১. বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা

জাস্ট অ্যানাদার সাকার

জুলাই মাস। সকাল থেকেই বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা পড়ছে। কয়েদখানার ঘড়িতে ঢং ঢং করে আটটা বাজল। লোহার ফটক পার হয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালাম।

বাইরে এসে মুক্তির আনন্দে সব সুন্দর দেখলাম যেন। কয়েদীদের বাড়িতে দিয়ে আসার জন্য সরকারি বাসটা এক কোণে দাঁড়ানো। কিন্তু আমি এই মুহূর্তে যাবো না বাড়িতে। সাড়ে তিন বছর পর স্বাধীনতার আনন্দে আমি দিশাহারা, উন্মত্ত।

এমন সময় পাশ থেকে একজন ডাকলো আমাকে, হ্যারি। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি ওদিকের বুইকে রেনিক আমাকে হেসে ভিতরে ডাকল। আমি দ্বিধাবোধ করেও গাড়িতে উঠলাম।

রেনিক তার হাত দিয়ে আমার ডান হাত চেপে ধরলো। মৃদু স্বরে আস্তে করে বলল এখন কিরকম লাগছে?

ভাল–কিন্তু তুমি এখানে! পুলিশের বড়কর্তা কি পাঠিয়েছেন?

মাথা নেড়ে রেনিক বলল, না সরকারী কাজে না, নিজের গরজেই এলাম।

যাক, গাড়িটা তো একদম নতুনকার গাড়ি? তোমার?

হ্যাঁ, মাস দুয়েক হলো কিনেছি।

 তাহলে রোজগার ভালই হচ্ছে তোমার?

রেনিক শ্লেষের সাথে বলল বছর দুই হল বড়কর্তার স্পেশাল অফিসার হয়েছি।

আমি লজ্জা পেয়ে ছি ছি বললাম। গিয়ার পালটালো এবং অ্যাকসিলারেটরে চাপ দিয়ে বলল রেনিক–পুলিশ বিভাগে এখন অনেক রদবদল হয়েছে। নতুন বড়কর্তা মিডোজ খুব ভালো লোক।…তা এখন কি ঠিক করলে?

কিছুতো করতেই হবে, কাগজের অফিসের চাকরিটাও নেই।

হু, প্রথম প্রথম অসুবিধা তোমার হবেই।

আর উপায় কি? পুলিশ খুনের শাস্তি সোজা কথা না।

হ্যাঁ, সংবাদপত্র জগতে কিউবিট একজন কেউকেটা লোক তার নেকনজরে যখন পড়েছ, শত। চেষ্টাতেও কাগজে চাকরি আর হবে না তোমার।

হ্যারি বিরক্ত হয়ে বলল, সে যা করার করব। স্ত্রী লিনার প্রতিও কর্তব্য আছে। খানিক সময় চুপচাপ চলল। রাস্তায় মানুষ কম।

স্পীড বাড়িয়ে রেনিক বলল, হ্যারি পুলিশে চাকরি করলেও বিশ বছরের বন্ধুত্বে চির খাবে না। নতুন বড়কর্তাকে তোমার কথা বলেছি। তিনি দেখবেন বলেছেন।

আমি অবাক হয়ে বললাম, পুলিশে চাকরি? মরে গেলেও করব না।

তোমার বৌ নিনার কথা ভাব?

কষ্ট তো আমারও হয়েছে।

 রেনিক বলল–বেশ তোমার চাকরি খোঁজা যদি সাহায্য মনে কর, তাহলে কিছু বলবো না।

 দেখ, এই সাড়ে তিন বছর আমিও কম কষ্ট করিনি। অন্যায় ন্যায় এসব নিয়ে মাথা ঘামাই না। ওঃ, সাড়ে তিন বছরে। কিভাবে কেটেছে… নিনার ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দাও।

রেনিক বলল-ফুলের মতো নিষ্পাপ একটা মেয়ে–একখানা চিঠিও লিখলে না। তিন বছর, এক দিনের জন্যও জেলে দেখা করতে গিয়েও তোমার দেখা পেলো না। অথচ এমন দেখালে তুমি, যেন সে একটা বাইরের মেয়ে।

হ্যাঁ বাইরের মেয়ে…তুমি ভাবতে পারোনিনাকে লিখবো আমি চিঠি, তা পড়বে ওয়ার্ডার। তুমি ভাবতে পারো-সেই বালিকা ধর্ষণকারী শয়তানটা নিনাকে দেখে বাজে ইঙ্গিত করবে।

তবুও এরই মধ্যে প্রতিটি স্ত্রী স্বামীর সঙ্গ পেয়ে শান্তি পায়। এসব প্রতিকূলতা সব সমাজেই আছে।

আমি চুপচাপ থাকলাম। ডানদিকে সমুদ্র, শহর দূরে, বালিয়াড়ির এপাশে সারবন্দী অনেক কেবিন। বেশ খালি পড়ে আছে। দলবল নিয়ে আসে স্নানার্থীরা। এই কেবিনগুলো ছিল আমার প্রধান কর্মক্ষেত্র। ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে নামী কাগজ হেরাল্ড, আমি তার সাংবাদিক। সারা শহর জুড়ে খবর খুঁজে বেড়াতে হয়। বিয়ে করেছি ধুমধাম করে। গাড়ি, বাড়ি দুই-ই করেছি। হঠাৎ সেই বিভীষিকার রাত।

বীচ হোটেলের পানশালায় বসে আছিহুইস্কির গেলাস নিয়ে। হাতের সিগারেট পুড়ে চলেছে। খবর চাই আমার। পাশের টেবিলে বসে আছে অচেনা দুজন ব্যক্তি। সমানে পান করে চলেছে। তারা দুজনে কি আলোচনা করছে।

যেই কথাগুলো কানে গেল অমনি মনে হল এ তো খবরের মত খবর।শিকাগোর এক কুখ্যাত গুণ্ডাবাহিনী এই শহর দখল করার তালে আছে। জুয়ার আড্ডা থেকে শুরু করে তারা কিছুই বাদ রাখবে না। এই শহর থেকেই তারা মাসকাবারে আয় করবে পঁচিশ লক্ষ ডলার।

লোকগুলো পাগল নয় তো। পাম সিটির মত শহর দখল করা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু না, কথা শুনে বুঝলাম তারা পুলিশ বিভাগ, স্বায়ত্ত শাসন বিভাগের বড় বড় কর্মকর্তাদের হাত করেছে। এত বড় কাণ্ড হতে চলেছে বসে থাকলাম না। নিজের চেষ্টায় তদন্ত চালালাম। কষ্ট হলেও কিছু কিছু প্রমাণ পেলাম। ছাপানোর আগে হেরাল্ডের মালিক মিঃ ম্যাথু কিউবিটের সাথে আলোচনা করলাম।

কিন্তু ম্যাথু নিষ্প্রভ, কোন ভাবান্তর দেখা দিল না তার মুখে। স্বয়ং তিনিই যে সেই দলে আছেন, তা যদি একটু টের পেতাম।

উনি বললেন কাগজপত্র সব এনে দেখাও। ছুটলাম বাড়িতে, রাস্তায় পুলিশ আমাকে পথরোধ করলো। পুলিশের বড়সাহেব আমাকে দেখা করতে বলেছেন। থানায় গেলে পর তিনি আমাকে মস্ত এক নোটের তাড়া দিয়ে বললেন টাকার বিনিময়ে আমার তদন্ত সংক্রান্ত কাগজপত্র তিনি কিনতে চান।

ঘুষ! না, টাকার বান্ডিল না নিয়ে উঠে পড়লাম। বাড়ি থেকে কাগজপত্র এনে দিলাম ম্যাথুর হাতে। তিনি বললে, রাত সাড়ে দশটায় আমি যেন তার বাড়িতে যাই। শুনে নিনাও ভয় পেল। দশটার একটু আগে নিনাকে নিয়ে বেরোলাম। রাস্তা ফাঁকা, মিনিট পনেরো আর বাকি, এমন সময় তীরবেগে একটা পুলিশের গাড়ি আমার গাড়িতে মারল ধাক্কা। ভাগ্য ভাল, কিছু হলনা। সজোরে ব্রেক কষলাম।

পুলিশের গাড়ি ততক্ষণে দাঁড়িয়ে পড়েছে। গাড়ির ড্রাইভার আহত। সঙ্গী লোকটি আমার হাতে চটপট এসে হাতকড়া পরালো। অপরাধ অসতর্কভাবে গাড়ি চালানো।

ঘটনার আকস্মিকতায় আমি যোবা; এমন সময় আর একটি জীপ এল। নামলেন সার্জেন্ট বেইলিস। তিনি যেন আগে থেকেই জানতেন সব। আমাকে নিয়ে তিনি গাড়িতে তুলে থানার দিকে চললেন। মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে সার্জেন্ট আমাকে নামতে বললেন। গাড়ির ড্রাইভার শক্ত হাতে পিছমোড়া করে ধরলো আমার হাত। পকেট থেকে হুইস্কির বোতলের পানীয়টুকু আমার শরীরে ছিটিয়ে দিলেন। বন্দুকের বাঁট দিয়ে আমার মাথায় মারলেন।

 জ্ঞান ফিরলো জেলে। শুনলাম সেই ড্রাইভার নাকি মারা গেছে। এই অপরাধে সাড়ে তিন বছর জেল হল। উকিল প্রাণপণ লড়াই করেছে আমার জন্য, পারেনি। ম্যাথুআমার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। আমার নামে কুৎসা রটাতেও তার দ্বিধা হলনা। আমার উকিলের চাপে পড়ে আদালত তদন্তকমিশন বসালেন। তদন্তে আমার আবিষ্কার খাঁটি এবং নির্ভুল বলে প্রমাণিত হল। পুলিশের বড়কর্তা পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন।

আজ আমি মুক্ত। যদিও চাকরি পাবার সামান্য আশাও আমার নেই। যা আয় করেছি, দুহাতে উড়িয়েছি। নিনার জন্য কিছুই করতে পারিনি। ও কেমন আছে কে জানে। রেনিককে জিজ্ঞাসা করলাম ও ভালো তো!

