১৬-১৮. পঞ্চশরের কীর্তি

কিরীটী এসে ঘরে ঢুকলো।

সুসীমের সঙ্গে কিরীটীর পূর্বেই পরিচয় হয়েছে, বিষ্ণু দের সঙ্গে কিরীটীর পরিচয় করিয়ে দিল মৃণালই।

কিরীটী বললে, ভালই হয়েছে ডাক্তার, তুমি আমাকে এখানে ডেকে পাঠিয়েছো। আমিও চাইছিলাম তোমাদের তিনজনকে একসঙ্গে মিট করতে।

ফোনে আমি সে-সময় সব কথা তোমাকে বলি নি কিরীটী। কাল রাত্রে আর একটা দুর্ঘটনা প্রায় ঘটে গিয়েছিল আর কি–

জানি। মৃদুকণ্ঠে কিরীটী বলে।

জানো! সবিস্ময়ে তাকায় মৃণাল কিরীটীর মুখের দিকে।

হ্যাঁ, জানি। বিশাখা দেবীর ওপরে কাল রাত্রে অ্যাটেম্পট হয়েছিল, এই তো?

হ্যাঁ। কিন্তু তুমি—

বিশাখা দেবী সকালেই আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন। অবিশ্যি ঐ ধরনের একটা কিছু যে শীঘ্রই ঘটবে, বিশেষ করে আলফ্রেডের গ্রেপ্তারের পর, সেটা আমি কতকটা অনুমান করেছিলাম।

তুমি অনুমান করেছিলে?

হ্যাঁ। শুধু তিনি কেন, আমি অনুমান করেছিলাম তোমাদের যে কোন একজনের ওপরেও হয়তো হত্যাকারী অ্যাটেম্পট নিতে পারে। কিন্তু যাক সে কথা, তুমি জানলে কি করে? তোমাকেও বুঝি বিশাখা দেবী ফোন করেছিলেন?

না, না—সুসীমই তো এসে একটু আগে বললে!

সুসীমবাবু?

বিস্ময়ে কিরীটী সুসীমের মুখের দিকে তাকাল।

সুসীমও তাকায় কিরীটীর মুখের দিকে।

Is it true, সুসীমবাবু?

কিরীটী প্রশ্ন করে।

হ্যাঁ, আমি সকালে ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম, গিয়ে শুনি সব। সসীম বললে।

মৃদু হেসে কিরীটী বলে, ও, তাই বলুন। আপনি তাহলে গিয়েছিলেন আজ সকালেই বিশাখা দেবীর বাড়ি!

হ্যাঁ।

যাক সেকথা। অ্যাটেম্পটু হয়েছিল—শেষ পর্যন্ত কিছু তো ঘটে নি!

কিরীটী একটু যেন তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই কথাটা বলে।

সুসীম বলে, কিন্তু কি বলছেন আপনি মিঃ রায়, কিছু ঘটে নি বটে, তবে ঘটতে তো পারত!

তা হয়তো পারত, তবে ঘটে নি যখন–

তুমি যাই বল কিরীটী, আমার কিন্তু ব্যাপার দেখে কেমন হাত-পা পেটে সেঁধুবার যোগাড় হয়েছে!

ভয় নেই। মৃদু হেসে কিরীটী বোধ করি মৃণালকে সান্ত্বনাই দেয়।

ভয় নেই?

না।

আবার একসময় কিরীটী বলে, সেরাত্রের আপনাদের সকলের বক্তব্যই অবিশ্যি কিছু সাধন দত্তর কাছ থেকে এবং কিছু আপনাদের মুখ থেকেও শুনেছি, তবু আরো কিছু আমার আপনাদের সকলকেই জিজ্ঞাস্য আছে।

কিরীটীর মুখের দিকে তিনজনেই প্রায় একই সঙ্গে তাকালো।

কিরীটীও নিঃশব্দে সকলের মুখের উপরে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে বললে, আপনারা হয়তো জানেন না এখনো, সুনন্দা চ্যাটার্জীর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত থেকে একটা বিশেষ ব্যাপার জানা গিয়েছে

কি—কি জানা গিয়েছে? মৃণালই প্রশ্ন করে।

যদিও তার গলায় সরু সিল্ক-কর্ডের ফাঁস ছিল এবং মৃত্যুর কারণও যদিচ শেষ পর্যন্ত ফঁসের দ্বারা স্ট্র্যাংগল করে শ্বাসরোধ করেই, তথাপি আরও কিছু আছে, ফাস দেবার পূর্বে she was given morphine–

সে কি! চমকে প্রশ্ন করে মৃণাল।

হ্যাঁ ডাক্তার। মরফিনের সাহায্যে তাকে কিছুটা আধো ঘুমন্ত আধো জাগ্রত অবস্থার মধ্যে

এনে পরে তার গলায় হত্যাকারী ফাঁস লাগিয়েছে। ফাঁস দেবার মুহূর্তে অবিশ্যি হত্যাকারী আরো কিছুটা কসাস হয়েছিল একটা ক্লোরোফরমের হুইপ দিয়ে।

সকলেই স্তব্ধ হয়ে কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

কিরীটী বলতে থাকে, হত্যাকারী যে শুধু কসাই ছিল তাই নয়, রসিকও বটে!

