১৭.
খুব ধীরে ধীরে রিটিনের জ্ঞান ফিরে আসে। রিটিনের প্রথম অনুভূতিটি হয় তীব্র ঠান্ডার, তার শরীর থরথর করে কাঁপছে। রিটিন চোখ খুলে তাকাল, হঠাৎ করে তার মনে হয় সে বুঝি একটি পরাবাস্তব দৃশ্য দেখছে। থরে থরে যন্ত্র সাজানো এবং সেই যন্ত্রগুলোকে পরম মমতা এবং ভালোবাসায় ক্লোনগুলো আদর করছে। মানুষ যেমন করে তার ভালোবাসার মানুষটিকে আদর করে, ক্লোনগুলোর যন্ত্রগুলোকে আদর করার ভঙ্গি তার থেকেও বেশি বাস্তব। তার থেকেও বেশি তীব্র।
রিটিন চোখ বন্ধ করে। এই যন্ত্রগুলোকে দেখেশুনে রাখার জন্যে মানুষ কী বিচিত্র একটা পদ্ধতি বের করেছে।
রিটিন একটা নিঃশ্বাস ফেলল, সে এখনো বেঁচে আছে। সে বেঁচে আছে বলে বিস্ফোরকগুলো এখনো বিস্ফোরিত হয়নি। তার দাঁতের ভেতর ছোট একটা ক্যাপসুলে একটা সায়ানাইডের এম্পুল আছে। একটা বিশেষ নিয়মে কামড় দিলে এম্পুলটি ভেঙে যাবে, সাথে সাথে মৃত্যু হবে তার। ক্লোনগুলো কিছু বোঝার আগেই পুরো ভবনটি ধ্বংস হয়ে যাবে। রিটিন কি এখন তার দাঁতের কামড় দেবে? ভেঙে ফেলবে সায়ানাইডের এম্পুলটিকে?
আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা যাক। মৃত্যু যখন নিশ্চিত তখন সেটি কয়েক মুহূর্ত পরে এলেও ক্ষতি নেই। রিটিন আবার চোখ খুলে তাকাল। যন্ত্রকে আদর করার পরাবাস্তব দৃশ্যটি আবার ফিরে এল তার চোখের সামনে। রিটিন দৃশ্যটি দেখতে দেখতে হঠাৎ আবার শীতে থরথর করে কেঁপে ওঠে। এত ঠান্ডা লাগছে কেন?
রিটিন ভালো করে তাকাল। জ্ঞান হারানোর পর তাকে টেনে ঘরের এক কোনায় এনে ফেলে রেখেছে। ঘরের এই কোনা দিয়ে মোটা মোটা কিছু পাইপ গিয়েছে, পাইপগুলো হিমশীতল। এই হিম শীতল পাইপগুলোর উপর পড়ে থাকার কারণে সে শীতে থরথর করে কাঁপছে। পাইপগুলোর উপর থেকে সরে যাবার একটু চেষ্টা করতেই তার সারা শরীর যন্ত্রণায় শিউরে ওঠে। দাঁতে দাঁত চেপে সে যন্ত্রণার ঢেউটি নিজের শরীরের ভেতর দিয়ে বয়ে যেতে দিল এই হিমশীতল পাইপগুলো এখানে কী করছে? পাইপগুলো এত হিমশীতল কেন?
