।।আঠারো।। শেষ ছোবল
শনিবার।
সেই শনিবার। বিশ্বাস করুক না করুক, তবু একটা অজানা ভয়ে সকাল থেকেই সঞ্জয় যেন বিশেষ চিন্তিত। তার ওপর রীণার শরীর মোটেই ভালো নয়। বিছানা থেকে ওঠার শক্তিটুকুও নেই। কেন যে এমন হল সঞ্জয় কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না। তার ওপর কাল রাত্তির থেকে হঠাৎই পুপুর জ্বর হয়েছে। এবার শুধু চোখ নয়, বুড়োদের মতো গাল দুটোও বসে গেছে।
সঞ্জয় ক’দিন বেরোচ্ছে না। সকালেই একবার ডাঃ রুদ্রকে ফোন করেছিল। পায়নি। একটু আগে ফের ফোন করল। এবার পেল। ডাঃ রুদ্র বললেন, সন্ধের সময়ে যাচ্ছি। আর দ্যাখো, আজ যে শনিবার এটা রীণাকে জানিও না।
শেষ বিকেল।
পশ্চিমের জানলা দিয়ে একফালি রোদ দেওয়ালে এসে পড়েছে। কেমন যেন ফ্যাকাশে রোদ। এ যেন এক মন—খারাপ—করা বিকেল। এরকম সময়ে অন্যদিন সে বাড়ি থাকে না। তাই নির্জন ঘরে শীতের বিকেল যে এমন ভারাক্রান্ত হয় সঞ্জয় তা জানত না। এইসব বিকেলে বেচারি রীণা কী করে যে একা থাকে তাই ভেবে সঞ্জয় আজ বিচলিত হল।
রীণার বিছানার কাছে একটা চেয়ারে বসে সিগারেট খাচ্ছিল। ভাবনাটা এবার অন্যদিকে মোড় নিল। আজ রাত্তিরে যদি সত্যিই তেমন—কিছু ঘটে তা হলে সাবধানতার জন্য যা যা ব্যবস্থা ইতিমধ্যে করেছে তা যথেষ্ট কি না তা আর একবার যাচাই করে দেখতে চাইল।
নিজের ছোটো টর্চ ছাড়াও নতুন একটা বড়ো টর্চ কিনে রেখেছে। ছোটো—বড়ো দুটো টর্চেই নতুন ব্যাটারি। রুগির হার্ট ঠিক রাখার মতো প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত রেখেছে। ঘরে কুঁজো—ভর্তি খাবার জল, চা, কফি, দুধ, এক টিন বিস্কুট—তা ছাড়া এক বোতল ব্রান্ডি—রাত জাগার জন্যে এসবেরই দরকার। সব কিছুরই ব্যবস্থা হয়ে আছে।
সারা রাত তাকে একাই জেগে থাকতে হবে। একবার ভেবেছিল বন্দনার মা—বাবাকে ডাকবে। কিন্তু ভেবে দেখল, কী জন্যে ডাকবে? তাঁদের তো বলা যাবে না যে, আজ রাত্রে অশরীরীটি হানা দেবে তার ঘরে।
একমাত্র রীণার কিছুটা বাড়াবাড়ি হওয়া ছাড়া আর যে কিছুই ঘটবে না সঞ্জয় সে সম্বন্ধে নিশ্চিত। কেননা সে জানে ঘরে লোক জেগে থাকলে তেমন কিছু হয় না।
সঞ্জয় ঘড়ি দেখল। ছটা বাজে। পুপুকে ওষুধ খাওয়াল। কেন কে জানে, ও আজ বড্ড ঘুমোচ্ছে। এবার রীণাকে দুধ খাওয়াতে হবে। ও তো কিছুই খেতে চাইছে না। শুধু চোখ বুজিয়ে পড়ে আছে। তবু গরম দুধ একটু না খাওয়ালেই নয়।
সঞ্জয় উঠে দুধ গরম করতে গেল।
একটু পরেই রীণার ক্ষীণ ব্যাকুল স্বর শোনা গেল।
—তুমি কোথায়?
—এই যে দুধ গরম করছি।
—শুনে যাও।
—যাচ্ছি।
হিটার থেকে দুধের সসপ্যানটা নামিয়ে রেখে সঞ্জয় রীণার কাছে গেল। দেখল রীণা চারিদিকে তাকিয়ে কী যেন দেখছে।
—কী হল?
—কিছু না। তুমি আমার কাছে বোসো।
—দুধটা আনি?
