১৭. দরজাটা খুট করে খুলে

দরজাটা খুট করে খুলে ভেতরে একজন মানুষ ঢুকল। সে এক হাতে মিশকাকে ধরে রেখেছে। গত কয়েক ঘন্টায় দরজাটা অনেকবার খুট করে খুলেছে এবং অনেক রকম মানুষ এসেছে। অনেক কিছু করে গেছে। তাই প্রত্যেকবার যখন খুট করে দরজাটা খুলে যায় তিষা আর জন ভয় পেয়ে চমকে ওঠে।

এই প্রথম বার তারা ভয় পেয়ে চমকে উঠল না। মিশকাকে দেখে তাদের দুজনের মুখে হাসি ফুটে উঠল। তিষা হাত বাড়িয়ে বলল, “মিশকা! তুমি।”

মিশকা মানুষটির হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করে তিষার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তিষা মিশকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ফিস ফিস করে বলল “কোথায় ছিলে তুমি দুষ্ট ছেলে? কোথায় ছিলে?”

এরকম সময় সব সময় মিশকা যা করে তাই করল, খিল খিল করে হাসল। তারপর সেও তার ছোট ছোট শীতল হাত দিয়ে তিষার মাথায় মুখে হাত বুলিয়ে দিল, তারপর তার গালে চুমু খেল।

তিষা ভেবেছিল মানুষটি বুঝি সারাক্ষণই দাঁড়িয়ে থাকবে, কিন্তু মানুষটি মিশকাকে রেখে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। খুট করে আবার দরজা বন্ধ হয়ে গেল।

মিশকা তার হাত নেড়ে সাইন ল্যাংগুয়েজ দিয়ে বলল, “তুমি বন্ধ। তুমি ঘরে বন্ধ। তুমি কেন ঘরে বন্ধ?”

তিষা বলল, “আমরা তো জানি না কেন আমাদের ঘরে বন্ধ করে রেখেছে।”

মিশকা বলল, “খারাপ। মানুষ খারাপ।”

তিষা বলল, “হ্যাঁ। মানুষগুলো খুব খারাপ।“

মিশকা বলল, “এখানে না। বাসা যাব।”

তিষা ম্লান মুখে হেসে বলল, “হ্যাঁ। আমরা কি এখানে থাকতে চাই? চাই না। আমরাও তো বাসায় যেতে চাই। বাসায় আব্বু আম্মু না জানি কতো চিন্তা করছে।” কথা বলতে বলতে সে কেঁদে ফেলল, মিশকা কী করবে বুঝতে পারে না, একটু হাসে তারপর তিষার চোখ মুছে দেয়।

জন বলল, “যদি কোনোভাবে এই ঘর থেকে বের হতে পারতাম। তাহলে চেষ্টা করে দেখতাম।”

তিষা বলল, “কেমন করে ঘর থেকে বের হবে?”

“সেটাই তো জানি না।” মি

শকা সাইন ল্যাংগুয়েজে বলল, “দুই চার দুই পাঁচ।”

জন জিজ্ঞেস করল, “সেটা কী?”

“দরজা।”

“দরজার কী?”

মিশকার ভাষা জ্ঞান যথেষ্ট না তাই সে ঠিক বোঝাতে পারল না, কয়েকবার বোঝানোর চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিল।

আধা ঘন্টা পর আবার খুট করে দরজা খুলে গেল। আগের মানুষটি এসে মিশকাকে তিষার কোল থেকে টেনে সরিয়ে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। মিশকা যেতে চাচ্ছিল না। দুই হাত দিয়ে তিষাকে ধরে রাখল কিন্তু লাভ হল না। মানুষটা হ্যাঁচকা টান দিয়ে তাকে সরিয়ে নিল।

কিছুক্ষণ পর হঠাৎ তিষা দরজায় একটু খুট খুট শব্দ শুনতে পেল, মনে হল কেউ দরজা খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু খুলতে পারছে না। তিষা দরজায় কান লাগিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কী হচ্ছে, কেন জানি তার মনে হল এখানকার কোনো মানুষ নয় মিশকা দরজা খোলার চেষ্টা করছে!

সত্যি সত্যি হঠাৎ দরজা খুলে গেল এবং দেখা গেল দরজার সামনে মিশকা দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে বিজয়ীর মতো হাসি। সে বলল, “দুই চার দুই পাঁচ।”

তিষা আর জন এবারে দুই চার দুই পাঁচের রহস্যটা বুঝতে পারে। দরজার বাইরে যে ইলেকট্রনিক নাম্বার লক লাগানো সেটা খুলতে নাম্বার প্যাডে দুই চার দুই পাঁচ নম্বর বোতামে চাপ দিতে হয়। মিশকাকে নিয়ে যখন মানুষটি এসে দরজা খুলেছে তখন মিশকা সেটা লক্ষ্য করেছে। এখন সে নিজে এসে দরজা খুলে দিয়েছে। কিন্তু সে কোথা থেকে এসেছে? কেমন করে একা একা চলে এসেছে? [ মিশকা নিজেই বলল যে তাকে একটা ঘরে তালা মেরে রেখেছিল। সেই ঘরের ছাদে বাতাস প্রবাহের যে সরু ডাক্ট আছে তার ভেতর দিয়ে সে বের হয়ে এসেছে। মানুষগুলো বুঝতে পারেনি সে এভাবে পালিয়ে যেতে পারবে। তিষা তার পিঠ চাপড়ে বলল, “চমৎকার কাজ মিশকা!

মিশকা বিজয়ীর মতো মুখ ভঙ্গি করে হাসল। তিষা বলল, “চল, এখন পালাই।”

জন বলল, “চেষ্টা করি। কিন্তু খুব বেশী দূর পালিয়ে যেতে পারব বলে মনে হয় না। আবার আমাদের ধরে ফেলবে।“

“তবু চেষ্টা করি।”

মিশকাকে কোলে নিয়ে তিষা আর জন খুব সাবধানে ঘর থেকে বরে হল। এদিক সেদিক তাকিয়ে যখন দেখল কেউ নেই তখন সাবধানে করিডোর ধরে হাঁটতে থাকে। আশে পাশে যে এই মূহুর্তে কোনো মানুষ নেই। সেটা অনেক ভাগ্যের কথা।

