ছোটো গল্প
উপন্যাস
প্রবন্ধ
ফিচার
কবিতা

২০. ভালোবাসা

২০. ভালোবাসা

অবশেষে একদিন ধৈর্যের পুরস্কার পেল উইডন স্কট। ভালোবাসার কাছে বশ মানল বনের পশু। এমন সম্পূর্ণভাবে এর আগে কারও কাছে আত্মসর্পণ করেনি হোয়াইট ফ্যাং।

ম্যাট একসময়ে বলতে বাধ্য হল, মি. স্কট, তুমি অসাধ্যসাধন করেছ। বুনো নেকড়েটাকে তুমি বশ করেছ পোষা কুকুরের মতো।

তবে এই ভালোবাসা, এই বশ্যতা স্বীকারের প্রবৃত্তি, একদিনে আসেনি। তাকে বেঁধে রাখা হত না, তবু সে পালিয়ে যায়নি। কারণ এই নূতন দেবতাটিকে অর্থাৎ তার নুতন মনিবকে সে পছন্দ করে ফেলেছিল। এই পছন্দ ধীরে ধীরে ভালোবাসায় পরিবর্তিত হল। মানুষের সঙ্গে, মানুষের প্রভুত্ব সে কামনা করত নিজের অগোচরে। তাই ছোটোবেলায় অরণ্যের মুক্ত জীবন পিছনে ফেলে স্বেচ্ছায় এসে গ্রে বিভারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল হোয়াইট ফ্যাং।

তার জীবনে এমন একটি দেবতার প্রয়োজন ছিল যাকে সে ভালোবাসতে পারবে। উইডন স্কট তার এই ভালোবাসার ক্ষুধাকে তৃপ্ত করেছিল সদয় ব্যবহারে। প্রভুর সম্পত্তি রক্ষার দায় সে স্বেচ্ছায় তুলে নিয়েছিল নিজের কাঁধে। রাত্রে যখন অন্যান্য স্লেজবাহী কুকুরগুলো ঘুমাত, সেইসময় প্রভুর ঘরের চারপাশে ঘুরে ঘুরে বিনিদ্রনেত্রে পাহারা দিত হোয়াইট ফ্যাং। প্রথম প্রথম বেশি রাতে কেউ এলেই সে আক্রমণে উদ্যত হত, কিন্তু কয়েকদিন পরেই সে চোর এবং নির্দোষ অতিথির তফাৎ বুঝতে শিখল। যে-মানুষটা সশব্দ পদক্ষেপে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করে এগিয়ে এসে ঘরের দরজায় ধাক্কা দেয়, তাকে কিছু বলে না সে। তবে উইড়ন ম্যাট দরজা খুলে আগন্তুককে অভ্যর্থনা জানানোর আগে পর্যন্ত লোকটির দিকে নজরে রাখতে ভুলত না সে। কিন্তু ধীরে ধীরে নিঃশব্দে সতর্ক চরণে সকলের অগোচরে যে এগিয়ে আসতে চায়, সেই মানুষটি অতিশয় সন্দেহজনক ব্যক্তি এবং তাকে বিতাড়িত করা উচিত তৎক্ষণাৎ।

পরিবর্তিত পরিবেশের মধ্যে নানারকমে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখল সে। মনিবের কুকুরগুলোকে হত্যা করার চেষ্টা করত না হোয়াইট ফ্যাং। তবে কয়েকবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে সে তাদের বুঝিয়ে দিল তার শ্রেষ্ঠত্ব আর নেতৃত্ব মেনে না নিলে বিপদ আছে। কুকুরগুলো তাকে দলপতি বলে মেনে নেওয়ার পর আর গোলমাল রইল না।

একইভাবে ম্যাটকে মেনে নিয়েছিল হোয়াইট ফ্যাং। তার বিবেচনায় কুকুরগুলোর মতো স্লেজবালক ম্যাটও ছিল প্রভুর জীবন্ত সম্পত্তি। তাই ম্যাটের হাত থেকে বিনা প্রতিবাদে সে খাদ্য গ্রহণ করত। সে বুঝেছিল খাদ্য দিচ্ছে তার প্রভ উইডন, তবে সেই খাবারটা ম্যাটের হাত থেকে আসছে– কারণ এটাই হচ্ছে তার প্রভুর ব্যবস্থা। কালে-ভদ্রে অবশ্য কখনো কখনো উইডন নিজের হাতে হোয়াইট ফ্যাংকে খেতে দিত, কিন্তু খুব কম সময়েই সেরকম ঘটনা ঘটত।

একদিন স্লেজ টানার জন্য অন্য কুকুরদের সঙ্গে হোয়াইট ফ্যাং-এর দেহেও চামড়ার সাজ পরিয়ে ম্যাট তাকে গাড়ি টানার কাজে নিযুক্ত করতে সচেষ্ট হল, কিন্তু ম্যাটের চেষ্টা সফল হল না। অবশেষে উইডন যখন নিজের হাতে হোয়াইট ফ্যাং-এর শরীরে চামড়ার সাজ পরিয়ে স্লেজবাহকের কার্যে নিযুক্ত করল, তখন সে আর স্লেজ টানতে আপত্তি করল না। সে বুঝল, ম্যাট অন্যান্য কুকুরদের মতো তাকেও চালাচ্ছে তার প্রভু উইডনের ইচ্ছানুসারে- অতএব এই কাজে আপত্তি করা উচিত নয়।

বসন্তকালের শেষে একটা কষ্টকর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করল হোয়াইট ফ্যাং। হঠাৎ একদিন উধাও হয়ে গেল তার প্রভু। হোয়াইট ফ্যাং ঘরের ভিতর থাকত না, ঘরের বাইরে ঘুরে ঘুরে সে পাহারা দিত। সকালবেলা ঘরের দরজা খুলে ম্যাট যখন বেরিয়ে এল, তখন তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইল হোয়াইট ফ্যাং। সে এবং ম্যাট পরস্পরের ভাষা বোঝে না, তাই প্রভু কোথায় গেল বা কখন আসবে সেকথা জানার উপায় ছিল না বর্ণসংকর পশুটার।

দিনের পর দিন কেটে যায়। প্রভুর দেখা নেই। ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ে হোয়াইট ফ্যাং। এত অসুস্থ যে, ম্যাট তাকে ঘরের ভিতর স্থান দিতে বাধ্য হল। অবশেষে উইডনকে একটা চিঠি লিখল ম্যাট। সার্কল শহরে বসে ম্যাটের চিঠি পেল উইডন স্কট। চিঠির বয়ান নিচে দেওয়া হল :