হঠাৎ করে রিটিন চমকে উঠল। নিয়ন্ত্রণ ভবনের ভেতর থরে থরে সাজানো যন্ত্রগুলোকে শীতল রাখার জন্যে এই পাইপগুলোর ভেতর দিয়ে কোনো এক ধরনের তরল পাঠানো হচ্ছে। অনেক পুরানো কিন্তু কার্যকর পদ্ধতি। যন্ত্রগুলোর ভেতর যে পরিমাণ তাপ তৈরি হচ্ছে সেটাকে শীতল করতে বিশাল পরিমাণ হিমশীতল তরল পাঠাতে হয়। এই হিমশীতল প্রবাহ কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে মুহূর্তে সবগুলো যন্ত্র প্রচণ্ড তাপে বাষ্পীভূত হয়ে যাবে! তাকে কোনো বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে না, এই হিমশীতল তরলের প্রবাহটি শুধু এক মুহূর্তের জন্যে থামতে হবে।
সায়ানাইডের এম্পুলে কামড় না দিয়ে সে কি কোনোভাবে এই হিমশীতল তরল প্রবাহ কয়েক মুহূর্তের জন্যে বন্ধ করতে পারে না? রিটিন হঠাৎ করে নিজের ভেতর একধরনের উত্তেজনা অনুভব করে। তার এখন শরীরে কয়েক সিসি ট্র্যাকিনল দরকার। তার শরীরের ভেতরেই একটা এম্পুল রয়েছে, সেটাকে ভেঙে দিয়ে রক্তের প্রবাহের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। রিটিন সাবধানে কনুইয়ের একটু উপরে হাত দিয়ে চামড়ার নিচে ট্রাকিনলের এম্পুলটি খুঁজে বের করে দুই পাশ থেকে চাপ দিল। কয়েকবার চেষ্টা করতেই এম্পুলটা ভেঙে তার রক্তের মাঝে ট্র্যাকিনলও মিশে যেতে থাকে। কয়েক সেকেন্ডের ভেতর রিটিন সতেজ অনুভব করতে থাকে।
রিটিন আধশোয়া হয়ে চারদিকে তাকাল। ক্লোনগুলো তার দিকে তাকাচ্ছে না, তারপরও সে কোনো ঝুঁকি নিল না। নিশ্চল হয়ে শুয়ে থেকে সাবধানে চারদিকে তাকায়, হিমশীতল তরল বয়ে নিয়ে যাওয়া পাইপগুলো বাইরে থেকে এসেছে। ডান দিকে প্রায় পঞ্চাশ মিটার দূরে ছোট একটা ঘর, এই ঘরের ভেতর থেকে হিমশীতল তরলগুলোকে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। যন্ত্রগুলোর ভেতর থেকে তাপ নিয়ে যাওয়া উষ্ণ তরলের পাইপগুলোও রিটিন খুঁজে বের করল। হাত দিয়ে স্পর্শ করে নিশ্চিত হতে পারলে ভালো হতো কিন্তু ক্লোনগুলোর দৃষ্টি এড়িয়ে সেটি করা সম্ভব নয় বলে রিটিন তার চেষ্টা করল না।
পঞ্চাশ মিটার দূরে ছোট ঘরটাতে ঢুকতে পারলে সে সম্ভবত হিমশীতল তরলের প্রবাহটি বন্ধ করতে পারবে। ঢোকার জন্যে কোনো একটা দরজা ভাঙতে হবে–সেটিও খুব সোজা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু রিটিন সেটা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করল না। তার দুই হাতের দুটি আঙুলে চার মাত্রার দুটি বিস্ফোরক আছে। এগুলো দিয়ে সে বড় ধরনের কিছু ধ্বংস করতে পারবে না কিন্তু ডিস্ট্রিবিউশান ঘরটির দরজা নিশ্চয়ই ভাঙতে পারবে।
রিটিনকে এখন শুধু ডিস্ট্রিবিউশান ঘরটিতে পৌঁছাতে হবে। ক্লোনদের দৃষ্টি এড়িয়ে সেটি করা সম্ভব হবে না, কিন্তু যতটুকু সম্ভব সে চেষ্টা করবে।
রিটিন দুই হাতে ভর দিয়ে খুব সাবধানে ঘরটির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। ক্লোনগুলো তাকে লক্ষ করছে না, যখন সে ঘরটির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে তখন হঠাৎ একটি ক্লোন তাকে প্রথমবার লক্ষ করল, ক্লোনটি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল এবং সাথে সাথে সবাই একসাথে মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাল। ক্লোনগুলোর আলাদা অস্তিত্ব নেই, সবাই একসাথে একভাবে সবকিছু অনুভব করে।