ঠিক সেই মুহূর্তে সুপার কম্পিউটারের সিস্টেম ম্যানেজার, এক ধরনের কৌতুকের দৃষ্টিতে মনিটরের দিকে তাকিয়েছিল। একটা এনিম্যান যে দরজার কোডটা মনে রেখে সেই কোড ব্যবহার করে দরজাটা খুলে ফেলতে পারবে সেটা সে কখনো কল্পনা করেনি। কী ভাবে এনিম্যানটা মুক্ত হয়ে এসেছে সেটা সে এখনো জানে না। খোঁজ নিতে হবে। কিন্তু একদিক ভালোই হল, তার সফটওয়ারটির একটা ফিল্ড টেস্ট হবে! এই ছেলে আর মেয়ে জানে না তাদের সম্পর্কে সব তথ্য এমন ভাবে লোড করা আছে যে আগামী এক ঘন্টা তারা কী করবে সে এখানে বসে নিখুঁত ভাবে বলে দিতে পারবে। ইচ্ছে করলেই সে এলার্ম বাজিয়ে সবাইকে সতর্ক করে দিতে পারে কিন্তু সেটা করল না। আজ রাতে সবাই পাগলের মতো কাজ করছে। এর মাঝে হঠাৎ একটা এলার্ম বাজিয়ে সবাইকে আলাদাভাবে দুশ্চিন্তিত করে দেয়ার প্রয়োজন নেই। সে জানে ঠিক কোথায় তাদেরকে পাওয়া যাবে, সিকিউরিটির মানুষ দিয়ে তাদেরকে সেখান থেকে ধরে নিয়ে আসলেই হবে।

তাই সিস্টেম ম্যানেজার সিকিউরিটির মানুষটিকে জানিয়ে দিল ঠিক দশ মিনিট পর করিডোরের শেষ মাথায় সিঁড়ির নিচে লুকিয়ে থাকা তিষা আর জনকে ধরে নিয়ে আসার জন্যে। এর আগে সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। দশ মিনিট পর তিষা আর জন সেখানে লুকিয়ে থাকবে।

.

ঘর থেকে বের হয়ে করিডোর ধরে হাঁটতে হাঁটতে তিষা জনকে জিজ্ঞেস করল, “আমরা এখন কোনদিকে যাব?”

জন মাথা নেড়ে বলল, “জানি না। কোনোভাবে ধরা না পড়ে একটু হেঁটে হেঁটে আগে জায়গাটা বোঝার চেষ্টা করি।”

“লুকিয়ে থাকতে হবে।”

তিষা বলল, “ঐ যে সিঁড়ির নিচে মনে হয় কিছুক্ষণ লুকিয়ে থাকা যাবে।”

জন বলল, “হ্যাঁ চল ওদিকে এগিয়ে যাই।”

মিশকা হঠাৎ করে তিষার হাত ধরে অন্যদিকে টেনে নিতে থাকে। তিশা একটু অবাক হয়ে মিশকাকে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”

মিশকা জানাল, “আস। আমার সাথে আস।”

“কোথায়?”

“আমাদের ঘরে?”

“তোমাদের ঘরে?”

“হ্যাঁ।”

“কী আছে তোমাদের ঘরে।”

“আমরা আছি।”

“তোমরা?” “

হ্যাঁ।”

কোথায় যাবে সেটা যেহেতু তারা কেউই জানে না তাই মিশকা যেখানে নিয়ে যেতে চাইছে তারা সেদিকেই রওনা দিল। মিশকা মনে হয় এলাকাটা বেশ ভালো ভাবে চিনে, নানা ধরনের ছোট বড় করিডোর ধরে হেঁটে হেঁটে তারা বড় একটা গুদাম ঘরের মতো জায়গায় পৌঁছাল। একটা বড় লোহার গেট। গেটে ইলেকট্রনিক তালা।

মিশকা বলল, “তিন তিন সাত চার।”

সংখ্যটা কী এবারে তারা চট করে বুঝে গেল। তিষা জিজ্ঞেস করল, “তুমি কেমন করে জান?

“আমি দেখেছি। একটু আগে আমাকে নিয়ে তিন তিন সাত চার করে ভিতরে ঢুকেছে।”

তিষা ইলেকট্রনিক তালায় তিন তিন সাত চার সংখ্যা ঢুকাতেই তালাটা খুট করে খুলে গেল। ভারী লোহার গেটটা ঠেলে ভিতরে ঢুকে তিষা আর জন হতবাক হয়ে গেল। ফুটবল মাঠের মতো বিশাল একটা হল ঘর সেখানে যতদূর তাকানো যায় ততদূর শুধু এনিম্যান আর এনিম্যান। হাজার হাজার নয়, মনে হয় লক্ষ লক্ষ এনিম্যান! গেট খোলার শব্দ শুনে সবগুলো এনিম্যান তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, বড় বড় চোখে এক ধরনের কৌতূহল আর বিস্ময়। তিষা আর জন হতবাক হয়ে এই অসংখ্য এনিম্যানগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল।

তিষা এক পা এগিয়ে যেতেই সবগুলো এনিম্যান তার থেকে সরে যায়। সে একটা চাপা হাসির শব্দ শুনতে পেল। তিষা জানে এই হাসির শব্দ আসলে প্রকৃত হাসি নয়। এটা তাদের ভয় পাওয়ার প্রতিক্রিয়া। হাসি কান্না দুঃখ ভয় সবকিছুর জন্যেই তাদের একটা মাত্র প্রতিক্রিয়া সেটা হচ্ছে হাসি। এনিম্যানগুলো তাদেরকে দেখে ভয় পেয়েছে।

তিষা নিচু হয়ে হাত বাড়িয়ে একটা এনিম্যানকে ডাকল। এনিম্যানটা একটু সরে গিয়ে কৌতূহল নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল। তিষা সাবধানে তার হাতটা আরেকটু এগিয়ে নিয়ে এনিম্যানটাকে আস্তে আস্তে স্পর্শ করে। এনিম্যানটাও তখন খুব সাবধানে তিষার হাতটা স্পর্শ করল। তিষা হাসি হাসি মুখে এনিম্যানটাকে নিজের কাছে ডাকল, তখন এনিম্যানটা খুব সতর্ক ভাবে তিষার কাছে এগিয়ে আসে।

তিষা তাকে সাবধানে কোলে তুলে নেয়, তারপর আদর করে তার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। এনিম্যান শিশুটি এই আদরটুকু বুঝতে পারল এবং হঠাৎ করে তার ভেতরে তিষাকে নিয়ে যে দ্বিধা বা সংকোচ ছিল তার সবটুকু দূর হয়ে গেল। এনিম্যান শিশুটি তখন তিষার গলা জড়িয়ে ধরে তাকে গভীর ভাবে আলিঙ্গন করে। তিষা হঠাৎ করে বুঝতে পারল তার সামনে এই বিশাল হলঘরের হাজার হাজার এনিম্যান শিশুর সবাই আসলে ভালোবাসার কাঙ্গাল। তাদের জন্যে কেউ কখনো ভালোবাসা দেখায়নি। তাদেরকে কেউ কখনো আদর করেনি। এগুলো মানবশিশু কিন্তু তারা কখনো মানুষের সম্মান, মানুষের মায়া মমতা পায়নি।

একটি একটি করে এনিম্যান শিশুগুলো তখন তিষা আর জনের দিকে হেঁটে আসতে থাকে। তারা সেগুলোকে কোলে নেয় আদর করে। এরা সবাই একটি করে মানব শিশু। একটি মানব শিশুর আসলে বিশাল হলঘরে এভাবে গাদাগাদি করে থাকার কথা নয়। তাদের মায়ের ভালোবাসা নিয়ে বড় হবার কথা। তিষা এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে এই শিশুগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। পৃথিবীর মানুষ কেমন করে এতো বড় একটা অবিচারকে মেনে নিল?

