১.১১ এক বনাম প্রকাণ্ড তিন
কয়েক দিন কেটে গেছে; অবশেষে উত্তর ভারতের প্রথম উৎরাই বেয়ে উঠে যাচ্ছি আমরা; আর ধীরে-ধীরে উঠে গেছে উৎরাইগুলো, যেন একেবারে জগতের শেষ চুড়োয় গিয়ে পৌঁছেছে তারা। কিন্তু উৎরাই এখানে চোখে পড়ে না; বেহেমথ প্রায় যেন অগোচরেই ক্রমশ উঠে যাচ্ছে, আমরা তা বুঝতেও পারছি না। ঝোড়ো আর বৃষ্টি-ভেজা আবহাওয়া, তবে তাপমাত্রা সহ্যের সীমা পেরোয়নি। রাস্তা এখনও দুর্গম নয়; তবে বেহেমথের কাছে আবার দুরধিগম্যই বা কী আছে?
হিমালয়ের শুভ্র-নীল চুড়োর কাছে এসে পড়েছি আমরা, কিন্তু আবহাওয়ার জন্যে এই আকাশছোঁয়া গিরিমালা স্পষ্ট করে দেখবার জো নেই। অথচ যতই তিব্বতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, জমি ততই বন্য ও এবড়োখেবড়ো হয়ে উঠেছে! তালীবন ছিলো এতক্ষণ দিগন্তে, এবার চোখের সামনে হলদে-সবুজ কলাগাছের সারি; আর রাশি-রাশি বাঁশঝাড়। ঝলমলে ম্যাগনলিয়া, স্নিগ্ধ মেপল, দীর্ঘ ওক, মস্ত বাদাম গাছ, ইণ্ডিয়া রবারের বন, হাওয়ায়-কাঁপা পাইন বন, উৎফুল্ল জেরানিয়াম, রডোডেনড্রন আর লরেল-রাস্তার দুপাশে এই আশ্চর্য নিবিড় বনানী চোখে পড়ে—যখন বৃষ্টি আর যখন রোদ, যখন তরুণ সকাল আর ছায়াঢাকা দূরসন্ধ্যা—সবসময়েই এই দৃশ্য ভঁজের পর ভাজ খুলে অফুরন্ত সৌন্দর্যের সংকেত পাঠিয়ে দেয়। তারই মাঝে-মাঝে বাঁশ-বেতের ছোটো-ছোটো খোড়োবাড়ি-ওলা ছোটো-ছোটো গ্রাম চোখে পড়ে—তবে যতই উপরে উঠছি জনালয় ততই কমে যাচ্ছে। মাঝে-মাঝে ছাইরঙা ঝাঁপসাধূসর আকাশ ভেঙে বর্ষা নামে, আমরা বাধ্য হয়ে স্টীম হাউসের বেঠকখানায় বসে আড্ডা দিই, তাশ খেলি, গল্পগুজব করি।
মাঝে-মাঝে চোখে পড়ে সরাইখানা, নিচু চৌকো বাংলোবাড়ি, দু-কোণায় দুটো স্তম্ভ উঠেছে; ভিস্তিওলা, বাবুর্চি আর খানশামা ছাড়া আর-কেউ থাকে না এ-সব সরাইয়ে। এ-সব সরাইয়ে চব্বিশ ঘণ্টার বেশি থাকতে হলে বিশেষ পারমিট নিতে হয় ইন্সপেক্টরের কাছ থেকে।
সতেরোই জুন এমনি-একটি সরাইয়ের কাছে আমরা আস্তানা গেড়েছি, আর সরাইখানার অভ্যাগতরা বেহেমথের দিকে বিতৃষ্ণা ও বিদ্বেষ ভরা ঈর্ষাতুর চোখে তাকিয়ে আছে। বেশ সাড়া পড়ে গেছে তাদের মধ্যে। সরাইখানায় অভ্যাগত তখন নেহাৎ কম ছিলো না : এমন নয় যে কোনো ইংরেজ অফিসার নেপাল থেকে ফিরছেন, বা কোনো হিন্দু সওদাগর লাহোর বা পেশোয়ার পেরিয়ে সদলবল নিয়ে আফগানিস্তান যাবার উদ্যোগ করছে। সরাইখানায় ছিলেন গুজরাটের এক ছোটো রাজ্যের রাজা কুমার গুরু সিং, জাঁকজমক-সহকারে ভারত-ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন তিনি। একাই যে তিনি সরাইখানার সবগুলি ঘরই দখল করে ছিলেন তা নয়—আশপাশের কুটিরগুলোতেও তার অনুচর পরিচারকদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিলো।
কুমারের অনুচরদের সংখ্যা কম করেও পাঁচশো হবে। বড়ো-বড়ো গাছের তলায় দুশো রথ দাঁড়িয়ে আছে সারি-সারি; কোনো রথের বাহন জিব্রা, কতগুলো আবার মোষে টানে, তাছাড়া রয়েছে প্রকাণ্ড তিনটে হাতি-হাতিগুলোর উপর জমকালো হাওদা বসানো, আর ছিলো গোটা কুড়ি উটের একটা বহর। বহরে কিছুরই অভাব নেই–আছে ওস্তাদ গায়ক ও বাদ্যকর, তরুণী নর্তকী, এমনকী কয়েকজন বাজিকর-কুমারের অবসর বিনোদনের উপায় তারা। উপরন্তু আছে তিনশো বেহারা ও দুশো শাস্ত্রী।
কৌতূহলী হয়ে সন্ধেবেলায় আমি একবার কুমারের তাঁবুর আশপাশ থেকে ঘুরে এলুম। কিন্তু কুমারের দর্শন পাওয়া গেলো না। স্বাধীন রাজা তিনি, ইংরেজদের তোয়াক্কা করেন না, সহজে কি আর তার দর্শন মেলে?
ঠিক ছিলো, পরদিন সকালবেলায় আমরা রওনা হবো। পাঁচটায় কালু বেহেমথের চুল্লিতে আগুন জ্বালাবার উদ্যোগ করলে। আমরা একটা ছোট্ট ঝরনার ধারে বেড়াতে গেলুম। মিনিট চল্লিশ পরে বয়লার তপ্ত হয়ে ফোশ-ফেঁাশ করে উঠলো, স্টর যাত্রার উদ্যোগ করে হাওদায় গিয়ে উঠে বসলো। এমন সময় জনা পাঁচ-ছয় ভারতীয় এসে হাজির। রেশমি কুর্তার উপর শাদা উত্তরীয় জড়ানো, মাথায় জরির কাজ-করা পাগড়ি : সঙ্গে জনা-বারো সেপাই–বন্দুক ও তলোয়ার হাতে। একজন শাস্ত্রীর হাতে একটা সবুজ পাতার মুকুট, তার মানে এদের মধ্যে রাজবংশীয় কেউ আছেন।
রাজবংশীয় ব্যক্তিটি আসলে স্বয়ং কুমারসাহেব। বয়েস তার বোধকরি পঁয়ত্রিশ, মরাঠা আদল মুখে, চিবুক কঠোর ও তীক্ষ্ণ্ণ। কুমার আমাদের যেন তার চর্মচক্ষুতে দেখতে পেলেন না। সোজা এগিয়ে গেলেন অতিকায় বেহেমথের দিকেস্টর তখন বেহেমথকে আস্তে-আস্তে চালাচ্ছে। একটু তাকিয়ে রইলেন কুমার তার দিকে, তারপর স্টরকেই সরাসরি জিগেস করলেন, কে বানিয়েছে এটা?।
স্টর আঙুল দিয়ে ব্যাঙ্কসকে দেখালো—ব্যাঙ্কস তখন পাশেই দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সঙ্গে।
কুমার গুরু সিং চমৎকার ইংরেজিতে আস্তে, যেন অনিচ্ছা সত্ত্বেও, ব্যাঙ্কসকে জিগেস করলেন, আপনি বানিয়েছেন?
