অঘোরগঞ্জের ঘোরালো ব্যাপার – অদ্ভুতুড়ে সিরিজ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
শঙ্কাহরণ আর বিপদভঞ্জন বিদ্যাধরী নদীর ধারে বটতলায় বসে ভুট্টা খাচ্ছিল। সকাল থেকে পেটে কিছু পড়েনি। দু’জনেরই কাজ নেই। শঙ্কাহরণের খানিকটা জমি ছিল, সেটা মহাজন নিয়ে নিয়েছে। বিপদভঞ্জন কুমোরের কাজ করত, সেই ব্যবসা আর চলছে না। একটু আগে গদাধরবাবুর বাড়িতে কায়দা করে ঢুকে পড়েছিল দু’জনে। আজ গদাধরবাবুর মেয়ের বিয়ে। রাতে বড় ভোজ। কিন্তু মেলা আত্মীয়কুটুম্ব আর কাজের লোকের জন্য দুপুরেও ঢালাও ব্যবস্থা। তারা ভেবেছিল ভিড়ের মধ্যে মিলেমিশে ভোজে বসে যাবে। তা বসেও ছিল। কিন্তু হঠাৎ নদেরাদ আর কানাইবাশি তাদের দেখে চিলচেঁচানি চেঁচাতে লাগল, “অ্যাই, এরা তো কাজের লোক নয়! এরা তত উটকো লোক, ঢুকে পড়েছে খাওয়ার লোভে। বেরোও, বেরোও–”
দু’একজন দয়ালু লোক “থাক না, থাক না’ বলছিল বটে, কিন্তু বাদবাকি সবাই খাপ্পা হয়ে এমন হুড়ো লাগাল যে, পালানোর পথ পায়নি তারা।
ভুট্টা শেষ হয়ে গেছে। দু’জন বসে বসে কথা কইছে। তাদের কথারও বিশেষ মাথামুণ্ডু নেই।
শঙ্কাহরণ দুঃখ করছিল, “বুঝলি বিপদ, লেখাপড়া শিখলে বোধ হয় কিছু সুবিধে হত!”
বিপদভঞ্জন বলল, “কথাটা আমিও ভাবি। তবে কিনা লেখাপড়া হল ভারী জিনিস। মাথায় সেঁদোলে মাথাটার বড্ড ওজন বেড়ে যায়।
ক্লাস টু’তে ওঠার পর রোজ ইশকুল থেকে ফেরার সময় আমার মাথা টাল খেত।”
“দুর বোকা! তা হলে গোপীপণ্ডিত, নরহরিমাস্টার, সুদাম তর্কালঙ্কার চলেফিরে বেড়াচ্ছে কী করে? তুই তো মোটে টু, আমি তো থ্রি টপকে প্রায় ফোরে উঠে গিয়েছিলুম আরকী। শ্যামাপদস্যার কাছে ডেকে আদর করে বললেন, ‘সবাই ফোরে উঠে গেলে থ্রি যে একেবারে ফাঁকা হয়ে যাবে বাপ! বাছা-বাছা কয়েকজনকে রেখে দিচ্ছি আরকী। তুইও আর-একটা বছর ঘষটান দে। ক্লাস থ্রি তোকে ছাড়তে চাইছে না!’ শুনে বুঝলুম, আমি ফেল মেরেছি। অথচ ফেল মারার কথা নয়। শ্যামাপদস্যারের জন্য কী-না করেছি বল! তাঁর হারানো গোরু খুঁজে এনে দিয়েছি। তার মায়ের জন্য গঙ্গামাটি জোগাড় করে দিয়েছি। তার ফুটো ঘটি গঞ্জ থেকে ঝালাই করে এনেছি।”
বিপদভঞ্জন আড়মোড়া ভেঙে বলল, “জেগে থাকলেই ঝামেলা! ওর চেয়ে পড়ে-পড়ে ঘুমোলে সময়টা বেশ কেটে যায়। খিদের ভাবটাও থাকে না।”
শঙ্কাহরণ হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বলল, “ওটা কী ভেসে যাচ্ছে বল তো! মড়া নাকি?”
