রেসের ঘোড়া – তিন গোয়েন্দা – সেবা প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশ ও মে, ১৯৯৩
এসে গেছি, জীপের পেছনের সিট থেকে বলল কিশোর পাশা। রুক্ষ পথে ঝাঁকুনি খেতে খেতে চলেছে গাড়ি। মাথা থেকে খুলে স্টেটসন হ্যাটটা কোলের ওপর রাখল সে। তাকিয়ে রয়েছে তীর চিহ্ন দেয়া নির্দেশকের দিকে। তাতে লেখাঃ ডাবল সি র্যাঞ্চ।
এলাম তাহলে, গুঙিয়ে উঠল মুসা। কিশোরের পাশে সীট খামচে ধরে রেখেছে। যা রাস্তা। হাড্ডিমাংস সব এক হয়ে গেছে।
সামনের প্যাসেঞ্জার সীটে বসেছে রবিন। ড্রাইভ করছে ব্ৰড় জেসন। হেসে বলল, আমরা কিন্তু সব সময়ই চলি এই রাস্তায়। আমাদের কিছু হয় না।
আপনাদের তো অভ্যাস হয়ে গেছে, মুসা বলল। মনে হচ্ছে সেই কোন যুগে রকি বীচ থেকে বেরিয়েছি। এতদিনে এসে পৌঁছলাম।
মিস্টি ক্যানিয়নে স্বাগতম, ব্রড বলল। ডাবল সি র্যাঞ্চের কর্মচারী সে, র্যাঞ্চ হ্যাণ্ড। শুকনো খড় রঙা চুল। বয়েস পঁচিশ-টচিশ হবে, আন্দাজ করল কিশোর।
মিস্টি ক্যানিয়ন, বিড়বিড় করল সে। তাকিয়ে রয়েছে পাহাড়ের দিকে। রবিন আর মুসারও চোখ সেদিকে। মনটানার একটা র্যাঞ্চে ঢুকছে ওরা। ঘিরে থাকা পাহাড়ের কোল পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে র্যাঞ্চের জমি। রোদ খুব গরম। বাতাস শুকনো, পরিষ্কার।
এই পাহাড়ের কোলে অনেক র্যাঞ্চ আছে, ব্রঙ জানাল। ডাবল সি তারই একটা। মিস্টি ক্যানিয়ন কেন নাম হয়েছে জান? একটা ঝর্নার জন্যে। পাহাড়ের গোড়ায় বইছে গরম পানির ওই ঝর্নাটা, বাষ্প ওঠে ওটা থেকে। দূরের একটা শৈলশিরার দিকে হাত তুলে দেখাল সে।
নৌকার মত দুলে উঠল জীপ। তিক্ত কণ্ঠে মুসা বলল, রাস্তারই এই অবস্থা। গরম পানির ঝর্না কেমন হবে কি জানি। পা দিলেই হয়তো ফোঁসকা পড়ে যাবে, হট বাথ আর হবে না।
বাতাসে লম্বা সোনালি চুল এসে পড়ছে রবিনের চোখে মুখে। সরিয়ে দিতে দিতে বলল, এই ঝাঁকুনিতেই এই? আসল ব্রোঙ্কোতে তো এখনও চড়ইনি।
চড়েছি। ঠোঁট কামড়ে ধরে বলল মুসা, যে কোন ঘোড়ায় চড়লেই হলো।
না, হলো না। ঘোড়ার নানা রকম জাত আছে, একেকটায় চড়তে একেক রকম লাগে। টাট্ট ঘোড়ায় চড়া আর মনটানার মাসট্যাঙে চড়া এক কথা নয়, ওই যেমন তোমার ঝরঝরে ভেগা আর চকচকে মার্সিডিজ কিংবা জাগুয়ার,
হয়েছে হয়েছে, রেগে উঠল মুসা, আর খোঁচা মারতে হবে না!
ওদের ঝগড়া থামানোর জন্যে হাসল কিশোর। রবিন, তুমিও ভুল করছ। র্যাঞ্চের সব ঘোড়াই বুনো কিংবা খেপা নয়।
ঠিক বলেছ, কাঁধের ওপর দিয়ে ফিরে তাকিয়ে বলল ব্রড। হেসে অভয় দিল মুসাকে, সব রকমের আরোহীর জন্যেই ঘোড়া রাখি আমরা। একেবারে আনাড়ির জন্যেও আছে।
ভাল! নাক কুঁচকাল মুসা। আনাড়ি শুনতে ভাল লাগেনি। তবে আমার জন্যে ভাল ঘোড়াই দরকার। চড়তে জানি। বহুবার চড়েছি। নবিস নই।
বুনো মাসট্যাংও নিশ্চয় আছে আপনাদের? ব্রডকে জিজ্ঞেস করল রবিন।
সরু হয়ে এল লোকটার চোখের পাতা। বুনো?
