১. মেয়েটির মৃদু আর্তনাদ

ডেভিল

জুভাস মেয়েটির মৃদু আর্তনাদ শুনতে পেল, যেন একটা ইতস্ততঃ ভাব প্রকাশ পাচ্ছিল। তাতে সে কোনো ক্রুক্ষেপ না করে বরং তার ঠোঁটে মৃদু হাসি ফোঁটাবার চেষ্টা করে সক্ষম হলো। সে হাসি ব্যঙ্গাত্মক। তার বাঁ হাতটা সেসিগারেটের প্যাকেটটা তোলার জন্য ব্যবহার করলো। চামড়ায় ঢাকা স্টীলের আঙ্গুলগুলো নিখুঁত এবং সুনিপুণ ভাবে কাজ করলো। ছোট পিলটা তাকে আরও সাহসী করে দেয়। যান্ত্রিক হাত তার সবচেয়ে ভালো কাজ দেয়। কেন এমন হলো জুডাস? স্মৃতি মন্থন করে চললো, সেই ছেলেবেলার ঘটনা যার সূত্রপাত।

নিজের কুৎসিত চেহারার জন্য সবসময় সে ছোট হয়ে থাকতো। নিজের কাছে তার দেহের কোনো মূল্য ছিলো না। তাকে নিয়ে সবাই ঠাট্টা তামাসা করতো। সেই অল্প বয়স থেকে তার মনের ক্ষোভ, সমস্ত অভিযোগ জমা হতে হতে একদিন তার মনে প্রতিরোধের স্পৃহা জন্মাল। সে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো।

পরবর্তীকালে সে অনেক হত্যার নায়ক হয়ে উঠেছিলো। এই পৃথিবীর চোখে তার এই দেহটা যদিও কেবল অবজ্ঞা আর অবহেলার বোঝা স্বরূপ, তবু একদিন সে মনে করার চেষ্টা করে, তারা তার মনের প্রকৃত হিসেব একদিন না একদিন করবেই! করতে হবেই। কিন্তু চূড়ান্ত সাফল্য বারে বারে তাকে এড়িয়ে গেছে। কিন্তু এবারে সাফল্য তার হাতের রেখাতেই আছে। হ্যারল্ড তার মধ্যে সেই শক্তি এনে দিয়েছে। এখন কে কাকে আবিষ্কার করেছিলো তার জন্য কিছু এসে যায় না। রহস্যজনক পথে আসতে আসতে খুঁজে পেয়ে থাকে। আর এইভাবেই তারা একে অপরকে আবিষ্কার করে থাকে। এখন সে নিজেকে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করবে এবং তা হবে চিরকালের জন্য।

মেয়েটি আবার আর্তনাদ করে উঠলো। আর একটা ক্ষণস্থায়ী চীৎকার। হ্যারল্ড তাকে তাতিয়ে দিচ্ছিল। অনেক কিছুতেই হ্যারল্ডের প্রতিভা আছে। এই অসাধারণ মেয়েটিকে সে পানামা শহর থেকে সংগ্রহ করে এনেছিলো। মেয়েটি কোনো তৃতীয় শ্রেণীর হোটেলের অতিথিসেবিকা ছিলো। জুডাস তাকে এখানে আনার বিরুদ্ধে ছিল। এ ধরনের মেয়েদের নির্বাচনে তার যথেষ্ট সতর্কতা এবং খুঁতখুঁতে স্বভাব ছিল। তবু হ্যারল্ডের নজরে পড়লো সে, তাকে কামনা করল। তাই সে তাকে এখানে আসতে অনুমতি দিয়েছিল।

জুডাস যদিও জানে, হ্যারল্ড যা চায় অর্থাৎ অন্য মেয়েদের মতো দেহের লীলা খেলায় ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারবে না। অথচ হ্যারল্ড তার মধ্যে সেটাই দেখতে চায়।

আর একটা আর্তনাদ এবার দীর্ঘ হলো। হ্যারল্ডের চোখ দুটো চকচক করে উঠল। এবার হ্যারল্ড নিশ্চয়ই তার ঘরে মেয়েটিকে নিয়ে যাবে। দরজা খুলে রাখবে। জুডাস উঠে দাঁড়িয়ে মোচড় দেওয়া দেহটাকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে চললো টেলিভিশনের সামনে। বোম টেপার পর সঙ্গে সঙ্গে টেলিভিশনের পর্দায় হ্যারল্ডের শোবার ঘরের ছবি ভেসে উঠলো।

মেয়েটির দেহ থেকে হ্যারল্ড তার পোষাকগুলো একে একে খুলে ফেলছিল। আর তখনই তার গলা ফেটে বেরিয়ে এসেছিল ভয়ঙ্কর সেই আর্তনাদ। তাতারের বিরাট দেহের আয়তন সারা টেলিভিশন জুড়ে ভেসে উঠেছিল। হ্যারল্ড মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেল। জুডাস লক্ষ্য করল, মেয়েটির শরীর খুব ছোট হলেও দেহের গড়ন ঠাসা। ভরাট বুক এবং ছোট পেটটা নিটোল গোল। তার পা দুটো কিন্তু যথেষ্ট যৌবনসুলভ এবং আকর্ষণীয়, রসাল।

মেয়েটির কাছে গিয়ে হ্যারল্ড স্পষ্ট করে বলল, তাতার তুমি এখন বাইরে গিয়ে অপেক্ষা কর। দৈত্যের মতো চেহারা নিয়ে তার ক্ষুধার্ত লোলুপ দৃষ্টিতে মেয়েটির নগ্ন দেহের দিকে তখনও তাকিয়েছিল। তার চেহারা মনে করিয়ে দিচ্ছিল যে, তার জন্মভূমি মঙ্গোলিয়ায়। ভয়ঙ্কর প্রতিহিংসাপরায়ণ এই মঙ্গলীয় যাযাবর।

জুডাস তাকে মঙ্গোলিয়া থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছিল। হ্যারল্ডের কাছে তার কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার সময় জুডাস তাকে বলে দিয়েছিল হ্যারল্ড যা বলে সব শুনতে। সর্বময় কর্তৃত্ব হল একমাত্র জুডাসেরই। সেই শক্তিশালী মঙ্গোলিয়ানকে মাথা নীচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে জুডাস মনে মনে খুশী হলো। অবশ্য জুডাস জানে, তাতার শিশুর থেকে বেশী কিছু, আবার মেয়েটির হাতে চাপ দিয়ে তাকে কাছে টেনে নিল। সে এলো তবে তার চোখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠেছে। ভয়ঙ্কর!

হ্যারল্ড তাকে লম্বা কোচের উপর নিয়ে গিয়ে ফেললো। হারল্ডের চেহারা দীর্ঘ বলিষ্ঠ। হ্যারল্ড তার পাশে গা ঘেঁষে বসল। সে তার সঙ্গে ভাব জমাবার চেষ্টা করলো। এই ভাবেই হ্যারল্ড এই সব মেয়েদের ভালোবাসতে চেষ্টা করে। সে মেয়েটির বুকে আদর করতে লাগল এবং ধীরে ধীরে তাকে তার সোহাগের কথা জানাতে থাকলো। হ্যারল্ড তার বুকের গভীরে চুমু খাচ্ছিল। এখন সে তার সারা দেহের উপর ঠোঁট বোলাতে থাকলো। মেয়েটি এর আগে বহু পুরুষদের যেমন ভালোবেসেছে তেমনি সমান ভাবে তাদের অবহেলা করেছে। কিন্তু তার ক্ষেত্রে অতি আন্তরিকভাবে সে তার দু বাহু প্রসারিত করে তাকে আহ্বান করল এবং তাকে তার পথে চলতে দেওয়ার সুযোগ করে দিল।

টেলিভিশনের পর্দায় একমাত্র জুডাসই মেয়েটি কি করছিল তা দেখতে পাচ্ছিল। ওদিকে হ্যারল্ড তখন তার বুকের সুউচ্চ চূড়ার মাঝে মুখ গুঁজে দিয়েছিল পরম তৃপ্তিতে।

মেয়েদের ভয় দেখিয়ে বাধ্য করতে চায় সে এবং তারা সাড়া দেয় প্রকৃত ভয় পেয়ে কিংবা আবেগে আগ্নেগিরির মত সবেগে বিদীর্ণ হয়ে। হ্যারল্ড যখন তাকে কম্বলের নীচে টেনে নিল এক মুহূর্তের জন্য কি যেন ভাবল সে। হ্যারল্ড তার দেহটা মেয়েটির নগ্ন দেহের সামনে গড়িয়ে দিতেই সে চোখ বুজে ফেললো। আসন্ন মিলনের প্রতিষেধক কোন উপায় অবলম্বন করল না মেয়েটি, কারণ সে ভাবল, এই পুরুষত্বহীন মানুষটা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

জুডাস মৃদু হাসলো। হ্যারল্ড তার কাল্পনিক মন নিয়ে কেমন জোর করে উপভোগ করার পরিবর্তে ভালোবাসা দিয়ে জয় করতে চাইছে। হ্যারল্ডের এই পুরুষত্বহীনতার কারণ খুঁজতে গিয়ে জুডাসের মনে হয়, তার আগের জীবনে কোনো দুর্ঘটনা এর জন্য দায়ী। হ্যারল্ড মনে করে কোন  নারী হয়তো তাকে জখম করে দিয়েছে এবং সে তার এই অক্ষমতার জন্য দায়ী। হারল্ডের দৈহিক অক্ষমতা এবং মেয়েদের উপর দৈহিক নির্যাতন এ দুটির মধ্যে একটা যোগসূত্র আবিষ্কার করেছে জুডাস। হারল্ডের এই সব আচরণের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ছিল জুডাসের। হঠাৎ তীক্ষ্ণ কান্নার শব্দ জুডাসের মনটাকে ফিরিয়ে দিল টেলিভিশনের পর্দায়। তখন হ্যারল্ড মেয়েটির হাত পিছন দিক করে মোচড় দিচ্ছিল। হ্যারল্ড তার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললো, আমার জন্য তুমি কিছুই করছ না।

আমি, আমি তো চেষ্টা করছি। মেয়েটি ছাড়া পেয়ে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। মরিয়া হয়ে সে নিজেকে চরম উত্তেজনায় তুলতে চাইলো। কিন্তু কোথায় সে উত্তেজনা? সে ক্ষমতা হারল্ডের কোথায়! নারী–পুরুষের মিলনে সাফল্য আসে যৌথ প্রচেষ্টায়, একক ভাবে নয়। মেয়েটির হঠাৎ জ্ঞান হলো হারল্ডের মত এক পুরুষত্বহীন মানুষের সঙ্গে এ ভাবে ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার অর্থ হল নিজেকে কানাগলির মধ্যে ছেড়ে দেওয়া যেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোন পথ নেই। এরপর তার মধ্যে আর কোনো চেষ্টা দেখা গেলনা। হ্যারল্ড তাকে দূরে ঠেলে দিল। তারপর রাগে উত্তেজনায় দুহাত দিয়ে হ্যারল্ড তার গলা টিপে ধরল। অভাবনীয় যন্ত্রণায় মেয়েটি ঝাঁকিয়ে কেঁদে উঠল।

হ্যারল্ড রেগে গিয়ে প্রতিবাদ করল–তুমি কোন চেষ্টাই করছ না। মেয়েটির হাত ধরে দ্রুত মোচড় দিল। যত জোরে সম্ভব তার মুখের ওপর চড় বসিয়ে দিল। আর্তনাদ করে মেয়েটি মাটির উপর পড়ে গেল। তারপর ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে টেবিলের উপর থেকে কাঁচের অ্যাস্ট্রেটা তুলে নিয়ে সে ছুটে গেল হারল্ডের দিকে। বলে উঠলো, শয়তান, তুমি আমাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছ। আমি তোমাকে খুন করবো।

