অদৃশ্য ছায়া
পরের দিন রাত্রে সুব্রত কিরীটীকে চিঠি লিখছিল :-
কিরীটী,
চাকরি এক চিঠিতেই মিলে গেছে। পুরাতন রাজবাড়ির কাছেই থাকবার জন্য কোয়ার্টার মিলেছে। কাজের কথা বিশেষ এখনও কিছু হয়নি। তবে সামান্য আলাপে অনুমানে যা বুঝেছি, বর্তমানে স্টেটের মধ্যে পুকুরচুরি হচ্ছে, তারই উপর আমায় গোয়েন্দাগিরি করতে হবে, রাজাবাহাদুরের পক্ষ হতে। অত্যন্ত সন্দিগ্ধমনা লোক এই রাজাবাহাদুর।
ডাঃ অমিয় সোমের সঙ্গে সামান্য মৌখিক আলাপ হয়েছে। মনে হল সাধারণ নয়। গভীর জলের মাছ।
তারপর আমাদের সতীনাথ লাহিড়ী মশাই, তাঁর পরিচয় দিতে সময় লাগবে। তাঁর চোখের দৃষ্টিটা বড় সাংঘাতিক বলে মনে হয়। এবং মনে হয় একটি আসল শিয়াল চরিত্রের মানুষ! ঈশপের গল্পের সেই শিয়াল ও বোকা কাকের গল্প মনে আছে? তারপর রায়পুর জায়গাটা, এর কিন্তু আমার মতে রায়পুর নাম না দিয়ে শালবনী নাম দেওয়াই উচিত ছিল।
শালবনের ওপারে আছে একটি ঘন জঙ্গল। শোনা যায় বন্যরা ও ব্যাঘ্রের উৎপাতও মাঝে মাঝে হয় সেখানে, তবে ভাল শিকারী নেই এই যা দুঃখ। একটা যদি দোনলা বন্দুক পাঠাস, শিকার করে আনন্দ পেতাম। ওদিককার সংবাদ কি?
তোর কল্যাণ
***
দিন দুই বাদে সুব্রতর চিঠির জবাব এল।
সু–তোর দুটো চিঠিই পেলাম। দোনলা বন্দুক চাস পাঠাব। কিন্তু রাজবাড়ির মোহে হারাধনকে হেলা করিস না। He is a jewel—একেবারে খাঁটি হীরে। তার পর আমাদের পূজ্যপাদ লাহিড়ী মশাই। তোর দৃষ্টিশক্তির প্রশংসা করি। জানিস না বোধ হয়, ডাক্তারী শাস্ত্রে চক্ষুকে সজীব ক্যামেরার সঙ্গে তুলনা করে? রায়পুরের নামটা তো আমাদের হাতে নয়, আর আমাদের মোকররী স্বত্বও ওতে নেই, অগত্যা শালবনী নাম ছেড়ে রায়পুরই বলতে হবে। ভাল করে সন্ধান নে দেখি পুকুরচুরির সিঁধকাঠিটা কার হাতে ঘোরে? হ্যাঁ ভাল কথা, ওখানকার অধিবাসীদের মধ্যে, মানে রাজাবাহাদুরের প্রজাবৃন্দের মধ্যে, সাঁওতাল জাতটা আছে কি? অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সংবাদ এটা, পরপত্রে যেন পাই-তোর ক।
***
না, সুব্রত হারাধন ও জগন্নাথকে ভোলেনি। সন্ধ্যার দিকে প্রায়ই দু-তিন ঘণ্টা করে তাঁদের ওখানে গিয়ে কাটিয়ে আসে গল্পে গল্পে।