বিপদভঞ্জন উদাস গলায় বলল, “তা হবে। গরিবেরা তো পয়সার অভাবে দাহ করতে পারে না, অমনই ভাসিয়ে দেয়।”
“তেমন মনে হচ্ছে না। গায়ে জামাকাপড় আছে। চল, তুলি।”
“তুলে কী হবে?”
“বেঁচেও তো থাকতে পারে। জলে পড়ে গেছে হয়তো!”
“দুর দুর, ভাল করতে গিয়ে কোন ফ্যাসাদে পড়তে হয় কে জানে! আমাদের কপাল তো ভাল নয়।”
“আহা, ধর্ম বলেও তো একটা ব্যাপার আছে। গামছাখানা কোমরে বেঁধে নে। দুপুরে স্নানটাও হয়ে যাবে এই তালে।”
বিদ্যাধরী এমনিতে বড় নদী নয়, তবে বর্ষার জল পেয়ে এখন তার বিশাল চেহারা। স্রোতও মন্দ নয়। লোকটা মাঝগাঙ বরাবর বেশ তোড়ে ভেসে যাচ্ছিল। তবে কিনা শঙ্কাহরণ আর বিপদভঞ্জন দু’জনেই পাকা সাঁতারু। তারা জলে নেমে ভাসন্ত মানুষটার পিছু নিল।
মাইলটাক গেলে বিদ্যাধরীর একটা ঘূর্ণী স্রোত আছে। তাতে পড়লে রক্ষে নেই। শঙ্কাহরণ আর বিপদভঞ্জন প্রাণপণে জল কেটে ঘূর্ণীর আগেই লোকটাকে ধরে ফেলল। তারপর টেনে আনল ডাঙায়। যে জায়গায় তারা লোকটাকে জল থেকে তুলল সে ভারী নির্জন জায়গা। পাশেই শ্মশানঘাট।
লোকটাকে ঘাসের উপর উপুড় করে শুইয়ে দু’জনে খানিক দম নিল।
বিপদভঞ্জন বলল, “এত হাঁফ ধরছে কেন বল তো? এ নদী তো আমি দিনে চোদ্দোবার এপার-ওপার করতে পারি।”
“পেটে দানাপানি না থাকলে দম আসবে কোথা থেকে?”
খানিকক্ষণ জিরিয়ে হাঁফটা একটু কমলে বিপদভঞ্জন বলল, “বেঁচে আছে কিনা দেখেছিস?”
“মনে হচ্ছে না। খাটুনি বোধ হয় বৃথাই গেল!”
“একটু ডলাইমলাই করে দেখবি নাকি?”
উপুড় হয়ে পড়ে থাকা লোকটার বয়স বেশি না। তিরিশের নীচেই। পরনে বেশ ভাল একখানা প্যান্ট, গায়ে সিল্কের হাফহাতা পাঞ্জাবি। গায়ের রংটা ফরসা, মুখে দাড়ি-গোঁফ আছে। বেশ লম্বা আর ছিপছিপে।
বিপদভঞ্জন বলল, “দেখে তো ভ ভদ্রলোক বলেই মনে হচ্ছে রে!”
“হুঁ।”
দুজনে মিলে লোকটার পিঠে কিছুক্ষণ ডলাইমলাই করল। চাপ খেয়ে হঠাৎ লোকটার মুখ দিয়ে ভকভক করে জল বেরোতে লাগল।
বিপদভঞ্জন বলল, “কী মনে হচ্ছে রে?”
“প্রাণের লক্ষণ দেখি না। তবে আর-একটু চেষ্টা করে দেখলে হয়। কপাল ভাল থাকলে বেঁচে যেতেও পারে!”
“হাতে দামি ঘড়ি আছে দেখেছিস?”
“দেখেছি।”
“পাঞ্জাবিতে সোনার বোতাম। প্যান্টের বাঁ পকেটে মানিব্যাগও আছে মনে হচ্ছে। যদি না বাঁচে তবে এসব কাকে ফেরত দেব বল তো!”
“তা জানি না। তবে বোধ হয় থানায় জানানোর নিয়ম আছে।”
“ও বাবা, তা হলে আমাদেরই ধরে ফাটকে পুরবে।”
“তাও বটে।”
“তাই তো বলছিলাম, ভেসে যাচ্ছিল, তাই যেত। খামোখা উটকো ঝামেলা ঘাড়ে নিলি!”
