১৮২তম অধ্যায়
মার্কণ্ডেয়সমস্যাপর্ব্বাধ্যায়
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! গ্ৰীষ্মাবসানে সুখময় বর্ষাকাল সমুপস্থিত হইল। শ্যামল জলদজাল নভঃস্থল ও দিল্লুণ্ডল আচ্ছন্ন করিয়া গভীর গর্জ্জনপূর্ব্বক নিরবচ্ছিন্ন মুষলধারে বারিবর্ষণ করিতে লাগিল। বিভাকরের প্রভামণ্ডল একেবারে তিরোহিত হইল ও সৌদামিনীর প্রভাশ্রেণী সতত স্ফূরিত হইতে লাগিল। তৎকালে বোধ হইল যেন, ঘনমণ্ডলী বর্ষাকালের পটমণ্ডপস্বরূপ হইয়াছে। নবীনতৃণ-সমাচ্ছন্ন অবনী বর্ষনীরে অভিষিক্ত হইয়া শান্ত ও মানবগণের একান্ত রমণীয় হইল; দংশ ও বিষধরকুলের নিতান্ত প্রাদুর্ভাব হইয়া উঠিল। চতুর্দ্দিকে বারি বিস্তীর্ণ হইলে সমবিষম ভূতল নদীনিবহ ও অন্যান্য স্থাবর-সকল আর অনুভূত হইল না। তীব্ৰবেগবতী ক্ষুব্ধসলিলা স্রোতস্বতীসকল কল কল রবে বাণধারার ন্যায় প্রবাহিত হইয়া তীরস্থ বনস্থলী-সকল পরিশোভিত করিল। তাহার মধ্যে ধারাজলসমাচ্ছন্ন বরাহ, মৃগ ও পক্ষিগণের বহুবিধ আনন্দ-নিনাদ কেবল কর্ণগোচর হইতে লাগিল। চাতক ময়ুর ও পুংস্কোকিলকুল একান্ত মত্ত ও দর্দ্দুর-সকল নিতান্ত দর্পিত হইয়া উঠিল। পরিশুষ্ক গিরিপ্রদেশচারী পাণ্ডবগণ বিবিধাকার নীরদরবানুনাদিত বর্ষাকাল সুখ-স্বচ্ছন্দে অতিবাহিত করিলেন।
অনন্তর শরৎকাল উপস্থিত হইল। অরণ্য ও পর্ব্বতশৃঙ্গে প্রচুর পরিমাণে তৃণ-সমূহ সমুৎপন্ন, নিম্নগাসকল স্বচ্ছসলিলা, আকাশমণ্ডল নির্ম্মল ও নক্ষত্রনিবহ সমধিক উজ্জ্বল হইয়া উঠিল। ক্ৰৌঞ্চ, হংস, সারস প্রভৃতি বহুবিধ পক্ষিগণ ইতস্ততঃ বিহার করিতে লাগিল। রজোবিহীন জলধরশীতল বিভাবরী, গ্রহ, নক্ষত্ৰ ও শশাঙ্কমণ্ডলে পরিবৃত হইয়া অপূর্ব্ব শোভা ধারণা করিল। নদী ও পুষ্করিণী-সকল কুমুদ, কুবলয় ও কহ্লারে সমলঙ্কৃত, অতি শীতল ও প্রশান্তদর্শন হইল। বেতসলতাস্কুল নীলতটশালী সরস্বতীতে ভ্ৰমণ করিয়া মানবগণের অন্তঃকরণে অনির্ব্বচনীয় আনন্দ-সঞ্চার হইতে লাগিল।
মহাবীর পাণ্ডবেরা সেই প্ৰসন্নসলিলা পুণ্যতোরা সরস্বতীকে পরিপূর্ণ দেখিয়া সাতিশয় সন্তুষ্ট হইলেন। পাণ্ডবগণের নারায়ণাশ্রমবাসকালে শারদীয়া কার্ত্তিকী পৌর্ণমাসী রজনী উপস্থিত হইল। তখন তাঁহারা প্রস্থানের উদ্যোগ করিতে লাগিলেন; অনন্তর অসিতপক্ষের প্রারম্ভেই মহাসত্ত্ব তাপসগণ মহর্ষি ধৌম্য, সূত ও পরিচারিকবর্গ-সমভিব্যাহারে কাম্যাকবনে গমন করিলেন।