ঝড়ো বাতাসের মত জোরাল বাতাস এসে ঢুকছে জানালা দিয়ে। বইয়ের পাতা মেলা মুশকিল। অনেক কায়দা করে ডাবল সি র্যাঞ্চের ঝলমলে কভার ওয়ালা ব্ৰশিয়ারটা খুলে দেখাল রবিন, একটা কালো ঘোড়ার ছবিতে আঙুল রাখল। সামনের পা তুলে দিয়ে পেছনের দুপায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছে ঘোড়াটা, যেন পক্ষিরাজের মত আকাশে উড়াল দেয়ার মতলব।- এই যে এটার মত? ইউনিকর্ন?
ইউনিকর্ন? চোখ গোল গোল হয়ে গেল মুসার। গ্রীক মিথলজির দানব এল কোত্থেকে এখানে? এটারও শিং আছে নাকি?
বাস্তব ঘোড়ার শিং থাকে না, বলে আবার ব্রডের দিকে তাকাল রবিন, চোখে জিজ্ঞাসা নিয়ে।
ওতে চড়ে না কেউ, কাটা কাটা শোনাল ব্রডের কণ্ঠ।
ব্রশিয়ারেও অবশ্য তাই লেখা রয়েছে। কেউ নাকি চড়তে পারে না।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, দেখতে পাব তো ওকে?
রিয়ারভিউ মিররে কিশোরের চোখে চোখে তাকাল ব্রড। একটা পরামর্শ দিচ্ছি, কিশোর, ইউনিকের কাছ থেকে দূরে থাকবে। মরতে না চাইলে। গ্যাস প্যাডালে চাপ বাড়াল সে। খেপা ঘোড়ার মতই যেন লাফ দিয়ে আগে বাড়ল গাড়ি। এবড়োখেবড়ো পথে ঝাঁকি খাওয়া বাড়ল, পেছনে বাড়ল ধুলোর ঝড়।
বিষণ্ণ হাসি ফুটল মুসার মুখে। গাড়ি তো নয়, মনে হচ্ছে নাগরদোলায় চড়ছি।
কিশোর চুপ। ইউনিকর্নের কথা ভাবছে। ব্রডের হুঁশিয়ারি ঘোড়াটার প্রতি কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছে ওর। কয়েকটা কোরাল পেরিয়ে এল গাড়ি। অনেক ঘোড়া দেখা গেল। তাকিয়ে রয়েছে সেদিকে কিশোর। ইউনিকর্নকে দেখার জন্যে। মায়ের পাশে ছোটাছুটি করতে দেখল অস্বাভাবিক লম্বা পা-ওয়ালা বাচ্চা ঘোড়াকে। ধুলোয় ঢেকে রয়েছে ঘোড়াগুলোর শরীর। তৃণভূমিতে ঘোড়ার পাশাপাশি চড়ছে সাদা চৌকোণা মুখওয়ালা লাল গরু। ওগুলোর গায়েও ধুলো।
কালো ঘোড়াটাকে দেখা গেল না।
র্যাঞ্চের মূল বাড়িটার সামনে এনে গাড়ি রাখল ব্রড়। এক সময় সাদা রঙ করা। হয়েছিল দোতলা বাড়িটাকে। রঙ চটে গেছে এখন, জানালার কাছগুলোতে ফাটা ফাটা হয়ে আছে। লাল রঙ করা শার্সির অনেকগুলো কজা ছুটে গিয়ে কাত হয়ে। রয়েছে বিচিত্র ভঙ্গিতে। টালির ছাত মেরামত করা হয়েছে বহু জায়গায়। সামনের বারান্দা বাড়িটার সমান লম্বা, এককোণ থেকে মোড় ঘুরে পাশ দিয়েও এগিয়ে। গেছে। রেলিঙের খুটি জায়গায় জায়গায় খুলে পড়ে গেছে, রেলিঙের ওপরটা দেবে। রয়েছে ওসব জায়গায়।
ধুলো ঢাকা মাটিতে লাফিয়ে, নামল গোয়েন্দারা। চত্বরে থেকেই আস্তাবল, গোলাঘর আর বাঙ্কহাউস দেখতে পাচ্ছে কিশোর। সবগুলো ঘরই সাদা রঙ করা হয়েছিল। মলিন ফেকাসে হয়ে গেছে এখন, ধূসর হয়ে গেছে কোথাও কোথাও। কাত হয়ে রয়েছে বেড়া। পুরো জায়গাটারই কেমন বিবর্ণ দরিদ্র চেহারা।
সাংঘাতিক মোটা, ধূসর রঙের চুলওয়ালা এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন সামনের দরজার কাছে। তিনিই কেরোলিন হোফারসন, এই র্যাঞ্চের হাউসকীপার, রবিনের মায়ের ছোটবেলার বান্ধবী, স্কুলে একসাথে পড়েছেন। তিন গোয়েন্দাকে দাওয়াত করেছেন, র্যাঞ্চে এসে ছুটি কাটানোর জন্যে।
