১. বৃদ্ধ ল্যান্সকম্ব

আফটার দি ফিউনারেল (এরকুল পোয়ারো সিরিজ) – আগাথা ক্রিস্টি

প্রথম পরিচ্ছেদ

০১.

ঘরে গিয়ে বৃদ্ধ ল্যান্সকম্ব জানালাগুলো খুলে মাঝে মাঝে বাইরে উঁকি মারছিল।

এখুনি তারা ফিরে আসবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ করে। বৃদ্ধ জানালাগুলি তাড়াতাড়ি খুলবার চেষ্টা করল, অনেক জানালা।

এণ্ডারবি হল একটা বিরাট বাড়ি ভিক্টোরিয়ার আমলের। বৃদ্ধ বাটলার মেন্টালপিসের ওপর রাখা একটা ছবির দিকে তাকাল, কর্ণোলয়াস এবারেনথী। এই এণ্ডারবি হল ওঁরই জন্য তৈরি হয়েছিল।

মিঃ রিচার্ড হল বৃদ্ধের প্রভু। খুব ভালো লোক ছিলেন। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি ভীষণ আঘাত পেয়েছিলেন তরুণ মার্টিমারের মৃত্যুতে। এরপর বৃদ্ধ শোক সহ্য করতে না পেরে মারা গেলেন। প্রভুর মৃত্যু বৃদ্ধ এণ্ডারবিকে খুব আঘাত করেছে। যুদ্ধে মারা গেলেন মিঃ গর্ডন। এই আরেকটা শোক, মিঃ রিচার্ডের সহ্যশক্তিতে কুলোল না।

তৃতীয় জানালার ব্লাইণ্ড অর্ধেক খুলে আর খুলল না। আটকে গেছে। বিশেষ কেউ এ ঘরে আসে না। এই ঘরটা মেয়েদের জন্য। মাছ ধরা, বন্দুক চালানো আর সুইজারল্যাণ্ডে শীতের খেলাধুলো নিয়ে মত্ত ছিলো মার্টিমার তাই সুন্দর মেয়ে ঘরে আনল না। অনেক দিন কোনো বাচ্চার গলায় আওয়াজও শোনা যায়নি এ বাড়িতে।

বৃদ্ধ ল্যান্সকম্বের মনে ভেসে ওঠে অতীতের ছবিগুলো। মিঃ রিচার্ড ছিলেন পিতৃপ্রতিম। যখন ওঁর চব্বিশ বছর বয়স তখন ওর বাবা মারা যান। ব্যবসার ভার কাঁধে তুলে নেন রিচার্ড। সব সময় বাড়িটা আনন্দমুখর হয়ে থাকত, বাচ্চাদের চেঁচামেচিতে। কেমন যেন হয়ে গেল। এদিক ওদিক সবাই ছড়িয়ে পড়ল, মিঃ লিও মারা গেলেন। মিস লরাও চলে গেলেন। মিঃ টিমোথি পঙ্গু হলেন। বাইরে কোথাও মারা গেলেন মিস পেরালডিন। যুদ্ধ থেকে মিঃ গর্ডন আর ফিরলেন না, সবচেয়ে সে বড় ছিলো। এখন বাকি পঙ্গু টিমোথি এবং কোরা। সে ঐ অসুন্দর শিল্পীকে বিয়ে করেছে। ঐ ফরাসী লোকটাকে বিয়ে করে মিস কোরার সব গেছে। মেয়েটা খুব ভালোবাসত ল্যান্সকম্বকে। ওকে ওরা সবাই ভালোবাসত। তাদের লুকিয়ে ও জেলী দিত। এখন তাদের আর বিশেষ মনে রাখতে পারে না।

মাঝে মাঝে মিসেস লিও আসতো। ওকে প্রভু খুব ভালোবাসতেন, কিন্তু কোনো ছেলেপুলে ওঁর হল না।

উঠে দাঁড়াল ল্যান্সকম্ব, স্মৃতির জাল ছিঁড়ে সে তার বর্তমানে এসে দাঁড়াল। এখন তার কত কাজ।

.

০২.

রান্নাঘরে উঁকি মেরে ল্যান্সকম্ব বিরক্ত হল। এই সাতাশ বছরের মার্জোরীকে তার পছন্দ হয় না। এই বাড়িটাকে মাৰ্জোরী পুরনো সমাধি বলে। সে ভালো মাইনে পায় এবং মিঃ এবারেনথী তার রান্না ভালোবাসেন। একটা টেবিলে বসে জেনেট চা খাচ্ছিল। মিসেস জ্যাকস সাহায্য করার জন্য এসেছিলেন রান্নাঘরে।

তিনি বললেন, বিরাট ব্যাপার হয়েছিলো। উনিশটা গাড়ী, চার্চটা লোকে ভর্তি হয়েছিল। আহা এবারেনথী তুমি চলে গেলে। তোমায় কতলোক ভালোবাসত শ্রদ্ধা করত।

গাড়ীর শব্দ হল বাইরে। মিসেস বললেন, ওরা এসে গেছে।

কালো পোষাক পরা লোকেরা গাড়ী থেকে নেমে সবুজ বসবার ঘরে এসে হাজির হলেন। মিঃ অ্যান্টহুইল, অ্যান্টহুইল এণ্ড বোলার্ড ফার্মের সিনিয়র পার্টনার। দাঁড়িয়েছিলেন ফায়ার প্লেসের ধারে। একগ্লাস শেরী নিয়ে তিনি ঘরের অচেনা লোকদের তার অভিজ্ঞ আইনজ্ঞের দৃষ্টিতে দেখছিলেন। মিঃ অ্যান্টহুইলের বয়স বাহাত্তর। দু বছর আগে অ্যান্টহুইল্ল কাজপত্র ছেড়ে দিয়েছেন, কিন্তু এই রিচার্ড পুরোন মক্কেল ও বন্ধু তাই তিনি না এসে থাকতে পারেননি। রিচার্ডের উইলের তিইি এক্সিকিউটার।