ক্লোনগুলো যে যেখানে ছিল সেখানে থেমে গেল। তারপর এক সারিতে দ্রুত পদক্ষেপে তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। তাদের মাঝে কোনো ব্যস্ততা নেই, শুধু একটুখানি বিস্ময় আছে।
রিটিনকে এখন আর গোপনে গুঁড়ি মেরে যেতে হবে না, তাই সে নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াল। সে দৌড়ে ঘরটার কাছে ছুটে যায়। দরজার হ্যাঁন্ডেল ধরে একটা হ্যাঁচকা টান দিয়ে খোলার চেষ্টা করল, দরজাটি খুলল না, খুলবে সেটি সে আশাও করেনি।
এবার ডান হাতের তর্জনীটি দরজার হাতলের দিকে লক্ষ করে বুড়ো আঙুলের গোড়ায় চাপ দিল, সাথে সাথে আঙুলের চামড়া ভেদ করে একটি ছোট বিস্ফোরক ছুটে গেল, বিস্ফোরণের শব্দের সাথে সাথে দরজার হ্যাঁন্ডলটি খুলে আসে। রিটিন লাথি দিতেই এবারে দরজাটা খুলে গেল। রিটিন তখন ভেতরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দিল। তার ভাগ্য ভালো দরজাটা বন্ধ রাখার জন্যে ভেতরে আরো একটা লক আছে, দ্রুত সে লকটা লাগিয়ে দেয়। ক্লোনগুলো সহজে এখন ভেতরে ঢুকতে পারবে না।
রিটিন ঘরের ভেতরে তাকাল। চারদিক থেকে বড় বড় পাইপ এসে জড়ো হয়েছে। একদিক থেকে হিমশীতল পাইপগুলো বের হয়েছে, অন্যদিক দিয়ে উষ্ণ পাইপগুলো ফিরে এসেছে। দেয়ালে একটা বড় কন্ট্রোল প্যানেল, সেটি দেখার আর সময় নেই। রিটিন পাইপের ভাল্বগুলোর দিকে তাকাল, সেগুলো বন্ধ করে দিতে পারলেই হিমশীতল তরলের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু সে কি খালি হাতে এত বড় বড় ভাল্ব বন্ধ করতে পারবে?
এখন চিন্তা করার সময় নেই, রিটিন তাই তার চেষ্টাও করল না। সে বড় একটা ভাল্ব ধরে সেটাকে টেনে বন্ধ করার চেষ্টা করল, কোনো লাভ হলো না। গোড়ায় একটা ছোট কন্ট্রোল বক্স রয়েছে, সেটা অকেজো না করা পর্যন্ত ভাটা বন্ধ করা যাবে না। রিটিনের অন্য হাতের আঙুলে এখনো আরেকটি বিস্ফোরক লুকানো আছে, সেটি এখন ব্যবহার করতে পারে।
বাম হাতের তর্জনীটি কন্ট্রোল বক্সের দিকে তাক করে সে তার বুড়ো আঙুলটি টেনে ধরে, সাথে সাথে আগুলের চামড়া ভেদ করে ক্ষুদ্র বিস্ফোরকটি ছুটে বের হয়ে কন্ট্রোল বক্সটাকে আঘাত করল। বিস্ফোরণের ঝলকানির সাথে সাথে কন্ট্রোল বক্সটা হাট হয়ে খুলে যায়। ভেতরে কিছু সার্কিট, রিটিন লাথি দিয়ে সার্কিটগুলো গুঁড়ো করে দিয়ে আবার বড় ভাল্বটাকে ধরে টান দিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করল। প্রথমে সেটি নড়তে চাইল না কিন্তু একটা হ্যাঁচকা টান দিতেই ঘড় ঘড় শব্দ করে ভাটা বন্ধ হয়ে গেল।
শীতল প্রবাহ বন্ধ হয়ে যেতেই ভবনের মাঝে থরে থরে সাজানো যন্ত্রগুলো মুহূর্তের মাঝে গনগনে লাল হয়ে ওঠে, তারপর প্রচণ্ড বিস্ফোরণ করে একটি পর একটি বাষ্পীভূত হয়ে যেতে থাকে। লকলকে আগুনের শিখা আর কুচকুচে কালো ধোঁয়ায় ভবনটি অন্ধকার হয়ে যায়।
সারি বেঁধে ছুটে আসা ক্লোনগুলো থমকে দাঁড়িয়ে গেল, তারপর কাতর আর্তনাদ করে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের দিকে ছুটে যেতে শুরু করে। এই যন্ত্রগুলো তাদের অস্তিত্ব, যদি এগুলো ধ্বংস হয়ে যায় তাদের বেঁচে থাকার কোনো অর্থ নেই।
রিটিন হতবাক হয়ে দেখতে পেলো ভবনটির যন্ত্রগুলোর একটার পর একটাকে আগুনে গ্রাস করে ফেলছে–সেই গনগনে লাল আগুনে একটির পর একটি ক্লোন ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কী ভয়ংকর দৃশ্য, রিটিন আর দেখতে পারছিল না, সে দুই হাতে মুখ ঢেকে চোখ বন্ধ করে ফেলল।
.