তিষা মেঝেতে বসে এনিম্যান শিশুগুলোকে আদর করতে থাকে। তারা ভয়ংকর একটা বিপদে আছে, তাদের কী হবে তারা জানে না, কিন্তু এই মুহূর্তে তিষার আর কিছুই মনে রইল না, সে শুধু মাত্র ভালোবাসার কাঙ্গাল এই মানব শিশুগুলোর দিকে গভীর মমতা নিয়ে তাকিয়ে রইল।

.

লিডিয়া হিংস্র গলায় বলল, “কী বলছ হারিয়ে গেছে?”

কম বয়সী সিস্টেম ম্যানেজার শুকনো মুখে বলল, “ছেলেটা আর মেয়েটাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ক্র্যাগনন সুপার কম্পিউটার যেখানে থাকবে বলে ভবিষ্যৎবাণী করেছে সেখানে নেই। আমাদের সিকিউরিটি তন্ন

তন্ন করে খুঁজছে, ওদের পাওয়া যাচ্ছে না।”

“তোমার সুপার কম্পিউটার ভুল ভবিষ্যত্বাণী করছে?”

“তাইতো দেখছি।” লিডিয়া টেবিলে থাবা দিয়ে বলল, “এটা কীভাবে সম্ভব?”

“বুঝতে পারছি না।” সিস্টেম ম্যানেজার শুকনো গলায় বলল, “আমার একটা সন্দেহ হচ্ছে।”

“কী সন্দেহ?”

“ক্র্যাগনন সুপার কম্পিউটার এই ছেলেটা আর মেয়েটার সব তথ্য লোড করেছে তাই তারা কখন কী করবে বের করে ফেলতে পারে। কিন্তু তার কাছে এনিম্যানটার কোনো তথ্য নাই। যদি এনিম্যানটা কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সুপার কম্পিউটার সেটা সম্পর্কে জানবে না। তাই ভুল ভবিষ্যত্বাণী করবে।”

“তুমি বলতে চাইছ এই ছেলেটা আর মেয়েটা নিজেদের বুদ্ধি দিয়ে চলছে না? একটা এনিম্যানের বুদ্ধি দিয়ে চলছে?”

“আমি সেটাই সন্দেহ করছি।”

লিডিয়া দাঁতে দাঁত চেপে একটা নিঃশ্বাস বের করে দিয়ে বলল, “এখন তোমরা কী করছ?”

“পুরানো কায়দায় ছেলেটা আর মেয়েটাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সিসি টিভির ফুটেজ দেখা হচ্ছে। সিকিউরিটির মানুষেরা ঘরে ঘরে গিয়ে খুঁজছে।”

“আমার হাতে সময় নেই। এই ছেলে আর মেয়েটাকে আমার দরকার। এই মুহূর্তে দরকার।”

সিস্টেম ম্যানেজার বলল, “আমরা পেয়ে যাব। নিশ্চয়ই পেয়ে যাব। আমাদের এখানে মানুষ খুব কম। এত বিশাল একটা কম্পাউন্ড এতো অল্প কয়েকজন মানুষ দিয়ে চালানো হয় সেটাই হচ্ছে সমস্যা।”

লিডিয়া কঠিন মুখে বলল, “আমি কোনো কৈফিয়ত শুনতে চাই না। দশ মিনিটের মাঝে আমি এই ছেলে আর মেয়েটাকে চাই।”

সিস্টেম ম্যানেজার নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইল।

জন আর তিষাকে খুঁজে বের করতে সিকিউরিটির মানুষগুলোর অবিশ্যি দশ মিনিট থেকে বেশী সময় লাগল না। সিসি ক্যামেরাতে দেখা গেছে তারা দুজন একটা এনিম্যানকে নিয়ে বড় হলঘরের দিকে এগিয়ে গেছে। সিকিউরিটির মানুষেরা হলঘরে গিয়েই তাদের পেয়ে গেল। হাজার হাজার এনিম্যান শিশু ছোটাচ্চুটি করছে, তার মাঝে তিষা আর জন খুব সাবধানে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। এনিম্যান শিশুগুলো প্রথমে তাদের থেকে দূরে দূরে ছিল, কীভাবে বুঝে গেছে তাদেরকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, তখন তাদের কাছে এসে ভীড় করেছে। জন আর তিষা হলঘরের শেষ মাথায় যেতে চাইছিল, সেখানে কয়েকটা উঁচু জানালা রয়েছে। এই জানালা দিয়ে বের হওয়া যায় কী না তারা একবার চেষ্টা করে দেখতে চাইছিল কিন্তু তার আর সুযোগ হল না। বড় লোহার গেট খুলে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে পাহাড়ের মতো দুইজন সিকিউরিটি গার্ড হলঘরে ঢুকে গেল।

সাথে সাথে এনিম্যান শিশুগুলো ছোটাচ্চুটি করতে থাকে। আনন্দ বেদনা দুঃখ বা আতংক সবকিছুতেই তাদের প্রতিক্রিয়া এক রকম, তাই তারা খিল খিল করে হাসতেও শুরু করে। ভয়ংকর আতংকে যখন কেউ হাসতে থাকে সেটি অত্যন্ত বিচিত্র একটি দৃশ্য। তিষা আর জন বিশাল হলঘরের মাঝে দাঁড়িয়ে এনিম্যান শিশুদের এই বিচিত্র প্রতিক্রিয়াটির দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

সিকিউরিটি গার্ডের একজন চিৎকার করে বলল, “তোমাদের পালানোর কোনো জায়গা নেই। আমাদের সাথে এসো।” কথা বলেই সে শেষ করল না তার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে তিষা আর জনের দিকে এগুতে থাকে। এনিম্যান শিশুগুলো সরে গিয়ে গার্ডকে জায়গা করে দেয়। তিষা আর জনের কাছাকাছি গিয়ে সিকিউরিটি গার্ড তার হাতের অস্ত্রটা ঝাকুনী দিয়ে বলল, “এসো।”

তিষা আর জন একজন আরেকজনের দিকে তাকাল। তাদের আর, কিছু করার নেই। সিকিউরিটি গার্ড আবার তার হাতের অস্ত্র ঝাঁকুনি দিয়ে। বলল, “চল আমাদের সাথে।”

