জরাসন্ধের নামকরণ
রাক্ষসী কহিল “মহারাজ! তোমার মঙ্গল হউক; আমি কামরূপ রাক্ষসী, আমার নাম জরা। আমি প্রতিদিন লোকের গৃহে গৃহে বাস করি। ভগবান ব্ৰহ্মা আমাকে নির্ম্মাণ করিয়া গৃহদেবী নাম প্রদান করিয়াছেন। আমি দানবগণের বিনাশনিমিত্ত স্থাপিত হইয়াছি। যে ব্যক্তি নবযৌবনসম্পন্ন সপুত্রা মদীয় প্রতিমূর্তি গৃহভিত্তিতে লিখিয়া রাখিবে, তাহার গৃহ সতত ধন-ধান্য ও পুত্ৰকলাত্ৰাদিতে পরিপূর্ণ থাকিবে। তাহা না করিলে অবশ্যই তাহার অমঙ্গল ঘটিবে। তোমার গৃহে বহুপুত্রসমাবৃত মদীয় প্রতিমূর্তি চিত্রিত আছে এবং আমি গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ ও নৈবেদ্যাদি দ্বারা সর্ব্বদা পূজিত হইয়া থাকি। হে রাজন! এইরূপে তোমার গৃহে বাস করিয়া সর্ব্বদা ভক্তিসহকারে পূজিত হই বলিয়া আমি নিরন্তর চিন্তা করি, কিরূপে প্রত্যুপকার করিব। অদ্য দৈববাশাৎ তোমার পুত্রের দেহাৰ্দ্ধদ্বয় দেখিতে পাইলাম। উহা গ্রহণপূর্ব্বক যেমন একত্র করিলাম, অমনি উহা এক নবকুমার হইল। হে নরনাথ! এই আশ্চৰ্য্য ঘটনা তোমারই ভাগ্যক্রমে হইয়াছে, আমি উপলক্ষ্য মাত্র। হে রাজন! আমি রাক্ষসী, সুমেরুও ভক্ষণ করিতে পারি, তোমার শিশুপুত্ৰ ত’ অনায়াসে ভক্ষণ করিতে পারিতাম। কেবল তোমার গৃহে সতত পূজিত হই বলিয়াই তোমাকে তোমার পুত্ৰ প্ৰদান করিলাম’।”
শ্ৰীকৃষ্ণ কহিলেন, “রাক্ষসী রাজাকে এই কথা বলিয়া অন্তর্হিত হইল। রাজা বৃহদ্ৰথ পুত্ৰ লইয়া পরমানন্দে গৃহে গমন করিয়া সেই বালকের জাতকর্ম্মাদি সম্পাদন করিলেন, পরে মগধরাজ্যে জরা রাক্ষসীর উদ্দেশে মহোৎসব করিতে আজ্ঞা দিলেন। তৎপরে সেই পিতামহসদৃশ রাজা বৃহদ্ৰথ স্বীয় পুত্ৰ জরারাক্ষসী কর্তৃক সন্ধিত অর্থাৎ সংযোজিত হইয়াছে বলিয়া তাহার নাম জরাসন্ধ রাখিলেন। জরাসন্ধ স্বীয় পিতা বৃহদ্রথের নিকেতনে হুত-হুতাশনের ন্যায়, শুক্লপক্ষীয় শশধরের ন্যায় দিন দিন বর্দ্ধিত ও বলসম্পন্ন হইতে লাগিল। তদর্শনে তদীয় পিতামাতার আর আনন্দের পরিসীমা রহিল না।”