হতচ্ছাড়া নেকড়েটা কোনো কাজ করে না, খায় না। দলের সব কুকুরগুলো ওর উপর। হামলা করে। নেকড়েটা চুপচাপ সহ্য করে, কাউকে পালটা-আক্রমণ করে না। ও জানতে চায় তোমার কী হয়েছে। কিন্তু ও যা জানতে চায়, সেটা ওকে জানাব কেমন করে? বোধহয়, জন্তুটা এবার মরে যাবে।

ম্যাটের লিখিত চিঠির বর্ণনা সত্য। হোয়াইট ফ্যাং খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। অন্য কুকুরগুলোর আক্রমণ ঠেকাতেও সে চেষ্টা করে না। ঘরের মধ্যে স্টোভের কাছে সামনের দুই থাবার উপর মুখ গুঁজে সে শুয়ে থাকে, বেঁচে থাকার সব আনন্দ যেন মুছে গেছে তার জীবন থেকে।

হঠাৎ এক রাতে বই পড়তে পড়তে চমকে উঠল ম্যাট হোয়াইট ফ্যাং উঠে দাঁড়িয়েছে, তার গলা থেকে বেরিয়ে আসছে চাপা খুশির আওয়াজ, দুই কান খাড়া করে কী যেন শুনছে সে এবং তার দুই চোখের দৃষ্টি রয়েছে বন্ধ দরজার দিকে। পরমুহূর্তেই দরজা খুলে প্রবেশ করল উইডন স্কট। দুজনে করমর্দন করল, তারপর ঘরের চারদিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করল উইডন।

নেকড়েটা কোথায়? সে জিজ্ঞাসা করল। ম্যাট উত্তর দেওয়ার আগেই জন্তুটাকে দেখতে পেল উইডন। স্টোভের কাছে যেখানে সে শুয়েছিল, সেইখানেই সে উঠে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অন্যান্য কুকুরের মতো প্রভুর কাছে সে ছুটে আসেনি, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সে লক্ষ্য করছে প্রভুকে।

আরে! আরে! ম্যাট বিস্মিতকণ্ঠে বলল, জটা লেজ নাড়ছে যে!

উইডন স্কট তখন এগিয়ে গেছে, হাঁটু পেতে বসে পোষা জন্তুটার সর্বাঙ্গে হাত বুলিয়ে আদর করছে। হোয়াইট ফ্যাং-এর গলা থেকে বেরিয়ে আসছে খুশির আওয়াজ। কিন্তু তারপর যা ঘটল, তা ভাবাই যায় না– প্রভুর হাত আর শরীরের মাঝখানে সে মাথাটা ঢুকিয়ে দিল, কান দটো ছাড়া তার মাথা আর মুখ হয়ে গেল অদৃশ্য। তার কণ্ঠ হয়ে গেল সম্পূর্ণ নীরব, মাথা নেড়ে নেড়ে সে বুঝিয়ে দিতে লাগল প্রভুর আগমনে সে আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়েছে।

ম্যাট মন্তব্য করল, আমি বরাবরই ভেবে এসেছি ওটা নেকড়ে নয়, কুকুর। এখন দেখা যাচ্ছে আমার অনুমান নির্ভুল।

উইডন স্কট ফিরে আসার সঙ্গেসঙ্গে যেন নূতন প্রাণের জোয়ারে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল হোয়াইট ফ্যাং! ঝগড়াটে কুকুরগুলোকে সে এবার শিক্ষা দিতে প্রবৃত্ত হল। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্লেজবাহক কুকুরগুলো বশ্যতা স্বীকার করল, আবার মেনে নিল হোয়াইট ফ্যাং-এর নেতৃত্ব…

এক রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তাস খেলছে ম্যাট আর উইডন, হঠাৎ বাইরে থেকে ভেসে এল মানুষের আর্তনাদ এবং শ্বাপদের চাপা গর্জনধ্বনি!

তারা পরস্পরের সঙ্গে দৃষ্টিবিনিময় করে উঠে দাঁড়াল। ম্যাট বলল, নেকড়েটা কাউকে পাকড়াও করেছে।

একটা তীব্র ভয়ার্ত আর্তনাদ ভেসে এল বাইরে থেকে। আলো নিয়ে এস, চিৎকার করে উঠল স্কট, তারপর একলাফে বেরিয়ে গেল খোলা দরজা দিয়ে।

জ্বলন্ত বাতি হাতে ম্যাট প্রভুকে অনুসরণ করল। বাতির আলোয় তারা দেখল, বরফের উপর চিৎপাত হয়ে পড়ে একটা মানুষ দু-হাত দিয়ে মুখ আর গলা বাঁচাতে চেষ্টা করছে হোয়াইট ফ্যাং-এর আক্রমণ থেকে। লোকটির কাঁধ থেকে হাত পর্যন্ত কোট আর শার্ট ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, গল গল্ করে ছুটছে লাল রক্তের ধারা। বার বার হিংস্র আক্রোশে লোকটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে হোয়াইট ফ্যাং।

উইডন স্কট জন্তুটার গলার বগলস ধরে আক্রান্ত লোকটির দেহের উপর থেকে তাকে সরিয়ে আনল। তারপর তীব্রস্বরে ধমক দিতেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল হোয়াইট ফ্যাং, আর আক্রমণের চেষ্টা করল না।

ধরাশায়ী মানুষটিকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করল ম্যাট। প্রদীপের আলো লোকটির মুখের উপর পড়তেই ম্যাট চমকে উঠল– বিউটি স্মিথ।

সেই সঙ্গে বরফের উপর আরও দুটি বস্তু ম্যাটের দৃষ্টিকে আকৃষ্ট করল। আলোটা খুব ভালোভাবে এগিয়ে আনতেই জিনিস দুটিকে স্পষ্ট দেখতে পেল ম্যাট আর উইডন স্কট একটা কুকুর-বাঁধা শিকল এবং একটা জাঁদরেল মুগুর!

কেউ একটাও কথা বলল না। উইডন স্কট মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল ব্যাপারটা তার বোধগম্য হয়েছে। ম্যাট বিউটি স্মিথের কাঁধে হাত দিয়ে তার মুখটা পিছন দিকে ঘুরিয়ে দিল। নিঃশব্দে পিছন ফিরে হাঁটতে শুরু করল বিউটি স্মিথ।

হোয়াইট ফ্যাং-এর গায়ে চাপড় মারতে মারতে তার প্রভু বলল, তোমাকে চুরি করার চেষ্টা করেছিল লোকটা? ওর সঙ্গে যাওয়ার ইচ্ছা তোমার নেই, তাই না? বেশ, বেশ। লোকটা ভুল করে ফেলেছে, সন্দেহ নেই।

হোয়াইট ফ্যাং-এর ক্রুব্ধ গর্জন থামল, তার শরীরের খাড়া লোমগুলি আবার স্বাভাবিক হয়ে মিশে গেল দেহের সঙ্গে।

.

