।। সতেরো।। সংকেত
বৃহস্পতিবার। বেলা তখন তিনটে।
সঞ্জয় একটু আগে রাউন্ড দিয়ে নিজের চেম্বারে এসে বসেছে। হঠাৎ টেলিফোন। সঞ্জয় রিসিভারটা তুলে নিল।
—হ্যালো!
ওপার থেকে ব্যাকুল কণ্ঠস্বর শোনা গেল—ডাঃ গুপ্ত? আমি বন্দনার মা—
—কী ব্যাপার?
—আপনি শিগগির চলে আসুন। আপনার স্ত্রী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেছেন।
—এখনি যাচ্ছি। বলে ফোন রেখে সঞ্জয় বেরিয়ে পড়ল।
কম্পাউন্ডে ঢুকে ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়ে সঞ্জয় প্রায় দৌড়ে তিনতলায় উঠল। দেখল বিছানায় শুয়ে আছে রীণা। মুখটা একেবারে সাদা। মাথার কাছে বসে আছেন বন্দনার মা। পুপুকে কোলে নিয়ে ঘুরছে বন্দনা।
রীণার জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু তাকাচ্ছে না। তাকাতে গেলেই কষ্ট হচ্ছে। সঞ্জয় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইল। একবার ডাঃ রুদ্রকে ফোন করার চেষ্টা করল। লাইন পেল না।
বিকেলের দিকে রীণা একটু একটু কথা বলল। কিন্তু কেন যে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে তা বলতে পারল না।
—আজও কিছু দেখেছিলে নাকি?
রীণা অতিকষ্টে বলল, মনে নেই। ভাবতে গেলেই সব কেমন যেন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।
—আচ্ছা, তুমি ঘুমোও।
বলামাত্রই রীণা অতি ধীরে পাশ ফিরে শুলো।
সঞ্জয় আবার ডাক্তার রুদ্রকে ফোন করল। এবারে পেয়ে গেল। ডাঃ রুদ্র সব শুনলেন। একটি কথাও বললেন না। শুধু বললেন,—যাচ্ছি।
সন্ধের সময়ে ডাঃ রুদ্র এলেন। রুগিকে দেখে মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল। সঞ্জয়ের তা লক্ষ এড়াল না। তবু জিজ্ঞেস করল, কীরকম বুঝছেন?
—বিশেষ ভালো না।
একটু থেমে বললেন, আমি তো তোমাকে বার বার বাসা বদলাতে বলেছি। এখনি বাসা না পাও, আমার বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেছিলাম। তা তো শুনলে না। জেদ ধরে রইলে। মনে রেখো, আর একদিন পরেই সেই শনিবার।
নিরুপায় সঞ্জয় বলল, এখন যদি নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় তো—
ডাঃ রুদ্র মাথা নাড়লেন—না, এ অবস্থায় ওকে আর নিয়ে যাওয়া যাবে না।
ডাঃ রুদ্রের একটা মিটিং ছিল। তাড়াতাড়ি উঠে পড়লেন। বলে গেলেন মিটিঙের পর আবার আসবেন। যাবার সময়ে জিজ্ঞেস করলেন, পুপু কেমন আছে?
সঞ্জয় অন্যমনস্কভাবে উত্তর দিল, ভালো।
—চোখ বসাটা?
পুপুকে নিয়ে বন্দনা বাইরে ঘুরছিল। সঞ্জয় ডাকল। বন্দনা পুপুকে নিয়ে এল। ডাঃ রুদ্র পুপকে ভালো করে দেখলেন।
—চোখটা কিন্তু তেমনি বসে আছে। চোখের কোণে কালো দাগটা যেন আরো prominent হয়েছে। দেখেছ?
সঞ্জয় নির্লিপ্তভাবে উত্তর দিল, হ্যাঁ। তবু ও ভালোই আছে। হাসছে খেলছে।
—কিন্তু চোখের নীচে কালিটা কীসের? ওটা এখনো আমরা ধরতে পারিনি। বলতে বলতে তিনি নেমে গেলেন।