হ্যাঁ, তোমার জেলে যাবার পর ও কাজে নেমেছে।

গাড়ি থামলো বাড়ির সামনে। নামলাম সেই পরিচিত ঘাস কাকরে ছাওয়া পথ। ছবির মতো সুন্দর বাংলো। ধীরে ধীরে পা বাড়ালাম বাড়ির দিকে। সদর দরজা খুলে নিনা জলভরা চোখে দাঁড়িয়ে রইল।

ঘুম ভেঙে দেখি ভোর হয়ে আসছে।নিনা নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে আমার পাশে। কি করবো, কোথায় যাবো। নিনাকে পাশে রেখে সিলিং-এর দিকে তাকালাম। রোজগার করতেই হবে যে করে হোক। ম্যাথুর মিথ্যা রিপোর্টের জন্য ছোট খাট সংবাদপত্রগুলো আমাকে দেখলে শিউরে ওঠে। আমাকে অন্য পথ দেখতে হবে।

নিনার দিকে তাকালাম। জেলে যাবার সময় নিনার বয়স মাত্র বাইশ, আমার সাতাশ।

আহা, বেচারী কি কষ্টই না করেছে। মুখে মলিনতার ছাপ। রোগাও হয়েছে। নিরুপায় হয়ে তাকে কাজ করতে হয়েছে। শত অসুবিধা সত্ত্বেও নিনা ব্যাঙ্কের আড়াইশ ডলার তোলেনি। সাত আট দিন নানা কথা ভাবতে ভাবতে দিন গেল।

গতকাল বিজ্ঞাপন দেখে এক অফিসে গেলাম। অফিসের বড়কর্তা আমাকে দেখে অবাক–আমি যে সুপরিচিত তা বুঝলাম। তিনি বললেন, এ কাজ আপনার জন্য নয়।

নিনার ডাকে চেতনা ফিরল। বললাম, না কিছু না।

আমার কাছে গোপন কোরো না। সাত পাঁচ ভেবে কোনো লাভ নেই। দেখো আমি ঠিক। চালিয়ে নিতে পারব। আমি তুমি কি আলাদা। তোমার যতটা দায়িত্ব আমারও তোততটাই।বলতে বলতে নিনার গলা ধরে এল।

দুহাতে কাছে টেনে নিলাম।-জেলে থেকে আমি আর আমি নেই। নিনা।

সারা শহরে কাজ নেই আমার জন্য তবুও পথে পথে ঘোরা। মদ খেয়ে সবকিছু ভুলে থাকি। আগেও খেতাম, এখন পরিমাণ বেড়েছে। হা মিথ্যা কথাও বলা শুরু করলাম নিনার কাছে। নিনার চোখে আমার অপদার্থতা প্রমাণ না করার ওটা একটা কৌশল মাত্র। কিন্তু আস্তে আস্তে নিনা ধরতে পারতো ঠিক। তবু কখনো কিছু বলতো না। আমার প্রতিটি কথা শুনতো, সমবেদনা জানাতো। আগ বাড়িয়ে পকেট খরচা দিত।

ভীষণ ভুল করত নিনা।

একদিন সমুদ্রের ছোঁয়া বাঁচিয়ে এক পানশালায় বসেছি। প্রায় সন্ধে তখন। তাকিয়ে আছি সামনের ফোন-খুপরির দিকে। নানা কথা ভাবছি, কখনো আত্মহত্যার কথাও–এমন সময় দরজা ঠেলে একটি মেয়ে ঢুকল।

পরণে সাদা স্ন্যাক্স, ওপরে সবুজ রঙের টাইট সসায়েটার। চোখে রোদ চশমা। শরীরে ঢেউ তুলে ফোনের দিকে গেল। বয়েস বছর তেত্রিশ তো হবেই। মাথা ঘুরিয়ে দেরার মত চেহারা। কিছুক্ষণ বাদে ফোন রেখে যে পথে এসেছিল সেই পথেই চলে গেল। কে এই মেয়েটা? হাতের হাতব্যাগটার কথা চিন্তা করলাম। ব্যাগটি নামিয়ে রেখে সে ফোন করছিল। কিন্তু বেরোবার সময় তো ব্যাগটা দেখিনি।

আমি উঠে দাঁড়ালাম। সমস্ত শরীরে শিহরণ খেলে গেলো। দরজা ঠেলে ঢুকে থমকে গেলাম। ব্যাগটা হাতে নিয়ে দেখি কি তার পরিচয়! দেখাই যাক, কি আছে ব্যাগে। চারিদিক একবার দেখে নিলাম।

সোনার সিগারেট কেস, সোনার লাইটার। একতাড়া নোটের বান্ডিল, ঘেমে গেলাম। কি করা উচিত।

উঃ, এতগুলো টাকা। আর নিনার কাছে হাত পাততে হবে না। সাতরকম ভাবনা এল। কত লোক আসছে, যাচ্ছে। আমিই যে নিয়েছি এমন কোনো প্রমাণ নেই। নিলাম, টাকাটা পকেটে পুরতে যাব, চোখ পড়ল সামনের ছোট আয়নার দিকে।

ঠিক আমার পেছনে মেয়েটি দাঁড়ানো। তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

 বলাবাহুল্য আমি অবাক। যেন মুহূর্তের জন্য মৃত্যু এসে আমার শিয়রে দাঁড়িয়েছে।

দরজায় মৃদু টোকা পড়ল। আলগোছে ব্যাগটা ফেলে দিলাম। একটানে দরজা খুললাম। চোখাচোখি হতে সে মৃদু হেসে বলল। আমার ব্যাগটা বোধহয় এখানেই ফেলে গেছি।

হ্যাঁ, ভাবছিলাম বেয়ারার জিম্মায় জমা দিয়ে যাব।

মাত্র দু পা এগিয়েছি, অমনি বেয়ারা এসে আটকালো।

আমাকে বলল, কি ইয়ার, গোলমালের ধান্দায় ছিলে নাকি?

সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি এগিয়ে এসে বলল, ছি ছি, গোলমাল কেন করবেন, উনি তোমার কাছে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। আমি আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

তবু ব্যাগটা একবার দেখে নিন। মেয়েটি বেয়ারার অনুরোধে অনিচ্ছায় ব্যাগটা পরীক্ষা করতে লাগলো। বুকের মধ্যে আমার হাতুড়ি পেটা শুরু হয়েছে। ভাবছি বেয়ারাকে ধাক্কা মেরে ছুটে চলে যাই।

তখনি সে মাথা নেড়ে বলল, না, সব ঠিক আছে। আমাকে বলল ধন্যবাদ আপনি না থাকলে ব্যাগটা আমার খোয়া যেতো। বেয়ারা সরে গেল। আমার বিস্মিত চাউনি দেখে মেয়েটি হেসে বলল, যদি কিছু মনে না করেন। একটু ড্রিঙ্কস দিতে বলি। প্লিজ, আপত্তি করবেন না মিঃ হ্যারি।

বাঃ মেয়েটি দেখি আমার নামও জানে। আসলে জেল থেকে ছাড়া পাবার পরদিন হেরাল্ড কাগজে আমার একটা ছবি ওরা ছাপিয়েছে। যাবতীয় তথ্য দিয়ে ঘটনা বিকৃত করে কিউবিট ছাপিয়েছে।

দুজনে চেয়ার টেনে বসলাম।ব্যাগ খুলে সোনার সিগারেট কেসটি বের করে বলল, সিগারেট?

একটা তুলে নিলাম, সোনার লাইটার টিপে ধরিয়ে দিলো, নিজেও একটা ধরালো।

তারপর জেল থেকে বেরিয়ে কেমন লাগছে?

 ভালো।

খবরের কাগজের কাজটা ছাড়তেই হলো?

 হ্যাঁ।

কদিন ধরে রোজই এখানে আসতে দেখি আপনাকে। চাকরি বাকরি কিছু তো হয়নি, তাই না? আসলে চাকরির বাজার খুবই খারাপ এখন।

যা বলেছেন।

আচ্ছা, কেউ যদি আপনাকে কাজ দেয়, করবেন?

অবাক হয়ে বললাম, তার মানে কোন চাকরি আপনার খোঁজে আছে।

আছে, আপনি কি সে কাজ করতে পারবেন?

 কি কাজ?

তেমন কিছু না সাধারণ। সামান্য ঝুঁকি আছে।

কাজটা একটু বে-আইনী মনে হচ্ছে?