জগন্নাথ অত্যন্ত স্বল্পভাষী; কিন্তু এই সামান্য বয়সেই সে এত পড়াশুনা করেছে যে ভাবলেও তা অবাক হয়ে যেতে হয়। কথা সে খুবই কম বলে বটে, কিন্তু যে দু-চারটে কথা বলে, অন্তরে যেন দাগ কেটে বর্সে যায়। হারাধন কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির, মাথার গোলমাল হওয়ার পর থেকে কথাটা তিনি একটু বেশীই বলেন। বিশেষ করে তাঁর অভিযোগটা যেন পৃথিবীর যাবতীয় মানুষের প্রতি ও যে দেবতাটিকে চোখে কোনো দিনও কেউ দেখতে পায় না—তাঁর প্রতি। জগন্নাথ লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে এসে বসায়, মুখে তিনি সর্বদা জগন্নাথকে গালাগালি দিলেও,অন্তরে তিনি বিশেষ খুশীই হয়েছিলেন। ইদানীং অর্থের প্রাচুর্য না থাকলেও অভাব তেমন তাঁর ছিল না। তাছাড়া বছর পাঁচ মাত্র মাথার গোলমালটা একটু বেশী হওয়ায়, জগন্নাথ নিজেই টাকাকড়ির ব্যাপারটা দেখাশুনা করত।
সামান্য কয়েকদিনের পরিচয় হলেও, দাদু ও নাতির সুব্রতকে খুব ভালই লেগেছে।
সমস্ত দিনের কাজকর্মের পর সুব্রত নিয়মিত হারাধনের বাসায় এসে রাত্রি নটা-দশটা পর্যন্ত কাটিয়ে যেত। বাড়ির ভিতরে খোলা বারান্দায় চেয়ার পেতে তিনজনে বসে নানা গল্পগুজব হত। বেশীর ভাগ জগন্নাথ ও সুব্রতর সঙ্গেই কথাবার্তা চলত—মাঝে মাঝে হারধনও দুচারটে কথা বলতেন। সেদিন কথায় কথায় হারাধন বললেন, বুঝেছ কল্যাণ, তোমাদের ঐ লাহিড়ী মশাইটি একটি আসল ঘুঘু। বয়স ওর এখনও বত্রিশের কোঠা হয়তো পার হয়নি কিন্তু অমন ধড়িবাজ ছেলে আমি জীবনে খুবই কম দেখেছি। তোমাদের রাজাবাহাদুরের আসল মন্ত্রণাদাতা ঐ লাহিড়ীই। থাকেন ভিজে বিড়ালটির মত, কিন্তু ও পারে না এমন কোনো অসাধ্য কাজ আছে বলে আমি জানি না।
ভদ্রলোক তো শুনেছি আজ পাঁচ-সাত বৎসর মাত্র এখানে এঁদের স্টেটে কাজ করছেন এবং রাজাবাহাদুরের খুব বিশ্বাসীও।
হারাধন একটু থেমে বলতে থাকেন, জান কল্যাণ, আমাদের দেশে একটা প্রবাদ আছে, ছুঁচ হয়ে ঢুকে, ফাল হয়ে বের হওয়া। রায়পুরের রাজবাড়ির ও শনি! যেদিন হতে ও রায়পুরের প্রাসাদে প্রবেশ করেছে, সেদিন হতেই যেন প্রাসাদে শনির দৃষ্টি লেগেছে। রাজস্টেটে ও চাকুরি নিতে না নিতেই রসময় হঠাৎ হার্টফেল করে মারা গেল, তারপর গেল সুহাস। আহা সোনার চাঁদ ছেলে ছিল!
সুহাস মল্লিকের ব্যাপারটা নিয়ে তো মহা হৈ-চৈ হয়ে গেল।
কিন্তু তাতে কিই বা হল; গভীর জলের মাছ জাল ছিঁড়ে বের হয়ে গেল। মাঝখান হতে একটা নিরীহ একেবারে নিদোষী লোক জালে আটকা পড়ল।
কেন, একথা বলছেন কেন?
দেখ বাবাজী, আমিও এককালে মোক্তারী করেছি, দশজন মানতও। হয়ত তোমরা আমার নাতির মত বলবে, হুঁ মোক্তারী,… কিন্তু বাবাজী, আইনের মারপ্যাঁচগুলো ব্যারিস্টারেরও যা মোক্তারেরও তাই। তারা কটমট করে ইংরাজীতে বলবে, মি লর্ড, আমরা না হয় বলি ধর্মাবতার হুজুর বংলা ভাষায়। আরে বাবা, ঐ একটা বিচার হল নাকি! প্রহসন! একটা প্রহসন!