রসিক!

হ্যাঁ ডাক্তার, রসিকজন। হোমিওপ্যাথরা শুনেছি থুজা ঔষধের সাহায্যে unwanted, undesirable growthকে ধ্বংস করেন, এক্ষেত্রে হত্যাকারী থুজার শিশিতে ক্লোরোফরম এনে বোধ হয় সেই কথাটাই বলতে চেয়েছিল। তোমরা হয়তো হত্যাকারীর রসিকতাটা ধরতে পারো নি মৃণাল, কিন্তু তার জন্য আক্ষেপের কারণ নেই, কারণ সে রসের সন্ধানটা যখন আমি অন্তত পেয়েছি, সে-সব কথা—যাক কারণ যথাসময়েই সব কিছুর ব্যাখ্যা আমি সকলের কাছে করবো, এখন যে জিজ্ঞাস্যগুলো আপনাদের কাছে আমার আছে সুসীমবাবু, সেগুলোই শেষ করে নেওয়া যাক।

পূর্ববৎ কিরীটীর মুখের দিকেই সকলে তখনো চেয়ে আছে যেন বোবা দৃষ্টিতে।

কিরীটী বলে, ময়নাতদন্ত থেকে জানা গিয়েছে সম্ভবত রাত এগারটা থেকে সোয়া এগারটার মধ্যেই সুনন্দা চ্যাটার্জী নিহত হয়েছিলেন। ডাক্তার তুমিই প্রথম বল, ঠিক ঐ সময়টাতে তুমি সেরাত্রে কোথায় ছিলে এবং কি করছিলে?

আমি!

হ্যাঁ, মনে করে বল। মানে সুনন্দা চ্যাটার্জীর মৃত্যুর ব্যাপারটা জানাজানি হবার আধঘণ্টা পূর্বে–

আমি তখন ওপরের ছাতে নিমন্ত্রিতদের খাওয়ার তদারক করছিলাম।

কেউ তার সাক্ষী আছে?

সাক্ষী!

হ্যাঁ, witness—কারণ তা না-হলে তুমি যে সত্য কথা বলছো তার প্রমাণ হবে কি করে?

কেন সুসীম—সুসীমই তো জানে। সে-সময় সে একবার ছাতে গিয়েছিল।

কথাটা কি সত্য সুসীমবাবু? সুসীমের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে কিরীটী।

সত্যি। মৃদুকণ্ঠে সুসীম বলে।

তারপরই বোধ হয় ডাক্তার তুমি নেমে এসেছিলে নীচের হলঘরে তোমার বান্ধবীকে ডাকতে!

হ্যাঁ।

আচ্ছা রাত দশটা থেকে পৌনে এগারটার মধ্যে তুমি কোথায় ছিলে?

সে সময় আমি—আমি বোধ হয় হলঘরেই ছিলাম—

হলঘরে সে-সময় কাকে কাকে তুমি দেখেছো?

অনেকেই ছিল। তার মধ্যে বিষ্ণুকেও আমি দেখি—

বিষ্ণুবাবুকে তুমি দেখেছিলে?

হ্যাঁ, বিষ্ণু তখন সোফায় উপবিষ্ট সুনন্দার সঙ্গে দাঁড়িয়ে বোধ হয় কথা বলছিল—তাই না বিষ্ণু?.

বিষ্ণুর মুখটা যেন সহসা ঐ কথায় কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যায়, সে আমতা আমতা করে বলে, আমি—কই আমি তো–

বাঃ, মনে নেই তোমার! তারই কিছুক্ষণ পরে তো তুমি হরপ্রসাদবাবুকে হলঘরের সামনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলছিলে, তোমার মাথাটার মধ্যে যেন কেমন করছে—

হ্যাঁ, হ্যাঁ—মনে পড়েছে বটে, ঠিক কেমন যেন আমার তখন শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। বোধ হয় ভিড়ে আর গরমে—

গরমে নয় বিষ্ণুবাবু, তখন অন্য কারণে আপনার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল!

সকলেই কিরীটীর কথায় চমকে যেন তার মুখের দিকে তাকায়। কিন্তু কিরীটী যেন খেয়ালই করে না ব্যাপারটা। সে পুনরায় বিষ্ণু দে-কেই প্রশ্ন করে, মিঃ দে, বিশাখা দেবীর সঙ্গে আপনার কতদিনের পরিচয়?