উইলের ব্যবস্থাগুলো তিনি ভাবছিলেন। মিসেস্ লিও হেলেন খুব সুন্দর ভদ্রমহিলা, তাকে উনি ভালোবাসেন ও শ্রদ্ধা করেন।

হেলেনের কত বয়স হবে, পঞ্চাশ কি বাহান্ন। মিঃ লিওর মৃত্যুর পর ও আর বিয়ে করেনি। ওরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসত।

এবার তার চোখ মিসেস টিমোথির উপর পড়ল। সবসময় তার বায়ুরোগগ্রস্ত স্বামীকে দেখাশুনা করে। বেশ অমিতব্যয়ী টিমোথি, তবে যুদ্ধের পর থেকে এত ট্যাক্স বেড়ে গেছে যে ওকে এখন একটু দেখেশুনে খরচ করতে হচ্ছে।

অ্যান্টহুইসলের চোখ এবার জর্জ ক্রসফিল্ডের দিকে ঘুরল। লরার ছেলে, তাকে বিশেষ কেউ চিনত না। একটা অনামী সলিসিটারের অফিসে কাজ করে জর্জ। লরা ওর জন্য কিছুই রেখে যায়নি।

এবার দুটো মেয়ের ওপর চোখ পড়ল অ্যান্টহুইসলের। একজন জেরান্ডিনের মেয়ে রোজামণ্ড অপরজন সুন্দর দর্শন অভিনেতাকে বিয়ে করেছে।

শেষকালে কোরার ওপর চোখ পড়ল মিঃ অ্যান্টহুইসলের, রিচার্ডের ছোট বোন, তার মা প্রসবের সময় মারা যান। কোরার বিয়ে হয়েছিল ল্যান্স কোয়েনেটের সঙ্গে। কিন্তু রিচার্ড এতে রাজী ছিলো না। তবে রিচার্ড ওর উইলে কোরার উপর অবিচার করেনি। অবশ্য এখন কোরা বিধবা, প্রায় বার বছর আগে ওর স্বামী মারা গেছে। কোরাকে বিষণ্ণ দেখাচ্ছিল, তার ভাইয়ের মৃত্যু নিশ্চয়ই তাকে আঘাত করেছে।

ঘরে ঢুকে ল্যান্সকম্ব নিচু গলায় বলল, লাঞ্চ দেওয়া হয়ে গেছে।

.

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

০১.

খাবারের টেবিলে সুখাদ্য ভারী আবহাওয়া হাল্কা করে দিল। খুব বেশি কেউ দুঃখ পায়নি এবারেনথীর মৃত্যুতে।

খাওয়া শেষ হয়ে গেলে ল্যান্সকম্ব বলল, আলো দেওয়া হয়েছে লাইব্রেরিতে। কফি দেওয়া শেষ করে ল্যান্সকম্ব দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলে গেল।

দু একটা সাধারণ কথার পর সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাল অ্যান্টহুইসলের দিকে। ঘড়িটা দেখে নিয়ে তিনি বললেন :

আমায় তিনটে তিরিশের ট্রেন ধরতে হবে। অনেকেই বোধহয় ঐ ট্রেন ধরবেন।

সবই হয়ত জানেন আমিই রিচার্ডের উইলের একজিকিউটার—

কোরা বলল, তাই নাকি? আমি জানতাম না। দাদা আমার জন্য কিছু রেখে গেছেন?

 মগ এবারেনথী গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করল : ও যদি নতুন না করতো তাহলে কি হত।

সমস্তটাই বোধহয় টিমোথি পেয়ে যেত।

অ্যান্টহুইসল বললেন, আমার পরামর্শ মত ও আর একটা নতুন উইল করল। তবে প্রথমে সে পরবর্তী পুরুষের লোকদের ভালো করে চিনে নিতে চেয়েছিলো।

সুসান বলল, তিনি প্রথমেই জর্জকে ও আমাকে নিয়ে পড়লো। তারপর রোজামণ্ড এবং মাইকেলকে।

আমি আপনাদের সবারই কাছে উইলের এক কপি করে পাঠিয়ে দেবো, আমি এখন পড়ে শোনাতে পারি। সংক্ষেপে বলছি : ল্যান্সকম্বের জন্য একটা মোটা বার্ষিক ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ স্টেটের একটা বিরাট অংশকে দু ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ভাগগুলো সমান। চারটে অংশ পাবে টিমোথি, জর্জ ক্ৰন্সফিল্ড, সুসান ব্যাঙ্ক এবং রোজামণ্ড শেন। বাকি দুটো অংশ ট্রাস্ট হিসেবে রাখা হয়েছে। এ ট্রাস্টে যা আয় হবে তার এক অংশ তার ভাই লিওর বিধবা স্ত্রী হেলেন পাবে আর একটা অংশ পাবে মিসেস্ কোরা ল্যান্স কোয়েনেট। ওরা সারা জীবন এই ট্রাস্টের আয় পাবে। তাদের মৃত্যুর পরে উপরোক্ত চারজনের মধ্যে এই ট্রাস্ট ভাগ করে দেওয়া হবে।

অ্যান্টহুইসল বললেন, খুব অসুস্থ হলেও ও যে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে কেউ আশা করেনি। ডাক্তারও অবাক হয়ে গেছে।

বিস্ময়ে কোরা বড় বড় চোখ করে সবার দিকে তাকাল। সে তার মাথাটা একদিকে ঝুঁকিয়ে বলল :

কিন্তু ওকে খুন করা হয়েছে, করা হয়নি?