না, না, বে-আইনী না।

তবে ঝুঁকির প্রশ্ন আসছে কেন। না, না আমি আর এসব ঝামেলায় জড়াবো না।

 সে হাসলো-খান। এবার সোজাসুজি তাকে বললাম, বলুন তো কাজটা কি?

 বলব, সব বলব। নিরিবিলিতে। আপনার বাড়িতে ফোন আছে নিশ্চয়?

 আছে, গাইড নম্বরে পাবেন।

বেশ কাল বাড়ি আছেন তো।

 আছি। আজ উঠি, কত হলো বেয়ারা।

হেসে বললো ভুলে গিয়েছিলাম।

 আমি বললাম, আমি ভুলিনি, হাসতে হাসতে পকেট থেকে টাকার বান্ডিলটা বের করে দিলাম।

ধন্যবাদ বলে সেশরীরে ঢেউ তুলে হাত নেড়ে দরজার দিকে এগোল। গাড়িতে উঠল। আবছা আলোয় গাড়ির নাম্বারটি নজরে পড়লো।

রাস্তা পার হয়ে বাঁদিকে অটোমোবাইলে একটা ছোট্ট অফিস। এ মার্শাল প্রধান কর্মকর্তা। সাংবাদিক জীবনে বহুবার তার কাছে আসতে হয়েছে।

এড বই পড়ছিল, আমাকে দেখে বলল আরে, হ্যারি। কি খবর? কেমন আছ?

ভালোই, আটদিন হল জেল থেকে ছাড়া পেলাম।

সিগারেট অফার করতেই এড় বলল–ছেড়ে দিয়েছি সিগারেট। ক্যান্সার রোগটা বড় চিন্তায় ফেলেছে।

ভালো।

নানা কথায় দশ মিনিট কাটলো।

এবার আসল কথা পাড়লাম। আচ্ছা এড়, খয়েরী রঙের একখানা রোলনম্বরটা SAX।গাড়িটা কার?

মি: ম্যানরুক্সের।

তাই নাকি?

 গাড়ি বটে, পক্ষিরাজ।

 ম্যানরুক্স, মানে সেই প্যারিসের ফেলিক্স ম্যানরুক্স?

 হা। বছর দুয়েক হল এসেছে। বিরাট বাড়ি কিনেছে। উদ্দেশ্য স্বাস্থ্যোদ্ধার।

 আমি হতভম্ব।

 অর্থাৎ উনি হচ্ছেন সেই দস্তা আর তামার ব্যবসায় যিনি কোটিপতি।

হ্যাঁ বলেছি বছর খানেক হলো উনি কঠিন ব্যাধিতে পড়েছেন। ফুসফুসে ক্যান্সার।

 চিন্তিত হয়ে বললাম- এত টাকা পয়সা ভোগ করে যেতে পারবেন না?

না, আর বাড়িও কি বাড়ি। সমুদ্রের পুব পাড়ে ইরা ক্র্যানলের বিরাট বাড়িটা। নিজের মনের মত করে সাজিয়েছেন।

ইরা ক্র্যানলে আমারও চেনা। তেলের ব্যবসা থেকে বিরাট ধনী হয়েছিলেন। প্রাসাদের মত বাড়িটা বানিয়েছিলেন। তারপরই কি একটা গোলমালে পড়ে বাড়ি বিক্রির কথা ওঠে।

আচ্ছা, ভালো কথা, ঐ মেয়েটি কে? নীল চশমা পরে গাড়ি চালাচ্ছিল?

 ম্যানরুজের স্ত্রী।

সেকি! বয়েস তো বেশি না। বুড়োর বয়স তো সত্তর বাহাত্তর তো হবেই।

তাতে কি, টাকা থাকলে একশ বছরেও বউ জোটানো যায়। ইনি নতুন বউ। ফিল্মস্টার।

প্রথম বউ, তার খবর কি?

গাড়ির অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে।

তাহলে বুড়ো এসেছে স্বাস্থ্য ফেরাতে।

এসে উপায় কি? মেয়ে, বৌ বায়না ধরেছে এখানে থাকবে।

 মেয়ে আছে নাকি?

হ্যাঁ, প্রথম পক্ষের সন্তান। আঠারো বছর বয়স। পরীর মত দেখতে। তা ওদের ব্যাপারে এত আগ্রহ, কি ব্যাপার?

কিছু না, গাড়ি, বউ দেখলাম। তাই জানতে এলাম, ব্যস।

ফেরার পথে সারাটা পথ ভাবতে ভাবতে এলাম। আগামীকাল সে ফোন করবে।

বীচ রোডে বাস থামলো। শিস দিতে দিতে বাড়ি ঢুকলাম।

পরদিন সকাল নটা নাগাদ হেরাল্ডের অফিসে গেলাম। রেফারেন্স রুমে গত দুবছরের কাগজের ফাইল নিয়ে বসলাম। খুব একটা খুঁজতে হলো না। এমন এক দুনিয়া তোলপারকারী খবর, প্রথম পাতাতেই স্থান পেয়েছে। রিয়া প্যারিসের এক শশা গার্ল। প্রৌঢ় ম্যানরুক্সকে বিয়ে করেছে তার অগাধ সম্পত্তির জন্য। নিনা বেরিয়ে গেছে কাজে। বাড়িতে ফিরে শুরু হল অপেক্ষা। ঠিক এগারোটার সময় ফোন এল। রিসিভার তুললাম- হ্যালো।

মি: হ্যারি? সেই তীক্ষ্ণ গলা।

হ্যাঁ, বলুন।

কাল আমাদের দেখা হয়েছিলো।

 মনে আছে মিসেস ম্যানরুক্স

আমি তার নামটা জেনে যাব, সে আশা করেনি।

সমুদ্রের পুবদিকে একবার কেবিনের মধ্যে বাঁদিকের একটা কেবিন ভাড়া নিতে হবে আপনাকে। রাত নটায় দেখা করবো সেখানে।

বেশ ঠিক আছে।

তাহলে ঐ কথাটাই রইল বলে সে ফোন নামাল।

কি চায় মিসেস ম্যানরুক্স! বেরোলাম, পুব পাড়ের কেবিনের তত্ত্বাবধায়ক বিল হোল্ডনের কাছে গেলাম সাড়ে এগারোটায়। নারী পুরুষ সবাই স্নান করতে নেমেছে।

বিল আমাকে দেখে হেসে বলল, কতদিন পর দেখা হলো আপনার সঙ্গে, বসুন।

বাঁ দিকের শেষ কেবিনটা আজ রাত্রে আমার দরকার। নটা নাগাদ আসবো।

কিন্তু আটটার পর অফিস ভোলা রাখি না। সন্ধ্যের সময় চাবিটা যদি নিয়ে যান।

কি দরকার? আপনি বারান্দার কার্পেটের নীচে রেখে যাবেন। আমি খুঁজে নেব।

বিল ঠিক আছে, ঠিক আছে বলে বকবকানি শুরু করল। কথায় কথা বাড়ে। সময় নষ্ট করার সময় আমার নেই। আমি উঠে পড়লাম।

বাড়ি ফিরে নিনাকে কি বলবো? ভেবে ভেবে উপায় একটা বাতলালাম। রাত জেগে এড় মার্শালের সঙ্গে গাড়ি গুণতে হবে।

নিনা আমার কাজের কথা শুনে খুশীতে ডগমগ হয়ে উঠলো।

রাত সাড়ে আটটা নাগাদ–গ্যারেজে গিয়ে প্যাকার্ডখানা বের করলাম। হাত নেড়ে নিনাকে শুভরাত্রি জানিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলাম।

প্রায় নটা নাগাদ পৌঁছলাম। খাঁ খাঁ করছে চারিদিক। কার্পেটের নীচে ঘরের চাবি পাওয়া গেল।

বেশ বড়ই কেবিন। ঢুকে একটা বৈঠকখানা, একপাশে শোবার ঘর, ছোট্ট একটি স্নানঘর, ওপাশে রান্নাঘর। ঘরে কিছুরই অভাব নেই। বিলাসিতার ছড়াছড়ি।

বাইরের বারান্দায় বেতের একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলাম। প্রশস্ত সমুদ্রের ঢেউ এসে আঁচড় কাটছে বালির বুকে। দেখতে দেখতে পঁচিশ মিনিট কেটে গেল।

গুড ইভনিং মি:। অন্ধকারে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। মাথায় সাদা সিল্কের স্কার্ফ, পরণেনীল পোশাক, ডান হাতে চওড়া সোনার ব্রেসলেট।

মুখোমুখি বসে সে হাসলো–আপনার সম্বন্ধে আমি অনেক কিছুই জানি, মিঃ। দশ হাজার ডলার যে অবলীলাক্রমে পায়ে ঠেলতে পারে, সে তেজী লোক। আমার একজন তেজী লোকেরই দরকার। আপনি তো ঝুঁকি নিতে ওস্তাদ।

আমি, ওস্তাদ কি করে?

আমার ব্যাগটা থেকে টাকার তোড়াটা সরালেন। ধরা পড়লে ছ বছরের জেল!

 আমি তখন প্রকৃতিস্থ ছিলাম না।

ঝুঁকি নিতে রাজি আছেন আর একবার?

টাকাকড়ি তেমন পেলে আপত্তি নেই।

 বেশ আপনাকে পঞ্চাশ হাজার ডলার দেবো।

 আমার কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কাজটা কি?

