ফ্লেশ অফ দি অর্কিড
০১.
ঝড়ের শব্দ ছাপিয়ে নারীকণ্ঠের এক তীব্র আওয়াজ বাড়িটার কোন এক অংশ থেকে বাতাসে ভেসে আসে যেন কোন অলৌকিক চীৎকার।
বাড়িটার ছড়ানো টানা বারান্দা দিয়ে একটা অল্পবয়সী নার্স রাতের খাবার হাতে নিয়ে এগিয়ে আসছিলো। ঠিক তখনই বারান্দার বাঁকের কাছে শক্ত চেহারার একটা মানুষকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। সেই মুহূর্তে আবার সেই বীভর্ৎসনারীকণ্ঠের আওয়াজ শোনা যায়।
এই চীৎকারে আমার জ্ঞান হারাবার জোগাড় হয়েছে। ইচ্ছে করে ওকে মার লাগাই।
নার্সটা টুপির নীচে চুলগুলিকে ঠিক করতে করতে বলল ওই দশ নম্বর ঘরের মেয়েটা ঝড় উঠলেই এমনি করে।
ও এমন জানলে আমি এ কাজটা নিতাম না। জান তো আজ পনেরো নম্বর, ঘরের পাগলীটা আমার চোখ গেলে দেবার চেষ্টা করেছে।
নার্স হাসল, অত মন খারাপ করো না জো। মানসিক রোগীদের হাসপাতালে কাজ করলে এগুলো তো সহ্য করতেই হবে।
ওরা কথা বলতে বলতেই আবার সেই নারীকন্ঠের আর্তচিৎকার শোনা গেল। অপার্থিব হাসি শোনা গেল।
নার্স বলল, সবই আস্তে আস্তে সয়ে যাবে। জান তো পাগল একেবারে ছেলেমানুষের মতো। এরপর নার্সটা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তোমার কাজকর্ম শেষ হয়ে গেছে?
জো বলল, এটা কি তোমার আমন্ত্রণ। তবে তোমার যদি দেরী হয় তাহলে আমি শুতে যাই। আমার আবার ভোর চারটের সময় উঠতে হবে।
নার্সটি বলল আমারও সঙ্গীর অভাব নেই, ডাক্তার ট্রেভার্স আমার সঙ্গে রামি খেলবেন বলেছেন।
জো বলল, এটাই ডাক্তার ট্রেভার্সের এখন একমাত্র আকাঙ্খা। বলেই রোগীদের ট্রে থেকে একটুকরো গাজর তুলে নিল।..
নার্স রেগে বলল, রোগীদের খাবারে হাত দেবে না। দেখো এটা ওই মেয়েটার খাবার।
জো বলল-মেয়েটার অনেক টাকা। এক টুকরো গাজর কম খেলে ওর কোন ক্ষতি হবেনা। : আচ্ছা মেয়েটা দেখতে শুনতে কেমন বলো তো। সামতো বলে দারুণ রসালো মাল। এছাড়া ব্লানডিশ তো ওর নামে ষাট হাজার ডলার রেখে গেছে।
নার্সটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবল সত্যি এক এক জনের কি সৌভাগ্যই না থাকে। তারপর জোকে বলল যাই হোক ও তোমার মনোমত হবে না।
জো বলল–যদি ষাট লাখ ডলারের গন্ধ মাখানো থাকে তাহলে মিসেস অ্যাস্টরের ঘোড়াটাও আমার মন মতো হবে।
কিন্তু জো তোমার কিন্তু ওর সামনে চোখ খুলতে ভয় লাগবে। বৌ হিসাবে ও কিন্তু মোটই ভাল হবে না। এছাড়া ওর আবার খুনখারাপি করার দিকে ঝোঁক আছে কিনা! নার্সটি হেসে বলল।
জো বলল অতগুলো টাকার জন্য আমি সে ঝুঁকি নেবো, এছাড়া আমার সম্মোহনী চোখ দিয়ে ওকে ঠিক কব্জা করে ফেলব।
তারপর নার্সটির দিকে চেয়ে বলল আজ রাতে আটটার সময় তোমার সঙ্গে দেখা হবে। সেই মুহূর্তে তিনতলায় নারীকণ্ঠে নতুন উদ্দীপনায় আবার সেই তীক্ষ্ণ চিৎকার শুরু হয়ে যায়।
নার্সটি চাবি খুলে ঘরে ঢুকল হাতে ট্রে নিয়ে। দেখল বিছানায় একটি নারীমূর্তি শুয়ে আছে। মেয়েটার সামনে গিয়ে বলল, উঠুন। কিন্তু কেউ সারা না দিতে ও কম্বলটা টান দিয়ে সরিয়ে দিয়ে দেখল সেখানে কোনো রক্ত মাংসের শরীর নয়, বালিশ শোয়ানো রয়েছে।
ভাল করে নার্সটি কিছু বোঝবার আগেই কে শক্ত হাতে ওর গোড়ালি ধরে টান মারলো। স্থির থাকবে চেষ্টা করেও সে বিফল হলো। কার্পেট বিছানো মাটির ওপর গড়িয়ে পড়ল।
তিনতলায় সেই নারীকণ্ঠ আবার অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পড়ল। মনে হল যেন কোন হায়না হাসছে।
.