—পরে এনো। তুমি এখন বোসো।
—দুধ জুড়িয়ে যাবে। ফের গরম করতে হবে। বলে সঞ্জয় বসল।
—দ্যাখো, আমি যেন কিছুই ভালো করে মনে করতে পারছি না। সব যেন কেমন ঘুলিয়ে যাচ্ছে।
—কীরকম? রীণার হাতটা সঞ্জয় তুলে নিল নিজের হাতে। একটু চমকাল। হাত দুটো ঠান্ডা।
—মনে হচ্ছে আমি যেন কত যুগ ধরে ঘুমোচ্ছি। কখনো মনে হচ্ছে আমি যেন আর এই পৃথিবীতে নেই। ক—ত দূরে চলে গেছি। তারপরেই বুঝতে পারছি—না, কোথাও তো যাইনি। এই তো আমার ঘর—এই তো আমার বিছানা—এই তো পুপু সোনা—পুপু কোথায়?
—বন্দনা নিয়ে গেছে।
রীণা একটু থামল। তারপর চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল, আচ্ছা, সেই লোকটা কি আর এসেছিল?
—কোন লোকটা?
—সেই যে ম্যাজিশিয়ানের মতো দেখতে। কালো প্যান্ট—কোট—কালো টুপি—
—না তো, কোনো লোকই আসেনি। একটু হেসে আবার বলল, তাঁকে দেখার সৌভাগ্য তো আমাদের হয় না। উনি কেবল তোমাকেই দেখা দেন।
—হ্যাঁ। আমাকেই যে তার দরকার। কী দরকার গো বলো না।
রীণা একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল সঞ্জয়ের চোখের দিকে।
—উঃ! কী সাংঘাতিক গেছে সেদিনের সেই বিকেলটা। আমি পুপুকে কোলে নিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। হঠাৎ দেখি ঘরের মধ্যে কী যেন ঘুরছে তো ঘুরছেই। ধোঁওয়া—শুধু ধোঁওয়া….
বলতে বলতে রীণা হঠাৎ ছিটকে উঠে বসল। দ্রুত নিশ্বাসে তার বুক ওঠা—পড়া করতে লাগল। দু—চোখে ভয়ের কালো ছায়া।
—কী হল? অমন করে উঠে বসলে কেন?
—আজ—আজ সেই শনিবার না?
—শনিবার! না, না, শনিবার তো কাল গেছে। আজ রবিবার।
রীণা প্রবলভাবে মাথা নাড়ল।—কক্ষনো না। আজই শনিবার।
সঞ্জয় হাসল—পাগল! শনিবার হলে আমি বাড়ি থাকি?
রীণার তবু যেন বিশ্বাস হল না। এদিক—ওদিক তাকাল।
—এখানে যে ক্যালেন্ডারটা ছিল?
—পেরেকটা খসে গেছে। ওঘরে টাঙিয়ে রেখেছি।
রীণা আর বসে থাকতে পারল না। শুয়ে পড়ল।
—কী জানি, আমার মনে হচ্ছে তুমি আমায় লুকোচ্ছ।
—শুধু শুধু লুকোব কেন?
—আর ভাবতে পারছি না। বলে পাশ ফিরে শুলো। একটু পরে পাশ ফিরেই বলল, সন্ধে হয়েছে?
—না।
—তবু আলোটা জ্বেলে দাও। একটু অন্ধকার হলেই ভয় করে।
সঞ্জয় আলো জ্বেলে দিল। রীণার চোখ দুটো হঠাৎ ঝকঝক করে উঠল।
—এবার তোমার দুধ গরম করে আনি?
—পুপু খেয়েছে?
—হ্যাঁ। বন্দনাই দুধ খাইয়ে নিয়ে গেছে।
—মনে হচ্ছে ছেলেটাকে যেন কত দিন দেখিনি। ওকে একবার নিয়ে এসো না।
—আগে তুমি দুধ খেয়ে নাও। তারপরে আনব।
সঞ্জয় উঠে দুধ আনতে যাচ্ছিল রীণা আবার ডাকল, তুমি বলছ আজ রবিবার?
—হ্যাঁ। কতবার বলব?
—শনিবারের সেই ফাঁড়া তাহলে কেটে গেছে?
সঞ্জয় ধমক দিয়ে বলল—ফাঁড়া আবার কি? কিছুই হয়নি। সবই মনের ভুল।
রীণা হঠাৎ আবার উঠে বসার চেষ্টা করল।
—শোনো শোনো, বলে দু—হাত বাড়িয়ে সঞ্জয়ের হাত দুটো চেপে ধরল—আচ্ছা, মিস থাম্পি যেমন সেই প্রফেসারকে হিপনোটাইজ করেছিল তেমনি আমাকেও কেউ করছে না তো?
—হিপনোটাইজ! শুধু শুধু তোমায় কেউ হিপনোটাইজ করবে কেন? তা ছাড়া ওসব গালগল্প। বলে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দুধ আনতে গেল।
.
সন্ধের একটু পরে ডাঃ রুদ্র এলেন। মসমস করে ঢুকলেন রীণার ঘরে।
—কেমন আছ?
—ভালো—নয়। মোটেই ভালো নয়। তবু আপনাকে দেখলে যেন ভরসা পাই।
ডাক্তার রুদ্র একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলেন। তারপর রীণার হাতটা টেনে নিলেন।
—লেপের বাইরে হাত রেখে শুয়েছিলে বুঝি?
