সমাজ (বেদাঙ্গসূত্র)
সামাজিক সম্পর্ক ও পিতৃতান্ত্রিক পারিবারিক ব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়। কৃষিক্ষেত্রের শ্রমিক গ্রামীণ কারুশিল্পী ও গৃহং ত্যরূপে যে শূদ্ররা কর্মে নিরত থাকত তাদের প্রায়ই নারী ও হীনতার জন্তুর সঙ্গে একত্র উল্লেখ করা হয়েছে; শূদ্ৰকে অপরিচ্ছন্ন ও সামাজিকভাবে হেয় বলে বিবেচনা করা হত। শূদ্রের জন্য কোনও গৃহ্য অনুষ্ঠান নির্দেশিত হয় নি। এর একটি কারণ সম্ভবত এই যে, যেহেতু আদিম অধিবাসীদের বিপুল অংশ–বিশেষত যারা আর্যদের দ্বারা পরাজিত বা সামাজিকভাবে অধিকৃত হয়েছিল—তারা তাদের নিজস্ব সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি অব্যাহত রেখেছিল এবং যেহেতু আর্যরা এই বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে আর্য সংস্কৃতির বৃত্তে একাত্মীভূত করে নিতে চাননি। তাই তারা এই জনগোষ্ঠীকে তাদের অভ্যস্ত রীতিতে জীবন-নির্বাহ করতে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো বাধা দেননি যতক্ষণ পর্যন্ত এরা অল্পমূল্যে নিজেদের শ্রমশক্তি যোগান দিয়ে গেছে। আর্যদের জীবনদৃষ্টিতে ধর্মান্তরীকরণের প্রাধান্য কখনও ছিল না। শূদ্র দাসগণ যে প্রায়ই পালিয়ে যেতে চাইত, তা বিশেষভাবে তাদের সম্পর্কে প্রযোজ্য ঘৃণা ও অমানবিক শাস্তিবিধান থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠে। বস্তুত প্রাচীনতর সাহিত্যের নিদর্শন থেকেও শূদ্রের সামাজিক হীনতার প্রমাণ পাওয়া যায় : পঞ্চবিংশ ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে যে শূদ্র কোনও দেবতার আশ্রয় ছাড়াই জন্মগ্রহণ করে (৬ : ১ : ১১) এবং জৈমিনীয় ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে যে অপরের পাদ-প্ৰক্ষালন করেই শূদ্র জীবনধারণ করে। (১ : ৬৮, ৬৯)।
সমাজে নারীর অবস্থান মূলত এই তথ্য দ্বারা নির্ধারিত হত যে তাদের অনেকেই অনার্য পরিবার-সম্ভূত হওয়ায় যজ্ঞানুষ্ঠানে তাদের অংশগ্রহণের কোনো অধিকার ছিল না। যে কয়েকটি ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়, সেসব ক্ষেত্রেও মন্ত্রপাঠের অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত ছিল। অবশ্য গোভিল গৃহ্যসূত্রে বলা হয়েছে যে নারী সন্ধ্যায় গৃহে বৈশ্বদেববলি অৰ্পণ করতে পারে, অগ্নিহোত্র অনুষ্ঠানের একটি নিয়ম অনুযায়ী পত্নী প্ৰভাতে ও সন্ধ্যায় আহুতি অৰ্পণ করতে পারে যেহেতু, গোভিল গৃহ্যসূত্র অনুযায়ী “পত্নী হল গৃহ এবং অগ্নিগৃহ্য’ (১ : ৩ : ১৬) সেক্ষেত্রেও সে মন্ত্রোচ্চারণে অধিকারিণী ছিল না। স্বামীর ইচ্ছাই স্ত্রীকে যে নিয়ন্ত্রণ করত, তা বিবাহের মন্ত্র থেকেও স্পষ্ট বোঝা যায় (পারস্কার গৃহ্যসূত্র ১ : ৮ : ১১)। স্ত্রীর প্রাথমিক কর্তব্য ছিল স্বামীর প্রীতি-বিধান এবং সন্তান–বিশেষত পুত্ৰ সন্তানের জন্ম দেওয়া। সমাজের নিম্নতম স্তরে বহু দাসীর উপস্থিতি ছিল–প্রকৃতপক্ষে যারা বারাঙ্গনা অপেক্ষাও হীন অবস্থায় জীবনযাপন করত।