.

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

০১.

মিঃ অ্যান্টহুইসল লণ্ডনগামী ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাস এ বসে কোরার অস্বস্তিকর কথাটা ভাবছিলেন। যদিও কোরা একটু বোকা।

তিনি ভাবতে লাগেলেন এই মন্তব্যের ফলাফলটা। বিস্ময়ের দৃষ্টিতে সবাই তাকিয়েছিল। কোরা ওদের অদ্ভুত দৃষ্টির অস্বস্তিবোধ করছিল। এমন সব হাস্যকর কথাবার্তা বলে কোরা মেয়েটা। ওর ধারণা থাকে না কি কথা ও বলছে। এইরকম অপ্রিয় সত্যি কথা–

চিন্তার প্রবাহ হঠাৎ থেমে গেল অ্যান্টহুইসলের। এই দ্বিতীয়বার এই গোলমেলে কথাটা তার কানে এল সত্য। এত অস্বস্তিকর কেন এই কথাটা?

সে একবার এই ভাবেই কীচেন মেডের চেহারা সম্বন্ধে মন্তব্য করেছিল। মলি ওর মোটা পেটের জন্য পৌঁছতে পারে কীচেন টেবিলে? ওর পেটটা মাস দুই হল ফুলতে আরম্ভ করেছে। চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল কোরাকে। এবারেনথীর বাড়ির লোকেরা ভিক্টোরিয়া যুগের। কচেন মেড ঐ বাড়ি থেকে চারদিনের জন্য অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।

ভীষণ অস্বস্তিকর কোরার এই কথাটাও। কোরার কথার মধ্যে কি এমন আছে যাতে তার অচেতন মনটা তাকে এমন অস্বস্তি দিচ্ছে। তিনি ওর কথা দুটো বিশেষ করে ভাবতে লাগলেন। একটা হল ও যা বলেছিলো তাতে আমি ভেবেছিলাম এবং দ্বিতীয় ওর মৃত্যুটা এত হঠাৎ।

অ্যান্টহুইসল ভাবতে লাগলেন হা ওর মৃত্যুটা হঠাই বৈকি? ডাক্তার বলেছিল মিঃ এবারেনথী যদি স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখেন তাহলে তিনি আরও বছর দুই তিন নিশ্চয় বাঁচবেন।

এতদূর মনে পড়ে অ্যান্টহুইসলের, রিচার্ড কোনো দিন আসতে বলেনি কোরাকে। কোরার প্রথম কথা ও যা বলেছিল তাতে আমি ভেবেছিলাম এই কথাটা ওর কাছে অস্বাভাবিক এবং অযৌক্তিক মনে হল।

রিচার্ড ওকে কি বলেছিল? কোথায় বলেছিল? রিচার্ড কি বার্কশায়ারে কোরার কাছে গেছিল অথবা চিঠি লিখে কিছু জানিয়েছিল। ভীষণ অস্বস্তিতে ভুগছিলেন অ্যান্টহুইসল। কোরা মেয়েটি বোকা, সে একটা কথার অন্য রকম মানে করতে পারে। ওর ইচ্ছে হল এক্ষুনি গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসেন কোরাকে–এমন কি কথা বলেছিল রিচার্ড যাতে কোরা বলতে পারল ওকে খুন করা হয়েছে।

.

০২.

 একটা তৃতীয় শ্রেণীর কম্পার্টমেন্টে গ্রেগরি ব্যাঙ্কস ওর স্ত্রীকে বলল : তোমার এই গিন্নী বোধ হয় একটু পাগল।

আন্ট কোরা? সুসান বলল, ও একটু সহজ সরল। জর্জ ক্রসফিল্ড বিপরীত দিকে বসেছিল। সে বলল, উনার এই রকম কথা বলা বন্ধ করতে হবে। এতে লোকে কিছু ভেবে নিতে পারে।

রোজামণ্ড বলল : আমার মনে হয় না ঐ রকম পাগলের কথা কেউ শুনবে।

অপ্রত্যাশিতভাবে ওর স্বামী বলল : আমার মনে হয় জর্জ ঠিক কথা বলেছে। লোকেরা অনেক কিছু বলতে পারে।

রোজামণ্ড বলল, তাতে কি হবে? একটা হাসির ব্যাপার ছাড়া আর কি হবে?

হাসি? প্রশ্ন করল চারটে গলা।

হুঁ, বাড়িতে একটা খুন হলে একটা উত্তেজনার ব্যাপার হবে।

রোজামণ্ড বলল–উনি যদি খুন হয়ে থাকেন, তাহলে কে খুন করেছে বলে মনে হয়?

তার দৃষ্টি গাড়ীর চারদিকে ঘুরতে লাগল। রোজামণ্ড বলল, উনার মৃত্যুতে আমাদের সবারই সুবিধে হয়েছে।

রোজামণ্ডের কথা কেউ আর শুনছিল না। সবাই তাদের ভবিষ্যতের কথা ভাবছিল। গ্রেগরী ভাবছিল, ধরা ও ছেড়ে দেওয়া। এবার আমি টাকাটা আনতে পারি কেউ সন্দেহ করবে না।

সুসান বলছিল, বুড়ো মামা মারা গেল আমার কষ্ট হচ্ছে। মার্টিমার মারা গেল। পঙ্গু হয়ে কষ্ট পেয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে এই ভালো হয়েছে।

.

০৩.