 আগে বলুন, ঝুঁকি নিতে রাজি আছেন কি?

 হা রাজি। টাকা পেলে নিনাকে নিয়ে এ শহর ছাড়বো। নতুন করে জীবন শুরু করব।

রুমালে মুখ মুছে সে বলল স্বামীর দেওয়া মাসিক ভাতা ছাড়া নিজস্ব বলতে আমার কিছু নেই। তিনি যা দেন তা যথেষ্ট। কিন্তু তার মেয়ে বা আমার ঐ টাকায় চলে না।

তা আপনার টাকা নেই, আমাকে কি করে পঞ্চাশ হাজার দেবেন?

আপনার টাকা আপনিই জোটাবেন। আমি শুধু আপনাকে পথটা বলে দেবো।

পথ?

হা, পথ। শুনুন, আমি এবং আমার সৎ মেয়ে ওদেত, আমাদের দরকার সাড়ে চার লাখ ডলার। দু-সপ্তাহের মধ্যে টাকাটা চাই। আমার একান্ত আশা, এই টাকা যোগাড় করতে আপনি সাহায্য করবেন। বিনিময়ে আপনি পঞ্চাশ হাজার পাবেন।

আমাকে আপনার স্বামী টাকা দেবেনই বা কেন?

আমার স্বামীর অঢেল টাকা, চাইতে গেলে হাজারো কৈফিয়ত চাইবেন। ওদেত বা আমি, আমরা এসব প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি নই। আপনার ক্ষেত্রে কৈফিয়ত লাগবে না।

আচ্ছা, আপনার হঠাৎ এত টাকার দরকার হল কেন?

 বা, কোটিপতির বৌ-মেয়েদের টাকার দরকার নেই।…নাম ধাম সব তো জেনে বসে আছেন।

আপনারা কি কোনো ব্লাকমেলারের হাতে পড়েছেন?

মিঃ আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলোয় অযথা কৌতূহল দেখাবেন না। টাকা আমাদের চাই। আপনার সাহায্য পেলে আপনি পাবেন, ব্যস যথেষ্ট নয় কি।

না, কারণ, আপনার ক্ষমতা নেই টাকা দেবার।

এখন নেই পরে পাবেন। শুনুন, আমার সৎ মেয়ে ওদেত গুণ্ডাদের হাতেপড়বে, অপহৃতা হবে। গুণ্ডারা দাবি করবে পাঁচ লাখ ডলার। আপনার কমিশন নেবেন। বাদবাকি আমি আর ওদেত সমান ভাগে ভাগ করব।

গুণ্ডারা কারা?

কেউ না, আসলে ওদেত দূরে কোথাও যাবে। আপনি ভয় দেখিয়ে আমার স্বামীর কাছ থেকে টাকাটা আদায় করবেন। টেলিফোনে একদিন ধমকাবেন, টাকার দাবি করবেন। ব্যস, মিটে গেলো ঝামেলা।

আমি হতভম্ব। ধরা পড়লে হয় ফাঁসি,নয় গ্যাস চেম্বার। কাজটা সাংঘাতিক। একটা ভয় এসে পাকে পাকে জড়িয়ে ধরছে।

কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। সে হেসে বলল, কোনো উপায় নেই মিঃ এ ঝুঁকি নিতেই হবে টাকাটা পাবার জন্য।

কিন্তু এর পরিণাম বুঝছেন তো?

হ্যাঁ, কোন ভয় নেই। সেরকম হলে স্বামীকে আমি সব খুলে বলব। ব্যস তাহলে তো আর.. ঝামেলা রইল না।

অর্থাৎ সত্যি কথা শোনামাত্র আপনার স্বামী পুলিসকে বলবেন তার কাছ থেকে পাঁচ লাখ ডলার হাতানোর জন্য মেয়েকে নিয়ে তার স্ত্রী একটু মজা করছিলেন।

অবাক চোখে রিয়া তাকায়।

ভুলে যাবেন না আমি একজন সাংবাদিক ছিলাম। কোটিপতি। ম্যানরুলের মেয়ে গুণ্ডাদের হাতে পড়বে কম কথা না। খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপানোর মতো খবর বটে।

রিয়া নড়ে বসে বলল, সহজ ব্যাপারটাকে আপনি জটিল করে তুলছেন। ওদেত হঠাৎ একদিন উধাও হবে। আপনি ফোন করে বলবেন, তারপর উনি বিন্দুমাত্র দেরীনা করে টাকাটা দিয়ে দেবেন। এর মধ্যে গোলমালটা কোথায়?

আপাত দৃষ্টিতে কোথাও না, কিন্তু পরে।

পরে কি হবে না হবে, সে ভাবনা এখন না। আগে বলুন কাজটা করতে রাজি আছেন কিনা। না হলে আমি অন্য লোকের খোঁজ করবো।

হাসলাম আমি। সে যাই হোক, যা করবার আপনি করবেন। আমি শুধু এটাই বলছি কাজটা আমার পছন্দ সই না।

মিঃআপনাকে দিয়ে বোধ হয় কাজটা হবে না। দুঃখিত।

এখানেই শেষ করলে হত, কিন্তু পঞ্চাশ হাজার ডলারের লোভ কম না।

আপনি ভুল করছেন, কাজটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়–একথা বলিনি একবারও। জেলের ঘানি টানতে কারই বা ভালো লাগে?

আপনি অযথা চিন্তা করছেন।

আচ্ছা, মি ম্যানরুক্স কি বিশ্বাস করবেন যে তার মেয়ে উধাও হয়েছেন।

মেয়ে বলতে তিনি অজ্ঞান। ব্যস্ত হয়ে উঠবেন তিনি।

টাকাটা আদায় করে আপনি টাকা নিয়ে বাকিটা আমার হাতে তুলে দেবেন।

মেয়েকে দেবো না? আকস্মিক প্রশ্নে সে ঘাবড়ে গেল। ঘাড় নাড়লো, হ্যাঁ।

বেশ, খুঁটিনাটি বিপদ ছাড়া চিন্তার কোন কারণ নেই। পুলিশকে খবর না দিয়ে আপনার স্বামী হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবেন এটা বিশ্বাস হয় না।

স্বামীকে সামলাবার দায়িত্ব আমার। তিনি বৃদ্ধ অসুস্থ, মৃত্যুপথযাত্রী।

ঠিক আছে, আগামীকাল আমার মতামত ফোন করে জেনে নেবেন।

কাল কেন? আজই বলে দিন না?

ভাবতে হবে আমাকে। আগামীকাল বলবো।

 ব্যাগ খুলে নোটের একটা তাড়া ছুঁড়ে দিলো। কেবিনের ভাড়ার খরচ। কাল ফোন করবো। দশটা বেজে দশ মিনিট। নিনাকে বলে এসেছি রাত হবে ফিরতে।

আগাগোড়া ব্যাপারটা উলটে পালটে ভাবতে লাগলাম। সিগারেটের পর সিগারেট পুড়তে লাগলো। প্রায় বারোটা নাগাদ সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম।

হা, করবো আমি। একাজ করবো। পরদিন সকাল আটটায় গেলাম বিলের কাছে। আরো একদিনের জন্য কেবিনটা চাই। ভাড়া দিলাম। ঠিক, এগারোটায় ফোন এল।

মিঃ?

হ্যাঁ।

কি রাজি আছেন তো?

হ্যাঁ, শুধু একটা শর্ত আপনাদের দুজনের সাথে একটু কথা বলতে চাই আবার।

 ফোন রেখে গাড়ি স্টার্ট করে চলে গেলাম।

সন্ধ্যে ছটায় কেবিনে এলাম। সারা দিন ধরে বাড়িতে ছিলাম। টুকিটাকি জিনিষ নিলাম। টেপরেকর্ডার নিলাম। পুলিশের খপ্পরে পড়লে নিজেকে বাঁচাবার এটাই হবে মোক্ষম প্রমাণ।

দরজা খুলে শোবার ঘরে এলাম। টেপরেকর্ডার কায়দা করে ঠিক করলাম।

মাইক্রোফোনটা ফুলদানির পেছনে রাখলাম। ওরা আসার আগে সবটাই আবার পরীক্ষা করে নিলাম।

যাক নিশ্চিন্ত। এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল। সাড়ে সাতটা বাজে। কে আসতে পারে? দরজা খুললাম। বিল হোল্ডেন দাঁড়িয়ে আছে।

এক ভদ্রলোক একটু আগে এই কেবিনটা ভাড়া নিতে চাইছিলেন। তা আপনি..

না বিল, কয়েকটা লেখা শুরু করেছি। দিন সাতেক লাগবে। এমন নিরিবিলি পরিবেশ না হলে মাথায় কিছু আসতে চায় না।

ঠিক আছে মিঃ। বেশ খিদে পেয়ে গেছে। কাছের কোনো রেস্তোরাঁ থেকে খেয়ে নিতে হবে। হাতে বেশি সময় নেই।

নটা বাজতে পাঁচ যখন তখন, কেবিনে এসে পৌঁছলাম। অসহ্য গরম। বেতের চেয়ারটা টেনে বারান্দায় বসলাম।সিগারেট ধরালাম। ভেতরে ভেতরে বেশ একটা চাপা উত্তেজনা অনুভব করছি। রিয়া কি আজও দেরিতে আসবে! আর ওদেত, কেমন মেয়ে কে জানে!

