১-২. অন্যান্য দিনের তুলনায়

ইউ মাস্ট বি কিডিং

অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ খানিকটা আগেই বাড়ি ফিরল কেন ব্রান্ডন। বাড়ি ফিরেই হাঁকডাক শুরু করল তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে। দরজা খুলে লবিতে পা দিল হাই, হানি! আমি ঘরে ফিরে এসেছি। তুমি কোথায়?

রান্নাঘর থেকে একটি মেয়েলি কণ্ঠস্বর শোনা গেল তুমি আজ তাড়াতাড়ি কেন?

কেন গলার আওয়াজ অনুসরণ করে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল। সেখানে তার স্ত্রী রাতের খাবার তৈরী করতে ব্যস্ত।

কেন ব্রান্ডন, তার স্ত্রী কেটি ব্রান্ডন, চার বছর হল তাদের বিয়ে হয়েছে। দাম্পত্য জীবনের দীর্ঘ সময় কখনো তাদের কাছেনীরস হয়ে ওঠেনি। স্লিম ফিগার, সোনালী চুল, একটা সুন্দর কমনীয় ভাব যা ওর কাঁধে মাখামাখি করে এলায়িত পশম নরম চুলের সঙ্গে। সব মিলিয়ে একটি বাড়তি সৌন্দর্যের অধিকারিণী কেটি।

প্যারাডাইস ইনসিওরেন্স কর্পোরেশনের হেড সেলসম্যান হল কেন। তার মাসিক আয় মোটামুটি, তবুও সে অফিসের পরেও বাড়তি পরিশ্রম করে। তাদের সাংসারিক অবস্থা বেশ স্বচ্ছল। ভাল পাড়াতে সুন্দর বাংলো, দুটি গাড়ি এসব তারা বেশ ভালোভাবে উপভোগ করছে, আবার ভবিষ্যতের জন্যেও সঞ্চয় করছে।

অবশ্য তাদের এই স্বচ্ছল অবস্থা সম্ভবপর হয়েছে কেটির বাড়তি আয়ের দরুন। কেটি, ডঃ হেনজ, যিনি শহরের সব থেকে বড় গায়নোকোলজিস্ট, তার কাছে রিসেপশনিস্টের কাজ করে। তার আয় সপ্তাহে পঞ্চাশ ডলার। কেটি সকাল পৌনে দশটায় অফিসে বেরোয় এবং সন্ধ্যা ছটায় ফিরে আসে। এসময় সে তার প্রিয় বাংলোটির পরিচর্যা করে এবং প্রতিদিন কেনের জন্য নতুন খাবার বানাতে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। কেবলমাত্র অফিসের কাজে নয়, ঘরের কাজেও সে নিপুণা। বিশেষত রান্নার কাজে সে গর্ববোধ করে।

সেদিনও কেটি একটি নতুন খাবার তৈরী করছিল। কেন রান্নাঘরে হাজির হওয়াতে কেটি তাকে চলে যেতে বলল কারণ সে এখন কাজে ব্যস্ত। কিন্তু কেন তার কোন কথা শুনতে চাইল না। দাঁত বার করে হাসল কেন, তারপর সে কেটির কাছে দুটো প্রস্তাব রাখল–একটি, সে এখনই দেখতে চায়, তাদের বিছানা ঠিক আছে কিনা, অপরটি, কেটিকে নিয়ে সেবাইরে যাবে এবং তাদের নৈশভোেজ কোন রেস্তোরাঁয় সারবে।

কেটি তার স্বামীর চোখের দিকে তাকিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে প্রথমেই বুঝে নিয়েছিল। যে, কেন এখন কি বলতে বা করতে চায়। তাই কেনের কথায় গুরুত্ব দিল না সে। একরকম ধাক্কা দিয়ে কেনের কাছ থেকে সরে গেল।

কেটি কিছুটা মিনতির সুরে বলল কেন, তুমি আমার জন্য একটু অপেক্ষা কর, আমাদের শয়নকক্ষ সুন্দর ভাবেই গোছান রয়েছে, আমি এখন তোমার জন্য পায়েস তৈরী করছি। আমার হাতে বানানো এরকম সুস্বাদু খাবার তুমি কোন রেস্তোরাঁতে পাবে না।

কেন আগ্রহ সহকারে এগিয়ে এসে সন্ধ্যানের ঢাকনাটা খুলে ফেলে বলল হ্যাঁ পায়েস বটে আর এটা থেকে চমৎকার গন্ধ বেরোচ্ছে। কেটি সায় দিয়ে বলল–এটা চীনা পায়েস, চমৎকার হয়েছে তো বটে কিন্তু তোমার এরকম আচরণের উদ্দেশ্য কি?

কেন এরকম কিছুই প্রত্যাশা করছিল, তখনি সে বলল–আমার কাছে একটা খবর আছে,। তুমি আমার সঙ্গে এসো। আমরা এখন ড্রিঙ্ক করব।

কেটি কাতরস্বরে বলল-কেন, আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দাও।

কেন এবার রেফ্রিজারেটর থেকে জিন-এর একটা বোতল বার করে লাউঞ্জে এসে বসল, দুটো গ্লাসে জিন ঢাললো। একটা সিগারেট ধরিয়ে চেয়ারে শরীরটা এলিয়ে দিল।

প্রায় মিনিট দশ পরে কেটি লাউঞ্জে এল, কেনের পাশে একটা চেয়ারে যুৎসই করে বসে কেনের এত উত্তেজনার কারণটা জানতে চাইল। কেন ততক্ষণে তার ড্রিঙ্কসটা শেষ করে ফেলেছিল। তাকে অল্প-বিস্তর মাতাল দেখাচ্ছিল। কদাচিৎ সে মা-টিনি জিন খেয়ে থাকে। কেন তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল–এটা বেশ ভাল খবর, আমি প্রমোশন পেয়েছি। আজ বিকালে স্টার্নউড তার অফিসে ডেকে পাঠালেন, আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম, এইবার বুঝি আমি বিতাড়িত হতে চলেছি। কোন ব্যাপারে তিনি ক্ষেপে না গেলে কাউকে ডেকে পাঠান না তাঁর চেম্বারে, দুরু দুরু বুকে তার চেম্বারে হাজির হলাম। জানলাম, স্টার্নউড তার একটি নতুন পরিকল্পনার কথা শোনাতে চান। পরিকল্পনাটা এরকম,–সিকো-এ তিনি একটি শাখা অফিস খুলছেন। উদ্দেশ্য, অবিভাবকদের কাছে গিয়ে বীমা সম্পর্কে তাদের বোঝান, আর বাচ্চা ছেলে মেয়েদের জন্যে জীবন রক্ষা পলিশি ফিক্সড করা। খুবই অল্প প্রিমিয়ামে। আর স্টার্নউড চান সিকোঘোর ঐ শাখা অফিসের ইনচার্জ হই আমি।

কেটি বিস্ময়ের চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলল–সিকো? ঐ জায়গাটা তো কালো চামড়ার লোকেদের আস্তানা। কেন তার কথাটা সংশোধন করে বলল-ওখানকার সকলেই কালো চামড়া নয়, শ্বেতাঙ্গরাও বাস করে। ওখানে প্রায় পনেরো হাজার পলিশি করবার সম্ভাবনা রয়েছে। এবং এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত যে, ওখানে মুঠো মুঠো সোনা ফলবে। তাই ওই স্থানটি তার প্রয়োজন। কেটি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর জানতে চাইল-তোমার এই কাজের জন্যে অতিরিক্ত কত পাবে? তবে আমার মনে হয় না যে, এখানে ধনী মক্কেলদের সঙ্গে কাজ করবার পর ওখানে তুমি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে।

কেন কথাটা নিয়ে একটু চিন্তা করল, তারপর বলল–এটা আমার পছন্দ না হলেও স্টার্নউডের কথা ফেলতে পারব না। এটা আমার চ্যালেঞ্জ বলতে পার। একটু থেমে আবার বলতে লাগল, ইনচার্জ হবার দরুন আমার পারিশ্রমিক কতটা বাড়বে, তা আশা করতে পারছি না, আমার মাধ্যমে যে সব বিজনেস হয়, তার ওপর শতকরা পনের ভাগ টাকা আমি পেয়ে থাকি। তবে স্টার্নউড মানুষকে অযথা খাটানো। তিনি যদি তার ব্যবসার প্রকৃত উন্নতি চান তাহলে নিশ্চয়ই তিনি আমার কমিশনের অঙ্কটা বাড়িয়ে দেবেন। আর সেটা নির্ভর করছে আমার পরিশ্রমের উপর।

কেনের কথা শুনে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল কেটি। জানতে চাইল–কেন, নতুন অফিস শুরু করছ কবে থেকে।

কেন তাড়াতাড়ি করে উত্তর দিল–আগামী কাল থেকে শুরু করব। কিন্তু কেটি–একটা কথা আমি ভাবিনি, যা আমার ভাবা উচিত ছিল, আর তুমিও তা তলিয়ে ভাবনি যে কথাটা আমার মনে পড়ছে বারবার। কেটি তাকে একবার ভাল করে দেখল। তারপর বলল–সেই খবরটা কি শুনি? কেন বলতে লাগল–স্টার্নউডের মেয়েকে আমার সঙ্গে কাজ করতে হবে। সেনাকি দারুণ স্মার্ট। আমার মতোইবীমার ব্যাপারে ওর ভাল জ্ঞান আছে। আমি বাইরে গেলে অফিস দেখাশোনার ভার ওর ওপরই থাকবে। তবে তাই বলে এই নয় যে, সব সময় আমাকে আমার পায়ের ওপর ভর দিয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু তুমি জেনে রেখ।

তার কথার মাঝখানে কেটি প্রশ্ন করল মেয়েটির কি পছন্দ জান?

কেন–কোন ধারণা নেই, কাল ওকে দেখার পর বলব।

এরপর তারা নৈশ ভোজ সারার উদ্দেশ্যে খাবার টেবিলের দিকে গেল। খেতে খেতে কেটি বলল-আমার আশঙ্কা, মেয়েটি যদি সুন্দরী ও আকর্ষণীয়া হয় কেন কেটির মুখের দিকে তাকাল, দেখল এক অজানা আশঙ্কা তার মুখমণ্ডলে বিস্তৃত।

 কেন কেটির উদ্দেশ্যে বলল-তোমার এতে ঘাবড়াবার কোন প্রয়োজন নেই তো? আমার মনে খটকা লাগছে অন্য এক কারণে–মনে কর, মেয়েটি যদি তার বাবার পর তাদের ফার্মের কার্যভার গ্রহণ করে তাহলে ধরে নিতে হয় যে, এটা মোটেই তার খেয়ালের পর্যায়ে পড়ে না। আমি যদি একাজে অসফল হই তাহলে আমি হয়ত অসুবিধায় পড়তে পারি। মেয়েটির বাবার ডেস্কে একটা হট লাইন আছে। মেয়েটির বিষ নজরে পড়লে চাকরীটা আমি হারাতে বাধ্য আর স্টার্নউডও আমাকে খতম করে দিতে পারে। এটাই আমার দুঃশ্চিন্তার কারণ।

কেটি তার হাতটা কেনের হাতের ওপর রেখে মৃদু চাপ দিয়ে বলল–কেন তুমি বেশ ভাল করেই জান, এ কাজে তুমি অবশ্যই সফল হবে।

খেতে খেতে কেন কেটির রান্নার সুস্বাদের প্রশংসা করে বলল-এরকম সুস্বাদু চীনা পায়েস আমি কখনো খাইনি।

আহারের শেষে কেটি কেনের কাছে জানতে চাইল কেন শোবার বিছানা দেখবে বলছিল, তার কারণটা কি?

কিন্তু কেন তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কেটিকে জিজ্ঞাসা করল–খাবার কেমন লাগল?

চুলোয় যাক খাবার! কেটি বিরক্তি প্রকাশ করে বলল।

পৃথিবীর সব থেকে বিলাসবহুল শহর হল এই প্যারাডাইস শহরটি, সম্মানিত ধনী ব্যক্তিদের বাসস্থল ও খেলার মাঠ হিসাবে পরিচিত। মিয়ামী বীচ থেকে প্রায় কুড়ি মাইল দূরে এই নগরটি।

অপরদিকে সিকোম্ব শহরটি পশ্চিম মিয়ামীর মত সুন্দর শহর নয়। ঘন ঘন অ্যাপার্টমেন্ট, বাংলো, সস্তায় খাবার। মদ খাওয়ার বারগুলোতে ছেলেদের ভিড় লেগে থাকে প্রায় সর্বদাই আর তারা বাহ্যিক জ্ঞানশূন্য হয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে মত্ত হয়। এখানকার বেশীরভাগ অধিবাসীরাই নিগ্রো (কৃষ্ণাঙ্গ), তারা প্যারাডাইস শহরটির পরিচর্যা করে থাকে।

কেনের নতুন অফিসটি সীভিউ রোডের ওপর। শহরের কেন্দ্রস্থলে, শপিং সেন্টারের ঠিক মাঝখানে।

কেন নির্দিষ্ট সময়ে তার অফিসের সামনে পৌঁছাল। গাড়ি পার্কিং-এর জায়গা না থাকায় একটা ফাঁকা জায়গায় গাড়িটি রেখে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে অফিসটা নিরীক্ষণ করতে লাগল। জায়গাটা যেন মদের আড্ডাখানা বলেই মনে হল। পছন্দ না হলেও সে ভেবে নিল এখানকার সম্ভাব্য মক্কেলরা সকলেই খেটে খাওয়া মানুষ। সিটি হেড অফিসের মত বিলাসবহুল অফিসে প্রবেশ করার সংকোচ নিয়ে তাদের এখানে আসতে হবে না। সে বেশ বুঝতে পারল, আশেপাশের একদল মানুষ তাকে দেখছে।

একসময় সে অফিসের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল। সামনেই একটা বিরাট লম্বা কাউন্টার।কাউন্টারের পেছনে একটা বড় ঘর, ফাইলের ক্যাবিনেট, ডেস্ক,টাইপরাইটার, টেলিফোন, সবগুলিই পুরোনো বলে মনে হচ্ছিল।

কেন অনুমান করল, ঘরটা নিশ্চই স্টার্নউডের মেয়ের হবে। কাউন্টারের ডালা তুলে সেই বড় ঘরটা পেরিয়ে একটা দরজার সামনে এসে দাঁড়াল, তুষার নিয়ন্ত্রণের কাঁচের প্যানেল লাগানো দরজার ওপর কালো ছাপার অক্ষরে ছিল–কেন ব্র্যান্ডন, ম্যানেজার।

কাঁচের প্যানেলটা ভাল করে দেখল, সেই মুহূর্তে মনে পড়ল তার পুরোনো অফিসের কথা। দরজার হাতল ঘুরিয়ে ঘোট ঘরটার মধ্যে প্রবেশ করল কেন। সে তার নতুন রাজ্য জরীপ করতে লাগল ধীরভাবে। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হেড কোয়ার্টারের থেকে দীর্ঘ ব্যবধান সম্পন্ন এই অফিস ঘরটি গরম ও স্টাফি, যেন দম বন্ধ হয়ে যাবে, জানালা খুলতেই জনতার কলরোল ও ট্রাফিকের শব্দ ঘরের মধ্যে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। এই ঘরটি মোটামুটি সাজানো-গোছান। সুইংস চেয়ার, কার্পেট মোড়ানো মেঝে, ডেস্ক সংলগ্ন আরো দুটো চেয়ার, রাস্তার ধারে একটা ছোট জানালা, ডেস্কের ওপর টেলিফোন, টাইপরাইটার, অ্যাস্ট্রে, প্যাড ইত্যাদি ইত্যাদি।

সে কেটিকে বলেছিল, পদোন্নতির এটা একটা সুযোগ,কথাটা মনে পড়তে তার হাসি পেল। বোধ হয় স্টার্নউড অবশ্যই তাকে একটা সুযোগ করে দিয়েছেন পদোন্নতির জন্য। নানান কথা চিন্তা করছে ঠিক এমন সময়ে বাইরে অফিস ঘরে কারোর পায়ের শব্দ তার কানে ভেসে এল, কেন তার অফিস ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সঙ্গে সঙ্গে দেখল তার ঘরের প্রবেশ পথে সুন্দর, সুঠাম, দীর্ঘ চেহারার একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে।

 প্রথমে সে ভেবেছিলইনিসম্ভবত একজনমক্কেল, কিন্তু পরমুহূর্তে ভালকরে নিরীক্ষণ করার পর তার দেহে চকিতে একটা শিহরণ খেলে গেল সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারল, ইনিই স্টার্নউডের মেয়ে।

মেয়েটির পরনে ছিল রঙ চটা আঁটো জীনসের টি শার্ট। তার কাঁধ ছুঁই ছুঁই চুলগুলো দেখে মনে হয় এই মাত্র স্নান করে এলো সে। তার চুলগুলোর মধ্যে একটা তীব্র আকর্ষণীয় শক্তি ছিল, পুরুষচিত্ত চঞ্চল করে তোলার মতই। তার বড় বড় চোখে সবুজ সমুদ্রের গভীরতা, তার মুখের গড়ন মনে রেখাপাত করবার মতই উঁচু চিবুক, ছোট নাক, পুরু ঠোঁট।

কেনের দৃষ্টি মেয়েটির সারা শরীরময় আবর্তিত হতে লাগল। মেয়েটির স্তন দুটি অর্ধ আনারসের মত আঁটো, টি সার্টের ওপর তার ছাপ অতি সুস্পষ্ট। তার লম্বা পা দুটো সুন্দর সুডৌল, বাসনায় সাড়া জাগানো যুবতী নারীর মতন।

প্রথমে জড়তা কাটিয়ে মেয়েটিই কথা বলল–তুমি তো কেন ব্রান্ডন, তাই না?

কেন পালটা প্রশ্ন করল তাকে তুমি নিশ্চই স্টার্নউডের কন্যা! তারপরই সে নিজের পরিচয় দিল।

মেয়েটি মাথা নেড়ে হাসল। হাসতে গিয়ে তার সব দাঁত গুলো বেরিয়ে এল, দেখে মনে হল, সে যেন টুথপেস্টের বিজ্ঞাপনের মডেল। মেয়েটি চারিদিক একবার তাকিয়ে দেখল তারপর মেয়েটি ডেস্কে রাখা টাইপ রাইটারের দিকে এগিয়ে গেল তারপরই বিরক্তি প্রকাশ করল। এটা যেন একটা আস্তাকুঁড়। তারপরই সে তার ডেস্কের ওপর বসে পড়ে টেলিফোন রিসিভার তুলে ডায়াল করল পিতা স্টার্নউডের উদ্দেশ্যে।

কেন ফ্যালফ্যাল করে তার কাজ কারবার দেখতে লাগল। ওধারের প্রশ্নের জবাবে স্টার্নউড কন্যা বলল মিস স্টার্নউড কথা বলছি। ফোনটা মিঃ স্টার্নউডকে দাও। একটু বিরতি। আবার সে সরব হল–বাবা! আমি এইমাত্র এখানে পৌঁছেছি, এই জায়গাটা একটা নোংরা আস্তাকুঁড়, প্রায় শ্মশান বললে ভুল হবে না। এরকম জায়গায় কাজ করা পাগলামী ছাড়া কিছু নয়। এখানে রয়েছে একটা ভাঙা টাইপরাইটার।এ দিয়ে কাজ চালানো সম্ভবনয়। আমি চাই আই. বি. এম ইলেকট্রনিক টাইপ রাইটার। আর এই অফিস ঘরটা যেন একটা আগুনের চুল্লী। এমন দমবন্ধ করা আলো বাতাসহীন:ঘরে আমি কাজ করতে পারব না। দুটো পোটেবল কন্ডিশনার কালই আমার চাই।

রিসিভারের ওপার থেকে মিঃ স্টার্নউডের গলা ভেসে এল। মেয়েটি তার বাবার কথা মনযোগ সহকারে শুনছে আবার সে সরব হল–দেখো, বাবা তুমি আমাকে মিথ্যে বোঝাবার চেষ্টা (কোর না।) তুমি অনেকটা কৃপণের মত কথা বলছ। আমি তোমার সব যুক্তি মানতে নারাজ। হয় ওগুলো আমার চাই, নতুবা আমি এখানে কাজ করতে পারব না।

কথা শেষ করে রিসিভারটা সেনামিয়ে রেখে কেনের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল–আমরা ওগুলো পাচ্ছি

বিস্ফারিত চোখে কেন এতক্ষণ দেখে যাচ্ছিল। স্টার্টউডের মুখের ওপর যে কেউ কথা বলতে পারে, তা তার জানা ছিল না।

কেন বলল–মিস স্টার্নউড, মিঃ স্টার্ডড তোমাকে খুব সুনজরে দেখেন, তাই না?

মেয়েটি একটু হেসে বলল–আমি ছোট থেকেই ওনার ওপর খবরদারি করে আসছি। আমার কাছে উনি ঠিক শিশুর মতই সহজ, সরল।

 কথা বলতে বলতে তারা, সারা অফিসূটা ঘুরে দেখতে লাগল। একসময় মেয়েটি কেনকে বলল–তুমি আমাকে কারেন বলেই ডেকো। কিন্তু একটা কথা, তুমি এই পোষাকে সিকোম্বোতে ভাল ব্যবসা করতে পারবে আশা কর? এবার কেন কারেনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিজের ওপর রাখল–হাল্কা ওজনের চারকোল রং এর স্যুট পরেছিল সে। গলায় রক্ষণশীল টাই, সাদা শার্ট, কড়া পালিসের জুতা। নিজেকে সে বাথরুমের আয়নাতে ভাল করে দেখেছিল, মনে হচ্ছিল নতুন ইনসিওরেন্স কোম্পানীর একজিকিউটিভ রূপে সে একেবারেই উপযুক্ত।

 সে বিস্ময়ের ঘোরে কারেনের দিকে তাকাতে কারেন বুঝিয়ে বলল–তুমি যদি এই পোষাকে কোন নিগারের দরজায় নক করো, তোমার পোষাক দেখে সে হয়ত দরজাই খুলবে না। এই পরিবেশে আমার মত সাধারণ পোকই কাম্য, আমি একটি প্রস্তাবই দিচ্ছি–তুমি বাড়ি গিয়ে পোষাক বদলে এস, তুমি আমার বস, প্রস্তাবটা মানা না মানা তোমার ব্যাপার।

কেন বুঝল–কারেন, ঠিক কথাই বলেছে। এটি প্যারাডাইস সিটির বিলাসবহুল জীবনের পোষাক, তার নির্বাচন ভুল হয়েছে।

কেন তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফিরে আসবে বলে গেল।

বাড়ি ফেরার সময় সারাটা পথ নানা কথা ভাবতে লাগল কারেন সম্পর্কে। মেয়েটির ব্যবহার, তার চাউনি, তার শরীর সব কিছুই ব্রান্ডনের চোখে ভাসতে লাগল। একসময় সে নিজের মনে নিচু গলায় চিৎকার করে বলে উঠল–দেখে নাও ব্রান্ডন! চোখ খুলে দেখে নাও! পৃথিবীর সব থেকে ভাল ও সুন্দরী রমণীকে তুমি বিয়ে করেছ। আজ চার বছর হল তোমাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু কখনো তুমি অন্য কোন নারীর দিকে চোখ তুলে তাকাও নি। কিন্তু কারেনের ভাব-ভঙ্গি যা, শরীরে শিহরণ জাগাবার মতন। এখন তুমি তার দিকে চোখ ফেরাতে পার। এই সময়টা তোমার দেখার সময়, অবহেলা করো না।

বাড়ি ফিরে দেখল, কেটি তার কাজে বেরিয়ে গেছে। সে তখন শয়নকক্ষে ঢুকে আলমারি থেকে তার একটা রঙচটা জীনসের সোয়েট শার্ট ও লোকারস বার করে তার পোষাক বদল করল। তারপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে নিরীক্ষণ করে ভাবল–এবারের পোষাকটা সিকোম্বোর উপযুক্ত হয়েছে। তারপর সে মাথার চুলগুলোর মধ্যে আঙুল চালিয়ে এলোমেলো করে দিল।

এরপর সে গাড়িতে উঠল, মেয়েটির কথা তার আরও একবার মনে পড়ে গেল–মেয়েটি অত্যন্ত স্মার্ট, তার কাছে নিজের ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে হবে আর মেয়েটি তার নিজ দৃঢ় ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিয়েছে। এখন কাজ করতে হবে তাদের।

সে অফিসে না গিয়ে টু মান স্ট্রিটের ওপর তার গাড়িটা পার্ক করে রাখল। নোংরা রাস্তা দীর্ঘ বেশ, রাস্তার দুধারে ভাঙা কেবিন। এগুলো নিগ্রোদের বাসস্থল। সে দরজায় দরজায় নক করে প্রত্যেকটি পরিবারের সঙ্গে আলাপ করে নিজের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করল। অনেকেই কেনকে রাতের দিকে আসার জন্য অনুরোধ করল। এর মধ্যে তারা তাদের স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করে রাখবে তাদের মধ্যে তিনজন মহিলা চুক্তিপত্রে সই করে তার হাতে দশ ডলারের বিল তুলে দিল। প্রত্যেকেই উৎসাহী কেনের ইনসিওরেন্স কোম্পানীর সঙ্গে ব্যবসায়িক সূত্রে আবদ্ধ হবার জন্য।

মধ্যাহ্নভোজের মধ্যেই সে তিনখানা চুক্তি পাকা করে ফেলল। এবং দশটি সম্ভাবনাময় প্রস্তাবনা সংগ্রহ করে ফেলল। এরপর অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হল। সে নিগ্রোদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছিল–পৃথিবীর যে কোন মূল্যবান বস্তুর থেকে তাদের ছেলে মেয়েরাই তাদের কাছে বেশী মূল্যবান। স্টার্নউডের পরিকল্পনাটা চমৎকার বটে।

অফিসে ফিরে এসে দেখল কারেনের আই. বি. এম একজিকিউটিভ টাইপরাইটার এসে গেছে এবং ঐ নতুন যন্ত্রটিতে চিঠি টাইপ করছিল। ঘরগুলোও শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে।

কারেন কেনকে দেখে মৃদু হেসে বলল–আমি দুটো পলিসি বিক্রী করেছি। তা তুমি কতগুলো সংগ্রহ করতে পারলে জানতে পারি কি?

কেন চটপট তার সংগ্রহের খবর শুনিয়ে দিয়ে বলল–তুমি তো দারুণ কাজের মেয়ে, বাবাকে বলে সব ব্যবস্থাই করে নিয়েছ দেখছি।

কারেন উত্তর দিল–আমার বাবাও কম কাজের লোক নয়, তুমি সে কথা ভাল করেই জান। আমি তো তারই মেয়ে। তাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়াটাই হচ্ছে কেরামতি। আর সেটাই তোমার কাছে অত্যাশ্চর্য মনে হচ্ছে।

কেন তার কন্ট্রাক্ট ফর্ম তিনটি কারেনের হাতে তুলে দিতে গিয়ে খুব কাছ থেকে নিরীক্ষণ করল তাকে। সারা শরীরে একটা কামোত্তেজনা ভাব। কেটিকে বিয়ে করার পর কোন নারীই তাকে এমন ভাবে উত্তেজিত করতে পারে নি। সে ভীষণ বিরক্তবোধ করছে।

কেন কথা ঘোরাল তোমার বাবা দারুন স্মার্ট। তার মনে একটা বিরাট পরিকল্পনা রয়েছে। কারেন স্মিত হেসে মাথা নেড়ে সায় দিল তার কথায়। তারপর কন্ট্রাক্ট ফর্মগুলো একবার দেখে নিয়ে ডেস্কের উপর রেখে দিল কারেন, কেনের দিকে ফিরে বললো-আমার খুব খিদে পেয়েছে বাইরে যাবে কি তুমি?

কেন তার সঙ্গে বাইরে যেতে রাজি হল না কারণ এই মুহূর্তেই হয়ত কেউ বিজনেস নিয়ে আসতে পারে। তাই সে বলল কারেন যেন একাই লাঞ্চ সেরে আসে এবং তার জন্য হট ডগ বা অন্য কিছু নিয়ে আসে।

কারেন তার কাউন্টারের ডালা তুলে বড় ঘরের দরজা পেরিয়ে সদর দরজার সামনে এগিয়ে গেল। কেন তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মেয়েটির পাছা অসম্ভব দুলে উঠেছিল, সারা শরীরের মধ্যে কমনীয় উত্তেজনা ফুটে উঠেছে। জীনস পরার দরুন পাছার প্রতিটি খাঁজ খুবই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল কেনের চোখে। অফিস থেকে বেরিয়ে যেতেই ঘরটা যেন শূন্যতায় ভরে গেল। কেন ডেস্কের উপর বসে টেলিফোনের ডায়াল তুলে একটা ফোন নম্বর ডায়াল করল। উদ্দেশ্য। কেটির সঙ্গে কিছুটা গল্প করা।

কেটিকে ফোনে কেন জিজ্ঞাসা করল–তুমি এখন ব্যস্ত নেই তো? একটু সহজভাবে কথা বলতে পারবে তো?

কেটি কাজের ব্যস্ততার দরুন তাড়াতাড়ি কথা সারবার জন্য কেনকে বলল।–তোমার নতুন অফিস কেমন লাগল? কেন উত্তর দিল-জায়গাটা মোটামুটি ভালই লাগছে। দশটা কনট্রাক্টের। সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু মুশকিল এই যে, এখানকার মেয়েরা ফর্মে সই করবার আগে স্বামীর অনুমতি নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। তাই ফিরতে রাত দশটা হতে পারে।

কেটি তার কাছে কারেন সম্পর্কে কিছু বক্তব্য জানার পর রাতে তাড়াতাড়ি ফিরবার জন্য অনুরোধ জানিয়ে ফোনটা রেখে দিল।

কেটি বিদায় নেবার পর মুহূর্তের মধ্যে কেন তার ও কেটির কথোপকথনটা মনে মনে একবার আঁওড়ে নিতে চাইল। কেন নিজের ঘোরে একটা বেঁফাস কথা বলে ফেলেছে–জান হানি, মেয়েটিরমধ্যে একটাচমক জাগানো রোমাঞ্চকর হাল্কা ভাব রয়েছে। সত্যিই সে ভীষণ আকর্ষণীয়া, ঠিক তার বাবার মতন। আমি জোর গলায় বলতে পারি আমার মত সে নয়। কেটি বিমর্ষ গলায় জবাব দিল–ও কেন, আমি জানতাম না যে, তোমার একটা বিশেষ টাইপ আছে।

কেন কেটির কথা বলার ভঙ্গী দেখে বুঝতে পারল, সে কতটা ভুল করেছে ঐ কথাটি বলে। তাদের বিয়ে হয়েছে চার বছর। এর মধ্যেই সে বুঝতে পেরেছে কেটি কতটা চালাক ও বুদ্ধিমতী মেয়ে। সে সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত ও বটে।

তাই সে তাড়াতাড়ি বলল-হ্যাঁ হানি! তুমি তো কেবল আমারই মত। তোমার কোন বিকল্প হতে পারে না।

পরমুহর্তেই–ঠিক আছে। আজ রাতে কোন এক সময়েই আমি তোমার কাছে যাচ্ছি। বলেই সে ফোনের লাইনটা কেটে দিল।

কেন ভাবতে লাগল, প্রমোশন না নিলেই বোধ হয় ভাল হত, স্টার্নউডকে বলে হেডকোয়ার্টারে সেলম্যান হিসাবে থাকা উচিত ছিল। হেডকোয়ার্টারে তার যে সেক্রেটারী ছিল, সে মধ্যবয়স্কা, মোটাসোটা ও স্মার্ট, কারেনের মত তার সেক্স অ্যাপিল ছিল না, বিশেষতঃ কেটি তাকে পছন্দ করত। কিন্তু সেই বা কি করে জানবে, কারেনের মত এক কামুক মেয়ের পাল্লায় তাকে পড়তে হবে।

এই অফিস ঘরে মাত্র দুজন। সে আর কারেন…। এক শিহরণ খেলে যায় তার দেহে। ঘর্মাক্ত হাত দিয়ে চুলের ওপর বিলি কাটতে থাকে।

একসময় সে প্রসপেক্টাস এর খসরা তৈরী করবার কাজে মন দিল–খুবই সহজ, সরল টার্মস, যা প্যারাডাইস অ্যাসুরেন্স কর্পোরেশনের যুবক যুবতীদের জন্যে ভাল কিছু করবার আশা রাখে। টেলিফোনে হেড অফিসের সেলস্ ডাইরেক্টরদের সঙ্গে এবিষয়ে সে আলোচনা সেরে ফেলল।

ইতিমধ্যে কারেন চলে আসায়, তার জন্য কারেনের আনা দুটো হট ডগ গলাধঃকরণ করে সেঅফিস থেকে বেরিয়ে গেল। কারেনকে বলে গেল সারাটা বিকাল সে বাইরেই কাটাবে। প্রথমে সে এল স্থানীয় এক স্কুলের প্রিন্সিপ্যালের সঙ্গে দেখা করতে। প্রিন্সিপালের বয়স মাঝারি, জাতে নিগ্রো, তিনি প্রথম প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন।

এরপর সে প্রিন্সিপ্যালের কাছে আরো একটি প্রস্তাব রাখে–আপনার স্কুলের হলঘরটা যদি এক সন্ধ্যায় আমাকে ব্যবহার করতে দেন। সেখানে আমি ছেলে মেয়েদের অবিভাবকদের সঙ্গে কথা বলব। আপনি যদি আমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেন, তাহলে খুবই সুবিধা হয়।

প্রিন্সিপাল একটুও ইতস্ততঃ না করে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেন–ঠিক আছে। মিঃ ব্রান্ডন আমি আপনাকে সহযোগিতা করব। তবে, আমার মনে হয় না, কোন, সন্ধ্যাতেই অবিভাবকেরা আপনার ক্লায়েন্ট হবার জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম শেষে আলোচনার জন্য এখানে আসবে। তাই বলছি, আপনি কোন এক রবিবারকে বেছে নিন, মধ্যাহ্নভোজের পর এখানে চলে আসুন, বিকাল চারটে এক্ষেত্রে উপযুক্ত সময়।

ব্রান্ডন মনে মনে ভাবতে লাগল এটা অনেকটা চাঁদে অভিযানের মত। রবিবারের ছুটিটা নষ্ট করতে মন চাইল না, তবুও এ সুযোগনষ্ট হতে দেওয়া যায় না, প্রিন্সিপ্যাল সব দিক বুঝেশুনেই এরকম প্রস্তাব দিয়েছেন। তাই তার কথাটা ফেলতে পারল না। রবিবার বিকালে আসবে জানিয়ে সে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হল।

যাবার আগে প্রিন্সিপ্যাল তাকে চারজন নিগ্রো কিশোরের নাম ঠিকানা দিয়েছিল, কয়েক ডলার পেলে এরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রসপেক্টাস বিলি করতে পারে। কেন প্রথমেই মুদ্রাকরদের কাছে যায়, তারা আগামী বুধবার বিকালের মধ্যে তিনহাজার প্রসপেক্টাস ছাপিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়।