২১. যাত্রা

হোয়াইট ফ্যাং বুদ্ধিমান কুকুর। জিনিসপত্র বাঁধা হচ্ছে দেখে সে বুঝল তার প্রভু আবার তাকে ফেলে উধাও হওয়ার মতলব করছে। সত্যিই একদিন উইডন স্কট রওনা হল জাহাজঘাটার দিকে, একটু পরেই হোয়াইট ফ্যাংকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে মনিবের সঙ্গ নিল ম্যাট।

কিন্তু জাহাজঘাটায় গিয়ে স্টীমার ছাড়ার পূর্বমুহূর্তে হঠাৎ তারা চমকে উঠে দেখল একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে হোয়াইট ফ্যাং!

স্কট বলল, কী আশ্চর্য! তুমি নিশ্চয়ই পিছনের দরজা বন্ধ করোনি।

ম্যাট বলল, আমি নিজের হাতে সব বন্ধ করেছি। কিন্তু ওটা এখানে এল কি করে?

ম্যাট তাকে ধরার চেষ্টা করল। কিন্তু অদ্ভুত কৌশলে তাকে ফাঁকি দিয়ে লোকজনের পায়ের ফাঁকে ফাঁকে ঘুরতে লাগল জন্তুটা। উইডন স্কট তখন তার পোষা জন্তুটাকে নাম ধরে ডাকল। সঙ্গেসঙ্গে তার কাছে এসে দাঁড়াল হোয়াইট ফ্যাং।

ইতিমধ্যে তারা দেখতে পেয়েছে জন্তুটার নাকের দু-পাশ আর দুই চোখের মাঝখানে আত্মপ্রকাশ করেছে একাধিক রক্তাক্ত ক্ষতচিহ্ন।

ম্যাট বলল, জানালার কথাটা আমাদের খেয়াল হয়নি। জানালার তলার দিকটা দাঁত দিয়ে কেটে হতভাগা নেকড়ে পালিয়ে এসেছে।

উইডন স্কট তখন ম্যাটের কথা শুনছিল না। সে দ্রুত চিন্তা করছিল। জাহাজের বাঁশি বেজে উঠে জানিয়ে দিল আর দেরি নেই, এখনই জাহাজ ছেড়ে দেবে। কাঠের যে তক্তাটা জাহাজ আর তীরভূমির মধ্যে সেতুর কাজ করছিল, সেই তক্তার উপর দিয়ে মানুষ জন তাড়াতাড়ি তীরের দিকে ব্যস্ত পায়ে ছুটল। ম্যাট তার গলা থেকে রুমাল খুলে নিয়ে হোয়াইট ফ্যাং-এর গলায় বাঁধতে উদ্যত হল, কিন্তু তার হাত চেপে ধরল উইডন স্কট, বিদায়, ম্যাট! আমি নেকড়েটাকে নিয়ে যাচ্ছি..

কাঠের সেতু দিয়ে ফিরে যেতে যেতে একবার ঘুরে দাঁড়াল ম্যাট, ওই আবহাওয়ায় জন্তুটার বাঁচা মুশকিল। তবে গ্রীষ্মকালে ওর লোমগুলো ছেটে দিলে হয়তো বাঁচতে পারে।

কাঠের তক্তটা আবার টেনে নেওয়া হল জাহাজের মধ্যে। জাহাজ চলতে শুরু করল। তীরে দণ্ডায়মান ম্যাটের দিকে শেষবার হাত নেড়ে বিদায় জানাল উইডন স্কট।

.

২২. দক্ষিণের দেশ

স্টীমার থেকে নেমে সানফ্রান্সিসকো শহরে উপস্থিত হল হোয়াইট ফ্যাং। ওই শহর তার মধ্যে আতঙ্কের সঞ্চার করল। কাঠের বাড়ির পরিবর্তে এখানে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে অসংখ্য আকাশ-ছোঁয়া অট্টালিকা, রাস্তার উপর দিয়ে তীব্রস্বরে বাঁশি বাজিয়ে ছুটছে নানা ধরনের গাড়ি দলে দলে ওই সব অচল ও চলমান বস্তু এবং অপরিচিত শব্দের ঘনঘটা তাকে আতঙ্কে অভিভূত করে দিল।

কিন্তু আরও ভয়ংকর অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছিল তার জন্য। তাকে যখন রেলগাড়িতে একটা কামরার মধ্যে শিকলে বেঁধে চলে গেল উইডন স্কট আর গাড়ি ছুটতে শুরু করল– তখনই হোয়াইট ফ্যাং ভাবল তার প্রভু বোধহয় তাকে ত্যাগ করেছে।

রেলগাড়ি থামল। তাকে আশ্বস্ত করে তার সামনে আবির্ভূত হল প্রভুর পরিচিত মূর্তি। গাড়ি থেকে নামিয়ে তাকে নিয়ে তার প্রভু এগিয়ে চলল। জন্তুটার চোখের সামনে থেকে অন্তর্ধান করেছে ভয়ংকর শহরের শব্দায়মান বিভীষিকা, সামনে দেখা যাচ্ছে গ্রাম্য প্রকৃতির। শ্যামল শোভা। হোয়াইট ফ্যাং অবশ্য পারিপার্শ্বিক অবস্থার হঠাৎ পরিবর্তন দেখে বিশেষ অবাক হয়নি, সমস্ত ব্যাপারটাকে সহজভাবেই গ্রহণ করল সে। বর্ণসংকর জন্তুটা জানত দেবতাদের (মানুষদের) কাণ্ডই আলাদা, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

একটা ঘোড়ার গাড়ি অপেক্ষা করছিল। একটি পুরুষ ও একজন মহিলা প্রভুর দিকে এগিয়ে এল। তারপর একি কাণ্ড! মহিলাটি তার প্রভুর গলা জড়িয়ে ধরেছে। যে!, এ তো ভালো কথা নয়। মহিলা, নিশ্চয়ই তার প্রভুকে আক্রমণ করছে! অতএব সগর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়ল হোয়াইট ফ্যাং, এক ঝটকায় দুজনকে দু-দিকে সরিয়ে দিল সে।

ঠিক আছে মা, উইডন স্কট হোয়াইট ফ্যাংকে চেপে ধরে বলল, ও ভেবেছিল তুমি আমাকে মারতে চাইছ, তাই ও বাধা দিয়েছে। কিন্তু ওকে শিক্ষা দিতে হবে। ও খুব তাড়াতাড়ি বুঝবে তুমি আমার শত্রু নও।

হ্যাঁ, আর যত দিন সেই শিক্ষা সম্পূর্ণ না হয়, ততদিন আমি আমার ছেলেকে আদর করতে পারব না, মহিলা হাসলেন, তবে কুকুরটা যখন সামনে থাকবে না, শুধু সেই সময়টুকু ছেলের উপর আমার অধিকার থাকবে।