রীণা বলল, কী জানি। খেয়াল নেই।
ডাক্তার রুদ্র প্রেশার মাপতে লাগলেন। একবার—দুবার তিনবার—সঞ্জয় ঝুঁঁকে পড়ল।
—কত? রীণা জিজ্ঞেস করল।
—ঠিক আছে।
রীণা সঞ্জয়কে বলল, ওঁকে কফি দাও।
ডাঃ রুদ্র বললেন, আজ অনেকবার চা—কফি হয়েছে। আর নয়। বরঞ্চ রাতের খাওয়ার ব্যবস্থা করো। বলে রীণার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
রীণা উৎফুল্ল হয়ে বলল, আপনি রাত্তিরে এখানে খাবেন? কী সৌভাগ্য! কিন্তু আমি তো রান্না করে খাওয়াতে পারব না।
কথার শেষে হতাশ ভাব ফুটে উঠল রীণার মুখে।
—ঠিক আছে। তুমি সুস্থ হয়ে উঠলে আবার একদিন না হয় খাব।
রীণা ম্লান হাসল।—মনে রাখবেন কিন্তু।
—হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। বলে ডাঃ রুদ্র চুরুট ধরালেন।
.
নটা বাজল।
ডাঃ রুদ্র নীচু গলায় বললেন, খুব ভাগ্য এক চান্সেই আমার বাড়ির লাইন পেয়ে গেলে। নইলে বাড়ি ফিরব না এই খবরটুকু দেবার জন্যে আবার বাড়ি ছুটতে হত।
সঞ্জয় কিছু বলল না। অন্যমনস্ক হয়ে কী যেন ভাবছিল।
—কী হল? অমন করে রয়েছ যে?
—ওর অবস্থা কি খুবই খারাপ?
—খারাপ বলব না। তুমি নিজে ডাক্তার। প্রেশার তো দেখলে। ফল করছে। তাই ভাবলাম রাত্তিরে যদি আরো কিছু হয় তুমি একা নার্ভাস হয়ে পড়বে। সেজন্যই থেকে গেলাম। তা ছাড়া বলা যায় না যদি আজ রাত্রে ও কিছু দেখেটেখে? দুর্বল শরীর—
পাশের ঘর থেকে রীণা ডাকল—একবার আসবে?
সঞ্জয় তাড়াতাড়ি উঠে গেল।
মৃদু আলো জ্বলছে। ধবধবে বিছানায় গলা পর্যন্ত সাদা ওয়াড় পরানো লেপ ঢাকা দিয়ে রীণা শুয়ে আছে। সঞ্জয় কাছে আসতেই রীণা তাকাল—
—কী বলছ?
—উনি খেয়েছেন তো?
—হ্যাঁ।
—কীই বা খেলেন! ভারি লজ্জা করছে আমার।
—লজ্জার কী! তুমি সেরে উঠলে ভালো করে খাওযাব।
রীণা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, কিন্তু একটা জিনিস বুঝতে পারছি না—উনি রাত্তিরে এখানে থাকবেন কেন? সত্যি বলো আমার অবস্থা কি খারাপের দিকে যাচ্ছে?
সঞ্জয় হেসে উঠল। আরে না—না। আগের চেয়ে অনেক ভালো আছ।
—তা হলে উনি থাকছেন কেন?
—এমনিই। বললেন, বাড়িতে কেউ নেই। বাড়ি যেতে আর ইচ্ছে করছে না।
রীণা অবিশ্বাসের সুরে বলল, বাড়িতে কেউ না থাকলে লোকে কি বাইরে রাত কাটায়? ডাক্তারের বাড়ি বলে তো চোর—ডাকাতে খাতির করবে না।
সঞ্জয় হাই তুলে বলল, তা হয়তো ঠিক। তবে এও ওঁর একটা খেয়াল। হয়তো স্টকে নতুন কোনো গল্প জমেছে। রাত জেগে শোনাবেন।
কথাটা রীণার মনে ধরল না। বলল, আমার ধারণা—নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে উনি এখানে থাকতে চাইছেন।
রীণা একটু চুপ করল। সঞ্জয় কিছু বলার আগেই বলল, আমার মনে হয় আজই শনিবার। সত্যি করে বলো না গো!
—দূর! তোমার কেবল সেই এক কথা—শনিবার—শনিবার—সাড়ে নটা বাজল। একটু ঘুমোও তো।
—এত তাড়াতাড়ি ঘুমোব? যদি মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়?
—ভাঙবে না। তুমি ঘুমোও।
রীণা ঘুমোবার জন্যে পাশ ফিরল। তারপরেই জিজ্ঞেস করল, পুপু কী করছে?
—ঘুমোচ্ছে।
—মশারি টাঙিয়ে দিয়েছ তো?
