ইউ আর লোনলি হোয়েন ইউ আর ডেড – জেমস হেডলি চেজ
ভাষান্তর : পৃথ্বীরাজ সেন
০১.
মার্চের মাঝামাঝি সুন্দর সকালে গাড়ি হাঁকিয়ে যাই সান্টা রোসা এস্টেটের দিকে। স্টেটের। মালিক জে ফ্রাঙ্কলিন কার্ফ আমার জন্য অপেক্ষা করছেন।
ভদ্রলোক ফোন করছিলেন, আমি তখন অফিসের বাইরে ছিলাম, ধরে ছিল আমার সেক্রেটারি, পাওলা বেনসিংগার। সে বলেছে যে এক ঘণ্টার মধ্যে দেখা করব। ফোনে কিছু বলেন নি। তিনি যে সান্টা রোসা স্টেটের মালিক তাই উৎসাহিত করেছিল আমাকে।
আমাদের ব্যাবসার খাতিরে অর্কিড শহরের গন্যমান্য, মানুষদের খোঁজ-খবর রাখতে হয়। জানতে পারি কার্ফ রেডস্টার নেভিগেশান কোম্পানির প্রেসিডেন্ট। ভদ্রলোক দু বছর যাবৎ বিপত্নীক, স্ত্রী গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। ওঁর জীবন উত্তেজনাহীন। সম্প্রতি যাকে বিয়ে করেছেন সে এক সেলস্ গার্ল হিসেবে কাজ করত। বোধ হয় এ কারণে ভদ্রলোক আমাদের খোঁজ করছেন।
একজন মানুষ যদি পরিণত বয়সে কোন সেলস গার্লকে বিয়ে করেন–তাকে ঝামেলা পেতেই হবে! সেই জাতীয় স্ত্রীলোকেরা সাধারণত অর্থলোভীহয়। পাওলা আমাকে এসম্পর্কে জ্ঞান দেয়।
কল্পনা থামে না পাওলার। যদি ভদ্রলোকের স্ত্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধতা না থাকে সেক্ষেত্রে ওঁর মেয়ে নাটালির কথা ভাবতে হবে। কুড়ি বছরের মেয়ে। মার সঙ্গে মেয়েও গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিল। তাই মেয়েটি পঙ্গু।
ভদ্রলোক অগাধ টাকার মালিক; পাওলা বলেছে। বলার পর ওর দু’চোখ টাকার চিন্তায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। দ্যাখ ম্যালয়, ভদ্রলোকের কাছে ছুটে যাও। যেন না ভাবেন তার জন্য আমাদের তেমন গরজ নেই। পরে ওঁর মনের পরিবর্তন হতে পারে।
তোমার কথাবার্তা শুনলে যে কেউ মনে করবে–এই অফিসের মালিক তুমি! দ্যাখ বাছা, ব্যাপারটা নিয়ে বেশি ওস্তাদি করতে হবে না।
গরম হয়ে জবাব দিয়েছে পাওলা, ভারী আমার মালিক হয়েছে! বলি অফিসের কাজটা কে করে শুনি? আমি না থাকলে…।
সিঁড়ি ভেঙে ততক্ষণে আমি নিচে নামতে শুরু করেছি।
অনেক বড় সীমানা সান্টা রোসা স্টেটের। আছে লন, বাগান,সুইমিংপুল আর ঝরণা। খুব সুন্দর ভাবে সাজানো। ঐসব দেখলে আমার হাড়-পিত্তি জ্বলে যায়।
আমার চোখে পড়ল প্রাসাদের দু’পাশে গাছের সারি। লনটা এত বড় যে, পোলো খেলা যায়। ফুলের বাগান দেখলে মন ভরে ওঠে, রঙের বাহারে।নুড়ি বিছানো পথে পাঁচ ছটা গাড়ি। সবচেয়ে ছোট গাড়িটা রোলস্-রয়েস, অদ্ভুত রঙের। দু’জন ফিলিপাইন-দেশীয় ড্রাইভার গাড়ির ধুলো পরিষ্কার করছে। দেখে মনে হল এ কাজ করা ওদের ধর্মবিরুদ্ধ।
বাড়িখানা দেখার মত। ঘর রয়েছে চব্বিশটি।
গেট দিয়ে অগ্রসর হওয়ার সময় চোখে পড়ে দুটো টবে লাল এবং হলদে বিগোলিয়া (এক ধরনের ফুলের গাছ)। তারপর মুখোমুখি হই হুইলচেয়ারে বসা একটি মেয়ের। আমাকে দেখে মেয়েটা অবাক হয় না। বরং সন্ধানী দৃষ্টিতে আমাকে জরীপ করে যে, আমি অস্বস্তি টের পাই।
চব্বিশ-পঁচিশ হবে মেয়েটার বয়স। ছোট-খাট চেহারা। পঙ্গুদের যেমন হয় অর্থাৎ দু চোখের দৃষ্টি বিবর্ণ ও ক্লিষ্ট। ওর চুল কাঁধের ওপর ছড়ানো। ওর পরনে স্ন্যাক্স আর কাশ্মীরের তৈরী সোয়েটার।
আমি মেয়েটির দিকে হেসে তাকাই মাথার টুপি নামিয়ে। যেন ওকে মুগ্ধ করবেই এমন ভঙ্গিতে ওর দিকে তাকাই। ওর মুখে হাসি নেই।
ইউনিভার্সাল সার্ভিস থেকে আপনি এসেছেন?
জবাবে বলি, ম্যাডাম…হ্যাঁ।
আপনার সামনের দরজায় আসা উচিত হয় নি। যারা কাজ কর্মের জন্য আসেন তাদের জন্যে ডান দিকে প্রবেশ পথ।
এই বলে মেয়েটি বইয়ের ওপর ঝুঁকে পড়ে, আবার আমি সামনের দরজার দিকে এগিয়ে যাই।
মেয়েটি কড়া চোখে তাকায়, কোথায় যাচ্ছেন?
