২০১. পাণ্ডব-পরাভব্যর্থ গুপ্তমন্ত্রণা
একাধিকদ্বিশততম অধ্যায়।
ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, তোমাদিগের যাহা অভিলাষ, আমি তাহাতেই সম্মত আছি। বিদুরের নিকট অভিসন্ধি গোপন রাখাই আমাদের উচিত। আমি তন্নিমিত্তই তাহার নিকট সর্বদা পাণ্ডবদিগের গুণকীর্তন করিয়া থাকি। বিদ্রুর, আকার বা ইঙ্গিতদ্বারা আমার অভিপ্রায় কিছুমাত্র বুঝিতে পারেন না। হে সুযোবন! তুমি যাহা বিবেচনা করিয়াহ বল, হে রাধেয়। তুমিও যাহা মনে করিয়াছ বল, এ সময়ে কলির কোন বাধা নাই। দুর্য্যোধন কহিলেন, তাত! অদ্য বিশ্বস্ত ও সুনিপুণ কতিপয় ব্রাহ্মণদ্বারা গোপনে কুন্তীতনয় ও মাদ্ৰীসুতযুগলেয় পরস্পর ভেদোৎপাদন করিব, অথবা দ্রুপদরাজ এবং তদীয় পুত্রগণ ও অমাত্যবর্গকে বিপুল ধনরাশিদ্বারা বশীভূত করি, যাহাতে তাঁহারা যুধিষ্ঠিরকে পরিত্যাগ করেন, কিম্বা তথায় বাস করিতে প্রবৃত্তি দেন এবং যে তাহাদিগের সঙ্গে সখদা বলেন যে, তাহাদের হস্তিনাপুরে বাস করা অতীব দোষাকই; এইরূপ করিলে তাহারা পরস্পর অনৈক্যপ্রযুক্ত কোন পরামর্শ না করিয়া তথায় বাস করিতে অভিরুচি করিবে, সন্দেহ নাই। অথবা উপায়নিপুণ কুশল পুরুষেরা কুন্তীতনয়দিগের অনুগত হইয়া তাহাদিগের সৌভ্রাত্ৰ ভঙ্গ করিয়া দিক, কিম্বা বহুপতির অশেষ দোষোল্লেখপূর্বক কৃষ্ণার হৃদয় দুষিত করিয়া কলহোৎপাদন করুক, অথবা দ্রৌপদীর প্রতি পাণ্ডবগণের চিত্তভেদ, পশ্চাৎ পাণ্ডবদিগের প্রতি দ্রৌপদীর মনের মালি জাইয়া দিক। অথবা উপায়ণ কতিপয় ছদ্মবেশী পুরুষ নির্জনে ভীমসেনকে বিনষ্ট করুক, যেহেতু ভীমই তাহাদের সর্বাপেক্ষা অধিক বলবান। অর্জুন তাহার সাহসেই সাহসী হইয়া আমাদিগকে ণতুল্য জ্ঞান করে; যেহেতু ভীমই সর্বাপেক্ষ বলবান, প্রচণ্ড ও পাণ্ডবগণের আশ্রয়ভূত। তাহাকে নিহত করিতে পারিলেই সকলে নিস্তেজা ও ভয়েৎসাহ হইয়া রাজ্যের নিমিত্ত কিছুমাত্র যত্ন করিবেন না। বৃকোদর পৃষ্ঠরক্ষা করিলে অর্জুনকে পরাজয় করা দুঃসাধ্য, কিন্তু ভীম ব্যতিরেকে অর্জুন একাকী রণখুলে কর্ণের চতুর্থাংশরূপে পরিগণিত হইতে পারে কি না, সন্দেহ। তাহারা ভীম ব্যতীত আপনাদিগকে দুর্বল ও আমাদিগকে বাধিক জানিয়া আর রাজ্যের নিমিত্ত যত্ন করিবে না। যদ্যপি এখানে আসিয়া আমাদিগের নিদেশবর্তী হইয়া চলে, তবে তাহাদের বিনাশচেষ্টা কৱিতে ত্রুটি করিব না। অথবা সুরূপা প্রমদাগণরা একে একে তাহাদিগের সকলকেই প্রলোভ দেখান যাউক, তাহা হইলে কৃষ্ণ তাহাদিগের প্রতি বিরাগ প্রদর্শন করিবেন, সন্দেহ নাই; কিম্বা তাহাদিগকে আনয়ন করিবার নিমিত্ত রাষেয়কে প্রেরণ করুন এবং বিবিধ কৌশল তাহাদিগকে একত্র করিয়া কালগ্রাসে পাতিত করুন।
হে তাত! উল্লিখিত উপায় সমূহের মধ্যে আপনি যে উপায়টি উৎকৃষ্ট বিবেচনা করেন, অচিরাৎ তাহার প্রয়োগ করুন, কারণ ক্ৰমে সময় অতীত হইতেছে। তাহাদিগের নিগ্ৰহাৰ্থ এই সকল চেষ্টাই সাধীয়সী বোধ হইতেছে, কিন্তু ইহা ভাল কি মন্দ, তাহা বলিতে পারি না, কেমন হে কর্ণ! তুমি কি বিবেচনা কর?