—হ্যাঁ, হ্যাঁ। তোমার কোনো চিন্তা নেই। এবার তুমি একটু ঘুমোও।
বলে সঞ্জয় তাড়াতাড়ি বাইরের ঘরে চলে এল।
.
রাত সাড়ে দশটা।
বাইরের ঘরে সঞ্জয় আর ডাক্তার রুদ্র। ডিভানের ওপরে ডাক্তার রুদ্র র্যাগ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছেন। মাটিতে শুয়েছে সঞ্জয়।
ডাক্তার রুদ্র জিজ্ঞেস করলেন, কী ভাবছ? তুমি অবশ্য আমার সামনে স্বচ্ছন্দে স্মোক করতে পার।
সঞ্জয় সে কথায় সাড়া না দিয়ে বলল, ও তো বেশ সামলে উঠেছিল। হঠাৎ এমন হল কেন?
ডাঃ রুদ্র বললেন, আমি তো তোমায় বলেছি এ বাড়ি না ছাড়লে ও কখনো একেবারে সুস্থ হবে না। পুপুও ভালো নেই। কেমন Pale হয়ে যাচ্ছে। কেন?
সঞ্জয়ের বুকটা কেঁপে উঠল। উত্তর দিতে পারল না।
—সত্যি হোক মিথ্যে হোক এ বাড়ির সঙ্গে ওর মানসিকতার সম্পর্ক এমন একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে ওর subconscious মনে সবসময় একটা আতঙ্ক দানা বেঁধে রয়েছে। তার থেকে ওর নিষ্কৃতি নেই। ওষুধ দিয়ে ওকে আর সুস্থ করা যাবে না।
—আমি ভাবছি, এত দুর্বল হয়ে পড়ল কেন? সন্ধের সময়ে বলছিল—কিছুই মনে করতে পারছে না। সব যেন খেই হারিয়ে ফেলছে।
ডাঃ রুদ্র বললেন, শুধু শরীর নয়, মনও অসুস্থ মনে দুর্বল হয়ে পড়বেই।
একটু থেমে বললেন, আচ্ছা, আজ যে শনিবার ও জানে না তো?
সঞ্জয় বলল, না। তবে আজই শনিবার কিনা বার বার জিজ্ঞেস করছিল। ক্যালেন্ডার দেখতে চাইছিল। আমি আগেই সরিয়ে রেখেছিলাম।
ডাঃ রুদ্র বললেন, ভালো করেছ। ও যদি জানতে পারে আজ সেই শনিবার তাহলে একেবারে ভেঙে পড়বে।
—কিন্তু ক্যালেন্ডার সরিয়ে রেখেও নিস্তার নেই। আমায় অনেক জেরা করল।
—কীরকম?
—জানতে চাইল আপনি রাত্তিরে হঠাৎ এখানে থাকছেন কেন? বললাম—কাকিমা এখানে নেই—বাড়ি খালি। তাই যেতে চাইলেন না। ও বিশ্বাস করল না। ওর ধারণা—হয় ওর অবস্থা ভালো নয়, না হয় নিশ্চয়ই আজ সেই শনিবার বলে আপনি রাতে এখানে থাকছেন।
ডাক্তার রুদ্র গম্ভীর হয়ে গেলেন। একটু চুপ করে থেকে বললেন, এসব চিন্তা ওর মাথায় ঢুকলে তো মুশকিলের কথা।
সঞ্জয়ের মুখটা শুকিয়ে গেল।—মুশকিল কেন বলছেন?
—জানো তো ওর হার্ট কীরকম দুর্বল। প্রেশারও অনেক কম। তার ওপর যদি হঠাৎ ও ভয় পায়—
সঞ্জয় ব্যাকুল হয়ে বলল, তাহলে—
—আমরা তো ওর পাশেই রয়েছি। সবরকম ব্যবস্থাই করে রেখেছ। দেখা যাক।
.
ঘড়িতে এগারোটা বাজল।
ডাক্তার রুদ্র টেবিল—লাইট জ্বেলে একটা বই পড়ছিলেন। বইটা মুড়ে রেখে বললেন, যদি আজ রাত্রে সত্যিই কেউ আসে তাহলে হাতে অন্তত ঘণ্টা তিনেক সময়।
সঞ্জয় মাটিতে মশারি টাঙিয়ে পুপুকে নিয়ে শুয়েছিল। বলল, ততক্ষণ একটু ঘুমিয়ে নেবেন ভাবছেন?
—না, এখনই ঘুমোনো নয়। আগে রীণার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। বলে ব্যাগটা নিয়ে ডাক্তার রুদ্র ভেতরে গেলেন।
মিনিট দশেক পরে বাইরে এসে বসলেন। সঞ্জয়কে বললেন, একটা ইনজেকশান দিলাম। গভীর ঘুমের মধ্যে থাকুক। তেমন কিছু ঘটলেও জানতে পারবে না।
.