জুডাস কঠিন হয়ে উঠলো, এই কারণেই এই মেয়েটিকে দেখে প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল। সে ভেবেছিল বিপদ সংকেত বোতামটা টিপে তাতারকে হারল্ডের ঘরে ছুটে যেতে নির্দেশ দেবে। ঠিক সেই মুহূর্তে সে দেখলো টেবিলটাকে কেন্দ্র করে মেয়েটি সেই ভারী অ্যাস্ট্রেটা হারল্ডের দিকে ছুঁড়তে উদ্যত। ঠিক সেই মুহূর্তে হ্যারল্ডের হাতের চাবুকটা বাতাসে দুলে উঠে মেয়েটির পিঠের ওপর আছড়ে পড়লো। একটা অস্ফুট আর্তনাদ করে মেয়েটি তার পায়ের ওপর লুটিয়ে পড়ল। হ্যারল্ড তার পেটে সজোরে লাথি মেরে ছুঁড়ে ফেলে দিল তাকে। মেয়েটি দুহাত দিয়ে তার নগ্ন বুক এবং পেট ঢাকলো। হ্যারল্ড আবার চাবুক চালালো যতক্ষণ না মেয়েটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

মেয়েটি তাকে কাতর অনুরোধ করল থামাবার জন্য। কি ভেবে হঠাৎ হ্যারল্ড থামলো, তারপর মেয়েটির যন্ত্রণা কাতর দেহটা দুহাত দিয়ে তুলে ধরল। তার কান্না ভেজা মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, –এই কেবল মাত্র নমুনা। এরপর আরো অনেক, অনেক কঠোর শাস্তি অপেক্ষা করছে তোমার জন্য

তাতারকে সে ডেকে পাঠাল। তাতার ঘরে প্রবেশ করতেই হ্যারল্ড বলল, তাতার তুমি একে নীচের তলায় নিয়ে যেতে পার। কিন্তু তার আগে এখানে কিছুক্ষণ সময় তুমি ওর সঙ্গে খেলতে পার।

তাতার মেয়েটিকে দু হাত দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে সামনে সেই বিরাট ডাইনিং টেবিলের ওপরে শুইয়ে দিল। তার ক্ষুধার্ত দৃষ্টি নিয়ে মেয়েটির নগ্ন দেহ জরীপ করতে লাগল। দৈত্য সমান মঙ্গোলিয়ান লোকটা মেয়েটির পা দুটোর মাঝে যথেষ্ট ব্যবধান রেখে ঝুলিয়ে দিল। টেবিলের ধার ঘেঁষেই সে দাঁড়িয়েছিল। তার দেহের নিম্নাঙ্গ আবরণহীন।

.

০২.

 ওয়াশিংটনের ডুপনট সার্কেলে অ্যামালগামাটেড প্রেস অ্যান্ড ওয়েয়ার সার্ভিসেসের একটা বিরাট বিল্ডিং-এর একেবারে নীচের তলায় আন্ডার গ্রাউন্ড গ্যারেজে আমি এক দীর্ঘদেহী পুরুষ লিফটের ভিতর গিয়ে প্রবেশ করলাম, তারপর সুইচটা টিপে দিলাম। একেবারে সর্বোচ্চ তলায় আমার গন্তব্যস্থল। হেডকোয়ার্টার্সে কদাচিৎ আমাকে ডেকে পাঠানো হয়। অ্যামালগামাটেড প্রেস অ্যান্ড ওয়েয়ার সার্ভিসেসের নামের আড়ালে আসল সংস্থা হল এই টাইগার। সমস্ত কাজ এমন কি খুব বড় কাজ বাইরে বাইরেই হয়ে থাকে। এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার নেওয়া কিংবা জরুরী মিটিং–এ যোগদান করা ছাড়া আমার এখানে আসার প্রয়োজন হয় না।

এক সময় লিফট থামল। আমি রিসেপশন রুমে প্রবেশ করে দেখলাম, একটি মেয়ে সেখানে বসে আছে। মেয়েটি নতুন। এর আগে মেয়েটিকে আমি দেখিনি।

আমি মৃদু হেসে আমার পরিচয় পত্রটি মেয়েটির সামনে পেশ করলাম। মেয়েটি আমার বলিষ্ঠ চেহারার দিকে তাকিয়ে থেকে মিষ্টি হেসে আমাকে সম্ভাষণ জানাল। মেয়েটির পাশে একটি মেসিন দেখা যাচ্ছিল। সেদিকে ফিরে আমার পরিচয় পত্রটা মেসিনের ওপর রাখলো। মেসিনটার ওপর লাল আলো প্রতিফলিত হলো। আমি লক্ষ্য করলাম, মাস্টার ডকেটে লিপিবদ্ধ হওয়া আমার ছবি, আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে দেখছিল মেয়েটি। তারপর মেয়েটি সামান্য হেসে বেশ আগ্রহ নিয়ে আমার কাগজগুলো ফিরিয়ে দিল।

আমি সামান্য হেসে তার পাশ দিয়ে আর একটা অফিসঘরের দরজার পথে গিয়ে ঢুকলাম। কেউ একটা কথাও বললাম না, কিন্তু অনেক খবরাখবর আদান–প্রদান হয়ে গেলো। মুহূর্তের মধ্যে মাস্টার ডকেটের মাধ্যমে মেয়েটি জানতে পারলো এই দীর্ঘদেহী বলিষ্ঠ পুরুষটি হলো এজেন্ট মিকি। নীল চোখ, ডকেটের বিবরণের চেয়েও সামনা সামনি আমাকে দেখতে আরো বেশী সুন্দর, আমার চোখ দুটো আরো বেশী ঘন নীল। ছফুট দুই ইঞ্চি লম্বা। বাঁ দিকের হিপে চিরস্থায়ী গুলির দাগ। বুকের ডান দিকে কাটা দাগ। আমি কিলমাস্টার। সব রকমের এয়ারক্রাফটের চালক হিসাবে আমার লাইসেন্স আছে। চারটে ভাষায় অনর্গল কথা বলে যেতে পারি এবং অন্য আরো ছটি ভাষা আমার ভালোই জানা আছে। খুব ভালো গাড়ি চালাতে পারি আমি। আমি অবিবাহিত এক সর্বাঙ্গ সুন্দর পুরুষ। ম্যাকের অফিসে ঢুকে না যাওয়া পর্যন্ত মেয়েটি মুগ্ধ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

ভেতরে এসো, উঠে দাঁড়িয়ে বললেন ম্যাক। আমি দেখলাম চীফকে খুব ক্লান্ত দেখালেও তার গলার স্বর এখনও সতেজ, তার নীল চোখ এখনও উজ্জ্বল। আরো তিনজন লোক তখন ঘরের মধ্যে বসেছিল। তাদের পরনে অসামরিক পোষাক। ম্যাক এক এক করে তাদের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন।

জ্যাকুইজ ডেবল, ফ্রেঞ্চ ইনটেলিজেন্স। রোগাটে চেহারা। ইনি হলেন অরন কুহল, ইজরাইলি সিকিউরিটি ফোর্সের কর্মকর্তা আর উনি হচ্ছেন ইউ, এস নেভির কমান্ডার হফকিনস্।

আমি সকলের সঙ্গে করমর্দন করে আমার জন্য নির্দিষ্ট চেয়ারে আসন গ্রহণ করলাম।

এইসব ভদ্রলোকেরা এখানে এসে উপস্থিত হয়েছেন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে। আজ আমাদের দেশ বিপন্ন। এদের সবার জাহাজ চালনা সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়, সমুদ্রের নীচে একটা বিরাট ট্রাজেডি অপেক্ষা করছে আমাদের প্রত্যেকের দেশের জন্য। ম্যাক বললেন, আমার ধারণা এন থ্রি তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ। আমি মাথা নাড়লাম এবং তিনটি দেশের মিলিত ঘটনাগুলো সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে আকস্মিক একটা পরিবর্তন এনে দিল যেন। অল্প সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি, ফ্রেঞ্চ এবং আমেরিকান সাবমেরিন তিনটি হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেছে। আকস্মিক ভাবে, যার কোনো ব্যাখ্যা চলে না। এই দুর্ঘটনায় প্রেসের মাধ্যমে সারা পৃথিবী এখন মুখর, সোচ্চার।

তারপর তুমি নিশ্চয়ই জানো, ম্যাক বলতে থাকেন, –এই সব সাবমেরিনগুলোর মধ্যে কোনো একটিও তারপর থেকে রেডিও মেসেজ পাঠায়নি, এমনকি কোনো সমস্যার কথাও উল্লেখ করেনি শেষে পাওয়া রেডিও মেসেজে। তারা যেন কর্পূরের মতো উবে গেছে। অদৃশ্য হয়ে গেছে। এর, জবাব আমাদের দিতে হবে। ইউনাইটেড স্টেটস এর প্রেসিডেন্ট একটা নোট পেয়েছে মুক্তিপণের। তাতেই উত্তরটা লেখা আছে। একশো মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে আমাদের নবতম সাবমেরিন এক্স-৮৮, ফেরত দেওয়া হবে।

সেই এক্স-৮৮, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তার মানে সেই পরীক্ষামূলক সাবমেরিন?

 হ্যাঁ, ঠিক তাই। আর সেই নোটটা কার কাছ থেকে এসেছে জানো?

আমি সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলাম, জুডাস। এটা তারই উপযুক্ত কাজ। হ্যাঁ। কেবল একটিমাত্র লোক আছে এই পৃথিবীতে যে এইসব জঘন্য কাজে সিদ্ধহস্ত, মানুষের মুখোসের আড়ালে লুকিয়ে আছে যার মধ্যে শয়তানের প্রতিভূ। ম্যাক আরো বললেন, জুডাস তার কুকীর্তির নমুনা স্বরূপ আরো দুটি সাবমেরিনের উল্লেখ করেছে। বাস্তবিক এই এক্স-৮৮ হলো আমাদের সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের একটা প্রিন্ট। আমাদের সবচেয়ে আধুনিক রক্ষণাত্মক এবং আক্রমণাত্মক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, আমাদের নিউক্লিয়ার পাওয়ারপ্ল্যাটের সবচেয়ে গোপনীয় কাঠামো। তাছাড়া এর সঙ্গে জড়িত আছে আমাদের নাবিকদলের পুরো একটা দল, বেঁচে থাকার সমস্যা। আমরা যদি তার মুক্তিপণ না দিই, অন্য কোথাও সাবমেরিনগুলো বিক্রী করে দেবে সে। আমি তার বক্তব্য সম্পূর্ণ করতে বললাম, আর যদি দিই, তাতেও কোনো নিশ্চয়তা নেই। সে হয়তো আমাদের কাছ থেকে আরো বেশী কিছু টাকা দাবী করতে পারে এবং সেই সঙ্গে অন্য কারোর কাছে বিক্রীর জন্য দর–দাম করতে পারে।

ম্যাক আমাকে সমর্থন করে বললেন, আর এই কারণেই এই সব ভদ্রলোকদের কাছে যে সব খবরাখবর আছে তা তারা আমাদের জানাতে এসেছেন।

ইজরায়েলি ভদ্রলোক আলোচনায় যোগ দিয়ে বললেন, আপনাদের দেশ এখন চরম বিপদের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে, তাই বলতে হয় যদি তার এই পাগলামি সাফল্যলাভ করে তাহলে সে এই একই দাবী আমাদের দেশের কাছ থেকেও করবে। আমার মতে এখন থেকেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমাদের সাবমেরিন গুম হওয়ার খবর সব চীফের কাছে বলেছি। এখন আপনি যা ভালো বোঝেন করবেন।

ম্যাক তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বললেন, পাঁচ দিনের মধ্যে শর্তমত আমরা যদি তার দাবী মিটিয়ে না দিই সে তাহলে আরো বেশী করে আমাদের সাবমেরিন আটক করবে। আরো বেশীনাবিকদের ধরে রাখবে, এবং আরো বেশী অর্থ দাবী করবে।

আমি চীৎকার করে বলে উঠলাম, কেন আমাদের সাবমেরিনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা নিজেরা কি করতে পারি না? র‍্যাডার, বেতার মারফত বার্তা বিনিময় ব্যবস্থা, বিপদ সংকেত জানানোর আধুনিক সব যন্ত্রপাতিগুলোর কি হল?

