১৯৮তম অধ্যায়
স্বর্গাদি গতির অপেক্ষাকৃত ন্যূনতা—ভালমন্দ
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “পিতামহ! জাপকেরা কিরূপ নরকে গমন করেন, তাহা শ্রবণ করিবার নিমিত্ত আমার নিতান্ত কৌতূহল উপস্থিত হইতেছে, আপনি তাহা কীৰ্ত্তন করুন।”
ভীষ্ম কহিলেন, “বৎস! তুমি ধৰ্ম্মের অংশসম্ভূত ও ধাৰ্মিক; অতএব অবহিত হইয়া আমার ধৰ্ম্মমূলক বাক্য শ্রবণ কর। দিব্যদেহসম্পন্ন মহামতি লোকপালচতুষ্টয়, শুক্র, বৃহস্পতি, অশ্বিনীকুমারদ্বয় এবং মরুৎ, বিশ্বদেব, সাধ্য, রুদ্র, আদিত্য, বসু ও অন্যান্য দেবগণের যে সমুদয় দিব্য কামরূপ বিমান, সভা, বিবিধ ক্রীড়াস্থান ও কাঞ্চনময় কমলসুশোভিত সরোবর বিদ্যমান আছে তৎসমুদয় পরমাত্মার স্থান হইতে অনেকাংশে নিকৃষ্ট, সুতরাং ঐ সমুদয়কে নরকস্বরূপ, বলিয়া নির্দেশ করা যায়। পরমাত্মার স্থান ঐ সমুদয় হইতে পৃথগ্ভূত। উহা নাশভয়শূন্য, স্বভাবজ, ক্লেশহীন, রাগদ্বেষাদিবর্জ্জিত, প্রিয়-অপ্রিয়রহিত; পঞ্চভূত, ইন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধি, বাসনা, কৰ্ম্ম, বায়ু ও অবিদ্যাপরিশূন্য; হেতুবর্জ্জিত, জ্ঞেয়, জ্ঞান ও জ্ঞাতৃভাববিহীন; দর্শন, শ্রবণ, মনন ও বিজ্ঞান এই চতুৰ্ব্বিধ কারণশূন্য এবং হর্ষ, আনন্দ ও রোগশোকবর্জ্জিত। পরমাত্মা কালের অধীন নহেন। তিনি কাল ও স্বর্গ উভয়েরই অধীশ্বর। যে ব্যক্তি আত্মতত্ত্ব অবগত হইয়া সেই পরমাত্মার পরমস্থানে গমন করিতে পারেন, তাঁহাকে কখনই অনুতাপ করিতে হয় না। হে ধৰ্ম্মরাজ! আমি তোমার নিকট নরকসমুদয়ের বিষয় কীৰ্ত্তন করিলাম। ঐ সমুদয় স্থান ব্ৰহ্মপদ অপেক্ষা নিতান্ত নিকৃষ্ট বলিয়াই নিরয়পদবাচ্য হইয়া থাকে।”