ইরিনা তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ইরিনার চোখে গভীর বিস্ময়। ইনি এক জন অমর মানুষ। পাঁচ শ বছর ধরে বেঁচে আছেন, অথচ কী চমৎকার চেহারা!! কী সুন্দর স্বপ্নময় চোখ! কি মধুর করেই না। তিনি হাসছেন! গভীর মমতা ঝরে পড়ছে তার হাসিতে।
তুমি ইরিনা?
জ্বি।
সিডিসি অনেক ঝামেলা করে তোমাকে এখানে এনেছে কেন তুমি জান?
জি না।
এনেছে, কারণ আমি যখন সত্যিকর অর্থে যুবক ছিলাম তখন ঠিক অবিকল তোমার মতো দেখতে একটি তরুণীর সঙ্গে আমার ভাব ছিল। আমরা দুজন হাত ধরাধরি করে কত জায়গায় যে গিয়েছি। কত আনন্দ করেছি। বড় সুখের সময় ছিল। সিডিসি সেই কথা মনে করিয়ে দিতে চাইছে।
বলতে বলতে তার চোখে পানি এসে গেল। তিনি সেই পানির জন্যে মোটেই লজিত হলেন না। বরং তার ভালোই লাগল।
ইরিনা।
জি বলুন।
তোমার কি কোন ছেলে বন্ধু আছে? যার সঙ্গে তুমি ঘুরে বেড়াও?
আমাদের তো সেই সুযোগ নেই।
ও হ্যাঁ। আমার মনে ছিল না। এখন হবে। এখন নিশ্চয়ই হবে। খুব ঘুরে বেড়াবে, বুঝলে মেয়ে? নানান জায়গায় যাবে। জোছনা রাতে গাছের নিচে কম্বল বিছিয়ে দুজনে মিলে শুয়ে থাকবে। আকাশ দেখবে। তুমি গান জান?
জি না।
আমার সেই বান্ধবীও জানত না। তুমি গান শিখে নিও, কেমন?
জি শিখব। আপনার সেই বান্ধবীর সঙ্গে আপনার বিয়ে হয় নি?
না। আমি বিজ্ঞানের জন্যে জীবন উৎসর্গ করলাম। চলে এলাম মাটির নিচে। ওর সঙ্গে আমার আর দেখা হয় নি। তুমি এখন যাও ইরিনা।
ইরিনা চলে যেতেই তিনি সিডিসিকে ডাকলেন। সিডিসি সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দিল। তিনি বললেন, সিডিসি তোমাকে ধন্যবাদ। মেয়েটিকে দেখে গভীর আনন্দে আমার মন ভরে গেছে। আমার ভালো লেগেছে।
আপনার আনন্দ আরো বাড়িয়ে দেবার জন্যে বলছি, এই মেয়েটি আপনার বান্ধবীরই বংশধর।
তাই নাকি?
হ্যাঁ তাই। চেহারার এমন মিল তা না হলে হত না।
ওরে আরেকবার আনতে পার?
নিশ্চয়ই পারি।
আর কিছু গোলাপ জোগাড় করতে পার? আমি নিজের হাতে মেয়েটিকে কয়েকটি গোলাপ দিতে চাই।
গোলাপ জোগাড় করা হয়তো সম্ভব হবে।
তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সময় বোধ হয় আমার হাতে খুব বেশি নেই?
জ্বি না। সময় খুব অল্পই আছে।
সময় ফুরিয়ে যাবার আগে তোমাকে একটি কথা বলতে চাই সিডিসি। সেটা হচ্ছে, আমি কিন্তু পৃথিবী ধ্বংসের পরিকল্পনায় কখনো মত দিই নি। আমি সব সময় তার বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলাম।
আমি তা জনি। আমাদের ভালোবাসা, ঘৃণা, এসব ব্যাপার নেই। যদি থাকত, আমি আপনাকে ভালোবাসতাম।
তবু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, তুমি আমাকে ভালোবাস।
আপনার এই সুন্দর মন্তব্যের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
ইরিনা আবার এসে দাঁড়িয়েছে।
তিনি ইরিনার দিকে তাকিয়ে লাজুক স্বরে বললেন, আমি কি তোমার হাত একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি?
ইরিনা কয়েক মুহুর্তে ইতস্তত করল। তারপর তার হাত বাড়িয়ে দিল।
তিনি ইরিনার হাত ছুতে পারলেন না। নিষিদ্ধ নগরীতে সূর্যের আলো ঢুকতে শুরু করেছে। অসহ্য যন্ত্রণায় তিনি কুঁকড়ে যাচ্ছেন। এত কাছে ইরিনা দাঁড়িয়ে, কিন্তু তিনি তাকে স্পর্শ করতে পারছেন না।