ম্যাক বলতে থাকেন, আমার মনে হয় ঠিক সময়ে সেগুলো অকেজো করে দিয়েছিল আরো শক্তিশালী কোন যন্ত্রের সাহায্যে। আমরা নিশ্চিত জানি যে, সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় সাবমেরিন আটক করার মত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং শক্তিশালী কিছু একটা নিশ্চয়ই সে ব্যবহার করছে একটা নির্দিষ্ট ঘাঁটি থেকে। এক্স-৮৮ এবং তার নাবিকদল সম্ভবতঃ সেই ঘাঁটিতে বন্দী হয়ে আছে। এই পাঁচদিনের মধ্যে তোমাকে সেই ঘাঁটিটা খুঁজে বার করতে হবে, অস্ত্র প্রয়োগ করে ধ্বংস করতে হবে। সে যাইহোক না কেন এবং নাবিক দল সমেত সাবমেরিনগুলো উদ্ধার করে নিয়ে আসতে হবে।

আমি সরলভাবে উত্তর দিলাম, কাজটা না করা পর্যন্ত কিছু বলতে পারছি না। কথাটা শেষ করে উপস্থিত তিনজনের দিকে আমি তাকালাম। তাদের চোখে আমার প্রতি আন্তরিক বিশ্বাসের ছায়া স্পষ্ট ফুটে উঠেছিল।

ফরাসী প্রতিনিধির কাছ থেকে খুব সামান্য খবর পাওয়া গেলেও সেগুলো খুব নির্ভরযোগ্য বলে মনে হয়। ম্যাক বলতে থাকেন, আমরা ধীরে ধীরে সবই বলবো। এন–থ্রি, প্রথমত আমরা জানতে পেরেছি এইসব সাবমেরিনগুলোর উপর জুডাসের কর্তৃত্ব থাকলেও, হাতের কাজ কিংবা বৈজ্ঞানিক জ্ঞান তার নেই। মঁসিয়ে ডেবল, আপনি এবার কিছু বলুন।

খুব সামান্য খবরই আমি আপনাকে দিতে পারি। জ্যাকুইজ ডেবল বলল–সামুদ্রিক জীববিদ্যায় অভিজ্ঞ ফ্র্যাঙ্কয়েস সাংগুই-এর নাম আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন। প্রায় বছর খানেক আগে প্রফেসার সাংগুই-এর কাছে একটি লোক এসে বলে, সমুদ্রের নীচে এমন একটা কিছু সে তৈরী করতে পারে, যেটা সারা পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করবে। সে ফরাসী ছিল না। তার নাম ছিল হ্যারল্ড ফ্রাটকে। সাংগুই তাকে চিনত। সামুদ্রিক জীববিদ্যায় হ্যারল্ডের অদ্ভুত জ্ঞান ছিল। কিন্তু লোকটার একটা বদনামও ছিল সেই সঙ্গে, নারীসঙ্গ লোভী।

একবার সে এক যুবতী মেয়েকে চুরি করে এনে তার ঘরে আটক করে রাখার অপরাধে গ্রেপ্তার হয় এবং এই কারণে তাকে ভালো চাকরীটা খোয়াতে হয়। তারপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

ইজরায়েলি সিকিউরিটি অফিসার অরন কুহল আর এক কাহিনী শোনাল। প্রায় বছর খানেক আগে ইজরাইল–জর্ডান বর্ডার দিয়ে একটি লোক সুন্দরী যুবতী মেয়েদের পাচার করতো ধনী ক্রেতাদের কাছে মোটা টাকার বিনিময়ে। বেশীর ভাগ আরব এবং দূর প্রাচ্যে। যাইহোক কাগজপত্রে দেখা যায় সেই ক্রীতদাস লোকটির ক্রেতা ছিল হ্যারল্ড ফ্র্যাঙ্ক।

তাই বুঝি! আমি গভীর চিন্তা করে বললাম, হয়তো সে এখন তার নতুন ক্রেতা জুডাসকে আবিষ্কার করেছে। এসবই অনুমান। কিন্তু জুডাসকে ধরার পক্ষে এটা যথেষ্ট নয়। এসব খবরগুলোর উপর নির্ভর করে বসে থাকলে আমাদের করার কিছু নেই। বর্তমানে জুড়াসের সঠিক অবস্থানের জায়গাটা কোথায় সবার আগে সেটা আমাদের জানতে হবে।

ম্যাক আমার কথার মাঝে বলল, ঠিক আছে এন-থ্রি, আমাদের সংগৃহীত খবরগুলো মাস্টার কমপিউটারকে পরিবেশন করে জানতে চাইব জুডাসের বর্তমান ঠিকানাটা।

শুনে আমি বললাম, প্রেসিডেন্টকে দেওয়া জুসের নোটটা ক্যারেবিয়ান থেকে এসেছে। লেশার আনটাইলেমোর কাছাকাছি সম্ভবতঃ ভেনেজুয়েলাও হতে পারে।

আমি বললাম, ভাগ্য সহায় বলে আমার অনুমানটা কাজে লেগে গেল। কয়েক মুহূর্তের জন্য আলোচনা বন্ধ রেখে আমার মনটা চলে গেল দ্বীপপুঞ্জ ঘেরা ক্যারেবিয়ান সাগরে। ম্যাকের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেলাম।

তোমার অনুসন্ধানের কাজ চালাতে গেলে কয়েকটি বিশেষ ধরণের সাহায্যের প্রয়োজন। মহাসাগরীয় অভিযানের জন্য ইতিমধ্যেই সেখানে একটি অভিযাত্রী দল গঠন করা হয়েছে। ডঃ ডি. ফ্রাশার সেই দলটির নেতা।

ডঃ ফ্রাশারের প্রয়োজন মত সেখানে আমাদের সব রকম ব্যবস্থা করা আছে। জাহাজের ছোট ঘাঁটি, ছোট প্লেন নামা-ওঠার রানওয়ে, জলের ওপর সেতু তৈরী করার উপযোগী চ্যাপ্টা ধরনের নৌকো ইত্যাদি। এক কথায় ডঃ ফ্রাশারের একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ ইউনিট সেখানে পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, কাজের কোনো অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না। ..

কিন্তু ডঃ ফ্রাশারের সেই ইউনিটে আমাকে কি হিসেবে যোগ দিতে হবে তা তো বললেন না?

জলের নীচে জাহাজ সমূহের সমস্যার ব্যাপারে তুমি যেন বিশেষ গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছ, ম্যাক প্রত্যুত্তরে বললেন, তার ইউনিট থেকে তোমার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তোমাকে পাঠান হচ্ছে। চুক্তিপত্রে এই শর্তটা যোগ দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু ডাক্তার জানতেও পারবে না, তাকে আমার আশ্রিত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

জুডাস এবং এক্স-৮৮ টা খুঁজে বার করতে গিয়ে এরই মধ্যে তুমি এক ঘন্টা সময় নষ্ট করে ফেলেছ। বলে ম্যাক উঠে দাঁড়ালেন। এর অর্থ হল যে, তাদের আলোচনা শেষ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে।

ম্যাক বললেন, স্পেশাল এফেকট-এর সামনে তুমি দাঁড়িয়ে থেকো। স্টুয়ার্ট তোমার জন্য একটা নতুন চামড়ার সাজসরঞ্জাম নিয়ে আসবে। সে তোমায় তার ব্যবহার ভালো করে বুঝিয়ে দেবে।

আমি সেই তিনজন প্রতিনিধির সঙ্গে করমর্দনকরলাম। তারাও উঠে দাঁড়িয়েছিল আমাকে বিদায় দেবার জন্য। তাদের মুখগুলো কেমন বিষণ্ণ, শোকাচ্ছন্ন! স্পেশাল, এফেকটসের দিকে এগিয়ে যেতে গিয়ে আমি তাদের মনের অবস্থাটাবুঝলাম। এমন বিষণ্ণ হওয়া তাদের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। ফ্রেঞ্চ ইজরায়েলি এবং আমেরিকান, এই তিনটি সাবমেরিনের কম করেও তিনশ নাবিকদের হত্যা করেছে জুডাস। তাদের স্মৃতি এত তাড়াতাড়ি মন থেকে কি মোছা যায়?

স্পেশাল এফেকটসের সামনে আমি দেখলাম স্টুয়ার্ট অপেক্ষা করছে। তার হাতে ম্যাকের বর্ণনা মতো চামড়ার সাজ সরঞ্জাম। স্টুয়ার্ট আমাকে আসন্ন অভিযানের ব্যাপারে নির্দেশ দিল এবং আমিও মনোযোগ সহকারে তার কথা শুনলাম।

আচ্ছা এন-থ্রি, লোকটি তার বক্তব্য শেষ করল এই বলে, আপনি পুয়েরটোরিকোয় যাবেন নিয়মিত যাত্রীবাহী বড় বিমানে চড়ে। এয়ার কমাণ্ডার সামুদ্রিক ইউনিট থেকে আপনাকে তুলে নিয়ে যাবে সেখানে। আমাদের চীফ চান সবকিছু যেন খুব সতর্কতার সঙ্গে নাড়াচাড়া করা হয়। আমাদের সেই ইউনিটের জ্ঞানের সীমা খুব সীমাবদ্ধ। সম্ভবতঃ সেখানকার লোকজন এ এক্সাইর নাম কখনও শোনেনি। আপনি হবেন কমান্ডার কার্টার, সামুদ্রিক গবেষক। আমার ধারণা এখন আপনি আপনার প্রয়োজনীয় কিছু পেয়ে গেছেন। আপনার যাত্রা শুভ হোক।

গুডলাক।

আমি মাথা নোয়ালাম, তারপর গাড়ীতে স্টার্ট দিলাম।

যাত্রীবাহী বিমানে প্রচণ্ড ভীড়। দ্বীপপুঞ্জে ছুটি উপভোগ করতে চলেছে সবাই যে যার আত্মীয়-স্বজনের কাছে। আমি দেখলাম আমার আসনের পাশে একটি মেয়ে আগে থেকেই বসে ছিল, তার কোমরে বেল্ট লাগানো, মাথাভর্তি বাদামী রঙের চুল, আপেলের মতো লাল টকটকে গাল। কমলালেবু রঙের জ্যাকেটের আড়ালে নিটোল গোল দুটি স্তন।

পরনে নীল স্কার্ট। সুডৌল পা, দৃষ্টি কেড়ে নেয়। তাকে সুন্দর ও সতেজ দেখাচ্ছিল। সেই মুহূর্তে তাকে যেন উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল। ঘন ঘন যাত্রীদের দিকে তাকিয়ে দেখছিল সে।

আমি মেয়েটিকে বললাম, ঘাবড়াবেন না, এখুনি রওনা হয়ে যাবে।

আমার দিকে তাকিয়ে মেয়েটি হেসে উঠলো। সে বলল, আমার জানা ছিল না, বিমানে এত ভীড় হয়।

আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হাসলাম। আমাদের যাত্রা দীর্ঘ হবে কিন্তু আমার মনের মতো একটা মেয়ে পাশে থাকায় যাত্রা বেশ সুখকর হবে বলে মনে হচ্ছে।

মেয়েটির নাম বেটিলাও রলিংস। নেব্রামাকায় তার জন্ম। বছর খানেক আগে সে এই বড় শহরে আসে।

এখানে তাকে কিছু অসুবিধায় পড়তে হয়, প্রচণ্ড সংগ্রাম করতে হয়।

আমিও মেয়েটিকে আমার পরিচয় দিলাম, তবে আমার আসল নামে নয়, টেড ম্যালন নামে। কারণ এই যাত্রীবাহী বিমানে অনেক জোড়া কান খোলা আছে। বেটিলাও আমার কথায় প্রভাবিত হলো।

আমি মেয়েটিকে প্রশ্ন করলাম, তুমি কি পুয়েরটোরিকোতে ছুটি কাটাতে যাচ্ছ?

