২০১তম অধ্যায়
বৃহদশ্বের প্রতি উতঙ্কের ধুন্ধুমারবধের উপদেশ
মার্কণ্ডেয় কহিলেন, “হে রাজন্! মহারাজ ইক্ষ্বাকু লোকযাত্রা সংবরণ করিলে ধর্ম্মাত্মা শশাদ পৃথিবীপতি হইয়া অযোধ্যায় রাজ্য করিয়াছিলেন। বীৰ্য্যবান কবুৎস্থ তাঁহার পুত্র কবুৎস্থের পুত্ৰ অনেনা; অনেনার পুত্ৰ পৃথু; পৃথুর পুত্র বিশ্বগশ্ব; বিশ্বগশ্বের পুত্ৰ অদ্রি; অদ্রির পুত্র যুবনাশ্ব; যুবনাশ্বের পুত্ৰ শ্ৰাব; শ্রাবের পুত্ৰ শ্রাবস্তক; যিনি শ্রাবস্তানামী নগরী নির্ম্মাণ করিয়াছেন। শ্রাবস্তকের পুত্ৰ মহাবল বৃহদশ্ব; বৃহদশ্বের পুত্ৰ কুবলাশ্ম; কুবলাশ্বের একবিংশতি সহস্ৰ পুত্র সমুৎপন্ন হইয়াছিল। তাঁহারা সকলেই বিদ্বান, বলবান ও সমধিক তেজস্বী। কুবলাশ্ব পিতা অপেক্ষাও অধিকতর গুণসম্পন্ন ছিলেন। পিতা বৃহদশ্ব তাঁহার শূরত্ব ও পরমধার্ম্মিকতা অবলোকন করিয়া সুমচিত সময়ে তাঁহাকে রাজ্যাভিষিক্ত করিলেন। রাজলক্ষ্মী মহারাজ কুবলাশ্বে সংক্রামিত হইলে রাজা বৃহদীশ্ব তপানুষ্ঠানের নিমিত্ত তপোবনে প্রস্থান করিলেন।
“অনন্তর মহর্ষি উতঙ্ক, বৃহদীশ্ বনে গমন করিতেছেন শুনিয়া, সত্বর তৎসন্নিধানে গমনপূর্ব্বক নিবারণ করিয়া কহিলেন, ‘মহারাজ! প্ৰজাগণকে প্রতিপালন করাই আপনার উচিত, আমরা আপনার প্রসাদে নিরুদ্বেগে কালযাপন করিতেছি; এই সসাগরা পৃথিবী আপনা হইতে নির্ব্বিঘ্নে রক্ষিত হইতেছে, অতএব আপনি কদাচ অরণ্যে গমন করিবেন না; প্ৰজাগণের প্রতিপালনে যাদৃশ ধর্ম্ম, অরণ্যে গমন করিলে কখন তাদৃশ ধর্ম্ম হয় না। হে রাজেন্দ্ৰ! পূর্ব্বে রাজর্ষিগণ প্রজাপালনে যে ধর্ম্ম প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন, তাদৃশ ধর্ম্ম আর কুত্ৰাপি নয়নগোচর হয় না। প্ৰজাগণ অবশ্য রক্ষণীয়, অতএব প্ৰজাগণকে রক্ষা করুন, নতুবা আমরা নির্ব্বিঘ্নে তপানুষ্ঠান করিতে সমর্থ হইব না।
‘হে রাজন! মরুধন্বপ্রদেশে আমার আশ্রমের অনতিদূরে বহু যোজনবিস্তীর্ণ, বহু-যোজনায়ত ও বালুকারাশিতে পরিপূর্ণ একটি সমুদ্র আছে, উহা উজ্জালক বলিয়া বিখ্যাত। মধুকৈটভের পুত্ৰ মহাসুর ধুন্ধু ঐ স্থানে ভূমির অভ্যন্তরে বাস করে। তাহার পরাক্রম অতি ভীষণ ও অপরিমিত। অতএব তাহাকে নিহত করিয়া পশ্চাৎ অরণ্যে গমন করাই আপনার উচিত। সেই দানব দেবগণকে বিনষ্ট ও সমুদয় লোক উৎসাদিত করিবার নিমিত্ত ঘোরতর তপস্যা করিয়া ব্ৰহ্মার বরে দেব, দানব, নাগ, যক্ষ, রাক্ষস ও গন্ধর্ব্বের অবধ্য হইয়াছে। আপনি তাহাকে বধ করিতে কৃতনিশ্চয় হউন, আপনার বুদ্ধি যেন অন্যথাভূত না হয়; এ বিষয়ে আপনার মহতী কীর্ত্তিলাভ হইবে, সন্দেহ নাই। সেই ক্রুর দৈত্য বালুকাবিলীন হইয়া নিদ্রিত থাকে, বৎসরান্তে নিঃশ্বাস পরিত্যাগ করে। তাহার নিঃশ্বাসপ্রভাবে ধূলিসকল উৎক্ষিপ্ত হইতে থাকে, সশৈলকাননা পৃথিবী আকাশে উৎপতিত হইয়া সপ্তাহ এরূপ কম্পিত হয় যে, তদ্বারা নিদারুণ স্ফুলিঙ্গ, ধূম ও অগ্নিশিখা বিনিঃসৃত হইতে থাকে। তখন সেই আশ্রমে অবস্থিতি করা একান্ত অসাধ্য হইয়া উঠে।
‘হে রাজেন্দ্র! আপনি লোকের হিতের নিমিত্ত তাহাকে বিনষ্ট করুন, তাহা হইলে সমুদয় লোক সুস্থ হইবে। আমি স্পষ্ট বোধ করিতেছি, আপনি তাহাকে বধ করিতে সমর্থ হইবেন, ভগবান বিষ্ণু স্বীয় তেজোদ্বারা আপনার তেজ বৰ্দ্ধিত করিবেন। তিনি পূর্ব্বে আমাকে এই বর প্রদান করিয়াছেন যে, “যে মহীপতি দুরন্ত দৈত্য ধুন্ধুকে বধ করিবার অভিলাষ করিবেন, দুরাসদ বৈষ্ণব তেজ তাহাতে প্রবিষ্ট হইবে”—অতএব আপনি অলৌকিক বিষ্ণুতেজ আশ্রয় করিয়া সেই পরাক্রান্ত দৈত্যকে বধ করুন। সেই মহাতেজঃ ধুন্ধু অল্পতেজে শত বৎসরেও দগ্ধ হইবে না।’ ”