বৃত্তিদান দিয়া যেই স্থাপয়ে ব্রাহ্মণে।
তার পুণ্যফল কত কহিব বদনে।।
বরঞ্চ ভূমির রেণু গণিবারে পারি।
সমুদ্রের জল বরং কলসিতে ভরি।।
তথাপি তাহার পুণ্য না হয় বর্ণন।
ইতিহাস বলি এক শুন দিয়া মন।।
সুবোধ নামেতে এক বিপ্রের নন্দন।
কুণ্ডীন নগরবাসী মহাতপোধন।।
অষ্টভার্য্যা শতপুত্র কন্যা শত জন।
সম্পদবিহীন দ্বিজ অদৃষ্ট কারণ।।
নানা দুঃখ ক্লেশ দ্বিজ করে অনিবার।
তথাপি ভরণ নাহি হয় সুত দার।।
অন্ন বিনা শিশু পুত্র শিশু কন্যাগণ।
দ্বারে দ্বারে বুলে তারা করিয়া ক্রন্দন।।
দুঃখিত সন্তান জানি যত পুরজন।
ঘৃণা বাসি ক্রোধে সবে করয়ে তাড়ন।।
যার স্থানে যে বাঞ্ছা করয়ে দ্বিজবর।
নাহি দেয় দুঃখী হেতু বলে কটুত্তর।।
এইমত দুঃখে কাল কাটে তপোধন।
একদিন গৃহে বসি ভাবে মনে মন।।
পৃথিবীতে বৃথা জন্ম ধনহীন জনে।
সর্ব্বসুখে হীন নর সম্পদবিহনে।।
কুলীন পণ্ডিত কিবা জন্ম মহাকুলে।
নৃপতি হউন কিবা বলে মহাবলে।।
ধনহীন পুরুষে না মানে কোনজন।
ধন যার থাকে, হয় সর্ব্বত্র পূজন।।
যে জনের ধন নাহি বিফল জীবন।
ফলহীন বৃক্ষ যেন ছাড়ে পক্ষিগণ।।
জ্ঞাতি বন্ধু ভ্রাতৃ মিত্র আদি পরিবার।
অন্যের থাকুক দায়, ছাড়ে সুত দার।।
জলহীন সরোবর না হয় শোভন।
ধনহীন পৃথিবীর মনুষ্য তেমন।।
চন্দ্রহীন রাতি যেন সব অন্ধকার।
ধনহীন তেমন না শোভে পরিবার।।
দ্বিজ ক্ষত্র বৈশ্য কিন্বা জন্ম শূদ্রকুলে।
চণ্ডালাদি জন্ম কিম্বা হউক ভূতলে।।
ধনবান হৈলে হয় সর্ব্বত্র পূজিত।
ধনেতে সর্ব্বত্র মান বিধি নিয়োজিত।।
পাপী কিম্বা চোর যদি হয় দুষ্টজন।
ধন যদি থাকে হয় সর্ব্বত্র সম্মান।।
সুখ দুঃখ ফল দুই অদৃষ্ট কারণ।
বিধির লিখন যাহা না হয় খণ্ডন।।
কেহ কেহ বলে দুঃখ স্থান হৈতে পায়।
স্বস্থান ছাড়িয়া যদি অন্য স্থানে যায়।।
স্থানদোষে দুঃখ পায় স্থানে শোক হয়।
অদৃষ্ট হইতে সেই শাস্ত্রমত কয়।।
এইরূপে দ্বিজবর অনেক চিন্তিল।
সে স্থান ছাড়িয়া শীঘ্র গমন করিল।।
কৌশল নামেতে রাজা কোশল দেশেতে।
পরিবার সহ দ্বিজ চলিল তথাতে।।
বৃত্তিদান মাগিলেন নৃপতির স্থান।
নৃপতি করেন যথাযোগ্য বৃত্তিদান।।
আনন্দে রহিল দ্বিজ কোশল নগরে।
পরিবার সহ থাকি সুখভোগ করে।।
বৃত্তি দিয়া ব্রাহ্মণে স্থাপিল নরবর।
সেই পুন্যে হৈল স্থিতি স্বর্গের উপর।।
শতেক বৎসর স্থিতি আনন্দ কৌতুকে।
দুই কোটি যুগ রাজা স্বর্গে ভুঞ্জে সুখে।।
অনন্তর ব্রহ্মলোকে হইল গমন।
এক লক্ষ যুগ তথা করিল বঞ্চন।।
অনন্তর হৈল তার বৈকুণ্ঠেতে স্থিতি।
দুই কোটি কল্প তথা করিল বসতি।।
ব্রাহ্মণের মহিমা বেদেতে অগোচর।
ব্রাহ্মণ হইতে তরে পতিত পামর।।
বিষ্ণুর শরীর দ্বিজ বিষ্ণু অবতার।