না, না, হঠাৎ সে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো, আমি সেখানে একটা নতুন চাকরী নিয়ে যাচ্ছি। সত্যি আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে। হয়তো আমার একটু ভয় ভয় লাগছে। যাইহোক সেখানে তারা আমার জন্য একটা বিশেষ বিমান পাঠাচ্ছে।

 তা তোমার কাজ কি হবে সেখানে?

একজন ধনী ব্যক্তির সেক্রেটারী কাম সঙ্গিনী। নিঃসঙ্গ, নিজস্ব দ্বীপে থাকেন। আমি ছাড়া কয়েকজন লোক সেখানে থাকবে। আমি শুনেছি আমার কাজ খুব হাল্কা হবে।

এ কাজের খবর তুমি পেলে কোথা থেকে?

 মেয়েটি বললো, কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে। বিজ্ঞাপন দাতা হলেন–দি ওয়ালটন এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি। নামটা শুনে আমার মনে অদ্ভুত ভাবে নাড়া দিল। আমার অবচেতন মন কেন যে আমাকে এভাবে ভাবিয়ে তুললো হয়তো যথাসময়ে জানা যাবে। ঠিক সেই মুহূর্তে বৈমানিক কণ্ঠস্বর ভেসে এলো

পুয়েরটোরিকোর চারিদিক ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন। ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহদয়গণ মিনিট কয়েকের মধ্যেই আমরা মাটিতে অবতরণ করতে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না, শেষ মুহূর্তে আমাদের বিমান নামতে পারবে কিনা। কয়েক ঘন্টা আগে যাবতীয় ছোট বিমান এখান থেকে ফিরে গেছে। যাইহোক আপনারা যে যার কোমরে বেল্ট বেঁধে রাখুন।

বিমানবন্দরটা যেন পেঁজা তুলোর সাদা কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল। তারই মধ্যে সতর্কতার সঙ্গে বৈমানিক তার বিমানখানি নামাল। আলোয় আলোকিত বিমানবন্দর। আমি অনুভব করলাম বিমানখানি মাটি স্পর্শ করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমান থেকে নেমে টার্মিনালের ভেতরে এসে দাঁড়ালাম। পাশে বেটিলাও। আমাদের দুজনকে সেখানে পরীক্ষা করা হলো।

স্থানীয় একটি লোককে আবহাওয়ার খবর জানতে চাইলে সে বললো, এ রকম কুয়াশা সারা রাত ধরে থাকবে। অতএব রাতটা হোটেলেই কাটাতে হবে। আমি বেটিলাওয়ের দিকে তাকালাম। তার মুখে বিরক্তির ছাপ। আমি মুখে হাসি ফোঁটালেও ভেতরে বেশ ক্ষুব্ধ হলাম। বারোটা ঘণ্টা বেকার নষ্ট হতে যাচ্ছে। আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম, এভাবে ভেঙে পড়ার কি আছে, আজকের সারা সন্ধ্যেটা তোমাকে খুশি করার জন্য আমি খরচ করবো।

বেটিলাও হঠাৎ আমার একটা হাত গভীর অনুরাগে টেনে নিয়ে তার বুকের উপর রাখল। অসম্ভব নরম বুক। উত্তেজিত মুহূর্তে সে নিজেকে আরও বেশী উত্তেজিত করার জন্য আমার হাতটা তার পশম নরম স্তনের উপর চেপে ধরল। তারপর আমাকে বললো, তোমার প্রস্তাবে আমি এক্ষুনি রাজী। অপেক্ষা করাটা আমি ভীষণ ঘৃণা করি।

বেশ, তাহলে আমার সঙ্গে এসো। আমি তার হাত ধরে এগিয়ে যেতে যেতে বললাম, এখন একটা ভালো হোটেল দেখে ডিনারের ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর সন্ধ্যেটা আমাদের খুশি মতো ব্যবহার করা যাবে।

মেয়েটির মুখের হাবভাবে যেন খুশি উপচে পড়ছে। আমার সঙ্গে সেও সমান তালে পা ফেলে এগিয়ে চললো।

টার্মিনালের কাছাকাছি একটা ভালো হোটেল পেয়ে গেলাম আমরা। ককটেল, নাচ, ডিনার এবং ড্রিঙ্কস সেরে আমরা ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। মেয়েটি বললো, এত সুন্দর সন্ধ্যা আমার জীবনে এর আগে কখনও আসেনি বলে আমার মনে হয়।

কাল সকালেই এক নির্জন দ্বীপে নিঃসঙ্গ এক বৃদ্ধের কাছে আমাকে চলে যেতে হচ্ছে। সেখানে কতমাস যে থাকতে হবে জানি না। এখন হঠাৎ আমার মনে হল, আমার যাওয়ার ইচ্ছাটা নেই তোমাকে ছেড়ে। তোমাকে আবার আমি দেখতে চাই টেড। আমি লক্ষ্য করলাম মেয়েটির চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।

আমিও তার নাকের ওপর আলতো ছোঁয়া রেখে বললাম, আমি নিজেও তোমার কথা চিন্তা করছিলাম। সেই নির্জন দ্বীপ, সেখানে তুমি আর সেই নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ। অসহ্য কল্পনা করা যায় না। তোমাকে আর পাঁচটা মেয়ের মতো আমার মনে হয় না। তুমি যেন এক অনন্যা, তোমার আগে। অন্য কোনো মেয়ে বোধহয় আমাকে এতোটা ভাবিয়ে তুলতে পারেনি।

হঠাৎ আমি অনুভব করলাম, বেটি লাও দু হাত বাড়িয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরেছে। সে ফিস ফিস করে বললো, টেড আমাকে কিছু দাও। এমন একটা কিছু যা অনেকদিন ধরে রাখতে পারবো।

আস্তে আস্তে আমার মাথাটা নামিয়ে আনলাম, বেটিলাও ঠোঁটের ওপর আমার ঠোঁটটা চেপে ধরলাম। মেয়েটি তার ওষ্ঠদ্বয় মেলে ধরলো আগ্রহভরে। থরথর করে কেঁপে উঠল সে। চুম্বন অতি দীর্ঘ হলো। যতক্ষণ না বিস্বাদ ঠেকল কেউ কাউকে ছাড়তে চাইলাম না। তারপর একটু সময়ের জন্যে আমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সে ঘরের দরজা বন্ধ করে আবার ফিরে এলো। কিছুক্ষণ কি ভেবে গা থেকে কমলালেবু রঙের জ্যাকেটটা খুলে চেয়ারের উপর ছুঁড়ে ফেলে দিল। এক মুহূর্তের মধ্যে ব্লাউজ এবং স্কার্টটাও খুলে সবশেষে ব্রা। এখন তার দেহে সামান্য সুতো বলতেও কিছু নেই।

আমি মেয়েটির কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। সে আমাকে দৃঢ় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করল। ঠিক এই রকমটিই আমি চাইছিলাম। আমার মুখের ওপর তার মুখ, আমার বুকে দুটি স্তনের উষ্ণ নিপীড়ন। আমি মুগ্ধ চোখে দেখছিলাম দুধ সাদা নরম দেহটা তার। আমি চুমু দিয়ে তার দেহ পরিক্রমা শুরু করলাম। সে একে একে উত্তেজিত হয়ে উঠলো।

এখানে তোমার সঙ্গে যে আমি রাত কাটাব আশা করিনি। আমি তার ঠোঁট থেকে মুখটা সামান্য একটু তুলে বললাম।

মেয়েটি বললো, জানো টেড আমিও ভাবিনি। ঠিক এই রকমটি আমি চেয়েছিলাম, আজ আমি খুব সুখী তোমাকে আমার মনের মত করে পেয়ে।

আমি মেয়েটিকে আরো কাছে টেনে নিলাম, ওর বুকের ওপর আঙুল ঘষতে থাকলাম। বেশ বুঝতে পারলাম আমার হাতের স্পর্শ পেয়ে সে উত্তেজিত হয়ে উঠলো। তার সারা দেহে বসন্তের সমাগম, পশম নরম ভরাট বুক। স্পর্শে মাতাল হয়ে যেতে হয়। কিন্তু তার অভিজ্ঞতা কম। অক্ষত যৌনা। ওর আলিঙ্গন আরো দৃঢ় হলো। তার দেহটি কেঁপে উঠছিলো।

আমি চরম সোহাগের পরশ রাখতে যখন তার দুপায়ের মাঝখানে বসে পড়লাম তখন শুধু বেটিলাও কণ্ঠ দিয়ে হিসহিস শব্দ বেরিয়ে এলো। তারপর সে তার দেহটাকে আমার কাছে এলিয়ে দিল চরম সুখপ্রাপ্তির আশায়।

 আমি তখন তার কামনা জর্জরিত দেহটাকে নিয়ে সুখের সাগরে ডুবে গেলাম। শরীরে যেন শিহরণের প্লাবন বয়ে গেল। অনেক কাঁপুনির পর শরীর শান্ত হলো। মেয়েটি লতার মতো আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলো।

আমি মেয়েটির দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বললাম, আশা করি আজকের এই আনন্দময় মুহূর্ত তোমার মধ্যে অনেকদিন প্রভাবিত হয়ে থাকবে।

হ্যাঁ, অনেকদিন থাকবে, বেটি নীচু গলায় বলল, চিরদিনের মত। আমার চোখে চোখ রেখে বলল, টেড আমি তোমাকে চিঠি লিখতে চাই। আমি তোমাকে আমার ঠিকানা দিতে পারছি না, কারণ এখনও পর্যন্ত আমি নিজেই সেটা জানি না। কিন্তু তুমি যদি তোমার ঠিকানাটা দাও তাহলে আমি লিখতে পারি।

আমি ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে আমার নিউইয়র্কের অ্যাপার্টমেন্টের ঠিকানা দিলাম। ও ঠিকানাটা ওর নোটবুকে লিখে নিল। তারপর বেটিলাও শিশুর মত শান্তভাবে ঘুমিয়ে পড়লে পর আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করলাম। আমি আমার জিনিসপত্র সব পরীক্ষা করে নিয়ে পরের দিন ভোরে রওনা দেবার জন্য তৈরী হলাম।

আমি জানি মেয়েটির সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের এই যে বিরতি, এরজন্য আমার কষ্ট হবে কিন্তু উপায় নেই। এবং একশো জন লোককে বন্দী অবস্থায় অনিশ্চিত জীবন যাপন করতে দিতেও চাই না আমি।

.

০৩.

 ঘরের মধ্যে সূর্যের আলো এসে পড়ায় আমার ঘুমটা ভেঙে গেলো। তাড়াতাড়ি ছুটলাম বেটি লাওয়ের ঘরে তাকে বিদায় সম্বর্ধনা জানাতে, তার শুভ কামনা করতে। দরজার কাছে গিয়ে দেখি মেয়েটির বদলে ঘরের মধ্যে বসে আছে এক দৈত্যকার লোক। তার মাথাটা দেহের মতই বিরাট, ছোট ছোট দুটি চোখ। লোকটা যে মোঙ্গলিয় তাতে কোনো ভুল নেই। লোকটার হাতে একটা খাম দেখা যাচ্ছিল, তার উপর লেখা রয়েছে–টেড ম্যালন।

লোকটা নীচু গলায় বললো, মেয়েটিকে তুমি চেন নাকি?

 গতকাল প্লেনে তার সঙ্গে দেখা হয়, কিন্তু তোমার জানার কি দরকার?