ফিসফিস করে মুসা বলল, কিশোর, এ-কি! ব্রশিয়ারে কি দেখলাম, আর এসে কি দেখছি? এই অবস্থা তো কল্পনা করিনি।
রবিন! বারান্দায় দাঁড়ানো মহিলা এগিয়ে এলেন। বিশাল মুখে হাসি।
ব্যাগ হাতে দ্রুত এগিয়ে গেল রবিন। আন্টি, কেমন আছেন? আমি…
আর বলতে হবে না, তুমিই রবিন। দেখেই চিনেছি।…আর তুমি কিশোর পাশা। তুমি মুসা।
গর্জন তুলে চত্বরে ঢুকল একটা ভ্যান। বারান্দার সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল। জীপটার মতই এটার গায়েও সবুজ রঙে লেখা রয়েছে র্যাঞ্চের নামঃ ডাবল সি র্যাঞ্চ। পাশে পা তুলে দেয়া একটা কালো ঘোড়ার ছবি, র্যাঞ্চের মনোগ্রাম।
কয়েকজন নামল ভ্যান থেকে, তাদের মধ্যে রয়েছে এক তরুণী। বয়েস বিশ মত হবে, লাল চুল, মুখে হাসি। এগিয়ে এসে হাত বাড়াল প্রথমেই কিশোরের দিকে, হাই, আমি লিলি মরগান। তুমি নিশ্চয় কিশোর পাশা?
মাথা ঝাঁকিয়ে অন্য দুজনের পরিচয় করিয়ে দিল কিশোর।
খুব খুশি হলাম তোমাদেরকে দেখে, হাসি এবং আন্তরিকতায় উজ্জ্বল হয়ে আছে লিলির চোখ। তবে ঠোঁটের কোণে ক্লান্তির হালকা ছাপও স্পষ্ট। যাও, ভেতরে যাও। আমাদের আরও মেহমান আছে, তাদেরকে খাতির যত্ন করতে হবে আমাকে। আন্টির সঙ্গে তো পরিচয় হয়েই গেছে তোমাদের। রাঁধুনী, নার্স, অ্যাকাউনটেন্ট, হাউসকীপার, সব এক হাতেই করেন। আন্টি না থাকলে যে আমার কি দুর্গতি হত! আরেক বার হেসে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নেমে চলে গেল লিলি ভ্যানের কাছে দাঁড়ান অন্য মেহমানদের দিকে।
সবই করেন তাহলে আপনি, কেরোলিনের দিকে তাকিয়ে বলল কিশোর।
হাত দিয়ে ডলে অ্যাপ্রনের ভাজ সমান করতে লাগলেন তিনি। এভাবে সামনাসামনি প্রশংসায় লজ্জা পেয়েছেন। লিলির কথা আর বল না। এসো, তোমাদের ঘর দেখিয়ে দিই। হাতমুখ ধুয়ে এসো। লেমনেড খেতে দেব।
আউফ, দারুণ কথাটা বলেছেন আন্টি, মুসা বলল। এটাই চাইছিলাম এখন।
মাটিতে নামিয়ে রাখা ওর ডাফেল ব্যাগটার দিকে হাত বাড়াল কিশোর। বাধা দিয়ে কেরোলিন বললেন, থাক, তোমাদের নিতে হবে না। ব্রড আর টিম আছে, দিয়ে আসবে।
হাউসকীপারের পিছু পিছু ভেতরে ঢুকল তিন গোয়েন্দা। প্রবেশপথের মুখ থেকেই চার দিকে চলে গেছে চারটে শাখাপথ। সিঁড়ি উঠে গেছে ওগুলোর মাথা থেকে। একটা সিঁড়ির গোড়া থেকে বড় একটা হলঘর চলে গেছে বাড়ির পেছন দিকে, রান্নাঘর পর্যন্ত। বায়ে রয়েছে ডাইনিং রুম, লম্বা লম্বা টেবিল পাতা। ওই ঘর আর রান্নাঘরের মাঝে দরজা রয়েছে, সুইংডোর লাগান। ডানে লিভিং রুম। পাইন। কাঠের প্যানেলিং করা। আসবাবপত্র সব পুরানো, মলিন, কাঠের মেঝেতে পাতা কার্পেটটাও বিবর্ণ। ছাত ধরে রেখেছে বড় বড় কড়িকাঠ। দেয়ালে আঁকা রয়েছে। ওয়াগনের ছবি। এক কোণে একটা রিভার-রক ফায়ারপ্লেস, ওটার ম্যানটেল বোঝাই হয়ে আছে নানারকম ট্রফিতে।