তা বছর চার-পাঁচ হবে—

আর সুনন্দা দেবীর সঙ্গে?

ঐ রকমই হবে।

সুসীমবাবু, আপনার বিশাখা দেবীর সঙ্গে কতদিনের পরিচয়?

বছর বারো-তেরো হবে। তারা একসময় আমাদের প্রতিবেশী ছিল।

তাহলে সুনন্দা দেবীর আগেই বিশাখা দেবীর সঙ্গে আপনার পরিচয় ছিল?

হ্যাঁ।

আচ্ছা মিঃ নাগ, বিশাখা দেবী ও আলফ্রেড ঘোষের বিবাহ-বিচ্ছেদ আজও হয় নি কেন বলতে পারেন?

না।

যাকগে ওদের কথা, এবারে যে নির্দিষ্ট সময়টা সম্পর্কে একটু আগে ডাক্তার সেনকে প্রশ্ন করলাম, তখন আপনি কোথায় ছিলেন–কি করছিলেন?

আমি তো কখনো বেশীক্ষণ এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকি নি। একবার ওপরে, একবার নীচে—সারা বাড়িময় আমাকে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। তাই আপনি যা প্রশ্ন করেছেন তার উত্তর এখন ঠিকভাবে বলা আমার পক্ষে তো সম্ভব নয় মিঃ রায়! সুসীম জবাব দেয়।

তা তো ঠিকই। আপনি যখন সে-রাত্রের উৎসবের ছিলেন হোস্ট। আচ্ছা রাত ঠিক দশটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে আপনি সেরাত্রে কোথায় ছিলেন মনে করে বলতে পারেন?

মৃদু হেসে সুসীম এবারেও বলে, না।

কিরীটী অতঃপর কিছুক্ষণ যেন কেমন গুম হয়ে বসে থাকে।

তারপরই হঠাৎ সে দাঁড়িয়ে উঠে বলে, আমি চললাম। কিন্তু একটা কথা যাবার আগে বলে যেতে বাধ্য হচ্ছি ডাক্তার, তোমরা কেউ আমার প্রশ্নের জবাবে সত্য যা তা বললে না!

কি বলছো কিরীটী? মৃণাল বলে।

ঠিকই বলছি, সত্য বলে নি। কারণ তোমাদের সকলের মনেই পাপ আছে।

পাপ!

হ্যাঁ, পাপ। কিন্তু সে পাপের হাত থেকে নিষ্কৃতিও পাবে না কেউ জেনো। গরল যেমন মানুষের সমস্ত দেহ জুড়ে একদিন ফুটে ওঠে বীভৎস ভয়ঙ্কর হয়ে—পাপও ঠিক তেমনি চাপা থাকে না—চাপা দেওয়া যায় না।

কথাগুলো বলে কিরীটী আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না, ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

.

১৭.

পরের দিন রাত্রি প্রায় তখন এগারোটা।

আগের দিনই দ্বিপ্রহরে শ্রাবণী শিলং রওনা হয়ে গিয়েছে। হরপ্রসাদ ও সুধা দেবীও পাটনা রওনা হয়ে গিয়েছেন ঐদিন। অত বড় বাড়িটায় একা ছিল সুসীম। বাড়িটা যেন একেবারে নিঝুম।

এতকলার লাইব্রেরী ঘরে বসে একটা বই পড়ছিল সুসীম।

ঘরের দরজাটা ভেজানোই ছিল। সহসা একটা মৃদু শব্দ কানে আসতেই দরজাটার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে যেন স্তব্ধ হয়ে গেল সুসীম।

ধীরে ধীরে দরজার পাল্লা দুটো খুলে যাচ্ছে।

কে-কে ওখানে?

দরজাটা একেবারে খুলে গেল, মৃণাল এসে এদিক-ওদিক ভীত শঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতে ঘরের মধ্যে ঢুকলো। এবং ঢুকেই দরজাটা ভিতর থেকে ভেজিয়ে দিল।

কি ব্যাপার মৃণাল, এত রাত্রে?

ওষ্ঠের উপর আঙুলের সঙ্কেতের ইশারা জানিয়ে নিম্নকণ্ঠে মৃণাল বললে, চুপ!

কি হয়েছে কি?

আমি—আমি ভুল করেছি সুসীম—

ভুল!

হ্যাঁ, ভুল–কিরীটীকে এই ঘটনার মধ্যে টেনে নিয়ে এসে।

কিন্তু–

আজ দুপুরে সে আমার ওখানে এসেছিল। তার কথাবার্তায় বুঝলাম—

কি–কি বুঝলে? উৎকণ্ঠায় যেন ভেঙে পড়ে সুসীমের গলার স্বর।

সুনন্দার হত্যার ব্যাপারে সে আমাকেই সন্দেহ করছে। কিন্তু তুমি তুমি তো জান। সুসীম—

আমি—আমি কি জানি?