মঙ্গলিয় বলল, মেয়েটিকে তুমি ভুলে যাও। আদেশ তো নয় যেন সতর্ক করে দেওয়া।

আমি লোকটির কাছ থেকে নোটটি নিয়ে পড়তে শুরু করে দিলাম।

 প্রিয় টেড,

তোমার ঘুম ভাঙাতে চাইলাম না। চলে যাচ্ছি। কালকের সুন্দর রাতের কথা আমি কোনদিনও– ভুলতে পারবোনা। তোমার দেওয়া ঠিকানায় আমি চিঠি লিখব। আমার কাছ থেকে খবর পাওয়ার জন্য আশা কোর। ভালোবাসা নিও। সব কিছুর জন্য আবার ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বেটিলাও।

 আমি খুব মনোযোগ দিয়ে বেটির চিঠিটা পড়ছিলাম। হঠাৎ মুখের ওপর প্রচও ঘুঁষি এসে পড়লো। অসহ্য যন্ত্রণা। এরকম আঘাত এর আগে আমি কখনও পাইনি। টাল সামলাতে না পেরে একটা ছোট টেবিলের ওপর মুখ থুবড়ে পড়লাম। কিছুক্ষণের মধ্যে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম। চোখ দুটি ফুলে উঠেছে। তার চারিদিকে জমাট কালো অন্ধকার। আমি দেখলাম ঘরের মধ্যে আমি একা। বুঝতে পারলাম ঐ দানবটাই আমার ওপর অমানুষিক আঘাত হেনেছিল। আমার ঠোঁটের পাশ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। রুমাল দিয়ে মুছে কোনরকমে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। রাস্তার ওপর চোখ রাখতে গিয়ে আমার দৃষ্টি আটকে গেলো বোটলাওয়ের কমলালেবুরঙের জ্যাকেটের ওপর। চামড়ার জ্যাকেট পরিহিত একটি লোকের সঙ্গে সে তখন ট্যাক্সিতে উঠতে যাচ্ছিল। দানব মঙ্গোলিয়ান বেটির সুটকেস বহন করে নিয়ে যাচ্ছে।

আমি বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে ঠাণ্ডা জল দিলাম। এখন যেন একটু স্বস্তি বোধ করছি। সমস্ত ঘটনাটা অবিশ্বাস্য ভাবে ঘটে গেলো। বেটিলাওয়ের জন্য দুঃখ হলো। তার কি পরিণাম হতে যাচ্ছে কে জানে।

এখন আমার হাতে আর বেশী সময় নেই। প্রত্যেকটা ঘন্টা হিসেব করে চলতে হবে। আর দেরী না করে আমার জিনিসপত্র নিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম ট্যাক্সির জন্য। আমার গন্তব্যস্থল এখন ইশলা গ্রেন্ড বিমান বন্দর। দূরে উজ্জ্বল লাল হলুদ রঙে লেখা এয়ারো কমান্ডারের পরিচয় লিপি চোখে পড়লো আমার। আর তারই পাশে গোটা গোটা কালো অক্ষরে লেখা ও সিওনোগ্রাফিক এক্সপিডিসন ম্যাক। টার্মিনাল পেরিয়ে এগিয়ে যেতে গিয়ে দেখলাম, এক দীর্ঘদেহী যুবক ঠিক সেই মুহূর্তে প্লেন থেকে নেমে আসছিল। পরনে খাকি ট্রাউজার।

কমান্ডার? সে আনন্দে চীৎকার করে উঠলো, আমি বিল হেডউইন। সুস্বাগতম। যদিও জানি আপনি সাময়িক ভাবে আমাদের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন। তবুআপনি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।

হ্যালো বিল। আমি প্রত্যুত্তর দিলাম। চমৎকার চেহারা যুবকটির। তার দেহের গঠন ঠিক সাঁতারুদের মতন। হাসিখুশিতে ভরা তার মুখ চোখে পড়ার মতন। অল্প সময়ের জন্যে থাকলেও আমি বললাম, আমি তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে মেশবার চেষ্টা করব।

কমান্ডার, এয়ারো কমান্ডারে উঠতে উঠতে বিল হেডউইন উচ্ছ্বসিত হয়ে বলতে থাকলো আপনাকে আমাদের সঙ্গে পেয়ে আমরা খুব খুশি। আপনার নাম আমরা অনেক শুনেছি। শুনেছি জলের নীচে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে অনেক। আর সেই জন্যই ডঃ ফ্রেশার আপনার সম্বন্ধে বিশেষ ভাবে আগ্রহান্বিত।

আমি মনে মনে ভাবলাম, ম্যাক কার্যত বেশ ভালো ভাবেই তৈরী করেছেন। বিল খুব নীচু দিয়ে প্লেন চালাচ্ছিল ক্যারিবিয়ানের উপর দিয়ে বৃত্তাকারে ঘুরতে ঘুরতে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, তা তোমাদের দলে কজন আছেন?

যুবকটি বলল, আমার স্ত্রী সিনথিয়া এবং আমি। গত মাসে আমাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু ডঃ ফ্রেশারের সঙ্গে আমরা এক বছরেরও বেশী কাজ করছি। তারপর আছেন ল্যাবরেটরি টেকনিসিয়ান রে অ্যানডার্স হাউই থমসন আমাদের মেকানিক, আমাদের রাঁধুনি কনসুয়েলা, আমার মনে হয় মেয়েটি বারবাডোজ দ্বীপপুঞ্জের মেয়ে। আর আছেন ডঃ ফ্রেশার।

আমাদের প্লেনটা খুব নীচ দিয়ে যাচ্ছিল। আমি নীলাভ সমুদ্রের জলের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকালাম ভাসমান সেই জাহাজটা এখন অনেক বড় দেখাচ্ছে। জাহাজের নাম ট্রিটন। সাদা রঙের কাঠামো। আমাদের প্লেনটা সমুদ্রের জল স্পর্শ করার সময় আমি দেখলাম স্নানের পোশাক পরে জাহাজের পিছন দিকে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঐ মেয়েটি বেটিলাও রলিংসের কথা মনে করিয়ে দেয়।

বিল প্লেনের ইঞ্জিন বন্ধ করে দিল এবং ট্রিটনের পিছন দিকে প্লেনটা থামাল সে। ও হচ্ছে সিনথিয়া, বিল বলল।

আমি জাহাজের ভিতর প্রবেশ করে নাবিকদের কাছে নিজের পরিচয় দিলাম। কনসুয়েলা পূর্ণযুবতী। হাল্কা কফির রঙের দেহ। আমি বাজি ধরে বলতে পারি ল্যাবরেটরি টেকনিসিয়ান এবং মেকানিক এরা দুজনে সেই জাহাজের মধ্যে কনসুয়েলাকে পেয়ে অত্যন্ত সুখী। ডঃ ফ্রেশার এখন ব্যস্ত রয়েছেন। সিনথিয়া বললো–কমান্ডার এখন চলুন আপনার কোয়ার্টার দেখিয়ে নিয়ে আসি। বেশ সুন্দর ভাবে সাজগোজ করেছিল সিনথিয়া। আমি তাকে অনুসরণ করতে গিয়ে দেখলাম তার ঘরটা ছোট হলেও টিপটপ। ম্যাকের নির্দেশ মতো উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ট্রান্সমিটার বসান ছিল সেখানে। একটা খবর পাঠালে ভালো হতো, ম্যাক সেই খবরটার জন্য আশা করে আছেন। সিনথিয়া চলে যেতেই তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে প্রবেশ করলাম। কিছুক্ষণ পরেই আবার ডেকের উপরে উঠে এলাম। মেকানিক হাউস তখন সবেমাত্র প্লেনের অয়েলট্রাঙ্কে জ্বালানি ঢোকানর কাজ শেষ করেছিল।

কনসুয়েলা তখন রোদ্দুরে পিঠ দিয়ে ডেকের ওপর দাঁড়িয়েছিল। মেয়েটির সরলতা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। আমার প্লেনের ওপর ওঠার ইচ্ছা হলো। দরজার সামনে পা রাখতে গিয়ে দেখলাম মেয়েটি ট্রিটনের পিছন দিকে হেঁটে যাচ্ছিল। দীর্ঘাঙ্গী মাথাভর্তি সোনালী চুল। পায়ের গড়ন চমৎকার। চলার গতি আরো বেশী সুন্দর। আমি খুব বিস্মিত হলাম বিল তাদের দলের এই সদস্যার কথা আমাকে না বলার জন্যে। কিন্তু কেন সে তার পরিচয় দিল না? এড়িয়ে যাওয়ার মতো মেয়ে তো সেনয়। আমি এবারে তাকে খুব কাছ থেকে দেখলাম। খাড়াই নাক। সুন্দর পাতলা দুটি ঠোঁট। তার চেয়েও সুন্দর তার নীল গভীর দুটি চোখ। সামনে নীল সমুদ্রের মতই গভীর। মেয়েটি তার সামনে এসে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। মুখে তার শান্ত হাসি। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। ম্যাক তো একবারও বলেন নি, ডঃ ফ্রেশার একজন মহিলা। ভালোই হবে, অভিযানটা তাহলে বেশ রসালো হবে। ডঃ ফ্রেশার আবার নিজের থেকেই কথা বললো। তার কথা বলার ধরন শান্ত এবং মার্জিত। তার পরনের আলগা রাউজ গোপনীয়তা আরো বেশী করে প্রকাশ করে দিচ্ছিল যেন। সেটা আমাকে বিস্ময়ে অভিভূত করে তুললল। কমান্ডার, আমি আশা করি এখানে সবকিছু আপনার মনের মতো করে পেয়েছেন।

আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি খুব সন্তুষ্ট তবে আমার দৃষ্টি পড়ে রইলো ডঃ ফ্রেশার এর আলগা ব্লাউজের নীচে দোলায়িত স্তনযুগলের উপর।

ডঃ ফ্রেশার আমাকে বললেন, আমার যা কিছু প্রয়োজন হবে আমি যেন তাকে জানাতে দ্বিধা না করি। আমি ডঃ ফ্রেশার-এর সঙ্গে কথা বলে দেখলাম তার মনোভাব কঠোর হওয়া সত্ত্বেও সে বিচিত্র এবং বৈচিত্র্যময়। সত্যি কথা বলতে কি অল্প সময়ের আলাপ হলেও আমি বুঝে গিয়েছিলাম, সে যে ধরণের দৃঢ়চেতা মেয়ে, সে তার ঔদ্ধত্য, তার নিজের হাতে গড়া খ্যাতির শিখর থেকে এক চুলও নেমে আসবে না।

ডঃ ফ্রেশার তার বিদ্যুৎ নীল চোখ দিয়ে আমাকে নিরীক্ষণ করছিল। তারপর বললো, আমি আমার কেবিনে থাকবো, আমাকে আপনার প্রয়োজন হলে আসতে পারেন। আমি এখন চললাম এই বলে সে ডেকের নীচে চলে গেল।

এরপর আমি এয়ারো কমান্ডারে উঠে ইঞ্জিন চালু করে দিলাম। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সেটা ট্রিটন জাহাজ ছেড়ে আকাশে পাড়ি দিল। অল্প কিছুক্ষণ পরে আবার জ্বালানি নিয়ে ফিরতে হলো ট্রিটনে।

কনসুয়েলা আমার জন্যে স্যান্ডউইচ নিয়ে এলো। পূর্ণ যুবতী, কামনার উদ্রেক করে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি ওকে পাত্তা দিতে চাইলামনা। খাওয়া শেষ করে আবার আকাশে উড়লাম। দ্বীপপুঞ্জের উপর চক্কর দিতে থাকলাম বৃত্তাকারে। দ্বীপগুলোর ওপর দিয়ে উড়ে যেতে গিয়ে দেখলাম কোনটা একেবারে মনুষ্যবর্জিত, আর যে সব দ্বীপগুলোতে মানুষের চিহ্ন আছে বলে মনে হলো তা অতি নগণ্য। তাদের দিয়ে আমার ইস্পিত অভিযান চালানোর পক্ষে সহায়ক নয় বলে আমার মনে হলো। তবু অন্ধকার ঘনিয়ে না আসা পর্যন্ত আমি পারলাম না। এরই মধ্যে আরো দুবার আমি অভিযান চালালাম। যখন আবার ট্রিটনে ফিরে এলাম তখন আকাশ ভর্তি তারা সমুদ্রের জলে প্রতিফলিত হতে দেখা গেল। তখন আমি ক্লান্ত পরিশ্রান্ত, তেমন কিছুই চোখে পড়েনি, কিন্তু অন্তত একটা ব্যাপারে আমি সন্তুষ্ট। যে সব জায়গার ওপর দিয়ে আমি অতিক্রম করেছি সেখানে উল্লেখযোগ্য কিছুই আমি দেখতে পাইনি তবু কেন জানিনা বারবার আমাকে আকর্ষণ করছে। একবার তো আমার ভীষণ ইচ্ছা হচ্ছিল, আমি আমার ছোট্ট প্লেনটাকে কোথাও অবতরণ করাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাকে ফিরে আসতে হলো ট্রিটনে। ভীষণ খিদে পেয়েছিল। দেহের ক্লান্তি কাটানোর জন্য ভীষণ ড্রিঙ্কস করতে ইচ্ছে হচ্ছিল।