তিষা আর জন এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু সাথে সাথে এনিম্যান শিশুরা তাদেরকে জাপটে ধরে, তারা তিষা আর জনকে যেতে দেবে না। একটি শিশুর গায়ে তেমন জোর না থাকতে পারে কিন্তু যখন একসাথে অনেকে জাপটে ধরে তখন সেটা একজনকে আটকে ফেলার জন্যে যথেষ্ঠ। তারা জোর করে এগুতে চেষ্টা করে কিন্তু লাভ হলো না। এনিম্যান শিশুরা কথা বলতে পারে না, তাদের একমাত্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছে হাসি তাই তারা তিষা আর জনকে জাপটে ধরে খিল খিল করে হাসতে থাকে।

সিকিউরিটি গার্ড তখন এগিয়ে এসে এনিম্যান শিশুদের প্রথমে হাত দিয়ে ধরে টেনে সরিয়ে দেয়, তাতে খুব একটা লাভ হয় না একজনকে সরাতেই অন্য একজন ছুটে এসে ধরে ফেলে। সিকিউরিটি গার্ড তখন শক্ত বুট দিয়ে লাথি মেরে তাদেরকে সরিয়ে দিতে থাকে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় এনিম্যান শিশুদের আর্তনাদ করার কথা-তারা আর্তনাদ করতে পারে না তাই তারা এবারে অট্টহাসির মতো শব্দ করতে থাকে।

এনিম্যান সিকিউরিটি গার্ড দুজন শেষ পর্যন্ত তাদেরকে শক্ত করে তাদের কাপড় ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে টেনে নিতে থাকে। হলঘরের হাজার হাজার এনিম্যান শিশু নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকে, তাদের মুখে হাসি কিন্তু সেই হাসিতে কোনো আনন্দ নেই।

.

তিষা আর জনকে যখন লিডিয়ার ঘরে আনা হল। তখন লিডিয়া গভীর মনোযোগ দিয়ে তার মনিটরে একটা ভিডিও দেখছে, পায়ের শব্দ শুনে সে মাথা ঘুরিয়ে তাকাল। সেই মুহূর্তে মনিটরে তিষা আর জনের একটি দৃশ্য, তারা খুবই অন্তরঙ্গ ভঙ্গীতে একজন অন্যজনকে ধরে রেখেছে, জনের হাতে একটা সিরিঞ্জ। ভিডিওতে দেখা গেল তিষা তার বাম হাতটি এগিয়ে দিয়েছে তখন জন সেখানে সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে দিয়েছে। তিষা তীব্র আনন্দের একটা শব্দ করল, দেখতে দেখতে তার শরীর কাঁপতে থাকে।

তিষা হতবাক হয়ে ভিডিওটার দিকে তাকিয়ে থাকে, এই ভিডিওটি কীভাবে তৈরী করেছে? লিডিয়া সিকিউরিটি গার্ড দুজনের দিকে তাকিয়ে। বলল, “এক্সিকিউশান টিমকে খবর দাও।”

“খবর দেওয়া হয়েছে।”

“আমাদের হাতে সময় নেই। খুব দ্রুত শেষ করতে হবে।”

“ঠিক আছে।” গার্ডটি সাথে সাথে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।

তিষা মনিটরটির দিকে দেখিয়ে বলল, “এই ভিডিও কী ভাবে তৈরী করেছ?”

লিডিয়া বলল, “পছন্দ হয়েছে?”

“কীভাবে তৈরী করেছ?”

“পুরোটা দেখলে তোমরা মুগ্ধ হতে। দেখতে চাও?”

তিষা মাথা নাড়ল, বলল, “না। দেখতে চাই না।”

লিডিয়া হাসার ভঙ্গী করল, তার মুখের মাংশপেশি হাসিতে অনভ্যস্ত তাই তার হাসিটি কেমন যেন ভয়ংকর দেখায়। মুখে ভয়ংকর সেই হাসিটি ফুটিয়ে রেখে বলল, “আর কয়েক মিনিটের মাঝে আমরা তোমাদের দুইজনকে মেরে ফেলব তাই তোমাদের বলতে এখন কোনো সমস্যা নেই।”

তিষা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না, আতংকের একটা শীতল স্রোত তার মাথা থেকে মেরুদণ্ড দিয়ে নিচের দিকে বয়ে যেতে থাকে। সে জনের দিকে তাকাল, জন মানুষের ঠোঁটের ভঙ্গী দেখে কথা বুঝে নেয়, সবসময় যে সমান ভাবে বুঝতে পারে তা নয়। এতো সহজে কাউকে মেরে ফেলার কথা বলা যেতে পারে জন সেটা জানে না তাই সে লিডিয়ার কথাটা বুঝতে পেরেও বিশ্বাস করতে পারছিল না। তিষার আতংকিত মুখ দেখে বুঝতে পারল কথাটা সত্যি, লিডিয়া সত্যিই তাদের মেরে ফেলার কথা বলছে।

লিডিয়া বলল, “আমাদের ভিডিওটাতে দেখানো হয়েছে তোমরা কীভাবে পরিকল্পনা করেছ যে আমাদের ব্ল্যাকমেল করার জন্যে তোমরা তোমাদের এনিম্যানকে নিয়ে সাইন ল্যাংগুয়েজ শেখানোর একটা ভূয়া ভিডিও তৈরী করবে। তারপর দেখানো হবে তোমরা এনিম্যানের হাত ধরে সেই হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে তাকে দিয়ে সাইন ল্যাংগুয়েজের ভান করে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলাচ্ছ–দেখতে চাও?”

তিষা মাথা নাড়ল, সে দেখতে চায় না। সত্যি কথা বলতে কী কোনো। কিছুতেই এখন আর কিছু আসে যায় না। ভয়ংকর একটা আতংকে তার মাঝে এখন ক্রোধ হতাশা দুঃখ বা অন্য কোনো অনুভূতি নেই। লিডিয়া টেবিলে টোকা দিতে দিতে বলল, “ভিডিওটার শেষ দৃশ্যে দেখানো হবে তোমরা ড্রাগ নিতেই থাকবে, নিতেই থাকবে। ড্রাগের ওভারডোজ হয়ে তোমরা মারা যাবে। উদ্ধৃঙ্খল লোভী অনৈতিক দুশ্চরিত্র দুইজন টিন এজারের অকাল মৃত্যু। সেই মৃত্যু দেখে কারো মনে বিন্দুমাত্র সমবেদনা হবে না। আমরা পুরোটা একটু একটু করে তৈরী করেছি–পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সফটওয়ার ব্যবহার করে সেটা একটু একটু করে তৈরী হয়েছে। শেষ দৃশ্যটা আমরা তৈরী করব না। শেষ দৃশ্যটি হবে অরিজিনাল, সেইজন্যে আমরা তোমাদের এখানে ধরে এনেছি। খাঁটি ড্রাগস ওভারডোজ করে আমরা তার ভিডিও নিব! সেটা ব্যবহার করব। কী মনে হয় তোমাদের, আমাদের পরিকল্পনায় কোনো খুঁত আছে?”