মিস কার্ফ’ আমি আপনার কথা শুনেছি। সময় পেলে বাড়িটার চারদিক ঘুরে দেখবো।
আবার মিস কার্ফ বইয়ের ওপর ঝুঁকেছে এবং বলছে আমার কোন কথা ওর কানে যায়নি। লম্বা চুলে ঢেকে দিয়েছে ওর মুখ। আহা বেচারী!
লাভ নেই এখানে মিছিমিছি দাঁড়িয়ে। তাই আমি সামনের দিকে এগিয়ে যাই।
খানসামা দরজা খুলে দেয়। দীর্ঘকায় চেহারা। দেখে মনে হয় একজন অবসরপ্রাপ্ত রাজনীতিবিদ। ভাবভঙ্গি যেন ধর্মযাজকের মত। সে জানায় যে, মিঃ কার্ফ আমার জন্যে অপেক্ষা করছেন। সে আমাকে নিয়ে অগ্রসর হয়। দেয়ালে সাজান যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র। অনেক ওঠা নামা করার পর মিঃ কার্ফের ঘর।
একটু অপেক্ষা করুন স্যার, মিঃ কার্ফকে আপনার কথা জানাচ্ছি। তারপর হালকা পায়ে সে ঘরে ঢুকে যায়।
***
ছয় লক্ষ মিলিয়ন ডলারের জাহাজ কোম্পানীর প্রেসিডেন্ট। জে ফ্রাঙ্কলিন কার্ফ। চেহারা জাঁদরেল টাইপের। কোন রকম ছ্যাবলামো নেই। গায়ের রঙ রোদে পোেড়া। দু’চোখ ঘন নীল, ওর বয়স যেন ভুল করে পঞ্চাশ ছুঁয়েছে! দেখতে বেশ শক্ত সমর্থ।
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলি, মিঃ কার্ফ দেখছেন, আমি কতটা কাজের লোক হতে পারি।
আপনিই কী ম্যালয়’ হঠাৎ মিঃ কার্ফ গর্জে ওঠেন। মনে হয় ওঁর অধীনে যারা কাজ করে তারাও নির্ঘাৎ চমকে উঠবে।
মাথা নাড়ি,অপেক্ষা করি, কোন কথা বলি না, জানি ধনীব্যক্তিরা অন্যের কথা শুনতে ভালবাসে না। ওরা মোহিত থাকে নিজেদের কণ্ঠস্বরে।
ইউনিভার্সাল সার্ভিস থেকে নিশ্চয়ই এসেছেন? মিঃ কার্ফ নিশ্চিত হতে চান।
ওঁর দু চোখে সন্দেহ। কিছু বলতে গিয়ে হঠাৎ থেমে যান। এবং বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকেন। বড় মানুষের খামখেয়ালী আর কি।
আপনার কাছে বিস্তারিত জানতে চাই।
কি ভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন বা আগ্রহী হবেন। কে যেন বলেছিল, লক্ষপতিরা কাজ চান। সেই লোকটা বলেছিল—“যে যত বেশি অর্থ রোজগার করবে, তাকে তত বেশি লোকের ওপর নির্ভর হতে হবে। যথার্থ কথা বলেছিল লোকটা।”আর্মি থেকে যখন চলে আসি আমার সামনে কিছুই ছিল না। না কোন অর্থ, না উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। কিন্তু লোকটার কথা আমার মনে ছিল। কি করি, এমন একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবো, যার কাজ হবে লক্ষপতিদের সেবা করা। গড়ে উঠল ইউনিভার্সাল সার্ভিস-যার জন্মদিন আগামী সপ্তাহে পালন করা হবে। বলছিনা যে, আমাদের প্রতিষ্ঠান লাভজনক ব্যবসা করছে। এই সামান্য কাজ কর্ম আর অল্প-স্বল্প অর্থের সংস্থান হয়। কিন্তু এই কাজে অনেক মজা।
আমাদের প্রতিষ্ঠান মক্কেলদের চাহিদা অনুযায়ী যে কোন কাজের ভার নিয়ে থাকে। মোটের ওপর কাজটা রুচিকর হওয়া দরকার। যেমন, কেউ যদি ডিভোর্স চায়–আমরা পেছপা হই না। অথবা সাদা হাতী জোগাড় করতে বলেন–আমরা সানন্দে সেই কাজের ভার গ্রহণ করি। আমাদের প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত ব্ল্যাক মেইলার, নেশাচ্ছন্ন মানুষকে নজরবন্দীকরে রাখা, ছাত্রদের ভ্রমণের প্রভৃতি নানা রকম কাজ সাফল্যের সঙ্গে করেছে। কোন মক্কেলের কাজ নিরাপদে রাখা অন্যতম লক্ষ্য। আর কাজের গোপনীয়তা বজায় রাখি।
অনেক কিছু বলার পর একটু থামি। মিঃ কার্ফ বলেন, হ্যাঁ, বলেছেন, সব জানি। এবার বলেন, আপনি বসুন। কী পানীয় আপনাকে দেব?