বারোটা বাজল।
ডাক্তার রুদ্র বইটা মুড়ে চেয়ারের ওপর রাখলেন। টেবিলে থেকে প্রেশার মাপার যন্ত্রটা নিয়ে রীণার ঘরে ঢুকলেন।
পুপু উসখুস করছিল। পিঠ চাপড়ে ওকে আবার ঘুম পাড়িয়ে সঞ্জয় যখন বিছানা থেকে বেরিয়ে এল ডাঃ রুদ্র তখন রীণাকে পরীক্ষা করে ফিরে এসেছেন।
—কেমন দেখলেন?
—একই রকম। তবে ঘুমোচ্ছে। আচ্ছা, এবার তুমি ওর ঘরের আলোটা নিভিয়ে দাও।
—একেবারেই নিভিয়ে দেব, না নীল বালবটা—
—না, একেবারে অন্ধকার করে দাও।
সঞ্জয় একটু অবাক হল। কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করল না। আলো নিভিয়ে দিয়ে বেরিয়ে এল।
—এবার চলো আমরা বাইরে গিয়ে বসি।
—বাইরে? কেন?
—শোনো সঞ্জয়, আজ যখন রাত্তিরটা এখানে থেকেই গেলাম তখন একটু বিশেষ করে লক্ষ করতে চাই, সত্যিই কিছু ঘটে কি না!
এত মানসিক দুশ্চিন্তার মধ্যেও সঞ্জয় একটু হাসল। বলল, কিছু ঘটলেও তো আপনি— আমি দেখতে পাব না।
—কী করে জানছ? এর আগে যখনই ঘটনা ঘটেছে তখন তোমরা ঘুমোও। জেগে থাকলে হয়তো কিছু দেখতে না পাও, বুঝতে পারতে।
সঞ্জয় আবার হাসল।—তার জন্যে আমরা রীণাকে, পুপুকে একলা ফেলে বাইরে যাব? সেটা কি উচিত হবে?
—হ্যাঁ, এ ঘরটাও খালি রাখতে হবে।
—এই শীতে আমরা বাইরে কোথায় বসব?
—ব্যালকনিতে, ওইখানেই আমরা বসব। বলে নিজেই একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বাইরে চলে এলেন। অগত্যা সঞ্জয়কেও আর একটা চেয়ার নিয়ে বসতে হল।
—যাক, সিঁড়ি থেকে রীণার ঘর পর্যন্ত সব ফাঁকা। ডাঃ রুদ্র যেন বেশ খুশি হলেন।
—আপনি কি ভেবে রেখেছেন তিনি এলে আমরা সিঁড়ির মুখেই জাপটে ধরব?
সঞ্জয়ের বলার ভঙ্গিটা বিদ্রুপের মতো শোনাল।
—না, তা নয়। spirit যাতে বিনা বাধায় রীণার কাছে যেতে পারে তার জন্যেই এই ব্যবস্থা।
সঞ্জয় গরম চাদরে আপাদমস্তক মুড়ি দিয়ে বলল, spirit যদি সত্যি আসতে চায় সে কি কোনো বাধা মানবে? রীণা যখন তাকে দেখেছিল, ঘরের দরজা কি ভেতর থেকে বন্ধ ছিল না?
রুদ্র বললেন, সে বাধা অন্য। আমি বলছি ঘরের মধ্যে একাধিক লোক জেগে বসে থাকলে স্পিরিট কিছুতেই আসে না। আমার মনে হয়, মানুষ যেমন প্রেতের ভয় পায়—প্রেতরাও তেমনি মানুষকে ভয় পায়। দুর্বল একাকী মানুষই তাই প্রেতের শিকার হয়। যাক, টর্চটা নিয়েছ তো?