চিন্তায় ছেদ পড়লো। রিয়া এসেছে। সঙ্গে কেউ নেই। ঘরে ঢুকলাম।

কই আপনার মেয়ে কোথায়?

আসবে। এক টানে মাথার স্কার্ফ খুলে ফেললো সে। কি কিছু বলবেন?

বলবো মানে, মিস ম্যানরুক্সের সঙ্গে একটু আলোচনার দরকার।

আশ্চর্য, এত আলোচনার কি দরকার? ওদেত তো বাচ্চা নয়। তাকে না জানিয়ে কিছু করা হবে না।

বারান্দায় পায়ের শব্দ শোনা গেল। দরজা খুললাম।

দরজার ওপাশে যুবতী দাঁড়িয়ে। কালো কুচকুচে এক মাথা চুল কাধ ছাপিয়ে পিঠ অবধি নামানো, পানপাতার মতো মুখ। ষোলো থেকে ছাব্বিশের মধ্যে বয়েস। ওদেত সুন্দরীসন্দেহ নেই। কিন্তু সারা শরীরে ইন্দ্রিয়ের ভোগসুখ ছাড়া যে সে কিছু বোঝে না, তা বোঝা যাচ্ছে।

হঠাৎ খিলখিল করে হেসে উঠলো ওদেত আপনি বুঝি আলিবাবা? আপনার চল্লিশ চোরের খবর কি?

রিয়া বকে উঠল, ওদেত এটা হাসি-তামাশার সময় নয়। জরুরী কথা আছে।

ওদেতের মুখোমুখি সোফায় বসলাম। হাসলো ওদেত। বলুন, কি বলতে চান। বলবেন আপনি, আমি শুনবো।

প্রথমে বলুন এই অপহরণের ব্যাপারটা আপনি জানেন কি না।

নিশ্চয়ই। আমি, রিয়া দুজনেই জানি।

 রিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, কাজটা কবে নাগাদ করতে চান?

যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব।

মিস ম্যানরুক্স কোথায় উধাও হবেন?

 কার্মেলে। তিন চারদিন ও সেই হোটেলেই থাকবে।

 কিভাবে যাবে?

গাড়িতে! ওর নিজের গাড়ি আছে।

তাহলে এই অপহরণের ঘটনা আমরা ছাড়া কেউ জানবে না। তাই তো?

 হ্যাঁ।

বেশ, আপনার কথা মতো না হয় নিশ্চিন্তেই রইলাম। ধরে নিলাম আপনার স্বামী টাকা। দিলেন। এখন মেয়েকে নিরাপদে ফিরে আসতে দেখেও কি তিনি ব্যাপারটা তদন্ত করার জন্য পুলিশ ডাকবেন না?

আমি আবারও বলছি মিঃ স্বামী সংক্রান্ত সব কিছু সামলাবার দায়িত্ব আমার। আপনার নয়।

ঠিক আছে। মিস ম্যানরুক্স, আগামী শনিবার আপনার এক বান্ধবীর সাথে আপনার সিনেমা দেখার আয়োজন করতে হবে।

ওদেত ঘাড় নাড়লো,-তারপর?

যাবার আগে দুপুরে খাবার টেবিলে বাবাকে কথাটা জানাবেন। বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করার কথা থাকবে রাত নটার সময়। আপনি সিনেমা হলের ধারে কাছেও যাবেন না। বাড়ি থেকে সোজা বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যাবেন পাইরেটস কেবিনে। বাইরে গাড়ি রেখে ঢুকে যাবেন কেবিনে। খাবারের অর্ডার দেবেন। সাবধান, পরিচিত কারুর সঙ্গে যেন দেখা না হয়।

হবে না।

আসলে পরিচিত লোকজন যাতে না দেখে ফেলে। অপরিচিতরা আপনাকে মনে রাখুক। মিনিট। পাঁচেকের বেশি থাকবেন না। সকলের চোখ এড়িয়ে উঠে বসবেন গাড়িতে। নতুন পোশাক, লাল পরচুলা থাকবে পেছনের সীটে। চটপট পরে নেবেন।

আমি ততক্ষণে আপনার গাড়ি নিয়ে এগোবো। কোনো নির্জন জায়গায় আপনার গাড়ি রেখে আমি উঠেবসবোআমার গাড়িতে। সোজাবিমানবন্দর। লসএঞ্জেলসের হোটেলেও আপনার নামে ঘর নেওয়া থাকবে। হোটেলের ম্যানেজারকে বলবেনআপনিঅসুস্থ। খাবারটাবার যেন সে আপনার ঘরেই পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করে। আমার ফোন না পাওয়া পর্যন্ত আপনি ঘর ছাড়বেন না।

 রিয়া বলে উঠল–ওদেতকে তো লস এঞ্জেলসেনা পাঠিয়ে কার্নেলে পাঠালেই ভালো হতো।

টাকা পেতে হলে আপনাদের আমার কথামত কাজ করতে হবে। ওদেতকে প্লেনে তুলে দিয়ে আমি আর দেরী করব না। কাছাকাছি কোন বুথ থেকে মিঃ ম্যানরুক্সকে ফোন করব।

প্রথমে তার সেক্রেটারীর টেবিলে ফোন করবেন। তারপর স্বামীর সঙ্গে সে যোগাযোগ করবে, আমি সে সময় তার ঘরেই থাকবো। টেলিফোন যাতে তিনি ধরেন, সেই ব্যবস্থা করবো।

তার আগে ওদেতকে সেই বান্ধবীকে দিয়ে ইতিমধ্যে একবার ফোন করাতে হবে। এটা তোমারই দায়িত্ব ওদেত। তুমি তাকে বলে রাখবে তোমাকে সে যদি নটার মধ্যে হলের সামনে পৌঁছতে না দেখে, তাহলে যেন বাড়িতে ফোন করে খবর নেয়।

তারপর?

 তারপর আর কি আমার ফোন পৌঁছবার আগেই তুমি উধাও।

ফোনে তাকে বলবো, রাত দুটো নাগাদ টাকা নিয়ে তিনি যেন ইস্ট বীচ রোড ধরে এগোতে থাকেন। টাকা থাকবে অ্যাটাচিতে। পথের পাশে এক জায়গায় তিনবার আলোর সঙ্কেত তিনি দেখতে পাবেন। সেখানে অ্যাটাচিটা ফেলে তিনি চলে যাবেন। ওদেত কেবিনে আমার জন্য অপেক্ষা করবে। আমি আমার অংশ নিয়ে বাকি টাকা তার হাতে তুলে দেবো।

রিয়া সজোরে বলে উঠল, না তা হবে না। টাকা আপনি আমার হাতে দেবেন।

ওদেত বলে উঠল, কেন আমাকে দিলে তোমার আপত্তি কোথায়?

তোমাকে আমি বিশ্বাস করি না।

 ওদেত ঠোঁট ওল্টালো।–একবার তোমার হাতে টাকা পড়লে…।

আমি হাত তুলে থামালাম। দাঁড়াও, দাঁড়াও। সমাধান করে দিচ্ছি। তোমার বাবাকে দিয়ে তুমি একটা চিঠি লিখিয়ে রাখবে। টাকা দিয়ে যেন তিনি সোজা লোন বে-তে চলে যান। তোমার সঙ্গে তার সেখানেই দেখা হবে।

কিন্তু বাবা যদি সেখানে আমাকে না দেখতে পান তাহলে সোজা পুলিশে খবর দিতে পারেন।

মাথা নাড়লাম আমি। ঠিক। তবে তার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। লোন বে তে তোমার গাড়ির পেছনের সীটে থাকবে আরেকটা চিঠি। তাতে লেখা থাকবে তিনি যেন সোজা বাড়ি ফিরে যান, সেখানে তোমার সঙ্গে দেখা হবে।

হ্যাঁ তা-ই ভালো আপনি দুজনের হাতে টাকা তুলে দেবেন।

এবার কাজের কথায় আসা যাক, অপহরণের দিন থেকে ঘটনা সব বাবা জানতে চাইবেন। তুমি আসার পর তিনি পুলিশেও যোগাযোগ করতে পারেন।

না পুলিশে উনি যোগাযোগ করবেন না। কারণ উনি ঘরের কেলেঙ্কারি বাইরে ছড়াক চাইবেন না। রিয়া বলল।

 তবু পুলিশকে আমাদের হিসেবের মধ্যে রাখতেই হবে। ওদেত কাল তুমি আবার আসবে।

আমার কাছ থেকে সব তুমি শিখে নেবে।

রিয়া বলে উঠল অনর্থক আপনারা আবার সময় নষ্ট করবেন, মিঃ?

আমি বলে উঠলাম; আমাকে দিয়ে যদি কাজ করাতে চান, তবে আমার কথামতো আপনাদের চলতে হবে।

আমি কিন্তু কাল আসব। হাসতে হাসতে ওদেত চোখ টিপলো।

বেশ, উঠে দাঁড়ালাম। মিসেস ম্যানরুক্স, ইতিমধ্যে আপনাকে একটা জরুরী কাজ সারতে হবে।শহরতলীর কোনো অখ্যাত দোকানের শরণাপন্ন হবেন। ওর জন্য সাধারণ একপ্রস্ত পোশাক কিনে নেবেন।

ঠিক আছে। কালই কিনে ফেলবো।

কাল ওদেতের সঙ্গে সব পাঠিয়ে দেবেন।

 রিয়া আর ওদেত চলে গেল।

দরজা বন্ধ করে আমি আর দাঁড়ালাম না, তাড়াতাড়ি বোতাম টিপে টেপ-রেকর্ডার বন্ধ করলাম।

পরদিন রাত নটার একটু পরেই ওদেত এলো। সাদামাটা ফ্রক, হাতে ছোট সুটকেশ।-বান্দা হাজির। আদেশ করুন।

এসো, ভেতরে এসো। মা কখন আসবে?