এরপর কেন সোজা অফিসে চলে আসে। কারেনের ডেস্কের সামনে বসে সারা বিকালের কার্যাবলীও ঘটনাগুলো শোনায়।রবিবার সেমিটিং-একারেনেরসঙ্গ পেতে চায়–একথাও জানায়।

কারেন সন্তুষ্ট হয়। সে বলে-রবিবার আমার অন্য কাজ ছিল, তবে ওটা আমি বাতিল করে দেব, আমার মনে হয়, এটা খুবসুন্দর পরিকল্পনা,বাবা খুব খুশী হবেন।কারেনহাসল-হাসতে গিয়ে তার বুকটা কিছুটা ঠেলে উঠল।

কেন তার পুরুষ্ট স্তনজোড়া সম্পর্কে সচেতন।তোমার জন্য আরো কিছু করতে পারি। তবে আজ রাতে আমার কাজের ব্যস্ততা রয়েছে।

কেন মৃদু হেসে বলল–অসংখ্য ধন্যবাদ, এটা একটা বিরাট ব্যাপার। আমি একা সামলাতে পারব না, তোমার মত বুদ্ধিমতী, স্মার্ট মেয়ের প্রয়োজন রয়েছে।

কারেন ঠিক করল–এসময়ে কে বিশ্রাম নিক, আর স্থানীয় লোকেদের সঙ্গে সেই যোগাযোগ করুক।

কারেন বলল–আমি বেরোচ্ছি, আমাদের শুরুটা বেশ ভালই মনে হচ্ছে। কাল আবার দেখা হবে।

বেরোবার সময় দরজার কাছে গিয়ে সে কেনের দিকে ফিরে তাকাল। চোখে মুখে গভীর অনুরাগের ছোঁয়া। তার হাঁটার ভঙ্গিমার সঙ্গে নিতম্বের কাঁপা কাঁপা ছন্দময় ভঙ্গিমাও বেশ নয়নাভিরাম।

কেন যখন বাড়ি ফিরল, তখন রাত পৌনে এগারোটা। সে তখন দারুন তৃষ্ণার্ত ও ক্ষুধার্তও বটে। সে ভীষণ খুশী, কেননা দশটা সম্ভাব্য পলিসির মধ্যে আটটা বিক্রী করেছে। প্রথম দিনে তার কমিশন বাবদ ১৯৫ ডলার রোজগার করেছে,ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসাবে। গ্যারেজে গাড়ি রাখার সময়, তার মনে হল-স্টার্নউড লোকটা বেশ স্মার্ট ও কাজের।

কেটি তখন বসবার ঘরে বসে টেলিভিশন দেখছিল। কেনকে দেখে সে টিভি বন্ধ করে দিল। কেটির পরনে ছিল সাধারণ একটি পোষাক, যা পরে সে বাগান পরিচর্যার কাজ করে। কেটি বিস্ময় সহকারে কেনকে জিজ্ঞাসা করল

কেন, তোমার এরকম পোষাক কেন আজ? কেন হাসতে হাসতে বলল–আমার জীবনের এক নতুন পর্ব, সব কথাই বলছি। তার আগে বীয়ার দাও। তৃষ্ণাটা মেটাই।

কেটি টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল–সব তৈরী আছে, তুমি টেবিলে বস। কেনের চেয়ারের উল্টোদিকে কেটি বসল খাবার খেতে। খাবার বলতেবীফ আর মিক্সড স্যালাড ও বীয়ার। খেতে খেতে কেটি তার নতুন অফিসের কথা জিজ্ঞাসা করল। কেন সবকিছুই বলল, কেবল বলল না কারেনের কথা এবং আগামী রবিবার সে যে মিটিং-এ ব্যস্ত থাকবে সে কথা। কারণ রবিবার ঐ দিনটি কেবল তাদের দুজনের অর্থাৎ কেটিকে নিয়েই তার ঐ দিনটি কেটে যায়।

কেটিকে খুশীকরবার জন্য কেন বলল-প্রথম দিনই আমি একশো পঁচানব্বই ডলার কমিশন আয় করেছি।

–জানতাম প্রিয়তম, এ সাফল্য তোমার আসবেই। কথাটা বলার পর একটু থেমে কেটি বলল–তোমার এরূপ পোষাক পরবার কারণটা বললে না তো?

কেন বলতে শুরু করল–অফিসে গিয়ে দেখি সেটা যেন একটা আস্তাকুঁড়। ওরকম একটা পরিবেশে উপলব্ধি করলাম, আমার আগের পোষাক নির্বাচনে যথেষ্ট ভুল করেছি। খানিকটা স্যালাড নিজের পাতে তুলে নিয়ে বলল-তার পরেই কারেন এল পুরানোপোষাকে। তাই আমিও বাড়িতে এসে পোষাক বদল করে যাই।

কেটি সাগ্রহে জিজ্ঞাসা করল–কারেন? স্টার্নউড কন্যা?

কেন মাথা নেড়ে সায় জানালে কেটি তার সম্পর্কে কিছু জানতে চাইল। কেন সংক্ষেপে কারেনের পরিচয় দিতে চাইলস্টার্নউড কন্যা তার বাবার মতই টাফ ও স্মার্ট। সে আধুনিকা, রুচিসম্পন্না, ভিড়ে চলনসই মেয়েদের মতোই সুন্দরী পরনে সাধারণ পোষাক–আঁটো জিনস, টি শার্ট, এলোমলো চুল।

কথা বলতে বলতে সে তার স্ত্রীর মুখের দিকে তাকাল। পবিত্র, সুন্দর। চুলগুলো মসৃণ ও চকচকে। এত রাতেও প্রসাধন ছাড়া নিখুঁত ও সুন্দর দেখাচ্ছিল। তার সাধারণ নীল পোক, যে কোন পোষাকের থেকেও দেখতে সুন্দর। সে প্রসঙ্গ, বদলাবার জন্য বলল অবাঞ্ছিত সেই কথাটিকেটি, আমি তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, আসছে রবিবার বিকাল চারটায় স্কুলে মিটিং রয়েছে।

— বিস্ময়ের চোখে কেটি কেনের দিকে তাকাল–কেন, তুমি জান না ঐ দিনেই মেরীর বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান।

কেন দুঃখের সঙ্গে জানাল–প্রিয়তমা। প্রসপেক্টাস ছাপা হয়ে গেছে তাই–এই মুহূর্তে আমি মিটিংটা ক্যানসেল করতে পারি না। রবিবার ছাড়া এই প্রয়োজনীয় কাজটা হবে না, আর এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ মিটিং।

কেটি বিরক্তি প্রকাশ করে বলল–তাহলে তুমি ছাড়া পাচ্ছ কখন? কেন একটু চিন্তা করে বলল–সবটাই নির্ভর করছে অভিভাবকদের সংখ্যার ওপর।

কেটির মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল–তাহলে, বাজী পোড়ানোর সময় তোমাকে আশা করা যায়। মাঝরাতের আগে পার্টি শেষ হবে না। তার আগে তুমি গেলেই হল। না গেলে মেরী ও জ্যাক খুবই দুঃখ পাবে।

একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল কেন, বলল-মিটিং শেষ হওয়া মাত্রই আমি রওনা দেব।

মেরী হল কেটির বড়বোন ও জ্যাক মেরীর স্বামী। মেরী খুবই দাম্ভিক গোছের, সে নিজের ভাল ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারে না, এধরনের মেয়ে কেনের খুবই অপছন্দ। তার স্বামী কর্পোরেশনের উকিল, কেনের মতে, সেই লোকটির সঙ্গে মিলিত হওয়া মানেই জীবনের সবচেয়ে বিড়ম্বনা। এটি তাদের দশম বিবাহবার্ষিকী। বার-বি-কিউ-এ মধ্যাহ্ন ভোেজ। তারপর বাজী পোড়ানোর উৎসব।

কথাটা যে কেনের মনে ছিলনা, তানয়। সেঅফিসের কাজটাকে বেশী গুরুত্ব দিতে চেয়েছিল।

কেটি কথা বলতে বলতে খাওয়ার ডিসগুলো বোয়ার জন্য এগিয়ে গেল–তোমার আসতে কেন দেরী হচ্ছে, সে কারণটা আমি মেরীও জ্যাককে বুঝিয়ে বলব, তোমার এই পদোন্নতির খবর শুনলে তারা বেশ খুশী হবে। তা, তুমি কি এখন বেশী রাত অবধি কাজ করবে।

কেন তাকে সাহায্য করবার জন্য এগিয়ে গেল–মনে হয়না। তোমাকে তো বলেছি কন্ট্রাক্ট ফর্মে সই করবার জন্য অভিভাবকদের পেতে হলে এই রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে রবিবার মিটিং হবার পর কোন একটি সমাধান আশা করা যায়। তখন ফিরতে আর রাত হবে না।

তুমি যদি রোজ এত রাত পর্যন্ত কাজ করো, তাহলে তোমার সঙ্গে আমার খুব কম দেখা হবে।

কেন তার পিঠের ওপর আলতো হাতের ছোঁয়া রেখে আদর করলো তাকে। ওঃ হানি কাছে এসো। তোমার প্রতি আমার আদর আর ভালবাসার এতটুকুও ঘাটতি হবে না। মাত্র কয়েকদিন দেরী হবে। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমিই বল, এই সুযোগটা হাতছাড়া করা যায়? প্রথম দিনেই একশ পঁচানব্বই ডলার আয়, এটা কি যথেষ্ট নয়?

কেটি বলল–টাকাটাই সব কিছুনয়।প্রত্যুত্তরে কেন–ওটা প্রধান না হলেও অনেক সাহায্যে লাগে।

এরপর তারা শোবার ঘরে চলে আসে। বিছানায় কেটি ঘুমিয়ে, কিন্তু কেন তখনও জেগে। প্রায় সারারাত জুড়ে কেনের হৃদয় আন্দোলিত হচ্ছিল কারেনের চিন্তায়।

তার কমনীয় দেহ খানা কেনের চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। সুন্দর পুরুষ্ট স্তন জোড়া, ভারী নিতম্ব, সুডৌল পা সে কিছুতেই ভুলতে পারে না। অন্যদিনের তুলনায় একটু বেশী ঘুমাল সেদিন কেন, রাত্রি জাগরণের কারণে।

রবিবার। কেন মিটিং-এর উদ্দেশ্যে স্কুলবাড়ির দিকে রওনা হল। কিন্তু স্কুলের বিরাট হলে প্রবেশ করা মাত্রই তার মন ভেঙে গেল। হলটি ছিল পাঁচশো জন বসার মত। কিন্তু কেনের গনণায় উপস্থিতি জনতার সংখ্যা দাঁড়াল মাত্র, চৌত্রিশ জন।

চেয়ারে বসেছিল কারেন ও স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল বার্নের্স, বিভিন্ন কাজে তাদেরকে সাহায্য করছিল সেই চারজন নিগ্রো, যারা প্রসপেক্টাস বিলি করেছিল।

মিটিং ফ্লপ হলেও ভাঙা মন নিয়ে সে ব্যবসায়িক মনোভাবে প্রস্তুত হয়ে আগে থেকে তৈরী। করে রাখা আলোচনার বিষয়বস্তু মুষ্টিমেয় ক্লায়েন্টদের সামনে পেশ করবার জন্য প্লাটফর্মে উঠল। আলোচনা সারতে সময় লাগল মাত্র দশ মিনিট। এরপর শ্রোতাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও কেনের উত্তরদান পর্ব। কিছুক্ষণ পরে এক সাদা চামড়ার ট্রাক চালক বলল–এ, এক চমৎকার পরিকল্পনা। সে কনট্রাক্ট ফর্মে সই করবার ইচ্ছা প্রকাশ করল। তারপর একে একে সমবেত জনতার প্রায় সকলেই ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ-নিরাপত্তার জন্য ইনসিওরেন্স পলিসি নিল। ছজন ভাববার অবসর নিল। পৌনে পাঁচটার সময় মিটিং-এর সমাপ্তি ঘটল।

কেনের দিকে এগিয়ে এলেন বার্নের্স, কেনের হাত ধরে বললেন-আমার আশঙ্কা, মিঃ ব্রান্ডন, আপনি নিশ্চয় নিরুৎসাহিত হয়েছেন। তবে আমার ধারণা এই চৌত্রিশ জনের সাড়া পাওয়াই আপনার পক্ষে বিরাট সাফল্য, কেননা ওরা আলোচনা পছন্দ করে না। এখানে উপস্থিত ব্যক্তিগণ আপনার সেলসম্যান হিসাবে কাজ করবে ওদের জাতির মধ্যে। আপনি অপেক্ষা করুন…অচিরেই ব্যবসা বাড়বে, আর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন।

তার সহযোগিতার জন্য কেন তাকে ধন্যবাদ জানাল, তার সঙ্গে করমর্দন করে কারেনকে সঙ্গে নিয়ে সূর্যস্নাত রাস্তায় এসে দাঁড়াল।

কারেনের উদ্দেশ্যে কেন বলল-আমার মনে হয়, সে ঠিকই বলেছে, তবে আমার কাছে এটা ফ্লপ ছাড়া কিছু নয়।

কারেনও তার প্রথম বক্তব্যের সঙ্গে একমত হল।বলল লোকটা কিন্তু দারুন স্মার্ট। তারা দুজনেই ঠিক করল, স্কুল মিটিং-এর ব্যাপারে একটা ভাল নজির খাড়া করতে হবে। কারেনের পরনে ছিল সাধারণ সৃতির পোষাক। আর কেন পরেছিল হাল্কানীল রঙের জ্যাকেট ও ধূসর স্ন্যাক্স, জ্যাকেটটির বিশেষত্ব এই যে, এতে গলফুলের বোম বিশেষ সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।

কেন কারেনের দিকে ভাল করে তাকাল, রোদে তাকে রোমাঞ্চকর নারীর মত দেখাচ্ছিল। আবেগ কম্পিত ঠোঁট, উত্তেজনায় তার পায়ের সঙ্গে নিতম্বের মৃদু কম্পন তার মনটাকে আরো বেশী উত্তেজিত করে তুললো সেই মুহূর্তে।

মাঝে পাঁচটা দিন ঝড়ের গতিতে কেটে গেছে, সেলস্ ডায়রেক্টার হ্যাঁয়ানস দুদুবার তাদের নতুন অফিস ঘুরে গেছেন। বেশ মজার লোক তিনি। কারেনের সঙ্গে কথাবার্তায় গদগদ ভাবটা যেন একটু বেশী প্রকাশ পেয়েছে। সে যেন বড় বেশী কারেনের আজ্ঞানুবর্তী। ঘুরে ফিরে তার সেই একই প্রশ্নটাইপরাইটার ও এয়ারকন্ডিশনার পেয়ে সে খুশি কিনা, প্রভৃতি। কিন্তু কারেন তাকে একদমই পাত্তা দেয় না।

রোববারের অপেক্ষায় থাকবার সময় সীভিউ রোডের প্রতিটি ভ্যারাইটি স্টোর ও দোকানে ঢুকে নিজের পরিচয় দিয়ে কেন তাদের কাছে আগুন ও দুর্ঘটনা জনিত ইনসিওরেন্সের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে তার মনে হয়েছে তাদের কাছ থেকে ভাল ব্যবসা আশা করা যায় না। কারণ, আগেই তারা অন্য ইনসিওরেন্স কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে গেছে এ ব্যাপারে। তবু সে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যেতে চায়। তাদের বন্ধুত্ব চায়। তারা তাকে বেশ ভাল সম্বর্ধনা জানায়। বেশীর ভাগ দোকানের মালিক তার কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, তাদের বর্তমান পলিসির মেয়াদ শেষ হলেই তারা প্যারাডাইস অ্যাসুরেন্স করপোরেশনের সঙ্গে পরে কথা বলবে।

কারেনের সঙ্গে খুব কম কথা হয়েছে একদিনে। কারণ তার মত কারেনও তখন কার্ড ইনডেক্স, চিঠি টাইপ করা, বিভিন্ন লোকদের সঙ্গে আলোচনা করবার কাজে ব্যস্ত ছিল তখন! এক হিসাবে ভালোই হয়েছে, কেন ভাবে মেয়েটির সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার হাত থেকে রেহাই পেয়ে গেছে সে। কিন্তু সব সময় তার মনে, বিশেষ করে রাতে বাড়ি ফেরার পর, তার মন কেবল আলোড়িত হয়েছে, মেয়েটির তীব্র যৌন চেতনার কথা মনে করে।

কেনের ছুটির দিন শনিবার ও রবিবার, শনিবার সে তার বাড়ির বাগানের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখে, সন্ধ্যাবেলায় সে কেটিকে নিয়ে সিনেমায় যায়, রেস্তোঁরায় নৈশভোজ সারে। এটাই তার শনিবারের রুটিন।শনিবার কারেন কি ভাবে কাটায় সে কথা জানার জন্য খুবই উৎসুক ছিলো কেন। সে এটুকুই জানতে পেরেছিল সে তার বাবা ও বাবার বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটায়।

রবিবার সকাল থেকেই কেটির মধ্যে দেখা গেছে এক অলস ভঙ্গিমা। কেটি কেনকে বারবার বলেছিল ফোর্ট লডারডেল যাবার জন্য। কেন বলেছিল কেটির ইচ্ছা পূরণ করবে সে।

এই সকল স্মৃতি তোলপাড় করতে গিয়ে কেন ঘড়ির দিকে তাকাল। চারটে পঁয়তাল্লিশ। ভাবতেই বিরক্ত হল সে, এক ঘণ্টার মধ্যে তাকে ফোর্ট লডারডেলে গিয়ে উপস্থিত হতে হবে আর সারাটা সন্ধ্যায় তাকে শালী ও ভায়রাভাই-এর সঙ্গে বিষণ্ণ অবস্থায় কাটাতে হবে। এই রকম অবস্থা চলবে মাঝরাত পর্যন্ত।

হঠাৎ কেনের সকল চিন্তার জাল ছিঁড়ে কারেন একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল–বাড়িতে তোমার কি এখন কাজ আছে? এখন কি তোমার হাতে সময় আছে?