—হ্যাঁ। বলে বড়ো টর্চটা রুদ্রের হাতে দিল।
কয়েক মিনিট দুজনেই চুপচাপ। ডাঃ রুদ্র একটা চুরুট ধরালেন। বললেন, এখনকার মতো একটা চুরুট খেয়ে নিই। এরপর আর খাওয়া যাবে না। চুরুটের আগুন এমনকি গন্ধও হয়তো স্পিরিটের আসার পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
—আচ্ছা, spirit—এর আসার জন্যে আমরা ব্যাকুলই বা হচ্ছি কেন? সে তো আমাদের আনন্দদান করতে আসবে না।
ডাঃ রুদ্র বললেন, spirit যদি সত্যিই তার কথা রাখে তা হলে যা ঘটবার তা আজই ঘটে যাক। নইলে তো আবার অনিশ্চিন্তে আর একটা দিনের অপেক্ষা করতে হবে।
আবার কিছুক্ষণ চুপচাপ। হঠাৎ ঘরের ভেতরে মনে হল রীণা জেগে উঠেছে।
ও কী ডাকছে? সঞ্জয় গায়ের র্যাগ ফেলে রেখে ছুটল। পিছনে ডাক্তার রুদ্র।
সঞ্জয় আলো জ্বালল। দেখল রীণা উসখুস করছে আর মুখে অস্বস্তির একরকম শব্দ। লেপটা মাটিতে পড়ে গেছে।
সঞ্জয় লেপটা তুলে ভালো করে গায়ে ঢাকা দিয়ে কিছুক্ষণ রীণার কাছে বসে রইল।
—এবার এসো।
সঞ্জয় উঠে এল।
—আলোটা নিভাও।
অগত্যা সঞ্জয়কে আলো নিভিয়ে দিতে হল। বাইরের ঘরে এসে মশারির মধ্যে টর্চ ফেলে একবার পুপুকে দেখে নিল সঞ্জয়। না, পুপু নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে।
দুজনে আবার বসল।
নিশুতি শীতের রাত থমথম করছে। পরিষ্কার নীল আকাশের গায়ে তারাগুলোর রহস্যময় নিঃশব্দ হাসি।
সঞ্জয় বলল, আমি এখনো এসব বিশ্বাস করি না। সত্যি কথা বলতে কি থ্রিল অনুভব করলেও জানি না এমন কেন মনে হচ্ছে যে আমরা বড়োই অসহায়। তার ওপর নিরস্ত্র।
ডাক্তার রুদ্র হেসে বললেন, অশরীরীদের মোকাবিলা করতে রিভলবার কোনো কাজে লাগে না—এই টর্চই একমাত্র অস্ত্র।
.
আরও কতক্ষণ কেটে গেল। নীচে কারো ঘরে দেওয়াল—ঘড়িতে ঠং করে শব্দ হল। সঞ্জয় চমকে উঠল।—কটা বাজল? একটা না দেড়টা?
—দেড়টা। বলে ডাক্তার রুদ্র হাতের আড়াল দিয়ে আলগা করে টর্চের বোতাম টিপে রিস্টওয়াচটা দেখে নিলেন।
—দেড়টা! তা হলে একটা বাজল কখন?
ডাক্তার রুদ্র বললেন, তুমি তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলে।
সঞ্জয় লম্বা আলিস্যি ভাঙল।
—সত্যি আমি আর পারছি না। ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে। শুধু শুধু—
সঞ্জয় কথা আর শেষ করল না।
ডাক্তার রুদ্র গম্ভীর স্বরে বললেন, হোক শুধু শুধু। এ ছাড়া উপায়ও ছিল না। আজ এই শনিবারের রাত্রিটা ছিল রীণার পক্ষে মারাত্মক। সবাই ঘুমিয়ে পড়লে রীণার এতক্ষণ কী হত বলতে পারি না।
—তা হলে আপনি বলছেন, আমরা পাহারা দিচ্ছি বলে আজ আর কিছু হবে না?
—না হওয়াই স্বাভাবিক। যদি হয়ও মারাত্মক কিছু হবার আগেই আমরা গিয়ে পড়ব।
এমনি সময়ে দূরে বড়ো রাস্তায় একটা খ্যানখেনে বিকৃত গলার চিৎকার শোনা গেল।
ডাক্তার রুদ্র চমকে উঠলেন।
সঞ্জয় হেসে বলল, ও কিছু নয়। একটা মাতাল যাচ্ছে। রোজই এই সময়ে যায়।
বলে ব্যালকনির ধারে গিয়ে দাঁড়াল।
ডাক্তার রুদ্র হেসে বললেন, কী দেখছ? রাতের কলকাতার শোভা?
সঞ্জয় বলল, না। মাতালটার গলা শুনেছি, দেখিনি কখনো। তাই—
—দেখতে পেলে?
—হ্যাঁ, ওই যে যাচ্ছে—ঠিক যেন একটা ছায়ামূর্তি।
মাতালটা চলে গেল। সঞ্জয় তবু দাঁড়িয়ে রইল।
নিস্তব্ধ রাত। বাড়ির পিছনে কম্পাউন্ডের গায়ে বনঝোপের মধ্যে রাতকানা একটা পাখির পাখা ঝাপটানো। ও দিকে যশোর রোডের মসৃণ দেহের ওপর দিয়ে গর্জন করতে করতে মাঝেমধ্যে ছুটছে লরি। স্ট্রিট—লাইটের আলোয় ঝলমল করছে রাস্তাটা।
গোটা বাড়িটা গভীর রাতে একটা রহস্যপুরীর মতো দাঁড়িয়ে। কত নিশ্চিন্তে নীচের তলায় মহিমাবাবু, অমৃতবাবুরা ঘুমোচ্ছেন। দোতলার ঘরে উদ্ভিন্নযৌবনা কিশোরীটি কি কোনো সুখস্বপ্ন দেখছে?
—আচ্ছা সঞ্জয়, বাড়িটার ওপর ওরকম মধ্যযুগীয় গম্বুজটা কেন ভেবেছ কখনো?