হ্যাঁ, আমি, বললে ব্যাঙ্কস!
কে যেন বলেছিলো ভূটানের স্বর্গত রাজাসাহেবের একটা অদ্ভুত খেয়াল থেকেই…
ব্যাঙ্কস ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালে।
কুমার একটু কাঁধ ঝাঁকালেন, যখন জ্যান্ত রক্ত-মাংসের হাতি পাওয়া যায়, তখন খামকা একটা কলের হাতি বানিয়ে কী লাভ?
হয়তো, বললে ব্যাঙ্কস, ভূটানের রাজা ভেবেছিলেন তার হাতিশালার সব হাতির চেয়ে এটা অনেক শক্তিশালী হবে।
ফুঃ! কুমারের গলায় ঘৃণা ফুটে উঠলো, হাতির চেয়েও শক্তিশালী? একটা তুচ্ছ কল?
অনেক বেশি শক্তিশালী, ব্যাঙ্কস আবার বললে।
আপনার হাতিগুলো একে গায়ের জোরে ধাক্কা দিয়েও একটু নড়াতে পারবে না, হড একটু অসহিষ্ণুভাবে বলে উঠলো।
আপনি বলছেন…! কুমার বললেন।
আমার বন্ধু কেবল এ-কথাই বলতে চাচ্ছেন যে দশ জোড়া ঘোড়া আর আপনার ওই তিনটে হাতি যদি একসঙ্গে এই নকল হাতিটাকে নড়াবার চেষ্টা করে, তাহলেও একে একফুটও নড়াতে পারবে না, ব্যাঙ্কস যেন প্রায় ছোটোখাটো একটা বক্তৃতাই দিয়ে ফেললে।
এর একবর্ণও আমি বিশ্বাস করি না, কুমারসাহেব বলে উঠলেন।
কিন্তু বিশ্বাস না-করলে আপনি ভুল করবেন, হুড তক্ষুনি তাঁকে জানালে।
কুমার এতক্ষণে তার ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছুলেন। বিরোধিতা তার ধাতে মোটেই সয় না।
তাহলে এখানেই কি আমরা একবার পরীক্ষা করে দেখতে পারি? কুমার জিগেস করলেন।
নিশ্চয়ই পারেন, ব্যাঙ্কস বললে।
কুমার গুরু সিং বললেন, একটা বাজি ধরলে হয় না? আপনাদের হাতি যে পিছু হঠবে—
কে বললে, পিছু হঠবে, হুড অসহিষ্ণুভাবে বলে উঠলো।
আমি বলছি, গুরু সিং বললেন।
মহারাজ কত টাকা বাজি রাখতে চান? ব্যাঙ্কস মৃদুস্বরে জিগেস করলে।
চার হাজার—অবশ্যি সে-টাকা হারাতে যদি আপনাদের গায়ে না-লাগে।
বাজির অঙ্কটা নেহাৎ ফ্যালনা নয়। যদিও বেহেমথের জয় সম্বন্ধে তার কোনো সংশয় ছিলো না তবুও খামকা এমন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছিলো না ব্যাঙ্কস।
রাজি নন তো? সে আমি আগেই জানতুম, কুমারের গলার স্বর বিদ্রূপে ভরে গেলো।
নিশ্চয়ই রাজি, কর্নেল মানরো এতক্ষণে কথা বললেন।
তাহলে কর্নেল মানরো চার হাজর টাকা বাজি ধরছেন?