এসব পুরস্কার কি সব লিলি জিতে এনেছে? দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করল মুসা।
সঅব। এখানে ওর মত ঘোড়ায় চড়তে পারে না আর কেউ, গর্বের সঙ্গে বললেন কেরোলিন। হাঁটতে শেখার আগেই ঘোড়ায় চড়তে শিখেছে মেয়েটা, তা ও জিন ছাড়া, ইনডিয়ানদের মত ঘোড়ার খালি পিঠে। বারো বছর বয়েসে স্থানীয় সমস্ত রোডিও প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে। এর কয়েক বছর পরেই ঘোড়ার পিঠে চেপে বেরিয়ে পড়েছিল দেশভ্রমণে। তাতেও পুরস্কার জিতে নিয়ে শেষে এসে এই– র্যাঞ্চের কাজে লেগেছে।
কাজে লেগেছে মানে? জানতে চাইল কিশোর।
কেশে গলা পরিষ্কার করে নিলেন কেরোলিন। ওর সাহায্য দরকার হয়েছিল ওর বাবার, অ্যাক্সিডেন্টের পর। প্রসঙ্গটা চাপা দেয়ার জন্যে তাড়াতাড়ি বললেন, এসো। ঘরে চলো। চওড়া একটা সিঁড়ি বেয়ে ওদেরকে দোতলায় নিয়ে চললেন তিনি।
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে পাশের দেয়ালে টানানো ছবিগুলো দেখল কিশোর। ল্যাণ্ডিঙে পৌঁছে থামল, ফ্রেমে বাঁধাই একটা সাদা কালো ছবি দেখে। কার ছবি? লিলির বাবার? কাউবয়ের পোশাক পরা একজন মানুষের ছবি, সেদিকে হাত তুলল সে।
হাসি মলিন হয়ে এল কেরোলিনের। হ্যাঁ, লিলির বাবা। মেয়েটাকে একাই মানুষ করেছেন। লিলির মা মারা গেছে ওর পাঁচ বছর বয়েসে।
মা বলে, রবিন বলল, লিলি নাকি আপনার মেয়ের মত।
বিষণ্ণতা ফুটল কিশোরের চেহারায়। তারও মা নেই। ছোটবেলায় এক মোটর দুর্ঘটনায় বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছে। তারপর থেকে বড় হয়েছে মেরিচাচীর কাছে। লিলির বাবার দুর্ঘটনাটা কিভাবে ঘটেছিল, জানতে ইচ্ছে করছে তার। জিজ্ঞেস করল, বাপ-মেয়ের খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল, না?
ছিল, সিঁড়ির মাথা থেকে জবাব দিলেন কেরোলিন।
লম্বা করিডরে মলিন কার্পেট পাতা। দোতলায়ও হলঘর আছে। এক প্রান্ত থেকে নেমে গেছে আরেকটা সিঁড়ি।
কিশোরকে সেদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কেরোলিন জানালেন, ওটা দিয়ে রান্নাঘরে যাওয়া যায়। আর এই যে দরজাগুলো দেখছ, এগুলো বেডরুম। মেহমানদের থাকার। সিঁড়ির ডানের একটা দরজা খুলে বললেন, এটা তোমাদের ঘর।
একটা জানালা খুললেন কেরোলিন। হুড়মুড়িয়ে যেন ঘরে ঢুকল গরম বাতাস, তাজা খড়ের গন্ধে ভারি হয়ে আছে। মুসা বলল, বাহু, গন্ধটা তো চমৎকার।
হ্যাঁ, কেরোলিন বললেন। ভালই ছিল সব কিছু। নষ্ট করে দিল ওই শয়তান ঘোড়াটা।
শয়তান ঘোড়া? ইউনিকর্নের কথা বলছেন? ভুরু কোঁচকাল কিশোর।
ওটাকে যে এখনও কেন রেখেছে লিলি বুঝি না। ঠোঁট কামড়ে ধরলেন। কেরোলিন। কাঁধ দিয়ে ঠেলে আরেকটা দরজা খুললেন। এখানে আরেকটা ঘর আছে। দুটো ঘরে থাকতে পারবে তো তিনজনে?,
নিশ্চয়ই, রবিন বলল। একটা হলেও পারতাম।