—না। ও আর ভাবব কি? বাড়িওয়ালার শখ।
সঞ্জয় চেয়ারে বসল।
—কিন্তু কোন যুগের মানুষের এইরকম শখ ছিল?
—তা বলতে পারব না।
—সঠিক বলতে না পারলেও অনুমান করা যায় এ তল্লাটে এত পুরোনো বাড়ি আর নেই। যদিও পরে অনেক অলটারেশান হয়েছে।
—হ্যাঁ, তা হয়েছে। তবে তিনতলাটা এখনো ইনকমপ্লিট। আর সিঁড়িটা—
সঞ্জয় প্রচণ্ড জোরে নিজের গালে একটা চড় মেরে বলে উঠল—উঃ! মশায় অস্থির করে দিল। এ অঞ্চলের মশা! এদের কামড়ই আলাদা।
—আচ্ছা, মিস থাম্পি বাড়িটা সম্বন্ধে কিছু বলেননি?
সঞ্জয় ইতস্তত করে বলল, হ্যাঁ বলেছেন। তাঁর মতে এখানে কিছু আছে।
—উনি এ কথা বলেছেন?
সঞ্জয় হাই তুলে হালকা মেজাজে বলল, হ্যাঁ, উনি যেখানেই যান সেখানেই কিছুর সন্ধান পান বোধ হয়। মান্তুর এক বান্ধবীর বাড়ি গিয়েছিলেন। সেখানেও অশরীরী আত্মা দেখেছিলেন।
—তাই নাকি?
—হ্যাঁ। তবে এখানে কিছু দেখার ভাগ্য তাঁর হয়নি। বুঝতে পেরেছিলেন।
ডাক্তার রুদ্র চোখ বুজিয়ে কিছু ভাবতে লাগলেন। হঠাৎ একসময়ে তিনি চমকে উঠলেন।
—কিছু শুনতে পাচ্ছ? ডাঃ রুদ্রর স্বরটা কেমন চাপা।
—মশার ঐকতান ছাড়া আর তো কিছু শুনছি না।
ডাক্তার রুদ্র চুপ করে রইলেন। সঞ্জয়ও আর কিছু বলল না। জোর করে একটা হাই তুলল।
আরো কিছুক্ষণ কাটল। ডাক্তার রুদ্র হঠাৎ র্যাগটা খুলে ফেললেন।
—কী হল? এই ঠান্ডায় র্যাগ খুললেন কেন?
—কেমন একটা গরম হাওয়া বইছে না?
সঞ্জয় চোখ বুজিয়ে নির্লিপ্ত স্বরে বলল, গরম বা ঠান্ডা কোনো হাওয়াই তো পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে যেন পৃথিবীটা হাওয়াশূন্য হয়ে গেছে।
—কিন্তু, আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
—যা ঘটছে তা শুধু রাত্রিজাগরণ।
ডাক্তার রুদ্র এবার হাই তুললেন। বললেন, তা বটে। আমারও এখন ঘুম পাচ্ছে।
সঞ্জয় ব্যালকনির পাঁচিলে দু—পা তুলে চেয়ারে শরীরের আধখানা বিছিয়ে দিয়ে বলল, ঘুমোন তবে। ঘুমেই আরাম ঘুমেই শান্তি। ঘুমের তুল্য জিনিস নেই।
—আশ্চর্য, এত মনের জোর করেও ঘুম আটকাতে পারছি না। এমন কখনো হয় না। কিন্তু ঘুমোলে চলবে না। কটা বাজল? নিজেকে যেন নিজেই প্রশ্ন করলেন রুদ্র। সাবধানে টর্চের আলোয় ঘড়িটা দেখলেন।
—Just two, কিন্তু নীচের ঘড়িতে দুটো বাজল না তো?
