২১০তম অধ্যায়
ইন্দ্ৰিয়-ইন্দ্ৰিয়নিগ্রহের উপায়
“ধর্ম্মব্যাধ কহিলেন, “হে বিপ্ৰা! আপনি যাহা জিজ্ঞাসা করিতেছেন, তৎসমুদয়ই তপোমূলক। ইন্দ্ৰিয়সংযম করিলেই তপস্যা হয়, উহা ভিন্ন তপানুষ্ঠানের আর কোনপ্রকার উপায় নাই। ইন্দ্ৰিয়ই স্বর্গ ও নরকের কারণ, ইন্দ্ৰিয়নিগ্ৰহ করিলে স্বর্গ ও ইন্দ্রিয়পরতন্ত্র হইলে নরক-লাভ হইয়া থাকে। ইন্দ্রিয়ধারণের নামই যোগবিধি; ইন্দ্ৰিয়-সংযোগে রাগ-দ্বেষাদিরূপ দোষসংস্রব হয় এবং তাহাদিগের সংযমে সিদ্ধিলাভ হইয়া থাকে। যে ব্যক্তি মন প্রভৃতি ছয় ইন্দ্রিয়কে বশীভূত করিতে সমর্থ হয়েন, তিনি কদাপি অনর্থমূল পাপে লিপ্ত হয়েন না।
‘পুরুষের শরীর রথ, আত্মা নিয়ন্তা এবং ইন্দ্ৰিয়সকল অশ্বস্বরূপ হইয়াছে। ধীর ব্যক্তি অপ্ৰমত্ত হইয়া দান্ত ও সদশ্বসংযোজিত রথাধিরূঢ় রথীর ন্যায় ইন্দ্ৰিয়গণদ্বারা পরমসুখে সঞ্চরণ করেন। যে ধীর পুরুষ আত্মনিষ্ঠ, একান্ত প্ৰমত্ত ইন্দ্ৰিয়রূপ অশ্বগণের রশ্মি ধারণ করিতে সমর্থ হয়েন, তিনি উৎকৃষ্ট সারথি । যেমন বিমুক্ত অশ্বগণ পথিমধ্যে চপলতা প্রকাশ করিলে তাহাদিগের ধৈৰ্য্যসম্পাদন করা সারথির কাৰ্য্য, সেইরূপ ইন্দ্ৰিয়সকল উচ্ছৃঙ্খল হইলে ধীরতা বা তাহাদিগকে বশীভূত করা সাধু ব্যক্তির অবশ্য কর্ত্তব্য। যেমন প্ৰবল অনিল নৌকাকে জলমগ্ন করে, তদ্রূপ ইন্দ্রিয়পরতন্ত্র মন মনুষ্যের বুদ্ধি হরণ করে। বিষয়াসক্ত ব্যক্তিরা মোহবশতঃ শব্দাদিবিষজনিত সুখভোগই উপাদেয় ও বীতরাগ হওয়া অতি হেয় বলিয়া থাকে, কিন্তু সেই সকল বিষয়ের দোষদর্শনে যাঁহারা বীতরাগ হইয়াছেন, তাঁহারাই ধ্যানজনিত উৎকৃষ্ট ফল ভোগ করেন।’ ”