সুনন্দাকে আমি ভালবাসতাম সত্যি এবং আমার চাইতেও সে তোমাকে ভালবাসে জেনে আজ আর অস্বীকার করবো না, আক্রোশও হয়েছিল আমার প্রচণ্ড তার ওপরে, হত্যাই তাকে আমি করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সুনন্দার ঘরে যে চিঠি পাওয়া গিয়েছে, সে চিঠি আমি লিখি নি—

কে বলেছে সে চিঠি তুমি লিখেছো?

কিরীটী।

ননসেন্স! ওটা একটা হামবাগ! বোস বোস তুমি।

ঠিক সেই মুহূর্তে ভেজানো দরজাটা পুনরায় খুলে গেল। এবং ঘরে প্রবেশ করলো বিষ্ণু দে।

এ কি! বিষ্ণু, তুমি এত রাত্রে? সুসীম প্রশ্ন করে।

কেন, তুমিই তো রাত এগারটায় কি জরুরী ব্যাপারে আমাকে এখানে আসতে বলেছে সুসীম!

আমি তোমাকে আসতে বলেছি! কই না তো!

বাঃ রে, তুমি ফোনে বললে, তুমি জান সুনন্দাকে কে হত্যা করেছে–কিন্তু তুমি বিশ্বাস করা সুসীম, আমি তাকে হত্যা করি নি। তবে–

কি? বিষ্ণুর মুখের দিকে তাকায় সুসীম।

রাত ঠিক দশটায় সে-রাত্রে আমি সুনন্দাকে এক গ্লাস ঠাণ্ডা সরবৎ এনে দিয়েছিলাম—

সরবৎ এনে দিয়েছিলে?

হ্যাঁ।

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বিষ্ণু বলতে থাকে, সে সরবৎটা শেষ করে আমাকে বলেছিল, আমার সঙ্গে নাকি তার কি কথা আছে। কিন্তু গ্লাসটা রেখে ফিরে আসতে আমার কয়েক মিনিট দেরি হয়েছিল, এসে দেখি সে হলঘরে নেই—

তুমি-তুমি তাকে সে-রাত্রে সরবৎ খাইয়েছিল বিষু? মৃণাল শুধায়।

হ্যাঁ, হ্যাঁ—কিন্তু সে সরবতের মধ্যে কিছু ছিল না, আমি হলফ করে বলতে পারি।

তোমার কথাটা কিরীটী রায় বিশ্বাস করবে ভাবো

মৃণালের কথা শেষ হলো না। দরজা ঠেলে এসে ঘরে ঢুকলো বিশাখা, এই যে বিষ্ণু তুমি-তুমি কিরীটী রায়কে বলেছে যে আমি সেরাত্রে সুনন্দাকে হত্যা করেছি!

ঘরের মধ্যে যেন বজ্রপাত হয়েছে সহসা।

একটা পাষাণভার স্তব্ধতা।

আমি বলেছি! বিষ্ণু কোনমতে শুধায়।

হ্যাঁ, হ্যাঁ—তুমি—

বিশাখার কথা শেষ হলো না, হঠাৎ ঘরের মধ্যে সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি নারী-কণ্ঠস্বর যেন কোন অদৃশ্য অলক্ষ্য থেকে ভেসে এলো, হ্যাঁ  তুমি—তুমিই হত্যা করেছে সুনন্দাকে বিশাখা!

কে? কে? কে?

একসঙ্গে সকলেই চিৎকার করে ওঠে।

কে–কে ও কথা বললে?

কিন্তু কোথায় কে, কেউই তো নেই ঘরে!

অকস্মাৎ সঙ্গে সঙ্গেই যেন একটা ভয়ের অনুভূতি সকলের মেরুদণ্ড দিয়ে শির শির করে বয়ে যায়।

সকলেই ওরা পরস্পর পরস্পরের মুখের দিকে তাকায় কি এক অসহায় আতঙ্ক-বিহ্বল দৃষ্টিতে। ঠিক সেই মুহূর্তে আবার যেন অলক্ষ্য থেকে সেই অচেনা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো স্পষ্ট, সুসীম, মৃণাল, বিষ্ণু, বিশাখা—এত তাড়াতাড়ি আমাকে তোমরা ভুলে গেলে! আমি কে, তাই না? আমি সুনন্দা-সুনন্দা–

কথাগুলো শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা সুমিষ্ট হাসির লহরী যেন ঘরময় ছড়িয়ে পড়লো।

আতঙ্কিত দৃষ্টি নিয়ে ওরা একে অন্যের মুখের দিকে তাকায় আবার। ঘরের মধ্যে সব কটি প্রাণীই যেন একেবারে বোবা হয়ে গিয়েছে।

টুক…টুক…টুক…

ঘরের ভেজানো দরজার গায়ে মৃদু নক পড়লো।

এবং ভেজানো দরজার ওপাশ থেকে কিরীটীর কণ্ঠস্বর শোনা গেল, ভিতরে আসতে পারি সুসীমবাবু?