কিন্তু আইনের চোখে ডাঃ সুধীন চৌধুরীর দোষ তো প্রমাণ হয়েছে বলেই জজ সাহেব। রায় দিলেন যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরের!
আসলে সত্যিকারের প্রমাণ যাকে বলে তা আর হল কোথায়? কেবলমাত্র সন্দেহের জোরে বেচারীকে শাস্তি দেওয়া হল, তাহলে বলতে চান?
তাছাড়া কি, কতকগুলো প্রশ্নের সওয়ালই নিল না; শেষ পর্যন্ত মুখ বুজেই রইল ছেলেটাকেন তা সে-ই জানে। অবশেষে কতকগুলো প্রমাণ খাড়া করে কোণঠাসা করে দোষী সাব্যস্ত করা হল। হবুচন্দ্রের বিচার আর কি!
তবে কি তুমি বলতে চাও দাদু, ডাঃ সুধীন চৌধুরী দোষী নয়, তাকে অন্যায় করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে? এবারে প্রশ্ন করলে জগন্নাথ।
একশোবার বলব, তাকে অন্যায় করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
কেন?
কারণ সে দোষী হতেই পারে না। ধর যদি ধরে নেওয়াই যায়, প্লেগের বীজাণুই সুহাসের শরীরে ফুটিয়ে তাকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে এবং এও যদি তর্কের খাতিরে স্বীকার করেই নেওয়া যায় যে সুধীন নিজে ডাক্তার হওয়ায় তার পক্ষে সেটা খুবই সহজ ছিল, তবু এ কথাটা তোরা ভেবে দেখেছিস কি যে ইনজেকশন দেওয়ার পর যন্ত্রপাতিগুলো সে কোথায় সরিয়ে ফেললে? তার হাতে একটা মরোক্কো-বাঁধাই কেস ছিল কিন্তু সেটা তো হিমোসাইটোমিটারের কেস; ইনজেকশনের যন্ত্রপাতি তো তার মধ্যে ছিল না। তাছাড়া সুহাসের মা মালতী দেবী সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তাঁর দৃষ্টি এড়ানো বড় সহজ কথা নয়। আরও একটা কথা, সুধীন যদি সে কাজ করেই থাকে, তবে তার সুহাসকে বাদ দিয়ে রসময়কেই মারা উচিত ছিল, কেননা সুধীনের বাপ যখন নৃসিংহগ্রামে নিহত হন, তখন সুহাস তো জন্মায়ই নি। এখানে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা তো উঠতেই পারে না। তাছাড়া এ জগতে এমন কেউ বোকা নেই, হত্যা করবার জন্য বিষ-প্রয়োগ করে তার চিকিৎসার জন্য আবার কলকাতায় আসতে লিখবে। ব্যাপারটা আগাগোড়াই গোলমেলে, বিচারভণ্ডুল। একটা জগাখিচুড়ী।
সুব্রত হারাধনের বিচারশক্তি ও বিশ্লেষণক্ষমতা দেখে বিস্ময়ে মুগ্ধ হয়ে গেল, যদিচ হারাধনের কথাগুলো এলোমেলো। সে ভাবছিল, তবে কি সত্যি সত্যিই কিরীটীর কথাই ঠিক, ডাঃ সুধীন চৌধুরী নিদোষ! মিথ্যা ষড়যন্ত্র করে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।
***
সেই রাত্রে হারাধন ও জগন্নাথের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সুব্রত যখন রাস্তায় এসে নামল, রাত্রি তখন প্রায় সাড়ে দশটা। শহরের রাস্তাঘাট ও তার দুপাশের বাড়ি দোকানপাট সব প্রায় নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে দু-একটা দোকান ভোলা এবং এক-আধজন লোক রাস্তা দিয়ে চলেছে মাত্র।