জো ডাক্তার ট্রেভার্সের শোয়ার গ্যাম গারল্যান্ডের সঙ্গে একই ঘরে ভাগাভাগি করে থাকে।
জো কিন্তু বিছানায় শুয়েও ঘুমাতে পারলো না। তার পাশে গারল্যান্ড শুয়ে ঘুমাচ্ছে। সে ভাবল কি একখানা বিশ্রি ঝড়ের রাত। আর ওপরতলার পাগলীটা কি ভীষণ চেঁচাচ্ছে। মাথাটা যেন ছিঁড়ে পড়বে।
গারল্যান্ড বলল–আমরা ঘুমাচ্ছি এমন সময় মেয়েটা যদি নেমে এসে ছুরি ধরে, তারপরেও তো ও হাসবে।
জো শিউরে উঠে বলল, এসব বাজে মজা আমি মোটেই পছন্দ করি না।
একটা মেয়ে কিন্তু এখানে এমন কাণ্ডই করেছিল। একটানার্সকে তাড়া করে তার মুণ্ডটা কেটে নিয়ে ফুটবল খেলছিল।
জো বলল তুমি একটা মিথ্যুক। তারপর দুঃখিত গলায় বলল আমার কপালটা খুব খারাপ। আজ রাত আটটায় সোনালি চুলের নার্সটার সঙ্গে দেখা করার কথা ওকে নিয়ে গ্যারেজে বসব ভেবেছিলাম। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ওকে নিয়ে বাইরে যেতেও আমার ভাল লাগবে না।
ওঃ ওই মেয়েটা। ওর কিন্তু ওসব ইচ্ছে টিচ্ছে খুব বেশিই আছে। এখানে কোন নতুন লোক এলেই ও ওর নাগর করে নেয়।
হঠাৎ জো বলল বাইরে কে যেন দাঁড়িয়ে। গারল্যান্ড মৃদু হেসে বলল হয়তো ইঁদুর-টিদুর হবে। এছাড়া বাইরে কি কারোর থাকতে নেই? কিন্তু গারল্যান্ড জোর মুখের দিকে তাকিয়ে কি ভেবে বাইরের দিকে কান পাতল।
গারল্যান্ড বলল। বরিস কারলফও হতে পারে। একবার দেখে এসো না।
জো বলল–একশ ডলার দিলেও আমি এখন বাইরে যাবো না। পাগলির চিল্লানী আর ঝড়ের দাপাদাপি আমার মাথার শিরাগুলো ছিঁড়ে ফেলছে।
গারল্যান্ড বলল এমন করলে ওরা তোমাকে পাগলা গারদে পুরে দেবে। জো তাও বলল দেখ কুকুরটা কেমন করে ডাকছে।
কুকুরটা কি তোমার জন্য ডাকতেও পারবে না।
কুকুরটা ভয় পেলেই এমন করে ডাকে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কুকুরের ডাক শুনল ওরা দুজন এবার যেন ভয় পেয়ে গেল। গারল্যান্ড কাঁপতে কাঁপতে বলল দেখলে আমাকেও তোমার রোগে ধরেছে।
এর মধ্যে ওরা শুনতে পেল তীব্রস্বরে পাগলা ঘন্টি বাজছে। নির্ঘাৎ কোন পাগল ভেগেছে বুঝলে জো এবার ইচ্ছে না থাকলেও তোমাকে যেতে হবে। গারল্যান্ড বলল।
তাই আমরা কিরকম সব শব্দ শুনছিলাম। কুকুরটা অনর্গল বিচ্ছিরি ভাবে ডাকছিল।
গারল্যান্ড আর জো বারান্দা দিয়ে ছুটতে শুরু করলো।
এই সময় আবার কুকুরের ডাক শোনা গেল।
.
এর একটু পরেই শেরিফ ক্যাম্প তার কালো ব্লাউচ টুপি থেকে জল ঝেড়ে ফেলে নার্সের পেছন পেছন ডাক্তার ট্রেভার্সের অফিস ঘরে ঢুকলো।
সে ডাক্তারকে বলল শুনলাম আপনার একজন রোগী নাকি পালিয়েছে?
ডাক্তার ট্রেভার্স বিষণ্ণমুখে সায় দিয়ে বলল অবশ্য আমার লোকজনেরা ওকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়েছে যদিও মেয়েটা খুব সাংঘাতিক। তাই কাজটা খুব শক্ত। এছাড়া খবরের কাগজে ঘটনাটা বেরালে আমার একেবারে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
শেরিফ বলল–সম্ভব হলে আমি আপনাকে সাহায্য করব।
সে আমি জানি তবে রোগীনি হচ্ছে জন ব্লানডিশের উত্তরাধিকারিণী। এর মানেটা কি বুঝতে পারছেন?
নামটা শুনেই ক্যাম্পের ভ্রূদুটো কুঁচকে উঠলো। আচ্ছা কুড়ি বছর আগে যেই ভদ্রলোকের মেয়েকে খুন করা হয়েছিল আপনি কি সেই জন ব্লানডিশের কথা বলছেন?
হা তাই কথাটা জানাজানি হওয়ার আগেই মেয়েটাকে খুঁজে বার করতে হবে।
গোঁফে তা দিয়ে শেরিফ বলল আপনি ভাববেন না আমি ওকে ঠিক খুঁজে বার করব, কিন্তু আপনি বললেন যে মেয়েটা জন ব্লানডিশের উত্তরাধিকারিণী। লোকটা একটা পাগলকে কেন সব টাকা দিয়ে গেল বলুন তো!
