মুনি বলে, শুন পরীক্ষিতের তনয়।
সাত্যকির কৈল কিবা হেতু পরাজয়।।
একদিন বাসুদেব পিতৃশ্রাদ্ধ কালে।
নিমন্ত্রণ করি যত কুটুম্ব আনিলে।।
সোমদ্ত্ত বাহলীক যে পাঞ্চাল রাজন।
শাল্ব শিশুপাল এল পেয়ে নিমন্ত্রণ।।
আইল অনেক রাজা না হয় বাখান।
সবাকারে বাসুদেব করে অভ্যুথান।।
বিচিত্র আসনে বসাইল সর্ব্বজন।
তার মধ্যে সোমদত্ত করিল গমন।।
সভার মধ্যেতে যদি সোমদত্ত গেল।
সোমদত্ত দেখি শিনি ক্রোধেতে জ্বলিল।।
বাসুদেব খুড়া শিনি ক্রোধেতে জ্বলিল।
সোমদত্তে দেখি শিনি পাইলেক তাপ।।
ডাকিয়া বলিল শিনি শুন সোমদত্ত।
সভামধ্যে বৈস তুমি এ কোন্ মহত্ত্ব।।
আমা সবা না মানিস্ কোন্ অহঙ্কারে।
পৃথিবীর মধ্যে কেবা না জানে তোমারে।।
মর্য্যাদা থাকিতে শীঘ্র যাও পলাইয়া।
আপন সদৃশ যোগ্যস্থানে বৈস গিয়া।।
এত শুনি সোমদত্ত ক্রোধেতে জ্বলিল।
অগ্নির উপরে যেন ঘৃত ঢালি দিল।।
সোমদত্ত বলে শিনি না করিস্ গর্ব্ব।
তোমার মহত্ত্ব যাহা আমি জানি সর্ব্ব।।
এতেক উত্তর মোরে করিস্ বর্ব্বর।
কোন অর্থে ন্যূন আমি পৃথিবী ভিতর।।
তোমা হৈতে ন্যূন কেবা আছয়ে ররণী।
মম অগোচর নহে সব আমি জানি।।
এতেক শুনিয়া শিনি মহাকোপ মন।
ক্রোধে ডাক দিয়া বলে শুন সর্ব্বজন।।
এত অহঙ্কার তোর ওরে কুলাঙ্গার।
পরে নিন্দ, ছিন্দ্র নাহি দেখ আপনার।।
ইহার উচিত ফল দিব আমি তোরে।
এত বলি মহাক্রোধে উঠিল সত্বরে।।
শিনি দেখি সোমদ্ত্ত উঠি সেইক্ষণ।
হুড়াহুড়ি মহাযুদ্ধ করে দুই জন।।
তবে শিনি মহাক্রোধে ধরে তার চুলে।
দেখিয়া হইল হাস্য যত সভাস্থলে।।
তবে শিনি মহাক্রোধে ধরে তার চুলে।
দেখিয়া হইল হাস্য যত সভাস্থলে।।
কেশে ধরি চড় মারে বজ্রের সমান।
এক চড়ে দন্তগুলা করে খান খান।।
তবে সবে উঠি দোঁহে বারণ করিল।
অভিমানে সোমদত্ত দেশে নাহি গেল।।
সভামধ্যে সোমদ্ত্ত পেয়ে অপমান।
তপস্যা করিতে বনে করিল প্রয়াণ।।
দ্বাদশ বৎসর তপ করে অনাহারে।
একচিত্তে সোমদত্ত সেবিল শঙ্করে।।
তপস্যাতে বশ হইলেন মহেশ্বর।
বৃষেতে চাপিয়া আসি বনের ভিতর।।
তর বলিলেন বর মাগহ রাজন।
এত বলি তাহারে ডাকেন পঞ্চানন।।
ধ্যান ভাঙ্গি সোমদত্ত দেখিলেক হর।
বিভূতিভূষণ জটাধারী গঙ্গাধর।।
আনন্দিত সোমদত্ত দেখিয়া শঙ্করে।
বিবিধ প্রকারে রাজা বহু স্তুতি করে।।
সোমদত্ত বলে হদি হৈলে কৃপাবান।
এক নিবেদন আমি করি তব স্থান।।
সভামধ্যে শিনি মোরে অমান্য করিল।
যতেক নৃপতিগণ বসিয়া দেখিল।।
অগ্নিবৎ অঙ্গ দহে সেই অপমানে।
এই নিবেদন আমি করি তব স্থানে।।
যদি মোরে বর দিবে দেব পশুপতি।
মহাধনুর্দ্ধর মম হউক সন্ততি।।
তার পুত্রে মম পুত্র জিনিবে সমরে।
রাজগণ মধ্যে যেন অপমান করে।।
ইহা বিনা আর বর নাহি চাহি আমি।
এই বর মহাপ্রভু আজ্ঞা কর তুমি।।
শঙ্কর বলেন বর দিলাম তোমার।
তব পুত্র জিনিবেক শিনির কুমারে।।
প্রাণে মারিবারে তারে নহিবে শকতি।
এত বল কৈলাসে গেলেন পশুপতি।।
শিবস্থানে হেন বর পেয়ে নৃপবর।
আনন্দিত হয়ে গেল আপনার ঘর।।
ভূরিশ্রবা সাত্যকিরে জিনে শিববরে।
তার উপাখ্যান এই জানাই তোমারে।।
দ্রোণপর্ব্ব পুণ্যকথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।