সে রাতে মড এবারেনথী এণ্ডারবীতে থেকে গেলেন। তিনি ভাবছিলেন সবই রিচার্ডের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। ব্যক্তিগত চিঠিও থাকতে পারে, তবে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্র সবই অ্যান্টহুইসলের জিম্মায় গেছে মনে হয়। উনি তাড়াতাড়ি টিমোথির কাছে গেলেন, না গেলে টিমোথি রাগ করে। আর রাগলে মাঝে মাঝে জ্ঞানকাণ্ড থাকে না। সে ভাবল ডঃ বার্টনকে একথা বলবে কিনা–টিমোথি ঐ স্লিপের পীলগুলো এখন বেশি মাত্রায় খাচ্ছে। টিমোথি ওষুধের ব্যাপারে ভীষণ অবুঝ।

সে নিশ্বাস ফেলল, তার মনটা তারপর খুশী হয়ে উঠলো। উদাহরণ হিসেবে বাগানটা….

.

০৪.

বসার ঘরে বসে হেলেন এবারেনথী ডিনারের জন্য মডের অপেক্ষা করছিল। এখানে লিও এবং অন্যদের সাথে তার পুরোন দিনের কথাগুলো মনে হল।

এই বাড়ি কে কিনবে? এটাকে সম্ভবত তরুণদের জন্য হোস্টেল করা হবে। সে ভাবতে লাগল যা টাকা পেল তাতে রাখতে পারবে সাইপ্রাসের ভিলাটা। এতদিন যতসব পরিকল্পনা করেছে সে সব কাজে লাগাতে পারবে।

বেচারা রিচার্ড। ঘুমের মধ্যে ওর মৃত্যু হয়েছে বাইশ তারিখে। ওর মৃত্যু নিশ্চয়ই খুন এই কথাটা কোরার মাথায় ঢুকেছে।

হেলেন ভাবল, তবে কি ভাবে সহজে বলে দিলো। ওকে খুন করা হয়েছে,তাই না। এই ছবিটা হঠাৎ পরিষ্কারভাবে তার মনের মধ্যে ফুটে উঠতে, হেলেনের কপালে ভাঁজ পড়ল…একটু গোলমাল আছে ছবিটাতে।

এটা কি কারুর মুখের ভাব? তাই কি? সেই রকম কিছু একটা, কি করে সে এটাকে বোঝাবে? ঐ রকম কিছু থাকা ওখানে উচিত ছিল না…?

.

০৫.

সুইনডন বুফেতে বসে একজন মহিলা চা খেতে খেতে ওর ভবিষ্যতের কথা ভাবছিল।

তারপর সে ঘড়ির দিকে তাকাল। আর পাঁচ মিনিট দেরি আছে ট্রেন ছাড়ার। সে একটা সুখী শিশুর মত হাসল।

সে এতদিন একটু ফুর্তি করতে পারবে, ট্রেনের দিকে যেতে যেতে সে প্ল্যান আঁটছিল।

.

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

০১.

একটা অশান্ত রাত কাটালেন মিঃ অ্যান্টহুইসল।

সে বাড়িটার দেখাশুনা করে তার বোন–ট্রেতে করে নিয়ে এল সকালের ব্রেকফাস্ট।

তার বোন বলল–তোমার মত বয়সের লোকের কারুর অন্ত্যেষ্টিতে উপস্থিত থাকা খুব খারাপ। তুমি যদি নিজের দিকে নজর না দাও তাহলে শীগগিরই তোমার অনেক দিনের বন্ধুর কাছে হঠাৎ চলে যাবে।

সন্ধ্যে পৌনে ছটার সময় টেলিফোন বেজে উঠল। তারের অন্যপ্রান্তে অ্যান্টহুইসল এণ্ড বোলার্ডের দ্বিতীয় পার্টনার মিঃ জেমান প্যারটের গলায় শব্দ শোনা গেল।

প্যারট বলল শোন অ্যান্টহুইসল, আমাকে এইমাত্র লীচেট সেন্ট মেরী নামে একটা জায়গা থেকে পুলিশ ফোন করেছিল।

লীচেট সেন্ট মেরী?

হ্যাঁ, একজন কোরা ল্যান্স কোয়েনেট সম্বন্ধে। ও এবারেনথী এস্টেটের একজন ভাগীদার না?

হ্যাঁ, আমার সাথে পরশুদিন দেখা হয়েছিল, কি হয়েছে ওর?

 প্যারেট বলল, ও খুন হয়েছে।

খুন হয়েছে? পুলিশ তোমাকে ফোন করল কেন?

কোরার মিস গিলক্রিস্ট নামে একজন কাজের মেয়ে। পুলিশ ওকে সলিসিটারের নাম জিজ্ঞাসা করতে ও আমাদের নাম বলে দিয়েছে।

পুলিশ কি করে বুঝল খুন হয়েছে?

কারণ খুনি কুড়ুল দিয়ে খুন করেছে।

 ডাকাতি?

সেইরকমই মনে হয়।

 কখন হয়েছে?

আজ বিকেল দুটো থেকে সাড়ে চারটের মধ্যে।

কাজ করার লোক কোথায় ছিল?

লাইব্রেরীতে বই পাল্টাতে গেছিল। পুলিশ জিজ্ঞেস করল কোরাকে কে আক্রমণ করতে পারে। আমি বলেছি, খুব অস্বাভাবিক। হয়ত স্থানীয় কোনো বোকা চোর চুরি করতে ঢুকে মাথা ঠিক রাখতে না পেরে খুন করে ফেলেছে।

ফোনটা রেখে দিলেন অ্যান্টহুইসল। আবার সত্যি কথাটা আঘাত করল অ্যান্টহুইসলের মনে।

.

০২.

ইনস্পেক্টর মর্টন ও মিঃ অ্যান্টহুইসল এখন সামনাসামনি বসে আছেন।

ইনস্পেক্টর জিজ্ঞাসা করলেন, মিঃ অ্যান্টহুইসল, আপনি তো মিসেস ল্যান্স কোয়েনেটকে অন্ত্যেষ্টির দিন দেখেছিলেন। অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেছিলেন কি?