হেসে ঠাট্টা করলেও উইডনের মা খুব ভয় পেয়েছিলেন।

না, ওকে শিখতেই হবে, উইডন স্কট বলল, মা, তুমি আবার আমায় জড়িয়ে ধর।

 হোয়াইট ফ্যাং দেখল আবার সেই ভয়ংকর দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছে। সে দাঁত খিঁচিয়ে ধমক দেওয়ার উপক্রম করতেই তার প্রভু কঠোর স্বরে বলে উঠল, চুপ! চুপ! নিচু হও, শিগগির নিচু হও বলছি।

হোয়াইট ফ্যাং দেখল প্রভুর কোনো ক্ষতি হল না। সে বুঝল এটা দেবতাদের একটা বিশেষ নিয়ম, এখানে তার নাক গলানো উচিত নয়।

গাড়ি ছুটল। সঙ্গে ছুটল হোয়াইট ফ্যাং। কিছুক্ষণ পরে একটা অট্টালিকার দিকে এগিয়ে চলল গাড়ি। সানন্দে গাড়ির পিছু পিছু ছুটছিল হোয়াইট ফাং, হঠাৎ তাকে লক্ষ্য করে ছুটে এল একটা শীপ-ডগ! উইডনের বাবা কলি নামে পোষা জীবটিকে ডেকে নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু উইডন বলল বিপরীত পরিবেশের ভিতর দিয়ে অনেক কিছু জানতে আর শিখতে পারবে হোয়াইট ফ্যাং– অতএব, এই ব্যাপারটাতেও হস্তক্ষেপ না করে সমস্যা সমাধানের ভার তার উপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো।

হোয়াইট ফ্যাং লড়াই-এর জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল, কিন্তু শীপ-ডগ কাছে আসতেই সে বুঝতে পারল তাকে আক্রমণ করতে আসছে একটা মেয়ে-কুকুর। নেকড়ে বা কুকুরের সমাজে মেয়েদের আঘাত করার নিয়ম নেই, কিন্তু এই জন্তুটা যে কিছুতেই তাকে প্রভুর কাছে যেতে দিচ্ছে না! ছুটে পালাতে পালাতে হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে সে কলির কাঁধে মারল এক ধাক্কা। এটা তার পুরোনো রণকৌশল।

কলি ছুটে আসছিল খুব জোরে- আচম্বিতে ধাক্কা খেয়ে সে ছিটকে পড়ে গড়াতে গড়াতে চলে গেল অনেক দূরে। কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে সে যখন উঠে দাঁড়াল, তখন অনেকদূর চলে গেছে হোয়াইট ফ্যাং। কলিকে এড়িয়ে গিয়েও নিষ্কৃতি পেল না হোয়াইট ফ্যাং।

প্রভুর কাছাকাছি আসতেই একটা মস্ত ডিয়ার হাউন্ড এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল তার উপর। ডিক নামক ডিয়ার হাউন্ড খুব বেঁচে গেল সে-যাত্রা, কারণ সঙ্গেসঙ্গে সেখানে এসে উপস্থিত হল কলি। ডিক পুরুষ কুকুর, তাকে রেহাই দিত না হোয়াইট ফ্যাং- কিন্তু কলির আক্রমণ সামলাতেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ল বর্ণসংকর নেকড়ে, ডিককে প্রাণঘাতী আঘাতে পেড়ে ফেলার সুযোগই পেল না সে। অবশেষে উইডন আর তার বাবা দুজনে মিলে কুকুর সামলালেন, বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করল হোয়াইট ফ্যাং।

স্কটের বাবা বললেন, ডিক আর হোয়াইট ফ্যাংকে লড়তে দেওয়া হোক। প্রথমটায় মারামারি করলেও পরে ওরা পরস্পরকে বন্ধু বলে মেনে নেবে।

স্কট বলল, বন্ধুত্ব করার সময় দিলে তো বন্ধুত্ব হবে। এক মিনিট, কি দেড় মিনিটের মধ্যেই ডিক মারা পড়বে।

—বল কী?

উইডন তার পোষা জীবটির দিকে ঘুরল, এই ব্যাটা নেকড়ে, আমার সঙ্গে আয়।

ডিকের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে পায়ে পায়ে প্রভুর সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলো হোয়াইট ফ্যাং। ঘরের চারদিকে পর্যবেক্ষণ করে সে আশ্বস্ত হল- নাঃ, এই মুহূর্তে বিপদের ভয় আছে বলে মনে হচ্ছে না। অস্ফুট শব্দে মনের আনন্দ প্রকাশ করে সে প্রভুর পায়ের কাছে শুয়ে পড়ল।

.

২৩. দেবতার রাজ্য

পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখেছিল হোয়াইট ফ্যাং। এখানে প্রভু উইডন স্কটের সঙ্গে তার পিতা বিচারক স্কটের বাড়িতে এসে সে বুঝল এখানকার নিয়ম-কানুন আলাদা এতদিন যেসব দেবতার আশ্রয়ে সে থেকে এসেছে, তাদের সঙ্গে এখানকার দেবতাদের জীবনধারণ পদ্ধতির প্রচুর তফাৎ। বুদ্ধিমান নেকড়েটা এই তফাৎ বুঝতে শিখল, সঙ্গেসঙ্গে নূতন নিয়মকানুন মেনে নিল খুব সহজভাবে। সে জানল এখানকার কুকুরগুলো দেবতাদের আশ্রিত জীব, তাদের সঙ্গে ঝগড়া করা চলবে না। স্কুট পরিবারের পোষা কুকুররাও বুঝল এই বুনো নেকড়েটাকে তাদের প্রভুরা নিয়ে এসেছে, ডিক নামে ডিয়ার-হাউন্ড দু-একবার আড়ষ্ট পায়ে যুদ্ধের পাঁয়তারা ভাজলেও শেষ পর্যন্ত সে-ও হোয়াইট ফ্যাংকে মেনে নিল। হয়তো হোয়াইট ফ্যাং-এর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে উঠত, কিন্তু কাছাকাছি ডিক এলেই হিংস্রভাবে দাঁত খিঁচিয়ে হোয়াইট ফ্যাং জানিয়ে দিত সে কারও সান্নিধ্য পছন্দ করে না। চিরকালই বর্ণসংকর পশুটা তার স্বজাতির সাহচর্য এড়িয়ে চলেছে, এখনও তাদের সঙ্গে সে মেলামেশা করতে ইচ্ছুক নয়। ডিক যখন নেকড়েটার মনোভাব বুঝল তখন সে-ও তাকে এড়িয়ে চলতে শিখল।