“দাঁড়া, দাঁড়া! একটা খাস ফেলার মতো শব্দ হল যেন! গলার কাছটা দ্যাখ তো, শিরা দপদপ করছে কি না?”
বিপদভঞ্জন দেখে বলল, “মনে হল একটু যেন কাঁপছে মাঝে মাঝে। তবে মনের ভুলও হতে পারে। করালীডাক্তারকে একটা
খবর দিতে পারলে হত!”
“করালীডাক্তার আসবে কেন? কী দায় পড়েছে?”
দূরে মাঠের মধ্যে একটা লোক ইট দিয়ে গোরুর খোঁটা পুঁতছিল। সে এবার এগিয়ে এল। পরনে হেঁটো ধুতি, খালি গা, কালো, রোগা, মাঝবয়সি একটা লোক। খানিকক্ষণ কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে তাদের কাণ্ডটা দেখে হঠাৎ বিজ্ঞের মতো বলল, “ওরে বাপু, খুনখারাবি করার একটা রীতি আছে তো! এই ভরদুপুরে, লোকালয়ে পাঁচটা লোকের চোখের সামনে ওরকমভাবে মানুষ মারতে হয়?”
শঙ্কাহরণ আর বিপদভঞ্জন ভড়কে গিয়ে বলল, “কে বলল খুনখারাবি করছি?”
“আহা, ওসব কি বলতে হয়? কবুল করার মতো আহাম্মক তো আর তোমরা নও! তা কত পেলেটেলে? মোটা দাও মেরেছ তো?”
বিপদভঞ্জন বিরক্ত হয়ে বলল, “শুনলি তো শঙ্কু? কী বলেছিলাম? এই তো ফ্যাসাদ বাধল!”
শঙ্কাহরণ বলল, “কীসের খুনখারাবি মশাই? জলে ডোবা একটা লোককে রক্ষে করার চেষ্টা করছি।”
“তাই বলল! জলে ডুবিয়ে মেরেছ! তা মেরেই যখন ফেলেছ তখন আর কী করা। তবে কিনা এই চৈতন্যপুর জায়গা কিন্তু খুব খারাপ। লোকে টের পেলে প্রাণ হাতে করে বেরোতে পারবে না।”
শঙ্কাহরণ বিরক্ত হয়ে বলল, “কী মুশকিল! এটা মোটেই খুনখারাবির ব্যাপার নয় মশাই। যান তো, নিজের কাজে যান?”
লোকটা বড় বড় দাঁত দেখিয়ে মিচকে একটা হাসি হেসে বলল, “যেতে বলছ! তা না হয় গেলাম। কিন্তু বন্দোবস্তটা কীরকম হবে?”
“বন্দোবস্ত! কীসের বন্দোবস্ত মশাই?”
“বুঝলে না! আমার মুখ যদি না খোলাতে চাও, তা হলে একটি হাজার টাকা হাতে গুঁজে দাও, তারপর যা খুশি করো। এ মুখে একদম কুলুপ এঁটে যাবে।”
“আমাদের মাথায় অত বুদ্ধি নেই মশাই যে, প্যাঁচের কথা বুঝব। আমাদের ট্র্যাকে মালকড়ি নেই, আমরা হাভাতে লোক।”
“আহা, তোমাদের না থাক, মরা লোকটার পকেটে তো একটা মানিব্যাগ উঁচু হয়ে আছে দেখছি। হাতে দু-দুটো আংটি, গলায় সোনার চেন! তা সব মিলিয়ে দশ-বিশ হাজার মেরেছ ভায়া। হাজার টাকা কি বেশি হল? খুনের কেস বলে কথা!”
শঙ্কা আর বিপদ এতক্ষণ আংটি আর চেন লক্ষ করেনি। এবার করল। বিপদভঞ্জন মুখ শুকনো করে বলল, “কী হবে রে শঙ্কু?”