অ্যান্টহুইসল বললেন, যে খুন হবে তাকে কি আগে থেকে অস্বাভাবিক হতে হবে?

মর্টন হেসে বললো, আমি কিছু একটা খুঁজে বেড়াচ্ছি।

 ও কি সম্পত্তি পেয়েছিল?

হা।

তবে প্রচণ্ড মাথার যন্ত্রণায় ওর ঘুম ভেঙে গেছিল। সে দুটো ঘুমের বড়ি খেয়ে নিয়েছিল এবং গিলফ্রিস্টকে লাইব্রেরীতে বই পাল্টানোর জন্যে পাঠিয়ে দিয়েছিলো। সেই সুযোগে খুনী জানালা ভেঙে বাইরে থেকে কুড়ুল নিয়ে ঢুকেছিল।

অ্যান্টহুইসল বললেন, যদি মেয়েটা বাধা দেয়–

না, না মেডিকেল রিপোর্ট পাওয়া গেছে ঘুমোনোর সময় খুন করা হয়েছে। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হয়নি সুতরাং খুনী যদি গাড়ী করে এসে থাকে তবে বোঝা মুস্কিল।

কিছু চুরি গেছে?

সেও অদ্ভুত ব্যাপার। গয়নার বাক্স থেকে কিছু গয়না নিয়ে গিয়ে বাইরের ঝোঁপের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গেছে।

হা হতে পারে, গিলফ্রিস্টও খুন করতে পারে। এই দুজন মেয়ের হয়ত কোনো ঝগড়া হয়েছিল। আপনি বলছেন ল্যান্স কোয়েনেটকে মেরে কারুর স্বার্থসিদ্ধি হবে না?

আমি ঠিক সে কথা বলিনি।

মর্টন বলল, আপনি বললেন, ল্যান্স কোয়েনেটের নিজের বলতে কিছু ছিল না। তার ভাইয়ের সম্পত্তি তার একমাত্র উপার্জনের উপায় ছিল?

সত্যি কথা।

আমি বলছি ওর ভাই যে সম্পত্তির ভাগ ওর জন্য রেখে গেছিল, ওর মৃত্যুর পর কারুর পাওয়ার সম্ভাবনা আছে?

না ওর মৃত্যুর পরে ওর ভাগের সম্পত্তি সবার মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে।

ইনস্পেক্টরকে হতাশ দেখাল।

কখন সে দেহটা দেখতে পায়?

পাঁচটা পর্যন্ত কেউ দেখেনি। গিলক্রিস্ট চারটে পঞ্চাশের বাসে ফিরে ছিল। রান্নাঘরে গিয়ে সে ঘরময় ভাঙা কাঁচ দেখতে পায়। সে উপরে গিয়ে শোবার ঘরে উঁকি মারে, ওকে এই অবস্থায় দেখে চেঁচাতে চেঁচাতে নিচে নেমে যায়। গিলফ্রিস্টের ঘরে বা বাথরুমে, ওর কাপড়-চোপড়েও কোনোরক্তের চিহ্ন ছিল না। তাই ওকে সন্দেহ করা যায় না। আপনি গিলফ্রিস্টের সাথে দেখা করতে যাবেন?

যেতে পারি।

যদি যান ভালো হয়, ভদ্রমহিলা ভালো। আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। আপনি হয়ত নতুন কোনো সূত্র পেতে পারেন। সে থামল তারপর বলল। দেহটা মর্গে আছে, যদি দেখতে চান

মজার ব্যাপার যে আর একটা খুনের কথা বলেছিল তার নিজের খুনের আগেই।

ওকে খুন করা হয়েছে তাই না? ইনস্পেক্টরকে একথাটা বলা কোনো মানেও হয় না। কোরাকে রিচার্ড কি বলেছিল গিলফ্রিস্ট হয়ত সে সম্বন্ধে কিছু শুনেছিল।

অ্যান্টহুইসল মনে মনে ঠিক করলেন আমাকে তাড়াতাড়ি গিলফ্রিস্টের সাথে দেখা করতে হবে।

.

০৩.

অ্যান্টহুইসলকে গিলক্রিস্ট পঞ্চাশোর্ধ ভদ্রমহিলা অভিনন্দন জানালেন।

আপনি এসেছেন, আমি খুব খুশী হয়েছি। বসার ঘরে নিয়ে গেলেন অ্যান্টহুইসলকে। ঘরগুলোতে জায়গা কম। এখানে ওখানে কতকগুলো ছবি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

মিসেস ল্যান্স কোয়েনেট ছবি খুব ভালোবাসত। সেলে কিনত, কোনো ছবিই সে এক পাউণ্ডের বেশি দামে কেনেনি। এই ছবিটাকে প্রাচীন ইটালিয়ান ছবি বলত।

আমাকে দেখে বুঝতে পারল গিলক্রিস্ট। বলল, আমিও ছবি সম্বন্ধে বিশেষ বুঝি না, আমিও বাচ্চা বয়সে ছবি আঁকার চেষ্টা করতাম।

গিলফ্রিস্ট বলল, আমরা দুজনে বেশ ছিলাম, কোরা একদিক থেকে বাচ্চা মেয়ের মত ছিল। কোনো কিছু মাথায় এলেই সে বলে ফেলত।

তুমি মিসেস ল্যান্স কোয়েনেটের কাছে কতদিন ছিলে?

সাড়ে তিন বছর।

তুমি ওর সঙ্গী ছিলে এবং বাড়ির দেখাশুনা করতে?