কোন পানীয়ের দরকার নেই, বসেই জানাই। মিঃ কার্ফ কাজ না দিয়ে পানীয় তৈরী করেন, একটা গ্লাস এগিয়ে দেন, আর একটি গ্লাস নিজের কাছে রাখেন।
আমি বলি আপনার কোন কাজে লাগলে খুশি হব। এবং কাজটার গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে।
আমার দিকে তাকিয়ে ‘মিঃ কার্ফ,বলেন নিশ্চিত না হলে আপনাকে ডাকতামনা। কাজটা আমার পক্ষে স্বস্তিকর নয়।
হঠাৎ মিঃ কার্ফ বলেন, সব খুলে বলার আগে একটা জিনিষ দেখাতে চাই। অদ্ভুত আবিষ্কার। আসুন আমার সঙ্গে।
আমরা প্রবেশ করি হলঘরের পাশে আর একটা ঘরে। সুগন্ধ পেয়ে মনে হল, এ ঘর কোন স্ত্রীলোকের। তাছাড়া অন্যান্য জিনিষ দেখে তা মনে হল। মিঃ কার্ফ আলমারি খুলে একটা স্যুটকেস বের করলেন। মেঝের ওপর তিনি রাখলেন।
‘খুলে দেখুন কি আছে’ মিঃ কার্ফ বলেন।
অদ্ভুত ধরনের নানারকম জিনিষ সুটকেস খোলার পর আমার চোখে পড়ল। সিগারেট কেস, অনেক চামড়ার মানিব্যাগ, কয়েকটা হীরের আংটি, তিন জোড়া বেখাপ্পা ধরনের জুতো, অনেকগুলি চামচ যার ওপর বিভিন্ন রেস্তোরাঁর নাম লেখা, ছটা সিগারেট লাইটার, অনেকগুলি মোজা, তিনটে কলম এবং একটি নগ্ন নারী মূর্তি।
‘এসব জিনিষ আপনাকে দেখাতে চেয়েছিলাম’, মিঃ কার্ফ বলেন। এখন আসুন আগের ঘরে যাই।
এবার চেয়ারে বসার পর মিঃ কার্ফ প্রশ্ন করেন, ম্যালয়, কি মনে হল আপনার?
বেখাপ্পা ধরনের জুতো আর চামচ না দেখলে অস্বাভাবিক কিছু ভাবতাম না। যেমন দেখেছি, তাতে মনে হয়, চুরি করে এমন কোন বাতিকগ্রস্ত লোকের কাজ? আমার তাই-ই মনে হয়।
তাই মনে করি আমিও।
মিঃ কার্ফ নিঃশ্বাস ছাড়েন।
যদি কোন ইয়ার্কির ব্যাপার না হয়… অবশ্য। আমি বলি।
বিরক্ত গলায় বলেন মিঃ কার্ফ, উঁহু, কোন ইয়ার্কির ব্যাপার নয়। বিয়ের পর স্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন বাড়িতে আমন্ত্রিত হয়ে গেছি। মূর্তি আনা হয়েছে মিসেস সিডনী ফ্লেগের বাড়ি থেকে। তার ঘরে এই মূর্তি দেখেছি৷ চামচগুলি আনা হয়েছে রেস্তোরাঁ থেকে, অনেকবার গেছি। বুঝতেই পারছেন…ব্যাপারটা মোটেই ইয়ার্কি নয়।
এই কাজটা বুঝি আমাকে করতেই হবে? বুঝেছি মিঃ কার্ফ।
ঠিক তাই।
আমরা অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকি তারপর। কুঁচকেমিঃ কার্ফ বলতে থাকেন, ব্যাপারটা আমার কাছে অস্বস্তিকর আবিষ্কার। আসলে কিছুই জানি না স্ত্রীর ব্যাপারে।
মিঃ কার্ফ একটু থেমে আবার বলেন, স্যানফ্রান্সিসকোতে একটা পোশাকের দোকানে আমার স্ত্রী কাজ করত। একটা ফ্যাসান প্যারেডে ওর দেখা পাই। কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের বিয়ে হয়। চার মাস আগের ঘটনা। বিয়ে হয়েছিল গোপনে। এখন বিয়ের ব্যাপারটা অনেকেই জানতে পেরেছে।
গোপনে বিয়ে হয়েছিল কেন?
মেয়ের জন্যে। মেয়েটা পাগলাটে ধরনের। নাটালিকে দারুণ ভালবাসত ওর মা, ফলে নাটালি শক পায় ওর মার মৃত্যুর খবর শুনে। অনিতা (আমার বর্তমান স্ত্রী) বলল বরং বিয়েটা আমরা। গোপনেই করি।
আপনার মেয়ের সঙ্গে ধরে নিতে পারি, আপনার স্ত্রীর বনিবনা নেই।
যথার্থ আপনার অনুমান। সেটা কোন সমস্যা নয়। আমি জানতে চাই যে, আমার স্ত্রীর চুরির বাতিক আছে কিনা।
চোখ মুখ দেখে মনে হয়, এদিকটা মিঃ কার্ফ ভেবে দেখেন নি।
সে রকম ইচ্ছেও নেই। আমার স্ত্রীকে সহজে বোকা বানানো যায় না।
মিসেস কার্ফকে কেউ হয়তো অসম্মান করার জন্যে এই কাজ করতে পারে। জানি না, আপনি ভেবেছেন কিনা। আলমারিতে অলক্ষ্যে এইসব জিনিষ রাখা যায়।
আমার দিকে মিঃ কার্ফ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন। তারপর বলেন, কে করতে পারে? আপনার কী মনে হয়?
আপনার ভাল জানা উচিত আমার চেয়ে। আমি সূত্র ধরিয়ে দেব আপনাকে। এই তো জানা গেল যে, স্ত্রীর সঙ্গে মেয়ের বনিবনা নেই।
রেগে যান মিঃ কার্ফ, এ ব্যাপারে মেয়েকে টানবেন না।
একটু শান্ত হওয়ার সুযোগ দিলাম মিঃ কার্ফকে। তারপর প্রশ্ন, আলমারি খুলতে গেলেন কেন? কিছু আবিষ্কারের প্রত্যাশায়?
