পাছে ধায় রড়ে, দীর্ঘ বেণী নড়ে,
পৃষ্ঠোপরি শোভে চারু।
লোহিত বসন, অঙ্গে বিভূষণ,
যেন করিবর ঊরু।।
আজানুলম্বিত অঙ্গম-মণ্ডিত,
দ্বিভুজ ভুজঙ্গ সম।
দেখিয়া কৌরব, বিচারয়ে সব,
মনেতে পাইয়া ভ্রম।।
একজন আগে, পলাইছে বেগে,
আর জন পাছে ধায়।
এ কি বিপরীত, না বুঝি চরিত,
কেবা যে আগে পলায়।।
পাছুতে যে জন, নহে সাধারণ,
ছদ্মবেশী প্রায় লাগে।
যেন ভস্মমাঝে, অগ্নি হীনতেজে,
সিংহ যেন ধায় মৃগে।।
পুরুষ কি নারী, বুঝহ বিচারি,
ছদ্ম করিয়াছে তনু।
শুনি সেইক্ষণ, কহে বিচক্ষণ,
ভরদ্বাজ-অঙ্গজনু।।
আগে যেই যায়, ভয়েতে পলায়,
কেবা সে, তারে না চিনি।
পাছু গোড়াইয়া, যায় যে ধাইয়া,
তারে হেন অনুমানি।।
নরসিংহ প্রায়, দেখি তায় কায়,
সম তার অবয়ব।।
স্বর্গে সুরমণি, মর্ত্ত্যেতে ফাল্গুনি,
বিনা এ যুগল জনে।
অন্য কার প্রাণে, কুরুসৈন্য সনে,
আসিবে একাকী রণে।।
এত শুনি কর্ণ, চক্ষু রক্তবর্ণ,
কহিতে লাগিল ক্রোধে।
কি-শক্তি অর্জ্জুনে, একা আসি রণে,
কৌরব সহ বিরোধে।।
আগে যে সত্বর, হইবে উত্তর,
বিরাট রাজার সুত।
গোধন কারণে, এসেছিল রণে,
দেখিল সৈন্য বহুত।।
পাছু যেই যায়, নপুংসক প্রায়,
আছিল সারথি রথে।
পলাইল রথী, কি করে সারথি,
সেই পলায় ভয়েতে।।
শুনি মহামতি, বুদ্ধে বৃহস্পতি,
গৌতম-বংশজ কয়।
পাছু যেই যায়, ভয়েতে পলায়,
এমত চিত্তে না লয়।।
যদি পলাইত, রথেতে রহিত,
যাইত রথী লইয়া।
হেন লয় মন, করিবেক রণ,
আপনি রথী হইয়া।।
কহিছ যে আগে, পলাইছে বেগে,
উত্তর সেই প্রমাণ।
পাছুতে যে লোক, ছদ্ম পনুংসক,
পার্থ বিনা নহে আন।।
কৃপের বচন, শুনি দুর্য্যোধন,
কহিতে লাগিল তবে।
এ তিন ভুবনে, কাহার পরাণে,
আমা সহ বিরোধিবে।।
হউক অর্জ্জুন, কিবা নারায়ণ,
কাম কামপাল আদি।
কি শক্তি কাহার, সহিত আমার,
একা রণে হবে বাদী।।
ভারত-চন্দ্রিমা, রসের অসীমা,
শ্রবণে পাপ বিনাশে।
কৃষ্ণদাস দ্বিজ, কৃষ্ণ পদাম্বুজ,
বন্দি কহে কাশীদাসে।।