 গিলক্রিস্ট বলল, আমি রান্না করতাম, ঘরটা পরিষ্কার করতাম, অবশ্য বাড়ির ভারী কোনো কাজ করতাম না।

মিস গিলফ্রিস্ট একটু থেমে বললেন : ইনস্পেক্টর মর্টন খুব ভালো লোক। তিনি আমায় মিসেস লেফের কাছে যেতে বলেছিলেন। তবে আমি রাজি হইনি। ওরা ওর দেহটা নিয়ে ঘর বন্ধ করে দিল। একজন কনস্টেবলকে পাহারা রেখে গেল।

অ্যান্টহুইসল বললেন, আমায় ব্যাপারটা হওয়ার আগের ঘটনা বল।

 উত্তর থেকে ফিরে আসায় ট্রেন খুব দেরী করেছিল? ও বেশ ক্লান্ত হয়ে বাড়ি এল।

ও অন্ত্যেষ্টি সম্বন্ধে কিছু বলেছিল? হ্যাঁ, দুএকটা কথা বলেছিল, যেমন চার্চে লোকে ভর্তি হয়ে গেছিল। তার ভাই টিমোথি না আসায় একটু দুঃখ অনুভব করেছিল। টিমোথি তো?

হা টিমোথি।

সে তারপর বলল সে তার ভাইকে গত কুড়ি বছরে দেখেনি। টিমোথি তার স্ত্রী মওকে সহ্য করতে পারত না….ও-হ একথাটা বলে ফেলার জন্য আমায় ক্ষমা করবেন।

মিঃ অ্যান্টহুইসল বললেন, আমি ওদের আত্মীয় নই। তাছাড়া কোরা ও ওর বৌদির ভালো সম্পর্ক ছিল না তা আমি জানি।

হা সে তার বৌদি সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করত না। ও তারপরে শুতে চলে যায়।

তার আর কোনো কথা মনে নেই?

ও আমাকে বলেছিল তুমি সাইপ্রেস যেতে চাও? ও বলেছিল, আমরা যাব। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম ও ভাইয়ের জন্য কিছু রেখে গেছে।

অ্যান্টহুইসল তাড়া দিলেন, পরের দিন সকালে?

হা পরের দিন সকালে ওর শরীর ভালো ছিল না। বিছানাতেই ব্রেকফাস্ট খেয়েছিল। তারপর লাঞ্চের সময় বলল, ওর ঘুম কিছুতেই আসছে না। তাই দুটো ঘুমের ট্যাবলেট দিতে বলল, তার আগে বলল লাইব্রেরী থেকে বই পাল্টে আনতে। তাই আমি দুটোর একটু পরে লাইব্রেরীতে রওনা হয়ে গেছিলাম।

মিঃ অ্যান্টহুইসল প্রশ্ন করলেন, তাহলে সে বিশেষ করে আত্মীয়দের কথা বলেনি?

না, না, শুধু টিমোথির অনুপস্থিতিতে ওর দুঃখ ছাড়া।

সে তার ভাইয়ের মৃত্যু সম্বন্ধে কিছু বলেনি?

না। শুনেছিলাম অনেকদিন থেকে অসুখে ভুগছে।

 তুমি ওকে দেখেছ কবে?

যখন উনি এখানে মিসেস ল্যান্স-কোয়েনেটের সাথে দেখা করতে আসেন। দাঁড়ান বলছি…এই সপ্তাহ তিনেক আগে।

ওর অসুখের কথা শুনে কোরা আরও অবাক হয়ে গেছিল।

সে জানত যে ওর ভাই অসুস্থ?

মিঃ অ্যান্টহুইসল জানেন রিচার্ডের মধ্যে কোনো অথর্বের ভাব ছিল না। বেশ টনটনে জ্ঞান ছিল রিচার্ডের, তার উপর অত্যাচার করা হচ্ছে।

সে তার বোনের সাথে এরকম একটা কথা বলেছে এটা খুব অস্বাভাবিক। এও হতে পারে এবারেনথীর কথার অন্যরকম মানে করেছে এই বোকা মেয়ে কোরা।

জিজ্ঞেস করলো মিঃ অ্যান্টহুইসল। কোরার কোনো উইল ছিল কিনা। গিলফ্রিস্ট উত্তর দিল তার ব্যাঙ্কে আছে।

মিঃ অ্যান্টহুইসল তাকে অনুরোধ করলেন নতুন কাজ না পাওয়া পর্যন্ত ঐ কটেজে থাকতে। গিলক্রিস্ট সহজে রাজী হয়ে গেল।

.

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

০১.

তোমার বয়স হয়েছে, মিস্ অ্যান্টহুইসল বললেন, রিচার্ড এবারেনথী ওঁর অনেক দিনের বন্ধু ছিল।

বন্ধু ছিল তো কি হয়েছে, ও তো মারা গেছে। আচ্ছা ওরা তোমারই কাছে আসে কেন?

আমি কোরাকে রিচার্ডের অন্ত্যেষ্টিতে উপস্থিত হওয়ার জন্য যে চিঠি দিয়েছিলাম, পুলিশ ঐ চিঠিটা পেয়েছিল।

ওঃ এই এবারেনথীরা তো জ্বালিয়ে মারল। ওদেরই একজন টিমোথি আজ ফোন করেছিল। সেও নিউইয়র্ক শায়ারের একটা অন্ত্যেষ্টির কথা বলল, পরে আবার ফোন করবে বলেছে।

মড এবারেনথী সন্ধ্যাবেলায় অ্যান্টহুইসলকে ফোনে ডাকল। কোরার মৃত্যুর কথা শুনে টিমোথির অবস্থা ভীষণ খারাপ হয়ে পড়েছে। বলল।

মড বলল, আপনি কি মনে করেন এটা খুন?

হ্যাঁ, খুন।

কাগজে লিখেছে একটা কুড়ুল দিয়ে?