দু’জনের মধ্যে শঙ্কাহরণের একটু সাহসটাহস আছে। বুদ্ধিও ছিল এক সময়। ছেলেবেলায় মাথায় অনেক বুদ্ধির ঝিকিমিকি খেলত, ফন্দিফিকির আসত। কিন্তু চর্চার অভাবে এখন মাথাটা কেমন বোঁদা মেরে গেছে। সারাদিন খিদের চিন্তা করলে মানুষের মগজ পেটে নেমে বসে থাকে। আজ বুদ্ধিটাকে সে চাগিয়ে ভোলার চেষ্টা করতে-করতে নিপাট ভালমানুষের মতো মুখ করে বলল, “আপনাকে হাজারটা টাকা দেওয়া তেমন শক্ত নয় বটে! তবে কথা কী জানেন, অন্যের টাকা দান-খয়রাত করাটা তো ন্যায্য কাজ নয়। কেমন কিনা বৃন্দাবনদাদা?”
লোকটা খ্যাক করে উঠল, “বৃন্দাবনদাদা! বৃন্দাবনদাদাটা আবার কে?”
“চৈতন্যপুরের বৃন্দাবনদাদাকে কে না চেনে? প্রাতঃস্মরণীয় মানুষ আপনি!”
“কথা ঘোরাবার চেষ্টা কোরো না বাপু! বৃন্দাবনটন কেউ এখানে নেই। আমি হলুম কামাখ্যাচরণ দাস। এ গাঁয়ে চোদ্দো পুরুষ ধরে বসবাস। সবাই একডাকে চেনে। তা ও কথাটা কী বললে, অন্যের টাকা না কী যেন! ওরে বাপু, মানুষ পটল তুললে আর তার কিছু থাকে? তার টাকা তখন আর পাঁচজনেই লুটেপুটে খায়।”
শঙ্কাহরণ ভারী কাঁচুমাচু হয়ে বলল, “পটলতোলা বাবুর কথা হচ্ছে না মশাই। হচ্ছে বাটু পরিহারমশাইয়ের কথা। পরিহারমশাই যদি শোনেন যে, তাঁর হক্কের টাকা থেকে আপনাকে ভাগ দিতে হয়েছে, তা হলে কি আমাদের হাড়গোড় আস্ত রাখবেন?”
লোকটা ভড়কে গিয়ে বলল, “পরিহারের কথা উঠছে কেন?”
“উঠবেই তো! আমরা তাঁর দলেরই লোক কিনা!”
লোকটা একটু হাঁ করে থেকে বলল, “বাটু পরিহারের লোক! সে কথা আগে বলবে তো!”
“গুহ্য কথা পাঁচজনকে বলে বেড়ানো কি ভাল? আপনার চাপাচাপিতে বলে ফেলতে হল!”
“তা বাপু, পরিহারমশাইকে আমার নমস্কার জানিয়ে। যা করছ। করো, কেউ কিছু বলবে না।”
লোকটা তাড়াতাড়ি হাঁটা দিয়ে কয়েক পা গিয়ে ফের ফিরে এল। ভারী অমায়িক গলায় বলল, “বুঝলে বাপু, বুড়ো হয়েছি তো, ভীমরতিই হবে! এখন মনে পড়েছে, আমার নামটা বৃন্দাবন ঘোষই বটে! দিদিমা রেখেছিলেন। বুঝলে তো! ওই বৃন্দাবন ঘোষই থাকুক, কেমন?”
“যে আজ্ঞে। যা বলবেন!”
কামাখ্যা বা বৃন্দাবন হনহন করে হেঁটে লহমায় মাঠ পার হয়ে গেলে বিপদভঞ্জন বলল, “বাটু পরিহারটা আবার কে রে?”
“সে আছে। সব জায়গাতেই একটা করে মানুষ-মুষল থাকে। ছিনতাই করে, খুনখারাবি করে, তোলা নেয়, মাথা ফাটায়, ঠ্যাং ভাঙে। এ তল্লাটের মুষল হল বাটু পরিহার। আমাদের আঘোরগঞ্জে যেমন গোপাল গুচ্ছাইত। শীতলাবাজারে তেমন ল্যাংড়া সানাই, আবার রাধিকাপুরে হল ন্যাড়া শিবু।”
বিপদভঞ্জন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ওরকম একটা কিছু হতে পারলেও বেশ হত!”
“মাংসের মশলা কি আর সুক্তোয় খাটে! আমরা ওরকম হতে গেলে হিতে বিপরীত হবে!”
“এখন এ লোকটাকে নিয়ে কী করা?”