কারেনের দিকে বিস্ময়ের চোখে তাকাল কেন। পালটা প্রশ্ন করল–আমার খুব একটা কাজের চাপ নেই। তবে আটটার আগে এক জায়গায় পৌঁছাতে হবে। কিন্তু তোমার হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?

এমনি কথার ছলেই জিজ্ঞাসা করলাম। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর কারেন বলল-আমার ধারণা এই মুহূর্তে তোমার কোথাও যাবার তাড়া আছে। তুমি কি এক ঘন্টা আমার জন্য খরচ করতে পারো?

কেন কাঁপা কাঁপা গলার উত্তর দিল–তোমার জন্য আমি কি করতে পারি?

তুমি ভালভাবে তাক লাগাতে পার? জিজ্ঞাসা করল কারেন–আমি আমার বীচের কেবিনে এখন যেতে চাই, সেখানে কতগুলো তাক লাগাতে হবে।

রসিকতা করে কেন জবাব দিল–তাক লাগানোই আমার কাজ, তোমার বীচ-কেবিন আছে জানতাম না। কেবল মাত্র উইকএন্ডের জন্য-সংক্ষেপে উত্তর দিল কারেন, জায়গাটা চমৎকার।

কথা শেষ, কেনের দিকে কারেন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। দুজনেই পরস্পরের দিকে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ, তারপরে কেনই ইতস্তুতঃ বোধ করে চোখ সরায়। কেটির কথা ভাবল সে, ইচ্ছা করল, কোন অজুহাত দিয়ে কারেনের সঙ্গ ত্যাগ করে পাটিতে চলে যেতে, কিন্তু পারল না সে কেটির তুলনায় উত্তেজনা শিহরণ জাগানো রোমাঞ্চকর হাসি, চোখের স্থিরদৃষ্টি সবকিছুই কেনকে উত্তেজিত করে তোলে। কারেন যেন তার সবকিছুই বিলিয়ে দিতে চায় আর কেনও তার সঙ্গ পেয়ে নিজের কামনার আগুন নেভাতে চায়।

কেনকে চুপ করে থাকতে দেখে কারেন বলল-তুমি বোধহয় এখন ব্যস্ত আছে? তাহলে অন্য সময়…..।

তার মুখের কথা শেষ হতে না হতেই কেন বলে উঠল আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই খুশী হয়েই। কিন্তু যন্ত্রপাতি গুলো তো বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে হবে।কথা বলতে বলতে তার ঠোঁট কাঁপছিল। দুজনেই সেটা বোধহয় অনুভব করতে পেরেছিল।

কারেন আশ্বাস দিয়ে বলল–আমার কাছে সবকিছুই রয়েছে। অসুবিধা হবে না। চল যাওয় যাক।

কেনের গাড়িতে এসে বসল করেন। তার গাড়িটার লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে একমাসে জন্যে। গত সপ্তাহে সে জোরে গাড়ি চালাতে গিয়ে পুলিশদের হাতে ধরা পড়ে। এখন সে ট্যাক্সি নিয়েই যাতায়াত করে।

কেন গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে তাদের গন্তব্যস্থল জানতে চাইল প্যাডালারস ক্ৰীক।

কেন বিস্মিত হল–ওটা হিপিদের কলোনি তো? কারেন মৃদু হেসে বলল তোমার আন্দাজ ঠিকই, তবে তাদের কলোনি থেকে আমার কেবিন প্রায় আধ মাইল দূরে। একঘেয়ে মনে হলে তাদের সঙ্গে মিলিত হই, ওদেরকে একটু খোঁচা দিই।

ওটা একটা স্টাফ কোয়ার্টার। চমৎকার জায়গা।

কথা বলতে বলতে একটি গলির শেষপ্রান্তে এসে থামল তারা। সামনে ট্রাফিক জ্যাম। ট্রাফিকের সবুজ আলোর দেখা পেয়ে কেন গাড়ি চালাতে শুরু করল। বাঁ দিকের রাস্তা পেরিয়ে এবার তারা হাইওয়েতে।

গাড়ি চালাতে চালাতে ভাবল কেটির কথা। তার ফোর্ট লডারডেলে যাওয়াই উচিত ছিল।  কারেন তার পাশে বসে আছে ভাবতেই তার দেহে একটা শিহরণ খেলে গেল। তার হাতের নিচে চেটোটা ঘামে ভিজে উঠেছে, গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে রাখতে অসুবিধা হচ্ছে। অপরদিকে কারেন বেশ আরাম করেই কেনের পাশেরসীটটাতে বসে আছে। পায়ের উপর পা রাখা ছিল। মাইল খানেক যাবার পর সে বলল–পরের মোড় এলে বাঁদিকে গাড়ি ঘুরিও।

গাড়ির গতি কমিয়ে আনল কেন। সামনে একটা মোড়ে পৌঁছে বাঁদিকের রাস্তায় গাড়ি ঘোরাল, রাস্তাটা সমুদ্রের দিকে চলে গেছে। সামনেই সারি সারি পাম গাছ। কারেনের নির্দেশে কেন এখানেই গাড়ি থামিয়ে দিল। গাড়ি পার্ক করে রাখার পর তারা কেবিন পর্যন্ত হেঁটে গেল। তখন অপরাহ্ন বেলা,সূর্যের তেজ বেশ প্রখর। আগে হাঁটছেকারেন ও তার পিছনে কেন। একটু থেমে সেকারেনের নিটোল গোল ও সুগঠিত নিতম্ব বেশ তারিয়ে তারিয়ে দেখল। তার ভঙ্গিমাও বেশ আকর্ষণীয়।

দূরে হিপিদের কলোনী থেকে গীটারের মৃদু সুর ভেসে আসছে। তারা এখন আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত। নির্জন বালিচর, দুধারে বড় বড় গাছ ঘন ভাবে রয়েছে। মাঝে মাঝে ফুলের বাগান এরকম এক নির্জন পরিবেশে কারেনের কামুক দেহ কেনের মনে আগুন জ্বালায় সে বেশ ভাল করে বুঝতে পারল যে, সে কেটির বিশ্বাসভঙ্গ করতে চলেছে। তবুও সে তার নিজের বিবেককে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করল–সে কেটিকে ভালবাসে। অন্য কোন নারীর স্থলাভিষিক্ত হতে পারবেনা। কারেনের জ্বালানো যৌন কামনার আগুন-এর কথা কেটি কখনোই জানতে পারবে না।

ঘন গাছের জঙ্গল পেরিয়ে একটি ফাঁকা জায়গায় এসে দাঁড়াল তারা, সামনেই পাইক কাঠের কেবিন, এক চিলতে বারান্দা, কারেন আঙ্গুল নির্দেশ করে বলল–আমরা এসে গেছি। তিনটি ধাপ পেরিয়ে বারান্দায় উঠে এল। ব্যাগ থেকে চাবিবার করে কেবিনের দরজা খুলল কারেন। তারা দুজনেই প্রবেশ করল ভিতরে। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ হল। এয়ারকন্ডিশন খোলা ছিল। সান ব্লাইন্ড নামানো ছিল। ফলে ঘরটার মধ্যে একটা অস্পষ্ট অন্ধকার ও আরামদায়ক ঠাণ্ডা অনুভূত হল।

কারেনের পাশে দাঁড়িয়ে চারিদিক তাকিয়ে দেখল কেন।

ঘরটা বেশ সাজানো। একটি বড় সোফা। তিনটি লাউঞ্জিং চেয়ার, টিভি সেট, ককটেল ক্যাবিনেট, চারটি চেয়ার সহ একটা ওভ্যাল টেবিল, আর একেবারে এক কোণাতে কিং সাইজের একটা ডিভান। একটা আদর্শ প্রেমকুঞ্জ হিসাবে উপযুক্ত। কাঁপা কাঁপা গলায় কেন জিজ্ঞাসা : করল–চমৎকার…কাজ করবার মত ভাল জায়গা বটে, তা তুমি তোমার তাকগুলো কোথায় লাগাতে চাও বলো?

কারেনের দৃষ্টি কেনের দিকে, হাসল সে, তারপর বলল–কেন, তুমি আর আমি বেশ ভাল করেই জানি, এখানে তাক লাগাবার কোন প্রয়োজন নেই। আমরা এখানে এসেছি যে কাজের জন্য সেটা করতে পারলেই আমরা আমাদেরকেই তাক লাগিয়ে দিতে পারব। আমি তোমাকে চাই কেন। আর তুমিও আমাকে চাও, চাও না? কারেন তার পোষাকের পিছন দিকের জিপারটা টেনে নিচের দিকে নামাতে সেটা তার পায়ের নিচে লুটিয়ে পড়ল, তার পরনে তখন কেবলমাত্র প্যান্টি। কেনের দিকে সে দুহাত বাড়িয়ে দিল।

ঘুম ভাঙ্গতেই অপরাধীর মতো ভীরু চোখ মেলে তাকলো কেন। চারিদিক অন্ধকার থিকথিক করছিল। প্রথমে সে ভাবল–তার নিজের বিছানায় শুয়ে আছে, তার পাশে কেটি। তারপরই তার : মনে পড়ল সে কোথায়।

অন্ধকার! কিছুই দেখা যাচ্ছে না। হাত বাড়াতেই পেল বেড সুইচ। সুইচ টিপতেই ঘরটা আলোয় আলোকিত হয়ে উঠল। তার পাশেই শুয়েছিল কারেন, সে তখন সম্পূর্ণ নগ্ন। তার লম্বা পা দুটি দুদিকে অনেকখানি ছড়ানো। এর ফলে তার দুই উরুর সংযোগস্থল অনেকখানি উন্মুক্ত ও স্পষ্ট। তার হাত দুটির নীচে স্তনযুগল ঢাকা পড়ে গেছে। কেন বিছানা থেকে নামার জন্য তার পা দুটো সরাতেই কারেনের ঘুম ভেঙ্গে গেল, চোখ মেলে তাকাল।

মেঝের উপর দাঁড়িয়ে কেন তার কব্জি ঘড়ির দিকে তাকাল-আট টা কুড়ি। খানিক আগে ঘটে যাওয়া হট সীনগুলো তার চোখের সামনে ভেসে উঠল এক এক করে। কারেন যেন তাকে মাকড়সার মত পেঁচিয়ে ধরেছিল, দীর্ঘ নিবিড় চুম্বনের স্পর্শ নগ্ন দেহের সর্বাঙ্গে। কারেন নিজের হাতে তার দেহ থেকে সব পোষাক খুলে দিয়েছিল। তাকে কিছুই করতে হয়নি। তার হাতের পুতুলের মত শুয়েছিল সে তার বিছানায়। কারেন তখন তার যৌন ক্ষুধায় প্রচণ্ড উত্তেজিত। তার দেহ থেকে সব কিছু নিঃশেষ করে নিংড়ে নিতে চাইছিল কারেন। কেন তার বন্য ইচ্ছার স্বপ্নেকখনো চিন্তাও করেনি, কারেন তাকে নিয়ে যা করেছে, বোধ হয় অন্য কোন নারী তা করতে পারে না। কারেনের জন্য তার সমস্ত যৌন আবেগ, উত্তেজনা সম্পূর্ণভাবে প্রশমিত হয়ে যায় তার নগ্ন দেহের তপ্ত আলিঙ্গন ও চরম মিলনের মধ্যে। কব্জি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সে ভাবতে শুরু করে, এখন পার্টিতে কেটির সঙ্গে মিলিত হতে গেলে সবাই তাকে সন্দেহের চোখে দেখবে। আর এর পরে গেলেও তো কথাই নেই।

কেন মৃদু চীৎকার করে বলে উঠল–সময় দেখ, আমাকে যেতেই হবে। কারেন জানতে চাইল–তোমার এই আতঙ্ক কিসের জন্যে? এ মিলন খুব ভাল লাগল, তাই না?–তার কণ্ঠস্বর নরম ও ধীর।

কেন তখন পোষাক পরছিল। এমন এক অন্যায় খেলা কেন তার মন থেকে মুছে ফেলতে চাইল। কারেন তখন শুয়েছিল বিছানায়। কারেনের নগ্ন দেহের দিকে তাকাতেই এক আকস্মিক পরিবর্তন অনুভব করল সে। মেয়েটি এক নিম্নস্তরের বেশ্যা ছাড়া আর কিছুনয়। বাজী পোড়ানোর অনুষ্ঠান শুরু হবার আগেই তাকে ফোর্ট লডারডেলে পৌঁছাতে হবে।

সে কারেনের দিকে তাকিয়ে বলল–আমাকে এখনই যেতে হবে। আমার স্ত্রী আমাকে আশা করছে।মাথা নিচু করে কারেন তার নগ্ন দেহটা ধনুকের মত বাঁকিয়ে হাসল।–তাহলে তোমাকে যেতেই হবে কেন? এত কাজ রেখো না কেন!

পোষাক পরা সম্পূর্ণ হলে সে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। মেয়েটির শান্ত কণ্ঠস্বর কেনকে দাঁড় করিয়ে দিল–কেন, তুমি তো আমাকে বিদায়-সম্ভাষণ জানিয়ে গেলে না?

মেয়েটির দিকে সে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল, তারপর বলল-আমার ওরকম করা উচিত হয়নি। আমরা তখন আমাদের হাতের বাইরে চলে গিয়েছিলাম।

ততক্ষণে বিছানা থেকে নগ্ন করেন উঠে দাঁড়িয়ে বলল–কখনও দুঃখ প্রকাশ করো না কেন, সবসময় সুযোগ নেবার চেষ্টা করবে।

তার কথা কেন শুনছিল না, তার নগ্ন দেহও কেনের মনে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে নি। তার তখন একটাই চিন্তা ফোর্ট লডারডেলে পৌঁছান।কারেন তার ড্রয়ার থেকে একটা শক্তিশালী ফ্ল্যাশ লাইট দিল কেনকে,–বাইরে ভীষণ অন্ধকার। তোমার গাড়ি খুঁজে পেতে এটা সাহায্য করতে পারে। ফ্ল্যাশ লাইটটা দেবার সময় কারেনের হাতের স্পর্শ লাগল, তার হাতে প্রেমিক হিসাবে তুমি অপূর্ব।

কথা শেষ না হতেই কেন ফ্ল্যাশ লাইটটা তার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে কারেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। তারপর ঘাস ও গাছপালার মধ্যে সরু পথ দিয়ে ছুটে চলল।

কিছুটা যাবার পরই হঠাৎ তার নাকে এল একটা তীব্র গন্ধ। তার হাতে ফ্ল্যাশ লাইটটা জ্বলতে থাকে তখনও। প্রথমে ভাবল কোন জন্তু জানোয়ারের মৃতদেহের গন্ধ হবে হয়ত। চলার গতি সে কমিয়ে দিল। ফ্ল্যাশ লাইটের আলোয় দেখা গেল একটি নারীর মৃতদেহ। তার বুকটা কেঁপে উঠল, মুখে হাত দিয়ে স্থির চোখে তাকালো সেদিকে। তারপর হিম শীতল চোখ দুটো সেদিক থেকে ফিরিয়ে নিল।

মেয়েটির দেহ সম্পূর্ণ নগ্ন। তার দেহের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক ক্ষতের চিহ্ন। পেট থেকে নাড়ি ভুড়ি বেরিয়ে গিয়ে রক্তমাখা অবস্থায় পড়েছিল। এক ভয়ঙ্কর বীভৎস দৃশ্য।

বীভৎস দৃশ্য আর তার তীব্র গন্ধে বমি হওয়ার উপক্রম। সেদিক থেকে সে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ধীরে ধীরে পিছোতে শুরু করে। একটু দাঁড়িয়ে পড়ে বমি করে। মুখে ফুটে উঠেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। তারপর ধীরে ধীরে ফিরে এল কেবিনে।

তার ঐরকম মুখমণ্ডলও ভয়ার্ত দৃষ্টি অনুসরণ করে কারেন উৎকণ্ঠা ভরা কণ্ঠে প্রশ্ন করল–কি হয়েছে?

কারেনের কণ্ঠস্বরে কেন যেন সম্বিত ফিরে পায়। বাইরে একটি মেয়ের মৃতদেহ। কোন বিকৃত মস্তিষ্কের লোক তাকে খুন করে থাকবে। উঃ!কীবীভৎস দৃশ্য!বলতে বলতে সে লাউঞ্জিং চেয়ারে বসে পড়ল।

কারেন ততক্ষণে পোষাক পরা সম্পূর্ণ করে কেনের সামনে এসে দাঁড়াল। এসব তুমি কি বলছো? কেন উত্তেজনায় চীৎকার করে বলে উঠল–একটি মেয়েকে কুপিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। এখনি আমাদের পুলিশকে খবর দেওয়া উচিৎ।

তার মুখে ঘাম ও কাঁপা কাঁপা হাত দেখে কারেন ককটেল ক্যাবিনেটের সামনে এগিয়ে গিয়ে তার জন্য গ্লাস ভর্তি স্কচ নিয়ে এল। ঢকঢক করে স্কচ গলাধঃকরণ করে কার্পেটের ওপর খালি গ্লাসটা রেখে দিল কেন। পেটে অ্যালকোহল পড়াতে তার শরীরটা একটু গরম ও চাঙ্গা হল।

কারেন তাকে বোঝাবার চেষ্টা করল–খুন হয়েছে বুঝলাম কিন্তু আমাদের এব্যাপারে কিছু করার নেই। কেই বা তোয়াক্কা করে! এখন আমি বলি কি, তুমি তোমার স্ত্রীর কাছে ফিরে যাও!