১৮.
বড় টেবিলটার এক পাশে বসে স্যুপের বাটি থেকে এক চামচ স্যুপ মুখে দিয়ে ক্লিওন বলল, “তোমাকে ধন্যবাদ রিটিন।”
রিটিন মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, “কেন?”
“তোমার কারণে পৃথিবীতে মানুষের সাথে মানুষের বিভাজন দূর করার প্রক্রিয়াটি আমরা শুরু করতে পেরেছি।”
রিটিন স্যুপের চামচে চুমুক দিয়ে বলল, “শুরু করা সহজ, কিন্তু শেষ কি করা যাবে? মানুষে মানুষে বিভাজন কি দূর হবে?”
“নিশ্চয়ই হবে। সত্যি কথা বলতে কী কাজ শুরু হয়ে গেছে। ভিডি টিউবে দেখনি সব বাচ্চা মিলে দল বেঁধে স্কুলে যাচ্ছে?”
“হ্যাঁ, দেখেছি।”
“এর থেকে সুন্দর দৃশ্য কি পৃথিবীতে আছে?”
রিটিন মাথা নাড়ল, বলল, “না, নেই।”
দুজন আরো কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে স্যুপের বাটি থেকে স্যুপ খেতে থাকে। রিটিন জিজ্ঞেস করল, “প্রফেসর রাইখ কেমন আছে?”
“এখন অনেকটুকু ভালো। টাইম ক্যাপসুল তৈরি করার জন্যে তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। মস্তিষ্ক স্ক্যান করার সময় তার মস্তিষ্কের কিছু ক্ষতি করেছে।”
“সুস্থ হবে তো?”
“হ্যাঁ, হবে। তুমি যদি নিয়ন্ত্রণ ভবন উড়িয়ে না দিতে তাহলে কী হতো আমরা জানি না।”
ক্লিওন রিটিনের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলল, “তোমাকে অনেক ধন্যবাদ রিটিন।”
রিটিন শব্দ করে হাসল, বলল, “তুমি কেন আমাকে ধন্যবাদ দিচ্ছ। আমি নিজে কিছু করিনি-প্রকৃতি যেটা করতে চেয়েছে সেটা হয়েছে। আমি শুধু সেটাকে সাহায্য করেছি।”
“আমি সে জন্যেই তোমাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি রিটিন। প্রকৃতি কী চায় সেটা কতজন জানে?”
স্যুপের বাটিটা সামনে ঠেলে ক্লিওন জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি চাও বলো রিটিন। পৃথিবীর মানুষের পক্ষ থেকে আমরা তোমাকে কিছু একটা দিতে চাই।”
“আমি কিছু চাই না।”
“কেন কিছু চাইবে না! কিছু একটা চাও, তোমাকে দেব আমরা।”
“গ্লানা নামের একটা মেয়ের ভালোবাসার মানুষটির নাম ছিল মিশি। তার মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপন করে দিয়েছিল–তাকে আবার মিশি করে দাও।”
ক্লিওন হাসল, বলল, “এগুলো তো আমরাই করে দিচ্ছি। সব মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপন ঠিক করে দিয়েছি। তুমি নিজের জন্যে কিছু চাও।”
“একজন মানুষ যা কিছু চাইতে পারে তার সবকিছু আমি পেয়েছি। আমি আর কী চাইব। আমি কিছু চাই না।”
“ঠিক আছে, তুমি সময় নাও। তারপর কিছু একটা চাও। তুমি যা চাইবে আমরা তোমাকে সেটাই দেব।”
রিটিন ক্লিওনের দিকে বিচিত্র একটা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “সত্যি?”