তুমি তো একলা আমাকেই আসতে বলেছ। বৈঠকখানার আলো জ্বলার সাথে সাথে টেপ রেকর্ডার চালু হল।

ওদেত সোফার পায়ের ওপর পা তুলে বসলো- রিয়া তোমাকে জব্বর পাকড়েছে।

আমি অবাক, পাকড়েছে মানে?

ঐ যে টেলিফোনে হাতব্যাগ ফেলে আসার ঘটনাটা। ওটা তো জানতই।

আমি তখন স্বাভাবিক ছিলাম না। যাই হোক রিয়ার ব্যাপারে সাবধান থেকে। তাহলে কাজটা হচ্ছে শনিবার, মভিসের সাথে সিনেমা যাচ্ছ।

তোমার বান্ধবী ছাড়া বন্ধু আছে।

ঝুরি ঝুরি, কেন?

একজনেরই নাম করো।

জেরা উইলিয়াম।

বেশ তা এর সাথে কি ফোনে কথা হয়? হয়। চমৎকার, কে ফোন ধরে?

আমাদের খানসামা।

এসব প্রশ্ন করার কারণটা বলি। শনিবার তুমি সিনেমা দেখতে যাবার কিছুক্ষণ পর পৌনে নটা নাগাদ আমি ফোন করবো।

বাপরে বাপ এযে দেখি অ্যাডভেঞ্চার।

হ্যাঁ, তবে খাঁটি না ভেজাল। কারণ পুলিশের ব্যাপারটা একদম ভুলতে পারছি না। রাস্তা পার হবার সময় তোমাকে কেউ মুখ চেপে ধরেছে, টেনে অন্য গাড়িতে তুলেছে। গাড়িতে একজনের হাতে ধরা তোমার মুখ, আরেকজন পিস্তল ঠেকিয়ে রেখেছে তোমার পাঁজরে। তোমাকে বাদ দিয়ে তোক সাকুল্যে তিনজন। শুনে মনে হবে তিনজনই ইটালির লোক। কি কি কথা হবে তার একটা খসড়া তৈরি করে রেখেছি। পড়ে মুখস্থ করে নাও। যথারীতি গাড়ি অনেকবার ঝাঁকি দেবে। তুমি অনুমানে বুঝবে বড় রাস্তা ছাড়িয়ে গাড়ি শহরের বাইরে যাচ্ছে। প্রায় দুঘন্টা চলার পর গাড়ি দাঁড়াবে। লোহার গেট খুলবে। কুকুর ডাকবে। নুড়ি পাথরের রাস্তা ধরে গাড়ি এগিয়ে যাবে। যেমন বললাম, মনে রেখো। এই বাড়িতে তুমি থাকবে মোট তিনদিন। তোমাকে একটা বন্ধ ঘরে রেখে দেব। বন্দী থাকাকালীন তুমি কুকুর, গরুর ডাক শুনতে পাবে। কটা মুরগীও জুড়ে দিতে পার। সকাল থেকে রাত অবধি ওরা যা খেতে দিতে, তারও একটা তালিকা তৈরি করেছি। সব ব্যাপারটা নিখুঁত হবে।

তুমি এমনভাবে বলছ যেন সত্যি আমি গুণ্ডাদলের খপ্পরে পড়েছি।

হ্যাঁ, অভিনয় করতে হবে। এবার বাবাকে দুখানা চিঠি লিখে ফেলল। হ্যাঁ, যাবার আগে সঙ্গে আনা পোশাক এবং পরচুলাটা একবার পরে দেখিয়ে যাও তো।

মিনিট দশেক পরে নতুন পোশাকে ওদেত এল। পিঠের চেনটা লাগিয়ে দাও তো বলে পেছন ফিরলো।

আমি কাঁপা হাতে প্রাণপণে নিজেকে সংযত রেখে চেন টানলাম। নিমেষে ঘুরে সে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো। আমি এক ঝটকায় তাকে সরিয়ে দিলাম। আমি বললাম- এগুলো কিন্তু অকাজ।

কাজের সঙ্গে ভালো থাকার কোন সম্পর্ক নেই।

ওদেত শোবার ঘরে গেল কাপড় পালটাতে। হ্যারি… চেনটা খুলতে পারিছ না ওদেত ডাকল, হ্যারি…

নাঃ, এ ডাককে অগ্রাহ্য করতে পারব না। কোনো পুরুষই পারবে না।

কেবিনের দরজা ভেতর থেকে লাগালাম। এগিয়ে গেলাম শোবার ঘরে।

গ্যারেজে গাড়ি রাখতে গিয়ে রেনিকের বুইকখানি দেখে অবাক হয়ে গেলাম। জেল থেকে ছাড়া পাবার পর এই এল। এত রাতে কিসের দরকার। নিনার কথা মনে হতে নিজেকে ছোট লাগল। নিনার মত স্ত্রী থাকতে ওদেতেরকামনায় নিজেকে সমর্পণ করা উচিত হয়নি। লজ্জায় মরে গেলাম।

ঢাকা বারান্দায় ওরা দুজনে বসে গল্প করছে।

দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ডাকলাম, নিনা। নিনা ছুটে এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরে চুমু খেল। আমি অমানুষ, অপদার্থ।

নিনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। রেনিককে জিজ্ঞাসা করলাম, কি ব্যাপার?

এক মাস ছিলাম না, ওয়াশিংটন গিয়েছিলাম। আজই ফিরলাম। শুনলাম তুমি নাকি চাকরি পেয়েছে।

বলার মত কিছু না।

বড় কর্তার সঙ্গে কথা বলে আমি তোমার জন্য একটা ব্যবস্থা করতে পারি।

না বন্ধু, পুলিশের দয়া গত তিনবছর ধরে পেয়ে বুঝেছি, আর দয়া চাই না।

কিন্তু সে পুলিস আর নেই।

আমাকে একটু ভাবতে দাও।

 নিনা বলে উঠল, ভাবনার কি থাকতে পারে হ্যারি?

না, একটু ভেবে দেখি।

বেশ? রেনিক বলল, ভেবেই খবর দিও।

চলি তাহলে, গুডনাইট বলে চলে গেল রেনিক।

নিনা আমার গলা জড়িয়ে বলল, চাকরিটা তুমি নাও, সব দিক থেকে চিন্তা করে দেখো।

নিনা আমার ঘুম পাচ্ছে। আর দাঁড়ালাম না, পোশাক পাল্টে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।

নিনা পোশাক পাল্টে বিছানায় আমার পাশে শুয়ে পড়লো। একটা হাত রাখলো আমার বুকে।

আমি নিনার পবিত্র হাত শরীর থেকে সরিয়ে দিলাম। আলগোছে পাশ ফিরলাম। পরদিন বৃহস্পতিবার নিনা গেল গাড়ি নিয়ে। সারাদিন কিছু করার নেই। ওদেতের কথা মনে হল। কালকের অপরাধ বোধটা আর নেই। ওদেতকে আমার চাই। আমি জানি আমি অনেক নীচে নেমে গেছি। রেনিকের দেওয়া সুখের চাকরি থেকে নোংরা পঙ্কিল জীবনের দিকে এগিয়ে গেলাম। পাপ আমাকে টানছে। সন্ধ্যের সময় কেবিনে গেলাম। সমুদ্রে স্নান করে, সাঁতার কেটে সময় যেন কাটছে না, কখন ওদেত আসবে।

পরদিন নিনা আবার কথাটা তুলল। আমি ভাবছি, বলে কফির কাপে চুমুক দিলাম।

নিনা পাওনাদারদের বিলগুলো তুলে ধরলো। আমি মুদীআর ইলেকট্রিকের টাকা দিয়ে দিলাম।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম। আবার কেবিনে গেলাম। ওদেতকে পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলাম আগে কেন ওদেত আসে না। অবশেষে সে এলো। দৌড়ে জড়িয়ে ধরলাম। কিন্তু সে এক ঝটকায় আমাকে সরিয়ে দিলো।

মেয়ে দেখলেই অমন চুকচুক কেরো না।

রাগে দপকরে জ্বলে উঠলাম।ইচ্ছে হল গলা টিপে শেষ করে দিই। সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে ওদেত বলল, খুব তো প্রথম দিন তেজ দেখাচ্ছিলে? কোথায় গেল সেই তেজ। আসলে তোমরা এক একটা…।বল কি জরুরী কথা।আমিকাগজগুলো মেলে ধরলাম। প্রশ্নের পরপর জবাবদাও।

ওদেত হেসে বলল, পরীক্ষাটা কে দেবে হ্যারি, তুমি না, আমি?