রাত্রির হাওয়াটা বেশ গরম। আমি তখন স্নানের পোশাক পরেছিলাম। সেই অবস্থাতেই ডঃ ফ্রেশারের কেবিনের সামনে এসেদাঁড়ালাম। ডঃ ফ্রেশারের নেমপ্লেটটা আমার চোখে পড়ল। আমি দরজায় নক করলাম।

ভেতরে আসুন। সংক্ষিপ্ত অথচ জোরালো কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।

কেবিনে ঢুকে দেখলাম, ডঃ ফ্রেশার তার পোশাক পরিবর্তন করেছে। গাঢ় নীল রঙের স্কার্ট, সেই সঙ্গে হাল্কা নীল রঙের হাতকাটা ব্লাউজ। স্পষ্ট দেখতে পেলাম তার নরম, নিটোল স্তনযুগল। একটি টেবিলের সামনে মাইক্রোস্কোপের উপর ঝুঁকে দাঁড়িয়েছিল ডঃ ফ্রেশার। আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বললো, হ্যাঁ বলুন।

আমি বললাম, কাল সকালের মধ্যে জাহাজটাকে পূর্বদিকের কাছাকাছিযতটা সম্ভবচালিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আরো মাইল পঞ্চাশ গেলেই আমার আশা প্লেনের রেঞ্জের মধ্যে এসে যাবে। বারবার জ্বালানির জন্যে ফিরে আসতে হলে কাল আমি খুব বেশী জায়গায় পাড়ি দিতে পারবো না।

কিন্তু এই মুহূর্তে নোঙর তুলে জাহাজ আমরা জলে ভাসাতে পারি না। ডঃ ফ্রেশার প্রতিবাদ করে উঠলো, আমরা এখানে আমাদের কাজের অপূর্ব সাড়া পেয়েছি, আমরা আমাদের পরীক্ষণ কাজের মাঝপথে এসে দাঁড়িয়েছি। এ অবস্থায় এখান থেকে যাওয়া আমাদের সম্ভবপর নয়।

দুঃখিত, এ ব্যাপারে আমি তোমাদের কোনো সাহায্য করতে পারবো না। আমি তার সঙ্গে শান্ত ব্যবহারই করতে চাইলাম।

মেয়েটির কঠোর দৃঢ়তা আমাকে মুগ্ধ করলো, আমাকে হাসাতে বাধ্য করলো, ওর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম যে ওর নাম ড্যানিয়েল। আমি মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। বেশ বুঝতে পারছিলাম মেয়েটি আমাকে লক্ষ্য করছে। আমি আমার অশান্ত চোখ দুটিকে মেয়েটির পায়ের উপর লুকোচুরি খেলা খেলতে দিলাম। তারপর সেখান থেকে তার নাভিদেশে যেখানে স্কার্টটা খুব শক্ত করে বাঁধা ছিল। সেখানে এসে আমার চোখ দুটি স্থির হয়ে গেল।

কমান্ডার, থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে মেয়েটি ডাকলো।

 আমি তার চোখের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলাম।

মেয়েটি বলতে থাকে–আমি আবার আরম্ভ করবো। আমি তোমার দয়ার কথা বুঝতে পেরেছি। তুমি একজন সৎ স্বাভাবিক প্রকৃতির মানুষ। তুমি চাও মেয়েরা তোমার পায়ের তলায় এসে পড়ুক। আবেগের তাড়নায় কোনো মেয়ের দিকে তুমি তাকাতে পার না। যতক্ষণ না তাকে তুমি তোমার বিছানার শয্যাসঙ্গিনী হিসেবে দেখছে। কি বিচিত্র তোমাদের মনের ক্ষুধা, তোমাদের দেহের–আমি হেসে বললাম, থামলে কেন, বলে যাও! আমি বিমোহিত। তোমার কথাগুলো শুনতে খুব ভালো লাগছে, আমাকে যাদু করে ফেলেছ, বলে যাও।

মেয়েটি বলতে থাকে আমি নিশ্চিত জানি, তুমি ভাবছ তুমি আমার ওপর দয়া দেখাচ্ছ আমিও বুঝি তোমার পক্ষে বোঝা কঠিন, অনেক মেয়ে আছে যারা তোমার মতো স্বাভাবিক প্রকৃতির নয়, যারা তোমার পশুসুলভ ইচ্ছের সঙ্গিনী হতে সাড়া দেবে না। এখন আবার ভাবছি তাড়াতাড়ি সেটা তুমি উপলব্ধি করতে পারলেই আমাদের মিলন ত্বরান্বিত হবে। তোমার কাছে আমি নিজেকে পরিষ্কার করে দিলাম তাই না?

ড্যানিয়েল, তুমি কি জানো আমি কি ভাবি? আমি অলস ভাবে প্রশ্নটা তার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে নিজের থেকেই আবার বললাম, আমি মনে করি তুমি আমাদের বাইরেটাই শুধু দেখেছ আমাদের মনের গভীরে প্রবেশ করার চেষ্টা করোনিকখনো। তোমাকে বাস্তবের সংস্পর্শে আসতে হবে ড্যানিয়েল। আমার মতে তুমি হলে সেইসব মেয়েদের দলে ড্যানিয়েল, যাদেরকে আমি বলি দলে যাওয়া, এলোমেলো ভীতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের মেয়ে।

আমি ও সবের কোনটাই নয়। জানিয়েল বললো, কেন জানো? কারণ তোমার ঐ নীল-ধূসর রঙের চোখদুটি অন্য কোনও সাধারণ মেয়েদের প্রলোভিত করলেও আমাদের পারবে না। তুমি ঠিক বুঝতে পারোনা, বিজ্ঞান ভাবাপন্ন অভিজ্ঞ বৈমানিকদের একটা বাড়তি ক্ষমতা আছে যার বলে তারা অনায়াসে নিজেদের ভাবাবেগকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারে।

আমি জোরে হেসে উঠলাম। আর সেই বৈজ্ঞানিক হলে তুমি তাই না? আমি খুব সহজেই প্রমাণ করে দিতে পারি, তুমি ভুল করছ তোমার সবই ভুল।

তুমি কিছুই করতে পার না। ড্যানিয়েল হঠাৎ চঞ্চল হয়ে উঠল। মানুষের শিক্ষা, সুনিয়ন্ত্রিত মনের দৃঢ়তা বিজ্ঞানসম্মত উপায়েই সব কিছুর কারণ খুঁজে বার করার চেষ্টা করে থাকে ভাবপ্রবণতাটাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে থাকে।

আচ্ছা তুমি কি সেটা পরীক্ষা করে দেখেছ?

তা দেখব না কেন? আমার নিজের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা আছে।

আমি বললাম, তোমার ওপরও আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে। কিন্তু আমাদের কতকগুলো নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, কখনও কোনো জোর খাটাবনা তোমার ওপর এবং তোমাকেও প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, আমাকে ছেড়ে তুমি পালিয়ে যেতে পারবে না।

ড্যানিয়েল বললো, না, আমি পালাবো না। আমার পালিয়ে যাবার দরকার হবে না। বাস্তবিক আমি আগ্রহ নিয়েই তোমার ওপর লক্ষ্য রাখবো, তোমার অহমিকা কেমন চূর্ণ–বিচূর্ণ হয়ে ভেঙে পড়ে তা দেখার জন্য।

এবার আমি উঠে দাঁড়িয়ে, তার পাশে গিয়ে ঘন হয়ে দাঁড়ালাম। আমার বুকে ড্যানিয়েলের মুখ। যে কোন মুহূর্তে বুঝি বা বিস্ফোরণ ঘটে যেতে পারে। ড্যানিয়েল আমার দিকে মুখ তুলে তাকালো।

আমি মনে মনে ভাবলাম কি আশ্চর্য, দুটি মেয়ে যেন দুই ভিন্ন মরু প্রান্তের বাসিন্দা। একে অপরের সঙ্গে কোনো মিল নেই। আমি ভাবছিলাম বেটিলাওয়ের কথা। সে কেমন বিনা বাধা তার ভাবাবেগকে কাজে লাগাতে দিয়েছিল, অপর দিকে ড্যানিয়েল ফ্রেশার কি রকম অনিচ্ছুক অবশ্য আমি বাজি ধরে বলতে পারি তাদের মধ্যে মূলত সত্যিকারের কোন পার্থক্য নেই। আসলে ফ্রেশার একটু উদ্ধত স্বভাবের। এই সুন্দরী বায়োলজিস্টকে একটু একটু করে বশে আনতে হবে তাকে বুঝিয়ে, তাকে ভালোবেসে। এখন কেবল অনুসন্ধান

.

০৪.

আমি প্লেনটা খুব নিচু দিয়ে চালাচ্ছিলাম। ক্যারিবিয়ানের নীল জল। এটা আমার সকালের দ্বিতীয় দফার অভিযান। উড়ন্ত ছোট্ট প্লেনটা ছোট ছোট দ্বীপ ছুঁয়ে চলেছে। আর একটা দ্বীপের কাছাকাছি আসতেই দ্রুত প্লেনটা আমি উপরে তুলে দিলাম। উদ্দেশ্য দূর থেকে সমস্ত দ্বীপটাকে তার দৃষ্টির নাগালের মধ্যে এনে ফেলা। আমার চোখের আয়নায় তখন প্রতিফলিত হলো নীচে কয়েকজন মাছ ধরা জেলের ব্যস্ততা, রৌদ্রে তাদের জল শুকনোর তাড়া। এসব দৃশ্য দেখে ম্যাককে আমি বার্তা পাঠিয়েছিলাম মাত্র একটি শব্দে না।

বার্তাটা পাঠাতে এবং সেটা গ্রহণ করতে গিয়ে সমান ভাবে বিরক্ত হতে হলো। আমার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল যুগপৎ দৃঢ়তার এবং ব্যর্থতার। এদিকে বিমানের ইঞ্জিনে কিছু গোলযোগ দেখা দিয়েছিল। আমি তাড়াতাড়ি ট্রিটনে ফিরে এলাম।

মেকানিক হাউই থমসন সব দেখে শুনে রিপোর্ট দিল। ইনসুলেশন কেবিল ছিঁড়ে গেছে। ভালো করে ইঞ্জিন পরীক্ষা করতে গেলে ঘণ্টাখানেক সময় লাগবে, তারপর আরো এক ঘণ্টা লাগবে সারানোর কাজে। মেকানিকের হাতে আমি প্লেন ছেড়ে দিয়ে এলাম। পথে একটা জটলা দেখে থামলাম। তারা সবাই রেলিং-এর ধারে দাঁড়িয়ে ছিল।

ওদিকে বিল হেডউইন রেলিং-এর উপর বুক দিয়ে কুঁকে পড়ে একটা টেপরেকর্ডার তুলে আনছিল জলের নীচ থেকে। ড্যানিয়েলকেও সেখানে উপস্থিত থাকতে দেখা গেল। তার পরনে ছিল দু খণ্ড বেদিং সুট। আমি জিজ্ঞেস করলাম ওটা কোথা থেকে এলো?