“সত্যি।”
.
শেষ কথা
প্রায় বারোশত কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে তানুস্কা নীলকে নিয়ে বাসায় ফিরে এসেছে। বাসার সামনে ভ্যানটি থামিয়ে পাশে বসে থাকা নীলের দিকে তাকিয়ে তানুস্কা বলল, “ আমার বাসার ভেতরে ঢুকতে মন চাইছে না।”
নীল তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “কেন, তোমার ঢুকতে মন চাইছে না মা?”
“শুধু রিটিনের কথা মনে হচ্ছে! তাকে কোথায় এক জঙ্গলের ভেতর মাটির নিচে রেখে এসেছি। পাঁচশ বছর সেখানে ঘুমিয়ে থাকবে।”
নীল কোনো কথা না বলে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “কেন পাঁচশ বছর ঘুমিয়ে থাকতে হবে? কেন আমাদের সাথে থাকল না?”
তানুস্কা বলল, “তুমি যখন বড় হবে তখন বুঝবে নীল। কোনো কোনো মানুষকে পৃথিবীর অনেক বড় বড় দায়িত্ব নিতে হয়। এই বড় বড় দায়িত্ব নেয়ার জন্যে আমাদের মতো মানুষকে ছেড়ে চলে যেতে হয়। রিটিনকে তাই আমাদের ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে।”
কথা বলতে বলতে তানুস্কা ছেলের হাত ধরে সিঁড়িতে দাঁড়াল। দরজা খোলার জন্যে চাবি বের করতে গিয়ে দেখল দরজাটা খোলা।
সে অবাক হয়ে দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই কফির গন্ধ পেল। সে আরেকটু এগিয়ে খাবার ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে দেখল খাবার টেবিলে প্লেটের মাঝে রুটি টোস্ট। ছোট গ্লাসে ফলের রস। হাফ প্লেটে ডিম পোচ। ছোট একটা বাটিতে টুকরো করে কাটা পনির। কেউ একজন টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখেছে।
ঠিক তখন রান্নাঘর থেকে দরজা খুলে রিটিন বের হয়ে আসে। যেন কিছুই হয়নি, সেরকম ভান করে বলল, “ভালো আছ তানুস্কা?”
“তুমি?”
“হ্যাঁ। আমি।”
“তুমি? তুমি?”
“হ্যাঁ। আমি তানুস্কা। আমি পাঁচশ বছর কাটিয়ে পৃথিবীতে গিয়েছি। তারপর পুরো পৃথিবীকে ওলটপালট করে ফেলেছি।”
রিটিন একটু এগিয়ে যায়। দুই হাত বাড়িয়ে তানুস্কাকে আলিঙ্গন করে বলল, “তারপর আমি তোমার কাছে ফিরে এসেছি তানুস্কা। পৃথিবীর মানুষ আমাকে কিছু একটা উপহার দিতে চেয়েছিল। আমি তোমাকে বেছে নিয়েছি। তোমাকে আর নীলকে।”
তানুস্কা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে বলল, “আমি কিছু বুঝতে পারছি না রিটিন।”
“তোমার কিছু বুঝতে হবে না তানুস্কা। শুধু বলো–”
“কী বলব?”
“প্রতিদিন ভোরে তুমি আমাকে তোমার জন্যে ডিম পোচ করতে দেবে”
তানুস্কা কথা না বলে রিটিনকে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল।
নীল মায়ের কাপড় ধরে টেনে বলল, “মা, তুমি বলো তুমি রাজি আছো। বলো। তাড়াতাড়ি বলো।”