রাবণ কর্ত্তৃক কুবের-সেনাপতির পরাজয়
সসৈন্যেতে রাবণ সাগর হৈল পার।
কৈলাস-পর্ব্বতে উঠি করে মার মার।।
দূত গিয়া কহিল কুবের বরাবর।
যুঝিবারে আইল রাবণ নিশাচর।।
ত্রিশকোটি যক্ষে কুবের পাঠাইল রোষে।
লাগিল বিষম যুদ্ধ যক্ষ ও রাক্ষসে।।
রাক্ষস বরিষে বাণ যক্ষের উপরে।
জাঠা জাঠি শেল শূল মুষল মুদগরে।।
পলায় সকল যক্ষ রাক্ষসের ডরে।
রাবণের যুদ্ধ কেহ সহিতে না পারে।।
যক্ষের উপরে করে বাণ বরিষণ।
পলায় সকল যক্ষ নাহি সহে রণ।।
যোগবৃদ্ধ নামে কুবেরের সেনাপতি।
যুঝিতে কুবের তারে দিল অনুমতি।।
বিষ্ণুচক্র সমান তাহার চক্রে ধার।
রাক্ষস উপরে করে বাণ-অবতার।।
চক্রাঘাতে কাতর হইল মহোদর।
রুষিল রাবণ রাজা লঙ্কার ঈশ্বর।।
কোপেতে রাবণ করে বাণ বরিষণ।
ভঙ্গ দিল যোগবৃদ্ধ নাহি সহে রণ।।
পলাইয়া যায় তবে আওয়াসের গড়ে।
দ্বারীর নিকটে রহে কপাটের আড়ে।।
রথ হৈতে রাবণ পড়িল দিয়া লম্ফ।
সর্পেরে ধরিতে যেন গরুড়ের ঝম্প।।
দ্বারপাল-রূপে সূর্য্য আছেন দুয়ারে।
রাখিলা কপাট দিয়া রাবণের ডরে।।
কুপিল রাবণ রাজা বলে মহাবলী।
পুরীর ভিতরে যায় করে ঠেলাঠেলি।।
পাথরের কপাট তুলিয়া এক টানে।
কোপে দ্বারপাল রাবণের শিরে হানে।।
রক্তে রাঙ্গা হয়ে পড়ে রাজা দশানন।
ভাগ্যেতে রহিল প্রাণ না হৈল মরণ।।
সে পাথর তুলি রাবণ দ্বারপালে হানে।
পড়িল সে দ্বারপাল পাথর চাপনে।।
দ্বারপাল অচেতন কুবের চিন্তিত।
সেনাপতি মণিভদ্রে ডাকিল ত্বরিত।।
মণিভদ্র শুনহ প্রধান সেনাপতি।
আজিকার যুদ্ধে তুমি হও গিয়া কৃতী।।
বাছিয়া কটক কর সত্বরে সাজন।
হাতে গলে বান্ধি আন লঙ্কার রাবণ।।
দিলেক দানব যক্ষ বহু সেনাপতি।
চব্বিশকোটি সেনা দিল তাহার সিংহতি।।
লইয়া বিকট সৈন্য মণিভদ্র নড়ে।
গর্জ্জিয়া কটক চলে মহাশব্দ করে।।
মণিভদ্র এসে করে বাণ বরিষণ।
চারিদিকে ভঙ্গ দিল নিশাচরগণ।।
রাবণের সেনাপতি যতেক প্রধান।
যক্ষ কটক বিন্ধিয়া করিছে খান খান।।
নানা অস্ত্র রাক্ষস ফেলায় চারিভিতে।
ভঙ্গ দিল যক্ষগণ না পারে সহিতে।।
উভরড়ে পলাইল আউদর-চুলি।
দেখিয়া রুষিল মণিভদ্র মহাবলী।।
মনিভদ্রে দেখিয়া রাক্ষস ভাগে ডরে।
দেখিয়া রুষিল রাবণ লঙ্কার ঈশ্বরে।।
মণিভদ্র দশানন দুইজনে রণ।
গদা হাতে মণিভদ্র ধায় ততক্ষণ।।
দশ যোজন পর্ব্বত আনিল বায়ুভরে।
গর্জ্জিয়া পর্ব্বত হানে রাবণের শিরে।।
রাবণ মারিল বাণ উঠিল আকাশে।
সেই বাণ মণিভদ্র গিলিলেক গ্রাসে।।
মণিভদ্র-মুখ দেখি রুষিল রাবণ।
কুড়ি হাতে চাপি তার বধিল জীবন।।
মণিভদ্র পড়িল রাক্ষসগণ হাসে।
কুবেরের ভগ্নদূত কহে ঊর্দ্ধশ্বাসে।।