 কেন বলল–আমি আমার গাড়ির কাছে পৌঁছাতে পারব না, ঐ ভয়ঙ্কর দৃশ্য পেরিয়ে।

কারেন তার আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। বীচ এর পথ হয়ে যেতে পার একটু দূর হবে এই যা কথা বলতে বলতে গায়ের আবরণ খুলে ফেলে আলমারি থেকে সাঁতারের পোষাক বার করে নিয়ে পরে নেয়।-আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি। কেন তার কব্জি ঘড়ির দিকে তাকাল। তখন পৌনে এগারোটা। অনেক দেরী হয়ে গেছে। কোর্ট লডারডেলে পৌঁছান যাবে না।

কারেন সান্ত্বনা দিয়ে বলল-শক্ত হওয়ার চেষ্টা কর কেন। তোমার স্ত্রীকে ফোন করে বল তোমার গাড়ি মাঝপথে বিকল হয়ে পড়েছে। তারপর বাড়ি ফিরে যাও!

এরপর তারা দ্বিতীয়বার স্কচ গলাধঃকরণ করে বাড়তি শক্তি সঞ্চয় করল। কারেন রিসিভারটা এগিয়ে দিলে কেনভায়রাভাইকে ফোনকরল।কারেনের বলে দেওয়াকথাগুলো সেআওড়ে গেল।

জ্যাক অর্থাৎ তার ভায়রাভাই জানাল–এখনও বাজি পোড়ানো শুরু হয়নি। তুমি তাড়াতাড়ি চলে এস। আমরা এখানে সকলেই মাতাল হয়ে পড়েছি, তা না হলে তোমাকে আনবার জন্য আমি লোক পাঠাতাম।

কেন আশ্বাস দিয়ে বলল–আমি হাইওয়েতে আটকা পড়েছি। ইঞ্জিন, মেরামত হয়ে গেলে তোমাদের ওখানে অবশ্যই পৌঁছে যাব।

কথাবার্তা শেষে কেন রিসিভার নামিয়ে রাখল, কারেনের দিকে চেয়ে, বলল–সেই মৃতদেহটা…পুলিশকে খবর দেওয়া উচিত।

 কারেন তার বুদ্ধিলোপের জন্য চীৎকার করে বলে উঠল–কেন! তুমি কি আজে বাজে বকচ্ছ। পুলিশ নিশ্চয়ই জানতে চাইবে তুমি এখানে কি করছিলে?তুমি আমার এখানে তাক লাগাবার জন্য এসেছিলে একথা কেউ বিশ্বাস করবেনা। তুমি আমার কেবিনে কয়েক ঘণ্টা কাটিয়েছ, একথা জানতে পারলে আমার বাবা নিশ্চিত হবেন, আমার কুমারীত্ব আর নেই, সেক্ষেত্রে তুমি তোমার চাকরী খোয়াবে, আর আমি কেবিনটা হারাব। অহেতুক পুলিশকে ডেকে ঝামেলা করবার দরকার নেই। চুপচাপ এখান থেকে চলে যাওয়াই ভাল।

স্কচের নেশাটা এতক্ষণে কেনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, কেন ভাবল, কারেন ঠিকই বলেছে, খুনের ব্যাপারে ওর কিই বা করার আছে! আর স্টার্নউড যদি জানতে পারে যে, কেন তার মেয়ের দেহ উপভোগ করেছে, তাহলে তিনি যে তাকে শুধু চাকরী থেকে ছাঁটাই করবেন তাই নয়, ব্ল্যাকলিস্টে তার নাম তুলে দিতে পারেন। ফলে সে ভবিষ্যতে আর কোন ইনসিওরেন্স কোম্পানীতে চাকরী পাবে না। কেটিও জানতে পারবে! হায় ঈশ্বর! কি মুশকিলেই না পড়লাম!

কারেন ধৈর্য হারিয়ে ফেলল, কেনকে আসতে বলল তার সঙ্গে।

কেন নিরুপায় হয়ে তাকে অনুসরণ করল। খানিকটা পথ ছুটে, খানিকটা হেঁটে, সমুদ্রের ধারে বীচের ওপর এল। দুর্ঘটনার স্থানটি এড়িয়ে অন্য পথ দিয়ে ঘুরে অগ্রসর হয়ে একটা বাঁক ঘুরতেই তারা একটা লোকের মুখোমুখি হল। লোকটা তাদের দিকেই ছুটে আসছিল দ্রুতগতিতে। পূর্ণ চাঁদের আলোয় লোকটাকে স্পষ্ট দেখা গেল। তার গড়ন বেশ লম্বাটে, মুখ ভর্তি দাঁড়ি গোঁফ, পরনে জীনস। কাঁধে লোমশ চামড়ার ব্যাগ ঝোলানো। কাঁধ ভর্তি চুল। তার মুখে পুরু দাঁড়ি গোঁফ থাকার জন্য চোখ আর নাক ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

লোকটা থামলো। তার গলার আওয়াজ শোনা গেল–কে, কে ওখানে? তাদের দিকে। লোকটি অদ্ভুতভাবে তাকাতে লাগল, কেন অস্বস্তিবোধ করল। কারেনই প্রথম কথা বলল-হাই! কেন ভয়ে, আড়ষ্ট হয়ে গেল, তার শরীরটা অসম্ভব কুঁকড়ে গেল তবুও হাসবার চেষ্টা করল। লোকটির আন্দাজ বছর বাইশ বয়েস হবে। সে প্যাডলারস ক্রীক কোন দিকটা জানতে চাইল। কারেন দিক নির্দেশ করে বলল–সোজা চলে যাও, আট মাইল হবে, তারপরই কারেন হাঁটতে শুরু করল ও কেন তাকে অনুসরণ করে চলল। হাঁটতে হাঁটতে কেন মন্তব্য করল-ঐ লোকটা জানতে পারল আমরা এখানেই ছিলাম উদ্বেগ ভরা কণ্ঠস্বর। কারেন তাচ্ছিল্যের সঙ্গে জবাব দিল–ঐ লোকটা, আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজেকে চিনতে পারবে না।

কেন পিছন ফিরে তাকাল, দেখল লোকটি তখনও দাঁড়িয়ে। হাত নেড়ে কাকে যেন ইশারা করল, তারপর হিপি কলোনির দিকে এগিয়ে গেল। কেন ও কারেন গাড়ির কাছে পৌঁছে গেল। কারেন বলল–ঐ দেখ, তোমার গাড়ি। কেনের খুব নিকটে এসে দাঁড়াল। স্বপ্নালু চোখে কেনের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ দুহাতে তার গলা জড়িয়ে ধরে ফিসফিসিয়ে বলল–একটা চমৎকার সন্ধ্যা কাটিয়ে এলাম, তাই না?

কারেনের উষ্ণ স্পর্শ তার কাছে কাটার মত বিধল, কেন তার আলিঙ্গন শিথিল করে দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলল।

কারেন হেসে বলল, সবাই বলে থাকে–দেহ-মন তৃপ্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর একটু বিস্বাদ ঠেকে। তবে পরে সব ঠিক হয়ে যায়। হয়তো তোমারও তাই হবে, কাল নয়তো পরশু। কেনের চিবুকে হাত বুলোয় কারেন আদর করবার ভঙ্গিমায়। তারপর সে এগিয়ে যায় সমুদ্র তীরের দিকে হাসতে হাসতে।

.

এর পরের চিত্র প্যারাডাইস সিটিপুলিশ হেডকোয়ার্টারের ডিটেকটিভ রুম। রাত এগারোটা বাজতে কয়েক মিনিট বাকী। রুমটির মধ্যে একটা শান্ত ভাব বিরাজ করছে।

রুমটিতে বসে রয়েছে ডিটেকটিভ থার্ড গ্রেড ম্যাক্স জ্যাকবি আর তার অপর প্রান্তে বসে রয়েছে ডিটেকটিভ ফার্স্ট গ্রেড টম লেপস্কি তার ডেস্কে ক্রস ওয়ার্ড পাজল নিয়ে ব্যস্ত। আর জ্যাকবি নিচু গলায় ফরাসী ভাষায় আবৃত্তি করছিল। তার আকাঙ্খা হল ছুটিতে প্যারিসে গিয়ে ফরাসী ভাষাটা রপ্ত করা। লম্বা পাতলা চেহারার লেপস্কি সবেমাত্র প্রমোশন পেয়েছে। এখন তার আকাঙ্খ হল পুলিশ চীফ হওয়া।

লেপস্কির ডেস্কের টেলিফোনটা বেজে উঠল। দূরভাষের অপর প্রান্তের কণ্ঠস্বর শুনে সেবুঝতে । পারল–এটি তার স্ত্রীর কণ্ঠস্বর। পুলিশী মেজাজের একটু পরিবর্তন ঘটিয়ে সে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে লাগল। অপরদিকে তার স্ত্রী গলা ফাটিয়ে চীৎকার করতে লাগল–আমার গাড়ির চাবি কোথায়? লেপস্কি যেন আকাশ থেকে পড়ল। সে তার স্ত্রীকে যথেষ্ট ভালবাসে, আবার তার রুক্ষ ব্যবহারে সে বেশ ভীতও হয়। সে তার স্ত্রীকে বোঝাবার চেষ্টা করল সে গাড়ির চাবি সম্পর্কে কিছুই জানে না, কিন্তু পরমুহূর্তেই তার পাল্টা অভিযোগ শুনে সে তার কোটের পকেটে হাত দিয়ে দেখল চাবিটা পকেটেই রয়েছে। লেপস্কি স্ত্রীর গাড়ির চাবিটা জ্যাকেটের পকেট থেকে বার করে একবার দেখে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পকেটে চালান করে দিল। তবুও সে মনে জোর নিয়ে তার স্ত্রীর বক্তব্যকে প্রতিরোধ করতে লাগল, বলল-কুশানের নীচটা দেখেছ? তারপর গলার স্বর নামিয়ে বলল–ঠিক আছে, তুমি একটা ট্যাক্সি নিয়ে নিও। ভাড়াটা পরে তোমায় দিয়ে দেব আর চাবির গোছাটা বাড়ি গিয়ে আমি খুঁজে দেখব। তার স্ত্রী তখন রেগে ছিল, গলার স্বরও উচ্চ। শোন লেপস্কি মিথ্যা অজুহাত দিয়ো না, চাবি তোমার জামার পকেটে রয়েছে এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত। কথা শেষ করে রিসিভারটা নামিয়ে রাখল।

রিসিভার নামিয়ে রেখে লেপস্কি ফিরে আসে তার ডেস্কে। অতক্ষণ লেপস্কি ও তার স্ত্রীর কথাবার্তা একমন দিয়ে শুনে জ্যাকবি নিজের মনে মনে মজা লুটছিলো। সে এবার নিজ মনে ফরাসী সাহিত্য চর্চা শুরু করল। ওদিকে লেপস্কি ছক কষতে লাগল ঘরের ঠিক কোন স্থানটিতে সে তার চাবিটা লুকাবে। নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্তও হল।

কিছুক্ষণ নিরবতা। ঠিক তারপরেই একটি ফোন এল জ্যাকবির ডেক্সে। সে ফোন তুলে–জ্যাকবি ডিকেটটিভের ডেস্ক বলে গেল দ্রুত।

ওধার থেকে পুরুষ কণ্ঠে শোনা গেল–কিছুটা ভূমিকা করার পর একটি অত্যাশ্চর্য জনক খবর।প্যাডলারস ক্ৰীক। গাড়ি চলার পথে প্রথম ঘন ঝোঁপের কাছে একটা বাজে ঘটনা। বুদ্ধি দিয়ে ব্যাপারটা বোঝবার ও অনুসন্ধানের চেষ্টা করুন।কথাটা বলার পরেই লাইনটা কেটে গেল। জ্যাকবির মুখটা কঠিন হয়ে গেল। লোকটির পরিচয় সে পায়নি, অমন বাঁধানো কথা তাকে চিন্তিত করে তুলল। জ্যাকবি ঘরের অপর প্রান্তে বসে থাকা লেপস্কিকে টেলিফোনে পাওয়া সংবাদটি দিল। কোন সূত্র না পেয়ে বলল-হয়ত কোন ধোঁকাবাজ। কিন্তু লেপস্কি এতে রহস্যের গন্ধ পেয়ে সে তৎক্ষণাৎ রিসিভারটা তুলে নিয়ে যোগাযোগ রুমে ফোন করল।

হ্যারী! প্যাডলার ক্রীক ডিস্ট্রিক্ট-এর ভার কার ওপর আছে?

উত্তর পাওয়া গেল–স্টিভওজো। লেপস্কি তাদেরকে ঐ অঞ্চলের ঝোঁপ ঝাড়, রাস্তাঘাট সন্ধানী দৃষ্টিতে দেখতে বলল।

রিসিভার নামিয়ে রেখে একটা সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করে জ্যাকবিকে এই ব্যাপারটি সম্পর্কে একটি রিপোর্ট তৈরী করে নিতে বলল।

জ্যাকবিও তার টাইপরাইটারে রিপোর্ট টাইপ করতে থাকে। ওদিকে লেপস্কি ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে লাগল ফোনের অপেক্ষায় ও পরবর্তী কার্য সম্পর্কে ভাবতে লাগল।

কুড়ি মিনিট এভাবেই চলল। তারপর একসময় ফোনটা বেজে উঠল–স্টিভ কথা বলছি। সত্যি এখানে একটা বিশ্রী ঘটনা ঘটে গেছে। একটি মেয়েকে কুপিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে।

খবর শুনে লেপস্কি স্তম্ভিত। অনেকদিন পরে দি প্যারাডাইস সিটিতে একটা খুন হল। সে স্টিভকে মৃতদেহের কাছে থাকবার আদেশ দিল, জানিয়ে দিল এখনি সে রওনা হচ্ছে।

চীফ অফ পুলিশ টেরেল, সার্জেন্ট জো বেইগলার, হোমিসাইডের সার্জেন্ট ফ্রেড হেস; লেপস্কি ও আরোও তিনজন গোয়েন্দাকে নিয়ে চারটি গাড়ি ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে যখন রওনা হল, তখন রাত একটা পনেরো মিনিট। এরপর সেখানে এল ডঃ লুইস, পুলিশ মেডিক্যাল অফিসার ও দুজন সহকারী চিকিৎসক তাদের সঙ্গে এল একটি অ্যাম্বুলেন্স। একজন ফটোগ্রাফার ডেডবডির ফটো তুলল কিন্তু বীভৎস গন্ধ ও তার দৃশ্য দেখে সে পাশের ঘন-ঝোপে ছুটল বমি করবার জন্য। মৃতদেহ ভাল করে নিরীক্ষণ করবার পর তা ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হল।

পুলিস চীফ টেরেল ডাক্তার লুইসকে জিজ্ঞাসা করে জানলেন, মেয়েটিকে প্রথমে মাথায়। আঘাত করা হয়, পরে ধারাল অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়েছে। এরপর তারা কিছু আলোচনার পর ডাঃ, বেইগলার ও টেরেল নিজ নিজ স্থানে ফিরে গেলেন।

যাবার পূর্বে টেরেল মোটা বেঁটে চেহারার হেসের কাছে এলেন। এই খুনের তদন্তের ব্যাপারে সহযোগিতা করবার জন্য প্রস্তাব রাখলেন।

লেপস্কি, ডাস্টি ও হেস ঠিক করল–তারা হিপি কলোনিতে একবার জিজ্ঞাসাবাদ করবে মেয়েটির সম্পকে। প্রথমেই তারা অদূরে বালির ওপরে বসে থাকা ফটোগ্রাফার টেরির কাছে চলল ফটো সংগ্রহ করতে।

টেরি যুবক বয়সী, তবে ফটো তোলবার ক্ষেত্রে বেশ অভিজ্ঞ। প্যারাডাইস মিসিং স্কোয়াডে মাত্র মাস ছয়েক হল সে ঢুকেছে। সে ঐখানে বসে বসে মাথায় হাত দিয়ে ফটোগুলোর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে যেন কি বলছিল।

তারা তার কাছে এলে, মেয়েটির মুখের তিনটি ফটো কাঁপা হাতে সে এগিয়ে দিল লেপস্কির দিকে।

বলল–জেসাস! ওঃ কি ভয়ঙ্কর! লেপস্কি তার হাত থেকে প্রিন্টগুলো নিয়ে চাঁদের আলোয় নিরীক্ষণ করতে করতে তাকে জিজ্ঞাসা করল–এর থেকে খারাপ দৃশ্য তুমি কখনো দেখোনি?