কুকুর ছাড়া বাড়ির মধ্যে আরও অনেক পোষা জীবজন্তু ছিল; ছিল মুরগির খোয়াড়। প্রথম প্রথম ভুল করে মুরগিদের উপর হানা দিলেও সে যখন বুঝতে পারল এই বাড়ির নিয়ম অনুসারে মুরগিরা অবধ্য, তখন সে আবার তাদের দিকে চোখ তুলে তাকাত না।

অনেক সময় প্রভুর সঙ্গে সে বেড়াতে যেত প্রতিবেশীদের বাড়ি। সেখানে বিড়ালদের উপস্থিতি সে শান্তভাবে মেনে নিতে শিখল। প্রতিবেশী কুকুরদের উপর হামলা করাও প্রভুর অপছন্দ– বিনা প্রতিবাদে তা-ও মেনে নিল হোয়াইট ফ্যাং।

উইডন স্কটের পরিবারটি বেশ বড়ো। গ্রে বিভারের তাবুতে জনসংখ্যা ছিল মাত্র তিন গ্রে বিভার স্বয়ং, আর তার স্ত্রী-পুত্র। কিন্তু সিয়েরা ভিসটা নামে বিশাল অট্টালিকায় বাস করত হোয়াইট ফ্যাং-এর প্রভু উইডন স্কট, তার পিতা বিচারক স্কুট, তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ উইডনের মা, প্রভু পত্নী অ্যালিস, তার দুই শিশুসন্তান উইডন আর মড- যাদের একজনের বয়স চার আর একজনের ছয়। এরা ছাড়াও পরিবারের জনসংখ্যা বৃদ্ধি করেছিল উইডন স্কটের দুই ভগ্নী- বেথ এবং মেরী। ধীরে ধীরে সকলকেই মেনে নিল হোয়াইট ফ্যাং। রেড ইন্ডিয়ানদের আস্তানায় পূর্ব অভিজ্ঞতার ফলে শিশুদের সে পছন্দ করত না। কারণ, সে দেখেছে বাচ্চারা অকারণে নিষ্ঠুর ব্যবহার করে। কিন্তু সে যখন দেখল এই বাড়ির বাচ্চারা তাকে কখনোই আঘাত করে না, তখন সে তাদেরও ভালোবেসে ফেলল। তবে পরিবারের মধ্যে উইডন স্কট ছাড়া তার সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন প্রভুর পিতা এবং পরিবারের কর্তা বিচারক স্কট। তিনি যখন খবরের কাগজ পড়তেন, তখন পায়ের কাছে শায়িত নেকড়েটার দিকে চোখ তুলে তাকাতেন, অথবা মৃদু স্বরে দু-একটা কথা বলে জানিয়ে দিতেন তার অস্তিত্ব সম্পর্কে তিনি সচেতন। তার এই নিরুত্তাপ স্বীকৃতি খুব পছন্দ করত হোয়াইট ফ্যাং; আর সেইজন্যই স্কট পরিবারের অন্য গায়ে পড়া মানুষদের চাইতে কামশাইকেই সে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করত।

তবে মাঝে মাঝে এখানকার নিয়ম মেনে চলতে তার অসুবিধা হত। প্রভু যখন ঘোড়ার গাড়ি চড়ে বেড়াতে যেত, তখন গাড়ির সঙ্গে ছুটত হোয়াইট ফ্যাং। সেইসময় তাকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁডত কয়েকটা ছেলে। সে জানত কোনো মানুষকে আক্রমণ করা নিষিদ্ধ, তাই ছেলেগুলোর উপর সে পালটা হামলা করত না। কিন্তু রুখে দাঁড়িয়ে আত্মরক্ষা করার হুকুম ছিল না বলে সে মনে মনে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ছিল। এইভাবেই একদিন সে যখন গাড়ির সঙ্গে ছুটছে, আর ছেলেগুলো তাকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে শুরু করেছে, সেই সময় হঠাৎ চাবুকহাতে গাড়ি থেকে নেমে এল উইডন স্কট এবং ছেলেগুলোকে এমন ভীষণভাবে চাবুক-পেটা করল যে, তারা দৌড়ে পালাতে পথ পেল না। এই ঘটনার পর আর কেউ হোয়াইট ফ্যাংকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়েনি। শ্বাপদ বুঝল তার নিরাপত্তা সম্পর্কে তার প্রভু সর্বদাই সজাগ। তার উপর অত্যাচার বা অবিচার সহ্য করবে না উইডন স্কট। সে খুশি হল, বুঝল এখানে সুবিচার আছে।

পূর্বোক্ত ঘটনার মতোই আরও একটা ঘটনার ভিতর দিয়ে হোয়াইট ফ্যাং জানতে পারল সব নিয়মেরই ব্যতিক্রম আছে। গাড়ির সঙ্গে ছুটতে ছুটতে শহরের প্রবেশ পথে একটা দোকানের সামনে যখনই আসত হোয়াইট ফ্যাং, তখনই তাকে আক্রমণ করতে ছুটে আসত তিনটি কুকুর। হিংস্রভাবে দাঁত খিঁচিয়ে সে তাদের ভয় দেখাত, কাজেই তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস পেত না তারা কিন্তু অনেক দূর পর্যন্ত তাকে অনুসরণ করে ঘেউ ঘেউ শব্দে চিৎকার করত কুকুরগুলো, অর্থাৎ কুকুর-ভাষায় বিশ্রীভাবে গালাগালি করত হোয়াইট ফ্যাংকে লক্ষ্য করে। অপমানিত বোধ করলেও ঘুরে দাঁড়িয়ে কুকুর তিনটিকে আক্রমণ করত না সে, কারণ অন্য কুকুরের সঙ্গে লড়াই করার নিয়ম নেই। দোকানের লোকগুলো আক্রমণকারী তিনটি কুকুরকে উৎসাহ দিত। একদিন তারা সোজাসুজি কুকুর তিনটিকে লেলিয়ে দিল হোয়াইট ফ্যাং-এর উপর।

উইডন স্কট ব্যাপারটা অনেকদিন ধরেই লক্ষ্য করছিল। সেদিন তার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল। গাড়ি থামিয়ে সে হোয়াইট ফ্যাংকে লড়াই করার নির্দেশ দিল। প্রথমে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনি সে, কিন্তু প্রভু যখন আবার মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ, ওদের ভালো করে শিক্ষা দাও। মেরে ফেল ওদের। আপদের শাস্তি হোক।

আর ইতস্তত করল না সে। আচম্বিতে একটা শরীরী ঝটিকা ঝাঁপিয়ে পড়ল কুকুর তিনটির উপর। একটা ধুলোর ঝড় উঠল। একটু পরেই দেখা গেল দুটো কুকুর মাটিতে পড়ে ছটফট করছে এবং তৃতীয় কুকুরটা ছুটে পালাচ্ছে ঊর্ধ্বশ্বাসে। কিন্তু তার পলায়নের চেষ্টা সফল হল না, একটা ফাঁকা মাঠের উপর তাকে ধরে ফেলল হোয়াইট ফ্যাং। কিছুক্ষণের মধ্যেই তৃতীয় শত্রুকে মৃত্যুশয্যায় শুইয়ে দিয়ে প্রভুর কাছে ফিরে এল সে।

এই ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়ল লোকের মুখে মুখে। তারপর থেকে ওই অঞ্চলের মানুষ তাদের কুকুরগুলোকে আর বর্ণসংকর নেকড়েটার সঙ্গে লড়াই করার উৎসাহ দিত না।

.