হা।

আমি টিমোথিকে নিয়ে বিশেষ চিন্তিত। ওকে আমি শুইয়ে রেখেছি। কিন্তু ও বার বার আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে। ও জানতে চাইছে কোরা কোনো উইল করে গেছে কিনা।

হ্যাঁ, একটা উইল করে গেছে এবং টিমোথিকে একজিকিউটার করে গেছে। সে তার ছবিগুলো এবং ক্রমেথি ব্রোচটা তার সঙ্গী গিলখ্রিস্টের জন্য রেখে গেছে, বাকি সবই সুসানের জন্য।

সুসানের জন্য? ওতো বাচ্চা বয়সে ছাড়া সুসানকে চোখে দেখেনি।

মড একটু থেমে বলল, আচ্ছা তাহলে কোরার রিচার্ডের দেওয়া সম্পত্তির ভাগটা সুসান পাবে?

না না। কোরার সম্পত্তিটা সবার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।

কাউকে ধরা হয়েছে?

 এখনও না।

আপনি তাহলে আসতে পারবেন না, আপনি এলে আমি খুশি হতাম অর টিমোথি একটু স্বস্তি পেত।

ঠিক আছে, আমি যাব, একজিকিউটর হিসাবে কয়েকটা কাগজপত্রে টিমোথির সইও লাগবে।

খুব ভালো হল। কালকে রাত্রে থাকবেন এখানে। এগারটা কুড়ির ট্রেনই সবচেয়ে সুবিধাজনক।

না না, আমি বিকেলের ট্রেনে যাচ্ছি।

.

০২.

একটু বিস্ময়ের সাথে জর্জ ক্রসফিল্ড অভ্যর্থনা জানালেন মিঃ অ্যান্টহুইসলকে।

অ্যান্টহুইসল বললেন, আমি এইমাত্র লীচেট সেন্ট মেরী থেকে ফিরলাম।

তাহলে অ্যান্ট কোরাই? আমি কাগজে পড়ে বিশ্বাস করতে পারিনি। ভেবেছিলাম ঐখানের আর কেউ হবে।

ল্যান্স কোয়েনেট সাধারণ নাম নয়।

অধিক, তবে নিজের আত্মীয়দের মধ্যে কারুর বিপদের কথা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না।

আপনি বিশেষ কিছু চিন্তা করছেন?

না, না, তা নয়। সম্পত্তির ব্যাপার ঠিকঠাক হতে সময় লাগবে। তোমার কি আগাম টাকার দরকার?

হা, আমি আজ সকালে ব্যাঙ্কে গেছিলাম। আমি ওদের কাছে আপনার কথা বলেছি, ওরা ওভারড্রাফট দিতে রাজি।

চোখ পিটপিট করল জর্জ। অ্যান্টহুইসল তার অভিজ্ঞতার দৃষ্টি দিয়ে এর অর্থ বুঝলেন।

অ্যান্টহুইসলের নীরবতায় ভুল বুঝে জর্জ ব্যাখ্যা করতে লাগল।

আমার একটু ধারণা সময় যাচ্ছে, যাতে টাকা খাঁটিয়েছিলাম যেটা সফল হল না। আমার কিছু মূলধন দরকার।

অ্যান্টহুইসল বললেন, অন্ত্যেষ্টির পরে আমি তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম, তোমাকে অফিসে পাইনি।

হা কোরার মৃত্যুতে টাকার অঙ্কটা আরও বাড়বে।

দুঃখের ভান করে জর্জ বলল :

 বেচারা, যখন একটা নতুন জীবনের পথে পা ফেলতে যাচ্ছিল—

 তুমি যে দুটো ঘোড়ায় জিতেছিলে তাদের নাম মনে করতে পারবে?

বলছি। মার্ক আর ফ্রগ। ওদের নাম ভুলব না।

 শুষ্ক হাসি হেসে মিঃ অ্যান্টহুইসল বিদায় নিলেন।

.

০৩.

রোজামণ্ড বলল, আপনাকে দেখে খুশী হলাম। তবে এত সকালে।

ব্ল্যাক কফি নিয়ে হাই তুলতে তুলতে মাইকেল এল।

মিঃ অ্যান্টহুইসল দেখলেন, ঘরের চারদিকে পোড়া সিগারেট, বোতল, গ্লাস ছড়ানো, একটা বিশৃংঙ্খল অবস্থা।

এই বিশৃংঙ্খলার মাঝে দুজন সুন্দর যুবক-যুবতী। রোজামণ্ড বলছিল, আমাদের ভাগ্য ভালো। রিচার্ড মামা খুব ভালো।

তাই নাকি?

চুরি করে, ডাকাতি করে, খুন করে পুলিশের তাড়া খায়–কিন্তু শেষকালে একটা বিস্ময়কর কাজ করে।

মাইকেলের মুখ থেকেও বিরক্তিটা মুছে যায়নি। অ্যান্টহুইসল বিরক্ত হয়ে বলল। তুমি তোমার বকবকানি থামাবে।

অ্যান্টহুইসল বললেন, আমি এইমাত্র লীচেট সেন্ট মেরী থেকে ফিরলাম।

তাহলে আন্ট কোরা খুন হয়েছেন। কুড়ুল দিয়ে? আমি ওদের বললাম। ওরা বিশ্বাস করল না।

নীরব মাইকেল।

দুটো খুন একটার পর একটা।

বোকার মত কথা বোল না। তোমার মামা খুন হয়নি।

কোরা বলল, মামা খুন হয়েছেন, অ্যান্টহুইসল হস্তক্ষেপ করলেন।

তোমরা অন্ত্যেষ্টির পর লণ্ডনে ফিরে এসেছিল?