মহারাজ যদি ইচ্ছে করেন, তাহলে দশ হাজার টাকা বাজি ধরতে পারি। কর্নেল মানরো জানালেন।
বেশ, তাহলে তা-ই হোক, তক্ষুনি উত্তর দিলেন গুরু সিং।
ব্যাঙ্কস সার এডওয়ার্ডের হাত চেপে ধরে ধন্যবাদ জানালে। রাজার অসহিষ্ণুতার উত্তরে সে যে দ্বিধায় পড়েছিলো, সার এডওয়ার্ড তাকে তার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। কিন্তু তার ভুরু কুঁচকে গেলো একটু সংশয়ে-কে জানে তার এঞ্জিনের শক্তি সে সত্যি করে জানে কিনা।
আমরা রাস্তার একপাশে সরে দাঁড়ালুম। বাজির খবর শুনে অনেক ভারতীয় এসে ভিড় করেছিলো সেখানে। ব্যাঙ্কস নীরবে গিয়ে হাওদায় উঠে বসলো স্টরের পাশে।
বেহেমথের শুঁড় থেকে একঝলক ধোঁয়া বেরিয়ে এলো।
ইতিমধ্যে কুমার গুরু সিং-এর ইঙ্গিতে একদল অনুচর গিয়ে রাজার প্রকাণ্ড হাতি তিনটিকে নিয়ে এসেছে। হাতিগুলোর পিঠে আর সেই জমকালো হাওদা নেই এখন। বাংলা দেশের বিখ্যাত হাতি দাক্ষিণাত্যের হস্তীকুলের চেয়ে অনেক প্রকাণ্ড ও শক্তিশালী। তিনটি মাহুত বসে আছে হাতির পিঠে, হাতে অঙ্কুশ–কিন্তু হাতিগুলো এত শিক্ষিত যে ইঙ্গিত করলেই চলে, অঙ্কুশ ব্যবহার করতে হয় না। হাতি তিনটি যখন রাজার সামনে দিয়ে গেলো, তখন যেটি যুথপতি—সবচেয়ে প্রকাণ্ড সেটা—হাঁটু গেড়ে বসলো রাজার সামনে, তারপরে শুঁড় তুলে তাকে অভিবাদন করলে। তারপর উঠে সঙ্গীদের নিয়ে এসে বেহেমথের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে এবং কিঞ্চিৎ বোধহয় বিস্মিতই হলো এই অদ্ভুত হস্তীপ্রবরকে দেখে।
হুড ভারি অধীর হয়ে পড়েছিলো-কৌতূহলে ও উত্তেজনায়; সত্যি বলতে আমিও একটু বিচলিত হয়েছিলুম; কিন্তু মানরো নির্বিকার-কুমার গুরু সিং-এর চেয়েও অনেক বেশি নির্বিকার।
ব্যাঙ্কস উপর থেকে বললে, আমরা প্রস্তুত। মহারাজ যখনই বলবেন—
আমি এক্ষুনি বলবো, কুমার বলে উঠলেন।
কুমার ইঙ্গিত করতেই মাহুতরা অদ্ভুত একটা শিস দিয়ে উঠলো, হাতি তিনটে টান হয়ে দাঁড়ালো, বেহেমথ একটু এগিয়ে এলো।
ব্যাঙ্কস শান্ত গলায় স্টরকে বললে, ব্রেক ঠেলে ধরো।
তখুনি শুঁড় দিয়ে একটু ধোঁয়া বেরিয়ে এলো, আর বেহেমথ স্থির হয়ে দাঁড়ালো —অবিচল ও অকম্পিত।
মাহুত তিনজন নানাভাবে উত্তেজিত করলো হাতিদের, তারাও সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ধাক্কা দিলে বেহেমথকে—কিন্তু বেহেমথ যেন একটা অনড় পাহাড়-মাটি থেকে একটুও নড়লো না সে। কুমার গুরু সিং এত জোরে তার ঠোঁট চেপে ধরলেন যে ঠোঁট কেটে রক্ত বেরিয়ে এলো। হুড হাততালি দিয়ে উঠলো।