২৪. বিশ্বস্ত শ্বাপদ

মাসের পর মাস কেটে গেল। নিশ্চিন্ত জীবন, নিরাপদ আশ্রয় প্রচুর খাদ্য আর মানুষের ভালোবাসা হোয়াইট ফ্যাং-এর উগ্র স্বভাবকে শান্ত ও সংযত করে তুলল। অপরিচিত কুকুর তাকে দেখে তেড়ে এলে দাঁত খিঁচিয়ে ধমক দিত সে প্রতিদ্বন্দ্বী ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলে সে আর আগের মতো তাকে আক্রমণের চেষ্টা করত না। সে জানত তার প্রভু অকারণ রক্তারক্তি পছন্দ করে না। অতএব সে-ও যথাসম্ভব ঝগড়াঝাটি এড়িয়ে চলত।

প্রভুর সঙ্গে প্রায়ই বিকালের দিকে সে টহল দিত দূর-দূরান্তরে। উইডন স্কট থাকত ঘোড়ার পিঠে, তার সঙ্গে ছুটত হোয়াইট ফ্যাং। প্রতিদিনের মতো সেইদিনও ঘোড়ায় চড়ে ছুটছে উইডন, সঙ্গে ছুটছে নিত্যসঙ্গী হোয়াইট ফ্যাং। আচম্বিতে ঘোড়ার পায়ের কাছে লাফিয়ে উঠল একটা খরগোশ, চমকে উঠে হোঁচট খেল ঘোড়া অশ্বপৃষ্ঠ থেকে সশব্দে মাটির উপর ছিটকে পড়ল উইডন স্কট। প্রভুর দুর্দশা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল হোয়াইট ফ্যাং, ঘোড়াটাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তার গলা লক্ষ্য করে লাফ দিয়েছিল সে, কিন্তু প্রভুর আদেশ তাকে নিরস্ত করল।

বাড়ি যাও, উইডন বলল হোয়াইট ফ্যাংকে উদ্দেশ করে। সে বুঝতে পারছিল তার পা ভেঙে গেছে, হেঁটে চলার ক্ষমতা তার নেই এখন।

প্রথমে প্রভুকে ফেলে যেতে চায়নি বিশ্বস্ত শ্বাপদ; কিন্তু প্রভু দ্বিতীয়বার আদেশ করতেই সে তার কর্তব্য বুঝতে পারল তীরবেগে ছুটল সে বাড়ির দিকে।

পরিবারের সকলেই তখন বারান্দায় বসে গল্প করছিল। হঠাৎ ঝড়ের মতো সেখানে উপস্থিত হল হোয়াইট ফ্যাং হাঁপাতে হাঁপাতে। শিশুরা আনন্দে চিৎকার করে তার কাছে ছুটে গেল। হোয়াইট ফ্যাং প্রথমে বাচ্চাদের এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু তারা যখন তাকে কোণঠাসা করে চেপে ধরতে গেল, তখন এক ঝটকায় তাদের ছিটকে ফেলে দিল সে। সেইসময় তার কণ্ঠভেদ করে বেরিয়ে আসছিল অবরুদ্ধ গর্জনধ্বনি।

বাচ্চাদের মা তাদের কাছে ডেকে নিয়ে হোয়াইট ফ্যাংকে বিরক্ত করতে নিষেধ করল।

মাঝে মাঝে জন্তুটার আচরণ দেখে আমি ভয় পাই, বাচ্চাদের মা বলল, জন্তুটা হয়তো কখনো শিশুদের আক্রমণ করতে পারে।

নেকড়ে হচ্ছে নেকড়ে, উইডনের বাবা বললেন, বুনো জানোয়ারকে কখনই বিশ্বাস করা যায় না।

কিন্তু তাকে পুরোপুরি নেকড়ে বলা যায় না, বেথ বলে উঠল।

 উইডন তাই বলে বটে, উইডনের বাবা বিচারক স্কট বললেন, ওর ধারণা বর্ণসংকর জন্তুটার মধ্যে কুকুরের সহজাত সংস্কার আছে। কিন্তু ও কিছু জানে না। আর চেহারার দিক থেকে

তাঁর কথা শেষ হল না, হোয়াইট ফ্যাং তার সামনে এসে ভীষণকণ্ঠে গর্জে উঠল।

চলে যাও এখান থেকে, বিচারক স্কুট কঠোরস্বরে আদেশ করলেন, শুয়ে পড়ো। যাও।

হোয়াইট ফ্যাং এবার প্রভুপত্নীর দিকে ফিরল, তারপর মহিলাটির কাপড় কামড়ে ধরে টানতে লাগল। টানাটানির ফলে কাপড় ছিঁড়ে গেল। মহিলা ভয়ে চেঁচিয়ে উঠল। ততক্ষণে সকলেরই উৎসুক দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে জন্তুটার দিকে। তার গলা থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। তীব্র আক্ষেপ, কিন্তু গলা থেকে কোনো আওয়াজ বার হচ্ছে না।

জন্তুটা আশা করি পাগল হয়নি, উইডনের মা বললেন, উত্তরাঞ্চলের জানোয়ার এখানকার গরম সহ্য করতে পারবে না, একথা অনেকবার আমি উইডনকে বলেছি।

ও কথা বলার চেষ্টা করছে, বেথ বলল।

আর ঠিক সেই মুহূর্তে হঠাৎ জন্তুটার গলায় আওয়াজ ফুটল। নেকড়ের গর্জন নয়, কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ বেরিয়ে এল তার গলা থেকে!