গৃহ্যসূত্রগুলি বিশ্লেষণ করে আমরা যে কৌতুহলজনক তথ্য সম্পর্কে অবহিত হই, তা হল : বিদ্যার্থীর দীক্ষাগ্ৰহণ (উপনয়ন) এবং বিবাহের অনুষ্ঠান ও মন্ত্রের মধ্যে প্রশ্নাতীত সাদৃশ্য–যা দুটি অনুষ্ঠানের বিভিন্ন অনুপুঙ্খের মধ্যে স্পষ্টভাবে প্ৰকাশিত। এর কারণ হয়ত এই যে, উভয় সম্পর্কই সামাজিক উৎপাদন ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত আনুষ্ঠানিক চুক্তিরূপে গণ্য হত। কেননা বিবাহ হল সন্তান উৎপাদনের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠেয় কর্ম, যে সন্তানপরম্পরা কায়িকভাবে আর্য জনগোষ্ঠীর ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখে; আবার, বেদাধ্যয়নে দীক্ষিত হয়ে আৰ্য পুরুষ স্বজাতির আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক পরম্পরা অব্যাহত রাখে। যে যুগে অক্ষরজ্ঞান আবিষ্কৃত হয় নি, তখন, জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয় রক্ষার পক্ষে এই প্রক্রিয়া ছিল আবশ্যিক; তাই দীক্ষানুষ্ঠান অত্যন্ত গাভীর্যপূর্ণ ও বিশেষ তাৎপর্যমণ্ডিত ছিল–যা কোনো একটি নির্দিষ্ট প্রজন্মের গণ্ডীকে অতিক্রম করে।
তখনকার পারিবারিক ব্যবস্থার একক ছিল প্ৰধানত যৌথ পরিবার; যদিও কিছু কিছু ইঙ্গিত থেকে মনে হয়, একই গৃহে বিভিন্ন শাখার জন্য পৃথক পাকশালা ও পাকের ব্যবস্থা ছিল। শ্ৰাদ্ধ অনুষ্ঠানের উপর বিপুল শুরুত্ব আরোপিত হয়েছিল। পরলোকগত আত্মা ভোগের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন ও অপূর্ণ আকাঙ্খা দ্বারা পীড়িত হয়ে জীবিত মানুষের ক্ষতিসাধনে প্ৰবৃত্ত হবে-তাই তাদের যথাযথভাবে শান্ত করা প্রয়োজন; বস্তুত এইখানেই শ্রাদ্ধের গভীর তাৎপর্য রয়েছে। পুরোহিতদের পক্ষেও এটি ছিল অত্যন্ত লাভজনক অনুষ্ঠানগুলির অন্যতম। দ্রুত প্রসারণশীল দেবসঙ্ঘে এই পর্যায়ে কয়েকজন সম্পূর্ণ নুতন দেবতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। অমঙ্গলপ্রদ ও শুভসূচক আত্মার সংখ্যা ও ক্রিয়া যেহেতু ক্রমশ বর্ধিত হল, তাদের শাস্ত, নিয়ন্ত্রিত ও বরদানের পক্ষে অনুকুল করে তোলার জন্য যথাযথ অনুষ্ঠানেরর প্রয়োজনও বহুগুণ বর্ধিত হল। জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান জ্ঞান ও সমুদ্রযাত্রায় তার উপযোগিতা অনুভূত হওয়ার গ্রহপূজার নূতন প্রবণতা দেখা গেল। ব্ৰহ্মাশ্রেণীর পুরোহিতের আসনে কুশ-নির্মিত প্রতীকী পুত্তলিকা স্থাপন করে যজমান নিজেই অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে পারতেন; এতে মনে হয় যে গাৰ্হস্থ্য অনুষ্ঠানগুলিতে পুরোহিত নিয়োগ অপরিহার্য ছিল না।