আমার মনে হয় মিসেস কার্ফকে কেউ ব্ল্যাকমেল করছে। তাই জিনিষপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করেছি যদি প্রমান পাওয়া যায়। তখনই চোখে পড়েছে স্যুটকেসটা।
স্ত্রীকে কেন ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে? কারণটা কী?
মিঃ কার্ফ বলেন, প্রত্যেক মাসে স্ত্রীকে হাত খরচ দিয়ে থাকি প্রয়োজনের বেশি। ওর মায়াদয়া নেই খরচের। যাইহোক, গত কয়েক মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ তুলেছে ব্যাঙ্ক থেকে।
অর্থের পরিমাণ কী রকম?
পাঁচ, দশ, পনেরো হাজার ডলার।
এই অর্থ কি কাউকে দেওয়া হয়েছে?
মাথা নেড়ে মিঃ কার্ফ বলেন, সব বেয়ারার চেক।
কী মনে হয় আপনার? কেউ কি চুরি করতে দেখেছে..এবং ব্ল্যাকমেলের চেষ্টা?
আপনার ধারণা সম্ভব হতে পারে,’মিঃ কার্ফ বলেন। মিসেস কার্ফ যখন কেনাকাটায় যাবেন, তখন নজর রাখার ব্যবস্থা করুন। কোন রকম ঝামেলা বা কার কার সঙ্গে ওঠাবসা, সব জানাবেন।
কোন সমস্যাই নয়। আমার একজন বান্ধবী আছে তাকে এ ধরনের কাজ দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যায়। বান্ধবীর নাম ডানা লিউইস। আজই লাগানো হবে। তাই চান তো?
সম্মতি জানান মিঃ কার্ফ।
কাল জানাবো কাজের পরিকল্পনা। আমার ধারণা, আপনার বাড়িতে ওরনা আসাই ভাল।বলুন তো, কোথায় আপনার সঙ্গে সে দেখা করবে?
এ্যাথলেটিক ক্লাবে। মহিলাদের বিশ্রাম ঘরের সামনে আমি থাকবো।
চেয়ার সরিয়ে আমি উঠে দাঁড়াই। বলি, এবার আমি চলি। আর একটা কথা জানতে চাই। আমি যে আপনার কাজে নিযুক্ত এটা কেউ না জানুক–এমন কি আপনার স্ত্রী বা কন্যা, আপনি নিশ্চয়ই সেটাই চান।
কারণ আপনার কাছে আসার আগে মুখোমুখি হয়েছি আপনার মেয়ের সঙ্গে। মিস কার্য জানেন–আমি ইউনিভার্সাল সার্ভিস থেকে এসেছি। এই বাড়িতে নিশ্চয়ই টেলিফোনের এক্সটেনশন আছে।
মিঃ কার্ফ সতর্ক দৃষ্টিতে তাকান।
ম্যালয়, ঠিক আছে, আপনি কাজে লেগে যান। শেষ পর্যন্ত কি হয়, দেখা যাক। মিঃ কার্ফ বলেন।
আগের মত আমি অসংখ্য পথের গোলকধাঁধা পেরিয়ে সামনের দরজায় পৌঁছে যাই। খানসামাকে জিজ্ঞেস করি, মিসেস কার্ফ বাড়িতে আছেন?
স্যার, উনি মনে হয় এখন সুইমিং পুলে…ওঁর সঙ্গে দেখা করবেন?
“উঁহু’ এত বড় জায়গায়…তিনজন মানুষের পক্ষে হারিয়ে যাওয়া…কী মনে হয় তোমার?
এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বোধ হয় খানসামার ইচ্ছে নয়। দরজা খুলে বলে, স্যার, আজ চমৎকার দিন!
মনে হয় তাই। আমি হাঁটার সাথে ভাবি মিস কার্ফ রোদ পোহাচ্ছে কিনা। বারান্দার দিকে তাকিয়ে ওর দেখা পাই না।
যখন গাড়ি বারান্দার দিকে এগিয়ে যাই, চোখে পড়ে স্নানের পোশাকে ঢাকা একটি মেয়েকে। বাড়ির পেছন দিকে সে চলেছে। লম্বা আর স্বর্ণকেশী। ওর চোখে বেপরোয়া ভাব। মনে হয় সাতাশ থেকে তিরিশের মধ্যে হবে। ওর দু’চোখ বেশ বড় বড়।
পরস্পরকে আমরা কয়েক মুহূর্ত লক্ষ্য করি। ওর লাল ঠোঁটে হাসি। জানিনা এই হাসি আমার উদ্দেশ্যে কিনা। অথবা অন্য কিছু ভেবে। বেশ রহস্যময় হাসি।
মেয়েটি ছুটে যাবার সময় পোশাকের কিছুটা অংশ খুলে যায়। এটা নিশ্চয় ইচ্ছাকৃত।ওর ফিগার দেখে মানুষের মাথা ঘুরে যাবে।
মেয়েটি অনেক দূর গিয়ে ফিরে তাকায়। পেনসিল আঁকা ভ্রূ বেঁকিয়ে সে হাসে। সাংঘাতিক হাসি!
***
দু’খানা ঘর নিয়ে অর্কিড বিল্ডিংয়ের দশ তলায় ইউনিভার্সাল সার্ভিসের অফিস। শহরের বড় বাণিজ্যিক এলাকা। অর্কিড বিল্ডিংয়ের পেছনের গলিতে থাকে উঁচু পদের লোকদের গাড়ি। গলির সব শেষ সীমায় ফিনেগান পানশালা।
মিঃ কার্ফ সংক্রান্ত বিষয় পাওলার সঙ্গে আলোচনার পর আমি পানশালার উদ্দেশ্যে রওনা হই। যেমন ভেবেছি, অর্থাৎ দেখতে পেলাম ডানা লিউইস, এড বেনি আর ডাক কারমানকে–একটা টেবিলের চারপাশে বসেছে।
আমি, কারমান, বেনি, ডানা আমরা একসঙ্গে কাজ করি।
হ্যালো ডিক। ওর পাশে একটা চেয়ারে ডানা বলে, বসে পড়। কোথায় ছিলে সকালে?