প্রথম ঘরটা ছোট, একটা সিঙ্গল বেড, পুরানো কার্পেট, একটা রকিং চেয়ার, আর একটা আলমারি আছে। পরের ঘরটা বড়, সবই একটা করে আছে, কেবল বিছানা দুটো। যে কোন একজনকে থাকতে হবে ছোট ঘরটায়। ওয়েস্টার্ন প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি ঝোলানো রয়েছে দেয়ালে। জানালায় লাগানো হয়েছে ভারি কাপড়ের পর্দা।
ঘর দেখিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন কেরোলিন।
এখন কে কোনটাতে থাকবে ঠিক করতে বসল তিনজনে। মুসা প্রস্তাব দিল, টস করা হোক। কিশোর টসে জিতল। সে থাকবে ছোট ঘরটায়, একা। বড়টায় অন্য দুজন।
রবিন বলল, আমি থাকব জানালার কাছে। বলতে বলতে গিয়ে যেন নিজের জায়গা দখলের জন্যেই উঠে পড়ল দেবে যাওয়া ম্যাট্রেসে। রাতে ঝিঁঝি আর কয়োটের ডাক শুনতে পাব এখান থেকে। আমার খুব ভাল লাগে।
থাকো, আমার আপত্তি নেই, মুসা বলল।
জানালা দিয়ে মুখ বের করল রবিন। তোমরা যাই বলো, আমার কাছে। এটাকে লাগছে গোস্ট টাউনের মত। ওই যে, ওয়েস্টার্ন শহরে ভূতুড়ে শহরের কথা শোনা যায় না, সে রকম।
ঠিকই বলেছ, একমত হলো কিশোর, ও রকমই। কেমন যেন পোড়ো পোড়ো লাগে। বিছানায় উঠে এসে রবিনের পাশে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল সে। কাজ করছে কয়েকজন র্যাঞ্চ হ্যাণ্ড, র্যাঞ্চের শ্রমিক ওরা। ঘোড়াকে ব্যায়াম করাচ্ছে কেউ, কেউ জিন আর লাগাম পরিষ্কার করছে, কেউ বা বেড়া পরিষ্কারে ব্যস্ত। তবে এতবড় একটা র্যাঞ্চে যত লোক থাকার কথা, যতটা সরগরম থাকার কথা, সে রকম নেই। হলোটা কি এখানে, বলো তো?
পুরোপুরি সব জানি না, রবিন বলল। মার কাছে যতটা শুনেছি। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে মারাত্মক জখম হয়েছিলেন লিলির বাবা। অকর্মণ্য হয়ে যান। র্যাঞ্চের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায় তদারকির অভাবে। শেষে মারাই গেলেন। বাধ্য হয়ে রোডিও খেলা বাদ দিয়ে সাহায্য করতে আসতে হয় লিলিকে। চিন্তিত ভঙ্গিতে ভ্রূকুটি করল রবিন। তবে তখন দেরি হয়ে গেছে। আরেকটা র্যাঞ্চে চলে যেতে শুরু করেছে তখন মেহমানরা, টুরিস্ট, যারা এখানে বেড়াতে এলে থাকে।
বিড়বিড় করে কি বলল কিশোর বোঝা গেল না।
আমাদের পরে যে ভ্যানটা এল, দেখেছ? মুসা বলল, অনেক বড়, অনেক লোক ধরবে। অথচ নামল পাঁচজন, তা-ও একজন ড্রাইভার। ব্রশিয়ারে পড়লাম এই র্যাঞ্চে মেহমানই থাকতে পারে ষাটজন…আছে কজন এখন? আমাদেরকে নিয়ে বড় জোর দশ-এগারো?
কাছাকাছি হয়ে এল কিশোরের ভুরু। ভাঁজ পড়ল কপালে। এই কথাটা সে-ও ভেবেছে। বলল, হয়তো আসবে, পরে। ডিনারের এখনও দুই ঘণ্টা বাকি।
হয়তো, মাথা ঝাঁকাল রবিন। তবে বিশ্বাস করতে পারছে না কথাটা।
ওদের মালপত্র নিয়ে দরজায় দেখা দিল ব্রড।
দেখি, দিন ওটা আমার হাতে, নিজের ব্যাগটা নিয়ে লোকটাকে সাহায্য করার জন্যে নেমে গেল কিশোর।
রবিন আর মুসাও এগোল।
বাপরে বাপ, কি ভারি, অল্প অল্প হাঁপাচ্ছে ব্রড। সারা গরমটাই কাটাতে চলে এসেছ মনে হয়।
না, কিছু কাপড়চোপড় তো লাগেই, মুসা বলল, লাগে না?