সঞ্জয় চোখ বুজিয়েই বলল—বোধহয় শুনতে পাইনি।
—কিন্তু—এইটেই সময়। ঠিক দুটোতেই তো—
রুদ্র উঠে দাঁড়ালেন।
—রীণাকে একবার দেখে আসি।
সঞ্জয়ও উঠে পড়ল।
ঠিক সেই সময়ে ঘরের মধ্যে পুপু ককিয়ে কেঁদে উঠল। সেই কান্না শুনে সঞ্জয়ের রক্ত হিম হয়ে গেল। চিৎকার করে উঠল—কাকাবাবু, শিগগির—
বলে দৌড়ে ঘরের দিকে গেল।
দুটো ঘরই অন্ধকার। সঞ্জয় যখন বসার ঘরের সুইচ হাতড়াচ্ছে, ডাক্তার রুদ্র ততক্ষণে ভেতরের ঘরে ঢুকে পড়েছেন।
ঢুকেই তিনি সুইচে হাত দিলেন। আলো জ্বলল না। দেওয়ালে ধাক্কা লেগে টর্চটা হাত থেকে কোথায় ছিটকে পড়ল।
—লোডশেডিং! সঞ্জয়, টর্চটা—শিগগির—
সঙ্গে সঙ্গে সঞ্জয়ের হাতের টর্চের আলো ঝলকে উঠল। সেই আলো গিয়ে পড়ল রীণার বিছানায়। দেখল রীণার মাথা থেকে পিঠ পর্যন্ত ঝুলছে খাট থেকে। লেপটা পড়ে আছে মাটিতে।
কয়েক মুহূর্ত…
সঞ্জয়ের পা দুখানা যেন মেঝের সঙ্গে আটকে গিয়েছে।
সঞ্জয়ের হাত থেকে টর্চটা ছিনিয়ে নিয়ে রুদ্র ছুটে গেলেন রীণার কাছে। এক হাতে টর্চ। অন্য হাতে কোনোরকমে তুলে ধরলেন মাথাটা।
—তাড়াতাড়ি এসো।
সঞ্জয় এগিয়ে এল। ওর হাত দুটো তখন কাঁপছে।
—পা দুটো ধরো। ওদিক থেকে ধরো—don’t get nervous.
সঞ্জয় বিছানার ওপর উঠে রীণার পা দুটো ধরল।
—এবার লম্বালম্বিভাবে শোওয়াতে হবে। দাঁড়াও—বালিশটা দিই—উঃ! আলোটাও এই সময়ে গেল! না, আলো তো দেখছি শুধু এ বাড়িতেই গেছে—ও কী! তুমি ওরকম করছ কেন? সরো। বলে ধমকে উঠলেন।
রীণাকে বিছানায় ঠিকমতো শুইয়ে দিয়ে রুদ্র নিজেই লেপটা তুলে রীণার গায়ে দিয়ে দিলেন।
—লণ্ঠনটা জ্বালো। কী হল? দাঁড়িয়ে রইলে কেন?
—ও বোধহয় আর নেই।
—কী যা—তা বকছ! ধমকে উঠলেন রুদ্র। আমার স্টেথস্কোপটা—লণ্ঠনটা জ্বালো না।
লণ্ঠনটা কোনোরকমে জ্বেলে দিয়ে সঞ্জয় বাইরের ঘরে গিয়ে পুপুর কাছে বসে রইল।
পুপু তখনো ফুলে ফুলে কাঁদছে।
ডাঃ রুদ্র স্টেথস্কোপ নিয়ে ঝুঁকে পড়লেন।
মিনিটের পর মিনিট কাটতে লাগল। রুদ্ধনিঃশ্বাসে সঞ্জয় বসে রইল অন্ধকারে।
রীণা কি বেঁচে আছে?
এটুকু বুঝতে কত সময় লাগে? এত দেরি হচ্ছে কেন?
তবু সঞ্জয় উঠে গিয়ে জানতে পারল না রীণা বেঁচে আছে কিনা।
—সঞ্জয়—please help me! ডাক্তার রুদ্র চেঁচিয়ে উঠলেন।
—আমার ব্যাগটা—
সঞ্জয় একঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে টেবিলের ওপর থেকে ব্যাগটা নিয়ে ডাক্তার রুদ্রের কাছে গেল।
—কী দেখলেন ডাক্তারবাবু?
—Thank God! হার্ট বিট পাওয়া যাচ্ছে। তোমার ছেলে কী করছে?
—ঘুমিয়েছে।
—যাক, অল্পর ওপর দিয়ে গেছে।
সঞ্জয় বিছানায় বসে পড়ে রীণার হাত দুটো কোলের ওপর টেনে নিল।
—হাত যে একেবারে ঠান্ডা।
—ও ঠিক হয়ে যাবে। তুমি একটু সেঁক দাও।
—হসপিটালে নিয়ে যাব?
—না, এখনই দরকার নেই। তেমন বুঝলে আমি বলব। গাড়ি তো রয়েছেই। উঃ! আর একটু দেরি হলেই শেষ হয়ে যেত।
.
সকালবেলা।
দু—জনে দু—কাপ গরম কফি নিয়ে বসেছে। দরজায় শব্দ।
সঞ্জয় চমকে উঠল। এত সকালে কে? তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলে দিল। দেখল মান্তু আর ললিতবাবু শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে।
—কী ব্যাপার?
—সকালেই চলে এলাম। মিস থাম্পি টেলিগ্রাম করেছিলেন। টেলিগ্রামটা পেতে একদিন দেরি হয়েছে। বলে টেলিগ্রামটা সঞ্জয়ের হাতে দিল।
টেলিগ্রামের বক্তব্য—যে কোনো প্রকারে আজকেই মিসেস গুপ্তকে আপনাদের কাছে এনে রাখুন। জীবন বিপন্ন।
সঞ্জয় টেলিগ্রামটা ললিতবাবুর হাতে ফেরত দিয়ে বলল, ভেতরে আসুন।