তিষা আর জন কেউ কোনো কথা বলল না। তিষা এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে এই মহিলাটির দিকে তাকিয়ে রইল, পৃথিবীতে সত্যিই এরকম মানুষের জন্ম হতে পারে? একজন মানুষ সত্যিই এরকম রাক্ষুসী হতে পারে?

লিডিয়া তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল, হেঁটে হেঁটে তিষার সামনে এসে দাঁড়াল, তারপর তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার নিজের একটা দেশ ছিল, গরীব মানুষের দেশ, সেই দেশ ছেড়ে বড়লোকের দেশে এসেছ। কাজটা ভালো হয় নাই। নিজের দেশে থাকলে ড্রাগ ওভারডোজে মারা যেতে না। এখন তোমাকে ড্রাগ ওভারডোজে মারা যেতে হবে! কেমন লাগছে চিন্তা করে?”

লিডিয়া তার মুখটা তিষার একেবারে কাছাকাছি নিয়ে আসে, তিষার কী মনে হল কে জানে হঠাৎ প্রচণ্ড ঘৃণায় থু করে লিডিয়ার মুখে থুতু ফেলল। ঘরে যারা ছিল তারা এতো চমকে উঠল যে সবাই কয়েকমুহূর্ত স্থির হয়ে রইল। তিষাকে যে সিকিউরিটি গার্ড ধরে রেখেছিল, সে খপ করে তার হাত ধরে মোচড় দিতেই তিষা ব্যথায় আর্তনাদ করে ওঠে। সিকিউরিটি গার্ড তাকে মারার জন্যে হাত উপরে তুলল, লিডিয়া তাকে থামাল, বলল, “না গায়ে হাত দেবে না। শরীরে মারের বা আঘাতের চিহ্ন থাকতে পারবে না।”

লিডিয়ার চোখ এবং গালে তিষার থুতু ল্যাপটে আছে, সে টেবিল থেকে একটা টিস্যু তুলে তার মুখটা মুছে নেয়। টিসুটার দিকে তাকিয়ে তার মুখটা ঘৃণায় কুঞ্চিত হয়ে যায়। সে মাথা ঘুরিয়ে তিষার দিকে তাকিয়ে হিস হিস করে বলল, “মেয়ে তোমার খুব সৌভাগ্য যে তোমার ড্রাগ ওভারডোজ হয়ে খুব আনন্দের একটা মৃত্যু ঠিক করে রাখা আছে সেটা আর পাল্টানো যাবে না। কিন্তু জেনে রাখ আমি তোমার বাবা মা থেকে শুরু করে তোমার চৌদ্দগুষ্টির সবাইকে টিপে টিপে পোকার মতো মারব!”

ঠিক তখন দরজা খুলে কয়েকজন ঘরে ঢুকল। সবার সামনে সাদা গাউন পরা একজন বয়স্ক মানুষ। হাতে একটা ব্যাগ। ভেতরে ঢুকেই টেবিলে ব্যাগটা রেখে সেখান থেকে একটা সিরিঞ্জ, কয়েকটা এমপুল বের করে সে কাজ শুরু করে দেয়। তাকে দেখে মনে হল এই ঘরে যে অন্য মানুষেরা আছে সেটা সে লক্ষ্য পর্যন্ত করে নি।

বয়স্ক মানুষটির পেছন পেছনে বেশ কয়েকজন মানুষ এসে ঢুকল। তাদের কারো হাতে টেলিভিশন ক্যামেরা কারো হাতে স্ট্যান্ডের উপর লাগানো লাইট, কারো হাতে রিফ্লেক্টর। সবার শেষে দুজন মানুষের হাতে বড় একটা সবুজ রংয়ের পর্দা।

চশমা পরা স্কুল মাস্টারের মতো দেখতে শুকনো একজন লিডিয়াকে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় শুট করব?”

লিডিয়া বলল, “সেটা তোমাদের ব্যাপার। তোমরা ঠিক কর।”

স্কুল মাস্টারের মতো মানুষটি চারিদিকে তাকিয়ে জানালার কাছাকাছি একটা জায়গা দেখিয়ে তার লোকদের বলল, “ক্রমা কীয়ের জন্যে সবুজ স্ক্রিনটা এখানে টানাও।”

মানুষগুলো তখন তখনই কাজে লেগে গেল। স্কুল মাস্টারের মতো মানুষটি তখন অন্য মানুষগুলোকে বলল, “তোমরা লাইটিং শুরু কর। ন্যাচারল লাইটিং হবে, বিকাল বেলা, গাছের ছায়ার কাছাকাছি।”

মানুষগুলো মাথা নেড়ে তাদের ঘাড়ে করে আনা স্টুডিও লাইটগুলো বসাতে শুরু করে।

লিডিয়া জিজ্ঞেস কলল, “কতোক্ষণ লাগবে?”

স্কুলমাস্টার বলল, “খুব বেশী হলে দশ মিনিট।”

লিডিয়া তখন ডাক্তারের মতো মানুষটির দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার?”

মানুষটি বলল, “আমি রেডি।“

লিডিয়া তখন তিষা আর জনের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমাদের আয়ু আর দশ মিনিট। যা কিছু দেখার আছে দেখে নাও।” কথা শেষ করে লিডিয়া আবার হাসার চেষ্টা করল, হাসতে অনভ্যস্ত তার মুখের মাংশপেশী আবার বিকৃত একটা ভঙ্গীতে কুঞ্চিত হয়ে ওঠে।

ভিডিও ক্যামেরা হাতে মানুষগুলো খুবই দক্ষ, তারা দশ মিনিটের আগেই সবকিছু রেডি করে ফেলল। স্কুল মাস্টার লিডিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমরা রেডি।”

লিডিয়া তখন তিষা আর জনের দিকে তাকিয়ে জিব দিয়ে সমবেদনার ভঙ্গীতে চুক চুক শব্দ করে বলল, “আমি খুবই দুঃখিত, বেঁচে থাকার জন্যে তোমাদের দশ মিনিট সময়ও দেওয়া গেল না। বুঝতেই পারছ আমাদের তাড়াহুড়ো আছে।” তারপর সিকিউরিটি গার্ডদের বলল, “এদের স্টেজে নিয়ে এস।”

সিকিউরিটি গার্ড ওদেরকে টেনে নিয়ে আসতে থাকে। লিডিয়া স্কুল মাস্টারকে বলল, “মনে রেখো, তোমাদের কিন্তু দ্বিতীয়বার শুট করার সুযোগ নেই।”

স্কুল মাস্টার বলল, “আমি জানি। দ্বিতীয়বারের প্রয়োজন হবে না। মৃত্যু দৃশ্যে অভিনয় সব সময় খুবই খাঁটি হয়।”