ডাক্তার ট্রেভার্স বলল মেয়েটা তার অবৈধ দৌহিত্রী কথাটা শুধু আপনাকেই বললাম।
শেরিফ যেন বিশ্বাস করতে পারলো না বলল কি বললেন আবার বলুন তো!
ট্রেভার্স বলল একটা মানসিক রোগগ্রস্ত খুনী ব্লানডিশের মেয়েকে গুম করেছিল। ব্লানডিশ মেয়েকে কয়েকমাস পরে খুঁজে পায়। কিন্তু ব্লানডিশ মেয়েকে কাছে পায় নি। বাবা পৌঁছোনোর আগেই মেয়েটা ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। কিন্তু মরবার আগে মেয়েটা একটা কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছিল। পাগল গ্রিসতাই মেয়েটার বাবা।
ব্লানডিশ ওকে নিজের কাছে না রাখলেও ওর যত্নআত্তির কোনও অসুবিধে রাখে নি। প্রথম আট বছর ওর মধ্যে কোনও পাগলামির চিহ্ন দেখতে না পেলেও দশ বছর বয়েসে দেখা গেলো, ও অন্য দেশের মেয়েদের সঙ্গে মিশতে চায় না।
তাছাড়া ওর প্রকৃতিও খুব রুক্ষ হয়ে উঠল। ক্রমশ ওর প্রকৃতি খুব ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো। উনিশ বছর বয়েসে ওর আচরণ এমন হয়ে উঠলো যে ওর পালক পিতামাতার কাছে ওকে আর না রেখে আমার তত্ত্বাবধানে এই মানসিক চিকিৎসালয়ে রাখা হল।
ক্যাম্প বলল–মেয়েটা কতদূর সাংঘাতিক সেটা আপনি মনে করুন।
মেয়েটা যে খুব বেশিসাংঘাতিক তা কিন্তু নয়।বরং অধিকাংশ সময়ে ও খুব সুন্দর মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে হয়েই থাকে। মাসের পর মাস স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝে খুব অদ্ভুত হয়ে যায় এটা এক ধরনের মানসিকতা, একে বলে সিজোফ্রেনিয়া।
মেয়েটা এ অবধি কাউকে খুন করেছে কি?
না তা না করলেও ভয়াবহ দুটো বিশ্রি ঘটনা ও ঘটিয়েছে। একজন ভদ্রলোক তার কুকুরকে মারছিল। জীবজন্তু খুব ভালবাসে এই দেখে ও ওর লম্বা নখ দিয়ে ভদ্রলোকের নাক চোখ ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। ওর নার্স ওকে না ধরে ফেললে ও ওকে খুনই করে ফেলতো।
ভদ্রলোক ওর বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে জন রানডিশ প্রচুর টাকা পয়সা দিয়ে মামলাটা চাপা দেন। আপনি হয়তো শুনে থাকবেন যে রানডিশ ইছাপত্র করে গেছেন যে ওর ষাট লাখ ডলারের সম্পত্তি অছির সাহায্যে তদারকিকরতে হয়। এখন মেয়েটা পালিয়ে গেছেজানতে পারলে কোন বদমাশ লোক ওকে আটকে রেখে ওর সম্পত্তি হাতিয়ে নেবার চেষ্টা করতে পারে।
কিন্তু অছির হাতে সম্পত্তি থাকলে তা তো কেশ নিরাপদ অবস্থাতেই থাকবে।
না এমন কোন আইন নেই। এ রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী কেউ যদি পাগলা গারদ থেকে ছাড়া পেয়ে চোদ্দদিন মুক্ত অবস্থায় থাকতে পারে তাহলে পরে তাকে বিধিনিষিধের মধ্যে রাখতে গেলে আবার পাগল হিসাবে প্রমাণ করার প্রয়োজন হবে।
ব্লানডিশ ইচ্ছাপত্র লিখে গেছেন যে এখান থেকে চলে যাবার পর মেয়েটা যদি আবার পাগল হিসাবে প্রমাণিত না হয় তবে সমস্ত সম্পত্তির অধিকার ওই পাবে। আসলে ব্লানডিশ বিশ্বাস করত মেয়েটা একদিন ভাল হয়ে যাবে।
তার মানে চোদ্দদিনের মধ্যে ভাল না হলে মেয়েটাকে আপনি আর এখানে ফিরিয়ে আনতে পারছেন না।
সেটা সম্ভব যদি দুজন চিকিৎসকের অনুমোদনের উপর ভিত্তি করে বিচারক ধরে আনতে রায় দেন তবেই। তবে যারা অনুমোদন দেবেন তাদের সামনে মেয়েটাকে পাগল বলে প্রমাণ করতে হবে।
তাহলে তো ওকে তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করতে হবে। আচ্ছা ওর কোন ছবি আছে?
ডাক্তার ট্রেভার্স বলল না, ওর কোন ছবি নেই। তবে ওর বর্ণনা দিচ্ছি। নোটবই খুলে বলতে লাগল ও পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি লম্বা, মাথায় একরাশ টকটকে লাল চুল। দেহবল্লরী তাকিয়ে দেখার মতোই সুন্দর।
ক্যাম্প এইসব বর্ণনা নোটবুকে লিখতে লিখতে বলল আচ্ছা ওর কোনও বিশেষ সনাক্তকরণ চিহ্ন আছে কি?
