রাবণাদির বিবাহ এবং মেঘনাদের জন্ম
মৃগয়া করিতে গেল ভাই তিন জন।
ময়দানবের সঙ্গে হৈল দরশন।।
কন্যারত্ন আছে তার সর্ব্বলোক জানি।
ত্রিভুবন-জিনি কন্যা রূপেতে মোহিনী।।
কন্যা দেখি পিতামাতা বড়ই ভাবিত।
কারে কন্যা বিভা দিব না জানি বিহিত।।
রাবণ বলেন কন্যা লয়ে কেন আছ বনে।
দানব আপন কথা কহে রাজা শুনে।।
দানব বলে অবধান কর মহাশয়।
কোন্ কুলে জন্ম তব দেহ পরিচয়।।
দশানন বলে আমি বিশ্বশ্রবা-নন্দন।
রাক্ষসের রাজা আমি নাম দশানন।।
ময় বলে আমি বিশ্বশ্রবারে ভাল জানি।
বিবাহ করহ কন্যা আমার আপনি।।
কন্যাদান করে ময় পাইয়া কৌতুক।
শক্তি নামে শেলপাট দিলেক যৌতুক।।
শমনের ভগ্নী শেল সংসারে বিদিত।
সেই শেলে হইলেন লক্ষ্মণ মূর্চ্ছিত।।
রাবণের ব্রহ্মশাপ দানব না জানে।
কন্যাদান করিয়া বিস্ময় হইল মনে।।
বিমোচন-রাজকন্যা রূপেতে উজ্জ্বলা।
কুম্ভকর্ণ বিভা কৈল রূপে চন্দ্রকলা।।
সাত যোজন দীর্ঘ অঙ্গ কুম্ভকর্ণ বীর।
তিন যোজন দীর্ঘাকার কন্যার শরীর।।
বর কন্যা উভয়ে হইলা সুশোভন।
কি রাজযোটক ব্রহ্মা করিল সৃজন।।
সরমা নামেতে ছিল গন্ধর্ব্ব-কুমারী।
বিভীষণ বিভা কৈল পরমা সুন্দরী।।
মৃগয়াতে গিয়া বিভা কৈল তপোবনে।
বিবাহ করিয়ে ঘরে এল তিন জনে।।
মন্দোদরী-গর্ভে জন্মে পুত্র মেঘনাদ।
তারে দেখি দেবগণ গণয়ে প্রমাদ।।
মেঘের গর্জ্জনে গর্জ্জে লঙ্কার ভিতরে।
দেব দানব ত্রিভুবন কাঁপে যার ডরে।।
কৌতুকে রাবণ রাজা আছে লঙ্কাপুরে।
দেব-দানবের কন্যা লয়ে কেলি করে।।
লঙ্কাপুরে কুম্ভকর্ণ নিদ্রায় অচেতন।
ত্রিংশৎ যোজন ঘর বান্ধিল রাবণ।।
পরিখা যোজন দশ আড়ে পরিসর।
কুম্ভকর্ণ নিদ্রা যায় তাহার ভিতর।।
ত্রিশকোটি রাক্ষসে নিদ্রার দ্বার রাখে।
কুম্ভকর্ণ নিদ্রা যায় আপনার সুখে।।
চারি চারি ক্রোশ যুড়ে ঘরের দুয়ার।
রতন পালঙ্কে শুয়ে বীর অবতার।।
শূন্য হৈতে দৃষ্ট হয় অর্দ্ধ কলেবর।
কুম্ভকর্ণ দেখি কাঁপে যতেক অমর।।
কুম্ভকর্ণ নিদ্রা ভাঙ্গি উঠিবে যে দিনে।
স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতালে সকলে তাহা জানে।।
সেই দিন সকলেতে সাবধানে ফিরে।
দেবগণ কম্পমান অমর-নগরে।।
কুম্ভকর্ণ নিদ্রা যায় ঘরের ভিতরে।
দেখিয়াত পুরন্দর চিন্তিত অন্তরে।।
বিধির বরেতে রাবণ কারে নাহি মানে।
দেব-দানবের কন্যা ধরে ধরে আনে।।
ইন্দ্রের নন্দন-বন আনে উপাড়িয়া।
কার সাধ্য নিবারণ করিবে আসিয়া।।
মুনি ঋষি দেবতার হিংসা করি ফিরে।
যম নাহি নিদ্রা যায় রাবনের ডরে।।