গৃহ্যসূত্রগুলির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল গর্ভধারণের পূর্ব পর্যন্ত স্বতন্ত্র সামাজিক এককরূপে নারীর জন্য কোনও পৃথক অনুষ্ঠানের বিধান ছিল না; পুত্ৰ সন্তানের সম্ভাব্য জননীরূপে নারীর কতকটা গুরুত্ব ছিল। অন্যান্য সমস্ত গাৰ্হস্থ্য অনুষ্ঠানে নারী কেবলমাত্র স্বামীর সহায়করূপে সক্রিয় থাকত। কিন্তু কখনো মন্ত্র উচ্চারণ করত না। শূদ্রের মতই নারী কোনো আনুষ্ঠানিক পরিচিতির অধিকারী ছিল না। অবশ্য শূদ্ৰদের সামাজিক পরিচিতিও ছিল না; গৃহ্য ও ধর্মসূত্রগুলিতে শূদ্ৰকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে। যদিও কৃষিক্ষেত্রে ও ক্ষুদ্র শিল্পে শূদ্ৰগণ প্রধানত শ্রমশক্তির যোগান দিত। শূদ্র ভূত্যের ত্রুটি লক্ষ্য করলে প্ৰভু তার ইচ্ছামত নিষ্ঠুরভাবে শাস্তি দিতে পারত; গৃহ্যসূত্র সাহিত্যের বিপুল অংশে এধরনের শাস্তিকে অনুমোদন করা হয়েছে। ভূত্য বা দাস সম্পূর্ণরূপে প্ৰভুল দিয়ার অধীন ছিল; তাকে রক্ষা করার কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। “কোনো শূদ্র বা পতিত ব্যক্তি বা কুকুর খাদ্য স্পর্শ করলে তা অনুষ্ঠানের পক্ষে অশুদ্ধ বিবেচিত হত”। আপস্তম্ব ধর্মসূত্রের এই তালিকাটি (১ : ৫ : ১৬, ২১, ২২, ৩০) কোনো ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। শূদ্র ও নারী এই উভয়কে সম্পত্তিরূপে বিবেচনা করা হত, এমনকি এরা ছিল সামাজিক মর্যাদারও নিদর্শন; এদের সর্বদা কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হত। অত্যন্ত বিরল কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া গৃহ্যসূত্রে জনসাধারণের বিপুল অংশের জীবনের চিত্র এমনই নৈরাশ্যজনক; ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই ছিল, কিন্তু ব্যতিক্রম বস্তুত নিয়মকেই প্ৰমাণিত করে।
সামাজিক অবস্থানের ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণের অভু্যুত্থান ছিল আর একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। তবে আমরা যেন এই তথ্য বিস্মৃত না হই যে,–সমাজে ব্রাহ্মণের তর্কাতীত প্রাধান্য, কর থেকে অব্যাহতি বা অন্যান্য বর্ণের জন্য আইনের মাধ্যমে বিহিত বিভিন্ন ধরনের শান্তিমূলক ব্যবস্থার কর্কশ সামাজিক অভিজ্ঞতা থেকে ব্ৰাহ্মণের অব্যাহতি, বিভিন্ন প্রকার দানগ্রহণে তাদের স্বাভাবিক যোগ্যতা, সামাজিক প্রতিপত্তির সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পর্করহিত ভাবে কেবলমাত্র জন্ম পরিচয়ের উপরই নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু এই সমস্তই ছিল সমাজের পরবর্তী স্তরের পরিচায়ক। খ্রিস্টপূর্ব তিনশ থেকে খ্রিস্টীয় একশ অব্দের মধ্যে কোনো শিলালিপিতে কোনো ব্ৰাহ্মণ বা সুনির্দিষ্ট ব্রাহ্মণ্য অনুষ্ঠান বা মন্দিরের উল্লেখ নেই। ব্ৰাহ্মণের প্রতি প্ৰথম ভূমিদানি লিপি খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে উৎকীর্ণ হয়েছিল এবং এধরনের ভূমিদািন পরবর্তী দুই শতাব্দীর মধ্যে প্রকৃতই অসংখ্যবার লিপিবদ্ধ হয়েছিল–এই যুগেই গৃহ্যসূত্রের অন্তিম পর্যায়টি আত্মপ্ৰকাশ করে। যাইহােক, বৈদেশিক আক্রমণকারীদের সংখ্যাবৃদ্ধিতে কঠোর বর্ণবিভক্ত সমাজের ভিত্তিভূমি প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিল। তাই সম্ভবত সূত্রসাহিত্যে সমাজপতিদের প্রাচীন সমাজ সংগঠন অক্ষুন্ন রাখার প্রয়াসই শুধুমাত্র অভিব্যক্ত হয় নি, শূদ্র এবং সমাজের অন্যান্য নিপীড়িত অংশের প্রতিরোধের লক্ষণও প্ৰতিফলিত হয়েছে–এরা সম্ভবত ক্রমেই অস্পষ্টভাবে হলেও এই উপলব্ধিতে উপনীত হচ্ছিল সে সমাজের উৎপাদক শক্তিরূপে তাদের মৌলিক অবদান রয়েছে।