হা ওর কবজিতে একটা দুইঞ্চি পরিমাণ কাটা দাগ আছে। ও যখন প্রথম এখানে আসে তখন রাগের মাথায় নিজের শিরা কেটে আত্মহত্যা করতে গেছিল। তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে ওর চুল। অমন লাল চুল আমি আর কোথাও দেখিনি।
বেশ এবার তাহলে শুরু করা যাক। আমি রাজ্যের টহলদার সিপাইদের সমস্ত রাস্তার দিকে নজর রাখতে বলছি। আর নিজে পাহাড়গুলো তন্ন তন্ন করে খুঁজছি।
.
অ্যান্ড্রির সরাইখানার সামনে চলতে চলতে ট্রাকটা দাঁড়িয়ে পড়ল। ড্যান বাগচালকের দরজা খুলে বেরিয়ে এসে দোকানের দরজা খুলে ঢুকল।
মোটা অ্যান্ড্রি ওকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এসে বলল ড্যান কি খবর? আজ কি এখানে থাকবে?
ড্যান মুখ কুঁচকে ক্লান্তিভরা গলায় বলল,নাকালকের মধ্যেই আমাকে ওকভিলে যেতে হচ্ছে অতএব থাকতে পারছি না, এক কাপ কফি দাও।
কফি নিয়ে এসে অ্যান্ড্রি বলল তোমার ট্রাক ড্রাইভারটা.একটা পাগল তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিন বিছানার সঙ্গে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। তার থেকে কিছুটা ঘুমিয়ে নাও না কেন।
ড্যান গর্জন করে বলল তুমি কি ভাবছ আমি ফালতু মজা লোটার ধান্দায় ঘুরছি। আমি কিছু টাকা রোজগারের ধান্দায় ঘুরছি। কারণ গত দশ সপ্তাহ ধরে ভাড়ার টাকা মেটাতে পারিনি। ট্রাকের যা ভাড়া হয়েছে। এখন বেশি খাটতে হবে। এই বলে কফি খেয়ে বেরিয়ে পড়ল।
অ্যান্ড্রি শুভেচ্ছা জানিয়ে টেবিলে রাখা পয়সাটা কুড়িয়ে নিল।
এদিকে ড্যান গাড়িতে উঠে ইঞ্জিন চালু করে দিল। অন্ধকারের বুক চিরে আবার ট্রাকটা এগিয়ে চলল। বড়রাস্তার ডানধারে গ্রেভিউ মেন্টাল স্যানোটোরিয়াম আলোকিত জানলাগুলো দেখা যাচ্ছিল। সেদিকে তাকিয়ে তার অস্বস্তি লাগে প্রতিবার যেমন লাগে।
ট্র্যাকের গায়ে ঝরে বাতাস উন্মাদের মতো আটকে যাচ্ছিল। রাস্তাও পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল না। তবু সে প্রাণপণে শক্ত হাতে স্টিয়ারিং চেপে বসে রইল। এমন সময় গাড়ির হেডলাইটের আলোতে ও দেখল যে রাস্তার পাশে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টিতে মেয়েটার সর্বাঙ্গ ভিজে চুপচুপকরছে।কিন্তু মেয়েটা গাড়ি থামানোর কোন ইঙ্গিত করল না।ড্যানতখন আচমকা ব্রেককষে গাড়ি থামিয়ে মেয়েটার পাশে গাড়িটাকে দাঁড় করাল।
ড্যান গলা চড়িয়ে মেয়েটাকে বলল উঠবেন নাকি?
ড্যান আবার বলল আপনি কি গাড়িতে উঠবেন?
হ্যাঁ, উঠবো।
ড্যান মেয়েটাকে তুলে এনে পাশের সীটে বসিয়েছিল।
ড্যান বলল খুব পচা রাত তাই না।
মেয়েটা বলল হ্যাঁ খুব পচা রাত।
তখনি দূরে মৃদু ঘণ্টার শব্দ শোনা গেল।
ওটা কিসের ঘন্টি।
মেয়েটা বলল পাগলা গারদের ঘন্টি। মানে কেউ পালিয়েছে।
আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
-কোথাও না।
ড্যান হঠাৎ ড্যাশবোর্ডের আলোয় দেখতে পেল মেয়েটার বাঁ হাতের মনিবন্ধে একটা গভীর ক্ষতচিহ্ন।
মেয়েটা বলল, আমি কেউ না কোথাও যাচ্ছিও না।
ড্যান বলল–আমি ওকভিলে যাচ্ছি। ওখানে গেলে যদি আপনার চলে, তাই বলছিলাম।
মেয়েটা বলল-চলবে
এর মধ্যে হঠাৎ ড্যানের গাড়ির চাকা পিছল খেয়ে ঘুরে গেল।
ড্যান চাকা ঠিক করে স্টিয়ারিং সজোরে ধরে বলল আর একটু হলেই আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। আপনি খুব ভয় পেয়ে গেছিলেন, না!
মোটেই না। আমরা হয়তো মরেও যেতে পারতাম আপনি কি মরতে ভয় পান?