মেয়েটি দেখতে খুব সুন্দরীনয়। পাতলা। ছোট ছোট চোখ। কঠিন মুখ। এরপর তারা গাড়িতে উঠে বসল। লেপস্কির ঠিক পাশেই বসল ডাস্টি। ডিটেকটিভ থার্ড গ্রেড ডাস্টিলুকাস ভালো বক্সার। পুলিশ বক্সিং টিমে সেরা বক্সার সে। বলিষ্ঠ চেহারা, বয়স প্রায় চব্বিশ। শক্ত সাদা বালির উপর। দিয়ে সে গাড়ি চালাতে থাকল যতক্ষণ না টেন্ট ও কেবিনের আলো দেখতে পেল।

একজায়গায় এসে লেপস্কি গাড়ি থামাল। সেখান থেকে তারা হাঁটতে শুরু করল। দূর থেকে গীটার ও ড্রামের সুর ভেসে আসছে। একটি লোক সেই সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গান গাইছিল। সামনে ঝোঁপঝাড় দেখে লেপস্কি বিরক্তি প্রকাশকরেবলল–মেয়র হেডলির এসকলঅঞ্চলেনজর রাখা উচিত ছিল, শহরের তুলনায় এই অঞ্চল আরামদায়ক, পরিচ্ছন্ন থাকলে আরো ভাল লাগত।

বালির উপর প্রায় জনা পঞ্চাশ ছেলেমেয়ে বসেছিল। সকলেই ষোল-পঁচিশ বছরের মধ্যে। বেশির ভাগ যুবকের মুখে দাড়ি গোঁফ ভর্তি, কয়েক জনের চুল কাঁধ ছুঁইছুঁই। মেয়েদেরও পরনে প্রায় একই পোষাক–জীনস, টি-শার্ট, চুলগুলো ছেলেদের মত ছাঁটা ও নোংরা। যে লোকটা গান গাইছিল রীতিমত লম্বা, রোগাটে চেহারা, তার মুখ আর মাথা ঘন চুলে ঢেকে গিয়েছিল, কমলালেবুর একটা ক্রেটের উপর বসেছিল। লেপস্কি ও ডাস্টিতাদের দিকে এগিয়ে গেল। তাদের দেখে রোগা লম্বা যুবকটা এগিয়ে এল, নিজের পরিচয় জানাল। তার নাম মিশকালো,এই ক্যাম্পটা, সে চালায়। লেপস্কিরাও তাদের নিজস্ব পরিচয় দিল।

মিশকালো তাদের আগমনের হেতু জিজ্ঞাসা করল। লেপস্কি তার হাতে তিনটি পোলারয়েড প্রিন্ট তুলে দিল। মিশকালো প্রিন্ট হাতে গ্যাসের আলোর কাছে সরে গেল। গভীর মনোযোগ দিয়ে সেগুলো দেখার পর লেপস্কির দিকে এগিয়ে এসে বলল–আমি মৃত মেয়েটিকে চিনি, এর নাম জেনি ব্যান্ডলার।

সকলেই তখন উঠে দাঁড়িয়েছিল। মেয়েটি মৃত শুনে সকলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

লেপস্কি বলল-হ্যাঁ মৃত সে। মেয়েটিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। মিশকালো প্রিন্টগুলো ফেরৎ দিল। মেয়েটির পরিচয় প্রসঙ্গে বলল গতকাল রাতে সে এখানে আসে, বলেছিল মিয়ামিতে একটা চাকরীর অপেক্ষায় রয়েছে। এখানে মাত্র কয়েকদিন থাকবে বলেছিল। তার মৃত্যুতে আমি খুবই দুঃখিত।

লেপস্কি বলল–তোমরা তাহলে মেয়েটিকে সকলেই চেন। কথা বলতে বলতে সে বালির ওপর বসে পড়ল। ডাস্টিও তাকে অনুসরণ করল। এক ফাঁকে মিশকালো তাদেরকে আহ্বান জানাল মাংসের কচুরি খাবার জন্য। লেপস্কি ও ডাস্টি রাজী হয়ে গেল খাবার জন্য। একটা মোটা-সোটা ধরনের মেয়ে আগুনের উপর রাখা প্যান থেকে দুটো গরম কচুরি কাগজে মুড়ে লেপস্কির হাতে তুলে দিল ডাষ্টির সঙ্গে লেপস্কিইয়ার্কি মারতে লাগল–ডাস্টিতুমি মোটা হয়ে গেছ, এসব খেয়ো না। লেপস্কি কচুরিতে এক কামড় দিয়ে বস্তুটির প্রশংসা করতে লাগল আর ভাবতে লাগল ক্যারনকে বলবে এরকম রান্না করতে।মিশকালো প্রসঙ্গ পাল্টে জিজ্ঞাসা করল–মেয়েটিকে কে খুন করেছে? লেপস্কিও এবার ফিরে এল প্রসঙ্গে–তাহলে গতকাল রাতে সে এখানে আসে, আর মিয়ামি থেকে । একটা চাকরীর আশায় অপেক্ষা করছিল সে…এইতো? লেপস্কি জানতে চাইল, সে কোন নির্দিষ্ট চাকরীর কথা বলেছিল কি?

মিশকালো তার দলের সদস্যদের সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে, লেপস্কিদের খাবার পরিবেশক মোটা মেয়েটি বলল–মেয়েটি বলেছিল, সে নাকি প্রমোদতরীর ক্লাবে কাজ করত। কিন্তু আমি তার কথা বিশ্বাস করিনি, কেননা মেয়েটির হাবভাব দেখে মনে হয়েছিল সে একটি হকার হওয়া ছাড়া, তার অন্য কোন যোগ্যতা থাকতে পারে না।

লেপস্কি মনে মনে ভাবল মেয়েটি ঠিকই বলছে হয়ত। তারপর মেয়েটির পরিচয় জানতে চাইল। মিশকালো মেয়েটির হয়ে বলল-ওর নাম কেটি হোয়াইট, এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা, রান্নার কাজ দেখাশোনা করে। লেপস্কি জানতে চাইল মেয়েটি সঙ্গে কিছু এনেছিল কি না? কেটি উত্তরে বলল–মেয়েটির সঙ্গে একটা ঝোলাব্যাগ ছিল, সেটা ওর কেবিনেই পড়ে আছে। ওটা আমার দরকার–একটু থেমে আবার বলল লেপস্কি-রাতে কি হয়েছিল সে সম্পর্কে কিছু বলতে পার? কেটি একটু পরে মুখ খুলল-সে বেড়াতে যাবে বলেছিল, আমাকেও সঙ্গে যাবার জন্য বলেছিল, কিন্তু আমি তাকে বিশেষ পছন্দ করতাম না, কেননা সে অত্যন্ত ধর্মান্ধ মেয়ে ছিল। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করতাম কিন্তু তার মুখ ভাল ছিল না। তাই সে একা একাই বেড়াতে বেয়োয় প্রায় সাতটা নাগাদ। লেপস্কি অন্যদের জিজ্ঞাসা করল-বেড়াবার সময় তাকে কেউ দেখেছিল কিনা?

সকলেই সমস্বরে বলে-না।

লেপস্কি বলতে লাগল–অতএব সে একা বেরোয়, গণ্ডগোলে পড়ে, মাথায় আঘাত পায়, আর তার পেটের নাড়ি-ভুড়ি ছিঁড়ে বার করা হয়।

 তারপর সকলেই চুপ। একটা নীরব পরিবেশ, সবাই মেয়েটির অমন দুর্ভাগ্যের জন্য মর্মাহত। লেপস্কি তাদের সকলকে সাবধান করে বলল–মেয়েটির আততায়ী হয়ত নিকটেই রয়েছে, তাই তোমরা কেউ একা বেরোবে না।

লেপস্কি এরপর মিসকালোরকাছে জানতে চাইল–এখানকার কাউকে কি এরকম জঘন্য কাজ করার জন্য সন্দেহ করা যেতে পারে?দৃঢ়স্বরে মিশকালো জানাল-না। লেপস্কি তার কথা বিশ্বাস করল, জিজ্ঞাসা করল–এখানে কি কোন নবাগত আছে? প্রতুত্তরে মিশকালো বলল-কয়েক ঘন্টা আগে একটি অচেনা লোক-লু-বুন–একটা নিজস্ব কেবিন ভাড়া করেছে। তার বেশ টাকা আছে বলেই মনে হয়। সে জ্যাকসন ভিলা থেকে এসেছে এখন বোধহয়, তার কেবিনেই ঘুমাচ্ছে। লেপস্কি খাবার শেষ করে উঠে দাঁড়াল, বলল–সে লুবুনের সঙ্গে কথা বলতে চায়। তারপর, মিশকালো, লেপস্কি ও ডাস্টি বালির উপর দিয়ে হেঁটে কিছুটা দূরে, যেখানে কাঠের দশটি ছোট ছোট কেবিন রয়েছে, সেখানে গিয়ে দাঁড়াল, যেতে যেতে মিসকালে বলল–মিঃ লেপস্কি আমি চাই না এখানে কোন গণ্ডগোল বাঁধুক। দুবছর আমি ক্যাম্পটা চালাচ্ছি, কোন সমস্যা দেখা (দেয় নি।) আর মেয়র হেডলি আমাদের সমর্থন করে নিয়েছেন। একসময় সে আঙুল তুলে লুবুনের কেবিনটা নির্দেশ করল।আপনারা গিয়ে কথা বলুন, আমি এখানে অপেক্ষা করছি। লেপস্কি চাইছিল–মিশকালো বরং লু-বুনকে জাগিয়ে তুলে জানাক, ডিকেটটিভরা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। প্রস্তাবটা সে মিশকালোর কাছে রাখল, কিন্তু মিশকালো সম্মত হল না। সে বলল–আপনারা নিজের চেষ্টা করে সুযোগ নিন না?বলে দাঁত বের করে হাসল–আমি তো দেখিয়ে দিলাম,এখনো আমি নৈশভোজ সারিনি। তাই আমি চললাম।তারপর সে লেপস্কির পাশ দিয়ে তার ক্যাম্পের দিকে ফিরে চলল।

ডাস্টির দিকে ফিরে লেপস্কি বলল–এটা আমাদের একটা মূল্যবান প্রচেষ্টা কি বল?

ডাস্টি তৎক্ষণাৎ বলল–কিন্তু লোকটা নিশ্চয়ই একেবারে বোকা নয়? লেপস্কি তার হোলস্টার থেকে পয়েন্ট থারটি এইট স্পেশ্যাল বার করল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কেবিনের দিকে এগিয়ে গেল, একটু ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে গেল, বোধহয় ভেজানো ছিল। ট্রেনিং প্রাপ্ত ডাস্টি মেঝের উপর হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে তার হাতের রিভলবার দিয়ে পিছন থেকে লেপস্কিকে গার্ড করল, যাতে তার কোন ক্ষতি না হয়।

ঘরে ঢুকতেই একটা নোংরা দুর্গন্ধ নাকে এল তাদের। দেওয়ালে, পিঠ করে এগিয়ে গেল, তার হাতের রিভলবার উদ্যত। এবার অন্ধকারে তাদের চোখ সয়ে এল। এতক্ষণে খাটের ওপর শুয়ে থাকা লোকটা উঠে বসেছে। সম্পূর্ণ নগ্ন, মুখ ভর্তি দাড়ি-গোঁফ। লেপস্কি বাজখাই গলায় বলল–নড়বে না, আমরা পুলিশের লোক।

যুবকটি নোংরা চাদর দিয়ে তার কোলটা ঢেকে নিল। তারপর লেপস্কির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-আমার সঙ্গে আপনাদের কি দরকার থাকতে পারে?

লেপস্কি এবার তার হাতের অস্ত্র হোলস্টারে ঢুকিয়ে রাখল তারা নিশ্চিন্ত লোকটির হাতে কোন অস্ত্র নেই, ডাস্টিও তার হাতের অস্ত্র হোলস্টারে ঢুকিয়ে রাখল।

লেপস্কি প্রথমেই তার নাম জিজ্ঞাসা করে জানতে চাইল, কখন সে এখানে এসেছে? উত্তরে লোকটি বলল-লু-বুন। এখানেনটা পাঁচ মিনিটের সময় আমি এই কেবিনটা বুক করেছি। আপনারা কি আমাকে নিশ্চিন্তে একটু ঘুমাতেও দেবেন না। কি হয়েছে বলুন তো?

লেপস্কি তার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল-তা তুমি কিভাবে এখানে এলে? কোন পথ দিয়ে? সমুদ্রতীরের বীচের পথ দিয়ে। রাস্তার উপর একটা বাধা পেয়ে আমি আমার পথ বদলাই, নিচে সমুদ্র তীরের পথ ধরে চলে আসি।এবার লেপস্কি আসল কথায় এল–তার কণ্ঠস্বর শান্ত ও সংযত।-দ্যাখো লু, একটা খুনের কেসে আমরা তদন্ত করতে এসেছি। খেয়াল করে দ্যাখো, তুমি পথে কিছু দেখতে এবং শুনতে পেয়েছিলে কি? রাস্তায় প্রথম ঘন-ঝোঁপের সামনে একটা মেয়ের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়, সেই পথ দিয়ে তুমি যাওনি? খুনের কথা শুনে বুনের চোয়াল দুটি শক্ত হয়ে উঠল। সে বলল–আপনার অনুমান ঠিকই, আমি ও পথে পা মাড়াইনি, ও ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। লেপস্কি জানতে চাইল–তোমার আসার সময় মেয়েটি খুন হয়েছিল। তুমি কি আসার সময় কাউকে দেখতে পেয়েছিলে বুন? এবার সে তার মুখটা অন্য দিকে ঘোরায়, কিছুক্ষণ দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাত ভাবে, তারপর বলে–আমি আসার পথে কাউকে দেখিনি, আর কোনও শব্দ শুনিনি। তার হাব-ভাব দেখে লেপস্কি বুঝতে পারল যে, সে মিথ্যা কথা বলছে। সে চিন্তা করে দেখল–মেয়েটিকে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, হত্যাকারীর পোষাকে নিশ্চয়ই রক্তের দাগ লেগে থাকবে। তাই লেপস্কি তার পোষাকটা দেখতে চাইল, কিন্তু বুন তার পোষাক সহজেই দেখাতে চাইলনা, সে বলল-আগে .. আপনারা সার্চ ওয়ারেন্ট অনুন।

সঙ্গে সঙ্গে ডাস্টির দিকে তাকিয়ে লেপস্কি তাকে এই ঘরটা সার্চ করে দেখতে বলল। ডাস্টি, তার নির্দেশমত একটু এগিয়ে একটা আলমারি খুলতে যাবে, এমন সময় বুন বিছানা থেকে লাফিয়ে এল, আলমারির সামনে আড়াল করে দাঁড়াল, কিন্তু সে বাধা দিতে পারল না, কেননা লেপস্কির হাতে ততক্ষণে রিভলবার দেখা দিয়েছে। পুলিশী গলায় লেপস্কি বলল-শোন বুন, ব্যাপারটা সহজভাবে নেবার চেষ্টা কর।বাধ্য হয়ে বুন বিছানায় ফিরে গেল কিন্তু শাসাতে লাগল–আমি আপনাকে দেখে নেব দাদা, আপনি অধিকারের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন, মনে রাখবেন আমি আমার অধিকার সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। কালই আমি আপনার নামে অভিযোগ করব।

ততক্ষণে ডাস্টির পোষাক পরীক্ষা করা হয়ে গেছে। সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া গেল না।

বুনও রাগে ফুঁসতে লাগল–তাকে দেখে নেকড়ের মত ক্রুর হাসি হাসল লেপস্কি। বুনের সামনে মেলে ধরল একটা প্যাকেট–এটা আমি তোমার পোষাকের মধ্যে থেকে পেয়েছি। এর থেকে যে কোন ধারণা করে তোমাকে আমরা এই খুনের মামলায় জড়িয়ে ফেলতে পারি। সেটা কেমন লাগবে?

বুন কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর উত্তর দিল–ঠিক আছে। ওটার কথা ভুলে যান।লেপস্কি সুযোগ বুঝে তাকে আরো প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে লাগল আর ডাস্টি তার নোটবুকে চটপট জবানবন্দী গুলো লিখতে শুরু করল।

.

রোববারের রাত্রি, প্রতিবেশীর প্রায় সকলেই বাইরে বেড়াতে গেছে। গাড়ীর হেডলাইট নিভিয়ে কেবলমাত্র পার্কিং লাইটটা জ্বেলে কেন গ্যারেজে পৌঁছায় গ্যারেজে গাড়ি ঢুকিয়ে রেখে এসে সে তার গাড়ির ভিতরে অনেকক্ষণ বসে থেকে চিন্তা করল। তারপর গড়ি গ্যারেজে রেখে এসে সে বাংলোয় প্রবেশ করবার দরজা খুলে লবিতে প্রবেশ করে। তার আগমন কেউ টের পায়নি। এটা কেটি ও পুলিশের কাছে একটা বড় এলিবি, সে জানে এটা খুব জরুরী। অন্ধকারের মধ্যে দিয়েই সে বসবার ঘরের জানলার দিকে এগিয়ে গেল। রাস্তার দিকে চোখ মেলে গভীর ভাবাচ্ছন্ন হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। রাস্তার বিপরীতে তিন তিনটে বাংলো অন্ধকারে ডুবে ছিল। একসময় সে সুইচটা অন করে দিল। আস্তে আস্তে সে লাউঞ্জিং চেয়ারে গিয়ে বসল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল নটা ত্রিশ মিনিট। গাড়ি চালাতে গিয়ে যে চিন্তা ভাবনা গুলো তাকে পাগল করে তুলেছিল, এখন সে চিন্তাগুলো তার মনে বেশ জাঁকিয়ে বসেছে।

সোডা মেশানো স্কচের গ্লাসটা নিয়ে ভাবতে বসল কেন, ঘটে যাওয়া সন্ধ্যার ঘটনাগুলো। তার অবস্থা এখন অনেকটা তাড়া খাওয়া ইঁদুরের মত।