বাকশক্তি ওদের সকলের তখন যেন একেবারে এতটুকুও অবশিষ্ট নেই।

কেউ সাড়া দেয় না। সবাই যেন বোবা।

ধীরে ধীরে কিরীটী ও সাধন দত্ত ঘরের মধ্যে এসে প্রবেশ করলেন।

নমস্কার। এই যে আপনারা সকলেই দেখছি এখানেই জমায়েত হয়েছেন! ভালোই হলো–we can have a frank discussion amongst ourselves!

বাধা দিয়ে কিরীটীকে সাধন দত্ত বললেন, কিন্তু কর্তব্যটা চুকিয়ে নিলে হতো না আগে মিঃ রায়?

একটু অপেক্ষা করুন মিঃ দত্ত। তারপরই মৃণালের দিকে তাকিয়ে কিরীটী বললে, মিঃ দত্ত এসেছেন সুনন্দা চ্যাটার্জীর হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করতে–

সুনন্দার হত্যাকারী!

হ্যাঁ, ডাক্তার। এভাবে আজ এই রাত্রে এইখানে তোমাদের সকলকে এই ঘরে একত্রিত করার মূলেও ছিল ওঁর কৌশল। It is not an accident! কারণ উনি চেয়েছিলেন সকলের সামনে থেকেই হত্যাকারীর মুখোশ খুলে দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাবেন আজ এখান থেকে–

আমাদের মধ্যে থেকে! সুসীমই এবারে প্রশ্নটা করে।

হ্যাঁ  সুসীমবাবু, প্রমাণিত হয়েছে যে এই মুহূর্তে এখানে আপনারা যে চারজন উপস্থিত আছেন, তারই মধ্যে একজন সেরাত্রে সুনন্দা দেবীকে হত্যা করেছেন।

আমাদের মধ্যেই একজন?

কথাটা বলে সুসীম যেন ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে কিরীটীর মুখের দিকে।

হ্যাঁ, আপনাদের মধ্যেই একজন–

সুসীম, বিশাখা, মৃণাল ও বিষ্ণু পরস্পরের মুখের দিকে তাকায়। সকলের চোখেই যেন একই প্রশ্ন, কে—কে? কে হত্যা করেছে সেরাত্রে সুনন্দাকে?

কে? কে?

হঠাৎ বিষ্ণু দে চিৎকার করে ওঠে, না, না—এ torture! Unbearable torture! এ অসহ্য—অসহ্য—

থাম বিষ্ণু! তীক্ষ্ণকণ্ঠে প্রতিবাদ জানায় সুসীম, মিঃ রায় যা বলছেন তাই যদি সত্যি হয় তো কেন আমরা স্বীকার করছি না কে আমাদের মধ্যে সেরাত্রে সুনন্দাকে হত্যা করেছি? Come, speak out! মৃণাল, বিষ্ণু–-চুপ করে থেকো না, দোহাই তোমাদের—এর চেয়ে জঘন্য, এর চেয়ে কলঙ্কের ব্যাপার হতে পারে না। আমরাই আমাদের একজন প্রিয় বান্ধবীকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছি–কিন্তু কেন, কেন হত্যা করেছি–

হত্যা করা হয়েছে তাকে এইজন্য যে–because she knew something!

কী জানতে পেরেছিল সে?

কিন্তু সেটা তো হত্যার উদ্দেশ্য। কি ভাবে সেরাত্রে হত্যাকারী সুনন্দা দেবীকে হত্যা করেছিল, সেই আলোচনাতেই আগে আসা যাক। কিরীটী বললে।

পাথরের মতোই যেন সবাই ঘরের মধ্যে বসে থাকে। শ্বাসরোধকারী একটা স্তব্ধতা।

কিরীটী বলতে লাগলো, হত্যাকারী দুঃসাহসী নিঃসন্দেহে। প্রচণ্ড risk-ও নিয়েছিল সে এবং successfulও হয়েছিল। তবু—তবু সে দুজনার চোখকে ফাঁকি দিতে পারে নি। ছদ্মবেশ নেওয়া সত্ত্বে।

ছদ্মবেশ! মৃণাল প্রশ্ন করে।

হা ছদ্মবেশ। সব কিছুই আমি explain করবো। রাত দশটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে সেরাত্রে সরবতের সঙ্গে মরফিন প্রয়োগ করে নেশাগ্রস্ত সুনন্দাকে কৌশলে বাথরুমের মধ্যে নিয়ে গিয়ে, ক্লোরোফরমের হুইপ দিয়ে গলায় ফাঁস পরিয়ে দিয়েছিল হত্যাকারী।

