অন্য কিছু কেউ যদি শুনে থাকেন তা ভুল।
সেই বাহাত্তর এখনও।
না, বাহারে কিছু নয়, বাহাত্তর নম্বর সেই বনমালি নস্কর লেন।
সেই ট্রাম, বাস, লরি, মোটর, রিকশা, ঠেলা আর মানুষের ভিড়ের ধাক্কায় যেন টলতে টলতে ছিটকে পড়া নোংরা, সরু, আঁকাবাঁকা গলিটা। সেই উপচে-পড়া ডাস্টবিন আর খুঁটে-লেপটানোপোড়া বাড়ির দেওয়াল বাঁচিয়ে, একবার ডাইনের। খাটালের সুবাসে আর একবার বাঁয়ের টিনের কারখানার ঝাঁপতাল সংগীতে দিশাহারা হয়ে খাপরা আর টিনের চালের বস্তির মধ্যে যেন থমকে দাঁড়ানো বেঢপ বেমানান পলস্তারা-খসা সেকেলে বাড়িটা।
সেই আমাদের বাহাত্তর নম্বর বনমালি নস্কর লেনের মেস ঠিক যেমনটি ছিল তেমনিই আছে।
ওর আর অদল বদল হবার কোনও আশা নেই।
কিন্তু কী সুবিধেটাই না হয়েছিল! একেবারে আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়ার মতো। সে চেরাগ হাতে পেয়েও কেন যে সব ভেস্তে গেল, সে কাহিনী বলতে গেলে একেবারে গোড়া থেকে শুরু করতে হয়।
এ বিয়োগান্ত নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্য ওই বাহাত্তর নম্বর বনমালি নস্কর লেনের মেসবাড়ির দোতলার আড্ডা ঘর। সময় রবিবারের বিকেল। কুশীলব বলতে শিশির, গৌর এবং আমি ছাড়া তৎকালে আর কেউ নয়। আমরা তেতলার একটি ঘরের দিকে উৎকর্ণ হয়ে থাকার সঙ্গে প্রত্যেকে নিজের নিজের পছন্দসই দৈনিকে ও সাপ্তাহিকের সব চেয়ে দামি পাতায় মাঝে মাঝে মনঃসংযোগ করে নীরস বিকেলের একঘেয়েমিটা একটু ভুলতে চেষ্টা করছি। তেতলার ঘর থেকে সেদিন কিছু হবার আশা নেই বলেই জানি। শনিবার থেকেই অসহযোগ শুরু হয়েছে, শুরু হয়েছে করপোরেশনের আসছে নির্বাচনের এক প্রার্থী দলবল সমেত এসে খানিক হইচই করে যাবার পর। কেন ওই সব বক্তিয়ার খিলজিদের নিয়ে মাতামাতি করেছি—এইতেই ঘনাদার রাগ। সে রাগ এখনও পড়বার লক্ষণ নেই।
গৌর নামকরা একটি দৈনিকের পাতা থেকে মুখ তুলে হতাশ ভাবে সেটাকে টেবিল থেকে মেঝেয় গড়িয়ে যেতে দিয়ে বলল, না, এ-হপ্তায় আর কিছু হবার নয়।
কেন? কেন? আমরা যে যার কাগজ নামিয়ে সমস্বরে জিজ্ঞাসা করলাম।
কেন? গৌর মেঝে থেকে কাগজটা আবার তুলে নিয়ে বললে, জায়গাটা পড়ে শোনাচ্ছি। তা হলেই বুঝবে কেন? লিখছে, সর্বদিকে ইঙ্গিত লক্ষিত হইতেছে। অত্যন্ত সাবধানে না থাকিলে বিশেষ বিপদের সম্ভাবনা। রাহু মিথুনে ও কেতু ধনুতে অবস্থান করার দরুন সম্পত্তি হস্তান্তরের ব্যাপারে শঠ ও প্রবঞ্চকের ছলনায় ভুলিতে হইবে। বৈদেশিক বাণিজ্যেও তত্রস্থ আকস্মিক শাসন বিপর্যয়ে প্রচুর সঞ্চিত সম্পদ ধ্বংস হইতে পারে। জামাতা বা শ্বশুর স্থানীয় কাহারও কঠিন পীড়া অবশ্যম্ভাবী…
গৌরের পড়া ফিরিস্তি শুনে আমরাও সবাই প্রথমে যাকে বলে একেবারে মুহ্যমান-থুড়ি, মোহামান।
শিশিরই প্রথমে যেন সাড় ফিরে পেল। একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলে, কিন্তু বিপদ কি খুব গুরুতর?