প্রথমে কেটিকে বোঝাতে হবে। সে ভাবল, কেটিকে সব সত্য কথাই বলবে। কিন্তু কেটি বোকা মেয়ে নয়, রীতিমত বুদ্ধিমতী। সে তখন নিজের মনেই একটা কল্পনার সারবস্তু গড়ে তুলল কিছুটা নিশ্চিন্ত হল সে। তারপরেই কারেনের কথা মনে পড়ল তার। হায় ঈশ্বর! এই মেয়েটি তাকে পাগল করে তুলেছিল। তার সঙ্গ পাওয়ার জন্যেই অমন বেপরোয়া ও উছুল হয়ে উঠেছিল সে। সে খুব ভুল করে ফেলেছে, যার কোন ক্ষমা নেই। আগামীকালের কথা ভাবতে বসল–অফিসে কাল আবার দেখা হবে তার সঙ্গে। আজ সন্ধ্যায় কারেন তার যৌবন সম্পূর্ণ উজাড় করে দিয়েছে তার কাছে, নিঃশেষে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে তার কাছে, অন্য পুরুষের জন্যে কিছুই অবশিষ্ট রাখেনি। কারেন তার কাছে এখন যেন এক দুঃস্বপ্ন, বিভীষিকার মতই মনে হচ্ছে। তার ভবিষ্যৎ জীবনে ও দাম্পত্য জীবনে কারেন যেন দুর্বিসহ বিভীষিকা, আজ না হয় কাল মৃতদেহটা কেউনা কেউ দেখবে। তারপর পুলিশ আসবে। এমন একটা বীভৎস খুনের ঘটনা যদি না ঘটত তাহলে অনেক আগেই ফোর্ট লডারডেলে গাড়ি চালিয়ে হাজির হতে পারত, আর বাকী রাতটুকু সে মেরী ও জ্যাক-এর বিবাহ বার্ষিকীর উৎসবে যোগ দিতে পারত। কিন্তু ভয়ঙ্কর ক্ষত বিক্ষত মৃতদেহটা তার সব পরিকল্পনা বানচাল করে দিয়েছে। মৃতদেহের দৃশ্যটা মনে পড়তে তার পেটের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। মনে হচ্ছিল এক্ষুনি তার বমি হবে। তারপর সেই দাড়িওয়ালা লোকটার কথা মনে করল সে, তার খোঁজ যদি পুলিশ পায় এবং লোকটি যদি তার ও কারেনের কথা পুলিশকে বলে দেয়। সে আর ভাবতে পারছে না–

ঘর্মাক্ত কেন তার মুখের ঘাম মুছল। এমন সময়েই কেটির গাড়ির আওয়াজ হল। কয়েক মিনিট পরে কেটি ঘরে এসে ঢুকল। কেন তখনও একইভাবে বসেছিল।

কেনকে প্রশ্ন করল-তোমার কি হয়েছিল কেন? গলার স্বর রুক্ষ ও চড়া। কেন শান্ত স্বরে বলল–প্রিয়তমা, আমি তো জ্যাককে ফোন করে বলেছিলাম, আমার গাড়ি বিকল হয়ে গেছে।

কেন! কেন তুমি এলেনা? মেরী খুব দুঃখ পেয়েছে। সবাই তোমাকে আশা করেছিল।

কেন দুঃখ প্রকাশ করে বলল ইগনিসনে গণ্ডগোল হয়ে থাকবে। আমার একঘণ্টারও বেশী দেরী হয়ে যায়। তবুও তো তুমি আসতে পারতে। কেন চোখে মুখে বিষাদের ভাব ফুটিয়ে বলল–নিশ্চয়ই আসতে পারতাম কিন্তু আসল ব্যাপার কি জান, স্কুলের মিটিংটা ফ্লপ করল, তারপর গাড়ি বিকল, তাই পার্টিতে যাওয়ার আর মানসিকতা ছিল না। তুমি আমাকে ক্ষমা করো।

কেটি চমকে উঠল–স্কুলের মিটিং ফ্লপ? প্রিয়তম, আমি তোমার জন্য সত্যই দুঃখিত, ভেবেছিলাম, আজ তুমি বিজয়ের মর্যাদা নিয়ে ফিরে আসবে। কেন বলতে লাগল-পাঁচশ অভিভাবকের জায়গায় উপস্থিত হয়েছিল মাত্ৰ-চৌত্রিশ জন। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিতে গিয়ে দেখি বিকল হয়ে গেছে, প্লাগগুলো টেনে টেনে খুলে ফেললাম। তুমিই বলো, এমন মুড নিয়ে পার্টিতে যাওয়া যায়?

কেটি প্রশ্ন করল–তুমি আজ তাহলে কোন বিজনেসই পাওনি?

 কেন নরম সুরে বলল-পাকনা কেন? পেয়েছি, তবে সেটা ফ্লপের পর্যায়ে।

কেমন যেন মায়া হল কেটির। স্বামীর কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দু-হাত বাড়িয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরল। কেন তার চুলে বিলি কাটতে কাটতে আদর করতে লাগল। সে মনে মনে সন্তুষ্ট। প্রথম ধাক্কায় সে সন্দেহাতীত ভাবে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হল।

কেটি আদরের ভঙ্গিমায় তার মাথায় মৃদু ঝাঁকুনি দিয়ে দূরে সরে গেল। ঠোঁটে মিষ্টি হাসি কেনের মনে বিদ্যুতের চমক খেলে গেল। সে হাসি দেখে সকল পুরুষের মনই তৃপ্তি পায়। হতাশা গ্রস্ত কেনের অতৃপ্ত-মন এবার কান্নায় ভরে গেল।

কেটিকে সে মধুর সুরে ডাকল–চলো, এবার বিছানায় যাওয়া যাক।কাল ভোরে উঠে মেরীকে ফোন করব, কেমন? পোষাক ছাড়তে ছাড়তে কেটি জিজ্ঞাসা করল–মিস স্টার্নউডের কি হল?

আবার পেটে মোচড় দেওয়া যন্ত্রণা, কোনরকমে সে বলল,–ওর ডেট ছিল, আমি গাড়িতে স্টার্ট দেবার আগেই ও বেরিয়ে যায়।

কেটি এবার নিঃশব্দে বাথরুমে ঢুকল গা ধোয়ার জন্য। কেন তার বিছানায় গেল, স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ওপরের সিলিং এর দিকে। নিজের মনে ভাবতে লাগল কেটি তাকে ভুল বোঝে নি। কারেন যেভাবে তার দেহ ও মন বিধ্বস্ত করেছে, কেটির আলতো আদর ও স্পর্শে তা মন থেকে প্রায় লুপ্তই হতে চলেছে। এখন সে ভারমুক্ত।

খানিক পরে কেটি বিছানায় এল, আলোটা নিভিয়ে দিল। তারপর দুহাত দিয়ে কেটি তাকে জড়িয়ে ধরল, কেনের গা ঘেঁষে শুলল। কেটির মিষ্টি ঘ্রাণ তার নাকে এসে লাগল। এরকমই কিছু সে আশা করছিল কেটির কাছ থেকে, কারেনের উষ্ণ সান্নিধ্যের রেশটা তার কাছে এতক্ষণ যন্ত্রণাদায়ক ছিল কিন্তু কেটির উষ্ণ আলিঙ্গন ও স্পর্শ তাকে সে যন্ত্রণা থেকে রেহাই দিল। তৃপ্ত কেন কেটিকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করতে যায়।

কিন্তু কেটি বলে–আজ আমি খুবই ক্লান্ত প্রিয়তম।তাদের বিয়ের পর এই প্রথম একটা রাত নিষ্ফলভাবে কাটল।

.

পরদিন সকালবেলায় ঠিক সময়েই জাগল কেন, কেটি তখনও ঘুমুচ্ছে। সে নিজেই কফি তৈরী করল। তারপর নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে পৌঁছাল। অফিসের দরজা খুলে সে তার চেম্বারে গিয়ে ঢুকল। দুটো এয়ারকন্ডিশনার মেশিন চালু করে দিল। গতকাল স্কুলের মিটিং-এ ছাত্রদের অভিভাবকদের কাছ থেকে পাওয়া কন্ট্রাক্ট ফর্মগুলো গুছিয়ে রাখছিল কেন।

এই সময় কারেন এল, তার অফিসঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল–কোন সমস্যা নেই তো?কেন কারেনের দিকে তাকিয়ে দেখল, দেহের সঙ্গে সেঁটে থাকা জীনস আর ঘামে ভেজা আঁটো শার্ট এর নীচ থেকে স্তনজোড়া বড় বেশী কামনার উদ্রেক করছিল। তার চোখ থেকে কামনার-আগুন ঝরে পড়তে লাগল। তবু সে কারেনের প্রতি একটুও আকর্ষণ বোধ করল না। তাই সংক্ষেপে সে উত্তর দিল–না। কারেন জিজ্ঞাসা করল-তোমার কি শরীর খারাপ? তোমাকে এত ক্লান্ত দেখাচ্ছে কেন?ড্রিঙ্ক করবে? কেন তার প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে তাকে তেরোটি কন্ট্রাক্ট ফর্মের রেকর্ড তৈরী করে নিতে নির্দেশ দিল।

কারেন হাসল, এগিয়ে এসে ফর্মগুলো ডেস্কের ওপর থেকে তুলে নিয়ে কেনের উদ্দেশ্যে বলল–আজ সকালটা কেবলমাত্র কাজের জন্য। কেন নিরুত্তর। কারেন নিজের মনেই হেসে উঠল, বলল-ও হো। বুঝেছি অপরাধী মন তো, তাই..কথা অসমাপ্ত রেখেই সে তার অফিস ঘরের দিকে এগিয়ে গেল কোমর দোলাতে দোলাতে। কেন পিছন ফিরে বসল, ভাবতে লাগল কি করে এই মেয়েটির হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়? হেড অফিসে বদলি হবে, না…। এমন সময় তার অফিসের বাইরে কিছু লোকের চিৎকার শুনে কেন উঠে দাঁড়াল। নিজের অফিসঘর থেকে বেরিয়ে সে দেখলকাউন্টারের সামনে এক ডজনেরও বেশীকালে নিগ্রো দাঁড়িয়ে আছে। তারা সকলেই ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে প্যারাডাইস অ্যাসুরেন্স কর্পোরেশনের সাহায্যপ্রার্থী।

তারপর থেকে কেন ও কারেন প্রচণ্ড ব্যস্ত। প্রতিদিন তারা কাজের মধ্যে ডুবে যায়। দুপুরবেলায় সামনের স্ন্যাক্স বার থেকে আসা স্যান্ডউইচ কোনরকমে গলাধঃকরণ ও বিকেলে চারটের সময় অফিস বন্ধ হওয়ার পর ছাড়া তাদের আরামের ফুরসত নেই। এক বিকেল কারেন কেনের উদ্দেশ্য বলল-আজকাল দিনগুলো আমাদের কাছে খুব ভাল কাটছে। বাবা শুনলে আমাদের ওপর বেশ সন্তুষ্ট হবেন। কেন হেসে জবাব দিল–তাহলে মিটিং ফ্লপ হবার কোন আশঙ্কা নেই। হ্যামসকে ডেকে পাঠাব। খবরটা বিজয়-উৎসব করবার মতই আনন্দদায়ক। কি বলল মিস স্টার্নউড? কেন তার অফিস-ঘরে ঢুকে সেদিনের কাজগুলো একবার তদারকি করে ফোনের রিসিভারটা সবেমাত্র তুলেছে, উদ্দেশ্য হেড কোয়ার্টারে উন্নতির খবরটা জানান, এমন সময় বাইরের অফিস ঘরের দরজা খোলার শব্দ শোনা গেল। সম্ভবতঃ কোন মক্কেল এসে থাকবে। কৌতূহল বশতঃ সে তার নিজের অফিস ঘরের দরজা একটু ফাঁক করে বাইরে উঁকি মেরে দেখল এবং সঙ্গে সঙ্গেই তার শিরদাঁড়া বেয়ে এটা শীতল রক্তের প্রবাহ নিচে নেমে এল। আগন্তুকের পরিচয়টা একবার নিজের মনে ভেবে নিল। আগন্তুক হলেন ডিটেকটিভ টম লেপস্কি। পাতলা ছিপছিপে লম্বাটে চেহারা, চোখ দুটি নীলাবরণ। তার সঙ্গে কেনের প্রত্যক্ষ পরিচয় নেই, তবে সে তাকে পূর্বে দেখেছিল ও তার সম্পর্কে পরিচিত ছিল। তার এক গলফ খেলুড়ে বন্ধু আগন্তুক লোকটিকে দেখিয়ে বলেছিল–দেখিস কেন, টেরেল চাকরী থেকে অবসর নিলে লেপস্কি পুলিশ চীফ হবে। আর আজ সেই ধূর্ত গোয়েন্দা তার অফিসে এসে হাজির। বোধহয়, সেই দাড়িওয়ালা হিপি লোকটাই তাকে তাদের কথা বলেছে।

ওদিকে লেপস্কি কাউন্টারের উপর ঝুঁকে পড়ে কারেনের দিকে হাসাহাসি মুখ করে তাকায়। কোন যৌবনবতী মেয়ে দেখলে লেপস্কি তার দিকে ঝুঁকে পড়ে। কারেন চিঠি টাইপ করছিল কাউন্টারের ওপর চোখ তুলে তাকাতেই লেপস্কির সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় হল। উঠে দাঁড়াতে গেল। তার স্তনদ্বয় দুলে উঠল। তা লেপস্কির দৃষ্টি এড়ালনা,বরং সে উপভোগ করল,মৃদু হেসে জিজ্ঞাসা করল–মিস স্টার্নউড?

কারেন লোকটির পরিচয় জানত, আর বুঝতে পেরেছিল তার এরূপ কথা ও হাসির কারণ। নিজেকে আরও সেক্সি করে তুলতে চেষ্টা করল, দৃষ্টিতে হিল্লোল তুলে তাকাল লেপস্কির দিকে। নিজের থেকেই একটুনরম সুরে প্রশ্ন করল–আপনি তো একজন পুলিশ অফিসার, আপনার ছেলে পুলে আছে? প্রশ্নটা অপ্রাসঙ্গিক। অপ্রস্তুত লেপস্কি আমতা আমতা করে বলল,-ছেলে-পিলে, কেননা আমি…কারেনের পাল্টা প্রশ্ন–আপনি নিশ্চয়ই বিবাহিত। আপনার মত একজন সু-পুরুষ বিয়ে করেনি, এটা অবিশ্বাস্য।

লেপস্কি কারেনের সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন, প্রসঙ্গ বদলাতে চাইছে, তাকে বোকা বানাতে চাইছে, তা সহজেই বুঝতে পারল লেপস্কি। বেড়ালের সামনেইঁদুর দেখে ধরতে না পারার ব্যর্থতায় যেমন ফোঁস ফোঁস করে থাকে, তেমনি গজরাতে গজরাতে লেপস্কি কোনরকমে বলল–মিস স্টার্নউড! কিন্তু কারেন তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল–ওঃ বুঝেছি, আপনি আপনার পরিবারের সদস্যা সংখ্যা বাড়াতে চান, এই তো? আপনি ঠিক জায়গাতেই এসেছেন। আগে যদি ইনসিওরেন্স করেন, সেক্ষত্রে প্রিমিয়াম অনেক কম লাগবে।

লেপস্কি এখানে আসার আগে কারেন সম্পর্কে যে সব কথা শুনেছিল, তা সত্য লেপস্কি এবার আন্দাজ করতে পারল। হেস তাকে এখানে আসতে নিষেধ করেছিল কিন্তু পুলিশ চীফ টেরেলের পরামর্শ মতোই সে কারেনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। মেয়েটির গায়ে পড়া কথাবার্তা তার কাছে রহস্যজনক বলে মনে হল। দৃঢ়স্বরে লেপস্কি বলল–মিস স্টার্নউড, আমি একটা খুনের ব্যাপারে তদন্ত করতে এসেছি।

কারেন সরলভাবে বড় বড় চোখ করে তাকালো–তাই নাকি? তাহলে এই মুহূর্তে আপনি পরিবার বাড়াতে যাচ্ছেন না?

কারেনের ঠোঁটে মহামারী হাসি। পরে হয়তো আবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, করবেন তো? তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে লেপস্কি এবার পুরানো প্রসঙ্গে ফিরে এল– মিস্টার্নউড, গতকাল রাত্রে আপনার কেবিন থেকে মাত্র একশো গজ দূরে একটি মেয়ে খুন হয়। আপনি তখন কেবিনে ছিলেন?

কারেন স্বপ্নালু দৃষ্টিতে লেপস্কির দিকে তাকাল–হ্যাঁ, আমি একাই ছিলাম। মিঃ লেপস্কি, কোন সময়ে আপনারও কি একা থাকতে ভাল লাগে না?

লেপস্কির ক্রুর মন তাকে সন্দেহপ্রবণ করে তুলল–এই সেক্সি মেয়েটি হয়ত, তাকে বোকা বানাতে চাইছে। তাই সে পুলিশী কায়দায় জেরা করতে শুরু করল। আপনি কি কিছুই শুনতে পাননি? কোন আর্ত-চিৎকার? কিছুই নয়?

আমি তখন টেলিভিশন দেখছিলাম। আপনি কখনো টেলিভিশনের সামনে বসেন না? আপনার মত ব্যস্ত মানুষ টিভি দেখার সময় পাবেই বা কোথায়?তবে টিভির অনুষ্ঠানগুলো দেখতে আমার খুব ভাল লাগে।

লেপস্কি ঠোঁটে নেকড়ের হাসি ফুটিয়ে তুললেন। জিজ্ঞাসাবাদ করলেন–তখনকার অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠান সম্পর্কে।

কারেনের মুখের চেহারা পাল্টে গেল, আমতা আমতা করে বলল–ওহহ, কিছু একটা দৃশ্য দেখছিলাম। এড়িয়ে যাওয়ার জন্য একটি কল্পিত অনুষ্ঠানের কথা বলল। পাল্টা প্রশ্ন করল–আমার টিভি দেখার সঙ্গে এই খুনের কি সম্পর্ক থাকতে পারে?

লেপস্কির শান্ত কণ্ঠস্বর,-এটা আমার জানা দরকার, তাই জিজ্ঞাসা করছি। আপনি একটি গাড়ির যান্ত্রিক আওয়াজ শুনতে পাননি?

