকে ফোন করে এক্ষুণি এখানে আসতে বলে দাও, বুঝেছো? ও যেন শক্ত সামর্থ চারজন গুণ্ডাকে নিয়ে আসে এখানে, একথা বলে দাও। আস্তে আস্তে পা ফেলে গিল্ডা এগিয়ে যেতেই অ্যাডমস বলল, আমি কখনই এরকম বোকামী করতাম না যদি আপনার জায়গায় থাকতাম। কারণ এভাবে আপনি রেহাই পাবেন না। ও’ব্রায়েনের দুচোখে তখন হিংস্র জানোয়ারের দৃষ্টি, সে বিদ্রুপের সুরে বলে উঠল, তাই নাকি? আগে অনুধাবন করুন আপনাদের দুজনের কি পরিণতি করব আমি। কাল সকাল বেলায় একতলায় আপনার আর হল্যান্ডের যুগপৎ মৃতদেহ দেখা যাবে। আর সকলে জানবে হল্যান্ড মারা গেছে আপনার গুলিতে। আর এটাও প্রমাণিত হবে দুজনে দুজনকেই মেরেছেন। আর প্রমাণ করতে হবে যে নাইট ক্লার্কটাও আপনাদের যে কোন একজনের গুলি খেয়ে মারা গেছে। আর রান্নাঘর থেকে মৃতদেহ দুটি বের করে হইটির লোকেরা কোন গোপন জায়গায় পুঁতে দেবে।
অ্যাডমস বলল, আপনার পরিকল্পনা যে তুলনাহীন একথা স্বীকার করতেই হবে।
ও’ব্রায়েন হাসল, নিষ্ঠুর ভাবে বলল, ও’ব্রায়েনের পরিচালনা, সুতরাং যে কোন প্ল্যান নিখুঁত হবেই, বুঝলেন মিঃ লেফটেন্যান্ট? হাত কাঁপছিল গিল্ডার ফোন ধরতেই, সে রিসিভার নামিয়ে রাখল, বলে উঠল কাঁদো কাঁদো গলায়, আমি পারবনা সীন। আচ্ছা থাক তোমায় ফোন করতে হবেনা। আমিই ধরছি ফোন, ভয় পেয়োনা, এতটুকু ঝামেলা তোমার উপর আমি আসতে দেবনা। গিল্ডা কোনমতে শোবার ঘরে গিয়ে ঢুকল অগোছালো ভঙ্গীতে।
ও’ব্রায়েন সম্বোধন করল, চতুর পুলিস অফিসার আপনাকে বিদায় জানাচ্ছি, এই বলে সে এগিয়ে গেল টেলিফোনের দিকে। সে কিন্তু লক্ষ্য করল না, রান্নাঘর থেকে সুইটির কুকুরটা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে তার দিকেই। কুকুরটা ও’ব্রায়েনের কাছে এগিয়ে এসে দুপা তুলে দিল তার হাঁটুর ওপর, এক লাথি মেরে কুকুরটাকে সরিয়ে দিল সে মাথা নীচু করে। সেই অবসরে অ্যাডমস তার রিভলভার বের করল পকেটের ভিতর থেকে।
অ্যাডমস বন্দুকের ঘোড়া টিপল, ও’ব্রায়েন যেই মুখ তুলে তাকাল। অব্যর্থ গুলি লাগল, ও’ব্রায়েনের ডান চোখের নীচে। ক্ষতস্থান থেকে ছিটকে এল একঝলক রক্ত। পিস্তল পড়ে গেল ও’ব্রায়েনের হাত থেকে, আবার তাকে লক্ষ্য করে গুলি করল অ্যাডমস যখনই সে টলতে টলতে পেছনেসরেযাচ্ছে।ও’ব্রায়েনের দেহটা দেওয়ালের সঙ্গেগিয়ে ধাক্কা খেল,একবার পাক খেয়ে দেহটা মেঝের উপর পড়ে গেল।
অ্যাডমস কেনের দিকে তাকাল এবং হেসে বলল, শয়তান, রাহটা আমাকে কাহিল করে দিয়েছিল। মিঃ হল্যান্ড, আপনিও কি আমার মত কাহিল হয়ে পড়েছিলেন নাকি? কে কিছু বলতে পারলনা অবশভাবে চেয়ারে বসে পড়ল। দুহাতের ওপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ফেলল সে। কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকার পর শোবার ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল অ্যাডমস। দুহাতে দুইকান চাপা দিয়ে ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়েছিল গিল্ডা, ভয়ে সে আর্ত চীৎকার করে উঠল যখন সে অ্যাডমসকে দেখতে পেল। অ্যাডমস বলল, বোনটি এখন আর কোন চীৎকারে কাজ হবেনা। আপনাকে বাঁচাবার জন্য এখন আর কাউকে পাবেন না। লক্ষ্মী মেয়ের মত চলুন আমার সঙ্গে হেড কোয়ার্টারে। কথাবার্তা যা কিছু ওখানেই সারব। গিতা ধীরে ধীরে পিছন দিকে সরতে লাগল। তার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে অ্যাডমস বলল, কুকুরটাই যতনষ্টের গোড়া, ওটাই ও’ব্রায়েনকে ফাঁসিয়ে দিল, কুকুরটাই শুধু ও’ব্রায়েনের পরিচালনার বাইরে থেকে গেল, আর সবকিছু একপ্রকার যাই হোক। আমায় মারতে চেয়েছিল, আমিই ওকে খতম করলাম। কোন রকম চাতুরী করবেন না বোনটি, চলুন আমাদের সঙ্গে।