গুরুতর নয়? গৌর রীতিমতো ক্ষুণ্ণ।
আমিও এতক্ষণে একটু সন্দিগ্ধ হয়েছি।
বললাম, কিছু তো দেখতে পাচ্ছি না। তোর সম্পত্তিই কোথায় যে হস্তান্তর করলে ঠকবি? বিদেশে কোন বাণিজ্যটা তুই করিস? আর বিয়েই যার হয়নি তার আবার শ্বশুর-জামাই-এর ভাবনা কীসের?
এ মোক্ষম যুক্তিতেও গৌরকে টলানো গেল না। গম্ভীর মুখে আমাদের নির্বুদ্ধিতায় যেন হতাশ হয়েই বললে, আসল ব্যাপারটাই তোদের মাথায় ঢুকছে না। ও সব যদি
হয় তা হলে অন্য কিছু অনিষ্ট একটা নির্ঘাৎ হবে। কারণ এ হপ্তায় কর্কটের রাশিফল অত্যন্ত খারাপ।
হুঁ! তোর কর্কট রাশি ঠিক জানিস! শিশির একেবারে গোড়ায় কোপ দিতে চাইলে।
তা আর জানি না। সারা জীবন ওর দাঁড়ায় নাজেহাল হচ্ছি। অথচ আর মিনিট খানেক পরে জন্মালেই সিংহ রাশিতে পড়ে একটা কেওকেটা হতাম, গৌর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল।
সিংহ রাশিটা মিনিট খানেকের জন্য ফসকে যাওয়ায় এ রকম দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়তেই পারে। সমবেদনা জানাতে যাচ্ছিলাম। শিশির কিন্তু অবিচলিত ভাবে জিজ্ঞাসা করলে, কার গণনা পড়ছিস? সায়নাচার্যের তো! কিন্তু জ্যোতিষার্ণবের মত আলাদা!
আলাদা মানে? গৌর বেশ অসন্তুষ্ট।
হ্যাঁ, এই তো জ্যোতিষার্ণব লিখছেন এই পত্রিকায় কর্কট রাশির পক্ষে অত্যন্ত সুসময়। সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত দিক হইতে সৌভাগ্যের উদয় হইতে পারে। অত্যন্ত সুবিধাজনক শর্তে একটি গাড়ি কিংবা বাড়ি পাইবার সম্ভাবনা। সেরূপ সুযোগ আসিলে অবহেলা করিবেন না। স্থানান্তরিত হইলে প্রচুর লাভের আশা।
লিখছে কর্কট রাশি সম্বন্ধে? গৌরের মুখে অবিশ্বাস ও উল্লাসের দ্বন্দ্ব।
হ্যাঁ, স্পষ্ট লেখা রয়েছে কর্কট। নিজেই দেখ না! শিশির কাগজটা এগিয়ে দিলে।
গৌর এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলে কেমন একটু হতভম্ব হয়ে বললে, আশ্চর্য! কিন্তু গাড়ি কি বাড়ি কোথা থেকে আসবে! একটা সেকেন্ডহ্যান্ড সাইকেল অবশ্য কিনব কিনব ভাবছিলাম। কিন্তু বাড়ি..
আমারও কিন্তু বাড়ির কথা লিখছে! বাধা দিয়ে আমাকে এবার জানাতেই হল।
শিশির ও গৌর দুজনেই একসঙ্গে অবজ্ঞার হাসি হাসল, তোর আবার বাড়ির কথা লিখছে কে?