উইডনের কিছু ঘটেছে, দৃঢ়স্বরে বলে উঠল তার স্ত্রী। পরিবারের সকলেই তখন উঠে দাঁড়িয়েছে। হোয়াইট ফ্যাং ছুটে সিঁড়ি দিয়ে কিছুটা নেমে আবার তাদের দিকে ফিরে তাকাল, জীবনে দ্বিতীয়বার কিংবা শেষবার তার গলা থেকে বেরিয়ে এল কুকুরের কন্ঠস্বর। পরিবারের সকলেই এবার বুঝতে পারল তার ভাষা, সকলেই তাকে সাগ্রহে অনুসরণ করল। বলাই বাহুল্য, তারপর যথাস্থানে গিয়ে চলৎশক্তিরহিত উইডন স্কটকে উদ্ধার করতে বিশেষ দেরি হল না।

এই ঘটনার পর পরিবারের সকলেই একবাক্যে স্বীকার করল যে, হোয়াইট ফ্যাং নেকড়ে হলেও তার মধ্যে কুকুরের সব গুণ বর্তমান।

শুধু উইডনের বাবা বিচারক স্কট তার মত পরিবর্তন করলেন না। তিনি বিশ্বকোষ এবং প্রাকৃতিক ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায় থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, নেকড়ে হচ্ছে নেকড়ে, সে কখনোই কুকুরের মতো বিশ্বস্ত হতে পারে না।

পরিবারের অন্যান্য সকলে বুড়ো কর্তার মন্তব্য শুনে অসন্তুষ্ট হল তাদের মতে বনচারী শ্বাপদও যে, গৃহপালিত কুকুরের মতো বিশ্বস্ত হতে পারে, হোয়াইট ফ্যাং তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

.

২৫. হন্তারক

দৈনিক সংবাদপত্রে জিম হল নামে এক কয়েদির স্যান কোয়েনটিন নামক বন্দিশালা থেকে পলায়নের সংবাদ স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে বিপুল উত্তেজনা ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করল। বিশেষ করে স্কট পরিবারের সকলেই দস্তুরমতো সন্ত্রস্ত হয়ে উঠল। তাদের ভয় পাওয়ার কারণ ছিল। উইডনের পিতা যখন অবসর গ্রহণ করেননি, যখন তিনি বিচারকের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, সেইসময় জিম হলকে একটি মামলায় অভিযুক্ত করে বিচারক স্কটের এজলাসে উপস্থিত করল পুলিস। এর আগে আরো দুবার গুরুতর অপরাধের জন্য তার কারাদণ্ড হয়েছিল। সেইজন্যই তার উপর স্কটের বিরূপ ধারণা জন্মেছিল, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য প্রমাণের উপর নির্ভর করে তিনি জিম হলকে তৃতীয়বারের জন্য অপরাধী সাব্যস্ত করলেন এবং পঞ্চাশ বছরের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত করলেন। কিন্তু বিচারকের ভুল হয়েছিল– জিমের বিরুদ্ধে তৃতীয়বারের অভিযোগ ছিল মিথ্যা, সে ছিল সম্পূর্ণ নির্দোষ। পুলিস মিথ্যা মামলা সাজিয়েছিল তার বিরুদ্ধে। পুলিসের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে কিছু জানতেন না বিচারক স্কট- পূর্ববর্তী দুটি অপরাধের জন্য দায়ী জিম হলকে তৃতীয় অপরাধের জন্য দায়ী করে দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত করলেন তিনি।

বিনাদোষে শাস্তি পেয়ে ক্রোধে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল জিম হল– সে ক্রুদ্ধকণ্ঠে ঘোষণা করল এই অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে একদিন ফিরে আসবে সে সেইদিন কিছুতেই নিস্তার পাবেন না বিচারক স্কট।

অতএব বন্দিশালা থেকে জিম হলের পলায়নের সংবাদ স্কট পরিবারের সকলকে বিশেষ করে মেয়েদের যে, আতঙ্কিত করে তুলবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। মেয়েদের ভয় পাওয়া অস্বাভাবিক নয়– জিম হল ছিল দুর্ধর্ষ খুনি, নরহত্যায় তার দ্বিধা ছিল না কিছুমাত্র। সে তিনজন প্রহরীকে হত্যা করে তাদের আগ্নেয়াস্ত্রগুলো দখল করেছিল, তারপর পালিয়ে গিয়েছিল বন্দিশালা থেকে।

তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টায় পুলিস কুকুর নিয়ে তাড়া করল। কিছুদূর চলার পর কুকুর আর পলাতকের উদ্দেশ পেল না। কয়েকজন কৃষক পুরস্কারের লোভে রাইফেল নিয়ে খোঁজাখুঁজি করল। কুকুর হতাশ হলেও পুলিশ পলাতকের পিছনে লেগে রইল। অপরাধীর মোকাবিলার জন্য বিশেষ-শিক্ষায় শিক্ষিত সরকারি শান্তিরক্ষীরা টেলিফোন, টেলিগ্রাফ প্রভৃতি বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের সাহায্যে দিনরাত তাকে অনুসন্ধান করতে লাগল হন্যে হয়ে। কখনো কখনো তাদের সাক্ষাৎকার ঘটতো। তখন আহত ও নিহত মানুষগুলোকে গাড়িতে চড়িয়ে শহরে নিয়ে আসা হত এবং তাদের শূন্যস্থান পূরণ করতে আবার নতুন মানুষ-শিকারির দল অস্ত্র হাতে বেরিয়ে পড়ত হন্তারক জিম হলের সন্ধানে।

তারপর হঠাৎ একদিন হারিয়ে গেল জিম হল, পুলিস তার কোনো সন্ধান পেল না।

স্কট পরিবারের মেয়েরা দারুণ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে লাগল। বিচারক স্কুট তাদের ভয়কে আমল দিলেন না, হেসেই উড়িয়ে দিলেন। কিন্তু জিম হলকে তিনি সঠিকভাবে বুঝতে পারেননি যে-মানুষ তিন-তিনটি প্রহরীকে হত্যা করে কারাগার থেকে পালাতে পারে, তার পক্ষে প্রাণ বিপন্ন করেও প্রতিশোধ গ্রহণের চেষ্টা আদৌ অসম্ভব নয়।

এসব খবর রাখত না হোয়াইট ফ্যাং। কিন্তু তার সঙ্গে প্রভুপত্নী অ্যালিসের একটি গোপন চুক্তি ছিল। প্রতি রাত্রে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে অ্যালিস এসে দরজা খুলে তাকে একতলার প্রকাণ্ড ঘরটায় ঢুকিয়ে দিত। সে বাড়ির ঘরোয়া কুকুর নয়, তাই তাকে বাড়ির মধ্যে রাত কাটানোর নির্দেশ দেয়নি তার প্রভু। কিন্তু সকলের অজ্ঞাতসারে প্রভুপত্নীর ব্যবস্থা অনুসারে প্রকাণ্ড হল-ঘরেই তার শয়নের ব্যবস্থা ছিল। পরের দিন বাড়ির কেউ ঘুম থেকে ওঠার আগেই খুব সকালে অ্যালিস এসে দরজা খুলে তাকে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিত।