ডানা লিউইস চমৎকার, স্মার্ট মেয়ে।
ওর পাশে বসে বলি, তোমার জন্যে কাজ নিয়ে এসেছি। বেনি এবং কারমানের উদ্দেশ্যে বলি, এই যে বাছাধনেরা, তোমাদের জুন্যেও অনেক কাজ রয়েছে। এবার কাজে মন দিতে হবে।
বেনি বলে, ধেৎ! কাল সারা রাত বড় ধকল গেছে…আমাদের রেহাই দাও।
কারমান বলে, আমাদের কতগুলি শুটকী ঘোটকীকে রেস্তোরাঁয় নিয়ে যেতে হয়েছে।উঃকী যাচ্ছেতাই কাজ।
কারমান দীর্ঘকায়, কাজের ও সুদর্শন। ক্লার্ক গেবেলের মতো গোঁফ রেখেছে। বেনি বেঁটে ও– মোটা কাজে পটু।
অধৈর্য হয়ে ডানা বলে, ডিক, ওরা অপদার্থ শুধু আমার পেছনে লাগা ওদের কাজ।
আমি বলি, কোন মহিলার সঙ্গে এরকম আচরণ করা অন্যায়।
বেনি বলে, ডানার সঙ্গে আমার বোনের মত সম্পর্ক। বলে সে ডানার মাথায় টুপীর ওপর বড় হাতের থাবা রেখে নাড়তে থাকে।
বেনির পায়ে ডানা লাথি মারে। বেনি রেগে লাফিয়ে ওঠে। কারমান বেনির গলা চেপে ধরে। ব্যস, ধস্তাধস্তি শুরু। টেবিল,উল্টে গ্লাস চুরমার হয়।
মাঝে মাঝেই ওরা এরকম ঝগড়ায় মেতে ওঠে। ডানা বলে, আমার মোজার ফিতে ছিঁড়ে গেছে। উঃ, তোমাদের যে কবে বুদ্ধি হবে।
বেনি বলে, আমি তো জানি ডানা মোজায় আঠা ব্যবহার করে।
ডানা বলে, সাবধান। আর যদি বাঁদরামো কর..তোমার গলা কেটে দেব।
টেবিলে চাপড় মেরে বলি, তোমরা যদি আমার কথা না মেনে…।
ডানা বলে, ডার্লিং…রাগ কর না। এবার তোমার কাজের কথা বল।
ডানাকে বলি, এ্যাথলেটিক ক্লাবে তুমি বিকেল তিনটেয় মিঃ কার্ফের সঙ্গে দেখা করবে। চোখ খোলা রাখবে। মিসেস কার্ফের পেছনে আঠার মত লেগে থাকবে। যদি মিসেস কার্ফ কোন দোকান থেকে কিছু চুরি করে….তাকে তুমি রক্ষা করবে।
বেনি হুইস্কির গ্লাস দিতে দিতে বলে। ‘এই কার্ফ মহিলা দেখতে কেমন?’
‘দারুণ,…..খুব সেক্সি।‘
কারমান বলে, ‘ডানাকে সাহায্য করা আমাদের দরকার। কী বল তুমি? ডানা কি রকম বোকা টাইপের…।‘
ডানা উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘তোমাদের মত আমি বুছুনই। ডিক, আমি চলি। এই দুটোকে বেশি মদ পান করতে দিও না।‘
কারমান বলে, ‘ওই মেয়েটার জন্যে আমরা কি না করেছি। বেনি, আমার জন্যে কিছু পানীয় রাখ।‘
আমি হুইস্কির বোতল টেনে বলি, ‘ব্ল্যাকমেলের দৃষ্টিকোণ থেকে তোমরা ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা কর। তোমাদের বিকেলে কাজ আছে, সংযত হওয়া দরকার। একজন বুড়ো মারলিনকে ধরতে চায়। বুড়োটার লম্বা দাড়ি আছে। দ্যাখ বাপু এ কাজটায় লেগে যেতে পার।’
বেনি বলে, ‘বুড়ো লোক…ধেৎ। সেক্সি ধরনের মেয়ে নয় কেন? মিসেস কার্যের ব্যাপারটা আমাদের ওপর ছেড়ে দাও।‘
‘হয়ত কোন পরীকে খুজতে তোমাদের দরকার হবে।‘
বেনি বলে, এই যে ডিককে দেখছো…ব্যাটা এক নম্বরের বজ্জাত। তবুও ওকে ভালবাসে সবাই। ‘
.