কথাটাকে একটা উঁচু দরের রসিকতা বিবেচনা করে ঘরের সবাই শব্দ করে হেসে উঠল।

তিষা আর জনকে যখন স্টুডিও লাইটগুলোর কাছাকাছি নিয়ে আসা হয়েছে তখন হঠাৎ ঝটকা মেরে নিজেকে মুক্ত করে জন তাকে ধরে রাখা সিকিউরিটি গার্ডের দুই পায়ের মাঝখানে প্রচণ্ড জোরে একটা লাথি মারল, তারপর কেউ কিছু বোঝার আগে সে একটা হিংস্র স্বাপদের মতো লিডিয়ার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। লিডিয়া কিংবা ঘরের কেউ এর জন্যে প্রস্তুত ছিল

–লিডিয়া প্রচণ্ড ধাক্কায় হুড়মুড় করে পিছনে পড়ে গেল। টেবিলটা ধরে সে কোনোমতে নিজেকে রক্ষা করতে চাইল কিন্তু পারল না, তার মাথা শব্দ করে মেঝেতে আঘাত করে এবং মুহূর্তের জন্যে তার সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায়। জন তার বুকের উপর বসে দুই হাতে লিডিয়ার মুখে আঘাতের পর আঘাত করতে থাকে মুহূর্তের মাঝে লিডিয়ার নাক মুখ রক্তাক্ত হয়ে যায়।

সবাই ছুটে এসে জনকে পিছন থেকে ধরে টেনে সোজা করে-লিডিয়া কোনোমতে উঠে বসে বিড় বিড় করে বলল, “খবরদার ওর গায়ে হাত দিও না। ওর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন থাকতে পারবে না।”

সবাই মিলে জনকে ধরে টেনে সরিয়ে নিয়ে যায়, তার সিকিউরিটি গার্ডটি তখনো দুই পায়ের মাঝখানে ধরে বাঁকা হয়ে শুয়ে কোকাচ্ছিল, চোখে আগুন ঝরিয়ে সে জনের দিকে তাকিয়ে একটা কুৎসিত গালি দিল।

লিডিয়া হাত দিয়ে তার নাক মুখ থেকে রক্ত মুছে তার হাতের দিকে তাকিয়ে রইল। তাকে দেখে মনে হতে থাকে সে বুঝি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

লিডিয়া টেবিলটা ধরে কোনোমতে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল, “কাজ শেষ করো। এই দুই নর্দমার কীটকে তাদের সত্যিকার জায়গায় পাঠাও। এই মুহূর্তে।”

বেশ কয়েকজন তখন শক্ত করে দুইজনকে ধরে রাখে, ডাক্তারের মতো দেখতে বয়স্ক মানুষটা সিরিঞ্জটা নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে যায়। যারা জন আর তিষাকে ধরে রেখেছে তাদেরকে বলল, “ইঞ্জেকশান পুশ করার সময় ধরে রেখ। যখন আমি বলব তখন ছেড়ে দিও।”

তিষা জনের দিকে তাকিয়ে বলল, “গুড বাই জন। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

জন ফিসফিস করে বলল, “আমিও তোমাকে ভালোবাসি তিষা। সবসময়।”

ডাক্তারের মতো মানুষটা সিরিঞ্জ হাতে প্রথমে জনের দিকে এগিয়ে গেল।

হঠাৎ করে ঘরের সবাই এক সাথে স্থির হয়ে গেল। তারা বহুদূর থেকে। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো এক ধরনের শব্দ শুনতে পায়। ঘরের মেঝেতে মৃদু এক ধরনের কাঁপন অনুভব করে। সবাই বিস্মিত হয়ে একে অন্যের দিকে তাকাল, ঢেউয়ের মতো শব্দটা ধীরে ধীরে ছোট শিশুদের সম্মিলিত হাসির মতো শোনাতে থাকে আর মৃদু কম্পনটা অসংখ্য ছোটছোট পায়ের শব্দের মতো শোনাতে থাকে। সবাই বুঝতে না পারলেও তিষা সাথে সাথে বুঝে গেল কী ঘটেছে। তার মিশকা এনিম্যান শিশুদের বুঝিয়ে এখানে নিয়ে আসছে তাদেরকে উদ্ধার করার জন্য।

সবাই এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে দরজার দিকে তাকালো এবং হঠাৎ করে দরজাটা ধড়াম করে খুলে যায় এবং বন্যার পানির মতো অসংখ্য এনিম্যান ঘরের ভেতরে এসে ঢুকে আর মুহূর্তে সারা ঘরে তারা ছড়িয়ে পরে। সংখ্যায় তারা একজন দু’জন নয়, অসংখ্য। তারা একে অনের উপর দিয়ে ছুটে যেতে থাকে। দেখতে দেখতে হাজার হাজার এনিম্যান শিশু আর তাদের হাসির শব্দে পুরো ঘরটা ভরে যায়। এনিম্যান শিশুগুলো খালি হাতে আসেনি। তাদের হাতে ছোট পাথর, কাঠি, কাঁচের টুকরো, কাঁটা, চামুচ বা কিছু একটা আছে। তারা শুধু আসিনি তাদের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে। যতোগুলো মানুষ ছিল তাদের প্রত্যেকের শরীর বেয়ে তারা উপরে উঠতে থাকে। তারা খিল খিল করে হাসির শব্দ করতে করতে মানুষগুলোকে আঘাত করতে থাকে। জন আর তিষা অবাক হয়ে দেখল ঘর বোঝাই হবার পরও তাদের আসা বন্ধ হল না। তারা আসতেই থাকল, একে অন্যের উপর দিয়ে ছুটতে লাগল।

অন্যদের আঘাত করলেও জন আর তিষাকে কিছু করল না। মাঝে মাঝে তাদের শরীর বেয়ে উপরে উঠে তারা তাদের গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে আবার নিচে নেমে অন্যদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকে।

জন আর তিষাকে যারা ধরে রেখেছিল তারা ততক্ষণে তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করে-একটি এনিম্যান শিশু একেবারেই দুর্বল, তাদের হাতের আঘাতে কারো ব্যথা পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু যখন একসাথে হাজার হাজার এনিম্যান শিশু এসে একজনকে জাপটে ধরে তাকে টেনে নিচে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে তখন তারা অসহায়! এনিম্যান শিশুরা যখন তাদের ছোট ছোট হাত দিয়ে আঘাতের পর আঘাত করতে থাকে তখন সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়।