যাহারে গোবিন্দ করিলেন পরিহার।।
পদাঘাত খেয়ে স্তুতি করেন সে কালে।
অদ্যপিও পদচিহ্ন আছে বক্ষঃস্থলে।।
এত শুনি জিজ্ঞাসেন ধর্ম্মের নন্দন।
স্বয়ং বিষ্ণু সর্ব্ব কর্ত্তা আদি সনাতন।।
তাঁরে পদাঘাত কেন করিল ব্রাহ্মণ।
কহ পিতামহ শুনি সব বিবরণ।।
শুনিয়া কহেন হাসি গঙ্গার নন্দন।
সাবহিতে শুন রাজা হৈয়া একমন।।
পূর্ব্বে ভৃগু মহামুনি ব্রহ্মার নন্দন।
ব্রহ্মসত্র কৈল ব্রহ্মজ্ঞানের কারণ।।
পৌলস্ত্য পুলহ ক্রতু আদি তপোধন।
বশিষ্ঠ নারদ বিষ্ণু যত মুনিগণ।।
একত্র হইয়া সবে যজ্ঞ আরম্ভিল।
হেনকালে ভৃগুচিত্তে বিতর্ক উঠিল।।
দেখি সব মুনিগণে বিস্ময় জন্মিল।
কেবা সে ঈশ্বর বলি জানিতে নারিল।।
অতি শীঘ্র মহামুনি ব্রহ্মার নন্দন।
জানিবার তরে গেল হরের সদন।।
মহাদেবে কপটে না করিল প্রণতি।
দেখি মাহক্রোধ করিলেন পশুপতি।।
ক্রোধ সন্বরিয়া হর কহেন বচন।
কি হেতু আইলা হেথা ভৃগু তপোধন।।
শুনিয়া উত্তর কিছু না দিল তাহারে।
মহাক্রোধে শঙ্কর বলেন আরবারে।।
অহঙ্কার কর তুমি না মান আমারে।
অবহেলা কর কেন জিজ্ঞাসি তোমারে।।
অহঙ্কারে উত্তর না দেও দুরাচার।
এই হেতু তোরে আজি করিব সংহার।।
এত বলি ত্রিশূল তুলিয়া নিয়া হাতে।
ভৃগুরে মারিতে ক্রোধে যান ভূতনাথে।।
হাতে ধরি শিবেরে রাখেন ত্রিলোচনা।
তথা হৈতে গেল ভৃগু হইয়া বিমনা।।
শীঘ্রগতি ব্রহ্মলোকে উত্তরিল গিয়া।
ব্রহ্মারে না বলে কিছু চিত্তে দুঃখী হৈয়া।।
কপটে সম্ভাষা না করিল জনকেরে।
দেখি ক্রোধ করিলেন বিরিঞ্চি অন্তরে।।
পুত্র বলি করিলেন ক্রোধ সন্বরণ।
তথা হৈতে বৈকুণ্ঠে চলিল তপোধন।।
তথায় দেখিল হরি খট্বার উপরে।
শয়নে আছেন লক্ষী পদসেবা করে।।
দেখি ভৃগু মুনিবর না ভাবি অন্তরে।
দ্রুত তাঁর বক্ষঃস্থলে পদাঘাত করে।।
ক্রুদ্ধা হইলেন দেখি লক্ষী ঠাকুরাণী।
নিদ্রাভঙ্গে উঠিলেন দেব চক্রপাণি।।
ভৃগুমুনি দেখি প্রভু উঠিয়া সত্বরে।
তাঁর পদ সেবন করেন পদ্মকরে।।
আমার কঠিন দেহ বজ্রের তুলনা।
চরণ কমলে তব হইল বেদনা।।
শুনি মহামুনি ভৃগু লজ্জিত বদন।
নানাবিধ প্রকারেতে করিল স্তবন।।
নমঃ প্রভু ভগবান অখিলের পতি।
নমস্তে ব্রহ্মণ্য দেব নমো জগৎপতি।।
তুমি হে জানহ ভক্ত ভয়ত্রাতা।
করিলাম এই দোষ হইয়া অজ্ঞান।।
মম অপরাধ ক্ষমা কর ভগবান।
যোড়হাত করিয়া কহেন দামোদর।।
কদাচিত চিন্তান্তর নহ দ্বিজবর।
পদাঘাত নহে মম হইল ভূষণ।।
এত শুনি সানন্দ হইল তপোধন।
নানামত স্তুতি করে প্রভু নারায়ণে।।
মুনি পুনঃ গমন করিল যজ্ঞস্থানে।
মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।।
শুনিলে অধর্ম্ম খণ্ডে পরলোকে তরি।
চন্দ্রচূড় পদদ্বয় করিয়া ভাবনা।।
কাশীরাম দেব করে পয়ার রচনা।