চুপ করো…তোমার সস্তা মতামত শুনতে আসিনি।

একের পর এক উত্তর দিতে লাগল ওদেত নির্ভুলভাবে।

আমি চমৎকৃত। ঠিক আছে আগামী শনিবার কাজে নামছি।

ওদেত বুকের কাছে ঘন হয়ে দাঁড়ালো।

রাগ পড়লো?

মুহূর্তে আমার ডান হাত আছড়ে পড়লো ওর মসৃণ গালে।

ওদেত গালে হাত ঘষলো- তুমি, আমায় মারলে হ্যারি?

 বেরিয়ে যাও, দূর হও।

 ওদেত পায়ে পায়ে দরজার দিকে এগোললা, নিঃশব্দে বেরিয়ে গেলো ঘর ছেড়ে।

তবুও আমাকে হারিয়ে দিলো ওদেত। ঘুম ভাঙতে সকাল সাড়ে সাতটা হয়ে গেল। আজ শনিবার।

নিনাকে বললাম, আমার আজ ফিরতে দেরী হবে।

জনের সঙ্গে দেখা করবে না?

না, সোমবার যাবো।

চাকরিটা তুমি নেবে হ্যারি?

 দেখি কেমন মাইনে-পত্তর দেয়?

 উঠে নিনাকে জড়িয়ে ধরলাম। নিজেকে ভারি পবিত্র মনে হল।

বেলা দশটা নাগাদ কেবিনে গেলাম। কে যেন দরজায় কড়া নাড়লো।

 খুলে দেখলাম বিল হোল্ডেন।

কেবিনটা কি সামনের সপ্তাহেও রাখবেন?

হ্যাঁ।

এ সপ্তাহের ভাড়া যদি আজ দিতেন।

কাল দেব, মানিব্যাগটিই আনতে ভুলে গেছি।

 ঠিক আছে, মিঃ।

রিয়ার ফোন এল। আজই তাহলে কাজে নামছেন?

সেরকমই তো ইচ্ছে।

কাল বেলা এগারোটায় আমি আবার ফোন করবো।

টাকাকড়িও কিছু নিতে হবে। এখানে চলে আসুন।

আসবো।

 বৃষ্টি পড়ছে। আটটা নাগাদ বৃষ্টি ধরল। পৌনে নটা নাগাদ ডায়াল ঘোরালাম। রিং হবার সঙ্গে সঙ্গে ওপাশের সাড়া মিললো

কাকে চাই?

ওদেত, বলুন জেরী উইলিয়াস ফোন করছে।

একটু ধরুন।

ওদেত রিসিভার তুলল।

 বলো

 আশে পাশে কেউ আছে নাকি?

না। কাল তুমি আমাকে মারলে কেন?

ওসব বাদ দাও। কি কি করতে হবে, মনে আছে তো!

আছে!

তাহলে বেরিয়ে পড়ো। ফোনটা রাখলাম। কেবিনে জমজমাট ভিড়। কিন্তু ওদেত এখন আসছে না কেন?

নটা বেজে পঁচিশ। হঠাৎ লোহার ফটক পেরিয়ে ঢুকলো ওদেতের দুধ সাদা রঙের ছোট্ট গাড়িখানি।

পরণে লাল পোশাক, মুখ গম্ভীর। আমি হাত নাড়লাম। সেও হাত নাড়ালো। আমি তার গাড়ির দিকে পা বাড়ালাম।

জানলার কাঁচ নামিয়ে রেখে গেছে ওদেত। সঙ্গে আনা সুটকেশটা পড়ে আছে সীটের ওপর। হাতে এখন অঢেল সময়। লস এঞ্জেলসের প্লেন ছাড়ল সাড়ে দশটায়। ওদেতের নামটা পাল্টানো হয়েছে হারকুট।

দরজা ঠেলে বেরিয়ে এলো ওদেত। দেখি একটি লোক ওদেতের সঙ্গে সঙ্গে আসছে।ওদেতকে বিরক্ত করা শুরু করেছে।ওদেত তাকে যা, ভাগ সমানে বলছে, কিন্তু সেও নাছোড়বান্দা। ওদেতকে দেখে সে ঠিক থাকতে পারছে না। হঠাৎ জড়িয়ে ধরে পর পর চুমু খেলো। আমি এবার ক্ষেপে গেলাম। চকিতে ছুটে গিয়ে রড দিয়ে তার মাথায় বাড়ি দিলাম। সে মাটিতে পড়ে গেল।

ওদেতকে তাড়া লাগালাম। নাও, আর দেরি কোরো না। ওদেত বলল, লোকটা …

 তুমি আর দাঁড়িয়ে থেকো না। যা বললাম কোরো।

পোশাকটা পাল্টে নাও। গাড়ি স্টার্ট করলাম। খানিকটা যাবার পর আর একটা গাড়ির সাথে। ধাক্কা লাগল। আজ কি কুক্ষণেই যে ভোর হল। গাড়ির ক্ষতি নিয়ে ভাবি না। এবার আর নিস্তার নেই। এদিকে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।

মাফ করবেন স্যর চমকে চোখ ফেরালাম। বেটেখাটো চেহারার মানুষ, অন্ধকারে ঠিক বুঝতে পারিনি…।

কি বুঝতে পারোনি হাবার্ট? ভুলটা কার? এক মহিলার গলার স্বর।

আসলে মানে…

শুনব মানে টানে বাদ দাও।

 বেশ মাথা নোয়ালাম আমি। এবার দয়া করে গাড়িটা একটু এগিয়ে নিন।

না, খবরদার। আমি পুলিশ ডাকছি যা করার ওরা এসে করবে।

ঘামে সমস্ত শরীর ভিজে গেল।

মন স্থির করতে দেরি হল না। শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে অ্যাকসিলারেটরে চাপ দিলাম। ঝনঝন শব্দে ছিটকে পড়লো ও-গাড়ির ভাঙা মাগার্ড।

মহিলার গলা পেলাম- নম্বরটা…হাবার্ট নম্বর।

ওদেতকে যেখানে প্যাকার্ড নিয়ে অপেক্ষা করতে বলে এসেছি, বড় রাস্তায় ওটার ঘুর-পথটা ধরে উধ্বশ্বাসে সেদিকে ছুটলাম।

টেলিফোনের শব্দে ঘুম ভাঙল।

নিনা ফোন ধরেছে।

লোন-বে থেকে বিমান ঘাঁটি প্রায় সারা পথ ওদেত প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত করেছে। তাকে অ্যাকসিডেন্টের কথা ইচ্ছে করেই বলিনি। যাক পাশের ফোন বুথ থেকে ম্যানরুক্সের বাড়িতে ফোন করলাম।

ওপাশে ফোন তুলে বলল- কাকে চাই?

 মিঃ ম্যানরুক্সকে একবার ডেকে দিন।

আপনার নাম?

নাম জেনে কাজ নেই।

একটু ধরুন…।

খানিকক্ষণ বাদে ম্যানরুল্পের নিভাঁজ ভারী ভরাট গলার স্বরে বলুন।

তা মিথ্যে বলেনি রিয়া। স্বামীর ওপর আধিপত্য অস্বীকার্য নয়।

শুনুন…আপনার মেয়ে ওদেত এখন আমাদের হাতে। মেয়ের জীবন পেতে যদি চানতাহলেপচ, লাখ ডলার যোগাড় করুন। দেরি করবেন না। চালাকি করে পুলিশ-টুলিশ ডাকবেন না। বুঝলেন?

বুঝেছি…কিন্তু কখন কিভাবে দিতে হবে টাকা, যদি জানতে পারতাম…।

বলবো, সোমবার, টাকা যোগাড় করতে আপনার কতদিন লাগবে?

কাল সকালেই পেয়ে যাব টাকা।

 বেশ, সোমবার আমি জানাবো। পুলিশে খবর দিলে মেয়েকে আর জ্যান্ত পাবেন না।

বাড়ি ফিরে এলাম। নিনা দরজার পর্দা সরিয়ে উঁকি মেরে বলল– হ্যারি, জনের ফোন, তোকে ডাকছে।

আর দাঁড়ালাম না, ছুটে রিসিভার তুললাম।

 দারুণ খবর হ্যারি, ছশো ডলার মাইনের চাকরিটা তোমার হয়ে গেছে। এখুনি চলে এসো।

 এখুনি? আজ তো রোববার।

 কাজের আবার রোধ, সোম। বড়কর্তা এক্ষুনি আসবেন। একটা জরুরী, আলোচনা।

জরুরী, কি ব্যাপার?

আরে ফেলিক্স ম্যানরুক্সের মেয়ে গুণ্ডাদলের হাতে পড়েছে–এটা কি কম জরুরীখবর হ্যারি? সুতরাং, হে বন্ধু বিলম্ব করো না।

আমার গলা শুকিয়ে গেছে। শক্ত মুঠোয় রিসিভার চেপে ধরে আমি তোতলাতে লাগলাম।

না হ্যারি, তোমার কোনো ওজর আপত্তি আমি শুনছিনা। এ সুযোগ তুমি পায়ে ঠেলোনা, প্লিজ।

ফিসফিস করে বললাম, যাচ্ছি জন, এক্ষুনি যাচ্ছি।

রেনিক বলল– তাড়াতাড়ি এসো, দেরি কোরো না।

নিনা জিজ্ঞেস করলো, কি? এতো জরুরী তলব কিসের?