ইতিমধ্যে তারা খাড়াই রাস্তা বেয়ে চলতে লাগল। ড্যান বলল রাস্তার আধাআধি উঠলে বাতাসের অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে উঠবে।
ইতিমধ্যে বাতাসের বেগ যেন আরো বেড়ে উঠেছে।
মেয়েটি কিছু বলল না তাকালও না।
ড্যান মনে মনে ভাবল মজার কথাই বটে। আমি কেউ না। কোত্থেকেও আসছি না। মনে হয় মেয়েটা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।
এর মধ্যেই গাড়িটা আবার ঝাঁকুনি খেয়ে সামনে ঝুঁকে পড়ল। পেছনে ত্রিপলের বাঁধন ছিঁড়ে কতগুলো আঙুরের বাক্স ছিটকে রাস্তায় পড়ল।
এরপর ড্যান গাড়ি থামিয়ে দিয়ে নীচে নেমে আসল এটা দেখার জন্য যে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কত হল। গতবছরের মতো এবারও মালপত্র খুইয়ে সে পাহারের মাঝপথে আটকা পড়ে আছে।
সে খুব ক্লান্ত হয়ে গাড়ির ভেতরের ছোট খুপরির মধ্যে ঢুকল। ক্লান্তিতে সে আর চোখ খুলে থাকতে পারলো না।
এর মধ্যেই তার মনে হল সে যেন স্বপ্ন দেখছে। গাড়িটা যেন চলতে শুরু করেছে। সে লক্ষ্য করল যে আদৌ সে গাড়িটা চালাচ্ছে না। মেয়েটার হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ব্যাপারটা তার মাথায় ভাল করে ঢুকবার আগেই তার কানে এলো ধাবমান পুলিসের সাইরেন।
সে বলল–আপনি কি করছেন শীগগির গাড়ি থামান। আমার মালপত্র পরে যাচ্ছে শীগগির গাড়ি থামান। আপনি ওদের হাত থেকে পালাতে পারবেন না।
কিন্তু মেয়েটা তার কথায় কানই দিল না। সে স্টিয়ারিং ধরে গাড়ি বেগে চালিয়ে যেতে লাগল। ড্যান অনুমান করল দ্রুতগামী মোটর সাইকেল চেপে কোন পুলিশ তাদের অনুসরণ করছে।
মেয়েটি গলা চড়িয়ে বলল–আমি ঠিকই পালাবো। এই বলেই সে ধাতব গলায় হাসতে লাগল।
ড্যান তার সামনে সরে গিয়ে বলল দেখুন ট্রাক নিয়ে দৌড়ে পুলিশকে আটকান যায়না। গাড়ি থামান।
এইবার পুলিশটা আমাদের রাস্তার সামনে গাড়ি নিয়ে দাঁড়াবে। অতএব চাদু তোমাকে গাড়ি থামাতেই হবে। আর না হলে ওকে চাপা দিতে হবে।
ঘটনা হলও তাই পুলিশটা ওদের গাড়ির সামনে বাইকটা দাঁড় করিয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো।
মেয়েটা বলল, তাহলে ওকেই ধাক্কা মারব।
ড্যান চিৎকার করে বলল, তুই কি পাগল নাকি?
তারপর তার মনে পড়ল প্লেনভিউ! সেই ঘন্টাধ্বনি।কারুর কপাল খুলেছে।ও বুঝতে পারলো। এই মেয়েটাই পাগল। ওই পাগলখানা থেকে পালিয়েছে। পুলিশ ওকেই গ্লেনভিউতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে।
ড্যান মেয়েটার কাছ থেকে সরে বসলো, তার সমস্ত শরীর ঝিমঝিম করে উঠলো। কিছু একটা করা দরকার। নাহলে মেয়েটা পুলিশ আর তাকে মেরে নিজেও মরবে।
সে দেখলো বাইকটা তাদের সামনে ছুটে আসছে। মেয়েটা তার দিকে তাক করে ট্রাকটা নিয়ে এগুচ্ছে।
হায় রে হতভাগা তোর তো বোঝা উচিত যে মেয়েটা পাগল ও তো তোকে চাপা দিয়ে পালাবে ও ট্রাক থেকে মুখ বাড়িয়ে বলল, পালিয়ে যা বুজু কাহিকা ও তোকে মেরে ফেলবে। কিন্তু তার কথা পুলিশটার কানে গিয়ে পৌঁছাল না। সে এরপর ইঞ্জিন বন্ধ করার চেষ্টা করল। কিন্তু তার আগেই মেয়েটা তীক্ষ্ণ নখ দিয়ে তার গাল চিড়ে দিল। সেখান থেকে ধারায় রক্ত পড়তে লাগল।
এর মধ্যেই সে দেখতে পেল পুলিশটা কিছু বুঝতে পেরে মোটর সাইকেলটা নিয়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছে কিন্তু মেয়েটা প্রাণপনে ট্রাকটা নিয়ে ওটাকে গুঁড়িয়ে দেবার জন্য তার পিছনে ধাওয়া করছে। একটু পরেই ট্রাকটা এক তীব্র আঘাতে শূন্যে ছুঁড়ে ফেললো মোটর সাইকেলটাকে। বাতাসের গর্জন ছাপিয়ে পুলিশটার ভয়ার্ত চীৎকার শুনতে পেল।
ড্যান চীৎকার করে বলল, পাগলী কোথাকার তুই লোকটাকে মেরে ফেললি। তারপর কিছু না ভেবে মেয়েটার কাছ থেকে ছো মেরে ইঞ্জিনের চাবিটা ছিনিয়ে নিল। কিন্তু মেয়েটার শরীরে ভীষণ জোর স্টিয়ারিং-এর দখল নিয়ে দুজনের মধ্যে জোর লড়াই লেগে গেল।
ড্যান দেখল তার মুখের খুব কাছাকাছি মেয়েটার মুখ। সে ঘুষি মারতে গেল। কিন্তু তার ঘুষি লক্ষ্য ভ্রষ্ট হল। উল্টে মেয়েটা ঘুরে তার গলা টিপে ধরল প্রাণপণ শক্তিতে। ড্যান বুঝতে পারলো, ওর লম্বা সরু আঙ্গুলগুলো ক্রমশ তার মাংসপেশীতে ডুবে যাচ্ছে।
ঠিক এই সময় গাড়িটা রাস্তা ছেড়ে আস্তে আস্তে খাদের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। খাদের ধারে গিয়ে একমুহূর্ত গাড়িটা শূন্যে ঝুলে রইল। তারপরই কড়কড় শব্দ করে নীচের অন্ধকারের দিকে নেমে গেল।
.
