।। নয়।। রীণা কি ফেরেনি
সকাল হতে না হতেই মান্তু কাপড় পরে নিল। কাল সারারাত রীণার কথা ভেবে ঘুমোতে পারেনি। অমন তো কতজনেই আসবে বলে আসে না বা আসতে পারে না। তখন মোটেই ভাবনা হয় না। রীণা বলেই এত দুর্ভাবনা। প্রথমত, ও কলকাতায় নতুন। কে জানে কোন বাসে চড়তে কোন বাসে চড়ল। কোথায় আসতে কোথায় গিয়ে পড়ল। দ্বিতীয়ত, ও যেন ঠিক সুস্থ নয়। আর যে—মানুষ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে তার সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না।
অথচ এ কথাটা আগে মনে হয়নি। মনে হলে নিশ্চয় একা আসতে বলত না।
ভাবতে ভাবতে মান্তু দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কী যে হল মেয়েটার!
ললিতবাবু বললেন, চা খেয়ে যাবে না?
—না। বলেই মান্তু তখনই বেরিয়ে পড়ল। ওর শরীরের ওপর যেন অসময়ে ভারী গরম কোট চাপানো রয়েছে। খুলে ফেললেই আরাম। কিন্তু খুলব বললেই খোলা যাচ্ছে না। মনের মধ্যে কেবলই খারাপ চিন্তা ঘুরে ফিরে আসছে। গিয়ে কী দেখবে! কী শুনবে!
যদি দেখে, রীণা বাড়ি নেই? যদি শোনে রীণা কাল দুপুরে সেই যে হাওড়া যাবে বলে বেরিয়েছিল, এখনো পর্যন্ত ফেরেনি?
তাহলে কী করবে?
যদি দেখে বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে? লোকে ভিড় করে আছে থমথমে মুখে?
তাহলে কি বুঝবে?
কী বুঝবে তা আর কল্পনা করতে হয় না।
মান্তুর বুকের মধ্যে কীরকম করতে লাগল।
একবার ভাবল—গিয়ে দরকার নেই। ফিরেই যাবে। প্রিয়জনের কোনো মর্মান্তিক খবর সামনাসামনি দাঁড়িয়ে শোনার শক্তি তার নেই।
তারপরেই ভাবল রীণা না হয়ে যদি তার বাড়ির কেউ হত তাহলে কি পারত পালিয়ে থাকতে?
না, পারত না। কাজেই এখানেও তাকে মুখোমুখি হতেই হবে, যত খারাপ ঘটনাই ঘটে থাকুক না কেন।
মান্তু এবার যেন মনে জোর পেল।
ক্ষীরোদতলার মোড়ে আসতেই বাস পেয়ে গেল। মিনিট দশেকের মধ্যেই ময়দানে এসে পৌঁছোল। বঙ্গবাসী সিনেমাহলের কাছ থেকে নাগেরবাজারের টানা বাস ছাড়ছিল। বাসটা কালিন্দী, লেকটাউন, বাঙ্গুর হয়ে যাবে। ছুটে এসে হাত তুলে বাস থামিয়ে কোনোরকমে উঠে পড়ল।
এক ঘণ্টার পথ। এত সকাল বলেই বাসে ভিড় ছিল না। জানলার ধারে ভালো সিট পেয়ে গেল। অন্য সময় হলে এইরকম সিটের জন্যে খুশি হত। কিন্তু আজ মনটাই অন্যরকম হয়ে আছে।
…লেকটাউন, বরাট পার হয়ে গেল। পরের স্টপেজটাই রীণাদের। মান্তু রড ধরে উঠে দাঁড়াল। পা দুটো তখন ওর কাঁপছে।
বড়ো রাস্তা পার হয়ে সরু রাস্তা। মিনিট পাঁচেক পরেই দেখা গেল ওদের বাড়ির গম্বুজটা। মান্তু সমস্ত শক্তি নিয়ে হনহন করে কম্পাউন্ডের মধ্যে ঢুকল।