এই তো স্বয়ং জ্যোতিষরাজ লিখছেন,আমি আহত অভিমানের সুরে জানালাম, লিখেছেন তুলা রাশির পক্ষে এ সপ্তাহ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। চন্দ্রের প্রভাবের দরুন প্রাথমিক বাধা দেখা দিলেও পরিশেষে আকাঙ্ক্ষা পূরণ হইবে। বাসভবন পরিবর্তনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। গৃহপ্রাপ্তিযোগ প্রবল।
তার মানে তোরা দুজনেই বাড়ি পেয়ে উঠে যাবি! শিশিরের গলা বেশ ঈর্ষাকাতর, আর আমি শুধু এই মেসে বসে ভেরেন্ডা ভাজব!
আহা, অত মন খারাপ করছিস কেন? আমি শিশিরকে সান্ত্বনা দিলাম, আমরা বাড়ি পেলে কি আর তোকে থাকতে দেব না! তুই তো গৌরের বাড়িতেও অনায়াসে থাকতে পারিস।
না, না আমার বাড়িতে সুবিধে হবে না! গৌর সোজাসুজি জানিয়ে দিল, আমি বাড়িটা বিক্রিই করে দেব ভাবছি।
বিক্রি করে দিবি? গৌরের আহাম্মকিতে না চটে পারলাম না, ওই ছোট্ট একটা বাড়ি বিক্রি করে কী-ই বা পাবি? তার চেয়ে আমার মতে ভাড়া দে। আজকালকার দিনে যা ভাড়া পাবি তাতে রোজ আমাদের সিনেমা থিয়েটার দেখিয়েও হোটেলে খাইয়ে আনতে পারবি।
এমন সুযুক্তিটা গৌরের মনে ধরল না। প্রায় দাঁত খিচিয়ে বললে, আমার বাড়ি ছোট দেখলি কোথায় শুনি! দস্তুর মতো সায়নাচার্যের গণনা করা বাড়ি সে খেয়াল আছে! তোর তো জ্যোতিষরাজের বাড়ি। খোলার কি খড়ের চাল হয় তাই আগে দেখ। তারপর ভাড়া দিস!
এ ধরনের হিংসে আমার ভাল লাগে না। না হয় আমার বাড়িটা বেশ বড়ই হচ্ছে। কিন্তু আমি কি তাই বড়াই করছি যে আমার ওপর হিংসে হবে!
সেই কথাই গৌরকে বোঝাতে যাচ্ছিলাম। শিশির তার সুযোগ দিলে না। হঠাৎ বিদ্রুপ করে বলে বসল, বাড়ি যে তোরা পেয়েই গেছিস মনে হচ্ছে!
হ্যাঁ, পেয়েই গেছি!
আমাদের মুখ থেকে নয়, জবাবটা এল পেছন থেকে।
চমকে ফিরে তাকিয়ে দেখি শিবু। কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে টের পাইনি। আমাদের চমকে দিয়ে শিবু যেন যুদ্ধ জয় করে এসেছে এমনই উত্তেজিতভাবে সামনে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে বললে, সত্যি পেয়ে গেছি বাড়ি!
তুই বাড়ি পেয়ে গেছিস মানে? আমি আর গৌর দুজনেই অত্যন্ত বিরক্ত, রাশিফল আমাদের আর বাড়ি পেলি তুই! সক্কলের পাওয়া!
কীরকম? এ উদারতায় একটু অপ্রস্তুত হয়েই জিজ্ঞাসা করতে হল।
মানে বাড়ি পেয়েছি মেসের জন্যে। এই এঁদোগলির ঝরঝরে হাড়গোড়ভাঙা বাড়ির বদলে বড় রাস্তায় প্রকাণ্ড ঝকঝকে নতুন বাড়ি ভাড়াও এই একই।
তা কখনও হয়! তোর মাথা খারাপ হয়েছে। এবার সকলে আমরা একমত।
আহা, আমার মাথা খারাপ হবে কেন? খারাপ হয়েছে তো বিপিনবাবুর! শিবু আমাদের ভুল সংশোধন করলে।
কে বিপিনবাবু? আর তার মাথা খারাপ হওয়ার সঙ্গে আমাদের বাড়ি পাওয়ার সম্পর্কটা কী?