একটা ঢাউস বুইক ভ্যান গাড়ি সকালের আলো গায়ে মেখে স্বচ্ছন্দ গতিতে চড়াই পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। গাড়ি চালাচ্ছিল স্টিঙ লারসন। পাশে তার ভাই রয় বসেছিল। স্টিঙ লম্বা চওড়া সুদর্শন পুরুষ। রোদে পোড়া গায়ের রং-এ উজ্জলতা ঠিকরে বেরোচ্ছে।
বড় ভাই রয় ছোট ভাইয়ের তুলনায় একটু বেঁটে, চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ ও উজ্জ্বল। গতিবিধি ক্ষিপ্র। ওর পরনে শহুরে ছাটকাটের পোক।
স্টিঙ ব্লু মাউন্টেন সামিটে নিজের শেয়াল পোর খামারবাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে ট্রেনে আসা বড় ভাইকে তুলে নিয়ে যেতে এসেছিল। দুভায়ের মধ্যে বহু বছর দেখাসাক্ষাৎ নেই। তাই স্টিঙ এর এই আকস্মিক আগমনের হেতু বুঝতে পারছিল না। রয়কে প্রথম দেখে খুব নার্ভাস বলে মনে হচ্ছিল।রয় বারবার জানলায় মুখ ফিরিয়ে দেখছিল কেউ তাদের অনুসরণ করছে কিনা। স্টিঙ রয়কে কিছু জিজ্ঞেস করতেও পারছিলনা।কারণ সে জানতো রয় ভীষণ স্পর্শকাতর।
স্টিঙ একটু চুপ করে থেকে অস্বস্তি কাটানোর জন্য বলল তোমাকে দেখতে বেশ ভালই লাগছে। তোমার দিনকাল নিউ ইয়র্কে খুব ভালই কাটছে কি বলল।
ওই একরকম কাটছে।
এত বছর পর তোমাকে দেখে ভালই লাগছে। তা হঠাৎ তুমি আমার সঙ্গে দেখা করতে এলে কি ব্যাপার
রয় একটু চুপকরে থেকে বলল গরমকালে নিউ ইয়র্কে ভীষণ গরম। ভাবলাম তোমার এখানে একটু হাওয়া পরিবর্তন করলে ভালই লাগবে। তারপর সে বলল এখানে দেখছি যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড়ের উপর পাহাড়, জায়গাটা একেবারে নরকের মতো নির্জন।
স্টিঙ বলল, জায়গাটা দারুণ। তবে নিউ ইয়র্ক থেকে এখানে এসে তোমার খুব নির্জন নিস্তব্ধ লাগবে। আমার নিকটতম প্রতিবেশীর বাড়ি আমার বাড়ি থেকে কুড়ি মাইল দূরে। কারো সঙ্গে খুব একটা দেখা হয়না।
রয় বললো, সেটাই আমার পক্ষে ভাল।আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে আরাম করা। তবে একটা কথা তুমি এখানে মেয়েছেলে পাও কি করে?
স্টিঙ বলল পাই না, এখানে আমি একবছর ধরে আছি। আর মেয়েমানুষ নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই।
তাহলে তো একটা রাস্তার মেয়েছেলে ধরে আনলে ভাল হতো। বলতে বলতে রয় সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লো হাত বাড়িয়ে বলল, দ্যাখো দ্যাখো একটা ট্রাক ভেঙ্গে পড়ে আছে। স্টিঙ দেখে তাকিয়ে বুইক থামিয়ে দিল। তারপর গাড়িটার কাছে গিয়ে বলল, হাত লাগাতে হবে রয় ভিতরে একটা লোক আর একটা মেয়ে।
কিন্তু ড্রাইভারের হাত ছুঁয়েই সে বুঝল যে লোকটা মরে গেছে। কিন্তু মেয়েটাকে ধরে বুঝল যে মেয়েটা বেঁচে আছে। সে বলল রয় একটু সাহায্য কর মেয়েটাকে বার করতে হবে।
রয় এগিয়ে এসে মরা লোকটার দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠল বলল, কি সর্বনাশ দেখোত লোকটাকে মনে হয় বেড়ালে আঁচড়ে দিয়েছে।
তারপর এরা দেখল মেয়েটার হাতের নখে রক্ত আর মাংস লেগে রয়েছে। মনে হয় ড্রাইভারটা মেয়েটাকে বাগে আনতে চেয়েছিল। তাই মেয়েটাওর এমন হাল করেছে। তারপর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল যে মালটা কিন্তু ভালই ড্রাইভারটার যদি লোভ হয় তাহলে খুব একটা দোষ নেই।
স্টিঙ বলল–মেয়েটার মাথায় খুব চোট লেগেছে এখনই কিছু একটা করা দরকার।
রয় বলল, এসব ফালতু ঝামেলায় না গিয়ে চল তো এখান থেকে কেটে পড়ি। সে অন্যলোকের সঙ্গে গাড়ি চেপে ঘুরতে ঘুরতে নিজের ব্যবস্থা নিজেই করতে পারবে।
স্টিঙ তার দিকে ফিরে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ স্বরে বলল–তা হয় না। মেয়েটাকে জখম অবস্থায় আমরা এখানে ফেলে রেখে যেতে পারি না।
তাহলে রাস্তা অবধি টেনে নিয়ে গিয়ে ফেলে রাখো। কেউ না কেউ এসে ওকে দেখতে পাবে আমি এসব ঝামেলায় নিজেকে জড়াতে চাই না।
না-ওকে ডাক্তার দেখানো দরকার। আমি ওকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ডাক্তার ফ্লেমিংকে দেখানোর ব্যবস্থা করবো। তোমার কিছু বলার আছে?
