২০৮তম অধ্যায়
প্রজাপতিবিবরণ—সৃষ্টিবিস্তার
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “পিতামহ! পূৰ্ব্বে যে যে মহাত্মা প্রজাপতি ও যে যে দিকে যে যে মহর্ষি ছিলেন, তাঁহাদিগের বিষয় কীৰ্ত্তন করুন।”
ভীষ্ম কহিলেন, “বৎস! পূর্ধ্বতন প্রজাপতি ও মহর্ষিদিগের বিষয় কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। প্রথমে কেবল একমাত্র সনাতন ভগবান্ ব্রহ্মা বিদ্যমান ছিলেন। অনন্তর তাঁহার মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরা, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু ও বশিষ্ঠ এই সাত আত্মতুল্য মহাত্মা পুত্রের উৎপত্তি হয়। পুরাণ এই সাত মহর্ষিকে সপ্ত ব্রহ্মা বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়া থাকে।
“অতঃপর প্রজাপতিদিগের বৃত্তান্ত কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। মহাত্মা অত্রির বংশে ব্রহ্মযোনি ভগবান্ প্রাচীনবর্হির উৎপত্তি হইয়াছিল। প্রাচীনবৰ্হি হইতে দশ প্রচেতার উৎপত্তি হয়। সেই দশজন প্রচেতার একমাত্র পুত্র জন্মিয়াছিল। ঐ পুত্রের নাম দক্ষ। দক্ষ জনসমাজে ‘ক’ নামে বিখ্যাত হইয়াছিলেন। মরীচিপুত্র কশ্যপও অরিষ্টনেমিনামে প্রথিত হয়েন। অত্রির ঔরসপুত্র বীৰ্য্যবান সোমরাজ দিব্য সহস্র যুগ জীবিত ছিলেন। ভগবান অৰ্য্যমা ও তাঁহার সন্তানগণ নিখিল ভুবনের উৎকর্ষসাধন করিয়া নিয়মসমুদয় সংস্থাপন করিয়াছেন। মহারাজ শশবিন্দুর দশসহস্র ভাৰ্য্যা ছিল। তাঁহাদের প্রত্যেকের গর্ভে সহস্ৰসংখ্যক পুত্ৰ উৎপন্ন হয়। এইরূপে মহাত্মা শশবিন্দুর দশলক্ষ পুত্র হইয়াছিল। তাঁহাদের হইতেই অন্যান্য প্রজাগণের সৃষ্টি হয়। পূর্ধ্বতন ব্রাহ্মণগণ শশবিন্দুর সেই পুত্রগণকে প্রজাপতি বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়া গিয়াছেন। এই আমি তোমার নিকট যশস্বী প্রজাপতিদিগের বৃত্তান্ত কীৰ্ত্তন করিলাম, অতঃপর ত্রিভুবনেশ্বর দেবগণের বিষয় কহিতেছি, শ্রবণ কর।
দেবতা-বিবরণ—দেবতার জাতিভেদ
“ভগ, অংশ, অৰ্য্যমা, মিত্র, বরুণ, সবিতা, ধাতা, বিবস্বান্, ত্বষ্টা, পূষা, ইন্দ্র ও বিষ্ণু, এই দ্বাদশ আদিত্য মহাত্মা কশ্যপের পুত্র। নাসত্য ও দস্ৰনামে অশ্বিনীকুমারদ্বয় মহাত্মা মার্ত্তণ্ড হইতে উৎপন্ন হইয়াছেন। পূৰ্ব্বে ইঁহারাই দেব ও পিতৃগণ বলিয়া প্রথিত হইয়াছিলেন। বিশ্বরূপ, যশস্বী, অজৈকপাৎ, অহিব্রধ্ন, বিরূপাক্ষ ও রৈবত ত্বষ্টার পুত্র। হর, বহুরূপ, ত্র্যম্বক, সুরেশ্বর, সাবিত্র, জয়ন্ত, পিনাকী ও অপরাজিত ইঁহারাই অষ্টবসু বলিয়া প্রথিত হইয়াছেন। প্রজাপতি মনুর অধিকারকালে ইঁহারাই দেবতা ছিলেন। পূৰ্ব্বে ইঁহাদিগকেই দেবগণ ও দ্বিবিধ পিতৃগণ বলিয়া নির্দ্দেশ করা যাইত। ঋতু ও মরুদগণ আদিদেবতা। এই সমস্ত দেবতা ও অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের বিষয় কীৰ্ত্তন করিলাম। উঁহাদিগের মধ্যে আদিত্যগণ ক্ষত্রিয়, মরুদগণ বৈশ্য, তপোনুষ্ঠাননিরত অশ্বিনীকুমারদ্বয় শূদ্র ও অঙ্গিরার কুলসম্ভূত দেবগণ ব্রাহ্মণ। এইরূপে দেবগণও চারিবর্ণে বিভক্ত হইয়াছেন। যে ব্যক্তি প্রাতঃকালে গাত্রোত্থান করিয়া এই সমস্ত দেবগণের নাম কীৰ্ত্তন করেন, তিনি স্বজাত [নিজকৃত], কি অন্যসংসর্গজ [অন্য সংসর্গে জাত], সমুদয় পাপ হইতে বিমুক্ত হয়েন।
ঋষি-বিবরণ—লোকপালক সপ্তর্ষিমণ্ডল
“অঙ্গিরার পুত্র যবক্রীত, রৈভ, অৰ্ব্বাবসু, পরাবসু, ঔষিজ, কাক্ষীবান্ ও বল, ত্রিলোকপাবন [ভূতল, অন্তরীক্ষ ও স্বর্গবাসী জনগণের পবিত্রকারক] সপ্তর্ষিমণ্ডল [সুবিখ্যাত সাত-সাতটি ঋষির এক একটি দল] এবং মহর্ষি মেধাতিথির পুত্র কণ্ব ও বর্হিষদ ইঁহারা পূৰ্ব্বদিকে; উন্মুচ, বিমুচ, স্বস্ত্যাত্রেয়, প্রমুচ, ইঋবাহ ও মিত্রাবরুণপুত্র অগস্ত্য এই সমুদয় ব্রহ্মর্ষি দক্ষিণদিকে; উষঙ্গু, করূষ, ধৌম্য, পরিব্যাধ, একত, দ্বিত, ত্রিত ও অত্রিপুত্র ভগবান্ সারস্বত এই সমস্ত মহাত্মা পশ্চিমদিকে এবং ভগবান্ আত্রেয়, বশিষ্ঠ, কাশ্যপ, গৌতম, ভরদ্বাজ, কুশিকনন্দন বিশ্বামিত্র ও ঋচীককুমার জমদগ্নি এই সাতজন মহর্ষি উত্তরদিকে অবস্থান করিতেছেন। এই আমি যে যে দিকে যে যে তিগ্মতেজাঃ [অমোঘপ্রভাবসম্পন্ন] মহর্ষি অবস্থিত রহিয়াছেন, তাহা কীৰ্ত্তন করিলাম। এই ভুবনভাবন মহাত্মারাই ভুবনের সাক্ষিভূত; ইহাদিগের নাম কীৰ্ত্তন করিলে সমুদয় পাপ হইতে মুক্ত হওয়া যায়। যে ব্যক্তি এই মহর্ষিগণের অধিষ্ঠিত দিকসমুদয়ে গমন করিয়া তাঁহাদের শরণাপন্ন হয়, সে সমুদয় পাপ হইতে বিমুক্ত হইয়া নিৰ্ব্বিঘ্নে স্বীয় গৃহে গমন করিতে পারে।”