হা।

আমি তার পরের দিনটায় তোমাদের খবরটা চাই।

ডীয়ার আমরা পরের দিন কি করেছিলাম? আমরা বারটা পর্যন্ত বাড়িতে ছিলাম। তারপরে তুমি রোজে হাইসের সাথে দেখা করতে চাইলে এবং অসকারের সাথে লাঞ্চ খেতে গেলে। বিকেলে বাজার গিয়ে খাওয়ার পর আমরা ক্যানটিনে ডিনার খেয়ে দশটার সময় বাড়ি ফিরি।

মাইকেল বলল, আমাদের সম্বন্ধে কি জানতে চাইছো?

এবারেনথীর সম্পত্তি সম্বন্ধে কয়েকটা ব্যাপার আর সই নেওয়ার জন্য।

রোজামণ্ড বলল, টাকা এখন পাওয়া যাবে?

দেরী হবে।

রোজামণ্ড জিজ্ঞেস করল, আন্ট কোরা টাকা রেখে গেছেন নাকি?

সামান্য, সুসানের জন্য।

সুসানের জন্য কেন? কত টাকা?

কয়েকশ পাউণ্ড আর কয়েকটা আসবাবপত্র।

.

০৪.

সুসান ব্যাঙ্কের উজ্জীবিত ভঙ্গীতে কথা বলা লক্ষ্য করেছিলেন অ্যান্টহুইসল। সুসানকে দেখতে অনেকটা রিচার্ডের মত। রিচার্ডের বিচারে সুসানই উপযুক্ত উত্তরাধিকারী হতে পারত। কিন্তু সুসান শুধু একটা ভাগ পেল যা রোজামণ্ডও পেয়েছে।

কারণটা বোধ হয় সুসানের স্বামী। গ্রেগরী ব্যাঙ্ককে ওর স্বামী হিসেবে মোটেই মানায়নি। তবুও সুসান সবার মতের বিরুদ্ধে একেই বিয়ে করেছিল।

সুসান তোড়ে কথা বলে যাচ্ছিল।

পুলিশ কোনো কাজের নয়। কোনো অপরাধীকেই পুলিশ ধরতে পারল না।

অ্যান্টহুইসল ঠাট্টা করে বললেন, তুমি কি খুন নিয়ে গবেষণা করছ?

এসব ভাববার ব্যাপার নয়? আজ আমার আন্ট মরল। এইসব অপরাধী খুনীগুলো নৃশংস খুন করে বেড়াচ্ছে, আর পুলিশের কোনো মাথা ব্যথা নেই।

পুলিশকে ছোট করে দেখো না সুসান। ওরা ওদের কাজ চালিয়ে যায়।

অ্যান্ট কোরার ব্যাপারে কাউকে অনুমান করতে পেরেছ?

তা বলতে পারি না।

একটা মারাত্মক লোক হবে, কোনো ডিসচার্জড সৈনিক বা জেল থেকে পালানো লোক হতে পারে, আমি কুড়ুলের কথায় অনুমান করছি।

খুনী যদি অল্পবুদ্ধি না হয় তবে খুনের একটা মোটিভ থাকা উচিত, সুসান বলল।

অ্যান্টহুইসল বললেন যদি উদ্দেশ্যমূলক খুন হয় তাহলে খুনী হতে পার একমাত্র তুমি!

কেন? পেছন থেকে গ্রেগরী এগিয়ে এল, তার চোখে একটা নোংরা দৃষ্টি। কি করেছে সুসান, আপনি এমন কথা বলছেন কেন?

সুসান বলল, চুপ কর গ্রেস, মিঃ অ্যান্টহুইসল সত্যি সত্যি বলেননি।

একটু ঠাট্টা করছিলাম, কোরা তার সম্পত্তি তোমাকে দিয়ে গেছে। তবে কয়েকশ পাউণ্ড কোনো খুনের মোটিভ হতে পারে না।

সুসান বলল, উনি আমার জন্য টাকা রেখে গেছেন কিন্তু উনি তো আমাকে চিনতেন না।

 আমার মনে হয় তোমার বিয়ের ব্যাপারে সমস্যাটির কথা ও শুনেছিল, গ্রেগ বলল, উনার বিয়ের ব্যাপারে সমস্যা হয়েছিল তাই।

সুসান বলল : ও একজন শিল্পীকে বিয়ে করেছিলেন। ভালো ছবি আঁকতেন।

 আমি ওখানে যাব। কেউ আছে ওখানে?

আমি মিস গিলক্রিস্টকে থাকতে বলেছি। জর্জ বলল, ঐ খুনের বাড়িতে থাকছেন? ভদ্রমহিলার সাহস আছে তো?

ওর সাথে অ্যান্ট কোরার ভালো সম্পর্ক ছিল?

ভালোই ছিল মনে হয়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মিঃ অ্যান্টহুইসল বললেন, কোরা টিমোথিকে উইলের একজিঊিটার করে গেছে। আজ আমি টিমোথির কাছে যাচ্ছি। আমি ওকে তোমার কোরার বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়ে দেব। তিনি দেখে বুঝতে পারলেন ওরা অর্থ কষ্টে আছে।

কি করবে ভেবেছ?

আমি কাণ্ডিগান স্ট্রীটে একটা বাড়ি দেখে রেখেছি। আপনি আগাম কিছু টাকা দিতে পারেন?

নিশ্চয়ই।

সুসান হঠাৎ বলল, আচ্ছা কোরা আমাদের বিয়ের কথা জানলেন কি করে, আমরা তো কাউকে জানাইনি?

রিচার্ডের কাছ থেকে বোধহয় শুনেছে। রিচার্ড তিন সপ্তাহ আগে ওখানে গেছিল।

তাহলে রিচার্ড মামা ওখানে যেতেন, আমি জানতাম না তো।

আমিও জানতাম না।

তাহলে তখনই।

তখন কি?

কিছু না, সুসান বলল।