“দেখা যাক আর-একটু চেষ্টা করে। জ্ঞান না ফিরলে জলেই ফেলে দিতে হবে।”
আরও আধঘণ্টা যত রকম প্রক্রিয়া জানা ছিল সবই কাজে লাগাল তারা। খুব ধীরে ধীরে অবশেষে শ্বাস পড়তে শুরু করল, নাড়ি ক্ষীণ হলেও চালু হল, বুকে ধুকপুকুনি হতে লাগল। এবং আরও খানিকক্ষণ পরে শেষে লোকটা চোখও মেলল। তবে চোখের দৃষ্টি ঘোলাটে, ফ্যালফ্যালে চাউনি।
বিপদভঞ্জন ঝুঁকে পড়ে জিজ্ঞেস করল, “কেমন লাগছে এখন?”
লোকটা জবাব দিতে পারল না বটে, তবে চোখ পিটপিট করতে লাগল।
শঙ্কাহরণ মস্ত শাস ফেলে বলল, “যাক, বেঁচে আছে?”
“তা তো হল, কিন্তু একে নিয়ে এখন করবি কী? অঘোরগঞ্জ পর্যন্ত যদি নিয়ে যেতেও পারি তবে থাকবে কোথায়? আমাদের কুঁড়েঘরে কোনওক্রমে রাখতে পারি বটে, কিন্তু খাওয়াব কী?
আমাদেরই পেট-ভাতের জোগাড় নেই!”
শঙ্কাহরণ ওরফে শঙ্কা বলল, “অত আগবাড়িয়ে ভাবছিস কেন? লোকটার চেহারা দেখছিস না, আমাদের মতো এলেবেলে লোক নয়। গাঁয়ে নিয়ে গিয়ে হাজির করলে গাঁয়ের লোকই ব্যবস্থা করবে। একটু সুস্থ হলে নিজের জায়গায় ফিরে যাবে। বড়জোর একটা রাত।”
“তা অবিশ্যি ঠিক। ও মশাই, উঠে বসতে পারবেন? এখানে পড়ে থাকলে তো চলবে না!”
লোকটা কিছু বুঝতে পারল বলে মনে হল না। তবে দৃষ্টিতে যেন একটু নজর এল। তাদের দিকে চেয়ে দেখল একটু। খুব দুর্বলভাবে যেন উঠে বসবারও চেষ্টা করল। দু’জনে দু’ধার থেকে সাবধানে ধরে বসাল তাকে। লোকটা বসে রইল, পড়ে গেল না।
“দাঁড়াতে চেষ্টা করুন তো! চেষ্টা করলে পারবেন।” দু-তিনবারে হল না বটে, কিন্তু চতুর্থবারের চেষ্টায় লোকটা উঠে দাঁড়াল। এবং একটু পরে দুর্বল পায়ে একটু হাঁটতে শুরু করল।
বিপদভঞ্জন বলল, “এই তো পেরেছেন! এই মাঠটুকু পেরোলেই গোরুরগাড়ি পেয়ে যাব।”
লোকটা এ পর্যন্ত একটাও কথা কয়নি। এখনও কোনও জবাব দিল না।
“ও শঙ্কু, কথা কইছে না কেন রে?”
“মাথাটা এখনও ভাল কাজ করছে না। বেশিক্ষণ ডুবে থাকলে যেন কী সব গণ্ডগোল হয় মগজে।”
“কোথায় নিয়ে তুলবি বল তো?”
“যেতে-যেতে ভাবব।”
“করালীডাক্তারের কাছে নিয়ে হাজির করলে হয় না? লোকটা বিটকেল বটে, কিন্তু মনটা ভাল!”
“যদি তাড়া করে?”
“কাউকে কাউকে তাড়া করে বটে, কিন্তু তোকে বা আমাকে তো করেনি? বরং বাগানের জঙ্গল সাফ করতে, পুকুরের পানা তুলতে বা সুপুরি আর নারকোল পাড়তে আমাদেরই তো ডেকে পাঠায়?”
“কিন্তু নতুন লোক দেখলে বিগড়ে যেতে পারে। তবে বলছিস যখন করালীডাক্তারের কাছেই চল! পসার নেই বটে, তবু ডাক্তার তো! ওষুধপত্র দিয়ে মানুষটাকে তাড়াতাড়ি চাঙা করে তুলতে পারে।”