বিল বললো, সমুদ্রেরতলা থেকে তিনদিন সেখানেলিশ ধরারজন্য। ডঃ ফ্রেশার এখনজলের নীচে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। উদ্দেশ্য জলের নীচে পরীক্ষা কার্য চালান এবং কিছুনমুনা সংগ্রহ করা। আমাদের সী স্পাইডার আমরা নিজে চালালে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করতে পারি।

তা তুমি জলের তলায় কতক্ষণ থাকবে? আমি ড্যানিয়েলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম।

এক ঘন্টা আবার দু ঘণ্টার জন্যও থাকতে হতে পারে। কেমন যেন একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিল তাকে। আমি হাসতে হাসতে বললাম, আমি তোমার সঙ্গী হতে চাই। জলের মানুষ, তাই স্বভাবতই আমি উৎসাহী তোমার সঙ্গে জলে ডুবতে। তার মধ্যে একটা ইতস্ততঃ ভাব প্রকাশ হতে দেখলাম আমি। সী স্পাইডারের জায়গা মাত্র দুজনের জন্য। সেক্ষেত্রে সবার সামনে ড্যানিয়েল আমাকে ফিরিয়ে দিলে সেটা আমার পক্ষে সুখকর হবে না। অথচ তার সঙ্গ চাইতে মন চাইছিল না। ড্যানিয়েলের উত্তরটা শোনার জন্য সাগ্রহে আমি তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।

 ঠিক আছে প্রথমে আমি যাবো, ড্যানিয়েল গম্ভীর হয়ে বলল, তুমি আমাকে অনুসরণ কর। সাবধানে এসো।

আমি খুশি মনে মাথা নাড়লাম। পাটাতনের দরজা–পথে যেতে গিয়ে তার সুন্দর দেহবল্লরীর দিকে তাকিয়ে রইলাম মুগ্ধ হয়ে। সী স্পাইডারের বসার জায়গা মাত্র দুটিই, এবং স্বল্প পরিসর গায়ে গা ঠেকে যাবার মতন। ড্যানিয়েলের ইতস্ততঃ ভাবের কারণটা এবার আমি অনুমান করতে পারলাম। ড্যানিয়েল নিজেই সী স্পাইডারকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। অ্যালুমিনিয়ামের তৈরী হাতল দুটি শক্ত করে ধরা তার হাতে। প্রয়োজন মত সে দুটো এদিক ওদিক ঘোরাচ্ছিল ড্যানিয়েল। স্পাইডার সমুদ্রের নীচে নেমে চলেছে। কাঁচের দেয়াল দিয়ে আমি দেখলাম আমাদের চারপাশে নীলাভ জলের মধ্যে অসংখ্য নাম না জানা সামুদ্রিক জীব ঘোরাফেরা করছে।

একটা হাল্কা ধরনের ঝাঁকুনি আমাদের মনে করিয়ে দিল যে, আমরা সমুদ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করলাম। সেই সময় ড্যানিয়েল সুইচবোর্ডে একটা সুইচের উপর আঙুল টিপল। সঙ্গে সঙ্গে বাইরে স্পাইডারের যান্ত্রিক হাতগুলো চালু হয়ে গেল। আমাদের কাজ সামুদ্রিক সম্পদ প্রবাল, মণি, মুক্তা সংগ্রহ করে স্পাইডারের লাগোয়া কেনিস্তারায় গচ্ছিত রাখা। ডঃ ফ্রেশারের এই অভিযানের উদ্দেশ্য হলো তাই।

ড্যানিয়েল হঠাৎ চীৎকার করে উঠল। বারবার একটা অ্যালুমিনিয়াম রডের উপর ধাক্কা দিতে দতে সে বলল–কি সর্বনাশ দেখ এটা নড়ছে না, কেমন আটকে গেছে।

আমি চকিতে সেদিকে দেখলাম যে অ্যালুমিনিয়ামের রড তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে যতটা সম্ভব আমি আমার দেহটা নীচের দিকে ঝুঁকিয়ে দিয়ে বললাম, সম্ভবতঃ আমার হাত ওখানে পৌঁছতে পারে, দেখি আমি কি করতে পারি। ড্যানিয়েলের পা দুটোর উপর ভর করে ঝুঁকেছিলাম আমি। আমার মুখ চাপা পড়ছিল তার মাংসল থাই দুটোর ওপর। সেই ভাবেই হাত বাড়িয়ে রডটা স্পর্শ করলাম এবং রডটাকে তার নির্দিষ্ট পথে আনার চেষ্টা করলাম। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল ও ভাবে কাজ করতে। তবে ড্যানিয়েলের স্পর্শ আমাকে বাড়তি প্রেরণা দিচ্ছিল, কাজে উৎসাহ জোগাচ্ছিল, কাজ করতে গিয়ে আমার মাথাটা আরো শক্ত হয়ে বসে গেল ড্যানিয়েলের নগ্ন থাই দুটোর ওপর। শ্বাস প্রশ্বাস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি অনুভব করলাম নাভিদেশ অসম্ভব দ্রুতগতিতে ওঠানামা করছে যেন। মাথাটা একটু তুলে ড্যানিয়েলের দিকে তাকালাম। আমি এখন খুব কাছে থেকে ড্যানিয়েলের দেহখানি দেখতে পাচ্ছি।

আমি আবার ঝুঁকে পড়লাম। ড্যানিয়েল একটা কথাও বললো না। হঠাৎ আমি বুঝতে পারলাম রডটা তার নিজের চলার পথে স্বাভাবিক ভাবে আবার নাড়াচাড়া করতে শুরু করে দিয়েছে। আমার কাজ শেষ। এবার আমি ড্যানিয়েলের শরীরের ওপর ভর করে উঠে বসলাম সোজা হয়ে। ড্যানিয়েল তখন কাঁপতে শুরু করে দিয়েছিল। তখন আমার বুকের কাছে ওর বুক, মুখের কাছে ওর মুখ স্পর্শের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে সে।

ধন্যবাদ। ড্যানিয়েলের গলার স্বরটা এবার একটু নরম শোনাল। আমি এবার তার বুকের সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে দিলাম। ব্রা-বিহীন বেদিং সুট পরা ড্যানিয়েলের স্তন দুটো আমার বলিষ্ঠ বুকে চাপে পিষ্ট হতে থাকলো। এক উষ্ণ আলিঙ্গনের আসন্ন প্রস্তুতি। ড্যানিয়েল এবার আর আপত্তি করলো না। তবে তার নীল চোখের তারা দুটি তেমনি শান্ত, নিস্তেজ বলে মনে হলো। কিন্তু তার হাবভাবে মনে হচ্ছিল ভেতর ভেতর সে ভীষণ ভাবে উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল তখন। সে যে আমার কাছ থেকে গাঢ় চুম্বন আশা করছিল সেই মুহূর্তে। তবে প্রকাশ্যে তার কোন প্রকাশ নেই তার শিক্ষা, অধ্যাবসায় বৈজ্ঞানিক মনোভাব তাকে এমন সংযত হতে সাহায্য করেছিল। হঠাৎ আম সচেষ্ট হয়ে উঠলাম। ড্যানিয়েল তখন থরথর করে কাঁপছিল। তার নীল চোখে কামনার দ্যুতি ঝলমল করছিল। আমি তাকে দুহাত বাড়িয়ে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিলাম। আমার মুখ ঝুঁকে এলো ড্যানিয়েলের উষ্ণ কাঁপা কাঁপা ঠোঁটের ওপর।

ড্যানিয়েল তার ভিজে ঠোঁট মুছল না। আমার ঘ্রাণটুকু ঠোঁটে মেখে সে সুইচে হাত রাখলে একটু চাপ দিল। আমি বুঝতে পারলাম সী স্পাইডার এবার উপরে উঠতে শুরু করল।

ট্রিটনে ফিরে এসে আমি ড্যানিয়েলের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকালাম। আমরা সুন্দর একটা মুহুর্ত অতিক্রম করে এলাম। এর মধ্যে অনেক কিছু জানলাম। ডঃ ফ্রেশার ঘুরে দাঁড়াল। কোনো উত্তর দিল না। আমি বুঝতে পারলাম তার কঠিন হয়ে ওঠা মুখটা ঢাকার জন্য সে ঘুরে দাঁড়ালো। আমি তাকে বললাম, তোমার ঐ বৈজ্ঞানিক মনোভাবটা আমার ভালো লাগে না ড্যানিয়েল। তুমি যখন আমার কাছে আসোতখন তোমার অন্য রূপ আমি দেখতে পাই, কি মিষ্টি যে লাগে তখন তোমাকে আমার। কিন্তু তুমি যখন নিজেকে সংযত করার চেষ্টা কর তখন তার সাড়া পাই না। তখন কেমন যেন তোমাকে নিঃস্ব বলে মনে হয়।

ইতিমধ্যে হাউই এসে খবর দিল, এক খণ্ড ইনসুলেশন আলগা হয়ে গিয়েছিল। মেকানিক বললো প্লেন এখন আকাশে ওড়ার জন্য প্রস্তুত।

আমি তখুনি প্লেনটা আকাশে মেলে দিলাম। এবারও আমি ব্যর্থ হলাম। দ্বীপে দ্বীপে ঘোরা সার হলো। উল্লেখযোগ্য প্রাণের কোনো চিহ্ন দেখতে পেলাম না। যাইহোক একটা দ্বীপের সামনে আমি একটা পরিত্যক্ত জাহাজ দেখতে পেলাম। সন্ধ্যে হয়ে আসছিল। এদিকে জ্বালানিও ফুরিয়ে আসছে। আগামীকাল আবার আমি এখানে আসবো। আমি ফিরে চললাম।

রাত্রির ঘন অন্ধকারে ট্রিটনে এসে আমি ম্যাককে সেই একটাই বার্তা পাঠালাম, না। এবার ব্যর্থ হতে হল। সারাদিনের ক্লান্তিতে দু চোখে ঘুম জড়িয়ে এলো। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেল ড্যানিয়েলের কেবিনের সামনে এসে থমকে দাঁড়ালাম। দরজার ফাঁক দিয়ে হলুদ আলো ছিটকে এসে পড়ছিল করিডোরে। আমি দরজায় নক করলাম, কিন্তু কোনো উত্তর এলো না।

দরজা খুলে গেল কিন্তু কেবিন শূন্য। ড্যানিয়েল নেই। সেখান থেকে আমি চলে এলাম ডেকের উপর। মাথার উপর তারা ভর্তি নীল আকাশ। নীচে নীল সমুদ্র। নীচের ডেকের কেবিন থেকে হাউই, রে অ্যানডার্স এবং কনসুয়েলার কণ্ঠস্বর ভেসে আসছিল।

বিল ও সিনথিয়াদের কেবিন অন্ধকার। অন্ধকার থাকাটা খুব স্বাভাবিক। তাদের বিয়ে হয়েছে মাত্র একমাস হলো। আমি মনে মনে হাসলাম। সী স্পাইডারটা ট্রিটনের পাশে থেকে ভাবছিলাম ক্যারিবিয়ানের নীল জল। কিন্তু ড্যানিয়েল কোথায়? আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম। সাড়ে দশটা। এতো রাত্রে ক্যারিবিয়ানের মাঝখানে সে গেল কোথায়? আমার উদভ্রান্ত দৃষ্টি ছড়িয়ে পড়ল ক্যারিবিয়ানের নীল জলের গভীর থেকে গভীরে। হঠাৎ এক সময় আমি দেখতে পেলাম একটা রবারের ভেলা ভেসে আসছে ট্রিটনের দিকে। কাছে আসতে সিক্ত সোনালী চুলে ভর্তি ড্যানিয়েলের মুখখানি ভেসে উঠলো আমার চোখের সামনে। তার পরনে ছিল মাত্র দুখণ্ড বেদিং সুট। তারপর ট্রিটনের দেওয়াল ঘেঁষে দড়ির মই বেয়ে উপরে উঠে এলো সে। তারপর কেবিনে গিয়ে ঢুকলো।