রবিন বলল, তাছাড়া আরও কিছু টুকিটাকি জিনিস দরকার হয়। অল্প অল্প নিতে গেলেও ভারি হয়ে যায়।
বেরিয়ে গেল ব্রড।
ব্যাগ খুলে তোয়ালে বের করল মুসা। তোমরা কি করবে জানি না, আমি গোসল করতে চললাম।
করগে, কিশোর বলল। আমি যাচ্ছি জায়গাটা ঘুরে দেখতে।
রবিন বলল, আমিও যাব।
ব্যাগটা তুলে নিয়ে নিজের ঘরে এনে রাখল কিশোর। তারপর রবিনকে নিয়ে রওনা হলো নিচতলায়।
রান্নাঘরে ঢুকতেই ওদেরকে লেমোনেড দিলেন কেরোলিন।
খেতে খেতে র্যাঞ্চটার ব্যাপারে নানা খবর নিতে লাগল কিশোর। কেরোলিনও সব প্রশ্নের জবাব দিলেন। জানালেন, কোথায় কোথায় রয়েছে। আস্তাবল, বাঙ্কহাউস, ট্যাকরুম আর ঘোড়ার বাচ্চা রাখার ছাউনি। বিশ্রাম নিয়েছে, লেমোনেড খেয়েছে। অনেকটা তাজা হয়ে বাইরে বেরোল দুই গোয়েন্দা, র্যাঞ্চ দেখার জন্যে।
ঘুরেটুরে দেখে এসে দাঁড়াল কাত হয়ে থাকা একটা বেড়ার কাছে। খুঁটিতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল একজন শ্রমিক কি করে ধূসর রঙের একটা ঘোড়ার বাচ্চাকে ট্রেনিং দিচ্ছে।
অনেক অবাধ্যতা করল বাচ্চাটা। লাফালাফি করল, ঘাড় বেঁকিয়ে এদিক ওদিক সরে যাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিঠে জিন বাধতে দিতেই হলো।
কি দেখছ? ওদেরকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল লোকটা। এটাকে এখন পোষ মানান হচ্ছে। পিঠে চড়ব। চেষ্টা করে দেখতে চাও? ও, আমি শেপ
আপত্তি নেই, এগিয়ে গেল কিশোর। হেসে বলল, দেখিই না পারি কিনা।
দেখো। খুব শয়তান, বলে দিলাম। হ্যাটটা ঠেলে পেছনে সরিয়ে হাত দিয়ে। কপালের ঘাম মুছল শেপ।
ইউনিকর্নের বংশধর নাকি?
শক্ত হয়ে গেল শেপের চোয়াল। না।
ইউনিকর্ন তো এখানে বিখ্যাত, তাই না?
কুখ্যাত। হ্যাটটা আবার আগের জায়গায় নিয়ে এসে ঘোড়ার গলার রশি ধরে টান দিল। গোলাঘরের দিকে রওনা হয়ে গেল কিশোরকে অবাক করে দিয়ে। কয়েক পা এগিয়ে ফিরে তাকিয়ে বলল, পোষ মানান আরেক দিন শেখ। আজ আর এটাকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই। কাহিল হয়ে পড়েছে। খুব ভাল লাগল তোমার সঙ্গে কথা বলে।
তাকিয়ে রয়েছে রবিন। সে-ও কম অবাক হয়নি। লোকটা দূরে চলে গেলে বলল, ইউনিকর্নের কথা কেউই আলোচনা করতে চায় না এখানে।
ভাবছি, কেন? আস্তাবলের দিকে তাকিয়ে গাল চুলকাল কিশোর। বিনা অনুমতিতে মেহমানদের ওখানে ঢাকার নিয়ম নেই। গেট বন্ধ। হুট করে যাতে কেউ ভেতরে ঢুকে পড়তে না পারে সেই ব্যবস্থা করা আছে। ঘোড়াটাকে দেখার বড় লোভ হচ্ছে।
রবিনকে নিয়ে আবার র্যাঞ্চ হাউসে ফিরে চলল সে। পোশাক বদলে ডিনারের জন্যে তৈরি হতে হবে।
রহস্যের গন্ধ পাচ্ছ মনে হয়? হাঁটতে হাঁটতে বলল রবিন।
জবাব দিল না কিশোর। ভাবছে। ইউনিকনের ব্যাপারে ব্রড, কেরোলিন, এমনকি শেপের আচরণ কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছে তার।
.