আমি ফ্ল্যাটের বারান্দায় বসে মিঃ কার্যের সঙ্গে দেখা হওয়ার দুদিন বাদে ডানার রিপোর্টটা আবার পড়ছি।
অনিতা কার্ফের চুরি করার কোন প্রবণতা ডানার রিপোর্টে পাওয়া যায়নি। বিকেলে দোকানে গিয়ে কিছু জিনিষ দাম দিয়ে কিনেছে কিছু বাকি রেখেছে।
একজন জর্জ বার্কলের সঙ্গে অনিতা কার্ফের গোপন সাক্ষাতের আবিষ্কার। ওরা পরস্পরের সঙ্গে রীতিমত অন্তরঙ্গ।
গলদা চিংড়ির জন্য বিখ্যাত একটা রেস্তোরাঁয় ওরা মিলিত হয়েছে। শহর থেকে কয়েক মাইল দূরে এই রেস্তোরাঁয় কখনো কাফের বন্ধু বান্ধবীরা যায় না।
উইলশায়ার এভেনিউতে বার্কলে থাকে একটা কাঠের তৈরীবাংলোতে। বার্কলে ফিল্মস্টারদের মত চমৎকার পোশাক পরে, ক্রাইসলার গাড়ি হাঁকায়। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের মধ্যে বার্কলে এক নম্বর।
ফেয়ারভিউর কাফেনাইট ক্লাবের মালিক রল ব্যানিস্টার হল দুনম্বর ব্যক্তি। গতকাল সন্ধ্যায় অনিতা প্রায় সাতটার সময় নাইট ক্লাবে গিয়ে ব্যানিস্টারের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে। অনীতা ক্লাবে প্রায় একঘণ্টা ছিল। তারপর রাতের খাবার আগে সান্টা রোসা স্টেটে ফিরে গেছে।
ব্যানিস্টার জালিয়াত টাইপের। নাইট ক্লাব থেকে প্রচুর অর্থ কামায়। জুয়াখেলা চলে, এবং পুলিশের সাহায্যও পায়।
হঠাৎ রাত সোয়া দশটা নাগাদ সমুদ্র সৈকতের রাস্তা ধরে একটা গাড়ি এসে আমার বাংলোর কাঠের গেটের বাইরে দাঁড়ায়। অস্পষ্ট ভাবে একজন স্ত্রীলোককে দেখতে পাই। বসবার ঘরের আলো জ্বলে ওঠে। অনিতা কার্ফ বারান্দা পেরিয়ে এগিয়ে এলো। লাল ঠোঁটের ফাঁকে আধখোলা হাসি পরনে সন্ধ্যাকালীন পোশাক লো-কাট, যার ফলে শরীরের বিশেষ বিশেষ অংশ চোখে পড়ে। ওর তাকাবার ভঙ্গী আমাকে প্রায় ধরাশায়ী করে তোলে।
অনিতা বলে, ‘হ্যালো…আর কাউকে দেখছি না…আপনি কি একা থাকেন?’
ওকে দেখে…কি বলবো…সব কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যায়।
অনিতা বলে, ‘ঠিক আছে..আপনাকে আর ভাবতে হবেনা। হা-হা-হা, মিস শারলককে ধোঁকা দিয়েছি।‘
কিছু বলার আগেই অনিতা বসার ঘরে গিয়ে চেয়ারে বসে পড়ল। আমিও ওর পেছন পেছন ঘরে ঢুকি।
আমার মন আচ্ছন্ন ছিল কিভাবে ওর সঙ্গে বোঝাপড়া করবো অথচ অনিতা যেন বিরক্ত না হয়। এখানে আসার কথা শুনলে মিঃ কার্ফ বিরক্ত হবেন। একথা জেনেই অনিতা এসেছে যে এখন আমি একা থাকবো।
আমি বলি, মিসেস কার্ফ আপনি কি কোন প্রয়োজনে এসেছেন?
অনিতা বলে কেউ আমার গতিবিধির উপর নজর রাখুক সেটা চাই না আমি। কারণটাও জানতে চাই।
মনে মনে অবাক হই ডানার ব্যাপারটা কিভাবে জানতে পারল অনীতা?
আমি জবাব দিলাম, কারণ জানতে চান? বেশ তো মিঃ কার্ফের কাছে জানবেন। আর একটা কথা, এখানে আপনার আসা মিঃ কার্ফ পছন্দ করেন না।
অনিতা হেসে বলে, মিঃ কার্ফের কথা বলবেন না। উনি আমার অনেক কিছুই পছন্দ করেন না। একটা সিগারেট দেবেন?
সিগারেটের প্যাকেটটা এগিয়ে দিয়ে বলি, এ সময় কাউকে আশা করিনি। আমি খুব ব্যস্ত।
অনীতা বলে, আমিও বেশীক্ষণ বসবো না। এবার বলুন তো, মেয়েটি আমাকে কেন অনুসরণ করছে?
বললাম তো, মিঃ কার্ফকে জিজ্ঞাসা করবেন।
আমাকে দেখে আপনি খুশি হননি অথচ সব পুরুষই আমার সান্নিধ্য চায়। যদি পানীয় চাই দেবেন না?
আমি টেবিলে গিয়ে পেগ তৈরী করে অনিতার দিকে মদের গ্লাস এগিয়ে দিলাম।
অনিতা হাসি মুখে বলে, ধন্যবাদ। মনে হচ্ছে বাড়িতে আর কেউ নেই।
ঠিকই বলেছেন, কিন্তু আপনি আমার ঠিকানা কোথায় পেলেন?
ও, আপনার গাড়িতে ইউনিভার্সাল সার্ভিসেস লেখা দেখলাম। খানসামা আপনার নাম জানায়। টেলিফোন দেখে এখানে হাজির হলাম।
আপনি দেখছি প্রাইভেট ডিটেকটিভকে হার মানিয়ে দেবেন।
আপনি কি প্রাইভেট ডিটেকটিভ?
উঁহু, সে রকম কিছু নয়।
বলুন তো, ইউনিভার্সাল সার্ভিসের আসল কাজ কি?
ইউনিভার্সাল যে কোন আইনানুগ কাজ গ্রহণ করে। কাজটা অবশ্যই রুচিকর হওয়া দরকার।
কোন মহিলাকে অনুসরণ করা বোধ হয় রুচিকর কাজ?
সেটা মহিলার উপর নির্ভর করে।
আমার স্বামী কি আমার ওপর গোয়েন্দাগিরি করতে আপনাকে নিয়োগ করেছে?
আমার সেরকম কিছু মনে পড়ছে না।
গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে মিসেস কার্ফ বড় বড় চোখ করে জিজ্ঞেস করে, ওই মেয়েটা আমাকে কি জন্য অনুসরণ করছে?
আমি একই জবাব দিলাম।
মিসেস কার্ফ অসহিষ্ণু ভঙ্গিতে ঘরের চারিদিকে তাকিয়ে বলে, কাজটায় নিশ্চয়ই বেশি অর্থ আসে না?
আমার কাজের কথা বলছেন?
হ্যাঁ। বেশি অর্থ পান কি?
জানি না। বেশি অর্থ ব্যাপারটা কি? হীরে ব্যবহার করতে পারি না কিন্তু যা পাই, একজন পোশাক বিক্রেতার চেয়ে অনেক বেশি। তাছাড়া কাজে অনেক আনন্দ পাই।
মিসেস কার্ফ কঠিনভাবে বলে, এক হাজার ডলার পেলে নিশ্চয়ই আপনি খুশী হবেন…কি বলেন?
সুন্দরী মিসেস কার্ফের সঙ্গে বেশিক্ষণ একা থাকা নিরাপদ নয় বুঝে আমি উঠে দাঁড়িয়ে বলি। দুঃখিত, মিসেস কার্ফ….আমার হাতে জরুরী কাজ আছে। কাজটায় হয়ত খুব বেশি অর্থ আসবে না কিন্তু কাজ হাতে নিলে আমি বিশ্বস্ত থাকি। আমি মক্কেলকে ধোঁকা দিতে পারি না।
অনিতা বলে, ঠিকই বলেছেন–আপনার কাছে আমার আসা উচিত হয়নি। কিন্তু আমি কি ক্রিমিন্যাল যে আমার পেছনে লোক লাগিয়েছেন? আঃ…কী সুন্দর পেগ বানিয়েছেন, আর একবার হবে না?
পানীয় তৈরী করতে আমি যখন ব্যস্ত তখন মিসেস কার্ফ পায়ের উপর পা তুলে দেয়, ফলে, স্কার্টটা হাঁটুর ওপর অনেকটা উঠে যায়।
পানীয় দিতে দিতে বলি, প্রায় হাঁটুর ওপর আপনার স্কার্ট উঠে গেছে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
মিসেস কার্ফ রুষ্ট ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকায়।
আমি বলি, আমার হাতে এখন অনেক কাজ, মিসেস কার্ফ।
কাজের সময় কাজ। আনন্দ করার সময় আনন্দ। আপনার কি স্ফুর্তি করতে ইচ্ছে হয় না?
কেন করবে না? কিন্তু কোন মক্কেলের স্ত্রীর সঙ্গে নয়।
আমি মিঃ কার্ফের তোয়াক্কা করি না। আপনাকে আমার ভাল লাগছে। আমার পাশে একটু বসুন।
নিজেকে সামলে নিয়ে বলি, উঁহু..আজ রাত্রে নয়। এবার কিন্তু আপনার বাড়ি ফেরা দরকার।
মিসেস কার্ফ আরাম কেদারা ছেড়ে আমার কাছে এসে আমার বাহুর ওপর একটা হাত রেখে বলে, যাব…নিশ্চয়ই বাড়ি যাব। কিন্তু এখনও সময় হয়নি। আপনি চাইলে আরও কিছুক্ষণ থাকতে পারি।
মিসেস কার্ফের হাতে আলগা চাপড় মেরে সহানুভূতির সঙ্গে বলি, আপনি থাকলেও আমি কিন্তু আপনাকে কিছু জানাবো না। বরং কার্ফকে জিজ্ঞাসা করবেন। এখন আমি বিশ্রাম করবো, দয়া করে বাড়ি যান।
মুখের হাসি না নিভিয়েই মিসেস কার্ফ বলে, আর একবার ভেবে দেখুন’বলেই আমার গলা জড়িয়ে ধরে অজস্র চুমু খেতে লাগল সে।
মনে মনে ভাবি ওকে সবেগে দুরে সরিয়ে দেওয়া উচিত কিন্তু হঠাৎ টের পাই মিসেস কার্ফকে জড়িয়ে অজস্র চুম্বনে ওর মুখ ভরে দিচ্ছি।কখন যেন চুম্বনের মাধ্যমে আরাম কেদারায় বসে পড়ি। ওর নরম স্তনের স্পর্শ পাই। কিন্তু হঠাৎ ওর চাহনী দেখে আমি সবেগে মিসেস কার্ফকে দূরে ঠেলে উঠে দাঁড়াই। নিজেকে সংযত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে হাঁফাতে হাঁফাতে বলি, আপনার স্বামীর কাজ শেষ হওয়ার পর আবার আমরা এ খেলায় মেতে উঠবো। এখন চলুন, আপনাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আসি।
ঠিক আছে। যদি মিঃ কার্ফ ডিভোর্স চান-উনি তাই পাবেন। কিন্তু আমার শর্ত অনুযায়ী। ওকে জানাতে পারেন, আমার গতিবিধির ওপর নজর রেখে লাভ নেই। এত সহজে আমাকে কাবু করা যাবে না।
মিসেস কার্ফ আবার বলে, শুধু অর্থের জন্যে ওকে বিয়ে করেছি। যদি জানতাম লোকটা এমন বোকা–ওর অপর্যাপ্ত অর্থও আমাকে কিনতে পারত না। উনি যেন ওর অপদার্থ মেয়ের ওপর নজর রাখেন।
হঠাৎ মিসেস কার্ফ হেসে বলে, আর আপনি? একটা হাঁদারাম! পুরুষ মানুষের মত ব্যবহার করতে শিখুন। আঃ….টের পেলেন না, আজ আপনি কি লোভনীয় জিনিষ হারালেন।
***
রাত তিনটে বেজে চার মিনিট, টেলিফোন বাজতেই আমি রিসিভার হাতে নিলাম, কে… ম্যালয় কথা বলছো? আমি মিফিন, পুলিশ হেড কোয়ার্টাস থেকে…অসময়ে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। তোমার প্রতিষ্ঠানে যে ডানা মেয়েটি কাজ করে তার একটা হাতব্যাগ পাওয়া গেছে।….
দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বললাম, শুধু এ কথার জন্যে তুমি আমাকে মাঝরাতে ডেকে তুলেছ?
‘আহা, রাগের কি আছে? মিস লিউসের বাড়িতে টেলিফোনে কোন সাড়া পাইনি। তাছাড়া ব্যাগটা যেখানে পাওয়া গেছে, সেখানে বালির উপর রক্তের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে আমি এখুনি রওনা হচ্ছি, ভাবলাম, খবর শুনে তুমি হয়ত আমার সঙ্গে যেতে চাইবে।
‘ব্যাগটা কোথায় পাওয়া গেছে?’ ঠিক আছে—
‘তোমার বাংলো থেকে প্রায় এক মাইল দূরে বালিয়াড়ির কাছে। যাওয়ার পথে তোমাকে তুলে নিচ্ছি ঠিক আছে।‘
পোশাক পরা শেষ হতেই গাড়ির শব্দ। একটা গাড়িতে মিফিন…মুনিফর্ম পরা আরও দুজন পুলিশ।
ছোটখাট পুলিশ অফিসার মিফিন। সুদক্ষ আর কড়া মেজাজের–বেশ কিছুদিন আমরা দুজন একসঙ্গে কাজ করেছি। প্রয়োজনে আমরা একে অন্যকে সাহায্য করি। সে আমাকে দেখে গাড়ির দরজা খুলে দেয়।
ওর পাশে বসতেই মিফিন বলল, ‘হয়ত আমাদের ধারণা ভুল হতে পারে। রক্তের ব্যাপারটা হয়ত কিছুই না…কিন্তু আমার লোক যা বলছে..তাতে আমাদের যাওয়া দরকার।‘
‘তোমার লোক এতরাত্রে ওখানে কি করছিল?’
‘কি আর, এধার-ওধার ঘুরছিল। এ অঞ্চলে ওয়েন লীডবেটার নামে এক অদ্ভুদ পাগলা ধরনের লোক, গোপনে নর-নীরার প্রণয় লীলা লক্ষ্য করে। কিন্তু লোকটা এমনিতে শান্ত, একটা মাছি মারবারও ক্ষমতা তার নেই।
মিফিন প্রশ্ন করে, ‘মিস লিউইস কোন বিশেষ কাজে বেরিয়েছিল কী?
আমি জানি না।’
মিঃ কাফকে আমি কথা দিয়েছি সুতরাং যাই ঘটুক কোনমতেই আমি মক্কেলের নাম প্রকাশ করবো না।
ড্রাইভার বলে, ‘আমরা এসে গেছি। লোকটা বালিয়াড়ির প্রথম লাইন বলেছিল না?’
‘হ্যাঁ। সার্চ লাইট ফেলল। চারিদিকে ঘোরাও যাতে সবকিছু দেখতে পারি।‘
তীব্র আলোয় বালিয়াড়ি স্পষ্ট হয়। বড়ই নির্জন জায়গা, আমাদের ডানদিকে সমুদ্র। আমরা গাড়ি থেকে নামি। ড্রাইভারকে মিফিন বলে, জ্যাক তুমি এখানে থাক। চিৎকার শুনলে তুমি আমাদের দিকে সার্চ লাইট ফেলবে।
মিফিন আমাকে একটা টর্চ দিয়ে বলল, চল, আমরা খুঁজে দেখি। হ্যারি, তুমি ডান দিকে যাও আমরা বাঁদিকে যাব।
হাঁটতে হাঁটতে বলি, লীডবেটারকে সঙ্গে আনলে কাজটা সহজ হোত।
‘লোকটা কী ভীতু তা তুমি জান।ও পাথরের টুকরো দিয়ে জায়গাটাকে চিহ্নিত করেছে-খুঁজে পাওয়া মুস্কিল হবে না।‘
ঠিক তাই, একশো গজের মধ্যেই আমরা জায়গাটা পেলাম। মিফিন চিৎকার করতেই ড্রাইভার সার্চ লাইটের আলো ফেলে। বালি জায়গায় জায়গায় সমান করা হয়েছে। পায়ের কোন চিহ্ন নেই। পাথরের টুকরোর সামনে লাল রক্তের দাগ। ডানা মেয়েটি চমৎকার, আমাদের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক ছিল।
মিফিন বলে, মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগেও ওখানে কেউ ছিল। কিন্তু পায়ের চিহ্ন নেই? ডিক, ওটা কিন্তু রক্তের দাগ।
‘হ্যাঁ।।
হ্যারি কাছে এসে বলে, হয়ত ঐ দিকে মিস লিউইসকে পাওয়া যেতে পারে, একটা বড় ঝোঁপের দিকে দেখিয়ে বলে। মনে হচ্ছে কোন কিছু টেনে নেওয়া হয়েছে।
মিফিন বলে, চল খুঁজে দেখা যাক। ওরা এগিয়ে ঝোঁপের মধ্যে খুঁজতে শুরু করে। আমার মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে।
হঠাৎ ওরা থেমে, নিচু হয়ে কি যেন দেখছে। ওরা মিনিট খানেক দেখে মিফিন বলে ‘ডিক শোন, মিস শিউসকে পেয়েছি।’
এগিয়ে গিয়ে দেখি চিৎ হয়ে ডানা শুয়ে। ওর চোখ মুখ, চুলে বালি। ডানা সম্পূর্ণ উলঙ্গ। মাথার খুলি চূর্ণ-বিচূর্ণ। ডানার চোখে-মুখে ভীতির ছাপ।