রাগে রয়ের মুখ বিকৃত হয়ে গেল। সে বললো আসলে একা একা নির্জন অবস্থায় বেশিদিন থাকলে যা হয়। মেয়েমানুষ দেখে একদম দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে যাচ্ছে।
স্টিঙ প্রথমে রেগে গেলো তারপর সামলে নিয়ে বলল, এখনও খুব একটা পাল্টাওনি দেখছি। সেই স্কুলের ছেলেদের মতো স্বভাব?
স্টিঙ নীচু হয়ে মেয়েটির শরীরে কোথাও হাড়টার ভেঙ্গেছে কিনা পরীক্ষা করতে লাগল।
রয় বলল-মেয়েটাকে ছেড়ে দাও না হলে এজন্য তোমাকে দুঃখ করতে হবে স্টিঙ।
স্টিও কোন কথায় কান না দিয়ে ধীর পদক্ষেপে মেয়েটাকে নিয়ে ভ্যানের দিকে এগুতে লাগলো।
ব্লু মাউন্টেন সামিটে স্টিঙের সিলভার ফক্স মমসমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আট হাজার ফুট উচ্চতায় পাহাড় ঘেরা এক রমণীয় সুন্দর উপত্যকা। হাইওয়ে থেকে বেরিয়ে আসা এক ধূলিধূসরিত পথ ধরে সেখানে যেতে হয়।
এক বছর আগে বীমা কোম্পানীর সেলসম্যানের চাকরি ছেড়ে শৃগাল প্রজননের ব্যবস্থা করবে। বলে স্টিঙ মনস্থ করে। তাই-এ জায়গাটা আবিষ্কারের পর দলিল দস্তাবেজ হস্তান্তরের কাজে লেগে পড়ে সে। এখানে দিনের পর দিন নিজের কুকুরটা ছাড়া আর কোন সঙ্গী জোটেনা তার।
রয়ের আগমনে প্রথমে সে মনে করেছিল যে নিঃসঙ্গতা খানিকটা ঘুচবে। কিন্তু এখন মনে হল সে সঙ্গী হবার চাইতে সে তার বিরক্তির কারণ হবে বেশি।
স্টিঙ মেয়েটাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে যেতেই রয় গাড়িটার সামনে এসে গাড়ির ঢাকনা খুলে অ্যাক্সিলেটার সুইচের মাথাটা খুলে নিয়ে পকেটে রাখলো। এবং ঘরে ঢুকে গেল।
একটু পরে স্টিঙ বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে সে তাকে দেখে বললো, কি মেয়েটাকে ঘরের ভেতর শুইয়ে দিয়ে এলে?