দ্রুত গোসল সেরে নিয়ে ধোয়া টি-শার্ট আর জিনস পরে নিচে রওনা হলো কিশোর। কয়েক ধাপ নেমেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল।
নিচ থেকে শোনা যাচ্ছে একজন লোকের ভারি কণ্ঠ, রেগে গিয়ে বলছে, সময় শেষ হয়ে আসছে, লিলি, বোঝার চেষ্টা করো!
সিঁড়ির রেলিঙের কাছে এসে নিচে উঁকি দিল কিশোর। সামনের দরজায়। দাঁড়িয়ে আছে লিলি। কোমরে হাত, এদিকে পেছন করে আছে। যে লোকটা কথা বলছে সে রয়েছে বাইরে বারান্দায়, দেখা যাচ্ছে অবশ্য। বেঁটে, গোলগাল শরীর, লাল মুখ, পাতলা হয়ে এসেছে কালো চুল।
আপনার কাছ থেকে ওকথা শোনার কোন প্রয়োজন নেই আমার। লিলিও রেগে গেছে। গলা কাঁপছে ওর।
সেটা তোমার ইচ্ছে। তবে আর কোন উপায়ও নেই তোমার, লোকটার চোখজোড়ায় শীতল, কঠিন দৃষ্টি। কুকুর যেভাবে মাড়ির ওপর থেকে ঠোঁট সরিয়ে ভেঙচি কাটে, অনেকটা তেমনি করেই ভেঙচি কাটল লোকটা। বলল, দেখো, ডবসি কুপার আর হারনি পাইকের কাছে তুমি একটা মশা। টিপ দিলেই মরে যাবে। কি আছে তোমার? ছিলে রোডিও রাইডার, এখানে এসে হয়েছ একটা ধসে পড়া র্যাঞ্চের মালিক। সেটাও আবার বন্ধক দেয়া। তোমার ওই শয়তান ঘোড়াটারও কানা কড়ি দাম নেই। কেউ চড়তেই পারে না ওটার পিঠে, কে দাম দিতে যাবে? ভেবে দেখ আমার কথা। লিলিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই জুতোর গোড়ালিতে ভর দিয়ে পাক খেয়ে ঘুরল সে। গটমট করে নেমে চলে গেল বারান্দা থেকে।
এতক্ষণ সোজা করে রাখলেও লোকটা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁকা হয়ে গেল লিলির কাঁধ, যেন ভার বইতে পারছে না আর। ঘুরল। ঘুরতেই কিশোরের চোখে চোখ পড়ল।
সরি, আড়ি পেতে শুনতে চাইনি, কৈফিয়ত দেয়ার ভঙ্গিতে বলল কিশোর। তাড়াতাড়ি নেমে গেল নিচতলায়। কানে এল ইঞ্জিন স্টার্ট নেয়ার শব্দ। যেন বিশেষ কারও ওপর ঝাল দেখার জন্যেই টায়ারের শব্দ তুলে, গর্জন করে ছুটতে শুরু করল। জানালা দিয়ে লম্বা একটা সাদা গাড়ি দেখতে পেল সে।
কিছুই হয়নি এরকম একটা ভঙ্গি করল লিলি। কিন্তু চেহারার ফেকাসে ভাব দূর করতে পারল না। ওর নাম ফিলিপ নিরেক। গলা কাঁপছে মেয়েটার। ঢোক গিলল। আমার সর্বনাশ করতে চায়।
কেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
এই র্যাঞ্চটা চায় ও। কয়েক বছর আগে অনেক টাকা ঋণ নিয়েছিল আব্বা। ঘোড়ার খেলা দেখিয়ে আমিও কিছু কামিয়েছিলাম। দুজনের টাকা দিয়ে কিছু গরুঘোড়া কিনলাম, ব্যবসার জন্যে। এই র্যাঞ্চটা কিনলাম। অনেক বেশি খরচ করে ফেললাম আমরা। ভাবলাম, কি আর হবে, আস্তে আস্তে তুলে নেব টাকাটা। জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলল লিলি। কিন্তু অ্যাক্সিডেন্ট করে বসল আব্বা। কাজ করার ক্ষমতা রইল না। রোডিও খেলা বাদ দিয়ে চলে আসতে হলো আমাকে। তবু সামাল আর দিতে পারলাম না। একের পর এক গোলমাল হতেই থাকল।
এই ফিলিপ নিরেক লোকটা কে?
ব্যাংকের লোন অফিসার। ঋণ শোধ করার সময় শেষ হতে আরও কিছুদিন। বাকি, অথচ এখনই এসে হুমকিধামকি শুরু করেছে। বলছে কোনদিনই পারব না। র্যাঞ্চ বন্ধ করে দিতে।
লিলির উদ্বিগ্ন মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। লিভিং রুমের দিকে চলল মেয়েটা। ওর পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলল কিশোর, আরও দুজন। লোকের নাম বলল শুনলাম?