কিন্তু তা কি করে সম্ভব? মৃণালই পুনরায় প্রশ্ন করে।

বুঝতে পেরেছি তুমি কি বলতে চাও। ফাস দেওয়ার পরে তাকে বাথরুম থেকে বের করে এনে সোফার ওপরে বসিয়ে নিজে তার পাশে বসে হত্যাকারী ফাঁসটা টাইট করে দেয়। ঘুমে। তখন মরফিনের ও ক্লোরোফরমের ক্রিয়ায় ঢলে পড়েছে সুনন্দা–প্রতিবাদ জানাবার বা চিৎকার করবারও বেচারীর তখন আর কোন ক্ষমতা ছিল না।

তবে কি—

হ্যাঁ মৃণাল, বিষ্ণু দে ও বিশাখা দেবী সেরাত্রে সুনন্দার পাশে বসে যে ব্যক্তিটিকে তার সঙ্গে কথা বলতে দেখেছিলেন—সে-ই সুনন্দার হত্যাকারী। এবং সুনন্দা was dead at that time–

না, না—তা কেমন করে হবে! আমি যে তার পরেও তার সঙ্গে কথা বলেছি কিরীটী! মৃণাল বলে।

না, তুমি কথা বললেও তার কোন জবাব পাও নি। কঠিন কণ্ঠে কিরীটী বলে, it was a deliberate lie-মিথ্যা, সে তখন already মৃত—নিহত! তাই আমি বলেছিলাম সেদিন, সবাই তোমরা তোমাদের জবানবন্দীতে মিথ্যা কথা বলছো!

সবাই স্তব্ধ, নির্বাক।

কিরীটী আবার বলে, তুমি, বিষ্ণুবাবু, বিশাখা দেবী–বলুন, বলুন বিষ্ণুবাবু চিনতে পারেন নি সেদিন আপনি সুনন্দা দেবীর পার্শ্বে উপবিষ্ট ব্যক্তিটিকে? বিশাখা দেবী, আপনি চিনতে পারেন নি?

বিশাখা যেন হিস্টিরিয়াগ্রস্ত রোগিণীর মতো চেঁচিয়ে উঠে প্রতিবাদ করে, না, না, না–পারি নি—পারি নি–

পেরেছেন! You did!

না–না—না—

হ্যাঁ পেরেছেন, বলুন–বলুন সে কে? বলতে আপনাকে হবেই বিশাখা দেবী। আর সেরাত্রে বাথরুমের মধ্যেও যাকে দেখেছিলেন, তাকেও আপনি চিনেছিলেন। কেন বুঝতে পারছেন না আপনি, আপনি সেরাত্রে তাকে চিনতে পেরেছিলেন বলেই গতরাত্রে আপনাকে হত্যাকারী আক্রমণ করেছিল–

না, না, না—তবু চেঁচাতে থাকে বিশাখা।

কঠিন ঋজুকণ্ঠে এবারে কিরীটী বলে, চিনতে পারেন নি–সুসীমবাবুকে আপনি চিনতে পারেন নি এখনো বলছেন?

সুসীম!

মৃণালের কণ্ঠ থেকে যেন একটা অস্ফুট আর্তনাদ বের হয়ে এলো।

হ্যাঁ, সুসীমবাবুই।

কথাটা বলেই কিরীটী পুনরায় বিষ্ণু দের দিকে ফিরে তাকিয়ে কঠিন কণ্ঠে বলে, বিষ্ণুবাবু, সেরাত্রে কার কাছ থেকে আপনি সুনন্দা দেবীর জন্য সরবৎ চেয়ে এনেছিলেন?

আমি!

হ্যাঁ।

বিশাখা দিয়েছিলো—

বিশাখা দেবী, কথাটা কি সত্যি?

বিশাখা জবাব দেয় না।

তার মাথাটা তখন প্রায় বুকের কাছে ঝুলে পড়েছে।

.

১৮.

হ্যাঁ, সুসীমবাবুই।

পরের দিন মৃণালের বাসায় বসেই বলছিল কিরীটী, সুসীমবাবুই যে সেরাত্রে সুনন্দা দেবীকে হত্যা করেছেন, সেটা আমার মনই বলেছিল। কারণ তার মতো সুনন্দা দেবীকে হত্যা করার সুযোগ সেদিন ঐ উৎসবের বাড়িতে আর কারো ছিল না। কিন্তু হত্যা করবার কারণ বা উদ্দেশ্যটা তখনো আমি খুঁজে পাই নি। এবং উদ্দেশ্যটা যে মুহূর্তে আমি খুঁজে পেলাম, সেই মুহূর্তেই ব্যাপারটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু উদ্দেশ্যটা কি? সুনন্দাকে তার মতো কেউ তো ভালবাসত না! মৃণাল বললে।

কথাটা মিথ্যা নয়। কিন্তু যে মুহূর্তে তিনি জানতে পেরেছিলেন, সুনন্দা তাঁকে নিয়ে শুধু খেলাই করে এসেছে দীর্ঘদিন ধরে সেই হতাশা আর পরাজয়ের অপমান তাকে উন্মাদ করে তুলেছিল।

খেলাই করে এসেছে সুনন্দা তাকে নিয়ে!

