বলেন বৈশম্পায়ন শুন জন্মেজয়।
অষ্টাদশ পর্ব্ব সাঙ্গ পাণ্ডব বিজয়।।
ব্রহ্মবধ পাপে মুক্ত হৈলে অতঃপরে।
দান তপ দ্বিজসেবা পূজ বৈশ্বানরে।।
শুক্লবর্ণ চান্দোয়া দেখেন বিদ্যমানে।
কৃষ্ণ বর্ণ দূর হৈল ভারত শ্রবণে।।
দেখি সব সভাসদ হরিষে বিস্ময়।
ব্রহ্মহত্যা পাপে মুক্ত হৈল জন্মেজয়।।
সাধু শব্দ, জয় শব্দ হৈল দশ দিকে।
আকাশে কুসুম-বৃষ্টি করে দেবভাগে।।
সুগন্ধি পবন বহে ঝরে মকরন্দ।
ভারত সম্পূর্ণ হৈল, দেবের আনন্দ।।
জন্মেজয় প্রশংসিয়া গেল দেবগণে।
কিন্নর গন্ধর্ব্ব গায়, নাচে হৃষ্টমনে।।
দুন্দুভি মৃদঙ্গ শঙ্খ কাংস্য করতাল।
ঝাঁঝরি মুহুরি বাজে শুনিতে রসাল।।
পটহ ডিমক ডঙ্কা শানি বীণা বেণু।
চন্দনের ছড়া দিয়া নিবারিল রেণু।।
তবে জন্মেজয় রাজা পাদ্য অর্ঘ্য দিয়া।
মুনির চরণে পড়ি কহে লোটাইয়া।।
নিস্তার করিলে মোরে মহাপাপ হৈতে।
বিখ্যাত তোমার কীর্ত্তি রহিল জগতে।।
ঘুষিবে তোমার যশ এই ভূমণ্ডলে।
মর্ত্ত্যে মর্ত্ত্যবাসী স্বর্গে দেবতা-মণ্ডলে।।
লক্ষ শ্লোক ভারত রাখিলে কলিযুগে।
কত পাপী পার হবে এই পাপভোগে।।
এত বলি পদে পূজা কৈল কায়মনে।
বস্ত্র অলঙ্কার মাল্য কুসুম চন্দনে।।
পাদোদক পান কৈল গোষ্টীর সহিত।
সভাখণ্ড মুনিরে পূজিল যথোচিত।।
বিদায় হইয়া গেল যত মুনিগণ।
তপোবনে চলিলেন শ্রীবৈশম্পায়ন।।
মুক্ত হয়ে কৈল রাজা পঞ্চ তীর্থে স্নান।
দ্বিজগণে স্বর্ণ গবী ভূমি দান।।
অনলে ঢালিল ঘৃত সহস্র কলস।
মিষ্টান্ন ভোজনে বিপ্রগণে কৈল বশ।।
দিলেন অপূর্ব্ব বস্ত্র, দিব্য আভরণ।
দক্ষিণা পাইয়া গৃহে গেল দ্বিজগণ।।
করাইল জ্ঞাতি গোত্র সবারে ভোজন।
রাম-নাম মহামন্ত্র করিল কীর্ত্তন।।
দুন্দুভি শব্দেতে নৃত্য করে বিদ্যাধরী।
ভারত সম্পূর্ণ হৈল, বল হরি হরি।।
নিষ্পাপ শরীর রাজা পাত্র-মিত্র লয়ে।
রাজ্য করে জন্মেজয় হরষিত হয়ে।।
অধিকারে চোর দস্যু নাহি একজন।
পাণ্ডবের রাজ্যে সবে হরি-পরায়ণ।।
সদা সাধু সঙ্গে করি হরিকথা শুনে।
সকল হইল বশ নৃপতির গুণে।।