জন লক্ষ্য করল সিকিউরিটি গার্ডগুলো তাদের হাতের অস্ত্রগুলো দিয়ে এনিম্যান শিশুগুলোকে গুলি করার চেষ্টা করছে, হাজার হাজার এনিম্যান তাদের ধরে রেখেছে বলে তারা অস্ত্রগুলো ঠিক করে ধরতে পারছে না। জন তখন এগিয়ে গিয়ে একজন সিকিউরিটি গার্ডের হাত থেকে তার অস্ত্রটি কেড়ে নিল। তিষার হাতে সেটি দিয়ে সে তখন দ্বিতীয় গার্ডের অস্ত্রটিও কেড়ে নেয়। এনিম্যান শিশুগুলো মানুষগুলোকে টেনে নিচে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। তাদের পা ধরে টানতে থাকে, কামড় দিতে থাকে, ধাক্কা দিতে থাকে, লাথি দিতে থাকে।

দেখতে দেখতে মানুষগুলো ঘরের মেঝেতে পড়ে যেতে থাকে তখন এনিম্যানগুলো তাদের হাত পা ধরে রাখে যেন তারা নড়তে না পারে, অন্য অনেকগুলো এনিম্যান তাদের উপর লাফাতে থাকে। লাথি মারতে থাকে, তাদের হাতে কাঁটা চামুচ কাঠি যা কিছু আছে সেটা দিয়ে খোঁচাতে থাকে। তিষা আর জন বিস্ফারিত চোখে দেখল লিডিয়া মেঝেতে পড়ে কোনোমতে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে, পারছে না। অসংখ্য এনিম্যান শিশু তাকে নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া করছে, তার মাথার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করছে। যন্ত্রণায় চিৎকার করছে কিন্তু এনিম্যান শিশুর হাসির শব্দে সব কিছু চাপা পড়ে গেছে।

তিষা জনকে আঁকড়ে ধরে ভয় পাওয়া গলায় বলল, “এরা সবাই মেরে ফেলবে।”

জন বলল, “হ্যাঁ।”

তিষা বলল, “আমি সহ্য করতে পারছি না জন। কিছু একটা কর।“

“কী করব? এদেরকে কেমন করে থামাই?”

“মিশকা! মিশকাকে বলে দেখি।”

জন বলল, “এর মাঝে খুঁজে পাবে?”

“দেখি চেষ্টা করে।”

তখন তিষা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ডাকল, “মিশকা! মি-শ-কা! তুমি কোথায়?”

হাজার হাজার এনিম্যানের ভয়ঙ্কর হাসিয় শব্দ আর মানুষগুলোর আর্তনাদের মাঝে তিষার গলা চাপা পড়ে গেল। তিষা আবার গলা ফাটিয়ে ডাকল, “মি-শ-কা! মি-শ-কা!”

এবারে হঠাৎ করে মিশকাকে দেখা গেল। স্কুল মাস্টারের মতো দেখতে মানুষটির উপর অসংখ্য এনিম্যান শিশুদের একটা ঢিবি। তার উপর মিশকা দাঁড়িয়ে দুই হাত তুলে তিষার ডাকের সাড়া দিল। তিষা সাইন ল্যাংগুয়েজে তাকে বলল, “এদেরকে মেরে ফেলো না।”

মিশকা মেরে ফেলা শব্দটির সাথে পরিচিত না। তাকে সাইন ল্যাংগুয়েজে অনেক কিছু শেখানো হয়েছে কিন্তু মেরে ফেলা শব্দটি কখনো শেখানো হয়নি। মিশকা হাত নেড়ে সাইন ল্যাংগুয়েজে জিজ্ঞেস করল, “তার মানে কী?”

“এখন থামাও।”

“কেন? এরা খারাপ। এরা দুষ্ট। এদেরকে কষ্ট দিতে হবে।”

“কষ্ট দেওয়া হয়েছে। এখন থামাও।”

মিশকাকে এই প্রস্তাবে রাজী হতে দেখা গেল না, হাত নেড়ে বলল, “থামালে এরা আমাদের কষ্ট দিবে।”

“কষ্ট দিতে পারবে না। আমরা এদেরকে বেঁধে রাখব।”

“বেঁধে রাখবে?”

“হ্যাঁ।”

“কেমন করে?”

“তোমরা থাম, তখন আমি তোমাকে দেখাব।”

মিশকাকে আরো খানিকক্ষণ বোঝাতে হল তখন তারা থামতে রাজী। হল। তিষা আর জন তাদেরকে বোঝাল যে তারা ইচ্ছে করলে শক্ত করে মেঝেতে চেপে ধরে রাখতে পারে কিন্তু তাদেরকে আর কিছু করার প্রয়োজন। নেই।

মানুষগুলোকে বাঁধার জন্যে দড়ি পাওয়া সহজ হল না, তাই প্যান্টের বেল্ট, কম্পিউটারের পাওয়ার কর্ড, স্টুডিও লাইটের তার এরকম জিনিস দিয়ে তাদের একজন একজন করে বেধে রাখা হল। কয়েকজন মানুষের সার্ট খুলে সেটাকে পাকিয়ে দড়ির মতো করে সেগুলোও বাঁধার জন্যে ব্যবহার করা হল। এনিম্যান শিশুগুলো পুরো প্রক্রিয়াটা খুব মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করল তারপর সম্ভষ্টির মতো মাথা নাড়ল।

লিডিয়াকে ঠেলে সোজা করে বসিয়ে দেয়া হল। তার মাথার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলেছে, এখন পুরো মাথায় কোনো চুল নেই, তাকে দেখে চেনা যায়। না। মুখ ক্ষতবিক্ষত উপরের ঠোঁটটা দুইভাগ হয়ে রক্ত পড়ছে। শরীরের কাপড়ও ছিন্ন ভিন্ন, তিষা ভেবেছিল তার জ্ঞান নেই, কিন্তু দেখা গেল জ্ঞান আছে।

তিষা ফিস ফিস করে বলল, “আমার আয়ু তাহলে মাত্র দশ মিনিট ছিল না! মনে হয় ভালোই আছে। তোমার আয়ু নিয়েই মনে হচ্ছে সমস্যা।”

লিডিয়া কোনো কথা বলল না। তিষা বলল, “আরেকটা জিনিস জেনে রাখো, আমার গরীব দেশটা কিন্তু খুব সুন্দর সেই দেশে কিন্তু তোমার মতো

একটাও অসুন্দর মানুষ নেই! তোমার দেশটাও খুব সুন্দর কেন জানো? কারণ এখানে জনের মতো ছেলেরা আছে!”

লিডিয়া এবারেও কোনো কথা বলল না। তিষা বলল, “একটু আগে। আমি তোমার মুখে থুতু দিয়েছিলাম, তুমি খুব রাগ করেছিলে। এখন যত ইচ্ছে তত থুতু দিতে পারব, কিন্তু আমি দেব না। কেন দেব না জান?”

লিডিয়া কোনো কথা বলল না, তিষা বলল, “তার কারণ একজন মানুষের মুখে থুতু দিয়ে তার যেটুকু সম্মান নষ্ট করা যায় তোমার সেই সম্মানটুকুও আর নেই। তুমি এখন আর নর্দমার কীটও নও।”

লিডিয়া কোনো কথা না বলে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল।

.

তিষা আর জন পুরো বিল্ডিংয়ের সবগুলো মানুষকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলার পর বাইরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে আবিষ্কার করল এই পুরো এলাকাটুকু বাইরের পুরো জগতের সাথে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। কোনোভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। টেলিফোন কাজ করে না, নেটওয়ার্ক কাজ করে

, আশে পাশে কোনো জনমানব নেই। বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগের কোনো উপায় না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত একটা বিল্ডিংয়ে আগুন ধরিয়ে দিল। আগুনের শিখাটা এনিম্যান শিশুরা খুবই উপভোগ করল বলে মনে হল।

আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর প্রথমে ফায়ার ব্রিগেড তারপর পুলিশের গাড়ি এসে এলাকাটা ঘিরে ফেলল। পুলিশের একটা দল ভিতরে ঢুকে তিষা আর জনকে দেখে খুব অবাক হয়ে বলল, “ তোমরা কারা? এখানে কী হচ্ছে?”

তিষা বলল, “সেটি বোঝাতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু তার আগে আমি কী আমার মায়ের সাথে একটু কথা বলতে পারি? মা’কে শুধু জানাব আমি ভালো আছি?”

.

ঘণ্টাখানেক পর পুরো এলাকার দৃশ্যটি পাল্টে গেল। শত শত পুলিশের গাড়ি, অসংখ্য এম্বুলেন্স, টেলিভিশনের গাড়ি, সাংবাদিক, আকাশে হেলিকপ্টার। এনিম্যান শিশুদের দায়িত্ব নেবার জন্য ডাক্তার নার্স। সামাজিক কর্মী তাদের কীভাবে শান্ত রাখা যায় জিজ্ঞেস করার পর তিষা বলেছে আইসক্রিম খেতে দিতে, সে জন্যে বেশ কয়েকটা আইসক্রীমের ।ট্রেইলার ট্রাক। দেখা গেছে তিষার কথা সত্যি। এনিম্যান শিশুগুলো আইসক্রিম পেয়ে মহাখুশী।

অনেক রাতে যখন পুরো এলাকাটা নিয়ন্ত্রণের মাঝে এসেছে তখন একটা সিঁড়িতে নক্ষত্রের আলোতে জন আর তিষা বসে আছে। তিষা তখন জনকে সাইন ল্যাংগুয়েজে বলল, “ঠিক যখন আমাদের ড্রাগ ওভারভেজ করতে যাচ্ছিল তখন আমি তোমাকে কী বলেছিলাম, তুমি খেয়াল করেছিলে?”

জন মাথা নাড়ল। তিষা বলল, “আমি বলেছিলাম, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ ওটা কিন্তু খুবই মানবিক একটা ভালোবাসা। ওর মাঝে কিন্তু কোনো রোমান্স ছিল না।

জন হাসল, বলল, “হ্যাঁ। আমি বুঝতে পেরেছিলাম।“ তারপর দুজনই হি হি করে হাসতে লাগল।

তাদের গায়ে হেলান দিয়ে মিশকা বসেছিল, সেও তাদের হাসিতে যোগ দিল সে কী বুঝেছে কে জানে!

.

শেষ কথা

লিডিয়াকে জীবন্ত এরেস্ট করা যায়নি। কীভাবে কীভাবে জানি সে তার হাতের বাঁধন খুলে তার ডেস্কের ড্রয়ার খুলে একটা রিভলবার বের করে নিজের মাথায় গুলি করেছে। ক্র্যাগনন সুপার কম্পিউটারের ভবিষ্যত্বাণী সঠিক ছিল, যে মানুষটি লিডিয়ার মাথায় গুলি করেছে তার পরিচয়টি জানা ছিল না, শেষ পর্যন্ত দেখা গেল মানুষটি সে নিজে।

এনিম্যান তৈরী বন্ধ হয়ে গেল। যে এনিম্যান শিশুগুলি পাওয়া গিয়েছিল তাদেরকে বিভিন্ন পরিবারের মাঝে বিতরণ করে দেওয়া হয়েছিল। সবাই তাদেরকে আদর যত্ন করে রেখেছে। এরা আসলে মানব শিশু, তাই চেষ্টা করা হয়েছে মানব শিশু হিসেবে বড় করার।

এনিম্যান নিয়ে যেরকম আলোড়ন হওয়ার কথা ছিল সেরকম আলোড়ন হল না, পুরো বিষয়টি কেমন যেন চাপা দিয়ে দেওয়া হল। কারা এটি করেছে কীভাবে করেছে পুরো বিষয়টিই সাধারণ মানুষের কাছে অজ্ঞাত থেকে গেল। সঠিকভাবে জানাজানি হলে এশিয়া আফ্রিকার অসংখ্য দরিদ্র মহিলাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হতো, সম্ভব সে জন্যেই বিষয়টা নিয়ে কোনো হই চই হল না। উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জী হই চই হতে দেয়নি। সরকারের উচ্চ মহলে তার অনেক বন্ধু।

মিশকা এর পর আট বছর বেঁচেছিল। এই আট বছরে মিশকা একটু একটু লিখতে পড়তে শিখেছিল। আম্মুর রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতে সে খুব পছন্দ করত। তিষার হেভি মেটাল একেবারে সহ্য করতে পারত না।

মিশকা মৃত্যুর ঠিক আগে আগে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিল। একরাতে তিষা মিশকাকে কোলে নিয়ে বাসার ছাদে বসে আছে। মিশকা দুর্বল হাতে সাইন ল্যাংগুয়েজে তিষাকে জিজ্ঞেস করল, “কেউ যখন মারা যায় তখন কী হয়?”

তিষা বলল, “তখন সে আকাশের তারা হয়ে যায়।

“আমি যখন মারা যাব আমিও কি আকাশের একটা তারা হব?”

“হ্যাঁ সোনা। তুমিও নিশ্চয়ই একটা তারা হবে।”

“আমি কোথায় তারা হব তিষা?”

“সেটা তুমি ঠিক কর।”

মিশকা খুব মনোযোগ দিয়ে আকাশের নক্ষত্রগুলো পরীক্ষা করে কালপুরুষকে দেখিয়ে বলল, “আমি ওখানে একটা তারা হতে চাই।”

“ঠিক আছে মিশকা।”

এর দুদিন পর তিষা ঘুম থেকে উঠে দেখে মিশকা তার ছোট বিছানায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখে তার শরীর শীতল, জীবনের স্পন্দন নেই।

রাত্রি বেলা যখন সবাই ঘুমিয়ে গেছে তখন বাসায় ছাদে উঠে তিষা কালপুরুষের কাছে তাকিয়ে থাকল। অনেক তারা জ্বল জ্বল করছে, তার মাঝে একটা নিশ্চয়ই মিশকা। তিষা ফিস ফিস করে বলল, “ভালো থেকো মিশকা।”