১৬. বন্দুকের জন্য আবার সুড়ঙ্গে নামা

বন্দুকের জন্য আবার সুড়ঙ্গে নামাটা বোকামি হবে। অর্জুন চারপাশে তাকাতেই মন্দিরটাকে দেখতে পেল। ডালপালার অজস্র পাতায় চাপা পড়ে গেছে। সেই প্রাচীন মন্দিরের মতোই সরু ইটের গাঁথুনি। তার অনেক জায়গায় ভাঙনের চিহ্ন স্পষ্ট। অর্জুন ধীরে-ধীরে এগোল। কালাপাহাড় যদি এখানে এসে থাকে তা হলে ধরে নেওয়া যেতে পারে এই মন্দির তার হিংসার শিকার হয়নি। কিন্তু কেন?

মন্দিরটি আকৃতিতে খুব বড় নয়। তবে কয়েকশো বছর আগে মূল মন্দির চত্বর কতখানি ছিল সেটা এখন আন্দাজ করা মুশকিল। এখানে ধারে কাছে কোনও বিল তো দূরের কথা জলের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। উত্তরবাংলার এই প্রান্তে বিল দেখা যায় না বললেই চলে। ভৌগোলিক কারণেই সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সেই সময় ছিল কিনা তাও বোঝা মুশকিল। কিন্তু জঙ্গলের মধ্যে। এমন একটা মন্দির আছে এই খবর যখন স্বয়ং ডি. এফ. ও. জানেন না তখন সব জেনেশুনে হরিপদ সেনের প্রতিপক্ষের এখানে আসার পেছনে নিশ্চয়ই যথেষ্ট যুক্তি আছে। মন্দিরের মুখটায় এসে দাঁড়াতেই গুলির শব্দ কানে এল। সুড়ঙ্গে ঢোকার সময় যেরকম ঘন-ঘন গুলি ছোঁড়া হচ্ছিল এখন আর সেটা হচ্ছে না। এই প্রায় বন্ধ-হওয়া আওয়াজ বলে দিচ্ছে ওদিকে যুদ্ধ শেষ হয়ে এসেছে। আপাতত কোন পক্ষ জিতল সেইটেই বোঝা যাচ্ছে না। অর্জুন দেখল মন্দিরে কোনও দরজা নেই। ভেতরটা প্রায় অন্ধকার, কারণ কোনও জানলাও নেই। যেখানে সে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে সম্ভবত একসময় বারান্দা ছিল। এখন সেটা মাটির সমান রেখায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ পুরো মন্দিরটাই বসে গিয়েছে।

ভেতরে ঢোকার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ওরা। কিন্তু একেবারে খালি হাতে প্রায় অন্ধকার প্রাচীন ঘরে ঢুকতে সাহসও হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত একটা গাছের মোটা ডাল ভেঙে লাঠি তৈরি করে নিল সে। ওটাকে মেঝেতে ঢুকে আওয়াজ করতে করতে মন্দিরের মুখটায় দাঁড়াতেই অনেকখানি চোখে পড়ল। সন্তর্পণে ভেতরে ঢুকেই সে চারপাশে তাকিয়ে নিল। না, কোনও মানুষ অথবা জন্তু এখানে নেই। বরং মেঝেটা বেশ পরিষ্কার করা। এরকম বন্ধ জায়গায় একটা স্যাঁতসেঁতে গন্ধ থাকা স্বাভাবিক ছিল যেটা একেবারেই নেই। হঠাৎ তার চোখে পড়ল মেঝেতে কিছু চিকচিক করছে। কয়েক পা হেঁটে সেটি কুড়িয়ে নিতেই স্পষ্ট হল এখানে নিয়মিত লোকজন আসে। নইলে বিদেশি সিগারেটের প্যাকেট এখানে পড়ে থাকত না। হরিপদ সেনের প্রতিপক্ষ কি এই মন্দিরটাকে থাকার জায়গা হিসাবে ব্যবহার করত? তা হলে তো অন্যান্য অনেক কিছুই চোখে পড়ত। অর্জুন ভাল করে ঘুরে-ঘুরে ঘরটাকে দেখল। হাঁটার সময় লাঠিটাকে নিজের অজান্তে মেঝেতে ঠুকছিল। হঠাৎ কানে আওয়াজ যেতেই সে চমকে মুখ নামাল। শব্দটা অন্যরকম লাগছে। খুব জোরে ঠুকতেই মেঝেটা নড়ে গেল। অর্জুন উবু হয়ে বসে আবিষ্কার করল হাত দুয়েক চওড়া একটা কাঠের প্ল্যাটফর্ম মেঝেতে সেঁটে রাখা হয়েছে। তার ডান কোণে চাপ না পড়লে ওটা কিছুতেই নড়বে না। সে ধীরে-ধীরে চাপ দিতে লাগল। চাপ যত বাড়ছে তত বিপরীত দিকের প্ল্যাটফর্ম ওপরে উঠে আসছে। ওটা সোজা হয়ে দাঁড়াতে গর্তটা চোখে পড়ল ভালভাবে।

একটা কাঠের সিঁড়ি নেমে গিয়েছে নীচে। সিঁড়ির চেহারাটা সম্পূর্ণ নতুন। ঠিক এই সময় মন্দিরের গায়েই গুলির আওয়াজ হল। চমকে উঠল অর্জুন। প্ল্যাটফর্মটা কোনওমতে বন্ধ করেই সে এক লাফে মন্দিরের অন্ধকার কোণে গিয়ে দাড়াল লাঠিটাকে শক্ত মুঠোয় ধরে।

লোকটা ছিটকে মন্দিরে ঢুকল। তাড়া খাওয়া বাঘের মতো দেখাচ্ছিল তাকে। ডান হাতের রিভলবার দরজার দিকে তাক করে সে ধীরে-ধীরে ঘরের ভেতর এগোচ্ছিল। অর্জুন দেখল এর সমস্ত মনোযোগে বাইরের শত্রু আছে। দরজাটাকে খেয়াল রেখে লোকটা প্ল্যাটফর্মের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মন্দিরের বাইরে কারও ছায়া দেখেই লোকটা একটা গুলি ছুড়ল। ইতিমধ্যে সে প্ল্যাটফর্মের বাঁ দিকে পৌঁছে গিয়েছে। জুতো দিয়ে আঘাত করল সে ঠিক সেই জায়গায়, যেখানে চাপ পড়লে প্ল্যাটফর্ম সোজা হয়। আর সময় নষ্ট না করে লোকটা সিঁড়িতে পা দিল। নামবার সময় একটু বেকায়দায় নামতে হচ্ছে কিন্তু দরজা থেকে চোখ আর রিভলবার সরাচ্ছে না। অর্জুন লোকটার শরীরকে নীচে নেমে যেতে দেখছিল। হঠাৎ তার ইন্দ্রিয় সজাগ হতেই সে বিদ্যুতের মতো দেওয়াল ছেড়ে এগিয়ে এসে লোকটার কাঁধে প্রচণ্ড আঘাত করল। লোকটির কাঁধ তখন মেঝে থেকে সামান্যই উঁচুতে ছিল। আঘাত লাগা মাত্র তার হাত থেকে রিভলবার ছিটকে মেঝেতে পড়ে গেল। সেই সময়ের মধ্যেই দ্বিতীয়বার আঘাত করল অর্জুন। উত্তেজনায় এবারের আঘাত কাঁধের নীচে পড়তেই লোকটা আচমকা এগিয়ে গেল। তার হাত প্ল্যাটফর্মের ওপর পড়তেই সেটা চট করে নীচে নেমে এসে মাথায় আঘাত করল। লোকটার শরীর এখন সিঁড়ি এবং প্ল্যাটফর্মের মধ্যে আটকে গেছে। অর্জুন রিভলবারটা তুলে নিল। প্ল্যাটফর্মটাকে এক হাতে সোজা করতেই বোঝা গেল লোকটা এখন অজ্ঞান হয়ে আছে। ওকে টেনে ওপরে ভোলা তার পক্ষে সম্ভব নয়।

ঠিক এই সময় বাইরে থেকে এক ঝাঁক গুলি ছুটে এসে এপাশের দেওয়ালে লাগল। অর্জুন তড়াক করে লাফিয়ে আবার উল্টো দিকের দেওয়ালে চলে গেল। এই গুলি কারা ছুঁড়ছে? লোকটা যখন প্রতিপক্ষ এবং তার উদ্দেশ্যেই গুলি ছোড়া হচ্ছে তখন চিৎকার রে জানান দেওয়া দরকার। ভুল করে ওরা তাকেই গুলি করতে পারে। সাধারণ সেপাইরা তো এই অবস্থায় তাকে চিনতে পারবে না। হঠাৎ ঠক করে আওয়াজ হতেই অর্জুন দেখল প্ল্যাটফর্মটা নীচে নেমে আগের মতো বসে গেছে। না জানা থাকলে ওটাকে আর আলাদা করে চেনা মুশকিল। তার মানে লোকটা এরই মধ্যে জ্ঞান ফিরে পেয়ে পালিয়েছে।

অর্জুন চিৎকার করল, গুলি ছুঁড়ো না। আমি অর্জুন।

বাইরে থেকে কোনও সাড়া এল না। চারধারে এখন নিস্তব্ধ।

কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, যারা বাইরে বন্দুক উঁচিয়ে রয়েছে তারা দেখামাত্রই গুলি করবে। এস. ডি. পি. এফ. ও., ভানুদা অথবা অমল সোম না আসা পর্যন্ত সে চট করে ওদের বোঝাতে পারবে না। অর্জুন প্ল্যাটফর্মটার দিকে তাকাল। সুড়ঙ্গ কোথায় আর এই প্ল্যাটফর্ম কোথায়! নাকি দুটোর মধ্যে সংযোগ রয়েছে? সে বুঝতে পারছিল না কী করবে। লোকটা যদি সিঁড়ি দিয়ে নেমে সেই সুড়ঙ্গটাকে পেয়ে যায় তা হলে ধরা মুশকিল হবে। তার মনে পড়ল সুড়ঙ্গ থেকে উঠে আসার সময় ভেতরে কিছু মানুষের গলার স্বর শুনতে পেয়েছিল।

ভেতরে যিনি আছেন বেরিয়ে আসুন, ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট। চিকার ভেসে আসতেই অর্জুন স্বস্তি পেল। সে সমানে গলা তুলে বলল,

আমি অর্জুন। গুলি ছুঁড়তে নিষেধ করুন।

কথাগুলো শেষ হওয়ামাত্র পায়ের শব্দ হল। অর্জুন এস. পি. সাহেবের মুখ দেখতে পেল, পেছনে বন্দুক হাতে সেপাইরা। এস. পি. বললেন, মাই গড। এখানে কী করছেন?

আর কী করব? আপনার সেপাইরা যেভাবে গুলি ছুড়ছেন যে পেছোতে পারছি না।

তা আপনি যদি ওদের আক্রমণ করে এখানে পালিয়ে আসেন তা হলে ওরা ছেড়ে দেবে কেন? ইটস নট ডান। ওদের দেখে ভুল হওয়ার কথা নয়।

আমি ওদের দেখে গুলি ছুঁড়িনি।

মিথ্যে কথা বলছেন। ওরা সবাই আমাকে জানিয়েছে, যে গুলি ছুঁড়ছিল সে ওই মন্দিরের ভেতর এসে লুকিয়েছে। এস. পি. চারপাশে তাকালেন, এখানে আপনি ছাড়া আর কেউ নেই। যেসব উল্টোপাল্টা ঘটনা ঘটছে তাতে কারও ওপর বিশ্বাস রাখা মুশকিল। আপনাকে এক উপযুক্ত কৈফিয়ত দিতে হবে।

অর্জুনের হাসি পাচ্ছিল। সে বলল, ওদের জিজ্ঞেস করুন আমাকে মন্দিরে ঢুকতে দেখেছে কি না! তোমরা কি আমাকে দেখেছ?

সে নিজেই প্রশ্নটা করল। সেপাইরা একটু থতমত খেল। দুজন বলল দেখেছে, দুজন জানায় বুঝতে পারছে না। অর্জুন কিছু করার আগে বাইরে কথাবার্তা শোনা গেল। সে ডি. এফ. ও. সাহেবের গলা পেল, আজব ব্যাপার! এখানে এরকম মন্দির আছে তা আমাকে কেউ জানায়নি। এত বড় ষড়যন্ত্র চলছিল এখানে। এস. পি. সাহেব কোথায়?

এস. পি. মন্দির থেকে বেরতেই অর্জুন তাকে অনুসরণ করল। এস. পির দেখা পাওয়া মাত্র ডি. এফ. ও, বলে উঠলেন, আমার ডিপার্টমেন্টের যারা ওদের সাহায্য করেছে বলে প্রমাণ পাচ্ছেন তাদের স্বচ্ছন্দে গ্রেপ্তার করতে পারেন।

সরাসরি প্রমাণ পাওয়া খুব মুশকিল, তবে দুজনকে ইতিমধ্যে আইডেন্টিফাই করা গেছে আর তৃতীয়জন হলেন উনি। অবশ্য আপনার ডিপার্টমেন্টের লোক নন। আঙুল তুলে অর্জুনকে দেখালেন এস. পি., আমার লোকের ওপর গুলি ছুঁড়তে-ছুঁড়তে এই মন্দিরের ভেতরে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

হঠাৎ ভানু ব্যানার্জির গলা শোনা গেল, অসম্ভব, মিথ্যে কথা। অর্জুন এমন কাজ করতেই পারে না। আপনি ভুল বলছেন।

এস. পি. হাসলেন, আমার সেপাইদের জিজ্ঞেস করুন।

ভানু ব্যানার্জি কিছু বলতে যাচ্ছিলেন অমনি অর্জুন হাত তুলে বাধা দিল। সে এবার সেপাইদের দিকে ঘুরে দাঁড়াল, যে লোকটা তোমাদের ওপর গুলি ছুঁড়ে এই মন্দিবে ঢুকেছে তার চেহারার সঙ্গে আমার কোনও মিল আছে?

একজন সেপাই বলল, ভাল করে লোকটাকে দেখার সুযোগ পাইনি আমি।

লোকটার পোশাক দেখেছ?

হ্যাঁ। শার্ট-প্যান্ট।

অর্জুন দ্বিতীয়জনকে জিজ্ঞেস করতে সে জানাল, কোট-প্যান্ট।

অর্জুন এবার এস. পি.র দিকে তাকাল, বুঝতে পারছেন, উত্তেজনার সময় ওরা কী লক্ষ করেছে। ওই মন্দিরে আমি আগেই ঢুকেছিলাম। ওরা যাকে দেখেছে সে পরে ঢুকেছিল।

এস. পি. বললেন, ওয়েল। তা হলে লোকটা গেল কোথায়? এরা বলছে কেউ মন্দির থেকে বের হয়নি। আর কোনও দরজা নেই মন্দিরের যে, বেরিয়ে যেতে পারে। আর ওরকম একটা খুনি আপনাকে দেখে ছেড়ে দিল! বিশ্বাস করতে বলেন? তা ছাড়া, ওই রিভলবারটা আপনি কোথায় পেলেন? এখানে যখন এসেছিলেন তখন কি ওটা আপনার সঙ্গে ছিল।

ডি. এফ. ও. বললেন, কারেক্ট। আসার সময় আপনি বারংবার বলছিলেন খালি হাতে আসাটা ঠিক হচ্ছে না।

অর্জুন এক মুহূর্ত ভাবল। তারপর জিজ্ঞেস করল, মিস্টার সোম কোথায়?

ভানু ব্যানার্জি বললেন, মিস্টাব সোমকে আমরা দেখতে পাইনি।

এদিকের অবস্থা কী?

এরা সবাই অ্যারেস্টেড। শুধু চাঁইদের ধরা যায়নি।

অর্জুন বলল, এস. পি. সাহেব, কাল রাত্রে এদের কার্যকলাপ আবিষ্কার করার পর আমি আপনাদের সমস্ত ব্যাপার জানাই। যদি আমি আপনার লোকের ওপর গুলি ছুঁড়ব তা হলে সেটা করব কেন?

প্রশ্নটা তো আপনাকেই করছি। এস. পি. খুব কায়দা করে হাসলেন।

উত্তরটা দেওয়ার আগে আমার কথামতো কাজ করুন। অর্জুন মন্দিরের ভেতরে দলটা নিয়ে এল, দুজন সেপাইকে এখানে পোস্ট করুন। এটা একটা কাঠের প্ল্যাটফর্ম। খুললে নীচে যাওয়া যায়। যদি কেউ এখান দিয়ে বেরতে চায় তাকে অ্যারেস্ট করতে অসুবিধা হবে না। অর্জুন দেখিয়ে দেওয়ামাত্র এস. পি. প্ল্যাটফর্ম তোলার চেষ্টা করলেন, কিন্তু ঠিক জায়গায় চাপ না পড়ায় সেটা উঠল না।

ভানু ব্যানার্জি বলে উঠলেন, লোকটা কি এখান দিয়েই পালিয়ে গেছে?