বাঃ, সম্পর্ক নেই? শিবু আমাদের মূঢ়তায় বিষণ্ণ, বিপিনবাবুর সঙ্গেই যে আমার সম্পর্ক। তিনি যে আমার নিকট আত্মীয়, মানে খুব আপনার লোক?
তাতে তোর মাথার দোষের কারণটা না হয় পেলাম, কিন্তু বাড়ি পাচ্ছি কী করে?
বাড়ি পাচ্ছি কতবার বলব—আত্মীয়তার জোরে! শিবু বোঝাতে গিয়ে বুঝি ক্লান্ত।
কীরকম আত্মীয়তা? শিশিরের তবু সন্দিগ্ধ প্রশ্ন।
আত্মীয়তা যেমন হয়, আবার কীরকম? শিবু বিরক্ত হয়ে সম্পর্কটা যা বুঝিয়ে দিলে তাতে আমরা একেবারে চুপ।
কোনওরকম ঢোঁক-টোক না গিলে একেবারে গড়গড় করে শিবু বলে গেল, বিপিনবাবু হলেন পিসতুতো ভাই-এর মাসতুতো বোনের খুড়তুতো ভাই-এর পিসশ্বশুর, কিংবা মামাতো বোনের পিসশ্বশুরের জ্যেঠিমার বাড়িওয়ালার অফিসের বড়বাবুও হতে পারেন। আসল কথা, তাঁর হঠাৎ মাথা খারাপ না হলে কিংবা আগে থাকতেই খারাপ না থাকলে কিছুই হত না।
শিবুর ব্যাখ্যার ধাক্কাটা সামলাতে একটু দেরি হল। তারপর গৌরই প্রথম কৌতূহল প্রকাশ করতে সাহস করলে, বিপিনবাবু মাথা খারাপ হয়ে তোকে তা হলে বাড়িটা দিয়েছেন?
তিনি দেবেন কোথা থেকে? শিবু অধৈর্যের সঙ্গে জানালে, তিনি তো এখন অ্যাসাইলাম-এ, মানে মাথার রুগিদের আশ্রমে।
তবে? হতভম্ভ হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, বাড়ি তা হলে কার কাছে কেমন করে পাচ্ছিস?
পাচ্ছি অ্যাটর্নির কাছে। বিপিনবাবু অ্যাটর্নিকে লিখে যা হুকুম দিয়ে রেখেছেন তারই জোরে।
এতক্ষণে যেন কুয়াশাটা একটু খাটল। বললাম, তাই বল! তোর সেই পরমাত্মীয় বিপিনবাবু অ্যাটর্নিকেই হুকুম দিয়ে গেছলেন, তোকে বাড়িটা দিতে।
না। শিবুর গলা চড়া মেজাজের, তিনি যা হুকুম দিয়ে গেছলেন তাতে ও বাড়ির ব্যবস্থা করতে অ্যাটর্নিই অকুল পাথারে। অথচ বিপিনবাবুর খরচ মেটাতে বাড়ির একটা ব্যবস্থা না করলেও নয়।
কী হুকুম দিয়েছিলেন?
যা দিয়েছিলেন তাইতেই বাজিমাত! শিবুর মুখে এবার একটু মুচকি হাসি, ওই হুকুমের জোরেই বাড়িটা আদায়ের ব্যবস্থা করে এলাম।
হুকুমটা কী?