রাস্তার দুপাশে কেরোসিনের বাতিগুলো টিমটিম করে জ্বলছে।
কৃষ্ণপক্ষের রাত্রি, নক্ষত্রখচিত রাত্রির আকাশ যেন স্বপ্ন বলে মনে হয়। সুব্রত এগিয়ে চলে। নানা চিন্তায় মনটা আচ্ছন্ন। হারাধনের বাড়ি থেকে সুব্রতর কোয়াটারটা বেশ খানিকটা দূর।
সুব্রত আজ প্রায় দিন কুড়ি হবে এখানে এসেছে, কাজ কিন্তু বিশেষ কিছুই এগোয়নি। অথচ কিরীটীর নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এখান থেকে এক পাও নড়বার উপায় নেই বেচারীর।
একটি কম্বাইন্ড হ্যাণ্ড আছে, থাকোহরি। লোকটার বয়স হয়েছে। রাজাবাহাদুরই স্টেট থেকে বামুন ও চাকরের ব্যবস্থা করে দিতে সতীনাথকে বলেছিলেন, কিন্তু সুব্রত সতীনাথবাবুকে ও সেইসঙ্গে রাজাবাহাদুরকেঅশেষ ধন্যবাদ জানিয়েসে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। থাকোহরিকে জগন্নাথই দিয়েছে।
লোকটার স্বভাবচরিত্রও খুব ভাল, তবে দোষের মধ্যে একটু কালা ও রাত্রে তেমন পরিষ্কার দেখে না। অবিশ্যি তাতে সুব্রতর কোনো অসুবিধা নেই। গরীব লোক, সুব্রতর কেমন একটা মায়াও এ কদিনে লোকটার ওপরে পড়ে গেছে। ছোট একতলা বাংলো প্যাটার্নের বাড়িখানা। বাড়ির পিছনের দিকে ছোট একটা অযত্ন বর্ধিত জঙ্গলাকীর্ণ বাগান। বাগানের সীমানা একমানুষ সমান প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। বাড়িতে সর্বসমেত চারখানা ঘর। দরজায় তালা দিয়ে, বারান্দার ওপরে একটা মাদুর পেতে থাকোহরি শুয়ে ঘুমিয়ে ছিল। সুব্রত এসে তাকে গায়ে ঠেলা দিয়ে ডাকল, থাকোহরি!
থাকোহরি সুব্রতর ডাকে উঠে বসে।
দরজাটা খুলে দাও।
থাকোহরি দরজার তালা খুলে দিল। ঘরের এক কোণে একটা হ্যারিকেন বাতি জ্বালানো থাকে, কিন্তু আজ ঘরটা অন্ধকার।
এ কি, আলো জ্বালাওনি আজ?
আজ্ঞে আলো তত জ্বালিয়ে রেখেছিলেন, বোধ করি নিভে গেছে।
সুব্রত পকেট থেকে টচটা বের করে বোতাম টিপতেই ঘরের মধ্যে নজর পড়ায় চমকে ওঠে।
ঘরের মেঝেতে তার চামড়ার সুটকেসটা ডালাভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। লেখবার টেবিলের কাগজপত্র, বই, সব ওলটপালট হয়ে আছে। এলোমেলো ভাবে চারিদিকে ছড়ানো।
থাকোহরি ততক্ষণে আলো জ্বালিয়ে ফেলেছে।
এসব কি-ঘরে ঢুকেছিল কে? থাকোহরিও কম অবাক হয়নি।
তাই তো বাবু, টের পাইনি, মনে হচ্ছে নিশ্চয় ঘরে চোর এসেছিল। ওপাশের জানলাটা খোলা রেখে গিয়েছিলেন বাবু?
সুব্রত জানলার দিকে চেয়ে আশ্চর্য হয়ে যায়।
টাকাপয়সা যায়নি তো বাবু?