ওইরকম এক রাতে বাড়ির সবাই যখন গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন, সেই সময় হঠাৎ শয্যাত্যাগ করে নিঃশব্দে উঠে দাঁড়াল হোয়াইট ফ্যাং তার নাকে এসেছে অপরিচিত মানুষের গন্ধ! পরক্ষণেই তার কানে এল লোকটির চলাফেরার শব্দ; সঙ্গেসঙ্গে শব্দ অনুসরণ করে লোকটির খুব কাছে এগিয়ে এল হোয়াইট ফ্যাং। সে একবারও চিৎকার করে বাড়ির লোকদের জাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল না। ওটা তার পদ্ধতি নয়। নিঃশব্দে লোকটিকে অনুসরণ করল সে।

সিঁড়ির নিচে এসে দাঁড়াল আগন্তুক। স্থির হয়ে তাকে লক্ষ্য করতে লাগল হোয়াইট ফ্যাং। ওই পথ দিয়ে উপরে উঠে গেলেই প্রভু এবং তার প্রিয়জনদের কাছে পৌঁছানো যায় হোয়াইট ফ্যাং-এর গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠল, তবু সে অপেক্ষা করতে লাগল স্থির হয়ে। লোকটি পা তুলল, ধীরে ধীরে উঠতে শুরু করল সিঁড়ি দিয়ে। সঙ্গেসঙ্গে আক্রমণ করল হোয়াইট ফ্যাং। সে একবারও গর্জন করল না, নিঃশব্দে লোকটির পিঠের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে দুই থাবা দিয়ে তার কাঁধ আঁকড়ে ধরল এবং কামড় বসিয়ে দিল লোকটির ঘাড়ে। একমুহূর্তের জন্য সে ওই অবস্থায় রইল পরক্ষণেই মানুষ ও পশু জড়াজড়ি করে সিঁড়ির উপর থেকে এসে পড়ল হলঘরের মেঝের উপর। একলাফে শত্রুকে ছেড়ে সরে গেল হোয়াইট ফ্যাং। লোকটি যখন সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে, সেইসময় আবার নেকড়েটা ঝাঁপিয়ে পড়ে দাঁত বসাল।

সমস্ত বাড়ির লোক তখন জেগে উঠেছে। তলায় বড়ো ঘরটার মধ্যে যেন লড়াই করছে কয়েকটা দৈত্য। সশব্দে ভেঙে পড়ছে কাঁচের জিনিস, আছড়ে পড়ছে কাঠের আসবাবপত্র। পর পর কয়েকবার গর্জে উঠল একটা রিভলবার, সঙ্গেসঙ্গে জাগল ভয়ার্ত মানুষের তীব্র যাতনাকাতর আর্তনাদ এবং শাপদকণ্ঠে ক্রুদ্ধ গর্জনের পর গর্জন।

যেমন হঠাৎ শুরু হয়েছিল শব্দের ঘনঘটা, তেমনিভাবেই হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে গেল শব্দের তরঙ্গ। উইডন স্কট একটা বোতাম টিপল। আলোর বন্যায় ভেসে গেল সিঁড়ি আর তুলাকার বিশাল ঘর। ধীরে ধীরে অতি সন্তর্পণে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল উইডন স্কট ও তার পিতা বিচারক স্কুট দুজনের হাতেই উদ্যত রিভলভার।

তবে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আর ছিল না। হোয়াইট ফ্যাং খুব ভালোভাবেই তার কর্তব্য পালন করেছে। বিধ্বস্ত ও ইতস্তত নিক্ষিপ্ত আসবাবপত্রের মাঝখানে পড়ে আছে একটি মানুষ। তার মুখ দেখা যাচ্ছে না; একটি হাতের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেছে তার মুখ। উইডন স্কট নত হয়ে হাতটা সরিয়ে লোকটির মুখ উপরদিকে সোজ করে দিল। বিদীর্ণ কণ্ঠনালী দেখে বোঝা গেল শ্বাপদের দস্তাঘাতই তার মৃত্যুর কারণ।

লোকটির মুখের দিকে তাকিয়ে বিচারক স্কট বলে উঠলেন, জিম হল!

এবার সকলে হোয়াইট ফ্যাং এর দিকে ফিরল। জন্তুটা একবার চোখ তুলে তাদের দিকে তাকাল, গলা থেকে একটা অস্পষ্ট আওয়াজ বার করল, একবার লেজটাকেও নাড়তে চেষ্টা করল– তারপরই বন্ধ হয়ে গেল তার দু-চোখের পাতা, সমস্ত শরীর হয়ে গেল স্থির, নিস্পন্দ।

টেলিফোনে খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ এসে পড়লেন চিকিৎসক। শিশুরা ছাড়া পরিবারের সবাই এসে উপস্থিত হল চিকিৎসকের অভিমত শোনার জন্য।

পিছনের একটা ঠ্যাং ভেঙেছে, চিকিৎসক জানালেন, আর ভেঙেছে পাঁজরের তিনটি হাড়। ওই তিনটি ভাঙা হাড়ের মধ্যে একটি বিঁধেছে ফুসফুসে। জন্তুটার শরীরের প্রায় সব রক্ত বেরিয়ে গেছে। ওর দেহ ফুটো করে বেরিয়ে গেছে তিনটে বুলেট। জন্তুটার বাঁচার আশা নেই বললেই চলে।

বিচারক স্কট বললেন, ওকে বাঁচাতেই হবে। যত টাকাই লাগুক, আমি খরচ করবো।

তাই হল। শহরের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসককে ডাকা হল। সেবা করার জন্য শিক্ষিত নার্স রাখতে চেয়েছিল বিচারক স্কুট। বাড়ির মেয়েরা সেই প্রস্তাব নাকচ করে নিজেরাই আহত পশুর সেবার ভার গ্রহণ করল…।

দীর্ঘকাল রোগশয্যায় পড়ে থাকার পর আরোগ্যলাভ করল হোয়াইট ফ্যাং। যে চিকিৎসক বলেছিলেন জন্তুটার বাঁচার আশা নেই, তিনি হোয়াইট ফ্যাং এর জন্মবৃত্তান্ত জানতেন না। চিরকাল তিনি গৃহে আশ্রিত মনুষ্যজীবনের চিকিৎসা করেছেন যারা আচ্ছাদনের তলায় যুগ যুগ ধরে বাস করার পর ভঙ্গুর ও জীর্ণ হয়ে পড়েছে। যে ভয়ংকর বন্য প্রাণশক্তি হোয়াইট ফ্যাং উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিল, তার সঙ্গে উক্ত চিকিৎসকের পরিচয় ঘটেনি কোনোদিন। তাই বর্ণসংকর নেকড়ের পরিণতি সম্পর্কে তার সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছিল।