থ্রি অ্যাক্ট প্লে (এরকুল পোয়ারো সিরিজ) – আগাথা ক্রিস্টি
০১.
এরকুল পোয়ারো ভিলি গ্রামেয়ার রেস্তোঁরা থেকে বেরিয়ে এলেন। তিনি একটু তুলে দিলেন তার ওভার কোটের কলারটা যদিও ঠান্ডা এমন কিছু পড়েনি তবু আজ সাবধান হওয়া ভালো, আর কোনো ঝুঁকি নেওয়া ঠিক নয় এই বয়সে বলে মনে করেন তিনি।
পোয়ারো ঘুমের আমেজ জড়ানো চোখে ভাবছিলেন রেস্তোঁরার কথা। সন্তর্পণে মাঝে মাঝে জিভ বুলিয়ে নিচ্ছিলেন বিরাট গোঁফের নিচে প্রায় অদৃশ্য ঠোঁটে। রুমাল পকেট থেকে বের করে তিনি তার অতি প্রিয় মোটা গোঁফের ওপর বুলিয়ে নিলেন।
হ্যাঁ বেশ ভালোই হয়েছে খাওয়াটা… কিন্তু কি করা যায় এবার?
আমন্ত্রণের ভঙ্গি নিয়ে একটা ট্যাক্সি এগিয়ে এল পোয়ারোর দিকে। একটু ইতস্তত করেও শেষ পর্যন্ত নিশ্চল রইলেন পোয়ারো। কোনও দরকার আছে কি ট্যাক্সি নেওয়ার, তিনি নিজেকে প্রশ্ন করলেন। বাড়ি যাবার তাড়া নেই কিছু এবং হাতে যথেষ্ট সময় আছে।
হতাশভাবে স্বগতোক্তি করলেন গোঁফের দিকে তাকিয়ে। সারাদিনে মাত্র তিনবারই মানুষ ভালোভাবে খেতে পারে।
সত্যি কথা বলতে গেলে, কোনোদিন জীবনে তিনি চা পান করা বরদাস্ত করতে পারেন না। তার মতে চা পান আর নৈশভোজ এ দুয়ের মাঝের সময়টুকুতে নাকি যথেষ্ট পিত্তরস ক্ষরণ হয় না। নৈশভোজের আনন্দটুকু মাটি হওয়াই নাকি চা পানের কারণ। সবাই জানে এ কথা, একজন ভোজন রসিকের কাছে সবচেয়ে উপভোগ্য নৈশভোজ।
এই হল পোয়ারোর মোটামুটি ভাবে মতামত। তিনি গোঁফে তা দিয়ে বলেন, নিজের উদর সম্পর্কে যে মানুষ সচেতন সেই বার্ধক্যে পুরস্কৃত হয়। শুধু মাত্র দৈহিক তৃপ্তির জন্যই খাওয়া নয়–এটা আসলে একটা গবেষণার জিনিস।
খাওয়ার ব্যাপারে উনি নিজে অনুসন্ধান করেন, নিত্য নতুন মুখরোচক তথা উপাদেয় খাবার কি করে পাওয়া যায়।
পোয়ারো স্বগতোক্তি করলেন, এই রকম এক ঘেয়ে সন্ধ্যা কাটানোর জন্য প্রিয় বন্ধু হেস্টিংসকে যদি পাওয়া যেত।
তিনি এরপর পাঠকমহলে অতি পরিচিত ক্যাপ্টেন হেস্টিংস ও তার মধ্যে বন্ধুপ্রীতির সুখস্মৃতি রোমন্থন করতে লাগলেন।
আমার প্রথম বন্ধু সে, সত্যি আমায় কত সহজেই না আকৃষ্ট করতে পারে। লজ্জা নেই স্বীকার করতে আমার ভালোই লাগে নিজেকে নিয়ে ভাব করতে। আর সেটা মোটেই সুনজরে দেখে না হেস্টিংস।
ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছোটখাটো বেলজিয়ান গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারো শ্যাফসবেরী অ্যাভিনিউ-এ শুরু করলেন হাঁটতে।
কেমন হয় সিনেমা গেলে–একবার ভাবলেন। নাঃ আজকাল যা সব ছবি, না আছে গল্পে বাঁধুনি না মুক্তি না গতি। দূর মোটেই ও রকম ছবি দেখা পোষায় না।
পথে একটা কাগজ কিনলেন স্টল থেকে। নতুন খবর–ম্যাগিনটি হত্যা মামলার রায় প্রকাশিত, তার কাছে এ খবরটা এমন কিছু চাঞ্চল্যকর নয় তবুও একবার তাতে চোখ বোলালেন। বয়স্কা কোনো একজন মহিলা নিহত হয়েছিলেন।
তাঁর বাড়ির দরজায় এসে পৌঁছলেন পোয়ারো। নিজের সুন্দর ছিমছাম চার তলার বিরাট ফ্ল্যাটটিতে লিফটে চেপে সোজা উঠে এলেন। সঙ্গেই ছিল ল্যাকিটা–ভেতরে দরজা খুলে ঢুকতে অসুবিধে হল না।
ঘরে পা দিতেই পরিচারক ও তার একান্ত বিশ্বস্ত সঙ্গী জর্জ এগিয়ে এল।
-মঁসিয়ে শুভ সন্ধ্যা, আপনার জন্য একজন লোক অপেক্ষা করছেন।
ওভারকোটের বোঝা থেকে পোয়ারোকে ক্ষিপ্ত হস্তে মুক্ত করতে করতে বলল জর্জ।
-তাই নাকি তিনি কে?
–মিঃ স্পেন্স মঁসিয়ে।
–স্পেন্স।
পোয়ারো গোঁফে হাত বোলাতে বোলাতে বসবার ঘরে ঢুকলেন। অভ্যাগত ভদ্রলোক ওকে দেখে দাঁড়িয়ে উঠলেন। চিনতে পারলেন পোয়ারো–এই স্পেন্স ছিলেন একদা ডাকসাইটে পুলিশ অফিসার।
ট্রেতে জর্জ দুজনের জন্য পানীয় নিয়ে প্রবেশ করল!
পোয়ারো পান করতে করতে জিজ্ঞেস করলেন, তারপর, আপনি আসছেন কোত্থেকে?
–কিলচেস্টার থেকে। নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে আমার সেই বাগানের কথা….।
তিনি হঠাৎ থেমে গেলেন। আস্তে আস্তে বললেন, আপনার সঙ্গে আমি কিন্তু আজ বাগান সম্বন্ধে আলোচনা করতে আসিনি। আমি এসেছি মানে….একটা খুনের তদন্তে সাহায্য চাইতে আপনার। একজন স্থানীয় প্রৌঢ়, মিসেস ম্যাগিনটি মারা গেছেন।
মৃদুস্বরে পোয়ারো বললেন, কিন্তু কি ভাবে উনি মারা গেলেন?
–ভারী, কোনো জিনিস দিয়ে ওর মাথার পেছনে আঘাত করা হয়েছিল। মৃত্যুকালীন ওর সঞ্চয় তিরিশ পাউণ্ডও বেপাত্তা। উনি একাই থাকতেন। না না-ওর কাছে জেমস বেন্টলী নামে একজন যুবক ছিল পেয়িং গেস্ট হিসেবে। চাকরী চলে গিয়েছিল এই বেন্টলীর। সে দুমাসের বাড়ি ভাড়া বাকি ফেলে এই ঘটনার আগে। নিহত মহিলার তিরিশ পাউণ্ড পরে বাড়ির পিছনে একটা আলগা তক্তার নিচে পাওয়া গেছে।
…..বেন্টলীর কোটের হাতায় লেগে ছিল কিছু রক্ত আর চুল, পরে তা মিসেস ম্যাগিনটির বলে প্রমাণিত হয়েছে। বেন্টলীর বক্তব্যানুযায়ী সে নাকি মৃতার ধারে কাছেও ছিল না–তবে তার জামায় ওইগুলো কি ভাবে এলো?
জিজ্ঞাসা করলেন পোয়ারো, মৃতকে প্রথম আবিষ্কার করে কে?
উত্তর দিলেন স্পেন্স, রুটিওয়ালা। ওটা তার মাইনে পাবার দিন ছিল। দরজা খুলে দিয়ে জেমস বেন্টলী তাকে বলে যে, সে মিসেস ম্যাগিনটির শোবার ঘরের দরজায় ধাক্কা দিয়ে সাড়া পায়নি কোনো। হঠাৎ ভদ্রমহিলা অসুস্থ হয়ে থাকতে পারেন ভেবে তারা এরপর পাশের এক
প্রতিবেশী স্ত্রীলোকের সাহায্য নেয়। দরজা ভেঙে ফেলার পর দেখা যায় সারা ঘর লণ্ডভণ্ড, বিছানাতেও নেই তিনি। পারলারে গিয়ে দেখতে পাওয়া গেল মাটিতে পড়ে আছেন ভদ্রমহিলা মৃতাবস্থায়। তখন স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
পোয়ারো বললেন, এরপর হত্যাপরাধে বেন্টলী জেলে যায়, কেমন?
মাথা নেড়ে স্পেন্স বললেন, হ্যাঁ বিচারে জুরীরা মাত্র কুড়ি মিনিট সময় নেয় তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে। বেন্টলীকে হত্যাপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
–তারপর ট্রেন ধরে আপনি সোজা আমার এখানে চলে আসেন কিন্তু কেন?
–হ্যাঁ ঠিক তাই। সোজা আপনার এখানেই আমি এসেছি, কারণ আমি কখনই বিশ্বাস করি না যে, এ কাজ জেমস বেন্টলী করেছে। সে……নির্দোষ।
.
০২.
চুপচাপ কাটল দু-এক মুহূর্ত।
–আমার কাছে এসেছেন আপনি…
অর্ধসমাপ্ত রাখলেন পোয়ারো মুখের কথা।
মুখ তুললেন সুপারিন্টেন্টে স্পেন্স। সাধারণ একজন গ্রামবাসী ভদ্রলোকের মত তার মুখভাব আর চোখ দুটোতে ঐকান্তিক আগ্রহ আশ্চর্য রকমের। তিনি যেন খুব ভালো করেই জানেন, কোনটা সত্যি আর কোনটা নয়।
তিনি গম্ভীর ভাবে বললেন, দেখুন, আমি বহুদিন পুলিশে কাজ করেছি। আমি সহজেই মানুষের চরিত্র বুঝতে পারি। নিশ্চয়ই আপনার মনে পড়ে সেই বিখ্যাত বিখ্যাত সব মামলার কথা?….. অনেক কিছুই দেখেছি জীবনে আমি। কিন্তু….. কিছুতেই আমি ভাবতে পারছি না যে, কেন দোষী সাব্যস্ত হয়ে একজন নির্দোষ ব্যক্তি ফাঁসি কাঠে ঝুলবে। এ দৃশ্য দেখতে কিছুতেই রাজী নই আমি মঁসিয়ে পোয়ারো।
স্থির দৃষ্টিতে পোয়ারো তার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
বলে চললেন স্পেন্স, আমি জানি আমার কাছে আপনি এরপর কি জানতে চাইবেন। তাই আপনাকে সব খুলে বলছি। সাধারণ ভাবেই আমাকে প্রথমদিকে বলা হয়েছিল এ ব্যাপারে তদন্ত করতে। আমি ঘটনাপঞ্জী সংগ্রহ করেছিলাম তদন্তের শুরুতে। আর সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ছিল ওই জেমস বেন্টলীর বিরুদ্ধে। সুতরাং সে জেলে যায় দোষী প্রমাণিত হয়ে। এটুকু ধারণা আমি করতে পেরেছি যে বেন্টলীকে সব্বাই দোষী জেনে খুশী।
পোয়ারো বললেন, কিন্তু আপনি নন।
ছোট্ট জবাব দিলেন। স্পেন্স, নিশ্চয়ই না।
-কিন্তু কেন? জিজ্ঞাসা করলেন পোয়ারো।
স্পেন্স দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
–আমি তা সত্যিই জানি না। এর কোনো যথাযথ কারণ আমি দেখাতে পারব না আপনাকে। তবে বেন্টলীর মুখ দেখে বুঝতে পেরেছি সে নির্দোষ, সাধারণ বিচারে যা চোখে পড়েনি জুরীদের এবং সেটা সম্ভবও নয়। কিন্তু সাধারণ হত্যাকারীদের মত তার হাবভাব নয়। বড় বেশি চুপচাপ সে, বড় বেশি মনমরা। আমি কি বলতে চাইছি, মঁসিয়ে পোয়ারো বুঝতে পারছেন?
–হ্যাঁ, মিঃ স্পেন্স, জেমস বেন্টলীর কত বয়স, আর কেমনই বা তার চেহারা?
–বয়স তেত্রিশ। সাধারণ উচ্চতা, মাঝারি গায়ের রং, আর চশমা আছে চোখে।
–তার ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধেও আমি কিছু জানতে চাই।
–সে বড্ড ভীতু আর বিষণ্ণ প্রকৃতির। আসলে লাজুক, বড় এক আত্মীয় আছে তার সেও ওরকম।
তার মানে সে খুব অকর্ষণীয় নয় সব মিলিয়ে।
–নিশ্চয়ই নয়। কিন্তু আমি তাই বলে কখনো চাই না যে, তার ফাঁসি হোক এই সব তুচ্ছ কারণে।
–আপনার কি মনে হয় সত্যিই শেষ পর্যন্ত ওর ফাঁসি হবে?
–কেন হবে না বলুন? সবকিছুই যে তার বিরুদ্ধে। যিনি তার পক্ষের উকিল তিনিও খুব উঁদে নন।
–সব কিছুই ওর বিরোধিতা করায় স্বপক্ষে ওর বলার মত কিছু নেই। এই তো?
–যখন কেউ সত্যিই কোনো অপরাধ করে, তার আত্মপক্ষ সমর্থনের তখনই প্রশ্ন ওঠে, তাই নয় কি?
ঠিকই বলেছেন। আমার ওপর ছিল সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহের সব দায়িত্ব। আরও অস্বস্তিতে পড়েছি তাতে।
–কিন্তু আপনি কি চান আমার কাছে?
আমি চাই আমার হয়ে আপনি পূর্ণতদন্ত করুন এই হত্যাকাণ্ডের, ঠিক পারবেন আপনি। যদি খুনী না হয় বেন্টলী তবে স্পষ্টতই অন্য কেউ খুনী। আমার বিশ্বাস প্রকৃত দোষীকে নিশ্চয়ই আপনি খুঁজে বের করতে পারবেন।
–আমি আপনার অনুরোধ অবশ্যই রাখব। এই অখণ্ড অবসর বড় বেশি ক্লান্তিকর। আর কেউ যদি সত্যিই নির্দোষ হয়, তবে তার শাস্তি পাওয়াটা নিশ্চয়ই অন্যায়। মিসেস ম্যাগিনটি কবে মারা যান?
–গত বাইশে নভেম্বর।
–তবে শুরু করা যাক এখান থেকেই কি বলেন?
–নিশ্চয়ই, আপনার জন্য সব কিছু নোট করে এনেছি আমি।
–ভালো কথা। আচ্ছা প্রথম প্রশ্ন হল–যদি খুন বেন্টলী না করে থাকে তবে কে করতে পারে?
সত্যি কথা বলতে কি, কিছুই আমি বুঝতে পারছি না।
–কিন্তু মিঃ স্পেন্স, এটা ভাববার কথা। একটা না একটা উদ্দেশ্য থাকে প্রত্যেক খুনের পেছনে। এর পেছনে কি উদ্দেশ্য ছিল?
হিংসা, প্রতিশোধ, পূর্ব শত্রুতা ভয় না অর্থ? আপাতত ধরা যাক অর্থের কথাটাই। কে কে উপকৃত হবে ওই ভদ্রমহিলাটির মৃত্যুতে।
–কেউই খুব একটা উপকৃত হবে না। ওঁর যাবতীয় অর্থ মোট দুশো পাউণ্ড পাবে ওঁর ভাইঝি।
–দুশো পাউণ্ড খুব বেশি নয়। কিন্তু এটাই প্রয়োজনের সময় অনেক বেশি হতে পারে।
-ওই ভাইঝির কথাও আমরা ভেবেছি। এখন তার বয়স আটত্রিশ এবং বিবাহিতা সে। টুকিটাকি বাড়ি মেরামত এবং বাড়ি সাজানোর কাজ করে তার স্বামী। একটু বেশি কথা বললেও ভদ্রমহিলা এমনিতে তাকে বেশ সুখী বলেই মনে হয়।
-কি হল মৃতা ভদ্রমহিলার বাড়িটার?
–ভাঙা বাড়ি ওটা। উনি এখন মারা যাবার পর আর ওটা ভাড়া নিতে চায় না ওঁর ভাইঝি। নিজেদের বাড়ি আছে তাদের।
–বেশ মৃতা মহিলাটির সম্পর্কে এবারে কিছু বলুন।
বয়েস ৬৪ এবং উনি বিধবা। স্থানীয় চাকুরে ছিলেন স্বামী–প্রায় সাত বছর আগে মারা যান নিউমোনিয়ায়। ভদ্রমহিলা সেই থেকে ব্রডহিনির স্থানীয় কয়েকটা বাড়িতে গৃহস্থালীর কাজ কর্ম দেখতেন।
একজন পেয়িং গেস্ট রাখেন তিনি।
হ্যাঁ, গ্রীষ্মকালীন অতিথি আসত স্বামী মারা যাবার আগে। বেশ কয়েক মাস জেমস বেন্টলী ওখানে ছিল। বাড়ির দালাল ছিল সে। আগে অন্যত্র থাকত পঙ্গু মায়ের সাথে। মা মারা গেলে বেচে দেয় বাড়ি। শিক্ষিত বেশ কিন্তু কোনো কাজে বিশেষ দক্ষতা নেই। সে শেষ পর্যন্ত কাজ নেয় কিচেস্টারে ও পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকে। এ যাবৎ বাড়িভাড়া বাবদ কোনো গণ্ডগোল হয়নি। চাকরীটা যাবার পর বাকি ফেলেছিলো দুমাসের বাড়িভাড়া। তাকে উঠে যাবার জন্য মিসেস ম্যাগনটি চাপ দিতে শুরু করেন।
-সে কি জানত যে, ত্রিশ পাউণ্ড রাখা ছিল বাড়িতে? মিসেস ম্যাগিনটি ব্যাঙ্ক থাকা সত্ত্বেও ওই অর্থ বাড়িতে রাখতেন কেন?
-ওর বিশেষ আস্থা ছিল না ব্যাঙ্কের ওপর। একটা আলগা তক্তার নিচে বাড়িতেই রাখা ছিল ওটা, অবশ্য তা বেন্টলী জানত বলে স্বীকার করেছে।
-ওর ভাইঝিও তা জানত কি?
–হ্যাঁ।
–আচ্ছা, যেদিন উনি মারা যান, সেদিন কি কি ঘটেছিল ঠিক বলতে পারেন?
-বাইশে নভেম্বর সন্ধ্যে সাড়ে ছটা আন্দাজ নৈশভোজ সারেন। উনি মারা যান পুলিশ সার্জেনের মতানুযায়ী সাতটা থেকে দশটার মধ্যে। যে ভুক্তাবশেষ পাওয়া যায় ওর পাকস্থলীতে তা পরীক্ষা করে মৃত্যুর সময় নির্দেশিত হয় আন্দাজ সাড়ে আটটা থেকে নটার মধ্যে। বেন্টলী সন্ধ্যে সাতটা পনেরোতে বাড়ির বাইরে বেড়াতে বের হয়। অন্ধকার গাঢ় হবার পর তার অভ্যেস ছিল বেড়াতে যাওয়ার। বাড়ির চাবি ছিল বেন্টলীর কাছে। যদি সত্যি বলে ধরা হয় তার কথা তবে সে আন্দাজ রাত নটা বেড়িয়ে ফিরে আসে এবং তার নিজের ঘরে সোজা চলে যায়। আধঘন্টার মত বই পড়ে শুয়ে পড়ে সে। সে রাত্রে কোনো অস্বাভাবিক শব্দ শোনেনি বা তেমন কিছু চোখে পড়েনি। রান্নাঘরে সকালে কাউকে দেখতে না পেয়ে সে ধাক্কা দেয় মিসেস ম্যাগিনটির শোবার ঘরের দরজায়। প্রথমে ভেবেছিল, বোধহয় ভদ্রমহিলা ঘুমোচ্ছেন। তারপর আসে রুটিওয়ালা। আপনাকে তো পরের ঘটনা আগেই বলেছি। পাশের বাড়ি থেকে রুটিওয়ালা মিসেস এলিয়টকে ডেকে আনে। আর পারলারে তিনি মৃতাবস্থায় মিসেস ম্যাগিনটিকে আবিষ্কার করেন। মাংস কাটার বড় ছুরির মত কোনো অস্ত্র দিয়ে মাথার পেছনে ওকে আঘাত করা হয়েছিল। উনি আঘাত করার সাথে সাথেই মারা যান। ঘরের আলগা তক্তার নিচে রাখা টাকাকড়িও বেপাত্তা।
সুতরাং :- হয় ওকে বেন্টলী খুন করেছে, নয় তো বেন্টলী বেরোবার পর মিসেস ম্যাগিনটি নিজেই দরজা খুলে দেন হত্যাকারীকে।
–ঠিক কথা কাজটা ছিঁচকে চোরের নয়। কিন্তু উনি কাকে আমন্ত্রণ জানাবেন?
–হতে পারে কোনো একজন প্রতিবেশীকে বা ওঁর ভাইঝি বা ভাইঝির স্বামীকে। কিন্তু তারা নাকি ওই সময় সিনেমায় গিয়েছিল শেষের দুজনে বলেছে। এমন হতে পারে সিনেমা দেখার মাঝে হল থেকে উঠে গিয়ে তারা কেউ সাইকেলে করে ঘটনাস্থলে আসে। কিন্তু তাই বা কি করে হবে? তাহলে বাড়ির বাইরে কেন টাকাটা লুকিয়ে রেখে গেল?
–বেন্টলীর সুযোগই এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি।
–হ্যাঁ, বেন্টলীর বিরুদ্ধে সব সময়ই প্রমাণ থেকে যাচ্ছে। এমন কি তার কোটের হাতায় আবার রক্তও পাওয়া গেছে।
-সে কি কৈফিয়ত দিয়েছে এর জন্য?
–সে বলেছে ওটা মাংসের দোকানে জন্তুর রক্ত। কিন্তু দেখা গেছে পরীক্ষা করে ওটা কোনো জন্তুর রক্ত নয়।
–নিজের বক্তব্যে সে কি অবিচল ছিল?
-না, তার কোটের হাতায় রক্তের সাথে যে চুল ছিল ওই মৃতা মহিলার তাও বেন্টলী বলেছে, মৃতদেহ আবিষ্কারের পর নিচু হয়ে তা দেখার সময় লেগে থাকবে ওটা, পরে ভয়ে তার মনে ছিল না কিছুই।
-খুবই অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
–হ্যাঁ কিন্তু হতেও পারে তা। অবশ্য সাধারণ লোক তা বিশ্বাস করে না। বিশেষত মৃতদেহ দেখে ভয় পাবার ব্যাপারটা কিন্তু সেটা হতে পারে। সে বলছে, সে কল্পনাও করেনি সকালে ভদ্রমহিলার খুন হবার কথা।
–হয়ত সত্যিই বলেছে।
-এও হতে পারে যে, তার বুদ্ধিটা উকিলের দেওয়া। কিন্তু যে হোটেলে মাঝে মাঝে সে লাঞ্চ করতে যায় সেখানকার লোকও বলেছে সে বরাবর দেওয়ালের দিকের নিরিবিলি টেবিলই পছন্দ করে। একটু ভীরু প্রকৃতির নাকি।
একটানা স্পেন্স এতক্ষণ কথা বলার পর তাকালেন পোয়ারোর দিকে। কোনো উত্তর দিলেন না পোয়ারো শেষ কথার, ভুরু দুটো তার কোঁচকানো।
এরপর তারা দুজনেই কিছুক্ষণ নীরবে বসে রইলেন।
.
০৩.
দীর্ঘশ্বাস ফেলে পোয়ারো উঠে দাঁড়ালেন।
-মিঃ স্পেন্স, অর্থের কথা ছেড়ে দিয়ে খুনের অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করা যাক এবার। মিসেস ম্যাগিনটির কি শত্রু ছিল?
–সে রকম কোনো প্রমাণ নেই।
–কি বলেন ওঁর প্রতিবেশীরা।
–তেমন কিছু নয়। মনে হয় না তো আমার কিছু তারা গোপন করেছেন। প্রতিবেশীদের মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠতা নেই।
–ওখানে মিসেস ম্যাগিনটি কতদিন ছিলেন?
–প্রায় কুড়ি বছর।
–আর তার আগের চল্লিশ বছর?
-উত্তর ডেভেনের এক চাষীর মেয়ে ছিলেন উনি। স্বামীর সঙ্গে বিয়ের পর প্রথমে ইলফ্রাবেগম্ব-এ ছিলেন। এখানে পরে আসেন। মানুষ হিসেবে ওর স্বামী ভালোই ছিলেন।
-মিসেস ম্যাগিনটি এসব সত্বেও নিহত হন। আচ্ছা পূর্বশত্রু হিসেবে ওর ভাইঝি কাউকে চেনে কিনা জানেন?
–সে তো বলেছে তার তেমন কেউ আছে বলে জানা নেই।
–খুব ভালো হত যদি মিসেস ম্যাগিনটি প্রকৃতই এমন ধরনের মহিলা হতেন যার রহস্যময় কোনো অতীত আছে। অর্থাৎ বলতে চাইছি অন্য প্রকৃতির মহিলা যদি উনি হতেন।
-সেরকম কোনো সম্ভাবনা নেই। সত্যিই উনি মিসেস ম্যাগিনটি–হাজার হাজার সাধারণ মহিলাদের একজন।
–কিন্তু সকলেই তারা নিহত হন।
–না, অবশ্য তা নয়।
–তবে কেন নিহত হলেন উনি? আর কেনই বা সাধারণ একজন তরুণের ঘাড়ে দোষ পড়ল সব।
–আপনাকে তো আমি আগেই বলেছি যে, সব প্রমাণ ওই বেন্টলীর বিরুদ্ধে যাচ্ছে।
–কিন্তু সেগুলো কি সত্যি প্রমাণ না সাজানো?
–সাজানো?
-হ্যাঁ, তাই যদি নিশ্চয়ই নির্দোষ হয় বেন্টলী তবে ব্যাপারটা সাজানো হয়েছিল এমনভাবে যাতে তার বিপক্ষে যায় সব কিছুই!
–হ্যাঁ, এবার আমি আপনার কথা বুঝতে পেরেছি।
–তার কোটে হয়ত রক্ত আর চুল লাগার কথায় যা বলেছে সেটাই ঠিক। মানে, ইচ্ছে করে কেউ তা করেছে। এবার বেড়াতে যায় বেন্টলী এবং যখন সে বেড়াতে বেরিয়েছিল সেই সময়ই খুন হন ভদ্রমহিলা।
-আমার মনে হয় একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে এটা।
–হয়ত। কিন্তু ব্যাপারটা সব দিক থেকেই ভেবে দেখতে হবে। একজন সাধারণ মহিলা ছিলেন মিসেস ম্যাগিনটি এবং ওঁর মধ্যে এমন কিছু আমরা খুঁজে পাচ্ছি না, যে কারণে ওকে এরকম অস্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করতে হবে। আমার মনে হয় হত্যাকারীর চরিত্রগত বৈশিষ্টই এই হত্যার কারণ। আমাকে এই ধরনের হত্যাই বেশি নাড়া দেয়। মৃতের পছন্দ অপছন্দ, ভালোবাসা, কার্যকলাপ ইত্যাদি এসব ক্ষেত্রে চারিত্রিক বৈশিষ্ট অনেক সাহায্য করে থাকে রহস্য উদঘাটনে। যদি একবার মৃতের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের দিকটা জানা হয়ে যায় তবেই বলা যেতে পারে রহস্যের সূত্র হাতে এসে গেল।
তখন মনে হবে, মৃত ব্যক্তির ঠোঁট থেকে এক অত নাম উচ্চারিত হচ্ছে তা হত্যাকারীর নাম।
একটু যেন দ্বিধাগ্রস্ত বলে মনে হল মিঃ স্পেন্সকে।
–ওই সব ব্যক্তিরা যারা বাইরে থেকে আসেন….
তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে পোয়ারো বলে চললেন, কিন্তু আমরা এখানে কি দেখছি ঠিক বিপরীত। এক আবছা ব্যক্তিত্বের আভাস পাচ্ছি আমরা, এখনো রহস্যাবৃত যার অস্তিত্ব। উনি কেমনভাবে মারা গেলেন? কেন মারা গেলেন? সে রহস্যের চাবিকাঠির খোঁজ আমরা পাব না মৃতার জীবন কাহিনীর মধ্যে। হত্যাকারীর চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যর মধ্যে তার সূত্র লুকিয়ে আছে। আপনি কি আমার সাথে একমত?
–আমরাও তাই ধারণা। পোয়ারোর বক্তব্য সতর্ক স্পেন্স সমর্থন করেন।
–কেউ চেয়েছিল হয় মিসেস ম্যাগিনটি নয় ওই জেমস বেন্টলীকে হত্যা করতে। কিন্তু কাকে?
-সত্যিই কি আপনি মনে করেন কাউকে ফাঁসিকাঠে ঝোলাবার উদ্দেশ্যেই মিসেস ম্যাগিনটির মত একজন নির্দোষ মহিলাকে হত্যা করা হয়েছে?
–হয়তো বেন্টলীকে শাস্তি দিতেই হত্যা করেছে সে ওই ভদ্রমহিলাকে। অতীত সম্বন্ধে ছেলেটির কিছু কি জানতে পেরেছেন?
–বিশেষ কিছু নয়। ন বছর বয়সে মারা যান বাবা। ডাক্তার ছিলেন তিনি। ছেলেটি তারপর পড়াশুনা করে। সেনাবাহিনীতে প্রবশোধিকার পায় না দুর্বল স্বাস্থ্যের জন্য। কর্তৃত্ব প্রিয় মায়ের সঙ্গে থাকত। রাষ্ট্রদপ্তরের কোনো একটা বিভাগে যুদ্ধের সময় চাকরী করেছিল।
–আমার মনে হয় বেন্টলীর অতীত সম্বন্ধে ভালো করে আরও খোঁজ খবর নিন। হয়ত তাতে বেশি ফল হবে।
-সত্যিই কি আপনি তাই মনে করেন?
–এখনো আমি কিছুই বিশ্বাস করি না। দুটো পথ আছে। তার মধ্যে কোনটাকে অনুসরণ করা হবে, আমাদের খুব তাড়াতাড়ি তা স্থির করা দরকার।
–কোন পদ্ধতিতে আপনি এগোতে চান? আপনার কোনো কাজে কি আমি লাগতে পারি?
–আমি প্রথমে ব্রেন্টুলীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। –সেটা সম্ভব। ওর সলিসিটারের সাহায্য নেব আমি।
-তারপর ঘটনার তদন্ত করতে চাই–যদি কোনো তথ্য পাওয়া যায় পরিবেশ থেকে। ব্রডহিনির ঘটনাস্থল দেখা দরকার আমার।
হ্যাঁ, বলা যায় না, কোনো সূত্র হয়ত আমার নজর এড়িয়ে গিয়েছে।
-আসলে তা নয়। মানুষের মানসিক প্রতিক্রিয়া এক রকম হয় না সকলের। অভিজ্ঞতাও তাই। হয়ত ঘটনার পরিবেশ বিশেষ কোনো ইঙ্গিত দেবে আমাকে, যেদিকে নজর ছিল না আমাদের। যাক অনুমান আর সম্বাবনার তালিকাটি ধীরে ধীরে আমি ছোট করে ফেলতে চাই। আচ্ছা, ওখানে আপনাদের কোনো সস্তা অথচ ভালো হোটেল আছে?
–গেস্ট হাউস আছে একটা মানে ওইরকম আর কি অনেকটা। সেটার দেখা শুননা করে এক তরুণ দম্পতি যদিও মনে হয় না ওটা খুব ভালো।
-আর কি করা যায়। অসুবিধে হলেও সইতে হবে।
ওখানে কি আপনি মিথ্যা পরিচয়ে যাবেন? যেমন ধরুণ একজন অপেরা গায়ক হিসেবে নিজের পরিচয় দিলেন বা বিশ্রামের জন্য গেছেন?
-কখনই না।
-কিন্তু!
—-কোনো কিন্তু নেই এর মধ্যে। যথেষ্ট দেরি হয়ে গেছে অথচ আমরা বিশেষ কিছুই জানি না। কিন্তু ভান করতে হবে এমন যেন অনেকটাই আমাদের জানা এ ব্যাপারটার রহস্য। সেই—সত্যান্বেষী এরকুল পোয়ারো যে মোটেই সন্তুষ্ট নয় বিচারের রায়ে এবং আগ্রহী প্রকৃত রহস্যে ভেদে। তদন্ত করব আমি।
-তারপর?
–লক্ষ্য করব তদন্তের প্রতিক্রিয়া। নিশ্চয়ই কিছু সূত্র পাব। অস্বস্তিবোধ করছিলেন মিঃ স্পেন্স। তিনি পোয়ারোকে সর্তক করলেন।
–ঝুঁকি নেবেন না বেশি। আপনার কিছু ক্ষতি হয় আমি চাই না।
–সত্যি যদি তেমন কিছু ঘটে তবে তো পরিষ্কার বোঝা যাবে অন্য লোক হত্যাকারী।
–এইভাবে আমি তা জানতে চাই না।
.
০৪.
পোয়ারো ভীষণ অপ্রসন্ন মুখে ঘরের চারধার দেখছিলেন। আলো হাওয়া যথেষ্ট থাকা সত্বেও অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন ঘরটা। তিনি বিরস মুখে বুককেসের ওপর রাখা নিজের ধুলোমাখা হাতটা সরিয়ে আনলেন। একটা সোফার ওপর চটে গিয়ে বসতেই আর্তনাদ করে উঠল সেটার ম্প্রিংগুলো।
বেশ বড়ই ঘরটা কিন্তু সব মিলিয়ে যেন কেমন। অনেক ফুটো কার্পেটটায়। ওটার নক্সাটা ভালো অবস্থাতেই যে অতি বাজে ছিল তা বেশ বোঝা যায়, ভাঙা পায়ার দৌলতে টেবিলটা নড়বড় করছে। ও পাশের দুটো চেয়ারের অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভদ্রস্থ, বিবর্ণ হয়ে গেছে। চেয়ারের ঢাকনাগুলো। একটা ভোলা জানলা যা বন্ধ করা কারও শক্তিতে কুলোবে বলে মনে হয় না। অর্ধেক ভাঙা দরজার খিল, কি করে প্রয়োজনে দরজাটা বন্ধ করা যাবে তা জানেন ভগবানই। কতকগুলো স্টিলের খোদাই করা ঘর সাজানোর জিনিস যা দেওয়ালে বাঁকাভাবে ঝুলছে সেগুলোর বিষয়বস্তু অত্যন্ত অসার। তেল রঙের দু চারটে ছবি অবশ্যই ওরই মধ্যে একটু যা ভালো। এর ওপর একটা ভীষণ দর্শন কুকুর মাঝে মাঝেই পোয়ারোর দিকে ঘরে। ঢুকে তাকাচ্ছিল বিরসমুখে।
–কি অসুবিধেই না হচ্ছে… উঃ, এখন আমাকে এইসব অসুবিধে সহ্য করতে হবে।
খেদের সুরে এরকুল পোয়ারো স্বগতোক্তি করলেন।
দড়াম করে দরজাটা খুলে গেল।
একঝলক দমকা হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিসেস সামারহেস ঘরে ঢুকলেন। ঘরের চারদিকে লক্ষ্য করে দেখে দূরের কারও উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে উঠে বেরিয়ে গেলেন।
লাল চুল ভদ্রমহিলার, দাগে ভরা মুখ হলেও মোটামুটি আকর্ষণীয় চেহারাটা। আর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য যা চোখে পড়ে যেন সব সময়ই উনি কিছু খুঁজছেন। উনি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই দরজাটা পোয়ারো লাফিয়ে উঠে বন্ধ করার ব্যর্থ চেষ্টা করলেন।
ভদ্রমহিলা দু-এক মুহূর্ত বাদেই ঘরে ঢুকলেন আবার। মস্ত এক জলের পাত্র আর ছুরি ছিল হাতে।
এক ভদ্রলোকের গলার আওয়াজ পাওয়া গেল দূর থেকে।
-মরিন, আবার অসুখ করেছে বেড়ালটার।
–আসছি এখুনি, ভালো করে ওকে ধরে রাখো।
হাতের জিনিস দুটো পোয়ারোর ঘরেই নামিয়ে রেখে ছুটে বেরিয়ে গেলেন উনি।
আবার পেয়ারো উঠে গিয়ে ভেজিয়ে দিলেন দরজা। মাথা নেড়ে হতাশ ভাবে বললেন, উঃ ভোগান্তি আছে দেখছি কপালে।
কানে একটা গাড়ির শব্দ যেতেই ঐ কুকুরটা জানলার ধারের ছোট টেবিলের ওপর লাফিয়ে উঠল আর সশব্দে টেবিলটা নড়ে উঠল।
-অসহ্য।
আবার খুলে গেল দরজাটা আর চেঁচাতে চেঁচাতে কুকুরটাও ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
মরিন সামারহেসের কণ্ঠস্বর গেল শোনা।
-জানি, তুমি পেছনের দরজাটা আবার খুলে রেখেছে। দেখছ না, ঢুকে যাবে মুরগীগুলো।
হতাশভাবে পোয়ারো বললেন, আমাকে সাত গিনি করে খরচ করতে হবে এই চমৎকার পরিবেশের জন্য।
দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল দরজাটা। মুরগীগুলোর বিশ্রী চিৎকার দূর থেকে জানলা দিয়ে ভেসে আসছিল। মরিন দরজা খুলে আবার ঘরে ঢুকলেন।
-ওমা, দেখছি এখানেই বটি আর ছুরি ফেলে গেছি। আমার ভুলো মন। মঁসিয়ে, বীনগুলো এখানে বসে কাটলে আপনার কি আপত্তি হবে? আঁশটে গন্ধ রান্নাঘরের আমি আবার মোটে পারি না সহ্য করতে।
–না না মাদাম, খুব খুশী হব আমি।
এটা যদিও পোয়ারোর মনের কথা নয় কিন্তু পৌঁছনোর ২৪ ঘন্টা বাদে এই প্রথম একজনের সাথে কথা বলতে পেরে যেন বাঁচলেন উনি।
একটা চেয়ারে ধপাস করে বসে তরকারি কুচোতে লাগলেন ভদ্রমহিলা। বললেন। মনে হয় আমার আপনার খুবই অসুবিধে হচ্ছে এখানে। আসবাব বা অন্য কিছু যদি বদলাতে চান তবে নিশ্চয়ই বলবেন। আর একটু হলেই পোয়ারো বলে ফেলছিলেন যে সম্ভব হলে এই গৃহকত্রীটিকেই তিনি বদলাতে চান। মনের ভাব গোপন করে তিনি বললেন, না না, কোনো অসুবিধে হচ্ছে না। আপনাকে ঘরের কাজে সাহায্য করবার মত যদি কাউকে যোগাড় করে দিতে পারতাম তা হলে নিজেরই ভালো লাগতো।
-হায়রে, তেমন আর কোথায় পাওয়া যাবে। কপালটাই আমাদের মন্দ। গৃহস্থালির কাজকর্ম যিনি আমাদের করতেন হঠাৎ তিনি খুন হয়েছেন।
মিসেস ম্যাগিনটি? মহিলার মুখের কথা পোয়ারো প্রায় লুফে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন।
–হ্যাঁ, আমি ওঁকে খুব পছন্দ করতাম। ওঁকে ছাড়া আমার কাজ চালাতে খুব অসুবিধে হচ্ছে। হঠাৎ ওরকম একটা ঘটনায় তো শুরু হয়ে গেল দারুণ তোলপাড়। নেহাতই আমাদের কপাল খারাপ। ওঁর অভাবে আমাদেরই লোকসান।
-তা হলে ওঁকে আপনি পছন্দ করতেন?
–অত্যন্ত বিশ্বাসী ছিলেন উনি। কাজকর্ম করতেন ঘড়ির কাঁটা ধরে। যাকে এখন পেয়েছি তিনি সংসারী মানুষ। পাঁচটি ছেলেপুলে আর স্বামীর ঝামেলা সামলিয়ে তার আর এখানে বিশেষ সময় দেওয়া চলে না আমার। কিন্তু সেসব বালাই ছিল না ঐ ভদ্রমহিলার।
-উনি কি সব সময়ই বিশ্বাসযোগ্য ছিলেন।
-হ্যাঁ, ওর একটুও হাতটান ছিল না। তবে সামান্য কৌতূহলপ্রবণ মহিলা ছিলেন। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। একঘেয়ে জীবন ছিল তো।
–সত্যিই কি কোনো বৈচিত্র্য ছিল না ওর জীবনে?
–একেবারেই না। প্রতিদিন ভোরে ওরকম পাহাড় প্রমাণ কাজ করতে হলে আমার তো বেঁচে থাকার ইচ্ছেই লোপ পেয়ে যেত।
জানলা দিয়ে মেজর সামারহেস উঁকি মারলেন। মরিন তাঁর দিকে এক লাফে ছুটে গিয়ে হাট করে জানলাটা খুলে দিলেন। তাড়াহুড়োর চোটে কোঁটা তরকারি ছড়িয়ে পড়ল এদিক ওদিক।
-মরিন, হতচ্ছাড়া কুকুরটা আবার খেয়ে ফেলেছে মুরগীগুলোর খাবার।
সর্বনাশ ওর যে অসুখ করবে। তার সবজির ঝুড়ি দেখলেন জন সামারহেস। মরিন খুশী হল না শাকের পরিমাণ দেখে। সেদিন মাছ তখনো আসেনি। থাকতে হবে টিনের মাছের ভরসায়। স্বামী-স্ত্রী এসব চিন্তায় ত্রস্তপদে চলে গেলেন সেখান থেকে।
উঠে গিয়ে পোয়ারো জানলা দিলেন বন্ধ করে। স্বামী-স্ত্রীর কথা ভেসে আসছিল দূর থেকে।
-আচ্ছা মরিন, কি খবর আগুন্তুক ভদ্রলোকের? আমার ওঁকে যেন কেমন কেমন মনে হচ্ছে। নতুন এই অতিথিটির নাম কি গো?
–মিঃ এরকুল পোয়ারো। ফরাসী উনি।
–যেন শোনা শোনা মনে হচ্ছে নামটা।
–বোধহয় ভদ্রলোক কোনো চালের দোকানে কাজ করেন, চেহারাটা ওর রকমই। মুখ কুঁচকোলেন পোয়ারো।
–না না। বোধহয় আচারের দোকানে। ঠিক ধরতে পারছি না তবে চেনা লাগছে, বাপু সপ্তাহের পুরো টাকাটা আদায় করে রেখো। আর ওঁদের কথা শোনা গেল না।
ছড়িয়ে পড়া কোটা বীনগুলো পোয়ারো কুড়োতে লাগলেন। মরিন ঘরে ঢোকা মাত্র তিনি সেগুলো তার দিকে এগিয়ে দিলেন।
–অসংখ্য ধন্যবাদ। মনে হচ্ছে এগুলো খারাপ হয়ে গেছে, আর চলবে না।
–অনুমতি যদি করেন তো লাগিয়ে দিই দরজাটা। বাতাস আসছে।
-মিঃ পোয়ারো কেবলই দরজা বন্ধ করতে ভুলে যাই। প্রথমে এখানে আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ী থাকতেন। তারা কখনো বাড়িটা মেরামত করাননি। অবশ্য তাদের সে সঙ্গতি ছিল না। এখন বাড়িটার অবস্থা ঝরঝরে। যখন এখানে ভারতবর্ষ থেকে এলাম, সাধ্যে আমাদেরও কুলোয়নি যে এটা মেরামত করি। তবে যখন ছেলে মেয়েরা ছুটিতে আসে ফুর্তিতে কাটিয়ে যায় অঢেল জায়গা পেয়ে। বাগানও আছে। পেয়িংগেস্ট রেখে বাকি জায়গায় ভালোভাবেই কুলিয়ে যায় আমাদের।
–আমিই বোধ হয় বর্তমানে একমাত্র অতিথি আপনাদের?
-না, একজন বৃদ্ধা আছেন ওপরে। যেদিন উনি এখানে আসেন প্রথম, সেদিন থেকেই ওপরে। ভীষণ অসুখ নাকি যদিও তা আমি কিছুই বুঝি না। সব অসুখ সেরে যায় খাবার সময়। খাবার চার বেলা পৌঁছে দেওয়াই আমার কাজ। শুনছি এক ভাগনি বা অন্য কারো কাছে উনি কালই চলে যাবেন।
একটু থেমে কিন্তু কিন্তু ভাব করে আবার বললেন, আচ্ছা আজ কি আপনার ভাড়াটা দেবেন, এখন আবার আমার একটু অসুবিধে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই সপ্তাহখানেক থাকছেন।
–সম্ভবত বেশিদিন।
সাতগিনি দিয়ে দিলেন পোয়ারো, তাকে ধন্যবাদ জানাতে বললেন মরিন, আমার পরিচয় দিচ্ছি আপনাকে আমি এরকুল পোয়ারো।
কোনো ঔৎসুক্য দেখালেন না মরিন। বললেন, সুন্দর নাম। এটা তো গ্রীক নাম, তাই না?
আঙুল নিজের বুকে ঠেকিয়ে পোয়ারো বললেন, একজন ডিটেকটিভ আমি, বোধ হয় দুর্বলশ্রেষ্ঠ।
বিস্ময়ে আর আনন্দে মরিন চিৎকার করে উঠলেন। বেশ মজার মানুষ তো আপনি। কিসের অনুসন্ধান করছেন–সিগারেটের ছাই না পায়ের চিহ্ন?
দেখুন কোনো মজার ব্যাপার নয় এটি। আমি এখানে এসেছি মিসেস ম্যাগিনটির হত্যার তদন্তে।
উঃ কেটে গেল হাতটা। মরিন চোখের সামনে আঙুল তুলে পরীক্ষা করলেন। তারপর বললেন, একথা কি সত্যি? কিন্তু এখন তো শেষ হয়ে গেছে সব। বেচারী পেয়িংগেস্ট ধরাও পড়েছে, বিচারও শেষ। ওর তো শুনছি ফাঁসি হবে বলে। হয়তো হয়েও গেছে এতদিনে।
-না মাদাম, এখনো হয়নি। আর সব শেষ হয়ে যায়নি।
রহস্যের যবনিকা পতন হয় সত্য উদঘাটনেই–কাজেই এখনই নিষ্পত্তি হতে পারে না ম্যাগিনটি হত্যা মামলার।
-ও।
হঠাৎ মরিন তার কোলের ওপর রাখা তরকারির বটির দিকে কেমন মনোযোগ দিলেন।
-ইস, আঙুলের রক্ত লেগে গেল দেখছি বীনগুলোর মধ্যে। যাকগে, সেদ্ধ করলে খাওয়া চলবে, কি বলেন কোনো ভয় নেই সেদ্ধ হলে তাই না? আপনার টিনের খাবারও তো চলবে?
–আমি আজ লাঞ্চের সময় থাকব না।
.
০৫.
মনে হয় না আমার আপনাকে আমি নতুন কিছু খবর দিতে পারব।–মিসেস বার্চ বললেন। মিঃ পোয়ারো বিদেশী দেখে তিনি স্বভাবতই একটু যেন ক্ষুণ্ণ।
নিহত হয়েছেন আমার পিসীমা, খবই দুঃখের ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমার শ্বাশুড়ী তো খুবই বিরক্ত। কথা শোনাচ্ছেন সর্বদাই এরকম বিশ্রী ঘটনা ওর পরিবারে কখনো ঘটেনি। অথচ একবার ভাবুন তো আমার দিকটা? নিজের পিসী তো বটে। যাক গে আমার মনে হয় শেষ হয়ে গেছে ব্যাপারটা।
-কিন্তু জেমস বেন্টলী যদি নির্দোষ হয়?
-না না, তা হয় কি করে? ওকে তো আমার কখনো সুবিধের মনে হত না। কেমন কেমন। পিসীকে অনেক আগেই বলেছিলাম ওকে বাড়িছাড়া করতে। নিজের মনে বিড়বিড় করত। কেন যে পিসী থাকতে দিয়েছিল। ও নাকি মোটেও ঝামেলা করে না। মদ সিগারেটের নেশা নেই। এখন পিসীর আত্মাই জানছে কেমন ও।
চিন্তিতভাবে পোয়ারো তাকালেন মহিলাটির দিকে। বেশ ছিমছাম উনি। বাড়িটা বেশ পরিষ্কার, সুগৃহিণী ভদ্রমহিলা বোঝা যায়। একটু খুঁতখুঁতে তবে কারও মাথাটায় উনি কখনো আঘাত করে হত্যা করতে পারবেন না এ বিষয়ে স্বামীকে প্ররোচিত করতে পারেন ভাবতেও অসুবিধা হচ্ছে। এদের অতীত জীবন খুঁটিয়ে দেখেছেন মিঃ স্পেন্স। এদের দিক থেকে হত্যা করার কোনো সঙ্গত কারণ নেই বলে মনে হয়েছে তাঁর। মিসেস বেমি বার্চ সম্বন্ধে পোয়ারো মোটামুটি একটা ধারণা করে নিচ্ছিলেন। সম্পর্ক ভালোই ছিল পিসী ভাইঝির মধ্যে, বেমি জানেন যে পিসীর মৃত্যুর পর তিনিই পাবেন পিসীর সঞ্চিত অর্থ, কিন্তু তিনি সেজন্য মোটেই ব্যস্ত নন।
পোয়ারো প্রসঙ্গ পালটিয়ে নিহত মহিলার স্বাস্থ্য এবং স্বভাব সম্পর্কে জানতে চাইলেন খুঁটিনাটি। কাজে নাও লাগতে পারে এসব তথ্য তবু খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজার চেষ্টা চালালেন। তিনি।
কথায় কথায় বোঝা গেল পিসীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ তাদের বিশেষ ছিল না। মাঝে মধ্যে এক আধবার যাতায়াত হত এই পর্যন্ত এবং বড়দিনে উপহার বিনিময়। যেটুকু পারিবারিক সম্পর্ক থাকার সেটুকুই ছিল। উনি জানতেন পিসীর মৃত্যুর পর তার সঞ্চিত অর্থ তাকেই বর্তাবে তবে তিনি আগ্রহী নন তার জন্য। বুনতে ভালোবাসতেন পিসী। কুকুর পছন্দ করতেন না তবে একটা বেড়াল ছিল তার। তিনি কয়েকটা বাড়িতে টুকটাক গৃহস্থালীর কাজ করতেন।
পোয়ারো জিজ্ঞাসা করলেন, সামারহেসদের বাড়িতে?
-হ্যাঁ, তিনি ওখানেও দুদিন যেতেন সপ্তাহে। ওরা চলে এসেছেন ভারতবর্ষ থেকে। এখানে সাহায্য করবার মত ওঁদের কাজের লোক ছিল না। ছেলেমেয়েরা বাড়িতে থাকলে একেবারে হুলুস্থুলু বাধায় তারা। তবু আমার পিসী মিসেস সামারহেসকে পছন্দ করতেন। খুব পরিষ্কার ছিলেন পিসী। কাচ্চাবাচ্চা ভালোবাসতেন।
গীর্জায় যেতেন প্রতি রবিবার। মাঝে মাঝে সিনেমাতেও যেতেন, ঔৎসুক্য ছিল চিত্রতারকাদের সম্বন্ধে। এক শিল্পী আর তার স্ত্রীকে এড়িয়ে চলতেন তিনি যখন জানতে পারলেন যে সামাজিক বিবাহ তাদের হয়নি। রবিবারের কাগজ পুরোনো পত্রিকা সংগ্রহ করে পড়তে ভালোবাসতেন। নিজে বিশেষ খরচ করতেন না পোশাকের জন্য। প্রচুর পাওয়া জামা কাপড়ও ছিল আর বাতিক ছিল তা জমিয়ে রাখা।
পোয়ারো বুঝতে পারলেন যে সত্যিই সব কথা। তার মৃতার সম্বন্ধে সত্যিই এরকমই একটা ধারণা হয়েছিল। উঠতে যাবেন তিনি ঠিক এমন সময় মিঃ বাৰ্চ বাড়ি ফিরলেন। ঘরের ভেতরে এলেন একটু অপ্রস্তুত ভাবে।
মানুষটি ছোটোখাটো। ব্যাপার শুনে ওকে ওর স্ত্রীর মত মনে হল না অতটা বিচলিত। পুলিশকে সাহায্য করতে তিনি যেন বেশি আগ্রহ দেখালেন। সেটা মিঃ স্পেন্সের চিঠি দেখেও হতে পারে। কিন্তু ওর মধ্যে কোথায় যেন একটু অস্বস্তির ভাব আছে বলে মনে হচ্ছে। সেটা অন্য কোনো কারণেও থাকতে পারে। এমন হতে পারে সিনেমায় যাবার অ্যালিবাই সাজানো। হল থেকে কোনো এক ফাঁকে বেরিয়ে এসে কাজ সেরে গেছেন। মিসেস ম্যাগিনটি দরজা খুলে দিয়েছেন। হত্যা করার পর সব ব্যাপারটাকে যাতে নিছক ডাকাতি বলে মনে হয়, হয়তো এমনভাবে সাজানো ওরই কাজ। ধারালো ভারী অস্ত্রটি কিন্তু ঘটনাস্থল বা আশেপাশের ঝোঁপঝাড়, পুকুরের মধ্যে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু কেন? হত্যার ছাপ বা চিহ্ন না রেখেও তো খুন করা যায়। কেন খুঁজে পাওয়া গেল না অস্ত্রটা? তবে কি জো বার্চ লুকিয়ে রেখেছেন সেটা?
নিঃসন্দেহ নন পোয়ারো কিন্তু মনের কোণায় তবুও সন্দেহে যেন উঁকি মারছে। ঠিক মাংস কুচোবার ছুরি ওই ধরনের হবে বলে মনে হয় না। তার থেকে সামান্য অন্যরকম এবং ওটা কার হতে পারে ওই বিশেষত্বটুকুই বুঝিয়ে দেবে।
ওই ধরনের বেন্টলীর কিছু ছিল বলে খবর নেই। এটা বেন্টলীর নির্দেশিত তার পক্ষে যাবার মত একটা খুব ছোট যুক্তি। বিরুদ্ধে যাওয়া অন্যান্য সব সাক্ষ্য প্রমাণের মত ততটা ভারী ওজন না হলেও এটা নিঃসন্দেহে তার পক্ষে যাবে। পোয়ারো তার অভ্যস্ত চতুর চোখ দ্রুত বৈঠকখানার সর্বত্র বুলিয়ে নিলেন।