হ্যাঁ ডাক্তার–নির্মম খেলা। কারণ সুনন্দা ভালবাসত সত্যিকারের—

কাকে?

নীরেন সেনকে। আর নীরেনের সঙ্গে তার বিবাহও হয়ে গিয়েছিল এক বছর পূর্বে।

সে কি!

রেজিস্টারার্স অফিসে খোঁজ নিলেই ব্যাপারটা তুমি জানতে পারবে ডাক্তার—

কিন্তু এটা তো বুঝতে পারছি না কিরীটী, সে-কথাটা কেন তবে তারা গোপন করে রেখেছিল!

দুটি কারণে। এক হচ্ছে—সুনন্দা ব্রাহ্ম, নীরেনের কাকা—যিনি অবিবাহিত এবং প্রচুর সম্পত্তির মালিক, তিনি নীরেনের বিবাহটা মেনে নিতেন না এবং বিবাহ করলে নীরেনকে তার সমস্ত সম্পত্তি থেকে তিনি বঞ্চিত করতেন। নীরেনের পক্ষে ঐ বিরাট fortuneকে অস্বীকার করার ক্ষমতা ছিল না। দ্বিতীয়তঃ, বিশাখা আর তার স্বামী আলফ্রেডের ভয়ে–

ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলাম না তো মিঃ রায়!

আলফ্রেড, বিশাখা, সুসীম আর নীরেনের একটা চোরাই মাদক দ্রব্যের ব্যবসা ছিল। বর্মার ভিতর দিয়ে চীন ও ভারতবর্ষের মধ্যে চোরাই আফিমের কারবার চালাচ্ছিল ওরা। বেচারী সুনন্দা সে কথাটা জানতো না–

বলো কি!

হ্যাঁ। পরে অবিশ্যি কিছুদিন আগে জানতে পেরে ও চুপ করে ছিল। এদিকে সুসীম নীরেন ও সুনন্দার সম্পর্কটা জানতো না। শ্রাবণীকে বিয়ে করার কিছুদিন আগে ব্যাপারটা জানতে পেরে সুনন্দাকে যখন সে বলে তার মুখোশ সে খুলে দেবে, সুনন্দা তখন মরীয়া হয়ে সুসীমকে বলে, তাহলে সে-ও সুসীমের চোরাকারবারের ব্যাপারটা প্রকাশ করে দেবে। ওদের দুজনের মধ্যে যেদিন কথা-কাটাকাটি হয়, ঠিক সেইদিনই ঘটনাচক্রে আলফ্রেড সুনন্দার বাড়িতে তার পাশের ঘরে উপস্থিত ছিল। সে-ই তার জবানবন্দীতে সব কথা বলেছে—প্রকাশ করে দিয়েছে। আর তার মুখ থেকে সব কথা শোনবার পরই সুনন্দাকে হত্যার উদ্দেশ্যটাও আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে। একে তো নীরেনের ব্যাপার নিয়ে সুনন্দার প্রতি আক্রোশ ছিলই সুসীমের, তার উপরে ঐ চোরাকারবার—কাজেই তখন সুনন্দাকে এ পৃথিবী থেকে অবিলম্বে সরিয়ে ফেলা ছাড়া অন্য পথ আর ছিল না সুসীমের।

কিন্তু সুনন্দাকে যে সুসীমই হত্যা করেছে তার প্রমাণ?

মোক্ষম দুটি প্রমাণ আছে।

কি প্রমাণ?

প্রথমতঃ, থুজার শিশিতে সুসীমের finger-print পাওয়া গিয়েছে, আর রুমালটা—

কোন্ রুমাল?

যেটা সুসীমবাবুর বাথরুমে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন মিঃ দত্ত। সুসীমের দুটো নাম ছিল তুমি বোধ হয় জান—

দুটো নাম!

হ্যাঁ, দুটো নাম। একটা ডাকনাম, অন্যটা পোশাকী নাম। ডাকনামটা হচ্ছে নাড়ু আর পোশাকী নামটা হচ্ছে সুসীম। আর সেই নাড়ুরই আদ্যক্ষর ইংরেজী এন রুমালের কোণে লেখা! সুসীমের পরিধেয় বস্ত্র ও রুমাল ইত্যাদিতে ঐ এনই ব্যবহার করতে সে অনেকদিন ধরে। সুধা দেবীর মুখ থেকেই পরশু আমি সংবাদটা পেয়েছিলাম। সুসীম চমৎকার ভাবে সমস্ত ব্যাপারটা সাজিয়েছিল—যাতে করে নীরেনকেই পুলিস সন্দেহ করে এবং তার পক্ষেও এক ঢিলে দুই পাখী মারা হয়! অবিশ্যি আলফ্রেডের স্বীকারোক্তি না পেলে এবং সুসীম সেরাত্রে বিশাখাকে হত্যার চেষ্টা না করলে এত দ্রুত আমার মীমাংসায় পৌঁছানো সম্ভবপর হতো না। অবিশ্যি আরো একজন সুসীমকে সন্দেহ করেছিল—

কে?