অর্জুন মাথা নাড়ল, হ্যাঁ। আমাকে দেখতে পায়নি। পেছন থেকে ওকে আমি আঘাত করেছিলাম। পালাবার আগে রিভলবারটা পড়ে গিয়েছিল।

এস. পি. খুব উত্তেজিত, তাই বলুন। চলুন এটা খোলা যাক। অর্জুন বাধা দিল, না। আসুন আমার সঙ্গে।

সে দলটাকে নিয়ে এল যে-পথে সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে এসেছিল সেইখানে। পাথরটা এখনও সুড়ঙ্গের মুখ আড়াল করে রেখেছে। অর্জুন বলল, দুজনকে এখানে পোস্ট করুন। এটাও বেরবার একটা মুখ। আমাদের এবার যেতে হবে মূল মুখটায়।

এস. পি. তৎক্ষণাৎ চারজন সেপাইকে ব্যাপাবটা বুঝিয়ে দুজায়গায় পাহারা দিতে আদেশ করলেন। অর্জুন মনে করার চেষ্টা করছিল ঠিক কোন জায়গা থেকে সে আদিবাসী লোকটিকে অনুসরণ করে সুড়ঙ্গে ঢুকেছিল। মাটির ভেতরটা ছিল অন্ধকারে ঢাকা। তার সঙ্গে ওপরের প্রকৃতির কোনও মিল নেই। জায়গাটা চিনতে তার অসুবিধা হচ্ছিল।

মিনিট কুড়ি ঘোরাঘুরি করে অর্জুন ঠাওর করতে পারল। সে এস. পি.-কে বলল, যদি এর মধ্যে ওরা বেরিয়ে না গিয়ে থাকে তা হলে তৃতীয় মুখটায় আমরা পৌঁছে গিয়েছি।

ওরা জঙ্গল সরিয়ে এগোতেই শিসের আওয়াজ শুনতে পেল। এই শিস অর্জুনের চেনা। সে পাল্টা শিস দিল। একটু বাদেই অমল সোম বেরিয়ে এলেন জঙ্গলের আড়াল থেকে। তাঁর পেছনে সেই আদিবাসী লোকটি। অর্জুনকে দেখে মুখ নিচু করল সে।

এস. পি. উত্তেজিত হলেন, আপনি এখানে? আর আপনাকে খুঁজছি আমরা।

কেন? কোনও জরুরি দরকার ছিল? অমল সোম স্বাভাবিক গলায় জানতে চাইলেন।

আশ্চর্য। আমবা এদের গ্রেফতার করতে এসেছি, তাই না?

ঠিকই। সেটা তো করা হয়ে গেছে। অর্জুন, তুমি কি অন্য মুখগুলো বন্ধ করেছ?

হ্যাঁ। দুটো মুখে লোক রাখা হয়েছে।

ভাল। আশা করব চতুর্থ মুখ নেই।

ডি. এফ. ও. বলে উঠলেন, মানে?

কার্বলের মতো ব্যাপার হলে আরও মুখ থাকত। এদিকটা আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। এস. পি. সাহেব, এখন আপনার আসল অপরাধীরা মাটির তলায়।

অমল সোম হাসলেন, এবার ওদের বের করতে হবে।

অর্জুন খুব অবাক হয়ে গিয়েছিল। সে জানতে চাইল অমলদা, আপনি কখন সুড়ঙ্গের হদিস পেলেন?

তুমি যখন এর সঙ্গে ঢুকলে তখনই। তারপর এ একা বেরিয়ে এল এবং তিনজন মানুষ ভেতরে ঢুকে গেল পড়ি কি মরি করে। আমি তখন এই লোকটির সঙ্গে ভাব জমালাম। খুবই সাধারণ ব্যাপার।

সুড়ঙ্গটা কত বড়? এস. পি. জানতে চাইলেন।

অর্জুন বলতে পারবে। অমলদা অর্জুনের দিকে তাকালেন।

অর্জুন জবাব দিল, অন্ধকারে ঠিক বুঝতে পারিনি। তবে বেশ বড়।

এরকম একটা গোপন আস্তানা ওরা তৈরি করে রেখেছে আমি ভাবতে পারছি না।

তৈরি তো এখন হয়নি। কালাপাহাড় করেছিলেন। কয়েকশো বছর হয়ে গেল। কিন্তু ওদের বের করতে হবে। ওহে, তোমরা কী করে গর্ত থেকে খরগোশ ধর?

অমল সোম লোকটিকে জিজ্ঞেস করতে সে জানাল ধোঁয়া দিয়ে কাজটা করে তারা। অমল সোম হাসলেন, বাঃ। সরল ব্যাপার। অর্জুন, আমি তোমাকে গোড়া থেকেই বলে এসেছি এই কেস খুব সরল। নিন, আপনারা ধোঁয়া দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। এই লোকটি সুড়ঙ্গের মুখ দেখিয়ে দেবে। ততক্ষণে আমরা একটু চারপাশে ঘুরে আসি। এসো অর্জুন, আসুন মিস্টার ব্যানার্জি। অমলদা পা চালালেন।