আমি গালে হাত দিয়ে নতুন সমস্যার কথা ভাবতে বসলাম। চিন্তা হলো যে ড্যানিয়েল এতো রাতে ভেলায় চড়ে কোথায় গিয়েছিল? তবে কি সে জুডাসের লোক? কোন কিছুই অসম্ভব নয়।

আমি কেমন বিমর্ষ হয়ে পড়লাম। পরের দিনের অভিযানও ব্যর্থ হলো। ট্রিটনে ফিরে এসে কেবিনে ঢুকে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম এলো না। রাত্রি আরো ঘন হওয়ার জন্যে প্রতীক্ষা করতে থাকলাম। সমুদ্রের নীল জলে ঘন কালো ছায়া পড়লে অতি সন্তর্পণে বেরিয়ে এলাম ইঞ্জিন ঘরের সামনে।

বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। কেবিনের আলো না নিভিয়েই ড্যানিয়েল বেরিয়ে এলো। তার হাতে গতকালের সেই রবারের ভেলাটা। ডেকে ওঠার পথে পা বাড়াতেই আমি তাড়াতাড়ি দ্রুত পায়ে নিজের কেবিনে ছুটে এলাম। আবার দ্রুতগতিতেই ফিরে এলাম ডেকের ওপর। ভেলাটা তখন জলের ওপর ভাসছিল। তার সোনালি চুল হাওয়ায় ভাসছিল। পূর্ণিমার আলোয় ক্যারিবিয়ানের নীল জল ঝলমল করছিল। মাঝে মাঝে পেঁজা তুলোর মতো মেঘের আনাগোনা। নিস্তব্ধ রাত্রির প্রহর। কেবল সমুদ্রের অশান্ত গর্জন সেই নিস্তব্ধতাকে ভেঙে রেণুর বেণু করে গুঁড়িয়ে দিচ্ছিল। চাঁদের আলোয় সমুদ্রের জলটাকে মনে হচ্ছিল যেন সীমাহীন রুপোর থালা।

ভেলায় ড্যানিয়েলকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। হাঙ্গর অধ্যুষিত জলে রাতে সাঁতার কাটাটা বিপজ্জনক। ডঃ ফ্রেশারের রাতের এই অভিযানের আসল উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে উঠল এবার। মিথ্যেই সে সন্দেহ করছিল। আমি দেখলাম, ড্যানিয়েল দু হাত দিয়ে বালি খুঁড়ছে। ভাবলাম ড্যানিয়েল হয়তো গোপনে লুকিয়ে রাখা কোনো ট্রান্সমিটার সেট খুঁজছে। কিন্তু না, দেখলাম–ড্যানিয়েল তার চুল থেকে ক্লিপ খুলে নিয়ে সামনে একটা ঝরনার জলে চুলগুলো ভাসিয়ে দিল। তার সোনালী চুলগুলো জলের তোড়ে পিঠের ওপর চাঁদের আলোয় ঝলমল করে উঠলো। তারপর পিছন দিকে হাত দিয়ে ব্রার হুক খুললো এবং কোমর থেকে জাঙ্গিয়া খুলে ফেলে একেবারে নগ্ন হয়ে দাঁড়ালো ঝরণার নীচে। নিরাভরণ দেহ। আমি দেখলাম আমার সামনে রাত্রিদেবী দাঁড়িয়ে রয়েছে, ঝরণার জলের কণাগুলো ফুল হয়ে ঝরে পড়ছিল। ড্যানিয়েলের পায়ের নীচে ক্যারিবিয়ানের সমুদ্র। কন্যা তখন জলের দিকে তাকিয়ে চাঁদের বন্দনা করছিল।

ড্যানিয়েল আমাকে দেখতে পাচ্ছিল না কিন্তু আমি তাকে দেখতে পাচ্ছিলাম। চাঁদের আলোর নীচে ড্যানিয়েলের নগ্ন শরীরের শোভা দেখছিলাম আমি। নিটোল গোল স্তনযুগল, সুন্দর গড়ন। তনের বৃন্ত দুটি আঙুরের মত লোভনীয়। চওড়া ঠোঁট কামনা জাগায়। ড্যানিয়েলকে জলে নামতে দেখে আমি শরীরের মধ্যে উত্তেজনা অনুভব করলাম। স্বচ্ছ জলের নীচে ড্যানিয়েলের পুরুষ্টু স্তন দুটি জলে ভাসছিল, যেন দুটি শ্বেতপদ্ম পাপড়ি মেলার অপেক্ষায়। ড্যানিয়েল সাঁতারে নামলো।

হঠাৎ আমার কেমন ভয় ভয় করতে লাগলো। ড্যানিয়েল কি জানে না চাঁদের আলোয় সাঁতার কাটাটা একেবারেই নিরাপদ নয়? একটু অসাবধান হলেই সামুদ্রিক জীব তার নগ্ন দেহের উপর তাদের হিংস্র দাঁত বসিয়ে দিতে পারে। প্রবালের আকর্ষণই তাকে বিপদে ফেলতে পারে। তার মত প্রবালও সামুদ্রিক জীবগুলোর একান্ত কামনার ধন।

ড্যানিয়েল জলের তলায় ডুবসাঁতার দিল। সে যতক্ষণ জলের নীচে ডুব দিয়ে রইলো ততক্ষণ আমার চিন্তার অন্ত রইলো না। সে জলে ভেসে ওঠার পর আমি জলে সাঁতারে নামলাম।

জোরে জোরে পা চালিয়ে ড্যানিয়েলের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম ড্যানিয়েলের পায়ের সঙ্গে কি একটা জড়ানো। সমুদ্রের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জীব তার পায়ের ওপর ধারাল দাঁত বসিয়ে দিয়েছে। আমি সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে চমকে উঠলাম। ড্যানিয়েল তখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। আমি আমার সটের পকেট থেকে ধারালো ছুরিটা বের করে দ্রুত পা চালিয়ে তার কাছে গেলাম। ড্যানিয়েলের অবস্থা তখন সঙ্গীন। তার দেহটা নিস্তেজ হয়ে আসছিল। তার বোকামির জন্য আমার ভীষণ রাগ হলো। কেন সে এ ভাবে একা একা চাঁদের আলোয় সাঁতার কাটতে নামল?

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি ড্যানিয়েলকে রাহযুক্ত করলাম। কিন্তু এই মুহূর্তে তাকে ডাঙ্গায় ওঠাতে হবেনাহলে নতুন করে আবার বিপদ আসতে পারে। ড্যানিয়েলের অবশ দেহের অর্ধেকটা জলের নীচে ছিল। পা চালাতে পারছিল না সে। আমি তাকে টেনে তুললাম বালুকাবেলায়। এবার আমার প্রথম কাজ হলো ড্যানিয়েলের ক্ষতস্থান পরীক্ষা করে দেখা। সে তখন হাঁপাচ্ছিল। তখনও ক্ষতস্থান দিয়ে রক্ত ঝরছিল।

আমি তার ব্রা-টা জল থেকে তুলে নিয়ে এসে তার সেই ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করে দিলাম শক্ত করে, রক্ত বন্ধ করার জন্যে।

ড্যানিয়েল আমার দিকে চোখ মেলে তাকালো। ড্যানিয়েল তার পরিষ্কার জাঙ্গিয়াটা খোঁজ। করলো। কিন্তু আমি তাকে বাধা দিয়ে বললাম–এখন ওসব ভুলে যাও। এখন আমার কাছে তোমার কোন কিছুই অপ্রকাশিত নয়। লজ্জা ঢাকার ব্যাপারটা খুব দেরী হয়ে গেছে। তবে চিন্তার কিছু নেই। আমি ছাড়া তো এখানে আর কেউ নেই।

আমি তাকে বললাম চাঁদের আলোয় একা সাঁতার কাটা যে বিপজ্জনক এটা জানা উচিৎ ছিল।

ধন্যবাদ, সে জবাব দিল, তুমি আমার জীবন রক্ষা করেছ। সেজন্য আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। যদিও তোমার এই গুপ্তচর বৃত্তি আমার পছন্দ নয়। তুমি নিশ্চয় আমাকে অনুসরণ করে এসেছ।

নিশ্চয়ই! এই বলে আমি তাকে জোর করে আবার বালির বিছানায় শুইয়ে দিলাম। চাঁদের আলো তার নগ্ন দেহটার ওপর পড়ে এক আলাদা স্বর্গীয় শোভা বর্ধন করছিল। আমি তার বুকের ওপর ঝুঁকে পড়লাম।

কমান্ডার, আজ আমি স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি, সত্যি তুমি এক শক্তিমান পুরুষ, অদ্ভুত তোমার ব্যক্তিত্ব। তোমাকে আমি কোনদিন ভুলবো না।

ঘুরে ফিরে আমার চোখদুটো গিয়ে পড়ছিল তার নগ্ন দেহের ওপর। অভিব্যক্তি দিয়ে আমার ইচ্ছেটা ওর কাছে ব্যক্ত করতে চাইছিলাম। আমি দেখলাম তার শান্ত নীল চোখ দুটি কেমন চঞ্চল হয়ে উঠছে আস্তে আস্তে। সে চোখের তারায় এখন কালো ছায়া। আমার মাথাটা এবার ড্যানিয়েলের বুকের সঙ্গে একেবারে মিশিয়ে দিলাম। তার স্তনের বোঁটা এখন আমার মুখে স্থান করে নিয়েছে। প্রথমে আস্তে আস্তে পরে জোরে জোরে ঠোঁট ঘষতে থাকলাম। ড্যানিয়েল আর স্থির থাকতে পারলো না। ভেতরে ভেতরে সেও ভীষণ উত্তেজিত। তার নাভিদেশের দ্রুত ওঠানামা তার স্বাক্ষর বহন করছিল।

বিশ্রাম নেওয়ার জন্যে আমি তার বুকের ওপর থেকে মুখ তুলে তাকালাম ওর দিকে।

তোমার বৈজ্ঞানিক মনের সেই দৃঢ়তা এখন কোথায় গেল ডক্টর?

হ্যাঁ, আমি স্বীকার করছি, তোমার সান্নিধ্যে এসে আজ আমার সবকিছু ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।

 আমি ওকে বললাম, তোমার মনের দৃঢ়তার আমি প্রশংসা করি। তোমার মনের এই অদ্ভুত দৃঢ়তাই আমাকে আরো বেশী উৎসাহ দিয়েছিল তোমাকে এমন করে কাছে পাওয়ার জন্যে।

ড্যানিয়েল আমার দিকে বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না, চোখ নামিয়ে নিয়ে বললো–এবারে আমাদের ফেরা উচিৎ।

ভেলায় উঠে বসে ড্যানিয়েল তার হাত দুটো আড়াআড়ি ভাবে রাখলো। শান্ত ট্রিটন। নির্জন ডেক। একটি লোককেও দেখা গেল না।

নিজের কেবিনের সামনে এসে থমকে দাঁড়াল ড্যানিয়েল। তা দু চোখ দিয়ে মুঠো মুঠো কৃতজ্ঞতাঝরে পড়ছিল। আমি ওর একটা হাত নিজের মুঠোর মধ্যে টেনে নিয়ে বললাম–তোমার সঙ্গে এ কদিন মিশতে গিয়ে আমি একটা সত্য উপলব্ধি করলাম, দৈহিক বলপ্রয়োগ একটা সাময়িক উত্তেজনা মাত্র।

না না, এটারও প্রয়োজন আছে কমান্ডার। ওটা একটা সুস্থ স্বাভাবিক মনের পরিচয়। মৃদু হেসে ড্যানিয়েল আমাকে বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে কেবিনের দরজা বন্ধ করে দিলো।

আমি আমার কেবিনে ফিরে গেলাম। এবার আমি খুশি। নিঃসঙ্কোচে এখন আমি আমার অভিযান চালাতে পারবো। মেয়েটি আমাকে ভাবমুক্ত করেছে।