হ্যাঁ। ডবসি কুপার আর হারনি পাইক। দুজনেই র্যাঞ্চার, ডাবল সির সব চেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী।
ডবসি কুপার? নামটা পরিচিত লাগল কিশোরের। বেনি কুপারের কিছু হয় না তো? রোডিও স্টার?
বেনির বাবা। কাচের বাক্সে রাখা ট্রফিগুলোর দিকে তাকাল লিলি। আমি সরে আসতেই ও ওপরে উঠে গেল। নাম করে ফেলল। আমি থাকতে ট্রিক রাইডার আর বেয়ারব্যাক রেসার হিসেবে আমার পর পরই ছিল ও।
রোডিও খেলা দেখেছে কিশোর। রিঙের ভেতরে জিন ছাড়াই ঘোড়ার খালি। পিঠে বসে বেদম গতিতে ছুটতে থাকে খেলোয়াড়েরা। আরও নানারকম বিপজ্জনক খেলা দেখায়, প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এগিয়ে গিয়ে একটা ট্রফিতে হাত বোলাল লিলি। ফিলিপের বক্তব্য, ওই দুজন র্যাঞ্চারের সঙ্গে কোনমতেই এঁটে উঠতে পারবে না ডাবল সি। বিক্রি করে। দিতে বলছে হারনি পাইকের কাছে। অনেক জায়গাজমি কিনছে পাইক, মিস্টি ক্যানিয়নে হোটেল পাইকের কাছে। অনেতে পারবে না ডাবল সি বক্তব্য, ওই
জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল কিশোর। সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য। এ রকম একটা জায়গাকে কিছু বানিয়ে নষ্ট করা উচিত না।
প্রাণ থাকতে দেবও না আমি! ফুঁসে উঠল লিলি।
কি করে বাধা দেবেন?
ঝিক করে উঠল লিলির সবুজ চোখ। আবার কাজ শুরু করব।
কাজ তো করছেন… থেমে গেল কিশোর। ও, আবার রোডিও?
কেন নয়? জুলাইয়ের চার তারিখে ইডাহোর বয়েসে একটা বিরাট রোডিওর আয়োজন করা হয়েছে। এতবড় আয়োজন এই এলাকায় আর হয়নি। পুরস্কারের টাকাও অনেক বেশি। জিততে পারলে ব্যাংকের ঋণ সহজেই শোধ করে দিতে পারব। শুধু তাই নয়, যে জিতবে তাকে বিজ্ঞাপনে এমনকি সিনেমায়ও অভিনয়ের সুযোগ দেয়া হবে। টাকার আর অসুবিধে হবে না তখন। র্যাঞ্চের খরচ সহজে জোগাতে পারব। এভাবে দুচারটা টুরিস্ট মৌসুম টিকিয়ে রাখতে পারলেই বেঁচে যাবে র্যাঞ্চটা। নিজের আয়েই চলতে পারবে তখন।
হ্যাঁ, ভালই হবে, কিশোর বলল। আইডিয়াটা মন্দ না।
ঘণ্টা শোনা গেল বাড়ির ভেতর থেকে।
ঘড়ি দেখল লিলি। খাবার সময় হয়েছে। লিলিকে দেরি করিয়ে লাভ নেই। ওকে কথা দিয়েছি, আজকে খাবার টেবিলে সাহায্য করব। কিশোরের দিকে তাকাল, তোমাকে এত কিছু বলে ফেললাম, কিছু মনে করনি তো?
লিলির সঙ্গে ডাইনিংরুমে এসে ঢুকল কিশোর। ঢোকার মুখেই দেখা হয়েছে ফোরম্যান লুক বোলানের সঙ্গে, পরিচয় করিয়ে দিয়েছে লিলি। কিশোরের হাসির জবাব দিয়েছে লোকটা সামান্য একটু মাথা নুইয়ে।
লম্বা একটা টেবিলে বসে পড়েছে রবিন।
আরি, তুমি আগে? কিশোর জিজ্ঞেস করল, মুসা কোথায়?
বলতে পারব না। আমি বাথরুমে থাকতেই ও ডেকে বলল, বাইরে ঘুরতে যাচ্ছে।
দেখি, খুঁজে নিয়ে আসিগে। দেরি করলে তো ডিনার মিস করবে।
দরজার দিকে ঘুরল কিশোর, বেরোনর জন্যে। আচমকা, বিকেলের শান্ত বাতাসকে চিরে দিল যেন তীব্র একটা আতঙ্কিত চিৎকার। রেসের ঘোড়া।