গৃহ্যসূত্রে প্রযুক্ত মন্ত্রসমূহ সংহিতা থেকে কখনো প্রত্যক্ষভাবে ঋণ হিসাবে গৃহীত হয়েছে আবার কখনো বা অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষভাবে রচিত হয়েছে। এই দুই ধরনের মন্ত্র বিশ্লেষণ করে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে এরা শুধু দুটি ঐতিহ্যের প্রতিনিধিমাত্র নয়, সূত্র সাহিত্যের দুটি সুস্পষ্ট স্তরেরও নিদর্শনও বহন করছে। বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য রচিত এবং সংহিতা ও ব্রাহ্মণ সাহিত্যের অন্তর্গত নয় এমন মন্ত্র নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানের জন্য সম্পূর্ণভাবে উপযোগী ও প্রয়োজনীয় হলেও যেসব মন্ত্র সংহিতা ও ব্রাহ্মণ থেকে গৃহীত হয়েছে-তাদের অধিকাংশই কৃত্রিমভাবে নির্বাচিত এবং তাদের উপযোগিতাও নেই বললেই চলে। এটা থেকে সম্ভবত এই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে গৃহ্য অনুষ্ঠানগুলি একটি বিশেষ পর্যায়ে শ্রৌত অনুষ্ঠান অর্থাৎ সংহিতা ও ব্রাহ্মণ সাহিত্যের সঙ্গে অসম্পূক্তভাবে বিরাজিত ছিল। যজ্ঞধর্ম যখন বৌদ্ধধর্মদ্বারা প্রবলভাবে আক্রান্ত হল, তখনই গৃহ্য অনুষ্ঠানগুলিকে প্রামাণ্য ও সন্মানিত করে তোলার একটি প্রবণতা সৃষ্টি হল-অথর্ববেদের স্বীকৃতিলাভের সঙ্গে এর সম্পর্ক খুবই নিবিড়; রক্ষণশীল বৃহৎ ঐতিহ্যে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে নিবেদিত অনুষ্ঠানসমূহ অর্ধদেবতা এবং বিভিন্ন ধরনের যক্ষ, অন্সরা, পিশাচ, দানব ও রাক্ষস প্রভৃতির উদ্ভব ও স্বীকৃতিলাভের ফলে কতকটা যান্ত্রিকভাবেই গৃহ্য অনুষ্ঠানগুলিতে সংহিতা ও ব্রাহ্মণের মন্ত্রগুলি গৃহীত হল। সেই সঙ্গে বৈদিকযুগের অন্তিম পর্যায়ের সমাপ্তি ঘটল–যার সূচনা হয়েছিল ঋগ্বেদের দশম মণ্ডল ও ব্রাহ্মণ সাহিত্য রচনার মধ্যে দিয়ে। বিবাহ অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত অধিকাংশ ইন্দ্ৰজালতুল্য মন্ত্র যে ঋগ্বেদের দশম মণ্ডল থেকে গৃহীত হয়েছে, তাতেও এ অনুমানের সমর্থন পাওয়া যায়। বৈদিক মন্ত্রের সাহায্যে গৃহ্য অনুষ্ঠানগুলিকে পরিশীলিত করার প্রক্রিয়াই শুধু এই পর্যায়ে হয় নি, স্পষ্টত প্রাচীনতর ভাসমান লোকায়ত উপাদানের স্বীকৃতিদানও তখন ঘটেছিল। লোকবিশ্বাস ও আচারের যেসব উল্লেখ সূৰ্যসূক্তে পাওয়া যায় এবং গন্ধৰ্বচর্যার সঙ্গে তার যে সম্পর্ক আভাসিত তা সুস্পষ্টভাবে লঘু ঐতিহ্যেরই অন্তর্গত। এই পর্যমেই তা রক্ষণশীল শাস্ত্ৰে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়েছিল।