কারেন বিরক্তি প্রকাশ করে বলল–আমি তো আগেই আপনাকে বলেছি, আমি কোন শব্দ শুনতে পাই নি।

সে মেয়েটির সম্পর্কে জানতে চাইল। লেপস্কি তার পুলিশী চোখের স্থির দৃষ্টি নিবদ্ধ করল কারেনের উপর। তারপর বলল–মিস স্টার্নউড-এ এক বীভৎস খুন। খুনী মেয়েটির ওপর যে রকম অত্যাচার করেছিল, তা আমি আর কাউকে দেখাতে চাই না, আপনি কেবিনে ছিলেন, তাই আপনি বেঁচে গেছেন।কারেন শিউরে উঠে বলল–উঃ কি ভয়ঙ্কর বীভৎস!

কিন্তু লেপস্কি সেই পূর্বের প্রসঙ্গে। কারেনের দিকে নিক্ষেপ করলেন একই প্রশ্নবান। উত্তর পেলেন সেই একই।

কোন সূত্র না পেয়ে ডিটেকটিভ লেপস্কি বিদায় নেবার আগে কারেনকে বললে–আপনাকে কোন উপদেশ দেওয়ার ধৃষ্টতা আমার নেই, তবুও একটা কথা আপনাকে বলি–একা একা ঐ কেবিনে থাকা আপনার পক্ষে নিরাপদ নয়। পুলিশের কর্তব্য নয়, একজন হিতাকাঙ্ক্ষী হিসাবে আপনাকে এই কথাটি বললাম।

অপরদিকে কারেন মুখে এক ব্রুক হাসির ঝলক ফুটিয়ে বললেন–আপনি যথার্থই বলছেন, এ ব্যাপারে আপনার মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। ধন্যবাদ মিঃ লেপস্কি।

লেপস্কি তার টুপিটা মাথায় পড়ে নিয়ে অফিসের বাইরের দরজার পথে এগিয়ে গেল।

লেপস্কি অদৃশ্য হবার পরই কেন কারেনের কাছে এসে দাঁড়াল, তাকে ভীষণনার্ভাস দেখাচ্ছিল, মুখটা ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।কারেন তাকে প্রত্যক্ষ করে এরূপ আচরণের কারণ বুঝতে পারল, তাই সে বলল এসো, আরাম করে বসো কেন।

কেনের চঞ্চল মন একের পর এক প্রশ্ন করে যেতে থাকে কারেনকে। তার ভয় দাড়িওয়ালা লোকটি যদি তাদের সম্পর্কে পুলিশের কাছে জবানবন্দী দেয়, তাহলে তো কারেনের সকল জবানবন্দী মিথ্যা প্রমাণিত হবে।

কারেন কথা বলতে বলতে তার ডেস্কে গিয়ে বসে–ধরে নিলাম, ঐ লোকটি যা বলবে তা আমার বিরুদ্ধে যাবে,এমনও হতে পারে পুলিশের কাছে ওর বক্তব্য মিথ্যে মনে হতে পারে।এরপর কারেন চিঠি টাইপ করতে শুরু করল।

বিকেল পাঁচটা বাজল, পুলিশ চীফ টেরেলের ঘরে উপস্থিত হয়েছে সার্জেন্ট বেইগলার, সার্জেন্ট হেস, ডিটেকটিভ ফার্স্ট গ্রেড লেপস্কিও থার্ড গ্রেড জ্যাকবি, একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্য সকলে এসেছেন। টেরেলের ডেস্কের উপর বিভিন্ন রিপোর্ট জমা হয়েছিল–হেসের রিপোর্ট, মেডিকেল অফিসারদের রিপোর্ট, লেপস্কি, জ্যাকবি ও অন্যান্য ডিটেকটিভদের রিপোর্ট।

টেরেল প্রথমেই মেয়েটি সম্পর্কে অবগত করাল সকলকে–মেয়েটির নাম জেনি ব্যান্ডলার, একজন নামকরা দেহপসারিনী, কয়েক বছর ধরে সে এই ব্যবসা চালিয়ে আসছে। ডঃ লুইসের রিপোর্টে বলা হয়েছে–মেয়েটির মাথায় প্রথমে আঘাত করা হয়, তারপর ধর্ষণ ও পরে শ্বাসরোধ করে খুন। শুধু এটাই নয়, তাকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে দেহটাকে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। এটা থেকে বোঝা যায় খুনী একজন যৌনকামুক ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক ছিল। অথচ  আশ্চর্যের ব্যাপার হিপিদের কেউই এসব প্রত্যক্ষ করেনি, কোন শব্দও শোনেনি আর এখানে কোন খবর দেবার জন্য আজও ছুটে আসে নি।

হেস কথার মাঝে বলল, ওদের সবাইকে জিজ্ঞাসা করে যে ধারণা পাওয়া গেছে, তাতে মনে হয় পঞ্চাশজন অন্তত ঐ ঘটনাস্থলের কাছাকাছিই ছিল। ওদের মুখ খুলতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে।

টেরেল মাথা নেড়ে বলল- এতক্ষণ পর্যন্ত যে রিপোর্ট পাওয়া গেছে, তাতে আমাদের সকল সন্দেহ ঘনীভূত হয় ঐ লু বুন লোকটিকে ঘিরে। কারণ ঐ সময় সে যে স্থানটিতে ছিল, সেখান থেকে ঘটনাস্থলটি বেশ স্পষ্টগোচর। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার-ওর পোশাকে কোন রক্তের দাগ নেই!

তবে আমি নিশ্চিত–লোকটি হয় হত্যাকারী অথবা সে কাউকে দেখে থাকবে। তার কথা বলার ঢংও আচরণ দেখে মনে হয় সেমিথ্যে বলছে। ঠাণ্ডা মাথায় চতুরের মতো খেলেছে আমাদের সঙ্গে

হেস বলল-তার কাছে অনেক টাকা আছে, টাকার জোরে সে যে কোন লোকের সঙ্গে ইচ্ছামতই ব্যবহার করতে পারে। সে হিপি কলোনিতে বেশ কিছুদিন কাটাতে চায়।

টেরেল ওর ওপর নজর রাখার নির্দেশ দিলেন হেসকে। হেস মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। এরপর টেরেল এলেন মিস স্টার্নউডের কথায়। তার কেবিন ঘটনাস্থল থেকে মাত্র দুশো গজ দূরে অবস্থিত।

লেপস্কি এবার মুখ খুলল–মেয়েটির সঙ্গে আমি কথা বলেছি। জবানবন্দিতে সে বলেছে, ঐ সময়, সে নাকি টিভির অনুষ্ঠান দেখছিল। তার কথায় চালাকি স্পষ্টতঃ ধরা পড়ে। তার বর্ণিত কোন অনুষ্ঠানই সেদিন টিভিতে হয়নি, আমি চেক করে দেখেছি। আমার অনুমান সেই সময় সে তার কোন বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে দৈহিক সংস্পর্শে লিপ্ত ছিল। সাপ্তাহিক ছুটিতে একা কেবিনে কাটানোর মেয়ে সে নয়।

মাঝপথে টেরেল তাকে বাধা দিলেন–আমাদের মনে রাখতে হবে সে হল প্রভাবশালী মিঃ স্টার্নউডের কন্যা। আর ওটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

এরপর তিনি জ্যাকবির দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন যে লোকটা সংবাদ দিয়েছিল, তার সম্পর্কে কিছু বল।

জ্যাকবি বিবরণ দিল–লোকটি ঝড়ের গতিতে পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে কথা বলে যায়। গলার কণ্ঠস্বর থেকে বিশেষ কিছু বোঝা যায় নি, তরে সে যে কোন বয়সের লোক হতে পারে, পুলিশের বিপক্ষ হতে পারে।

টেরেল সকলের উদ্দেশ্যে বলল–খুনটা খুনী নিজেও করতে পারে। লোকটা সেক্স ম্যানিয়াক, এরকম, খুন সে আরো করতে পারে। আমাদের সজাগ হওয়া উচিত। হেসের উদ্দেশ্যে বলল–ফ্রেড, তোমার বাড়তি লোকের প্রয়োজন হলে আমি মিয়ামী থেকে আমাদের রিজার্ভ ফোর্স আনিয়ে নেব।

এমন সময় টেলিফোন বেজে উঠল, হেসের ফোন। রিসিভার মুখে রেখে কথা বলতে থাকে। সকলেই তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কথা শেষ করে সে কথাটি পুনরায় রিপোর্ট করে। তার কথা হয়েছে জ্যাকের সঙ্গে। সে তার সঙ্গীদের নিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছিল। জ্যাক সেখানে একটি অদ্ভুত ধরণের বোতাম খুঁজে পেয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে মাত্র তিনগজ দূরে গলফ বলের মতো দেখতে। বোতামটি বালির মধ্যে অর্ধেক গেথে ছিল, এটা একটা সূত্র হতে পারে।

হিপি কলোনির কেটি হোয়াইট রান্নার কাজ করছে। লু-বুনতাকে সাহায্য করছে। কেটির তৈরী স্পাঘোট ও সস্ লোকেদের প্রিয় খাদ্য। খিদে পেলেই তারা তার কিচেনে আসে। এজন্য সে নিজেকে খুব গৌরবান্বিত মনে করে।

লু তার রান্না করা খাবার খেতে খেতে তার সঙ্গে নানান কথা বলতে থাকে। কেটি লুবুনের দাড়ি, মাসল, সবুজ চোখের অন্তর্ভেদী দৃষ্টি দেখে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। কেটি তাকে সুপারম্যান বলে ভাবতে শুরু করেছিল। সেও খানিকটা অন্তরঙ্গ হবার চেষ্টা করল।

এবার লু-বুনের পরিচয় একটু জানা যাক। লু-বুন মাত্র ১৭ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে চলে আসে, আইনের ছাত্র সে। কিন্তু মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বাড়ির বাইরে এসে এ প্রান্ত সে প্রান্ত ঘুরে বেড়ায়। রেস্তোরাঁর কাপডিশ ধোয়া, গ্যারেজে গাড়ি মোছা সর্বকাজেই সে দক্ষ। সে উপলব্ধি করেছিল দুনিয়াটাতে টাকাই সব। সে স্বপ্ন দেখল–সে এক বিরাট ধনী ব্যক্তি হয়ে গেছে।

তিন দিন পূর্বে সে জ্যাকসন ভিলায় এসেছে। নিঃস্ব লু হাঁটতে হাঁটতে কনফেডারেট পার্কে এল। পার্কের বেঞ্চে বসে থাকা এক সুন্দর পোশাক পরা ভদ্রমহিলা ঘুমিয়ে পড়লে বুন তার ব্যাগটি নিয়ে উধাও হয়। তার থেকে সে চারশো ডলার পায় আর সেই টাকাতেই সে এখন হিপি কলোনিতে কেবিন ভাড়া করে রয়েছে।

কেটির পরিচয় প্রসঙ্গে বলা যায়, সে দুবছর এই কলোনিতে রয়েছে। লু-বুন ও কেটি পরস্পর ঘনিষ্ঠ ভাবে কথা বলতে বলতে কারেন স্টার্নউডের কথায় আসে। বুন কেটির কাছে কারেন-এর পরিচয় জানতে চায়।

কেটি বলল–মেয়েটি ভাল, সে ধনী পিতার একমাত্র কন্যা হলেও হিপিকলোনির এক সদস্যা। মাঝে মাঝে এখানকার একটা কেবিনে সে রাত কাটাতে আসে। লুকে বিস্মিত হতে দেখে কেটি তাকে বোঝায়কেবিনটি তার প্রেমকুঞ্জ। আর কারেন কামুক প্রকৃতির মেয়ে। সব সময় একটা না একটা পুরুষকে নিয়ে সে থাকতে চায়। আর মেয়েটির বাবা একজন সত্যিকারের কাজ পাগলা লোক। তার বাবা সিকোম্ব শহরে একটি শাখা অফিস খুলেছে। মেয়েটি কাজ করে সেখানে। কেন ব্রান্ডন সেখানকার ইনচার্জ।

এরপর তারা এল ব্রান্ডন প্রসঙ্গে। কেটির ধারনায় কেন ঠিক গ্রেগরী পেকের মত। একবার তার সঙ্গে এই শহরেই কেটির বচসা হয়, তারপর থেকেই কেটির জীবনের মোড় ঘোরে।

 লু-বুন ব্রান্ডন সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা নিতে চাইল। প্রত্যুত্তরে কেটি বলল ব্রান্ডন বিবাহিত, তারা সুখী-দম্পতি। তার স্ত্রী ডাঃ হেনজের কাছে কাজ করে। সম্প্রতি ধনী বংশের মেয়েরা কুমারী অবস্থায় গর্ভবতী হয়ে পড়লে ডাঃ হেনজ তাদের অপারেশন করে দেয়। সর্বশেষ কেটির মন্তব্য ব্রান্ডনের মত সাথী পেলে যে কোন মেয়েই ধন্য হয়ে যাবে।

লু ভাবল অধিক কৌতূহল দেখালে কেটি হয়ত সন্দেহ করতে পারে। সে প্রসঙ্গ পাল্টে কেটির নিজস্ব প্রশ্নে এল–তুমি কতদিন এই কলোনিতে থাকবে?

কেটির রাগান্বিত স্বরে উত্তর–আমার আর যাওয়ার জায়গা বা কোথায় আছে?

লু তাকে সান্ত্বনার স্বরে বলল যেখানেই যাও না কেন তোমার চাহিদা ঠিক থাকবে। পুরুষদের আকর্ষণ করবার মত শরীর তোমার আছে। তারপর ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল–আমি বাইরে একবার ঘুরে আসি, তুমি সাবধানে থেকো।

লু তার কেবিনে ফিরে আসে। একটা টেলিফোন ডায়রেক্টরীর পাতা নিয়ে ওল্টাতে ওল্টাতে একসময় কেব্রান্ডনের ঠিকানাটা পায়।একটুকরোকাগজে কেনের ঠিকানা ও ফোননম্বরটুকেনিল।

মুখের সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করে ভাবতে লাগল পরবর্তী কার্যক্রম।ব্ল্যাকমেল করবার পক্ষে এটা একটা বড় সুযোগ।

মনে মনে ভাবতে লাগল ঘটনার দিন ব্রান্ডন হয়ত বেশী রাত পর্যন্ত বাইরে থাকার দরুন স্ত্রীর কাছে মিথ্যে অজুহাত দিয়ে থাকবে। বোধহয়, এটাই তার প্রথম বাইরে বেশিক্ষণ থাকা। এবার শুধুমাত্র বাকী কেনের আর্থিক অবস্থাটা নিরীক্ষণ করা। একটা সাধারণ পোশাক পড়ে সে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মেকআপের দিক থেকে সন্তুষ্ট সে। কেবিন থেকে বেরিয়ে সোজা হাইওয়ে, সিকোম্বোর বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দেখল বাসে প্রচণ্ড ভীড়।

মুহূর্তের মধ্যে সে চলে এল কার স্ট্যান্ডে, সেখান থেকে ১৫৫ ডলার ভাড়ায় একটা গাড়ি নিল। পাঁচশো মাইল দূরস্থিত প্যারাডাইস অ্যাসুরেন্স কোম্পানীর শাখা অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হল। বেলা এক টা নাগাদ সে অফিসের মাত্র কুড়িগজ ব্যবধানে উপস্থিত হল। গাড়িটাকে সেখানে পার্ক করল। গাড়িতে বসে বসে সে তার পরবর্তী কার্য নির্ধারণ করবার সময়ই দেখল কেন তার অফিস ঘর থেকে বেরিয়ে কুইক লাঞ্চ বার-এ ঢুকল। লু-বুন তাকে একবার মাত্র দেখেই চিনতে পারল। এরপর সে গাড়ি থেকে নেমে শহরের একটি দোকানে গিয়ে শহরের ম্যাপ সংগ্রহ করল। গাড়িতে ফিরে এসে ম্যাপের ওপর চোখ রেখে খুঁজতে লাগল লোটাস স্ট্রীট।

ম্যাপের নির্দেশানুযায়ী গাড়ি এগিয়ে চলল। দুপাশে ছোট ছোট বাংলো আর ভিলা। গাড়িটা রাস্তার মোড়ে পার্ক করে হেঁটে এল সে। ব্রান্ডনের বাড়ির সামনে এসে থমকে দাঁড়াল। একনজরে তার বাংলোটা দেখে আন্দাজ করে নিল বাংলোটার দাম পাঁচ হাজার ডলারের অধিক বই কি কম হবে না।

আবার সে ফিরে এল সিকোঘোর শাখা অফিসে। সেখানে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করবার পর দেখল বেশ কয়েকজন নিগ্রো অফিসে ঢুকল। কয়েক মুহূর্ত চিন্তাভাবনা করবার পর সেও অ্যাসুরেন্স অফিসে গিয়ে ঢুকল।

সেই মুহূর্তে এক চিন্তাগ্রস্থ নিগ্রো মেয়ের সঙ্গে কথা বলছিল কারেন। প্রবেশ পথেই লু থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেয়েটিকে দেখতে লাগল। লু চিনতে পারল মেয়েটিকে। ওদিকে কারেনও তাকে চিনতে পারল, তার দেহের মধ্যে চমক জাগান একটা শিহরণ খেলে গেল।

কারেন কটাক্ষ দৃষ্টি হেনে লুবুনের দিকে তাকাল, থেমে বলল–এক মিনিট। প্রত্যুত্তরে সে বলল পার্কিং-এর সমস্যা রয়েছে। একটু পরেই সে ফিরে আসবে জানিয়ে চলে গেল।

কারেন জোর করে অন্য খদ্দেরদের দিকে মন দেবার চেষ্টা করল কিন্তু নতুন আগন্তুকের চেহারা মনে হতেই এক অজানা ভয় তাকে গিলে খেতে লাগল। একটা নিগ্রো লোক তার দশটা ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে দারুণ সমস্যায় পড়েছে। কারেন তাকে বোঝাবার চেষ্টা করে পলিসি বিক্রির মাধ্যমে এই অফিস তার ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের দায়িত্ব নিতে চায়।