সুসীমের নব-বিবাহিত স্ত্রী—

শ্রাবণী!

হ্যাঁ।

আশ্চর্য!

এতে তো আশ্চর্যের কিছু নেই ডাক্তার। নারীর ব্যাপারে নারীর মনই সর্বাগ্রে সন্দিগ্ধ হয়। শ্রাবণীও ঠিক সেই কারণেই অর্থাৎ সন্দেহ হওয়ায় কলকাতা থেকে সরে যায়।

সবশেষে কিরীটী বলছিল, বিচিত্র দুটি চরিত্র তোমাদের ঐ সুসীম আর বিশাখা! বলতে ইচ্ছা করে—যেমন দেবা তেমনি দেবী! আলফ্রেডের টাকার প্রয়োজন ছিল, কারণ সে ছিল নেশার দাস আর জুয়াড়ী—সে টাকা যোগাত সুসীম, বিনিময়ে বিশাখাকে তুলে দিয়েছিল আলফ্রেড সুসীমের হাতে।

সত্যি বলছো!

হ্যাঁ। কিন্তু বিশাখা ভালবাসত নীরেনকে—

Is it!

তাই সুনন্দার জন্য বিশাখার পক্ষে নীরেনকে পাওয়া সম্ভবপর ছিল না বলেই সুনন্দার প্রতি বিশাখার একটা আক্রোশ ছিল। সেই কারণেই ছদ্মবেশে সুসীমকে চিনতে পেরেও বিশাখা সেরাত্রে মুখ খোলে নি।

কিন্তু বিষ্ণু-বিষ্ণু কেন মুখ খোলে নি? সে কেন সব প্রকাশ করে নি?

ভয়ে। আসলে লোকটা প্রচণ্ড ভীরু—

একটা কথা, নীরেনের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল কেন সুনন্দার দুর্ঘটনার আগের রাত্রে?

কারণ এ তো সোজা কথা! সুনন্দা নীরেনদের চোরাই কারবারের ব্যাপারটা জানতে পেরেছিল বলে–

কি করে?

বিশাখার একখানা চিঠিতে। আক্রোশের বশে নীরেনের প্রতি সুনন্দার মনটা বিগড়ে দেবার জন্যে মরীয়া হয়ে শেষ পর্যন্ত সে সুনন্দাকে একটা চিঠি দিয়েছিল–

তারপর?

দুজনের ঝগড়া হতে সুনন্দা বলেছিল, নীরেনের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক আর নেই। সে-ও যেন নীরেনকে লেখা তার চিঠিগুলো ফেরত দেয় এবং সেও ফিরিয়ে দেবে তাকে লেখা নীরেনের চিঠিগুলো। তারপর তাদের গোপনে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। কিন্তু নীরেন চিঠি দিয়ে জানায়, সেগুলো সে ফেরত দেবে, তবে সে বিশাখার চিঠিটাও চায়। কিন্তু–

কি?

বেচারী সুনন্দা সত্যিই ভালবাসত নীরেনকে। তাই সে চেয়েছিল সুসীমের বাড়িতে এসে সুসীমের সামনেই সব কিছুর একটা মুখোমুখি মীমাংসা করে নেবে। তাই যেচে সে নিমন্ত্রণ নিয়েছিল সুসীমের। বেচারী তখন স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি, সুসীমের বাড়িতে সেরাত্রে যাওয়া মানেই মৃত্যুর ফাঁসে গলা এগিয়ে দেওয়া। কারণ সুসীমকে ফোন করার পরই সে তার plan স্থির করে ফেলে মনে মনে। অবিশ্যি সুসীম গোড়াতেই একটা মারাত্মক ভুল করেছিল

ভুল!

হ্যাঁ।

কি ভুল?

শ্রাবণীকে ঝোঁকের মাথায় হঠাৎ বিয়ে করে—

সত্যিই আশ্চর্য! মৃণাল বলে।

প্রেম আর ঈর্ষা এমন দুটি বস্তু ডাক্তার, যার মধ্যে আশ্চর্য বলে কিছু নেই। কারণ যা কিছু ঘটেছে সেরাত্রে, সব কিছুর মূলেই ছিল ঐ প্রেম আর ঈর্ষা। সবটাই সেই পঞ্চশরের কীর্তি।