রয়ের কাছে এসে স্টিঙ বললো, আমি ডাক্তার ফ্লেমিং-এর কাছে যাচ্ছি, অন্তত ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগবে। এর মধ্যে তুমি মেয়েটার দিকে একটু নজর দিও।
স্টিঙ বেড়িয়ে গাড়ির ইঞ্জিন চালু করার ব্যর্থ চেষ্টা করল। দেখে রয় মুখ চেপে হাসতে লাগল। স্টিঙ সব বুঝতে পেরে একটু পরেই রাগে লাল হয়ে নেমে এল
বলল তুমি কি আমাকে বোকা বানাতে চাইছো? অ্যাক্সিলেটরের মাথাটা তুমিই খুলে নিয়েছে। ভাল চাও তত দিয়ে দাও।
রয় বলল, ওটা আমিই রেখেছি। কারণ আমি চাই আমি যতক্ষণ এখানে আছি, ততক্ষণ বাইরে থেকে কেউ এখানে আসতে পারবে না আর আমি না বলা অবধি এখান থেকে কেউ বাইরেও যেতে পারবে না।
স্টিঙ রেগে বলল, দ্যাখো রয় তুমি কেন এমন করছ আমি জানি না। তবে এসব করে কিছু লাভ হবেনা। সুইচটা আমাকে দাও নয়তো আমি ছিনিয়ে নিতে বাধ্য হব।কারণ এ সমস্ত বেয়াদপি আমি সহ্য করি না।
তাই নাকি? এই বলেই রয় একটা নাক ডোতা ৩৮ অটোম্যাটিক স্টিঙের নাকের সামনে লাগিয়ে বলল, এবার? এখনও কি তুমি কেড়ে নেওয়ার মতলব বজায় রাখছে।
তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি? ওটা নামাও।
রয় রুক্ষ গলায় বলল এইতো তোমার বুদ্ধি খুলেছে দেখছি। হয়তো তুমি বুঝতে পেরেছো যে আমি একটা ঝামেলায় জড়িয়ে এখানে লুকিয়ে থাকতে এসেছি। এখানে ডাক্তার ফ্লেমিং আসলে রুগিদের গিয়ে বলবেন যে আমাকে দেখতে পেয়েছেন। তাই যতক্ষণ আমি এখানে আছি ততক্ষণ তোমাকে আর ওই মেয়েটাকে এখানেই থাকতে হবে।
রয় পাগলামো কোরো না। মেয়েটাকে ডাক্তার দেখানো দরকার সুইচটা ফিরিয়ে দিয়ে আমাকে যেতে দাও।
তোমার মাথায় এখনো কিছু ঢোকেনি। তবে শোনো, আমি লিটল বার্নির দলের হয়ে কাজ করেছি। স্টিঙ পত্রিকায় পড়েছে যে লিটল বানি খুব খারাপ লোক। পুলিশ তাকে খুঁজছে।
আমি জানতাম তুমি ঝামেলায় ফেসে গেছে। যা করেছি ভালই করেছি। এখন একটু সাময়িক অসুবিধায় পড়েছি। কিন্তু এর পরেই আমি মনের আনন্দে জীবনটাকে উপভোগ করতে পারবো। আমি তো তোমার মতো গেয়ো নই যে জঙ্গলের মধ্যে শেয়াল নিয়ে কাটিয়ে দেবো।
স্টিঙ বলল-পিলটা রং আমাকেই দাও রয়।
কিন্তু রয় হঠাৎ করে গুলি ছুঁড়ল। গুলিটা স্টিঙের কানের পাশ দিয়ে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে বেরিয়ে গেল।
ঠিক এমনি করে অতি সহজেই আমি তোমার খুলির মধ্যে একটা গুলি ঢুকিয়ে দিতে পারি।
স্টিঙ নিজের জন্য ভাবেনা তার চিন্তা মেয়েটার জন্য। ডাক্তার ফ্লেমিং যখন আসছেন না তখন এক্ষুনি মেয়েটার জন্য কিছু করা দরকার। বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স ছিল সেটা নিয়ে সে মেয়েটার কাছে গিয়ে দাঁড়াল।
শায়িত মেয়েটার মাথার পিছন দিকের আঘাত পরীক্ষা করে চিকিৎসার বাক্স থেকে তুলো টুলো বের করলো আগেই সে এক বালতি গরম জল আর একটা ভোয়ালে এনে রেখেছিল। কাজ শেষ হবার পর মেয়েটা চোখ খুলে তাকাল।
মেয়েটা মাথায় হাত দিয়ে বলল, খুব কষ্ট। আমি কোথায়।
আমি আপনাকে পাহাড়ের রাস্থায় দেখতে পাই, ট্রাক দুর্ঘটনা হয়েছিল, চিন্তার কিছু নেই মাথা সামান্য কেটে গেছে।
ট্রাক? মেয়েটি শুন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো, কোন ট্রাক? আমার মনে পড়ছে না।
সব ঠিক আছে। এখন একটু ঘুমোবার চেষ্টা করুন।
তুমি কি ভালো আমার কাছে থাকো, আমাকে ছেড়ে যেও না।
না, না আমি কোথাও যাচ্ছি না আমি এখানেই থাকবে। আপনি একটু শান্ত হন। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই মেয়েটা আবার ঘুমের অতলে তলিয়ে যায়।
অন্য ঘরে রয় চিন্তিত মুখে বসেছিল। ছুড়িটার জন্য সব গোলমাল হয়ে গেলো। এর মধ্যে স্টিঙের মনে হলো যে এভাবে মেয়েটাকে বিছানায় ফেলে রাখা চলে না। তাকে ওর পোষাক পাল্টাতে হবে। কিন্তু সে দ্বিধাবোধ করছিল। এর মধ্যে তার পোষা কুকুর স্পটকে দেখে সে হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
এই যে স্পট দ্যাখো তো কি ঝামেলায় পড়লাম। এই বলে সে আলমারি খুলে একটা পোষাক বার করে সেটা বাদ ছাদ দিয়ে ক্যারলের উপযোগী করে ক্যারলকে পড়িয়ে দিল। এই সময় ক্যারলের পোষাক খুলতে গিয়ে সে একটা রুমাল পেল তাতে লেখা ক্যারল। কে এই ক্যারল? যাই হোক ক্যারলকে পোষাক পড়িয়ে দিল। এবং তার সুন্দর শিল্পসুষমামণ্ডিত চেহারার দিকে তাকিয়ে ভাবল যে এ কোন সস্তা মেয়ে হতেই পারে না।
এর মধ্যে রয় ঘরে ঢুকে বলল, তুমি কি একাই ওকে নিয়ে মজা লুটবে নাকি? যতদিন না ও সুস্থ হয় ততদিন তুমি ওকে রাখে। সুস্থ হলে দেখো ওকে নিয়ে আমি কেমন মজা লুটি।