কি জানি কেন? চাকরিটা শেষে নিচ্ছি। মাস গেলে ছশো ডলার… এ সুযোগ পায়ে ঠেলা ঠিক না।

নিনা আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করল। তুমি রাজি হয়েছে দেখে খুব ভাল লাগছে আমার।

যাই চটপট, তৈরি হয়ে নিই।

রেনিকের অফিসে ঢুকলাম।

রেনিক হাসল। যাক সুবুদ্ধি হল তাহলে।

ম্যানরুক্সের মেয়ে কি হয়েছে তার?

রেনিক বলল চলল, স্যারের কাছে জানতে পারবে।

দরজা ঠেলে আমরা মিতভাজের কামরায় ঢুকলাম।

শক্ত সমর্থ চেহারা, চুল ধপধপে সাদা, হাতের আঙুলে ধরা জ্বলন্ত সিগারেট।

মিভোজ পায়ের শব্দে তাকালেন।

পরিচয় করিয়ে দিল জন।

রেনিক শুরু করলো। সকালে ম্যানরুক্স তাকে ফোনে বলেছেন আজই তার পাঁচ লাখ ডলার দরকার। গুণ্ডার দল তাকে শাসিয়েছে এ ব্যাপারে পুলিশের শরণাপন্ন হলে মেয়েকে তিনি জ্যান্ত পাবেন না।

এসব তো সবই তোমার অনুমান জন। ম্যানরুক্স তো আর বলেনি। কোন প্রমাণ কি তুমি পেয়েছো?

বাঃ তবে আর বলছি কি? এই শহরে বাস করতে এসে ম্যানরুক্স একজন বিশ্বস্ত দেহরক্ষীর জন্য আমাদের দপ্তরে আবেদন করেন। ও রিলে কে পাঠালাম। আমি ফোন করে আজ সকালে জানলাম–ম্যানরুক্সের মেয়ে কাল সিনেমায় যাবে বলে রাত পৌনে নটা নাগাদ সেই যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে তার পর আর ফিরে আসেনি।

সিনেমায় গিয়েছিল কি?

না, যে বন্ধুর সঙ্গে যাবার কথা, সে ফোনে করে জানায় ওদেত যায় নি।

ম্যানরুক্স জানিয়েছে আমাদের?

না, ম্যানরুক্স টাকা নিতে এলেই খবর নেব। ঘটনার মূলে তোমাকে ঢুকতে হবে। আমাদের তরফ থেকে সব রকম সাহায্যই তুমি পাবে। নীরবে মাথা নাড়লাম আমি।

রেনিককে মিডোজ বলল মেয়েটি যে গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল তার কোনো হদিশ পেলে?

ও রিলে বলল, মেয়ের সাথে তার গাড়িখানাও উধাও।

গাড়ি বার করতে বেশি অসুবিধে হবে না। গোয়েন্দা বিভাগে ইতিমধ্যে তুমি ঘটনাটা জানিয়ে রেখ।

রাখবো।

তোমার করণীয় কিছু নেই এখন, দুঘণ্টা পর পর রেনিককে ফোন করে জেনে নিও। আমি বললাম, ম্যানরুল্পের ওপর যদি নজর রাখি সে কোথায় টাকা দিতে যাবে।

না তা করতে গেলে বিপদ আছে।

চলি জন, চলি স্যর বলে চলে এলাম রাস্তায়।

বেলা এগারোটায় রিয়া আসবে কেবিনে। ওদেতকে ফোন করলাম। ওদিক থেকে ওদেতের সাড়া মিললো, হ্যালো?

হ্যারি বলছি। এদিকে মস্ত ঝামেলা হয়ে আছে। এখনি কিছু বলছি না। পরে বলছি। তুমি ভালভাবেই ফিরে এসো।

সেই মাতালটা কি মারা গেছে?

না, সে ভালোই আছে। আসলে পুলিশরা নাক গলিয়েছে।

তাহলে কি হবে?

দেখা যাক।

কিন্তু …আমার যে তর সইছে না।

ফোনে এসব বলা যায় না। ছাড়ছি। নানারকম চিন্তায় ডুবে গেলাম। এমন সময় রিয়া ঢুকল।

ম্যানরুক্স ব্যাঙ্কে টাকা আনতে গেছে, আমি ওদেতের জন্য গীর্জায় প্রার্থনা করার ছুতো করে বেরিয়ে এলাম।

সোফায় রিয়া পায়ের ওপর পা তুলে বলল টাকাটা কবে নিচ্ছেন?

 টাকা। আদৌ পাবো কিনা দেখি।

তার মানে?

আপনার স্বামীর ব্যাঙ্কের ম্যানেজার এবং আপনাদের বিশ্বস্ত সোফারটি পুলিশের কাছে ইতিমধ্যে সব ফাঁস করে দিয়েছে।

মিথ্যে, সব মিথ্যে আপনি বানিয়ে বানিয়ে বলছেন, ধাপ্পাবাজ আপনি।

আপনাকে গল্প শোনাবার মত প্রবৃত্তি আমার নেই। আমার কথা বিশ্বাস না হয়, খোঁজ নিন।

আপনি জানলেন কি করে?

আমার নতুন চাকরির কথা থেকে শুরু করে–সবই তাকে বললাম।

পুলিশ নিঃসন্দেহ যে ওদেত গুণ্ডাদের হাতে পড়েছে।

 হতাশ হয়ে রিয়া কাঁপতে কাঁপতে চেয়ারে বসে পড়লো। কি হবে তাহলে, টাকা আমার চাই-ই।

আমি কিন্তু তখনই জানতাম, পুলিশের চোখে আমরা ধুলো দিতে পারব না। দাঁড়ান সাড়ে এগারোটায় রেনিককে ফোন করে পুলিস কতদূর কি করলো, জেনে নিই।

রেনিকই ফোন ধরল।

 কতদূর এগোলে জন?

গাড়ির খোঁজ চলছে। ম্যানরুক্স টাকা নিয়ে গেছেন। তিনটে নাগাদ ফোন কোরো।

করবো।

 রিয়াকে বললাম, গাড়িটা এখনো ওরা খুঁজে পায়নি। আপনার বাড়িতে চিঠির বাক্স আছে তো?

আছে।

 ঢুকবার সময় এই খামখানা বাক্সে ফেলে যাবেন। সাবধান দস্তানা পরে নেবেন।

তাহলে সত্যি সত্যি কাজটা আপনি করছেন?

করবো না কেন। ওদেত কাল চলে আসবে। কেবিনে পৌঁছে এখানে অপেক্ষা করবে সে। আপনিও এসে যাবেন, ভাগ করে নেবেন টাকাটা।

রিয়া ঘাড় নাড়লো- বেশ, তাহলে ঐ কথাই রইলো।

হ্যাঁ, ওরিলকে চোখে চোখে রাখবার চেষ্টা করবেন। ও পুলিশের চর।

 রিয়া একদৃষ্টে আমাকে দেখল। বারান্দা থেকে নামার সময় সে এক চমক আবার দেখলো। তারপর হনহন করে চলে গেল।

মনের মধ্যে কোথায় যেন সন্দেহের একটা কাটা খচখচ করে উঠল।

 বৃষ্টিটা ধরতে বিল হোন্ডেনের অফিসে টাকাটা দিতে গেলাম।

কাজ কেমন এগোচ্ছে?

এগোচ্ছে কাল রাতেই শেষ হয়ে যাবে।

বিলের অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা ঢুকলাম ছোট্ট রেস্তোরাঁয়। খাওয়া সেরে কেবিনে ফিরলাম সোয়া দুটো।

বাড়িতে ফোন করলাম।

নিনা ফোন ধরলো–চাকরিটা হয়েছে হ্যারি?

 হয়েছে।

 তুমি বাড়ি ফিরছ কখন?

 ঠিক নেই, জন যা কাজ দিয়েছে, কালঘাম ছুটে যাচ্ছে।

নিনা হেসে উঠল।

রেনিককে ফোন করলাম। ও তুমি আমায় বাঁচালে হ্যারি। সোজা লোন বে-তে চলে যাও, এক্ষুনি রওনা হতে হবে। গাড়ি পাওয়া গেছে।

আমি নির্বাক, দাঁড়িয়ে রইলাম নির্বাক স্থানুর মতো।

 সাদা গাড়িখানি ঘিরে তিনজন পুলিশ গোয়েন্দা। রেনিক দাঁড়িয়ে আছে একপাশে।

গাড়িটা মিস ম্যানরুক্সেরই তো? আলবৎ, সব মিলে যাচ্ছে। হাতের ছাপ নিতে লোকজন আসবে। চলো, ম্যানরুক্সের সাথে দেখা করে আসি। তোমার গাড়িতেই চলো। দশ মিনিট পরে ম্যানরুক্সের বাড়ির ফটকে গাড়ি থামালাম। বাড়ি তো নয় যেন এক দুর্গ।

মিস ম্যানরুক্স বাড়িতে আছেন? রেনিক বলল।

 না বেরিয়েছেন।

 কখন ফিরবেন?

জানি না।

একবার মিঃ ম্যানরুক্সের সঙ্গে দেখা করতে পারি?

না, উনি অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া কারুর সাথে দেখা করেন না।

 বলো পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে লেফটেন্যান্ট রেনিক এসেছে।

একমিনিট স্যর খবর দিচ্ছি।

–আসুন স্যর, সোজা এই পথ ধরে চলে যান।

.