সত্যিই জানালাটা খোলা। সুব্রতর বুঝতে কিছুই কষ্ট হয় না। জানালা ভেঙেই চোর ঘরে এসেছে। সুব্রত খুঁজে দেখলে, না, দশ টাকার এগারখানা নোট ও কিছু খুচরো পয়সা, আনি দুআনি, সুটকেসের মধ্যে পার্সটার ভিতরে ছিল, কিছুই চুরি যায়নি। টাকা-পয়সা, জামাকাপড় কিছুই নেয়নি, এ আবার কি ধরনের চোর? কী চুরি করতে তবে সে এসেছিল এ ঘরে? আপাতদৃষ্টিতে মূল্যবান কিছু চুরি না গিয়ে থাকলেও, কেউ যে তার অবর্তমানে তার ঘরে অনধিকার প্রবেশ করেছিল সে বিষয়ে কোনো ভুলই নেই। সুব্রত বেশ চিন্তিত হয়ে ওঠে। তবে কি এখানে তাকে কেউ সন্দেহ করেছে? না, তাই বা কি করে সম্ভব! কেউ তো তার পরিচয় জানে না। আচমকা মনে পড়ে, আজ কয়েকদিন থেকেই তার মনে হচ্ছিল, কে যেন অলক্ষ্যে ছায়ার মত তাকে অনুসরণ করে। সে দেখতে পায় না বটে, কিন্তু সর্বদা দুটি চক্ষুর দৃষ্টি তাকে যেন সর্বত্র অনুসরণ করে ফিরছে। প্রথমটায় সে এত মনোযোগ দেয়নি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ব্যাপারটা একেবারে উড়িয়ে দেবার মত নয়। একটা কিছু আছে। কিন্তু!
***
রাত্রি গভীর। থাকোহরি বাইরে ঘুমিয়ে পড়েছে।
সুব্রত কিরীটীকে চিঠি লিখছিল:
কিরীটী,
গত পরশু তোকে একখানা চিঠি দিয়েছি, এখানে বোধ করি সন্দেহের হাওয়া বইতে শুরু হয়েছে। কে একজন অজানা অতিথির আবির্ভাব হয়েছিল আমার ঘরে, আমার অনুপস্থিতিতে থাকোহরির বধিরত্বের সুযোগ নিয়ে। ক্ষতি একটা কিছু হয়েছে নিশ্চয়ই। কিন্তু এখনও চোখে পড়েনি কিছু। আজ মনে হচ্ছে কয়েকদিন ধরে অন্ধকারে কে যেন আমায় অনুসরণ করে ফিরছিল। প্রথমটায় খেয়াল করিনি, সন্দেহ জাগছে এবারে। লাহিড়ী মশাই এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। প্রাসাদের সর্বত্রই যেন একটা থমথমে ভাব। কোথায় যেন একটা গোলমাল পাকিয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে এ যেন ঝড় ওঠবার পূর্বলক্ষণ! আজ হারাধনের একটা কথায় বুঝতে পারলাম, নাটকের শুরু রসময় মল্লিককে নিয়েই।
আজ এই পর্যন্ত। ভালবাসা রইল।
তোর কল্যাণ
দিন চারেক বাদেই কিরীটীর জবাব এল।
কল্যাণ,
তোর চিঠিখানা আমায় বেশ চিন্তিত করে তুলেছে। থাকোহরি না হয় কালা ও রাতকানা, কিন্তু তোর একজোড়া ড্যাবডেবে চোখ থাকতেও কি বলে এখনো ধরতে পারলি না, চোর কেন তোর ঘরে এসেছিল? ওরে আহাম্মক, তোর গোপনীয় কাগজপত্রের সন্ধানে! তোকে এবারে একটা ডেয়ারিং কাজ করতে হবে। একটিবার লাহিড়ী মশাইয়ের ঘরে হানা দিতে হবে। ভদ্রলোক তো একক জীবন অতিবাহিত করেন, খুব কষ্ট হবে না। তাছাড়া রাত্রে প্রাসাদে রাজাবাহাদুরের সঙ্গে মাঝে মাঝে দাবা খেলতেও যান, সেকথা তো তুই লিখেছিস। ওই রকম একটা দিন বেছে নিলেই চলবে। হ্যাঁ রে, সাঁওতাল প্রজার কথা জানাতে লিখলাম কিন্তু সে-সম্পর্কে কোনো উচ্চবাচ্যই তো করিসনি।
ক