হুকুমটা হল ও বাড়িতে কেউ যেন কোনওদিন সংসার না পাতে। কারণ সংসারই তাঁর মতে সব গণ্ডগোলের কারণ—এমন কী তাঁর মাথারও।
ওই হুকুম থেকেই তুই কাজ বাগালি? শিশিরের মুখে আমাদের সকলের সংশয়।
তা বাগাব না! শিবু যেন এতক্ষণে তুরুপের টেক্কা বার করে দেখাল, সংসার পাততে দিলে ও বাড়ির কী ব্যবস্থা হতে পারে? অফিস হয় বটে। কিন্তু ও বেপোট জায়গায় অফিস করতে চাইবে কে? তাই অ্যাটর্নিকে বুঝিয়ে দিলাম ও বাড়ির মেস হওয়া ছাড়া আর কোনও গতি নেই। মেস তো আর সংসার নয়। তা হলেই বুঝতে পারছিস, বিপিনবাবুর যদি মাথা খারাপ না হত, তাইতে তিনি যদি অমন আজগুবি হুকুমনা দিতেন, তাঁর সঙ্গে আমার অমন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা না থাকত, আর সে যেমনই হোক, মামাতো বোনের বাড়ি গিয়ে খবরটা যদি না পেতাম, আর মামাতো বোনের বাড়ির কাছে হঠাৎ যদি আজ গিয়ে না পড়তাম, অর্থাৎ কারেন্ট বন্ধ হয়ে গিয়ে ট্রামটা যদি ওইখানেই না থামত আর বিরক্ত হয়ে যদি না ওখানে নেমে পড়তাম…
শিবুকে না থামালে সে বোধহয় কার্যকারণ বোঝাতে বোঝাতে ইডেন উদ্যানে আমাদের নিষিদ্ধ ফল খাওয়া পর্যন্ত পৌঁছে যেত।
বুঝেছি! বুঝেছি! বলে সমস্বরে তাই তাকে থামাতেই হল। শিবুর আনা খবরের সঙ্গে রাশিফলের গণনা মিলে গিয়ে আমাদের তখন ধৈর্য ধরবার মতো অবস্থা নেই। পারলে তখুনি লরি ডেকে মাল-টাল তুলে ফেলি।
শিশির সোৎসাহে বলল, আচ্ছা বাড়ি ভাড়ার বায়নাটা আজই দিয়ে এলে হয়?
আর আমাদের বাড়িওয়ালাকে একটা নোটিশ! গৌর স্মরণ করিয়ে দিলে।
গোটা কয়েক লরিও আগে থাকতে বলে রাখতে হয়! সুযুক্তি দিলাম আমি।
কেন, লরি কী হবে? শিশির আমার সুযুক্তির গোড়াতে কোপ দিলে, এখানকার এইসব রদ্দি ফার্নিচার ওই বাড়িতে নেব নাকি! সব নিলেমে বিক্রি করে যাব।
তারপর সেখানে মেঝেয় কানি পেতে শোব, কেমন? একটু বিদ্রুপ করতেই হল আমায়।
কানি পেতে শোয়া যার অভ্যাস, সে শোবে! শিশির একটু যেন মাত্রা ছাড়িয়ে গেল, কলকাতা শহরে ফার্নিচারের দোকানের তো ঘাটতি নেই। যেমন বাড়ি, তেমনই ফার্নিচার না হলে মানায়!
ঝগড়াটা এরপর কোন দিকে যেত বলা যায় না, কিন্তু শিবুই হঠাৎ বেয়াড়া খোঁচা তুলে সব ঠাণ্ডা করে দিলে।
কানি পেতে, না, ল্যাজারাসের খাটে শোবে সে ঝগড়া রেখে আসল বেড়াটা আগে ডিঙোও দেখি। তেতলার উনি বেঁকে দাঁড়াবেন না তো? চিন্তিতভাবে বলল শিবু।
ঘনাদা বেঁকে দাড়াবেন! উত্তেজিত হয়ে উঠল শিশির, এমন একটা দাঁও পাওয়ার মর্ম তিনি বুঝবেন না!
আলবত বুঝবেন! বোঝাতেই হবে তাঁকে। এখুনি। গৌর মূর্তিমান সংকল্পের মতো উঠে দাঁড়াল। সঙ্গে সঙ্গে আমরাও।
তারপর সোৎসাহে সশব্দে সিঁড়ি কাঁপিয়ে দোতলা থেকে তেতলা।