বেদব্যাসসমীপে ধৃতরাষ্ট্রের আরণ্যকদীক্ষা
বৈশম্পায়ন বলিলেন, অনন্তর তাঁহারা বহুক্ষণ উত্তরাভিমুখে গমন করিয়া বিদুরের বাক্যানুসারে সেই পবিত্র ভাগীরথীতীরে অবস্থান করিলেন। ঐ স্থানে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র প্রভৃতি বনবাসিগণ ধৃতরাষ্ট্রের নিকট সমুপস্থিত হইলেন। তখন অন্ধরাজ বিবিধ কথাপ্রসঙ্গে তাঁহাদিগের প্রীতিসাধন এবং শিষ্যসমবেত ব্রাহ্মণগণের পূজা করিয়া তাঁহাদিগকে বিদায় করিলেন। অনন্তর সন্ধ্যাসময় সমুপস্থিত হইলে, অন্ধরাজ ধৃতরাষ্ট্র ও যশস্বিনী গান্ধারী গঙ্গায় অবগাহন করিলেন, তখন বিদুরাদি অন্যান্য অনুগামিগণও গঙ্গাস্নান করিয়া সন্ধ্যাবন্দনাদি ক্রিয়াসমুদয় সমাপন করিতে লাগিলেন। অনন্তর মহাত্মা ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারীর স্নানক্রিয়া সমাপন হইলে, ভোজনন্দিনী কুন্তী তাহাদিগকে তীরে সমুপনীত করিলেন। ঐ সময় যাজকগণ অন্ধরাজের নিমিত্ত সেই স্থানে বেদী প্রস্তুত করিয়া দিলেন। নরপতি ধৃতরাষ্ট্র সেই বেদীতে উপবেশনপূর্ব্বক হুতাশনে আহুতি প্রদান করিতে লাগিলেন।
এইরূপে ক্রিয়াসমুদয় সমাপন হইলে অন্ধরাজ অনুযাত্রিগণের সহিত সেই ভাগীরথীতীর হইতে কুরুক্ষেত্রে যাত্রা করিলেন। কুরুক্ষেত্রের আশ্রমে উপস্থিত হইবামাত্র রাজর্ষি শতযূপের সহিত তাঁহার সাক্ষাৎকার হইল। ঐ মহাত্মা পূর্ব্বে কেকয়-রাজ্যের সিংহাসনে অধিরূঢ় ছিলেন। তিনি পুত্রের প্রতি রাজ্যভার সমর্পণ করিয়া অরণ্যে প্রবেশ করেন। অন্ধরাজ তাঁহার সহিত মিলিত হইয়া বেদব্যাসের আশ্রমে গমন করিলেন এবং অবিলম্বে তাঁহার নিকট দীক্ষিত হইয়া প্রত্যাগমনপূৰ্ব্বক শতযুপের আশ্রমে অবস্থান করিতে লাগিলেন।
ধৃতরাষ্ট্রাদির তপশ্চরণ—বিদুরাদিকর্ত্তৃক শুশ্রূষা
মহামতি শতযূপ বেদব্যাসের আদেশানুসারে অন্ধরাজকে আরণ্যবিধিসমুদয় উপদেশ প্রদান করিলেন। তখন মহাত্মা ধৃতরাষ্ট্র স্বয়ং তপঃপরায়ণ হইয়া অনুচরগণকে তপানুষ্ঠান করিতে অনুমতি দিলেন। তপস্বিনী গান্ধারী ও ভোজনন্দিনী কুন্তী উভয়ে বল্কলাজিন ধারণপূৰ্ব্বক ইন্দ্রিয়সংযম করিয়া কায়মনোবাক্যে ঘোরতর তপানুষ্ঠান করিতে লাগিলেন। অন্ধরাজ জটা, অজিন ও বল্কল ধারণপূৰ্ব্বক অস্থিচর্ম্মাবশিষ্ট হইয়া মহর্ষির ন্যায় ঘোরতর তপশ্চরণে প্রবৃত্ত হইলেন এবং পরমধার্ম্মিক মহাত্মা সঞ্জয় ও বিদুর উভয়ে চীরবল্কল ধারণপূর্ব্বক নরপতি ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারীর সেবা ও ঘোরতর তপস্যা করিতে লাগিলেন।