গিল্ডা হিস্ হিস্ করে বিষাক্ত সাপের সুরে বলল, সরে যাও বলছি আমার কাছ থেকে। অ্যাডমস বলল, মিথ্যে ভয় পাবেন না, আপনার মাত্র কুড়িবছর সাজা হবে। তারপর ভবলীলা, সাঙ্গ করবেন, সব দুঃখ-কষ্টের ওপারে চলে যাবেন, যেদিন হাইড্রোজেন বোমা পড়বে। সত্যিই আপনি ভাগ্যবতী। গিল্ডা একদৌড় দিয়ে নিমেষে শোবার ঘরের জানালার সামনে এসে দাঁড়াল, অ্যাডমসের কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে। গরাদ খোলা ছিল জানালার। সেই খোলা জানালা দিয়ে। নিমেষের মধ্যে গিল্ডা নীচে লাফ দিল। নীচের তলায় শানের ওপর পরক্ষণেই তার দেহটা ষোলতলা নীচে আছড়ে পড়ল এবং তার শব্দও শোনা গেল।
অসহায় হয়ে অ্যাডমস বসার ঘরে ফিরে এল। তারপর যোগাযোগ করল হেড কোয়ার্টারে, টেলিফোন তুলে বলল, একটুও দেরী না করে একটা অ্যাম্বুলেন্স আর স্কোয়াড পাঠিয়ে দিন ৪৫ নম্বর ম্যাডক্স কোর্টে। সে কেনের পাশে এসে দাঁড়াল রিসিভার রেখে দিয়ে, তাকে বেশ করে ঝাঁকুনি দিল। বলল, এখনো এখানে বসে থেকে কি করছেন, ঘর বাড়ি আছে তো? বাড়ি ফিরতে কি ইচ্ছা করছেনা? কে ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে থাকল, সে মনে হচ্ছে কথা বলার ক্ষমতাটুকুই হারিয়ে ফেলেছে বিচিত্র সব ঘটনার ধাক্কায়।
অ্যাডমস বলল ভয় পাবেননা। আপনি এখন স্বাধীন। তবে আমার অনুরোধ এবং আদেশ, যা যা ঘটেছে তা কারো কাছে প্রকাশ করবেন না। তবে এটুকু জানবেন পুলিস আর আপনার সন্ধান করবেনা। টলতে টলতে ক্লান্ত শরীরে কে দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই অ্যাডমস ডাকল, আরে মশাই শুনে যান। কুকুরটা তখনো ঘরের ভেতর সঙ্গীহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। নিয়ে যাননা কুকুরটাকে আপনার সঙ্গে, অ্যাডমস তার দিকে অঙ্গুলি প্রদর্শন করে বলল। একটু কি জায়গা হবেনা ওর জন্য আপনার বাড়িতে?
কেন্ কুকুরটার দিকে সভয়ে তাকাল, উত্তর দিল, কখনোই না! আমি যদি আর কখনও এই পিকনিজ জাতীয় কুকুর দেখি তবে অসুস্থ হয়ে পড়ব। কথা শেষ করেই সে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নেমে এল নীচে।
.
কেনের স্ত্রী অ্যান ট্রেন থেকে নেমেই প্রশ্ন করল, ভাল আছতো তুমি? কে অপ্রস্তুত গলায় বলল, নিশ্চয়ই হ্যাঁ, ভাল আছি। আমি দারুণ সুস্থ আছি। অ্যান মন্তব্য করল, কিন্তু তোমার চোখ মুখ অন্যরকম কথা বলছে, তোমাকে যেন খুব বিপর্যস্ত দেখাচ্ছে। কি রকম পরিবর্তন বোধ লাগছে। কে বলল, ওসব ফালতু কথা থামাও, মালপত্র কোথায় রেখেছ বল? ওগুলো ঠিকমত পরিচালনা করা প্রয়োজন ক্ষণিকের জন্য ও’ব্রায়েনের প্রচলিত শব্দটি পরিচালনা করা কথাটা কেনের মনে পড়ে গেল, তাই বাক্যটি প্রয়োগ করার সুযোগ সে ছাড়তে পারল না।
অ্যান প্রশ্ন করল কি করে সময় কাটতো তোমার, যখন আমি ছিলাম না?
এই গোলাপ ঝাড়ে জল দিতাম, ঘাস ছাটতাম, বাগান পরিস্কার করতাম এইসব আর কি। কেন মনে মনে ভাবল, ওঃ অল্পের জন্য বেঁচে গেছি দারুণ বিপদ থেকে। ওঃ, প্রচণ্ড শিক্ষা হয়ে গেছে। অ্যান গাড়ি থেকে নেমে বলল, বাঃ বাগানটা সুন্দর করে রেখেছে তো। হঠাৎ বলল, আরে কি ব্যাপার এটা কি? কেন্ তুমি কি আমাকে চমক দেবে বলে এটাকে এনেছ?
কেন বিস্ময়ের সঙ্গে দেখল, একটা পিকনিজ কুকুর বাংলোর সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে তাদের লক্ষ্য করছে।