ব্যাঙ্কস চেঁচিয়ে নির্দেশ দিলে, এবার সামনে এগোও।
অমনি আবার শুঁড় দিয়ে ধোঁয়া বেরিয়ে এলো, আস্তে ঘুরে গেলো বেহেমথের চাকা–হাতি তিনটি আস্তে-আস্তে পিছু হঠতে লাগলো—আর অনিচ্ছুক পিছু-হঠার সাক্ষী রয়ে গেলো মাটির উপর গভীর-করে-আঁকা তাদের পায়ের ছাপ! তারপরে বেহেমথ যখন আরো জোরে এগুলো, পাশে উলটে পড়ে গেলো হাতি তিনটি—কোনো বাধাই দিতে পারলে না বেহেমথকে। হড চীৎকারে তার উল্লাস প্রকাশ করলে মানরো কী-একটা ইঙ্গিত করলেন ব্যাঙ্কসকে। ব্যাঙ্কস ব্রেক টেনে বেহেমথকে আবার থামিয়ে দিলে।
রাজার প্রকাণ্ড হাতি তিনটি তখন উলটে পড়েছে মাটিতে, চিৎপাত হয়ে আর অসহায় ভাবে শূন্যে দুলছে তাদের পা। কুমার ততক্ষণে সেখান থেকে চলে গেছেন : শক্তি পরীক্ষার শেষটুকু দেখবার জন্যে আর মিথ্যেমিথ্যি অপেক্ষা করেননি।
বেহেমথ থামতেই হাতি তিনটি করুণ ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালে, তারপর যখন বেহেমথের পাশ দিয়ে সরাইয়ের দিকে আবার ফিরে যাচ্ছে তখন যূথপতিটি আবার হাঁটু গেড়ে বসলো, শুঁড় শূন্যে তুলে অভিবাদন করলে বেহেমথকে : পরাজয় স্বীকার করায় তার কোনো লজ্জা নেই, জয়ীর সম্মান সে দিতে জানে।
একটু পরেই রাজার এক অনুচর এসে টাকার থলি তুলে দিলে মানরোর হাতে–মানরো থলিটা নিলেন বটে, তারপর মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে বললেন, মহারাজের অনুচরদের জন্যে আমাদের বখশিশ রইলো। বলে ধীরে গিয়ে তিনি স্টীম হাউসে উঠে পড়লেন।
বেহেমথ ততক্ষণে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। একটু পরেই আমরা রওনা হয়ে পড়লুম। এবার স্পষ্টই উৎরাই ধরে যেতে হবে; কুমার গুরু সিং-এর শিবির আর সরাই খানিক পরেই পিছনে মিলিয়ে গেলো।
পঁচিশে জুন যখন একটানা সাত দিন এগুবার পর বেহেমথ একটি পাহাড়ি নদীর পাড়ে থামলো, তখন আমরা সমুদ্রতল থেকে ছ-হাজার ফিট উপরে এসে পৌঁছেছি–ঠিক ধবলগিরির তলায় থেমেছে বেহেমথ, যার চুড়ো উঠে গেছে ২৭০০০ ফুট উপরে। কলকাতা থেকে প্রায় একহাজার মাইল দূরে এসে আমাদের উত্তর ভারত ভ্রমণের এই প্রথম পর্যায় শেষ হলো। এবার এই নেপালের বিষম জঙ্গলে আমাদের জন্যে কী অপেক্ষা করে আছে, কে জানে? কর্নেল মানরোর সঙ্গে তার চিরশত্রু নানাসাহেবের সাক্ষাৎ হবে কি এখানে? না কি তার কাছে পুরো যাত্রাটাই মনে হবে বুনোহাঁসের পিছন-ধাওয়া? কারণ নানাসাহেবের মৃত্যুর সংবাদ তার যে মোটেই বিশ্বাস হয়নি, তা আমি কেন যেন সারাক্ষণই অনুভব করতে পারছিলুম।
–-মঁসিয় মোক্লের-এর দিনপঞ্জি আপাতত এখানেই শেষ–